
মাইকে ঘোষণা দিয়ে আটটি বিলের মাছ লুট
সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লা উপজেলার আটটি বিলের মাছ লুট করে নিয়ে গেছে স্থানীয় হাজারো লোকজনসুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লা উপজেলার আটটি বিলের মাছ লুট করে নিয়ে গেছে স্থানীয় হাজারো লোকজন। সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লা উপজেলার আটটি বিলের মাছ লুট করে নিয়ে গেছে স্থানীয় হাজারো লোকজন। মাইকে ঘোষণা দিয়ে এসব মাছ লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়। গত পাঁচ দিনে দুই উপজেলার আটটি বিলের মাছ লুট করা হয়েছে। ইজারাদারদের দাবি, বিলগুলো থেকে অন্তত সাত কোটি টাকার মাছ লুট হয়েছে। সবশেষ মঙ্গলবার শাল্লা উপজেলার কাশীপুর শতোয়া বিলের মাছ লুট করে নেওয়া হয়। স্থানীয় লোকজন জানান, বিলের মাছ লুটের ঘোষণা দিয়ে আগের দিন আশপাশের এলাকায় মাইকিং করা হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এসব বিল বিভিন্ন মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি কাগজেপত্রে ইজারা নিলেও বাস্তবে এগুলো ভোগদখল করতেন দিরাই ও শাল্লার আওয়ামী লীগের নেতারা। ফলে এলাকার লোকজন বিল থেকে মাছ ধরার সুযোগ পেতেন না। গত ১৫ বছর ধরে সরকারের কাছ থেকে মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি ইজারা নিয়ে বিলগুলো থেকে মাছ মাছ বিক্রি করতেন। ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নেতারা পালিয়ে গেলে এলাকার লোকজন মাছ ধরার সুযোগ পান। গত পাঁচ দিনে বিলগুলো থেকে সব মাছ ধরে নিয়ে যান তারা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে দিরাই ও শাল্লা উপজেলার অন্তত ১২টি গ্রামের প্রায় কয়েক হাজার লোকজন মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে বিলে নেমে পড়েন। তারা ইচ্ছেমতো মাছ লুট করে নিয়ে যান। এ সময় বিলের পাড়ে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা লুটপাটকারীদের বাধা দেয়নি। একই দিনে উপজেলার কাশীপুর গ্রামের কাছের বাইল্লা বিল ও ইয়ারাবাদ গ্রামের ভাটিগাং বিল লুটপাট করা হয়। শতোয়া বিলের ইজারাদার উত্তর জারুলিয়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের একটি সংগঠন। সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রজেশ দাস বলেন, এমন পরিস্থিতি জীবনেও দেখিনি। আমরা প্রতি বছর ৪৫ লাখ টাকা রাজস্ব দিই। তিন বছর পর পর মাছ ধরা হয়। আগামী বছর মাছ ধরার কথা থাকলেও এলাকার ১০-১৫ হাজার মানুষ দুই দিনে কোটি টাকার মাছ লুট করে নিয়ে যায়। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাছ লুটপাট শুরু হয় গত শুক্রবার থেকে। শুক্রবার সকালে দিরাই উপজেলার চরনারচর গ্রামের পাশের কামান-কচমা বিলে জোর করে মাছ ধরে নেন ৫০০ থেকে ৭০০ লোকজন। পরদিন শনিবার আবারও হাজারো মানুষ বিভিন্ন যানবাহনে করে এসে এই বিলে লুটপাট চালায়। এরপর থেকে প্রতিদিন চলছে লুটপাট। কামান-কচমা, শতোয়া, বাইল্লা, ভাটিগাং বিল ছাড়াও এ পর্যন্ত লুট করা হয় শাল্লার জোয়ারিয়া বিল, দিরাইয়ের আতনি বিল, লাইড়া-দিঘা ও চইনপট্টা বিলের মাছ। দিরাইয়ের কামান-কচমা বিলের ইজারাদার চরনারচর বিএম মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুধীর বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা সরকারকে প্রতি বছর ৫০ লাখ টাকার বেশি রাজস্ব দিই। দুই দিনে আমাদের বিলের দুই কোটি টাকার মাছ লুট হয়েছে। ১৫-২০ কেজি ওজনের বোয়াল ও আইড় মাছ নিয়ে গেছে। পুলিশের সামনেই মাছ নিয়ে গেছে তারা। পুলিশের কিছু করারও ছিল না, কারণ পুলিশ ছিল ১০ জন, মাছ ধরতে এসেছিল আট থেকে ১০ হাজার মানুষজন।’ স্থানীয় লোকজন ও ইজারাদাররা জানিয়েছেন, দিরাই-শাল্লা উপজেলার শ্যামারচর, ললোয়ারচর, মাইতি, কার্তিকপুর, নোয়াগাঁও, চিকাডুপি, বল্লভপুর, উজানগাঁও, সোনাকানি, নিজগাঁও, মির্জাপুর, রাহুতলা, শরীফপুর, কাশীপুরসহ আশপাশের গ্রামের লোকজন জলমহালের মাছ লুটের সঙ্গে জড়িত। গত শনিবার ও রবিবার শাল্লার যাত্রাপুর গ্রামের পাশের জোয়ারিয়া বিলের মাছ ধরে নিয়ে যান ছব্বিশা, দামপুর, কান্দিগাঁও, ইয়ারাবাদ, কান্দকলা, রঘুনাথপুর, যাত্রাপুর গ্রামের হাজারখানেক লোকজন। বিলের পাহারাদাররা জলমহালে থাকলেও লুটপাটকারীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় বাধা দেওয়ার সুযোগ ছিল না। জোয়ারিয়া বিলের ইজারাদার যাত্রাপুর হিলিপ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি হিমাদ্রী সরকার বলেন, ‘বিলে বাঁশ-কাঠা দেওয়া, পাহারাদার রাখাসহ প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আগামী বছর মাছ ধরার কথা ছিল। কিন্তু গত দুই দিন জোর করে মাছ ধরে নিয়ে যাওয়ায় আমাদের অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।’ রবিবার সকালে দিরাইয়ের মেঘনা-বারঘর বিলের ও একই উপজেলার আতনি বিলের (শাল্লা উপজেলার জয়পুর গ্রামের সামনে) মাছ ধরে নিয়ে যান বিলের আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষজন। সোমবার দিরাই উপজেলার কাশীপুর লাইড়া দীঘা গ্রুপ ফিশারির এলংজুরি ও আলীপুর গ্রামের পেছনের লাইড়া-দীঘা ও চইনপট্টা বিলের পাইলের প্রায় কোটি টাকার মাছ ধরে নিয়ে যান বিলের আশপাশের লোকজন। মাছ লুটের বিষয়ে দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘মেঘনা ও কামান বিলের মাছ ধরা প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল বলে শুনেছি। এলাকার লোকজন কিছু বিলের মাছ ধরেছে। লাইড়া দীঘা গ্রুপ ফিশারির পাইলের অংশে জোর করে মাছ ধরার অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া জোয়ারিয়া বিলে মাছ ধরার খবর পেয়ে পুলিশ পাঠিয়ে লোকজনকে সরিয়ে দিয়েছি। হাজার হাজার লোক ভোরে মাছ ধরতে যায়। এসব বিল থানা থেকে অনেক দূরে, তাই পুলিশ যাওয়ার আগেই লোকজন চলে যায়। যাদের ঘটনাস্থলে পেয়েছি তাদের বুঝিয়েও কোনও লাভ হয়নি। এতো হাজার মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ নয়। বিলের পাহারাদার ও পুলিশের পক্ষে এতো মানুষকে বাধা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এরপরও যারা মাছ ধরে নিয়ে গেছেন তাদের কয়েকজনকে চিহ্নিত করেছি। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’ সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) জাকির হোসেন বলেন, ‘কয়েকটি বিলের মাছ লুটের অভিযোগ পেয়েছি। লুটপাটকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ স্থানীয় কয়েকজন জেলে জানিয়েছেন, জলমহালগুলো মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে ইজারা নিয়ে বছরের পর বছর আওয়ামী লীগের নেতারা নিয়ন্ত্রণ করতেন। নেতারা পালিয়ে যাওয়ার পর গ্রামের লোকজন জোর করে মাছ ধরে নিয়ে যান। মেঘনা বারোঘর জলমহালের মালিক ছিলেন দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় ও জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা। এখানে কাগজেই শুধু মৎস্যজীবী সমাবায় সমিতির নামে ইজারা নিয়ে আসা হয়। বাস্তবে ভোগদখল করেন নেতারা। গত পাঁচ দিনে ঘোষণা দিয়ে আটটি জলমহালের মাছ ধরে নিয়ে যান জলমহালের আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা। মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিগুলো বলছে, অন্তত সাত কোটি টাকার মাছ লুট হয়েছে। নবীনগর উত্তর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রীতুষ বর্মণ বলেন, ‘সাত কোটি টাকার মাছ লুট হয়েছে। লিখিতভাবে বিষয়টি সুনামগঞ্জ জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি আমরা।’ এ ব্যাপারে জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘দিরাইয়ের একটি জলমহাল থেকে জোর করে মাছ ধরে নেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। এ ছাড়া আর কোনও অভিযোগ পাইনি। তবে এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হবে। লুটপাটে জড়িতদের খুঁজে বের করতে বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলেছি। ঘটনার তদন্ত চলছে।’

ঋণের বোঝা এড়াতে চলন্ত ট্রেনের সামনে
ঘড়ির কাঁটায় তখন মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টা। ঢাকা থেকে সিলেটগামী আন্তঃনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস তখন ছেড়েছে শমশেরনগর রেলস্টেশন। আউটার সিগনালে ট্রেনটি পৌঁছামাত্র হঠাৎ রেললাইনে ঝাঁপিয়ে পড়েন এক ব্যক্তি। মুহূর্তেই মাথাসহ শরীর কয়েক খণ্ড হয়ে যায়। ওই ব্যক্তির সঙ্গে ছিল একটি মোবাইল ফোন। পাশেই পাওয়া যায় একটি কীটনাশকের বোতল। শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার (জিআরপি) পুলিশ সংবাদ পেয়ে লাশ উদ্ধার করে। একপর্যায়ে মৃত ব্যক্তির মোবাইল ফোনে কল আসে। সেই সূত্রে জানা যায় তাঁর পরিচয়। মৃত মহরম আলী (৫৫) মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের চানগাঁওয়ের বাসিন্দা। স্থানীয় পীরের বাজারে মুদি দোকান রয়েছে তাঁর। পুলিশের কাছে স্বজন জানান, ঋণের চাপে বিপর্যস্ত ছিলেন মহরম। এ কারণেই তিনি চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিতে পারেন। মহরম আলীর তিন ছেলে। তাদের মধ্যে বড় ছেলে প্রবাসী। মেঝো ছেলেটি হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ও ছোট ছেলে কেজি স্কুলে পড়ে। তাঁর বড় ভাইয়ের স্ত্রী মালা বেগম জানান, গ্রামের মহাজন ও কয়েকটি এনজিও থেকে নানা সময়ে ঋণ নিয়েছিলেন মহরম আলী। সেই টাকা বাড়তে বাড়তে ২০ লাখ টাকার বেশি হয়ে গেছে। কিছুদিন ধরে কিস্তি বা মূল টাকা পরিশোধ করতে পারছিলেন না। এ কারণে পাওনাদাররা মহরমকে চাপ দিচ্ছিলেন। হাজীপুর ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রাজা মিয়া বলেন, তিনিও জানতে পেরেছেন মুদি ব্যবসায়ী মহরম আলী ঋণগ্রস্ত ছিলেন। ঋণের চাপ সইতে না পেরে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে সবার ধারণা। শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার (জিআরপি) উপপরিদর্শক (এসআই) দীপক সরকার বলেন, ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত মহরম আলীর লাশ উদ্ধার করে সেদিনই ময়নাতদন্ত করা হয়। মঙ্গলবার রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।

