চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেওয়া হলো চিন্ময় কৃষ্ণকে

বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে (৩৮) আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে তাকে হাজির করা হয়। আদালত সূত্রে জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় দুপুর ১২টার পর শুনানি হবে। এর আগে, সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে মঙ্গলবার রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় আদালতে হাজির করা হবে। এ মামলায় তিনিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন। গত ৩১ অক্টোবর বিএনপি নেতা ফিরোজ খান (পরে বহিষ্কৃত) বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলায় চিন্ময় দাসসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়। মামলা অভিযোগ করা হয়, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার পর নগরের নিউমার্কেট মোড়ের জিরো পয়েন্টে স্তম্ভের ওপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা একটি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে, যা এখনো সেখানে রয়েছে। ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে লালদীঘির মাঠে একটি মহাসমাবেশ হয়। চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো মানুষ ওই সমাবেশে যোগ দেন। ওইদিন চন্দন কুমার ধরসহ ৯ জন আসামির ইন্ধনে বাকি আসামিরা নিউমার্কেট মোড়ের জিরো পয়েন্ট স্তম্ভ ও আশপাশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপর ধর্মীয় গোষ্ঠী ইসকনের গেরুয়া রঙের ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন করে সেখানে স্থাপন করে দেয়। এ নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এই মামলার পর ইসকন প্রবর্তক ধাম অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও বার্তায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা প্রসঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি মামলাটি সনাতনীদের আট দফা দাবি আদায়ের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা হিসেবে আখ্যা দেন। ওই বিবৃতিতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘৫ আগস্টের পর সনাতনীদের ওপর চালানো হামলা-নির্যাতনের প্রতিবাদে আমাদের আন্দোলন। এই আন্দোলন বর্তমান সরকার কিংবা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়।’

ভারতে তিন হাজার টন ইলিশ রফতানি বন্ধ চেয়ে করা রিট খারিজ

অন্তর্বর্তী সরকার ভারতে তিন হাজার টন ইলিশ রফতানির অনুমতির বিরুদ্ধে দায়ের করা রিট আবেদন খারিজ করেছে আদালত।সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. মাহমুদুল হাসান। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল কবির।এর আগে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক ভারতে ৩ হাজার টন ইলিশ রফতানির অনুমতির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন মাহমুদুল হাসান।পিটিশনে ভারতে তিন হাজার টন ইলিশ রফতানির অনুমতি বাতিলসহ বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা ও নদীর ইলিশ মাছ রফতানির বিরুদ্ধে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়।এতে বলা হয়েছে, ইলিশ মাছ একটি সামুদ্রিক মাছ। এটি মূলত বঙ্গোপসাগরের মাছ। এই বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার সংযুক্ত। বাংলাদেশের চেয়ে ভারত ও মিয়ানমারের সমুদ্রসীমা অনেক বেশি ও বিস্তৃত। এই ভারত ও মিয়ানমারের সমুদ্রসীমায় প্রচুর ইলিশ মাছ উৎপাদন হয়। এছাড়া ভারতের বিভিন্ন নদীতে ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। মূলত বাংলাদেশ থেকে ভারতের ইলিশ মাছ আমদানির কোনও প্রয়োজন নেই । ভারত মূলত বাংলাদেশের পদ্মা নদীর ইলিশ আমদানি করে থাকে। এই ইলিশ মাছ সাগরের মাছ হলেও ডিম পাড়ার জন্য যখন এই মাছ পদ্মা নদীতে আসে তখন এই ইলিশ মাছ পদ্মা নদীর বিভিন্ন প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে পরিপুষ্ট হয় এবং অত্যন্ত সুস্বাদু হয়ে উঠে। মূলত পদ্মা নদীর ইলিশ মাছই স্বাদে ও গন্ধে উৎকৃষ্ট। এই পদ্মা নদীর ইলিশ মাছ যখন রান্না করা হয় তখন এর সুঘ্রাণ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।রিট পিটিশনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে যত ইলিশ ধরা পড়ে তার মাত্র ১০ শতাংশ ইলিশ মাছ পদ্মা নদীতে পাওয়া যায়। অর্থাৎ পদ্মা নদীতে অত্যন্ত সীমিত পরিমাণ ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। পদ্মা নদীতে যে পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যায় তা বাংলাদেশের জনগণের চাহিদা পূরণে একেবারে অপ্রতুল। ভারত মূলত বাংলাদেশের পদ্মা নদীর ইলিশ আমদানি করে থাকে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভারতের ‘ফিস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের’ নেতাদের বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে যেখানে তারা স্বীকার করেছেন যে, তারা বাংলাদেশ থেকে পদ্মার ইলিশ আমদানি করে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের পদ্মা নদীর সব মাছ ভারতে রফতানি হয় এবং বিপুল পরিমাণ ইলিশ মাছ ভারতে চোরাচালান হয়। বাংলাদেশে ভারতীয় এজেন্ট ও রফতানিকারকরা সারাবছর পদ্মা নদীর মাছ সংগ্রহ করে ফ্রিজিং করে রাখেন এবং পরে সুযোগ অনুযায়ী ভারতে রফতানি ও পাচার করে থাকেন। এর ফলে বাংলাদেশের জনগণ বাজারে গিয়ে পদ্মার ইলিশ পায় না এবং সামান্য পরিমাণ পেলেও তার দাম অত্যন্ত বেশি থাকে যা সাধারণ জনগণের পক্ষে কিনে খাওয়া সম্ভব নয়।রিট পিটিশনে আরও বলা হয়েছে, ভারতে রফতানি ও চোরাচালানের জন্য ব্যবসায়ীরা সারা বছর বিপুল পরিমাণ ইলিশ মাছ ফ্রিজিং করে রাখেন। ফলে বাজারে ইলিশের দাম সবসময় বেশি থাকে এবং সাধারণ জনগণ এই ইলিশ মাছ কিনে খেতে পারে না । এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ইলিশ রফতানির ঘোষণার ফলে, বাংলাদেশে ইলিশ মাছের দাম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে সাধারণ মানুষের পক্ষে ইলিশ মাছ কিনে খাওয়া সম্ভব হচ্ছে না ।বাংলাদেশের রফতানি নীতি ২০২১-২৪ অনুযায়ী, ইলিশ মাছ মুক্তভাবে রফতানিযোগ্য কোনও পণ্য নয়। এই মাছ রফতানির করতে চাইলে যথাযথ শর্ত পূরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি। এই ইলিশ মাছ হলো মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারাধীন বিষয়। এক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট অনুমোদন ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এককভাবে এই ইলিশ মাছ রফতানির অনুমোদন দিতে পারে না । এটা এখতিয়ার বহির্ভূত কাজ। এক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিব বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থবিরোধী কাজ করেছেন এবং বাংলাদেশের সংবিধানের ২১(২) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছেন।

