
ঢাকার কেরানীগঞ্জের সাউথইস্ট ব্যাংকের আটি বাজার শাখা থেকে কয়েক কোটি টাকা উধাও হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে গ্রাহকদের মধ্যে তীব্র উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ অফিসার সাইফুল ইসলাম সোহাগ এই টাকা নিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে বিষয়টি গ্রাহকদের নজরে আসে। খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শতাধিক গ্রাহক ব্যাংকে ছুটে এসে নিজেদের হিসাব যাচাই করতে চেষ্টা করেন। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) সকাল থেকেও ব্যাংকে ভিড় ছিল। অনেকেই ব্যালেন্স ঠিক থাকায় স্বস্তিতে বাড়ি ফিরলেও কয়েকশ গ্রাহক নিজেরা দেখেন, অ্যাকাউন্ট শূন্য বা বন্ধ রয়েছে।
সুমন নামে এক প্রবাসী তার ১ কোটি ১০ লাখ টাকা থাকা অ্যাকাউন্টে মাত্র ছয় হাজার টাকা দেখেন। ঘাটারচরের নুরুদ্দীন জানান, তার ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকার মধ্যে মাত্র ৪ হাজার টাকা রয়ে গেছে। গ্রাহক নজরুল ইসলামও উল্লেখ করেন, তার ৭ লাখ ৭৩ হাজার টাকা থাকা অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলনের এসএমএস এসেছে, পরে খোঁজ নেওয়া মাত্র তাঁর টাকাও উধাও হয়ে গেছে।
বসিলার মোক্তার হোসেন মুক্তির তিনটি অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় কোটি টাকা লাপাত্তা হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তার মেয়ে। আরেক ভুক্তভোগী জানান, নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে ৬০ লাখ এবং তার ভাই জাকির হোসেনের অ্যাকাউন্ট থেকে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
ব্যাংকের সাবেক ম্যানেজার তসলিম উদ্দিন বলেন, “গত ১৮ নভেম্বর বিষয়টি নজরে আসার পর হেড অফিসকে অবহিত করা হয়। পরে অডিট টিম তদন্ত শুরু করে। অভিযুক্ত সোহাগ ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত অফিসে ছিলেন, এরপর আত্মগোপনে চলে যান। ২৪ নভেম্বর থেকে নতুন ম্যানেজার দায়িত্ব নেন।”
নতুন ম্যানেজার কার্তিক হালদার জানিয়েছেন, “সোমবার আমি দায়িত্ব গ্রহণ করি। অডিট টিম তদন্ত করছে। তদন্ত শেষ হলে দোষী ও টাকা উদ্ধারের সুনির্দিষ্ট তথ্য জানানো হবে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২০টি অ্যাকাউন্টের বিষয়ে অভিযোগ এসেছে। সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।”
অডিট ইনভেস্টিগেশনের প্রধান রেজাউল কবির নিশ্চিত করেছেন, “কোনো গ্রাহকের টাকা হারানোর সম্ভাবনা নেই। সোহাগের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। টাকা উদ্ধারের পর সঠিক পরিমাণ জানানো হবে।”
কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ব্যাংকের ম্যানেজার কার্তিক হালদার জানান, সোহাগ তার পরিবারের কাছ থেকে ননজুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে কিছু টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন, কিন্তু নিখোঁজ হওয়ায় গ্রাহক নিরাপত্তার জন্য পুলিশে আশ্রয় নিয়েছেন।
এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন আটি বাজার পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ এস আই আনোয়ারুল ইসলাম।