তরুণীর মাথা ছাড়া মরদেহ পড়ে ছিল ভুট্টা ক্ষেতে
লালমনিরহাট সদর উপজেলায় একটি ভুট্টা ক্ষেত থেকে অজ্ঞাতপরিচয় তরুণীর মাথা ছাড়া মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার (৫ মার্চ) দুপুরে উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ভাড়ালদা এলাকা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়রা জানান, দুপুরে ভুট্টার মালিক ক্ষেত দেখতে যান। তখন বোরখা পরা, মাথা ছাড়া তরুণীর মরদেহ দেখতে পান। বিষয়টি তিনি স্থানীয় ইউপি সদস্যকে জানান। ওই ইউপি সদস্য পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে। বুধবার ভোর রাতের দিকে ওই তরুণীকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুন্নবী জানান, অজ্ঞাতপরিচয় ওই তরুণীর বয়স আনুমানিক ২০-৩০ বছরের মধ্যে। মরদেহের পাশে একজোড়া স্যান্ডেল ও একটি মানকি ক্যাপ পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, হত্যাকারী এগুলো ফেলে রেখে গেছেন। মরদেহের ময়নাতদন্ত ও মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। মাথা খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।

কারাগারে কয়েদীদের সাথে হাতাহাতিতে জড়ালো আ.লীগ নেতারা
পাবনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র হত্যা ও হামলা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে অন্যান্য কয়েদীদের সাথে বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ৫ আসামিকে শাস্তি স্বরূপ অন্য জেলার কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। অভিযুক্ত ৫ জনই আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতা। পাবনা জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. ওমর ফারুক বুধবার (০৫ মার্চ) বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে অশোভন আচরণ ও কারাগারে বিশৃঙ্খলার অভিযোগে মঙ্গলবার (০৪ মার্চ) বিকেলে তাদের রাজশাহী ও নঁওগা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। অভিযুক্তরা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট তৌফিক ইমাম খান, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ লালু, গয়েশপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোতাহার হোসেন মুতাই ও আসাদুজ্জামান সুইটসহ অন্য আরেকজন। জেল সুপার মো. ওমর ফারুক জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র হত্যা ও হামলা মামলায় কারাগারে রয়েছেন এসব আসামিরা। কয়েকদিন ধরেই তারা কারাগারে থাকা অন্য সাধারণ কয়েদীদের সাথে খারাপ আচরণ করছিলেন। সবশেষ গত ৩ মার্চ বিকেলে এ পাঁচ কয়েদী কারাগারের অন্য কয়েদীদের সাথে একইভাবে খারাপ আচরণ করেন এবং বাকবিতন্ডায় জড়ান। একপর্যায়ে অন্য কয়েদীদের গায়ে হাত তোলেন তারা। পরে শাস্তি স্বরূপ কয়েদী তৌফিক ইমাম, শেখ লালু ও আসাদুজ্জামান সুইটকে রাজশাহী এবং মুতাই ও অন্যজনকে নঁওগা জেলা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। জেল সুপার মো. ওমর ফারুক আরো বলেন, বিগত সময়ে তারা বাইরে যেমন বেপরোয়াভাবে কথাবার্তা বলেছেন ও চলেছেন, কারাগারেও তেমনই বেপরোয়া হয়ে চলছিলেন। ফলে ঝামেলাটা বাঁধে। অন্য কয়েদীদের সাথে অশোভন আচরণ ও কারাগারে বিশৃঙ্খলার অভিযোগে মঙ্গলবার বিকেলে তাদের রাজশাহী ও নঁওগা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে।

সেনাবাহিনীর সহায়তায় দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলেন ৪ জন
রংপুরে অসহায় ও হতদরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে চক্ষুসেবা ক্যাম্পেইন কার্যক্রম পরিচালনা করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬৬ পদাতিক ডিভিশন। ক্যাম্পেইনে প্রথম ধাপে বাছাই করা ১৭ জন রোগীর মধ্যে চারজনের ছানি অপারেশন করা হয়েছে। বুধবার (৫ মার্চ) দুপুরে রংপুর সেনানিবাসে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে এসব রোগীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করে তাদের খোঁজখবর নেন ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি রংপুর এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ কামরুল হাসান। এ সময় সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মাধ্যমে গত মঙ্গলবার রংপুরের হারাগাছের আক্কাস আলী (৬২), শ্যামপুরের ইয়াছুব আলী (৬৫), মিঠাপুকুর জায়গীরহাটের মেহেরুন নাহার (৬০) এবং লালমনিরহাট হাতীবান্ধার এলাকার আবতার আলীর (৬০) চোখের ছানি অপারেশন করা হয়। সেই সাথে তাদেরকে চশমাসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রদান করা হয়েছে। চোখের দৃষ্টি শক্তি ফিরে পেয়ে সেনাবাহিনীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তারা। রংপুর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের কমান্ডেন্ট কর্নেল একে এম জহির হোসেন খান জানান, 'গত ২০ ফেব্রুয়ারি রংপুর শীতল ক্যান্টনমেন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চক্ষুসেবা ক্যাম্পেইন শুরু হয়। এতে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ৩৩৬ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি ওষুধ বিতরণ এবং ৪৫ জনকে চশমা প্রদান করা হয়। এছাড়াও প্রথম ধাপে বাছাই করা ১৭ জন রোগীর মধ্যে চারজনের ছানি অপারেশন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকিদেরও চিকিৎসা সেবাসহ অপারেশনের ব্যবস্থা করা হবে।'

চার দফা দাবিতে পাবনায় ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের সংবাদ সম্মেলন
কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে চার দফা দাবি বাস্তবায়নে পাবনায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন ডিপ্লোমা চিকিৎসকরা। বুধবার (০৫ মার্চ) দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাবের ভিআইপি মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ডিপ্লোমা মেডিকেল এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ডিপ্লোমা মেডিক্যাল প্রাইভেট প্র্যাকটিশনার এসোসিয়েশন ও সাধারণ ম্যাটস ঐক্য পরিষদ পাবনা জেলা শাখা যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ ডিপ্লোমা মেডিক্যাল এসোসিয়েশন পাবনা জেলা শাখার সভাপতি ডা. মতিউর রহমান। এ সময় সাধারণ সম্পাদক ডা জহুরুল ইসলামসহ অন্যান্য ডিপ্লোমা চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বর্তমানে ডিএমএফ কোর্স সম্পন্নকারী প্রায় ৫০ হাজার দক্ষ জনবল কর্মসংস্থানের অভাবে বেকার হয়ে পড়েছে। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও ম্যাটস শিক্ষার্থীরা বিভিন্নভাবে জুলুম ও বৈষম্যের শিকার। দীর্ঘকাল ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করার পরও বৈষম্য নিরসনে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। শুন্য পদ থাকার পরেও এক যুগের বেশি সময় ধরে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। এতে একদিকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠি একদিকে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অন্যদিকে ম্যাটস থেকে পাসকৃত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাই অনতিবলম্বে তাদের চার দফা দাবি বাস্তবায়নে সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন ডিপ্লোমা চিকিৎসকরা। দাবি বাস্তবায়ন না হলে আরো কঠোর কর্মসূচীর হুশিয়ারি করেন ডিপ্লোমা চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ। তাদের চার দফা দাবি হলো-১. অনতিবিলম্বে শুন্য পদে নিয়োগ ও কমিউনিটি ক্লিনিকসহ সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে নতুন পদ সৃষ্টি করা, ২. প্রতিষ্ঠান ও কোর্সের নাম পরিবর্তন করে অসংগতিপূর্ন কোর্স কারিকুলাম সংশোধন করে ইন্টার্নশিপের লকবুক প্রণয়ন করতে হবে, ৩. বিএমএন্ডডিসি স্বীকৃত ক্লিনিক্যাল বিষয়ে উচ্চ শিক্ষার অধিকার প্রদান করতে হবে এবং ৪. প্রস্তাবিত এলাইড হেলথ প্রফেশনাল বোর্ড খসড়া আইনের নাম পরিবর্তন করে মেডিক্যাল এডুকেশন বোর্ড অব বাংলাদেশ নামকরণসহ প্রস্তাবিত ধারার সংশোধনীসহ বাস্তবায়ন করতে হবে।

ঝিনাইদহে টিসিবির ১০০ প্যাকেট পণ্য ছিনিয়ে নিলেন যুবদল নেতা
ঝিনাইদহের শৈলকূপায় টিসিবির ১০০ প্যাকেট পণ্য ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জুলিয়াস আহমেদ নামে যুবদলের এক নেতার বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (৪ মার্চ) উপজেলার ৫ নম্বর কাঁচেরকোল ইউনিয়নে টিসিবির পণ্য বিক্রির সময় এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকালে কাঁচেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের সামনে টিসিবির পণ্য বিতরণের প্রস্তুতি শুরু করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিলার। এসময় ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক জুলিয়াস আহমেদ লোকজন নিয়ে ১০০টি কার্ডের টিসিবির পণ্য নিয়ে যান। ডিলারের লোকজন বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তারা ভয়ভীতি দেখান। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও ইউপি প্রশাসক মো. শরীফ উদ্দীন জানান, সকালে টিসিবির দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিলার পণ্য বিক্রির জন্য যান। এসময় ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক জুলিয়াসের নেতৃত্বে কয়েকজন লোক কার্ড ছাড়াই ১০০টি প্যাকেট নিয়ে যান। পরে ইউএনও স্নিগ্ধা দাসকে ঘটনাটি অবহিত করেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা। ডিলার মেসার্স ছাবির এন্টারপ্রাইজের কর্মরত ব্যক্তি জানায়, হুট করে জুলিয়াসের লোকজন ১০০ প্যাকেট পণ্য নিয়ে যান। পরে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও প্রশাসনকে ঘটনাটি জানানো হয়। এরপরে জুলিয়াস ১০০টি পণ্যের দাম পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু এখনো টাকা পায়নি। অভিযোগের বিষয়ে যুবদল নেতা জুলিয়াস বলেন, ঘটনাস্থলে সিসি টিভি ক্যামেরা আছে। আপনারা ক্যামেরার ফুটেজ যাচাই করুন। আমি ঘটনাস্থলে যাইনি। কে বা কারা টিসিবির পণ্য নিয়ে গেছে আমি কিছুই জানি না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আমাকে ফাঁসানোর জন্য এরকম অভিযোগ তুলেছে। ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন বলেন, ঘটনা শোনার পর ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। জুলিয়াস মালগুলো ফেরত দিতে চেয়েছিলেন। এখন পর্যন্ত ফেরত দিয়েছেন কিনা জানি না। ব্যক্তির কোনো ভুলের দায় দল নেবে না। বিষয়টি নিয়ে শৈলকূপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিগ্ধা দাস বলেন, মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ প্রশাসনকে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