নয়া মামলায় আমু, ইনু ও জিয়াউলসহ পাঁচজন গ্রেফতার

ঢাকার পৃথক চার থানায় দায়েরকৃত পাঁচ মামলায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর হোসেন আমু, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার দেখিয়েছেন আদালত। গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক সচিব জাহাঙ্গীর আলম। সোমবার (২৫ নভেম্বর) তাদের কারাগার থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করলে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুর রহমান তাদের এসব মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানাধীন আমীর হোসেন হত্যা মামলায় চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও হাসানুল হক ইনুকে গ্রেফতার দেখিয়েছে আদালত। তেজগাও থানাধীন কারওয়ান বাজার এলাকায় রমিজ উদ্দিন রুপ হত্যা মামলায় আমীর হোসেন আমু, জাহাঙ্গীর আলম, জিয়াউল আহসান গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। সেই সাথে, মোহাম্মদপুর থানাধীন মো. আল শাহরিয়ার হোসেন হত্যা মামলায় হাসানুল হক ইনুকে ও মিরপুরে শিশু মিজানুর রহমান হত্যা মামলা ও আজাদ হোসেন হত্যা চেষ্টা মামলায় চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেফতার দেখিয়েছেন আদালত।

ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন

ঢাকা মহানগর এলাকায় তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের আদেশের বিরুদ্ধে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। সোমবার (২৫ নভেম্বর) আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করা হয়েছে বলে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। চেম্বার বিচারপতির আদালতে এ আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে। আবেদন করার বিষয়টি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর মুহাম্মদ আজমী নিশ্চিত করেছেন। এর আগে ঢাকা মহানগর এলাকায় তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ঢাকা মহানগর এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে রুল জারি করেছেন আদালত। গত ১৯ নভেম্বর বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি মো. মাহমুদুর রাজীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। স্বরাষ্ট্র সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, আইজিপি, ঢাকার পুলিশ কমিশনার, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের আদালতের এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সানজিদ সিদ্দিকী ও ব্যারিস্টার তাহসিনা তাসনিম সিদ্দিকী। এর আগে বৃহত্তর ঢাকা সিটি করপোরেশন প্যাডেল চালিত রিকশা মালিক ঐক্যজোটের সভাপতি জহুরুল ইসলাম মাসুম ও সেক্রেটারি মো. মমিন আলী হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটে ঢাকা মহানগর এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকসা চলাচল বন্ধ চাওয়া হয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনে গেজেট প্রকাশ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন-১৯৭৩ সংশোধন করে নতুন গেজেট প্রকাশ করেছে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। রোববার (২৪ নভেম্বর) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এ গেজেট প্রকাশিত হয়। এতে সই করেন লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী। সংশোধিত আইনটি এখন থেকে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ নামে পরিচিত হবে। এতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন বিধান অনুযায়ী, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবে। এছাড়া ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার আদেশ দিতে পারবে ট্রাইব্যুনাল। গেজেটে আরও বলা হয়েছে, বার কাউন্সিলের অনুমতি নিয়ে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ করার সুযোগ থাকবে। এর আগে, ২০ নভেম্বর সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সংশোধিত আইনের খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। তবে আইন থেকে রাজনৈতিক দলকে বিচারের আওতায় আনার প্রস্তাবিত ধারা বাদ দেয়া হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদ জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলকে আইনে যুক্ত করলে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠার ঝুঁকি বাড়বে। এ ধরনের বিষয় নিষ্পত্তিতে সন্ত্রাস দমন আইন, নির্বাচনী আইন এবং ১৯৭৮ পলিটিক্যাল পার্টি অর্ডিন্যান্স যথেষ্ট বলে তারা মনে করে। এই সংশোধনীর ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ বিচার প্রক্রিয়া আরও কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জামিন পেলেন সাংবাদিক নেতা মোল্লা জালাল

অপহরণ ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে রাজধানীর শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মোল্লা জালালের জামিন দিয়েছেন আদালত। রোববার (২৪ নভেম্বর) ঢাকার ১৩তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মোর্শেদ আলম শুনানি শেষে তার জামিন মঞ্জুর করেন। আদালত পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত তার জামিন মঞ্জুর করেন। এর আগে গত ৪ নভেম্বর রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন ৪ নভেম্বর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আখতারুজ্জামান তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আটক রয়েছেন। গত ১ নভেম্বর অপহরণ ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে সাংবাদিক মোল্লা জালাল ও তার সহযোগী সলেমান ওরফে সেলিমের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন এক নারী। এজহারে বাদী নিজেকে সংগীত শিল্পী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।