মাদারীপুরে ভূমি অধিগ্রহণে ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ, ২৩ জনের নামে আদালতে মামলা
মাদারীপুরে পদ্মা সেতু প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণে ভূয়া রেকর্ড সৃজন করে, জাল-জালিয়াতি, দুর্নীতি, প্রতারণা, যোগসাজশে ৯ কোটি ৯৭ লক্ষ ৮৫ হাজার ৫৪ টাকা আত্মসাত করায় ২৩ নামের আদালতে মামলা করা হয়েছে। বুধবার (৫ মার্চ) দুপুরে সমন্বিত সরকারি অফিস ভবনের দুদক কার্যালয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব তথ্য জানান দুদক মাদারীপুর জেলা কার্যালয়েল উপ পরিচালক মোঃ আতিকুর রহমান। আতিকুর রহমান জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্পসহ অন্যান্য প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণে মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা প্রমথ রঞ্জন ঘটক, সার্ভেয়ার মোঃ রাসেল আহম্মেদ ও মোঃ নাসির উদ্দিনসহ মোট ২৩ জনের নামে কমিশনের অনুমতি সাপেক্ষে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদের মধ্যে শিবচরের রয়েছেন ১৬ জন। এরা হলেন- গুপ্তেরকান্দির নিরঞ্জন পত্তনদার স্ত্রী আলো পত্তনদার, মৃত খোকা সরদারের ছেলে জিল্লুর রহমান, খাস সন্যাসীরচর হালিম মৃধার ছেলে আব্দুল মালেক মৃধা, খলিফা কান্দির আলাউদ্দিন খলিফার ছেলে সুরুজ মিয়া, বাঁশকান্দি এলাকার মোহাম্মদ ফকিরের মেয়ে রাজিয়া বেগম, আব্দুর রাজ্জাক মোল্যার মেয়ে কুলসুম বিবি, মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে মনির মিয়া, সাহাবুদ্দিন ঘরামীর মেয়ে হাছিনা বেগম ও হামেদ শিকদারের মেয়ে ফরিদা বেগম। বাচামারার মৃত রুস্তুম আলী কাজীর ছেলে আব্দুল কাদির কাজী, আলাউদ্দিন বেপারীর ছেলে আলম আলী বেপারী ও মোজাম্মেল কাজির ছেলে মতিউর রহমান কাজি। এ ছাড়া বড় খাস বন্দরখোলার মৃত নাজির বেপারীর ছেলে শাহিন বেপারী, গুয়াতলার হালেম হাওলাদারের ছেলে আতিকুর রহমান। উত্তর তাজপুর হালেম হাওলাদারের মেয়ে আছমা বেগম, চৈতাই মোল্লাকান্দির রঞ্জন মোল্লার ছেলে আওলাদ হোসেন। দত্তপাড়ার মেম্বার সুধাংশু কুমার মন্ডল। এ ছাড়াও গোপালগঞ্জ কাশিয়ানি উপজেলার গোয়ালগ্রামের মৃত আলিউজ্জামানের ছেলে মোঃ মিলন শেখ ও শরীয়তপুর জাজিরা উপজেলার মহিউদ্দিন হাজীকান্দির মৃত আলতাফ মাদবরের মেয়ে জোসনা বেগম ও ঢাকা শ্যামপুরের সিদ্দিকুল্লাহর স্ত্রী আখি বেগম। এদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪২০/৪০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় অপরাধ প্রমানিত হওয়ায় মামলা করা হয়েছে। এসময় উপস্থিত ছিলেন দুদক মাদারীপুর জেলা কার্যালয়েল সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা।

ঈশ্বরদীতে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ গেল গৃহবধূর; চারটি বসতঘর ও ১২টি ছাগল পুড়ে ছাই
পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে চারটি বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনে এক গৃহবধূ নিহত এবং ১২টি ছাগল দগ্ধ হয়ে মারা গেছে। বুধবার (৫ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়নের আসনা গ্রামে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আসনা গ্রামের আব্দুর রহমান কাজির বাড়ি থেকে প্রথমে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। মুহূর্তেই আগুন আশপাশের ঘরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা প্রথমে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। পরে ঈশ্বরদী ফায়ার সার্ভিস ও লালপুর ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জিয়ারুল কাজি। আগুনে পুড়ে তার স্ত্রী হাজেরা বেগম (৩৫) মারা যান। এছাড়া তার পরিবারের ১২টি ছাগলও পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। নিহত হাজেরা তিন সন্তানের জননী ছিলেন। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, এসব পরিবারের বাড়ির ছাউনি ও বেড়া টিনের হওয়ায় পুরো ঘরই পুড়ে গেছে। বাড়ির আসবাবপত্রসহ মূল্যবান মালামাল কিছুই অবশিষ্ট নেই। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সময় হাজেরা বেগম তার শিশু সন্তানকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু আগুনের ধোঁয়া ও তাপে দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে রয়েছেন আব্দুর রহমান কাজি, তার দুই ছেলে রকিব কাজি ও রতন কাজি, মাহবুর কাজি, জিয়ারুল কাজি ও মাহবুব রহমান। ঈশ্বরদী ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ মীর আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। তদন্ত শেষে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিশ্চিত করা যাবে।’ ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুর রহমান বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছে। সেইসঙ্গে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশি হেফাজতে নিয়েছে। কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযানের আহ্বান এ্যানির
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন বলেন, ‘৫ আগস্ট সারাদেশে থানাগুলোতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে যেসব অস্ত্র লুট করা হয়েছে, ৬ মাস পার হলেও লুট হওয়া সেসব অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। আর এসব অস্ত্র ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্র দিয়ে দেশে আইনশৃংখলার অবনতি ও সমাজে বিশৃংখলার চেষ্টা করছে ফ্যাসিবাদের দোসর ও জঙ্গীরা। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার দোসর, সাঙ্গ-পাঙ্গরা এখনো দেশের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে অন্তবর্তী সরকারকে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে। এতে বিএনপির সমর্থন ও সহযোগিতা থাকবে।’ বুধবার (৫ মার্চ) দুপুরে লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের বসির ভিলার হল রুমে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে টেউটিন বিতরণকালে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাব উদ্দিন সাবু। এ সময় শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি আরো বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় দলীয় নেতাকর্মীরা কাজ করছেন। তারাই ধারাবাহিকতায় লক্ষ্মীপুরে প্রায় ১ হাজার বান্ডিল ঢেউটিন বিতরণ করা হয়। দেশে যেভাবে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে। চুরি ডাকাতি, হানা-হানি ও মারামারি হচ্ছে। থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রগুলো সন্ত্রাসীদের কাছে থাকার কারণে দিন দিন আইনশৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে।’ দ্রুত এসব অস্ত্র উদ্ধার না হলে আগামীতে নির্বাচনের সময় এসব অস্ত্র দিয়ে কেন্দ্র দখল করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। ‘কিন্তু সেটা কোনভাবে আর করতে দেয়া হবে না। সবাইকে সঙ্গ নিয়ে সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে।’ দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে এ্যানি বলেন, ‘রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা থাকবে, কিন্তু প্রতিহিংসা থাকতে পারবে না। সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবব্ধ থাকতে হবে। সবাই মিলে সুন্দর একটি বাংলাদেশ গড়তে হবে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশটাকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। সেখান থেকে উদ্ধার করে আমাদেরকে আসতে হলে এক দিকে সংস্কার প্রয়োজন। আরেক দিকে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রয়োজন। একটি সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দিকে আমরা তাকিয়ে আছি। তাই সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’ কেউ যেন বাংলাদেশ নিয়ে আর ষড়যন্ত্র করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে বলে জানান তিনি। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সংস্কার দুইটাই খুবই জরুরী। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ করে নির্বাচন দেয়ার আহবানও জানান শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাছিবুর রহমান।

পার্বত্যাঞ্চল-কক্সবাজার ঘিরে আরাকান আর্মির ‘নীল নকশা’
কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার নাফ নদীতে মাছ শিকার করা জেলেদের অপহরণ মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির জন্য নতুন নয়। মুক্তিপণ পেলেই ছেড়ে দেয় তারা। সম্প্রতি ঘটছে ভিন্ন ঘটনা। তারা অপহৃতদের কাছে মুক্তিপণ না চেয়ে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী সম্পর্কে নানা তথ্য জানতে চাচ্ছে। চালানো হচ্ছে অমানসিক নির্যাতন। সম্প্রতি কিছু জেলেকে নাফ নদী থেকে অপহরণের পর মুক্তিপণ না চেয়ে শুধু নির্যাতন করেছে আরাকান আর্মি। কারণ হিসেবে জেলেরা বলছেন, ‘আরাকান আর্মি শুধু জানতে চেয়েছে বাংলাদেশ সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঘাঁটি ও অবস্থান।’ পার্বত্যাঞ্চলে আরাকান আর্মির ঘাঁটি তৈরি করা হয়েছে বলেও ফিরে আসা একাধিক জেলে স্বীকার করেছেন। আরাকান আর্মি সদস্যদের পরিবার বাংলাদেশ থাকে বলেও জানান জেলেরা। তাহলে কী আরাকান আর্মি কক্সবাজার ও পার্বত্যাঞ্চল ঘিরে কোনো নীল নকশা করছে? এমন প্রশ্ন উঠছে স্বভাবতই। তবে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা এসব বিষয়ে সরাসরি কোনো কথা না বললেও, সীমান্তে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে এবং সেগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। মিয়ানমার সীমান্ত নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সাম্প্রতিক মন্তব্যও কিছুটা এমন ইঙ্গিত দেয়। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘সীমান্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে বাংলাদেশ যোগাযোগ রাখছে। টেকনাফ স্থলবন্দরে মিয়ানমারের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য রয়েছে। কিন্তু আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্য দখলে নেওয়ার পর থেকে সীমান্ত বাণিজ্যের জাহাজ আসা যাওয়ায় তারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।’ তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে অনেক জাহাজ তারা আটকে রেখেছিল। ধরে নিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশি অনেক জেলেকে। এসব ঘটনা স্বাভাবিক বাণিজ্য পরিস্থিতি ব্যাহত করছে। এ কারণে দেশের সীমান্ত সুরক্ষা এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের স্বার্থে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সিংহভাগ দখল নেওয়া আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে ঢাকা।’ সাধারণত আরাকান আর্মি অপহৃত জেলেদের পরিবারের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়। তবে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা টহল দেওয়ায় অপহরণের সংখ্যা তুলনামূলক কম বলে জানিয়েছেন অপহরণের শিকার জেলেরা। বিজিবির সহযোগিতায় পরিবারের দেখা পেয়েছেন বলেও জানান তারা। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ১৭ দিন বন্দি ছিলেন ৩৫ বছর বয়সী জেলে মাহমুদুল হাসান। এই সময়ে তাকে রাখাইন রাজ্যের একটি বিচ্ছিন্ন ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়। ক্যাম্পটি আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রণ করছিল। মাহমুদুল প্রায় ২০ বছর ধরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মাঝামাঝি জলসীমায় মাছ ধরেন। গত ১১ ফেব্রুয়ারি মাহমুদুল এবং তার সঙ্গে থাকা আরও তিনজন অনিচ্ছাকৃতভাবে জোয়ারের কারণে মিয়ানমারের জলসীমায় ঢুকে পড়েন। উঁচু জোয়ারের কারণে তাদের জালটি প্রত্যাশার চেয়ে অনেক দূরে চলে যায়। যতই তারা জাল টানার চেষ্টা করছিলেন, ততই এক সশস্ত্র গ্রুপ কাছাকাছি আসতে থাকে। একটি নৌকায় সশস্ত্র গ্রুপটির সাতজন ছিলেন, তাদের মধ্যে দুইজন অস্ত্রধারী। তারা এসে বাংলাদেশি চার জেলেকে আটক করে নিয়ে যান দুর্গম পাহাড়ে। মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘প্রথমে আমরা বোঝানোর চেষ্টা করি যে, জোয়ার বাড়ায় আমাদের জাল ভাসতে ভাসতে চলে গেছে, কিন্তু তারা আমাদের কোনো কথাই শোনেনি। জেলেদের প্রথমে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের রাখা হয় কড়া নজরদারিতে। মলমূত্র ত্যাগের জন্য অপহরণ করা জেলেদের শুধু একটি বালতি দেওয়া হয়। কিন্তু অন্য কোনো সুবিধা ছিল না।’ এই জেলে বলেন, ‘গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ২৮ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়। সীমান্তে নিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর আরাকান আর্মির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলায় আমাদের সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে আসেন। তারা আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যাও জানতে চান। এরপর তারা জানতে চান বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় কোন কোন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঘাঁটি বা অফিস আছে, তারা কোন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করে- এসব।’ তথ্য দিতে অস্বীকার করায় তার ওপর অমানসিক নির্যাতন চলে বলেও জানান তিনি। দুই দিন পর মাহমুদুল এবং তার অন্য সঙ্গীদের পাহাড়ি এলাকার একটি কারাগারে স্থানান্তর করে আরাকান আর্মি। যেখানে তারা পরবর্তী ১৫ দিন বন্দি ছিলেন। খাবারের বিষয়ে মাহমুদুল বলেন, ‘আমাদের কেবল একমুঠো ভাত এবং সিদ্ধ কলাগাছ দেওয়া হতো। কখনো কখনো শুধু মসুর ডাল দেওয়া হতো, তবে তা পচা ছিল এবং তাতে পোকা থাকতো। এমনকি আমাদের দেওয়া পানি ছিল পোকামাকড় এবং সিগারেটের ছাইযুক্ত।’ মাহমুদুলের ভাষ্য অনুযায়ী, একই ক্যাম্পে কমপক্ষে ছয়জন বাংলাদেশি জেলে বন্দি ছিলেন। আমরা তাদের অনুরোধ করেছিলাম যেন আমাদের এক বার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগ দেয়, যাতে তারা মনে না করে আমরা মারা গেছি, কিন্তু তারা তা দেয়নি।’ টানা ১৭ দিন বন্দি থাকার পর মুক্তি পান মাহমুদুল হাসান। মুক্তি পেলেও আটকের সময় নৌকা ও তাদের জাল আরাকান আর্মির কব্জায় থেকে যায়। মাহমুদুল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘কিছু দিন আগেই দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে নৌকা বানিয়েছিলাম। আমাদের যখন দেওয়া হলো তখন শুধু আমাদেরই মুক্তি দেওয়া হয়। নৌকা আর জাল চোখের সামনে থাকলেও সেগুলো আনতে পারিনি। শুধু জীবনটা সঙ্গে করে নিয়ে আসছি। কিন্তু এখন দুই লাখ টাকা ঋণ কীভাবে শোধ হবে।’ গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, গত মাসে নাইক্ষ্যংদিয়া পোকখালি পয়েন্ট থেকে অন্তত ২৩ জন জেলে তাদের নৌকাসহ আটক হয়েছিল, যা শাহপরীর দ্বীপ থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মাত্র ৩০০ মিটার নৌপথের কারণে প্রতিদিনই প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয় জেলেদের। অর্থাৎ, বাংলাদেশ সীমান্তে ভাটার কারণে নৌকা যেতে পারে না। এজন্য মাঝে মধ্যে মিয়ানমার সীমান্তে নৌকা চলে যায়। এছাড়া জোয়ারের সময় অনিচ্ছাকৃতভাবেই জেলেদের নৌকা কিংবা জাল মিয়ানমার সীমান্তে চলে যায়। ২০ বছর ধরে মৎস্যজীবী হিসেবে কাজ করা মো. শফিউল্লাহ বলেন, ‘আমরা জানি যে প্রতিদিন দুই বা তিনজন জেলেকে আরাকান আর্মি জোর করে আটক করছে। আমাদের নৌকা যদি সামান্য ভুল করেও তাদের এলাকায় ঢুকে, তাহলে তারা আমাদের বাংলাদেশে ঢুকে আটক করে।’ শফিউল্লাহ দাবি করেন, আরাকান আর্মি সাধারণত জেলেদের মুক্তির জন্য এক লাখ বা দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে। তাদের কাছে বাংলাদেশি সিম কার্ড আছে এবং তারা নির্যাতনের ছবি এবং ভিডিও পাঠিয়ে পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করে। তারা বাংলাদেশি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মুক্তিপণ সংগ্রহ করে, যা মূলত বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের একটি গ্রুপ পরিচালনা করে। এই গ্রুপটির সঙ্গে আরাকানদের পরিবারগুলোর যোগাযোগ রয়েছে।আরাকান আর্মির পরিবার বাংলাদেশে! ২১ বছর বয়সী মৎস্যজীবী আব্দুর রহমান, যিনি ১৭ দিন আরাকান আর্মির ক্যাম্পে বন্দি ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বন্দি থাকার সময় কিছু বাংলাভাষী আরাকান আর্মি সদস্য বলেছিলেন, তাদের পরিবার কক্সবাজার এবং টেকনাফে বসবাস করে। কিছুদিন আগেও জেলেদের পরিবারের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করেছে আরাকান আর্মির সদস্যরা। এটি অত্যন্ত গোপনে হয়েছে।’ বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) জেলেদের মুক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বিজিবি টেকনাফ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশি নৌকা মিয়ানমারে চলে গেলে আরাকান আর্মি জেলেদের ধরে নিয়ে যায়। তবে তারা যে আমাদের সীমান্ত এলাকায় প্রবেশ করছে এটি সত্য নয়। আরাকান আর্মি সক্রিয় হতে এবং স্বীকৃতি পেতে চায়, এজন্য তারা এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে। তবে আরাকানদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা সাড়া দেয়। যার কারণে আমরা জেলেদের ফিরিয়ে আনতে পারছি।’ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মুক্তিপণ নেওয়ার বিষয়ে আশিকুর রহমান জানান, তারা এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগ পাননি। আরাকানরা বাংলাদেশি জেলেদের কাছ থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আদায় করছে, যা তারা তাদের এলাকায় প্রবেশের জন্য শাস্তি হিসেবে নেয়। বিজিবির নিরাপত্তা পোস্ট সম্পর্কে জেলেদের জিজ্ঞাসাবাদ সম্পর্কে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সীমান্তে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে সেগুলো কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করছি আমরা। বিজিবি সদস্যরা সীমান্তে সর্বদা সক্রিয় থাকেন। অন্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে সীমান্ত রক্ষার কাজ করে যাচ্ছে নিরলসভাবে।’ বর্তমানে নাফ নদীতে মাছ ধরতে মানতে হয় যে শর্ত: প্রথমত, সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শাহপরীর দ্বীপ থেকে টেকনাফ জেটি ঘাটের মধ্যে মাছ ধরা যাবে। দ্বিতীয় শর্ত অনুযায়ী, জেলেদের মাছ ধরতে যাওয়ার সময় পাঁচটি নির্ধারিত বিজিবি পোস্টে তাদের টোকেন/আইডি কার্ড দেখাতে হবে। মাছ ধরার পরে তারা বিজিবি সদস্যদের সব ধরনের সাহায্য করবে। কোনো জেলেকে চেকপোস্টে জানানো ছাড়া মাছ ধরতে দেওয়া হবে না। জেলেদের বাংলাদেশ সীমান্ত পার হতে দেওয়া হবে না। চতুর্থ শর্তে বলা হয়েছে, মৎস্য অধিদপ্তরের নিবন্ধিত মৎস্যজীবীদের আপডেট করা তালিকা বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেওয়া যাবে, যাতে নিশ্চিত করা যায় যে কেবল নিবন্ধিত জেলেরাই নাফ নদীতে মাছ ধরছেন। পঞ্চম শর্তে বলা হয়েছে, এই অনুমতি সম্পূর্ণ অস্থায়ী। সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তিন মাস পর এই অনুমতি নবায়ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