তিন মামলায় ১৫ দিনের রিমান্ড শেষে সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক জেলে

টাঙ্গাইলে দুইটি হত্যা মামলাসহ তিনটি মামলায় তিন দফায় মোট ১৫ দিনের রিমান্ড শেষে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাককে জেলে পাঠানো হয়েছে। রোববার (২৪ নভেম্বর) বিকালে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে আদালতের বিচারক মাহমুদুল মোহসীন তাকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে আব্দুর রাজ্জাককে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালত থেকে প্রিজন ভ্যানে করে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। গেল ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার মিছিলে হামলার অভিযোগে মধুপুর থানায় করা মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে আজ আব্দুর রাজ্জাককে জেলে পাঠানো হয়েছে। গেল ৫ আগস্ট টাঙ্গাইল শহরে গুলিতে নিহত স্কুলছাত্র মারুফ হত্যা মামলা, ৩ আগস্ট মির্জাপুরে গুলিতে নিহত কলেজছাত্র ইমন হত্যা মামলা ও ৪ আগস্ট মধুপুর উপজেলা সদরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলায় মো. আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তিনটি মামলায় মো. আব্দুর রাজ্জাককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিন করে মোট ২১ দিন পুলিশ আদালতের কাছে রিমান্ড আবেদন করেছিল। সংশ্লিষ্ট আদালত পাঁচ দিন করে মোট ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার পর ১১ নভেম্বর প্রথমে আব্দুর রাজ্জাককে টাঙ্গাইল সদর থানায় স্কুলছাত্র মারুফ হত্যা মামলায় রিমান্ডে নেওয়া হয়। সেখানে পাঁচ দিন জিজ্ঞেসাবাদ করা হয়। ইমন হত্যা মামলায় ১৫ নভেম্বর মির্জাপুর থানায় নেওয়া হয়। সেখানে তাকে পাঁচ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সর্বশেষ বুধবার (২০ নভেম্বর) তাকে মধুপুর থানায় নিয়ে পাঁচ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। টাঙ্গাইলের পুলিশের এক কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে মারুফ হত্যা, ইমন হত্যা ও মধুপুরে ছাত্র-জনতার মিছিলে হামলার সাথে তার সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন আব্দুর রাজ্জাক। এসব মামলায় আদালতে তিনি জবানবন্দি দেবেন না বলেও পুলিশকে জানিয়েছেন।’ আব্দুর রাজ্জাকের আইনজীবী টাঙ্গাইল জেলা অ্যাডভোকেট বারের সভাপতি একেএম শামীমুল আক্তার বলেন, ‘আব্দুর রাজ্জাকের জামিনের জন্য তারা আবেদন করেননি। আগামী শুনানির দিন জামিনের আবেদন করা হবে।’

গাজিপুরের আরেক মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান

গাজীপুরে পুলিশের করা আরো এক মামলায় খালাস পেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩২ জন। রোববার (২৪ নভেম্বর) গাজীপুর জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-৩’-এর বিচারক মো. বাহউদ্দিন কাজী দীর্ঘ শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের জানুয়ারি গাজীপুর সদর উপজেলার তৎকালীন হোতাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির মনিপুর খাসপাড়া এলাকায় পার্কিং করা একটি বাসে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় জয়দেবপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দিলীপ চন্দ্র সরকার বাদী হয়ে স্থানীয় মোতালেব মেম্বারকে প্রধান আসামি করে ১৮ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরো ৪০-৪৫ জনের নামে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা (বিস্ফোরক) আইনে (১০১ (১) ১৫ নম্বর একটি মামলা করেন। একই বছরের আগস্টে ওই থানার এসআই এমদাদুল হক তদন্ত করে তারেক রহমান এবং সাবেক গাজীপুরের প্রয়াত মেয়র এমএ মান্নানের ছেলে মনজুরুল করিম রনিকে সংযুক্ত করে ৩২ জনের নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। আদালত চার্জগ্রহণ করে বিচার কাজ শুরু করেন। মামলাটির দীর্ঘ শুনানি শেষে মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় রোববার (২৪ নভেম্বর) সকালে আসামিদের সবাইকে ওই মামলা থেকে অব্যাহতি দেন বিচারক। শুনানিকালে বিবাদী পক্ষে আইনজীবী ছিলেন সহিদুজ্জামান, মেহেদী হাসান এলিস, আনোয়ার হোসেন, শফিকুল আলম মিলু ও নাসির উদ্দিন।