লক্ষ্মীপুরে পাঁচ পয়েন্টে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধন
রমজান উপলক্ষে নিত্যপণ্যের বাজারে ক্রেতাদের স্বস্তি দিতে লক্ষ্মীপুরে শুরু হয়েছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম। এই কার্যক্রমের আওতায় যে কোনো ব্যক্তি ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে পারবেন।বুধবার (৫ মার্চ) সকাল ১১টার দিকে শহরের গোডাউন রোডে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জেপি দেওয়ান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জামশেদ আলম রানা, সহকারি কমিশন (ভূমি) অভি দাস। জানা যায়, লক্ষ্মীপুরের পাঁচটি স্থানে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে মাসব্যাপী টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। একজন ব্যক্তি ১ কেজি ছোলা, ১ কেজি চিনি, ২ কেজি মসুর ডাল ও সয়াবিন তেল ২ লিটার কিনতে পারবেন। প্রতি প্যাকেজের মূল্য ৪৫০ টাকা। শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত আগামী ২৮ মার্চ পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। জেলা সদরের এই ট্রাকসেল কার্যক্রমের আওতায় যে কোনো ব্যক্তি পণ্য কিনতে পারবেন। প্রতি ট্রাকে ৪০০ জনের পণ্য থাকবে। এই ট্রকসেল কার্যক্রমের পাশাপাশি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে টিসিবি কার্ডধারীদের নিকট পণ্য বিক্রয় কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। রাজীব কুমার সরকার বলেন, ‘স্মার্ট কার্ডধারী নিম্ন আয়ের পরিবারের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রির কার্যক্রম চলছে। এর পাশাপাশি কার্ড নেই, এমন সাধারণ ভোক্তাদের কাছে ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করা হবে।পবিত্র রমজান উপলক্ষে দ্রব্য মূল ক্রেতা সাধারণের ক্রয়সীমায় মধ্যে রাখাতে ৫টি স্থানে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম চলবে। এছাড়া নিয়মিত আমাদের বাজার মনিটরিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’

আইনশৃঙ্খলার অবনতি: চুয়াডাঙ্গায় ডাকাতিসহ ৬ মাসে ১৪ হত্যা, ২০ ধর্ষণ
চুয়াডাঙ্গা জেলায় গত ৬ মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ফলে, জনগণের মাঝে উদ্বেগ ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। গত আগস্ট মাস থেকে শুরু হয়ে বর্তমানে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণের ঘটনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরুর পর নিয়মিত পুলিশি অভিযান চলছে ও আটকের সংখ্যাও বাড়ছে। তারপরও চুরি-ছিনতাই থেমে নেই। স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, এই সময়কালে অন্তত ৬টি ডাকাতি, ২৯টি চুরি, ১৪টি হত্যাকাণ্ড এবং ২০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৭৭টি মামলা দায়ের হয়েছে, যার মধ্যে বেশ কিছু ঘটনার এরইমধ্যে আসামি গ্রেফতার হয়েছে। তবে কিছু ঘটনা এখনও তদন্তাধীন রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত ২৮ জানুয়ারি আলমডাঙ্গা-কুষ্টিয়া সড়কের জগন্নাথপুর শ্রীরামপুর সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে রাস্তায় গাছ ফেলে বোমা বিস্ফোরণ করে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই সময় কুষ্টিয়াগামী ও আলমডাঙ্গাগামী ট্রাক, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, অ্যাম্বুলেন্স এমনকি মরদেহবাহী গাড়িকেও রাস্তায় থামিয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে জিম্মি করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করা হয়। এর ৪ দিন পর জড়িত ৫ জনকে গ্রেফতার করে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ। ওই সময় ডাকাত দলের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ২টি রামদা ও ডাকাতির নগদ দেড় হাজার টাকা। এর আগে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর জীবননগরের সন্তোষপুর-আন্দুলবাড়িয়া সড়কে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সড়কে খেজুরগাছ, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও ট্রলি ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে অস্ত্রের মুখে যানবাহন থেকে ডাকাতির ঘটনা ঘটে তখন। ওই ঘটনায় পথচারীদের কুপিয়ে জখম ও মারধর করে ডাকাত দলের সদস্যরা। মামলা হলে জীবননগর থানা পুলিশ একজনকে আটক করে। এরপর ২৫ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার মর্তুজাপুরে এমইপি ইটভাটার ফার্মে নাইটগার্ডকে ঘুমন্ত অবস্থায় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। তাকে হাত-পা বেঁধে রেখে বেদম মারপিট করে ডাকাত দল। পরে কয়েক লক্ষাধিক টাকার ৪টি গরু ও ৪টি ছাগল নিয়ে নির্বিঘ্নে সটকে পড়ে তারা। এই ঘটনায় ডাকাত দলের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে সদর থানা পুলিশ। সবশেষ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোরে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের আলমডাঙ্গার কুলপালা এলাকায় দুই ট্রলি চালকের কাছ থেকে প্রায় লক্ষাধিক টাকা লুট করে নেয় ডাকাত দল। এ ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এছাড়া, গত বছরের ১০ অক্টোবর আলমডাঙ্গার আটকপাট, ১ ডিসেম্বর দর্শনা-মুজিবনগর সড়কের রামনাগরে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। শুধু ডাকাতিই নয়, সমানতালে ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। গত ৬ মাসে জেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৮টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার দিকে দামুড়হুদায় দর্শনা থানার হরিশচন্দ্রপুর-সড়াবাড়িয়া সড়কে প্রতিবন্ধী স্কুলের অদূরে এক নবদম্পতি ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন। এসময় স্বামী সাগরকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে স্ত্রীর গহনা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। অবস্থা বেগতিক দেখে মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মোটরসাইকেলটি জব্দ করে থানা হেফাজতে নেয়। মামলা হওয়ার একদিন পর চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আসামিদের কাছ থেকে লুট করা মালামাল এবং ঘটনায় ব্যবহৃত ২টি হাসুয়া উদ্ধার করা হয়। বেড়েছে চুরির ঘটনাও। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর সকালে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটে শহরের নাফি টেলিকম নামে একটি মোবাইল ফোনের দোকানে। নগদ টাকা ও নতুন মোবাইল ফোনসহ প্রায় ২৮ লক্ষাধিক টাকা চুরি গেছে বলে দাবি করেন দোকান মালিক। এ ঘটনার এখনো কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ। নাফি টেলিকমের মালিক ভুক্তভোগী মাইনুল হাসান রিপন বলেন, ‘আমার দোকানের চুরির ঘটনায় এখনো কোনো আসামি গ্রেফতার হয়নি। দুই মাস পার হয়ে গেছে কিন্তু আসামিরা আইনের আওতায় আসলো না। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে আমাদের মতো ব্যবসায়ীরা। দিনকে দিন চুরি ছিনতাই ডাকাতির ঘটনা বাড়ছে। এখনো দুশ্চিন্তায় রয়েছি।’ হত্যাকাণ্ডগুলোর মধ্যে ২০২৪ সালের ৪ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ভালাইপুর গ্রামের ভ্যানচালক আলমগীর হোসেনকে দুর্বৃত্তরা শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। গত ২০ অক্টোবর দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দৌলতদিয়ার গ্রামে গৃহবধূ অঞ্জলি রাণীকে নিজ বাড়িতে কুপিয়ে হত্যা করে। গত ২৬ অক্টোবর দুপুরে জীবননগর মেদেনীপুর গ্রামের একটি বিলের ভেতর থেকে শিক্ষক সুজন আলির কঙ্কাল উদ্ধার হয়। ওই বছরেরই গত ১৩ নভেম্বর আলমডাঙ্গার ফরিদপুর এলাকা থেকে পুরাতন মোটরসাইকেল ব্যবসায়ী তুষার আহমেদ সবুজকে হত্যার পর মোটরসাইকেলসহ আগুনে পোড়ানো হয়, গত ১২ নভেম্বর আসাননগরে ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা পলি খাতুনকে স্বামীসহ তার পরিবারের লোকজন পিটিয়ে ও নির্যাতন করে হত্যা করে, ১৪ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের একটি মেহগুনি বাগান থেকে তরুণী খালেদা আক্তার মুন্নির অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে। এছাড়া চলতি বছরের গত ১৬ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার বদনপুর গ্রামের মাঠের ভুট্টাক্ষেতে যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ব্যাপারে নাজমুল হক স্বপন নামের ব্যক্তি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ পুলিশ আগের মতো ফাংশন করছে না। যদিও পরিস্থিতি এখন ভালোর দিকে যাচ্ছে। আশা করা যায়, চুয়াডাঙ্গার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে।’ নাম প্রকাশ না করে একজন রাজনৈতিক নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা মূলত পালিয়ে থেকেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। পুলিশ যদি মামলার আসামিদের ঠিকঠাক মতো গ্রেফতার করতে পারে, তবেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’ এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মারুফ সরোয়ার বাবু জানান, পুলিশের কিছু সমস্যা থাকার কারণে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ রয়েছে এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার চেষ্টা চলছে। চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) কনক কুমার দাস জানান, পুলিশ কঠোর নজরদারি এবং তৎপরতার মাধ্যমে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা দ্রুত উদঘাটন করছে। অপরাধীদের গ্রেফতারেও নিয়মিত অভিযান পরিচালনাসহ আটক করা হচ্ছে। জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো।

নামাজরত অবস্থায় ঘরের মধ্যে পুড়ে মারা গেলেন বৃদ্ধা
ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলায় একটি বসতঘরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের মাঝকান্দী পূর্বপাড়ায় এ ঘটনায় মোসা. জবেদা খাতুন (৮৭) নামে এক বৃদ্ধা পুড়ে মারা গেছেন। জবেদা খাতুন মাঝকান্দী পূর্বপাড়ার মৃত জলিল মোল্যার স্ত্রী ও রফিক মোল্যার মা। মধুখালী ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ রাশেদুল আলম বলেন, ‘মঙ্গলবার আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। খবর পেয়ে আনুমানিক সাড়ে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় আগুন ণিয়ন্ত্রনে আনি। এর আগেই একটি বসত ঘরের তিনটি রুম, ঘরে থাকা মালামাল ও একটি রান্না ঘর আগুনে পুড়ে যায়। আগুন লাগার সময় বৃদ্ধা জবেদা বেগম নামাজরত অবস্থায় ছিলেন। বার্ধক্যজনিত কারণে আগুনের বিষয়টা বুঝতে পারেননি তিনি, কিছু না বুঝায় আগুনে পুড়ে ঘটনাস্থলে মারা যান। এ সময় বাড়িতে অন্য কেউ ছিলেন না বলে জেনেছি।’ মধুখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নুরুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। এ সময় ঘরে থাকা অবস্থায় জবেদা খাতুন নামে এক বৃদ্ধা মারা গেছেন। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি।’

রাবির শিক্ষার্থীদের অবরোধ: রাজশাহীর সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ
ডিসেন্ট্রালাইজড বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীকতার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) এলাকায় রেললাইন অবরোধ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে রাজশাহীর সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বুধবার (৫ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন এলাকায় তারা এই অবরোধ শুরু করেন। এর আগে মঙ্গলবার (৪ মার্চ )রেললাইন অবরোধের ডাক দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাবির অন্যতম সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার। সকালে তার নেতৃত্বে এ আন্দোলন শুরু হয়েছে। রেলওয়ে স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন ম্যানেজার শহিদুল আলম বলেন, ‘বুধবার সকাল থেকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। তবে এখন সব ট্রেন রাজশাহী স্টেশন ও হরিয়ান স্টেশনে আটকা আছে। এ আন্দোলন স্থগিত না হওয়া পর্যন্ত ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে না।’

ইউএনওর কক্ষে জামায়াত নেতাদের মারধর, বিএনপির চার নেতাকে শোকজ
পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমিরসহ চার নেতাকে মারধর ও ইউএনওকে হুমকির ঘটনায় অভিযুক্ত বিএনপির চার নেতাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ মার্চ) রাতে বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে এ আদেশ দেওয়া হয়। এর আগে সোমবার (৩ মার্চ) দুপুরের পর ইউএনও মীর রাশেদুজ্জামানের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। নোটিশে বলা হয়েছে, ‘পাবনা জেলাধীন সুজানগর উপজেলা ইউএনওর কার্যালয়ে ঢুকে হাঙ্গামা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে অশোভন ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের অভিযোগে সুজানগর উপজেলা বিএনপির নেতা মোহাম্মদ মজিবর রহমান, পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বাবু খা, বিএনপির নেতা মোহাম্মদ মানিক খা এবং সুজানগর এনএ কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মো. শাকিল খানের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে জবাব দিতে তাদেরকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে।’ এ বিষয়ে সুজানগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবিএম তৌফিক হাসান বলেন, ’কেন্দ্র থেকে শোকজ করেছে। এটা লোক মাধ্যমে শুনেছি। তবে স্থানীয়ভাবে আমরা এখনো এমন চিঠি বা নির্দেশনা পাইনি। আমি অসুস্থতার জন্য বর্তমান ঢাকায় অবস্থান করছি। এই ঘটনা কোনভাবেই ঘটানো ঠিক হয়নি। সরকারি অফিসে তাও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের রুমে ন্যাক্কারজনক ঘটনা হয়েছে। এসব দুষ্কৃতকারীদের শাস্তি হওয়া দরকার।’ মীর রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘আমার রুমে এ ঘটনা ঘটেছে সেটা খুবই কষ্টদায়ক। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। সেখান থেকে নির্দেশনা আসলে আমি মামলা করতে পারবো। তাছাড়া আমি নিজে নিজের সিদ্ধান্তে মামলা বা অভিযোগ দিতে পারবো না। এ ক্ষেত্রে স্যারদের পারমিশন লাগবে। দেখা যাক কি সিদ্ধান্ত আসে।’ উল্লেখ্য, গত সোমবার দুপুরের পর সুজানগর উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ফারুক-ই আজম, সেক্রেটারি টুটুল বিশ্বাস, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি ওয়ালিউল্লাহ বিশ্বাস, সাবেক কাউন্সিলর মোস্তাক আহমেদ সাংগঠনিক ও সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের খোঁজ নিতে ইউএনও অফিসে যান। কিন্তু ইউএনও অন্য একটি কাজে ব্যস্ত থাকায় জামায়াত নেতারা অফিসে বসে অপেক্ষা করতে থাকেন। এ সময় উপজেলা বিএনপির সাবেক যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মজিবর রহমানের নেতৃত্বে কয়েকজন বিএনপির নেতাকর্মী বালু উত্তোলন বন্ধ করেছেন কেন জানতে ইউএনওর কাছে যান। সেখানে আগে থেকেই বসে থাকা জামায়াত নেতাদের দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন- এরা কেন এখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকে। এ কথা বলেই বিএনপি নেতারা ইউএনওর কক্ষ থেকে বের হয়ে আরও কয়েকজনকে ডেকে আনেন। এরপরই বিএনপির নেতা মজিবুর রহমান, বাবু খা, মানিক খা, আব্দুল বাছেদ, আরিফ শেখসহ বিএনপির নেতাকর্মীরা ইউএনওর কক্ষে ঢুকে ওই জামায়াত নেতাদের কিল-ঘুষি, লাথিসহ বেধড়ক মারধর করেন। এ ঘটনার সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশের পর দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

মালয়েশিয়ায় জিম্মি সন্তান, ফিরে পেতে মায়ের আকুতি
পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার যুবক মো. সাগরকে (২০) মালয়েশিয়ায় নিয়ে জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি করার অভিযোগ উঠেছে। পরিবারের অভিযোগ, দেড় বছর আগে তাকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মালয়েশিয়ায় নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর পর থেকেই তিনি নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। বর্তমানে তাকে জিম্মি করে সাড়ে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে। ভুক্তভোগীর মা বিউটি বেগম রোববার (২ মার্চ) বাউফল থানায় এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তিনি ছেলের মুক্তির জন্য সরকারের সহায়তা চেয়েছেন এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। সাগরের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামে। তার বাবা ইদ্রিস ফরাজি। পরিবারের অভিযোগ, একই উপজেলার দাশপাড়া গ্রামের প্রবাসী মো. আমিন হাওলাদার তাকে মালয়েশিয়ায় নিয়ে যান। সাগরের মা বিউটি বেগম জানান, আমার ছোট ভাই সোহরাব প্যাদা এবং তার শ্যালক আমিন হাওলাদার অনেক দিন ধরে মালয়েশিয়ায় আছেন। তারা অনেক লোকজনকে বিদেশে পাঠিয়েছেন। আমার ভাই সোহরাব আমিনের মাধ্যমে আমার ছেলেকে মালয়েশিয়ায় ভালো চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন এবং বিনিময়ে আমাদের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা নেন। আমরা ধারদেনা করে টাকা জোগাড় করে দিই। দেড় বছর আগে আমার ছেলে সাগরকে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি চাকরি না পেয়ে উল্টো নির্যাতনের শিকার হন। এখন তারা আমাদের কাছে আরও সাড়ে ৩ লাখ টাকা দাবি করছে। আমি আমার ছেলেকে ফেরত চাই। তিনি আরও জানান, আমিন কিছু দিন আগে আমাকে ফোন দিয়ে আমার ছেলেকে মারধর করে। আমি ফোনে আমার ছেলের কান্নার শব্দ শুনেছি। আমার ভাই সোহরাবও এই কাজে জড়িত। তারা দুইজন মিলে আমার ছেলেকে জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নিতে চাইছেন। সাগরের মামা মো. ইউসুফ জানান, ২০২৩ সালে দালাল আমিন প্রথম বার অবৈধভাবে সাগরকে মালয়েশিয়ায় নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সে সময় থাইল্যান্ডে আটকে পড়ে এবং এক মাস ১৭ দিন জেল খাটতে হয় তাকে। পরে থাইল্যান্ড সরকার তাকে দেশে ফেরত পাঠায়। এরপর আমিন তাকে বৈধ ভিসায় মালয়েশিয়ায় নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর থেকে আমিন সাগরকে নির্যাতন শুরু করেন এবং মুক্তিপণ দাবি করেন। ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আমিন হাওলাদারের সঙ্গে একাধিকার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। অন্যদিকে, সাগরের মামা সোহরাব প্যাদা নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, আমার শ্যালকের মাধ্যমে সাগরকে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। এ জন্য আমার অনেক টাকা খরচ হয়েছে, যা এখনও পরিশোধ করা হয়নি। তবে সাগরের ওপর কোনো নির্যাতনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এ বিষয়ে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন বলেন, ‘ব্যাপারটি নিয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।’

বাসে তুলে রগ কেটে অটোচালককে খুন
সাইড দেওয়া নিয়ে তাকওয়া পরিবহনের বাসচালক ও তার সহকারীর সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হয় অটোরিকশাচালক রিটন মিয়ার। এক পর্যায়ে জোর করে রিটনকে বাসে তুলে নিয়ে হাত ও পায়ের রগ কেটে খুন করে ফেলে রেখে যায় তারা। গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার গড়গড়িয়া নতুন বাজার এলাকায় সোমবার (৩ মার্চ) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। পরে হত্যা মামলা করতে স্বজনরা থানায় গেলেও পুলিশ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের মামলা করার পরামর্শ দেয়। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে গতকাল মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি এলাকায় অবস্থান নেন রিটনের সহকর্মী, স্বজন ও এলাকাবাসী। হত্যা মামলা গ্রহণ ও মহাসড়ক থেকে তাকওয়া পরিবহন নিষিদ্ধের দাবিতে মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রায় ৪ ঘণ্টা অবস্থান করেন তারা। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে প্রায় ১০ কিলোমিটারজুড়ে আটকা পড়ে হাজারো যান। ভোগান্তি পোহায় মানুষ। পরে শ্রীপুর থানা হত্যা মামলা নিলে সড়ক ছেড়ে দেন আন্দোলনকারীরা। পুলিশ, স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, শ্রীপুর পৌরসভার মাধখলা গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে রিটন মিয়া মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবন নির্বাহ করেন। প্রতিদিনের মতো সোমবার বিকেলে তিনি অটোরিকশা নিয়ে বের হন। এ সময় তাকওয়া পরিবহনের একটি মিনিবাস রিটনের অটোরিকশার পেছনে এসে হর্ন বাজিয়ে সাইড চায় চালক। সামনে গাড়ি থাকার কারণে রিটন সাইড দিতে পারছিলেন না। কিন্তু তাকওয়ার চালক হর্ন বাজানো বন্ধ করেনি। পেছন ফিরে রিটন হর্ন বাজানো বন্ধ করতে অনুরোধ করেন। এতেই চটে যায় তাকওয়া বাসের চালক ও হেলপার। তারা রিটনকে জোর করে তাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। নিহতের স্ত্রী শারমিন বেগম বলেন, ‘তুলে নেওয়ার দুই ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলের দেড় কিলোমিটার দূরে আমার স্বামীর মরদেহ পান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে তাঁর হাত-পায়ের রগ কাটা রক্তাক্ত মরদেহ পাই। তারা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আমি এর বিচার চাই।’ রিটনের ছোট ভাই মো. আজিজুল বলেন, ‘থানায় গেলে পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করে। রাতভর অবস্থান করেও মামলা করতে পারিনি। আমার ভাইকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়েছে। অথচ পুলিশ বলছে সড়ক দুর্ঘটনার মামলা করতে। এ জন্যই স্থানীয় বাসিন্দা ও অটোরিকশাচালকরা সড়ক অবরোধ করেন। মামলা নেওয়ার পর আন্দোলন থেকে সরে যান তারা।’ শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল জানান, রিটনের ভাই তৌহিদ মিয়া তিনজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