ট্রান্সকমের সিইও সিমিনসহ ছয় কর্মকর্তার জামিন বাতিল ও রিমান্ডের আবেদন

ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিমিন রহমানসহ ছয় কর্মকর্তার জামিন বাতিল করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চেয়ে রিভিশন আবেদন দাখিল করা হয়েছে। কোম্পানির শেয়ার জালিয়াতি ও ভুয়া পারিবারিক সেটেলমেন্ট দলিল তৈরির মামলায় রোববার (২৪ নভেম্বর) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে পৃথক দুইটি আবেদন করা হয়েছে। কাল সোমবার (২৫ নভেম্বর) আবেদন দুইটির ওপর শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী আহসানুল করিম। তিনি বলেন, ‘মামলা দুইটির বাদী ট্রান্সকমের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের ছোট মেয়ে শাযরেহ্ হকের পক্ষে দুইটি রিভিশন আবেদন ফাইল করা হয়েছে।’ মামলার অন্য অসামিরা হলেন ট্রান্সকম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স-আইন) মো. ফখরুজ্জামান ভূঁইয়া, পরিচালক (করপোরেট ফাইন্যান্স) কামরুল হাসান, পরিচালক (করপোরেট ফাইন্যান্স) আবদুল্লাহ আল মামুন, সহকারী কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক ও ব্যবস্থাপক (কোম্পানি সেক্রেটারি) আবু ইউসূফ মো. সিদ্দিক। মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, তদন্তের স্বার্থে আসামিদের জামিন বাতিল করে পৃথক দুই মামলার একটিতে সাত দিন ও আরেকটিতে দশ দিনের রিমান্ড চেয়ে গেল ২৯ মে সিএমএম কোর্টে পৃথক দুইটি আবেদন করা হয়। কিন্তু, সেই আবেদন খারিজ করেছেন আদালত। শাযরেহ্ হকের আইনজীবীরা জানান, সিএমএম আদালতের ওই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে পৃথক দুইটি রিভিশন আবেদন ফাইল করে সিএমএম কোর্টের আদেশ বাতিল চাওয়া হয়েছে এবং তদন্তের স্বার্থে আসামিদের জামিন বাতিল করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। মামলা সূত্রে জানা যায়, গেল ফেব্রুয়ারিতে এ মামলাগুলো গুলশান থানায় করেন লতিফুর রহমানের ছোট মেয়ে শাযরেহ্ হক। এরপর এ মামলার কয়েক আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরবর্তী তারা জামিন পান। আর বিদেশ থাকা সিমিন রহমান দেশে আসার পর আদালত আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন।

সাবেক প্রধান বিচারপতির মৃত্যুতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ বন্ধ আজ

সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. রুহুল আমিনের মৃত্যুতে তার প্রতি সম্মান জানিয়ে রোববার (২৪ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকাজ বন্ধ থাকবে। তবে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু থাকবে। এদিন সকালে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহ্য অনুযায়ী সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. রুহুল আমিনের স্মৃতির প্রতি প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রোববার সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির সব প্রশাসনিক কাজ চলমান থাকবে। এর আগে ভোর সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. রুহুল আমিন।

না ফেরার দেশে সাবেক প্রধান বিচারপতি রুহুল আমিন

সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. রুহুল আমিন মারা গেছেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রোববার (২৪ নভেম্বর) ভোর সাড়ে ৪টায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ মরহুমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছেন। আগামী ২৬ নভেম্বর বাদ জোহর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনস্থ ইনার কোর্ট ইয়ার্ডে মরহুমের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। জানাজায় প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিরা অংশ নেবেন। সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহ্য অনুযায়ী সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. রুহুল আমিনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ (২৪ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে, সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির সব প্রশাসনিক কাজ চলবে। সাবেক প্রধান বিচারপতি রুহুল আমিন ১৯৪১ সালের ১ জুন লক্ষ্মীপুরের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ এবং ১৯৬৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে এবং পরে ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ১১ জানুয়ারি ২০০১ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে যোগদান করেন। রুহুল আমিন বাংলাদেশের ১৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ১ মার্চ ২০০৭ সাল থেকে ৩১ মে ২০০৮ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ আইনের জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারালো।

রিমান্ড শেষে কারাগারে ডিএনসিসির সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম

রিমান্ড শেষে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিন ও সাবেক র‍্যাব কর্মকর্তা মহিউদ্দিন ফারুকীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।শুক্রবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম আফনান সুমি ও মেহেদী হাসানের আদালত এই আদেশ দেন। তবে এ দিন আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়নি।আইনজীবীরা জানান, উত্তরা পুর্ব থানার বকুল মিয়া হত্যা মামলায় পাঁচদিনের রিমান্ডে ছিলেন ঢাকা উত্তরের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম।অন্যদিকে, যাত্রীবাড়ি থানার একই মামলায় দুই দিনের রিমান্ডে ছিলেন সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন ও র‍্যাব-২ এর সাবেক কোম্পানি কমান্ডার মহিউদ্দিন ফারুকী। পরে পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার শুনানি শেষ, যে কোনো দিন রায়

বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের ওপর হাইকোর্টে শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রেখেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন। এর আগে গত ৩১ অক্টোবর শুনানি শুরু হয়েছিল। আজ শুনানি শেষ করা হয়েছে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও শিশির মনির। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর বিচারিক আদালত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন। একই সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয় অপর ১১ আসামিকে। পরে ওই বছরের ২৭ নভেম্বর মামলার বিচারিক আদালতের রায় প্রয়োজনীয় নথিসহ হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছে। পাশাপাশি কারাবন্দি আসামিরা আপিল করেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এ মামলার আপিল শুনানি বিচারপতি সহিদুল করিমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুরু হয়। এর মধ্যে ওই বেঞ্চ পুনর্গঠন হয়। এ কারণে নতুন বেঞ্চে আবার শুনানি শুরু হয়েছে। বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন—লুৎফুজ্জামান বাবর, আব্দুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজির সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম (কারাগারে মারা যান), কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জ্বল, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম (কারাগারে মারা যান) ও হানিফ পরিবহনের মালিক বিএনপি নেতা মোহাম্মদ হানিফ। পরিকল্পনা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যার অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩০২/১২০খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেন আদালত। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন—তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ (কারাগারে মারা যান), মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই ও রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু। তাদের দণ্ডবিধির ৩০২/১২০খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহুদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগনে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআইয়ের মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপির সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডির সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন আদালত। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। অল্পের জন্য ওই হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। তবে হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক রাষ্ট্রপতি (প্রয়াত) জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের তিন শতাধিক নেতাকর্মী। ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে মামলা করেন। তদন্ত শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের ১১ জুন দেওয়া অভিযোগপত্রে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন ও হুজি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পর অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। দুই বছর তদন্তের পর ২০১১ সালের ৩ জুলাই ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এর ফলে এ মামলায় মোট আসামির সংখ্যা হয় ৫২ জন। ৫২ আসামির মধ্যে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও মুফতি হান্নান এবং তার সহযোগী শাহেদুল ইসলাম বিপুলের মৃত্যুদণ্ড অন্য মামলায় কার্যকর হয়। তিনজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় এ মামলার আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৯ জনে। তাদের মধ্যে রায় ঘোষণার সময় ৩১ জন কারাগারে ছিলেন। পলাতক ছিলেন বাকি ১৮ জন। পলাতকরা হলেন—তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, এটিএম আমিন, সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, খান সাঈদ হাসান, ওবায়দুর রহমান, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, রাতুল বাবু, মোহাম্মদ হানিফ, আবদুল মালেক, শওকত ওসমান, মাওলানা তাজউদ্দিন, ইকবাল হোসেন, মাওলানা আবু বকর, খলিলুর রহমান ও জাহাঙ্গীর আলম।

খালেদা জিয়ার কয়লাখনি দুর্নীতি মামলার চার্জশুনানি ২৭ নভেম্বর

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলায় চার্জশুনানির জন্য আগামী ২৭ নভেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন আদালত। বুধবার (২০ নভেম্বর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-২’-এর বিচারক আবু তাহের এ দিন ধার্য করেন। বুধবার (২০ নভেম্বর) এ মামলার চার্জশুনানির দিন ধার্য ছিল। এ দিন খালেদা জিয়া ও প্রাক্তন মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের পক্ষে অব্যাহতির (ডিসচার্জ) আবেদনের শুনানি করেন তাদের আইনজীবী। তবে, এ দিন শুনানি শেষ না হওয়ায় আগামী ২৭ নভেম্বর শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করেন আদালত। এর পূর্বে, ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে মোশাররফ হোসেন কাজল চার্জশুনানি করেন৷ শুনানিতে তিনি আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠনের আর্জি জানান। এরপর থেকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা অব্যাহতির (ডিসচার্জ) আবেদন শুনানি করছেন। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কয়লা উত্তোলন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম এবং রাষ্ট্রের ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার ক্ষতি ও আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় মামলাটি করা হয়। ওই বছরের ৫ অক্টোবর ১৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরপর ২০০৮ সাল থেকে উচ্চ আদালতের নির্দেশে দীর্ঘ নয় বছর মামলাটির বিচার কাজ স্থগিত ছিল। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৮ মে সে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়। এরপর থেকে মামলাটি অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য রয়েছে। মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে প্রাক্তন মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া, এমকে আনোয়ার, এম শামসুল ইসলাম, আমিনুল হক ও প্রাক্তন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন মারা গেছেন। আর যুদ্ধাপরাধ মামলায় জামায়াতের দুই শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। তাদের বাদ দিয়ে এখন বাকি আসামিদের বিচার চলছে। খালেদা জিয়া ছাড়াও এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন জোট সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত সচিব নজরুল ইসলাম, পেট্রোবাংলার প্রাক্তন চেয়ারম্যান এসআর ওসমানী ও প্রাক্তন পরিচালক মঈনুল আহসান, বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ও খনির কাজ পাওয়ার কোম্পানির স্থানীয় এজেন্ট হোসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন।

গার্মেন্টস কর্মী খুনের মামলায় প্রাক্তন আইনমন্ত্রী আনিসুল পাঁচ দিনের রিমান্ডে

ঢাকার উত্তরা পূর্ব থানায় দায়ের করা গার্মেন্টস কর্মী ফজলুল করিম খুনের মামলায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার (২০ নভেম্বর) তাকে কারাগার থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মো. মাহমুদুর রহমান তার দশ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। এ সময় আসামিপক্ষ রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্য দিকে, রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমরান আহম্মেদ তার জামিন নামঞ্জুর করে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গেল ১৩ আগস্ট গোপন তথ্যের ভিত্তিতে নৌপথে পালানোর সময় সদরঘাট এলাকা থেকে আনিসুল হককে গ্রেফতার করা হয়। মামলার বিবরণে জানা গেছে, গেল ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে অংশ নিলে গুলিবিদ্ধ হন ফজলুল করিম। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে উত্তরা পূর্ব থানায় খুনের মামলা দায়ের করেন।

গুম-নির্যাতন-আয়নাঘরের হোতা কে? জানালেন চিফ প্রসিকিউটর

জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় প্রাক্তন পুলিশ প্রধান আবদুল্লাহ আল-মামুন, এনটিএমসির প্রাক্তন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউল আহসানসহ আট কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। বুধবার (২০ নভেম্বর) সকাল সোয়া দশটায় তাদের ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হয়। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে তাদের ব্যাপারে শুনানি হয়। শুনানি শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘জিয়াউল আহসান বিভিন্ন সময় র‍্যাবের বিভিন্ন পদে ছিলেন, সর্বশেষ তিনি এনটিএমসির মহাপরিচালক ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যারা বিরোধী দলে থেকে বিভিন্ন সময় কথা বলার চেষ্টা করেছে, তাদের তিনি একের পর এক পরিকল্পিতভাবে অপহরণ করেছেন, গুম করেছেন, বছরের পর বছর আটকে রেখেছেন। তাদের মধ্যে বহু মানুষ আজও ফিরে আসেনি। গুম করে পৈশাচিক নির্যাতন, আয়নাঘর, এসব কালচারের হোতা ছিলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘জিয়াউল আহসানের নেতৃত্বে বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলীকে গুম করে খুন করা হয় বলে আমরা জানতে পেরেছি। এ ছাড়াও নাম জানা-না জানা বহু মানুষকে অপহরণের পর নির্যাতন করা হয়েছে। তার পৈশাচিকতা... ৯০’-এর দশকে বসনিয়া-হার্জেগভনিয়ার সারফিয়ান বাহিনী যে গণহত্যা চালিয়েছিল, যে ধরনের অত্যাচার করত, তার সাথে আমরা তুলনা করেছি। ভলকানের কসাইয়ের মত বাংলাদেশের কসাই হিসেবে এ জিয়াউল আহসান হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে, গুম নির্যাতনের সাথে জড়িত ছিলেন।’

নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখানো হলো পলক সালমান-আনিসুলদের

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ আটজনকে নতুন কয়েকটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে নতুন কয়েকটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। ঢাকার মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, পল্টন, মিরপুর ও উত্তরা পশ্চিম থানার একাধিক মামলায় নতুন করে গ্রেফতার দেখানোর তালিকায় আরও আছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য দীপু মনি, জুনাইদ আহমেদ পলক, হাসানুল হক ইনু, কামাল আহমেদ মজুমদার, শাজাহান খান ও রাশেদ খান মেনন। বুধবার (২০ নভেম্বর) সকালে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এই আদেশ দেয়। এছাড়া উত্তরা পূর্ব থানার ফজলুল করিম নামক একজনকে গুলি করে হত্যা মামলায় আনিসুল হককে পাঁচ দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়েছে। যদিও এই রিমান্ডের বিরোধিতা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। সেদিন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। ছাত্র-জনতার রোষানল থেকে বাঁচতে আত্মগোপন চলে যান দলটির সব নেতা। এর মধ্যে কেউ কেউ বিদেশ পাড়ি জমালেও আবার অনেকে দেশেই লুকিয়ে থাকেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আট দিন পর ১৩ আগস্ট নৌপথে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার সময় রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে সালমান এফ রহমান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেফতার করা হয়। পরে নিউমার্কেট এলাকায় দোকান কর্মচারী শাহজাহান আলীকে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় তাদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ। পরে আরও বেশ কয়েক দফা তাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এক সপ্তাহ পর ১৯ আগস্ট রাতে ডা. দীপু মনিকে রাজধানীর বারিধারা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকেও রিমান্ডে নেওয়া হয়। গত ১৪ আগস্ট খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় পলককে গ্রেফতার করে পুলিশ।

গ্রেফতার দেখানো হলো সাবেক আইজিপিসহ ৮ জনকে

জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানসহ আট কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এর আগে, বুধবার (২০ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। ট্রাইব্যুনালে হাজির করা ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক পুলিশপ্রধান (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক (ওসি) আবুল হাসান, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব) জিয়াউল আহসান, ঢাকা জেলার সাবেক পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহ আল কাফি, ডিএমপি মিরপুরের সাবেক ডিসি মো. জসিম উদ্দিন মোল্লা, ঢাকার সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুর ইসলাম, ডিএমপি গুলশান থানার সাবেক ওসি মো. মাজহারুল হক এবং ডিবি ঢাকা উত্তরের সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন। গত ২৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল প্রসিকিউশনের আবেদন মঞ্জুর করে তাদের হাজির করতে আদেশ দিয়েছিল। পুলিশের সাবেক ১৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ২০ নভেম্বর তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজিরে নির্দেশ দেওয়া হয়। এর মধ্যে যারা গ্রেফতার রয়েছেন তাদের আনা হবে ট্রাইব্যুনালে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন নির্মূলে গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রসিকিউশন অফিসে ১২৫টির মতো অভিযোগ জমা পড়ে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা বরাবরও অভিযোগ জমা পড়ছে। গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।

হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ৫ দিনের রিমান্ডে

রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানায় গার্মেন্টস কর্মী ফজলুল করিম হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার (২০ নভেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমরান আহম্মেদের আদালত তার এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিন আনিসুল হককে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মো. মাহমুদুর রহমান তার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। এ সময় আসামিপক্ষে রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে রিমান্ডের এ আদেশ দেন। মামলার সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন ফজলুল করিম। এ সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। তাকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানায় ৪০ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। উল্লেখ্য, গত ১৩ আগস্ট গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেফতার করা হয়।

আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি পুনর্বিবেচনা করতে কমিটি গঠনে হাইকোর্টের নির্দেশ

ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের করা বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। চুক্তি পুনর্বিবেচনা করতে উচ্চ পর্যায়ের অনুসন্ধান কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। চুক্তি পর্যবেক্ষণে এক মাসের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আরও দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। চুক্তিটি পুনর্বিবেচনার জন্য রুল জারি করেছেন উচ্চ আদালত। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) এ বিষয়ে করা রিট আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন আদেশ দেন। এর আগে ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা বিদ্যুৎ চুক্তি পর্যালোচনা অথবা বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আবদুল কাইয়ুম। ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর কার্যকর হওয়া আদানি (ঝাড়খণ্ড) লিমিটেডের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ চুক্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিটটি করেন তিনি। তারও আগে গত ৬ নভেম্বর পিডিবি চেয়ারম্যান ও জ্বালানি সচিবকে তিন দিনের মধ্যে আদানি গ্রুপের সঙ্গে একতরফা বিদ্যুৎ চুক্তি পর্যালোচনা বা বাতিল করতে আইনি নোটিশ পাঠান এই আইনজীবী। রিট পিটিশনে আব্দুল কাইয়ুম বলেন, অনেক বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়েছেন যে এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ নিম্নগ্রেডের কয়লার এই বিদ্যুতের জন্য অন্যান্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রের তুলনায় উল্লেখযোগ্যহারে বেশি দাম দেবে। অস্ট্রেলিয়ায় আদানির মালিকানাধীন একটি খনি থেকে কয়লা সরবরাহ করা হবে ভারতে আদানির একটি বন্দরে। সেই কয়লা বাংলাদেশের খরচে তৈরি গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রে পাঠানো হবে। রিট আবেদনে আলজাজিরার একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলা হয় বিপিডিবি মূলত এমন এক বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করেছে যেখানে আদানি অস্ট্রেলিয়া থেকে ভারতে কয়লা আমদানি করবে এবং এর পুরো ব্যয় বাংলাদেশকে বহন করতে হবে। রিট পিটশনে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বলেন, এর সঙ্গে কর্মকর্তারা জড়িত না থাকলে পিবিডিবি কীভাবে এই একতরফা চুক্তি করেছে তা অকল্পনীয়।