জরুরিভিত্তিতে মেরামত হবে ২ হাজার ২১৫ কিলোমিটার বেহাল গ্রাম সড়ক
গ্রামের অর্থনৈতিক অবকাঠামো শক্তিশালী করতে প্রত্যন্ত গ্রামের সড়ক মেরামতের উদ্যোগ নেয় বিগত সরকার। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৬৭১ কিলোমিটার সড়ক মেরামত করা হয় প্রকল্পের আওতায়। বাকি দুই হাজার ২১৫ কিলোমিটার সড়কও দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের অধিক ভাঙা রাস্তা জরুরিভিত্তিতে মেরামত ও সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সিলেট, নোয়াখালী, ফেনী অঞ্চলে সংস্কার করা সড়কগুলোও বন্যায় অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সময় ও ব্যয় বাড়িয়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কসহ বাকি বেহাল সড়ক মেরামত করা হবে। এ জন্য ‘গ্রাম সড়ক পুনর্বাসন’ শিরোনামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা। যার পুরোটাই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দেওয়া হবে। এর আগে প্রকল্পের মোট ব্যয় ছিল তিন হাজার ৫১৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করবে। ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদকালে এটি বাস্তবায়িত হওয়ার কথা ছিল। ব্যয় বাড়িয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে জুন ২০২৩ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। পরে জুন ২০২৪ ও সবশেষ জুন ২০২৬ নাগাদ মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু আরও সড়কের অবস্থা বেহাল হওয়ার কারণে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে জুন ২০২৭ পর্যন্ত। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র এসব তথ্য জানায়। প্রকল্পটি নিয়ে এরই মধ্যে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা করেছে পরিকল্পনা কমিশন। পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. ছায়েদুজ্জামান বলেন, ‘চলমান প্রকল্পটি নানা কারণে বাস্তবায়নে ধীরগতি হয়েছে। গ্রামে টার্গেট কাজগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। সেজন্য বাড়ানো হবে প্রকল্পের সময়-ব্যয়। উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কগুলো তাদের নিজস্ব অর্থায়নে হয়। এ প্রকল্পে শুধু গ্রাম সড়কের কাজ করা হবে। আমাদের গ্রামই কিন্তু প্রধান। গ্রামের যোগাযোগ অবকাঠামো যত উন্নত হবে দেশও তত এগিয়ে যাবে।’ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পটিতে সড়ক পুনর্বাসনের জন্য মোট সাত হাজার ৮৮৬ কিমি লক্ষ্যমাত্রা আছে। এর মধ্যে জুন ২০২৪ পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৬৭১ কিমি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরে ৮৫৯ কিমি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত আছে, যা শেষ করার জন্য সময় বাড়ানো প্রয়োজন। প্রথম সংশোধিত ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত কিছু সড়কের পরিবর্তে সাম্প্রতিক বন্যায় অধিক ক্ষতিগ্রস্ত কিছু জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক পুনর্বাসনের জন্য ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করায় প্রকল্পের সংশোধন প্রয়োজন। পরিকল্পনা কমিশনের মতামত, বিটুমিনাস কার্পেটিং দিয়ে ওভারলের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম সড়কের পুনর্বাসন খাতে একক ব্যয় প্রথম সংশোধনের তুলনায় দ্বিতীয় সংশোধনে বেড়েছে। এছাড়া কাজের পরিমাণ কমেছে ৬৬৪ কিমি। একক ব্যয় বাড়ায় কাজের পরিমাণ কমেছে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে দেশের ৬৪টি জেলার ৪৭৬টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ আছে ৪২৫ কোটি টাকা। স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ দিন ধরে এসব রাস্তা মেরামত ও সংস্কার না করার ফলে কৃষিজাত পণ্যের বাজারজাতকরণের সুবিধা পাচ্ছে না প্রান্তিক কৃষক। একই সঙ্গে গ্রামীণ জনগণের বাণিজ্যিক সুবিধা ও কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে দারিদ্র্য বিমোচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এসব কারণেই দেশের ৬৪ জেলার অধিক ভাঙা রাস্তা মেরামত ও সংস্কারের জন্য প্রকল্পটি প্রণয়ন করা হয়েছিল। দেশের গ্রামাঞ্চলের সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিপরীতে যে বরাদ্দ পাওয়া যায়, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এ কারণে বিদ্যমান সড়কের একটি বড় অংশ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে বিনিয়োগ করা সরকারি সম্পদের অপচয় ও পল্লি জীবনের কাঙ্ক্ষিত সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশের জনগণ। এ কারণে গ্রাম সড়কের পুঞ্জীভূত রক্ষণাবেক্ষণের পরিমাণ কমিয়ে বিশেষ করে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ করে পুরো দেশের গ্রামীণ জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রকল্পটি নেওয়া হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্যদের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে প্রকল্পের কাজ এতদিন চলমান ছিল। কিন্তু জনপ্রতিনিধি না থাকায় গ্রাম সড়কের অবস্থা বর্তমানে আরও বেহাল।

ডেলিভারী করানোর সময় নবজাতকের দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন, তদন্তে কমিটি
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এক প্রসূতির প্রসবকালে নবজাতকের দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে চিকিৎসকদের দাবি, গর্ভে থাকতেই নবজাতক মারা গিয়েছিল। পরে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে পেট থেকে নবজাতকের মাথা বের করা হয়। মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকালে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালের লেবার গাইনী ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় জ্যেষ্ঠ গাইনী চিকিসক ডাক্তার নার্গিস সুলতানাকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে এই ঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ করেনি ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। বর্তমানে ভুক্তভোগী ওই নারী হাসপাতালের লেবার গাইনী ওয়ার্ডের ২১ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ভুক্তভোগী নারী পাবনার আতাইকুলা ইউনিয়নের আতাইকুলা গ্রামের দুবাই প্রবাসী রমজান খাঁর স্ত্রী শিউলী খাতুন (৩৫)। দুই সন্তানের জননী শিউলী তৃতীয় সন্তান গর্ভে ধারণ করেছিলেন। হাসপাতাল ও রোগীর স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গর্ভবতী মা প্রথম থেকেই পাবনার গাইনী চিকিৎসক শাহীন ফেরদৌস শানুর নিয়মিত রোগী ছিলেন। হঠাৎ করেই মঙ্গলবার ভোররাতে প্রসব ব্যথা উঠলে পরিবারের সদস্যরা তাকে সেহেরীর পরপরই ডা. শানুর শহরের বাসার চেম্বারে নিয়ে আসেন। সেখানে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসক দেখে অবস্থা জটিল মনে করে তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া পরামর্শ দেন। এ সময় রোগীর স্বজনরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালে ভর্তির পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার দীপা মর্জিনা রোগীর প্রাথমিক পরীক্ষা করে পেটের বাচ্চা মৃত বলে জানান। তবে পরিবারের সদস্যদের দাবি, বাচ্চা মৃত সেটি পরে জানতে পেরেছেন তারা। পরে হাসপাতালের ধাত্রী নরমাল ডেলিভারী করানোর সময় নবজাতকের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পেটের ভেতরে রয়ে যায়। তারপর সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে পেট থেকে বিচ্চিন্ন মাথা বের করা হয়৷ ঘটনার বিষয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাক্তার রফিকুল হাসান বলেন, ‘রোগীর অবস্থা এখন ভালো আছে। গাইনী চিকিসক নার্গিস সুলতানাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সাত কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দেবেন। এরপরে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘রাতে বা সকালে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা ওই পরিবারের সাথে কথা বলে ডেলিভারীর কাজটি করা উচিৎ ছিলো। এই ঘটনায় চিকৎসকসহ যারা ছিলেন তাদেরকে আমি ডেকে পাঠিয়েছি। সকলের সাথে কথা বলে জানা যাবে প্রকৃত ঘটনা কি হয়েছিলো।’ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডাক্তার জাহিদুল ইসলাম ও গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ফাতেমা মাসুর। নার্গিস সুলতানা বলেন, ‘এই নারীর পেটে যে বাচ্চা ছিল সেটি মৃত অবস্থায় ছিল। মৃত বাচ্চা নিয়েই তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তার পেটের বাচ্চার বয়সও পরিপূর্ণ ছিলোনা। সবে মাত্র সাত মাসে পড়েছে। সেই সময়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক সেই মায়ের পেটের ও জরায়ুর অবস্থা দেখে বাচ্চা মৃত বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন পরীবারের সদস্যদের। আমরা বিষয়টি নিয়ে মায়ের পরিপূর্ণ সেবা প্রদানসহ তার জন্য কি কি করণীয় সেটির ব্যবস্থা করেছি।’ তিনি জানান, পেটে থাকা মৃত শিশুটির বয়স কম হওয়াতে তার শরীরের কোন কিছুই শক্ত ছিল না। এমনকি ওই শিশুটির দেহের মাথার অংশ পেটের উপরে ও পা নিচের দিকে ছিলো। নরমাল প্রসব করানোর সময় সেবিকারা জোড়ে টান দিলে ঘাড় থেকে মাথা ছিঁড়ে যায়। পরে সিজার করে তার পেট থেকে মৃত শিশুর অবশিষ্ট অংশ মাথা বের করা হয়েছে। এই ঘটনা কেন হয়েছে, কোন অসাবধানতা ছিল কিনা, সেটি তদন্ত করে দেখছি আমরা।’

জেলেদের আট গরু লুট বিএনপির নেতাকর্মীর
বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলায় মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় জেলেদের গরু বিতরণ অনুষ্ঠানে গিয়ে হট্টগোল করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ সময় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে নাজেহাল ও আটটি গরু ছিনিয়ে নিয়ে যান তারা। গতকাল মঙ্গলবার (৪ মার্চ) দুপুরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ ঘটনা হয়। ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বিএনপির নেতাদের জিজ্ঞেস না করে কেন গরু বিতরণ করা হলো- এ নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। ভবিষ্যতে বিএনপির নেতাদের মতামত ছাড়া কোনো কার্যক্রম করবেন না- এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুস সালেহীন নিজেকে রক্ষা করেন। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হতে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে অসংখ্যবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি। মৎস্য অফিসের দায়িত্বশীল একজন জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির লোকজন আটটি গরু নিয়ে যায় এবং একটি তালিকা দিয়ে গেছে, পরবর্তী যেন ওই তালিকা অনুযায়ী বিতরণ করা হয়। সূত্র জানায়, জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচির আওতায় আগের তালিকাভুক্ত ৮০ জেলের মধ্যে মঙ্গলবার একটি করে গরু বিতরণ করা হয়। দুপুরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ। তিনি ৪৮টি গরু সুবিধাভোগীর হাতে হস্তান্তর করে অনুষ্ঠান ত্যাগ করেন। এর পরই সেখানে হাজির হন দেহেরগতি ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ফারুক, উপজেলা কমিটির সদস্য খোকন প্যাদা, চাঁদপাশা ইউনিয়নের রুবেল সরকার, রাজগুরু এলাকার নান্টু জমাদ্দারসহ আরও অনেকে। তারা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে বিএনপির আরও অনেককে এনে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কাউকে ভিডিও না করার নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সবার উদ্দেশে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন বিএনপির লোকজন। গোপনে ধারণ করা একটি ভিডিওচিত্র গণমাধ্যমের কাছে এসেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, বিএনপির একজন উত্তেজিত হয়ে মৎস্য র্কমর্কতাকে বলেন, গরু দেওয়ার বিষয়ে আমার কাছে জিজ্ঞেস করেননি। আমার এলাকার লোককে বারবার বঞ্চিত করতে পারি না। তিনি আওয়ামী লীগের লোককে গরু দেন। অপর এক নেতা মৎস্য কর্মককর্তাকে বলেন, ‘আমরা এর আগেও শুনেছি যে, জামায়াতের লোক নিয়ে আপনি জেলে কার্ড করছেন। বিএনপির লোক গেলে বলেন চলে যান।’ এ সময় মৎস্য কর্মকর্তা তাদের বসতে বললে চিৎকার করে বিএনপির নেতারা বলেন, ‘আপনি আওয়ামী লীগের লোক, আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মা।’ অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মোস্তাফিজুর রহমান ফারুক প্রথমে দাবি করেন, মৎস্য কর্মকর্তার সঙ্গে তাদের কিছুই হয়নি। আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী গরু বিতরণ করছিলেন। তারা সেটা না করার জন্য বলেছেন। মৎস্য কর্মকর্তাকে ঘিরে অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলার ভিডিও আছে বলার পর তিনি বলেন, ‘ভিডিওতে যতটুকু দেখেছেন ততটুকুই ঘটনা, এর বেশি কিছু হয়নি।’ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব অহিদুল ইসলাম প্রিন্সও দাবি করেন কিছু হয়নি। আওয়ামী লীগের লোকজনকে গরু দেওয়ায় বিএনপির কিছু নেতাকর্মী গিয়ে প্রতিবাদ করেছেন মাত্র। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক হোসেন জানান, তিনি গরু বিতরণ কর্মসূচি শুরু করে দিয়ে মাঠ পর্যায়ের আরেকটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে চলে যান। এর পর সাংবাদিকরা তাঁকে জানিয়েছেন, সেখানে ঝামেলা হয়েছে। এর বেশি কিছু তিনি জানেন না।

উখিয়ায় রোহিঙ্গা হেড মাঝিকে গলা কেটে খুন
কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলায় আশ্রয় শিবিরে মোহাম্মদ নুর (৩০) নামে রোহিঙ্গা হেড মাঝিকে কুপিয়ে ও গলা কেটে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত মোহাম্মদ নুর উখিয়ার রোহিঙ্গা ২০ নম্বর ক্যাম্পের এম ৩২ ব্লকের বাসিন্দা আবু ছৈয়দের ছেলে। মঙ্গলবার (৪ মার্চ) রাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ২০ এক্সটেনশনে এই ঘটনা ঘটে। ক্যাম্পের রোহিঙ্গা সূত্রে জানা গেছে, উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২০ এক্সটেনশনে থাকা দোকান থেকে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে অজ্ঞাত ৪-৫ জনের দুর্বৃত্তদের একটি দল এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও গলা কেটে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় রোহিঙ্গারা পুলিশে খবর দিলে ঘটনাস্থলে এপিবিএনসহ পুলিশের টিম পৌঁছে তার মরদেহ উদ্ধার করে। স্থানীয় রোহিঙ্গাদের বরাতে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২০ এক্সটেনশনে এক রোহিঙ্গা মাঝিকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যার সংবাদ আসে। এমন সংবাদে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে ক্যাম্পের এপিবিএন পুলিশের সহায়তায় মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’

বছরে ২৩০টি ডিম দেয় নতুন জাতের ‘বাউ ডাক’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) উদ্ভাবিত নতুন জাতের হাঁস ‘বাউ-ডাক’ পালনে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। যেখানে দেশী হাঁস বছরে ৭০-৮০টি ডেম দেয়, সেখানে বাউ-ডাক জাতের হাঁস মাত্র ১০-১২ সপ্তাহ বয়সে ২ থেকে আড়াই কেজি ওজনের হয় এবং বছরে ২২০-২৩০টি ডিম দেয়। দ্রুত বৃদ্ধির ক্ষমতা, কম মৃত্যুহার ও বাজারে ভালো দামের কারণে এটি দেশের প্রান্তিক খামারিদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই জাতটি উদ্ভাবন করেছেন বাকৃবির পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের গবেষকরা। গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. সামছুল আলম ভূঁঞা জানান, দেশি ও বিদেশি হাঁসের সংকরায়নের মাধ্যমে ‘বাউ-ডাক’ তৈরি করা হয়েছে। এটি দেশের আবহাওয়ায় লালন-পালনের জন্য উপযুক্ত এবং রোগবালাই তেমন হয় না। এটি ডুয়েল টাইপ মাংস ও ডিম উৎপাদনে উপযোগী জাত। ফলে এটি পালন করে খামারিরা দ্বিগুণ লাভবান হচ্ছেন। হাঁসের মাংসের জন্য এটি একটি সম্ভাবনাময় সংকরজাত যা প্রাণিজ প্রোটিনের চাহিদা লাঘবে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে। সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার প্রান্তিক খামারিদের মধ্যে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে নতুন জাতের বাউ হাঁস। কম সময়ে দ্রুত বৃদ্ধি, মৃত্যুহার কম এবং মাংস ও ডিম উৎপাদনে অধিক লাভজনক হওয়ায় অনেকেই এই হাঁসের খামার গড়ার দিকে ঝুঁকছেন। বিশেষ করে উল্লাপাড়ার চয়ড়া গ্রামে ইতিমধ্যে ২০টিরও বেশি বাউ হাঁসের খামার গড়ে উঠেছে। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার চয়রা গ্রামের খামারি ঝর্ণা খাতুন বলেন, ‘পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ও মানবমুক্তি সংস্থার সহযোগিতায় প্রথম পর্যায়ে ৫০টি বাউ হাঁসের বাচ্চা নিয়েছিলাম। এ হাঁস পালন করে দুই মাসে গড় ওজন দুই কেজির বেশি হওয়ায় বিক্রি করে আমি লাভবান হয়েছি। তাই দ্বিতীয় পর্যায়ে আমি আরও ১০০টি বাউ হাঁসের বাচ্চা নিয়ে পালন করব।’ বাঙ্গালা গ্রামের আরেক খামারি শাহিনুর খাতুন বলেন, ‘মানব মুক্তি সংস্থার সহযোগিতায় তিনি ১০০টি হাঁস পালন করছেন এবং এখন পর্যন্ত একটি হাঁসও মারা যায়নি। তুলনাম‚লক কম খাবার খেয়ে দ্রুত বেড়ে ওঠা ও সুস্বাদু মাংসের কারণে বাজারে এর চাহিদা অনেক বেশি।’ এমএমএসের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো মারুফ হাসান বলেন, ‘বাকৃবি উদ্ভাবিত নতুন জাতের হাঁস ‘বাউ-ডাক’। যেটি ১০-১২ সপ্তাহ বয়সে ২-২.৫ কেজি ওজন ও বছরে ২২০-২৩০টি ডিম দেয়। খামারের বায়োসিকিউরিটি, নিয়মিত টিকা প্রদানসহ কীভাবে হাঁসটি পালন করে লাভবান হওয়া যায়, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। কম সময়ে বেশি বৃদ্ধি ও মৃত্যুহার কম হওয়ায় হাঁসটি দিন দিন প্রান্তিক খামারিদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। যেটি অর্থায়ন করছেন পিকেএসএফ ও বাস্তবায়নে মানব মুক্তি সংস্থা।’ উল্লাপাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার শেখ এমএ মতিন বলেন, ‘বাউ হাঁস বাংলাদেশের আবহাওয়ার জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এটি অল্প দিনে বেশি ওজন অর্জন করে ও বেশি ডিম দেয়। এছাড়া রোগবালাইও তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় খামারিরা সহজেই লাভবান হচ্ছেন।’

শাহজালালের মাজারে ধনী-গরিবের ব্যবধান কাটিয়ে সাম্যের গণ ইফতার
সিলেট হযরত শাহজালালের (র.) মাজারে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে গণ ইফতার। প্রতি বছরই প্রথম রমজান থেকে শুরু হয় এই গণ ইফতার কর্মসূচি। যেখানে এক কাতারে মিলিত হোন ধনী গরিব সবাই। ৭০০ বছর থেকে চলমান এই গণ ইফতারে প্রতিদিন তিন শতাধিকের বেশি রোজাদার অংশগ্রহণ করেন। যেখানে তাদের ইফতার করানো হয় খিচুড়ি, বিরিয়ানি থেকে শুরু করে গরুর কিংবা মুরগির মাংস। পেট ভরে ইফতার করতে পেরে রোজাদারও তৃপ্তি প্রকাশ করেন৷ ভক্ত আশেকানদের দান আর মাজার কর্তৃপক্ষের টাকায় ৭০০ বছর ধরে চলে আসছে সর্ববৃহৎ এই গণ ইফতার। ভক্তরা রমজানের প্রতিদিনই নামাজ, মাজার জিয়ারত শেষে যোগ দেন গণ ইফতারে। কালের পরিবর্তনে ইফতার পরিবেশনেও এসেছে কিছুটা পরিবর্তন। একসাথে গণ ইফতারে অংশ নিয়ে তৃপ্ত হন ভক্ত আশেকানরা। কুষ্টিয়া থেকে সিলেট মাজারে আসা আব্দুল হাই নামের এক রোজাদার বলেন, ‘আমরা কুষ্টিয়া থেকে সিলেট মাজারে এসেছি। এখানে ইফতারের ব্যবস্থা দেখে খুব ভালো লাগছে। সকলের সাথে আমরাও ইফতারে সামিল হয়েছে। এটি দারুণ একটি প্রথা। মাজারের খাদেম শামুন মাহমুদ খান বলেন, ‘শাহজালালের মাজারে মানত নিয়ে আসা ভক্তদের সুবিধার জন্যই এ গণ ইফতারের আয়োজন করা হয়। তাদের দান আর মাজার কর্তৃপক্ষের টাকায় চলে আসা এ গণ ইফতারে খাসি কিংবা গরুর মাংস দিয়ে তৈরি আখনি, খিচুড়ি, ছোলা, খেজুর, জিলাপি ও পেঁয়াজু দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।’