নানা অপকর্মে জড়িত ছিলেন কামরুল ইসলাম

অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ পাচার, দুর্নীতিসহ এমন কোনো অপর্কম নেই যা করেননি সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। অত্যন্ত প্রভাব প্রতিপত্তির সঙ্গে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসব করছেন তিনি। বিরোধী দলমত দমনেও তিনি অগ্রণী ও আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ ছিলেন। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সকাল ৯টায় অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা জোনাল টিমের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আরিফ নিউমার্কেট থানার ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, কামরুল ইসলাম ফ্যাসিস্ট সরকারের ভোট ডাকাতির মাধ্যমে চার বারের এমপি, একবার ক্যাবিনেট মন্ত্রী ও একবার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ আসামি অত্যন্ত ভয়ানক চরিত্রের অধিকারী। যা তার আচার, আচরণ, অঙ্গভঙ্গি ও কথাবার্তার মাধ্যমে প্রকাশ হতো। তিনি অত্যন্ত প্রভাব প্রতিপত্তির সঙ্গে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এমন কোনো অপর্কম নাই যা তিনি করেন নাই। অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ পাচার, দুর্নীতিসহ বিরোধী দলমত দমনে তিনি অগ্রণী ও আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ ছিলেন। তার ভয়ে তার সংসদীয় এলাকাসহ বিভিন্ন মানুষ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারতেন না। এতে আরও বলা হয়, তিনি আইন প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বহু নিরাপরাধ মানুষকে জেল-জুলুমের মাধ্যমে নির্যাতন করতেন। এ আসামি ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যতম কলঙ্কিত চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। তিনি ফ্যসিস্ট সরকারের বহু অপকর্মের ঘনিষ্ঠ সহচর বলে দেশে ও বিদেশে জনশ্রুতি আছে। তার গ্রেফতারে এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে শান্তি ফিরে এসেছে। এ আসামিসহ অন্যান্য আসামিদের নির্দেশে গত ১৯ জুলাই বিকেলে নিউমার্কেট থানাধীন নীলক্ষেত এলাকায় মাহফুজুর রহমান, নাসির উদ্দিন, শামীম উসমান, মো. আবু মূসা, মাঈনুদ্দিন, শাহাদাত হোসেন, আবির হোসেনসহ অনেক নিরস্ত্র ছাত্র-জনতা ও সাধারণ পথচারী আহত ও চিরতরে পঙ্গু হয়। আব্দুল ওয়াদুদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত আছে মর্মে স্বীকার করেন। প্রাথমিক তদন্তে এ আসামি মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি দেশ ছেড়ে বিদেশে পলায়নের বিভিন্ন চেষ্টায় অব্যাহত রাখেন। তার বিরুদ্ধে তদন্তকার্য অব্যাহত আছে। তিনি অতিগুরুত্বপূর্ণ একজন দলীয় পলিসি/ডিসিশন মেকার ছিলেন। তাকে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটিত হবে। রাষ্ট্রপক্ষ ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করে। আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমানের আদালত তার ৮ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। শুনানি চলাকালে আদালতে কামরুল ইসলাম বলেন, সব দিন তো একরকম যায় না। এই দিন, দিন না; সামনে ভালো দিন আসবে। তিনি আরও বলেন, নিউমার্কেট এলাকা আমার অধীনে না। ওই এলাকার এমপি আমি নিজেও না। এ মামলায় আমাকে ৫৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে। আমার নামটি হয়তো শেষ মুহূর্তে ভুলে এজাহারে লিখে দেওয়া হয়েছে। এর আগে, সোমবার (১৮ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর উত্তরা-১২ নম্বর সেক্টর থেকে কামরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

দুই হাত তুলে দোয়া চাইলেন পলক

জুলাই-আগস্টের গণহত্যায় অভিযুক্ত ১৩ আসামিকে সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছিল। পরে তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বের করার সময় ১৩ আসামির মধ্যে ছিলেন সাবেক আইসিটির প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকও। আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বের হওয়ার সময় তিনি দুই হাত মোনাজাতের মতো তুলে ধরেন এবং উপস্থিত সবার কাছে দোয়া চান। পরে হেঁটে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে চড়েন। সোমবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে ট্রাইব্যুনালের সামনে এই দৃশ্য দেখা গেছে। সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক আদালত থেকে বের হয়েই সাংবাদিকদের উদ্দেশে দুই হাত উঁচু করে দোয়া চান। এসময় তার পেছনে পুলিশ সদস্যরা ছিলেন। তবে তাকে স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই হাঁটতে দেখা গেছে। এর আগে ট্রাইব্যুনাল থেকে প্রথমে বের হন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক এলাহী, সাবেক নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান, সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক বিমানমন্ত্রী ফারুক খান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক। সবার পরে বেরিয়ে আসেন পলক। অন্যরা হাত নেড়ে সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলেও পলক দুই হাত মোনাজাতের মতো করে সবার কাছে দোয়া চান। এ সময় তার গায়ে ছিল একটি আকাশি রঙের সোয়েটার এবং সাদা শার্ট। এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের টিনশেডর এজলাসে একসঙ্গে বসেছিলেন আসামিরা। ১২ জন পুরুষ আসামি কাঠগড়ার ভেতরে বসলেও সাবেক মন্ত্রী দীপু মনি বসেন কাঠগড়ার বাইরে। টানা প্রায় দুই ঘণ্টা শুনানি হয়। এ সময় তারা পেছনে বসে সব কিছু দেখছিলেন। শুনছিলেন আইনজীবীদের সাবমিশন। ফাঁকে ফাঁকে একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা বলতেও দেখা গেছে। পরে এ মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৭ ডিসেম্বর দিন নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ ওইদিন এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন ঠিক করা হবে। দুপুরে শুনানি শেষে এক ব্রিফিংয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই-আগস্ট মাসেই নয়, বিগত সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই গুম-খুন ও হত্যার বীভৎসতা সৃষ্টি করে। হিটলারের সময়ের ক্যাম্পের মতো ক্যাম্প তৈরি করে তাতে নিষ্ঠুরভাবে বন্দিদের নির্যাতন করা হয়েছে। তারা শুধু গণহত্যাই করেনি, নির্যাতনের যত রকম পন্থা রয়েছে সবই বাস্তবায়ন করেছে, যা হিটলারের নাৎসি বাহিনীর কথা মনে করিয়ে দেয়। তাজুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারে যারা গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন, তাদের মধ্যকার ১৩ জনকে আজ অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। আগামী দিনে যারা ফ্যাসিস্ট হতে চান, তাদের জন্য আজকের দিনটি একটি শিক্ষার দিন। মানবতাবিরোধী অপরাধ করে চিরদিন ক্ষমতায় থাকা যায় না, বিচারের মুখোমুখি হতে হয় তা আজকের দিনের এক বড় শিক্ষা।

সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ পেছাল ১১৩ বার

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ ১১৩ বারের মতো পিছিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৩ ডিসেম্বর দিন ঠিক করেছেন আদালত। সোমবার (১৮ নভেম্বর) মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রতিবেদন দাখিল না করায় ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নতুন দিন ঠিক করেন। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনিকে হত্যা করা হয়। এরপর নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ওই থানার এক উপ-পরিদর্শক (এসআই)। চারদিন পর চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয় ডিবি। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে একই বছরের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব থেকে র্যাবকে সরিয়ে দিয়েছেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ। একই সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ বিষয়ে আগামী ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে পিবিআই।

শেখ হাসিনার সকল অপরাধের সহযোগী ছিলেন মন্ত্রী-এমপিরা: তাজুল ইসলাম

গত ১৫ বছরের শাসনামলে শেখ হাসিনার যেসব অপরাধ করেছেন, মন্ত্রী-এমপিরা তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ক্ষমতায় থাকতে শেখ হাসিনা এমন কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধ নেই যা করেননি। আর তার এসব অপরাধের সহযোগী ছিলেন মন্ত্রী-এমপিরা।জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক নয় মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে সোমবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করার পর শুনানিতে এসব কথা বলেন তাজুল ইসলাম।চিফ প্রসিকিউটর বলেন, গত ১৫ বছরের শাসনামলে এমন কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধ নেই যেটা শেখ হাসিনা করেননি। ক্ষমতায় এসে পিলখানা হত্যাকাণ্ড দিয়ে শুরু হয় শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধ। ব্লাকআউট করে শাপলা চত্বরে হেফাজতের ওপর গণহত্যাসহ আওয়ামী লীগের শাসনামলে সব মানবতাবিরোধী অপরাধের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন শেখ হাসিনা। আর উপস্থিত আসামিরা এসব অপরাধ সংগঠনে সহযোগিতা করেছেন। সর্বশেষ জুলাই আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেড় হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা, অঙ্গহানিসহ ২৫ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। গণহত্যার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা চেয়েছিলেন ক্ষমতা প্রলম্বিত করতে।শুনানির সময় ১৩ আসামি এজলাসে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এর আগে বেলা ১১টার দিকে ১৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। তার আগে সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে গারদখানা থেকে তাদের এজলাসে তোলা হয়।শুনানির জন্য সকাল ১০টার দিকে তাদের প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে আনা হয়। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা ৪৬ জনের মধ্যে এই প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ১৩ আসামিকে ট্রাইব্যুনালে তোলা হলো।যাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে তারা হলেন- সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, ড. দীপু মনি, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, শাজাহান খান, জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তৌফিক-ই-ইলাহী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, গোলাম দস্তগীর গাজী, আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম।সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাককে ট্রাইব্যুনালে আনার কথা থাকলেও অন্য মামলায় রিমান্ডে থাকায় তাকে হাজির করা হয়নি।এর আগে গত ২৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল তাদের ট্র‍্যাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষের পৃথক দুটি আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন।ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মহিতুল হক এনাম চৌধুরী।ওইদিন আলাদা আরেক আবেদনে সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানসহ ছয় জনকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হয়। আবেদনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম ও বি এম সুলতান মাহমুদসহ অন্য প্রসিকিউটররা।গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন অফিসে অর্ধশতাধিক অভিযোগ জমা পড়ে।গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।