প্রশিক্ষণ নিতে ভারতে যাচ্ছেন আরও ৫০ বিচারক

ভারতের ভূপালে ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমি এবং স্টেট জুডিসিয়াল একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য অধস্তন আদালতের আরও ৫০ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে অনুমতি দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। অনুমতিপ্রাপ্ত বিচারকরা আগামী ১০ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রশিক্ষণে অংশ নেবেন। সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শের পরিপ্রেক্ষিতে এ অনুমতি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ। প্রশিক্ষণের জন্য সহকারী জজ, সিনিয়র সহকারী জজ, যুগ্ম জেলা ও জজ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, জেলা ও দায়রা জজ এবং সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ১০ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি ভারতের ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমি ভূপাল এবং একটি স্টেট জুডিসিয়াল একাডেমিতে অনুষ্ঠিতব্য প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের ৫০ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাককে অনুমতি দেওয়া হলো। প্রশিক্ষণের যাবতীয় ব্যয় ভারত সরকার বহন করবে। এতে বাংলাদেশ সরকারের কোনো আর্থিক সংশ্লেষ নেই। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের এপ্রিলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে বাংলাদেশের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও সামর্থ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট এবং ভারতের ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ওই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর একই বছরের ২৯ জুলাই এক অনুষ্ঠানে তত্কালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছিলেন, পৃথিবীর প্রত্যেকটা দেশে উচ্চ আদালতের বিচারকদের জন্য ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা আছে। ভারতের প্রত্যেকটা রাজ্যে একটি জুডিসিয়ারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট আছে উচ্চ আদালতের বিচারকদের ট্রেনিংয়ের জন্য। ভূপালে তাদের জাতীয় জুডিসিয়ারি একাডেমি আছে। সেখানে আমাদের ১৫-১৬শ বিচারকের ট্রেনিংয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। এরপর প্রথমবারের মতো ওই বছরের ১০ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত প্রশিক্ষণ নিতে ভারতে যান বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা। পর্যায়ক্রমে ইতোমধ্যে অনেক বিচারক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এ চুক্তি আওতায়।

চিন্ময় দাসের জামিন নামঞ্জুর, কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ

বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন শুনানি নামঞ্জুর করেছেন আদালত। ফের তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।আজ বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম আদালতে তোলা হয় চিন্ময় দাসকে। পরে শুনানি শেষে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।চিন্ময়ের শুনানি কেন্দ্র করে এদিন সকাল থেকেই আদালতের প্রবেশমুখে সতর্ক অবস্থানে ছিলেন পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) সদস্যরা । নিরাপত্তা জোরদার করা হয় আদালত প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকায়।এর আগে, গত ৩ ডিসেম্বর চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানির দিন ধার্য ছিল। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত থাকলেও আসামিপক্ষের কেউ ছিলেন না। তাই আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে আজ পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করেছিলেন।অন্যদিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। তবে তিনি ভারত থেকে কবে বাংলাদেশে ফিরবেন তা নিয়ে রয়েছে ধুম্রজাল।এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আজ বাংলাদেশে ফিরে চিন্ময়ের পক্ষে আদালতে দাঁড়াবো। এর আগেই বাংলাদেশে যাব। তবে কিছুক্ষণ পর তিনি তার ওই বক্তব্য থেকে খানিকটা সরে এসে বলেছিলেন, আমি এখন চিকিৎসাধীন রয়েছি। ডাক্তার যেদিন সুস্থ বলবেন সেদিন বাংলাদেশে যাব। আমি না থাকলেও অন্য আইনজীবীরা দাড়াবেন। তবে সুস্থ্ থাকলে অবশ্যই যাব।আজ আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য। তিনি সাবেক ডেপুটি এটর্নি জেনারেল।

থার্টি ফার্স্টে বাসা-বাড়ির ছাদে আতশবাজি ফোটানো বন্ধ চেয়ে হাইকোর্টে রিট

থার্টি ফার্স্ট নাইটে রাজধানীর বাসা-বাড়ির ছাদ ও সব ভবন, উন্মুক্ত স্থান, পার্কে আতশবাজি-পটকা ফুটানো বন্ধ চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান এ রিট দায়ের করেন। জানা যায়, বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদনটির ওপর শুনানি হবে। স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি, ঢাকার পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়। রিটে জনসমাগম ও আতশবাজি ঠেকাতে ওই দিন রাত ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারির মতো কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

ইসলামী বক্তা ফারুকী হত্যা: ১০ বছর পর ৬ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল

১০ বছর পর আলোচিত ইসলামী বক্তা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যা মামলায় ছয়জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার কে এম আবুল কাশেম গত ৫ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট জমা দেন। সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) আদালত সূত্রে চার্জশিট জমা দেয়ার বিষয় জানা গেছে। যদিও তদন্তে ১২ জনের সম্পৃত্ততা খুঁজে পান তদন্ত কর্মকর্তা। কিন্তু এদের মধ্যে ছয় জনের পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা না পাওয়ায় অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া, সাক্ষ্য প্রমাণ না পাওয়ায় আরও ছয়জনকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছেন পুলিশকর্তা আবুল কাশেম। চার্জশিটভূক্ত আসামিরা হলেন- হাদিসুর রহমান ওরফে সাগর, আব্দুল্লাহ আল তাসনিম নাহিদ, রফিকুল ইসলাম ফারদীন,আবু রায়হান মাহমুদ আব্দুল হাদী, মাহমুদ ইবনে বাশার, রতন চৌধুরী ওরফে ইঞ্জিনিয়ার রিপন ওরফে রাকিবুল ইসলাম রিয়াজ। ফারুক, নাঈম, ইমন, হাফেজ কবির, আশফাক ই আজমদ ও খোরশেদ আলমদের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হলেও তাদের পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা না পাওয়ায় অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে। তবে একই ঘটনায় বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের পক্ষে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার করা পিটিশন মামলায় সাক্ষ্য প্রমাণ না পাওয়ায় ইসলামী বক্তা তারেক মনোয়ারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ছয়জন উপস্থাপককে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে। এরা হলেন-মুফতি কাজী মো. ইব্রাহীম, কামাল উদ্দিন জাফরী, আরকানুল্লাহ হারুনী, খালেদ সাইফুল্লাহ বখশী ও মুখতার আহম্মদ। ২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট রাত ৯টার দিকে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের বাসায় মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। রাতেই তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ফারুকী নিহতের ঘটনায় তার ছেলে ফয়সাল ফারুকী শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৭ টার দিকে নুরুল ইসলাম ফারুকীর বাসায় কলিং বেল চাপ দেয় দুর্বৃত্তরা। বাসার দরজা খুললে দুই জন লোক বাসায় প্রবেশ করে নুরুল ইসলামের সাথে ড্রয়িং রুমে বসে। এর কিছুক্ষণ পর আরও ৬/৭ লোক বাসায় প্রবেশ করে। বসার স্থান সংকুলান না হওয়ায় ফয়সাল ফারুকীর মামাতো ভাই মারুফ হোসেন ভেতর থেকে চেয়ার আনতে যান। সে ফিরে এসে দেখে নুরুল ইসলামের মাথায় পিস্তল ও চাপাতি ধরে রেখেছে আসামিরা। পরে তারা বাসার সবাইকে বেঁধে নুরুল ইসলাম ফারুকীতে হত্যা করে। আসামির বাসা থেকে নগদ টাকা, মোবাইল, স্বর্ণালঙ্কার, ক্যামেরা নিয়ে যায়। নিহত ফারুকী চ্যানেল আইয়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘কাফেলা’ ও ‘শান্তির পথে’, মাই টিভির লাইভ অনুষ্ঠান ‘সত্যের সন্ধানে’ এর উপস্থাপক ছিলেন। এছাড়া,তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পাদক, সুপ্রিম কোর্ট জামে মসজিদের খতিব ছিলেন।

হাসিনাসহ নয়জনের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ মাইকেল চাকমার

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে নয়জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুমের লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন মাইকেল চাকমা। সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে ট্রাইব্যুনালে গিয়ে অভিযোগ দেন তিনি। এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর পাঁচ বছর গুম করে রাখার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে মৌখিকভাবে অভিযোগ জমা দেন মাইকেল চাকমা। ওই অভিযোগ আমলে নিয়ে ট্রাইব্যুনাল তদন্ত শুরু করে। মাইকেল চাকমা ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) নেতা। মৌখিক অভিযোগ করার পর চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মাইকেল চাকমার অভিযোগ আমলে নিয়েছি। শিগগির তার অভিযোগের তদন্ত শুরু করব।’ এর আগে আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুমের শিকার ইউপিডিএফের এ নেতা দায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে ট্রাইব্যুনালে যান। মাইকেল চাকমার সঙ্গে ছিলেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম ও তার স্ত্রী অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ। মৌখিক অভিযোগের পর মাইকেল চাকমা বলেন, রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে সাদা পোশাকধারী অন্তত সাত-আটজন আমাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। তারা চোখ বেঁধে মাইক্রোবাসে তোলে। আমি গাড়ির ভেতর একটি ওয়াকিটকি শনাক্ত করতে পেরেছিলাম। প্রথমে তারা আমাকে একটি কক্ষে আটকে রাখে এবং পরে আরও দুটি কক্ষে নিয়ে যায়, যেখানে নির্যাতন করা হয়। ২০১৩ সালে শেখ হাসিনার খাগড়াছড়ির সমাবেশে অংশ নেওয়ার সময় কেন সড়ক অবরোধ করা হয়েছিল, তারা আমাকে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল সাংগঠনিক কাজ শেষে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফেরার পথে মাইকেল চাকমা গুমের শিকার হন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরাও উদ্বেগ প্রকাশ করে তার সন্ধান দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানায়। হাইকোর্টে রিট করা হলেও তাকে উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বিগত সরকার।

হত্যা মামলায় ইনু ফের চার দিনের রিমান্ডে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বাহাদুর হোসেন মনির নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় রাজধানীর গুলশান থানায় করা মামলায় সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) ইনুকে আদালতে উপস্থিত করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির গুলশান জোনাল টিমের উপ-পরিদর্শক আবু জাফর বিশ্বাস। অন্যদিকে আসামির রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানি করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড চেয়ে শুনানি করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শরীফুর রহমান আসামির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আজ শুনানিতে ইনুর আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, রাজনৈতিক কারণে হাসানুল হক ইনুকে হয়রানি করার জন্য এ মামলায় আসামি করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। এ মামলায় রিমান্ড না দেওয়ার অনুরোধ করছি, প্রয়োজনে জেলগেট জিজ্ঞাসাবাদ দেন। অন্যদিকে পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ইনু এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। ইনুদের মতো ১৪ দলীয় জোটের নেতাদের ইন্ধনে শেখ হাসিনা এত বড় গণহত্যা চালিয়েছেন। তাই তার রিমান্ড প্রার্থনা করছি। মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই গুলশান থানাধীন প্রগতি সরণিতে আন্দোলন চলাকালে মনির রাস্তা পার হয়ে বাসায় যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হন। পরে মনিরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর নিহতের বাবা মো. আবু জাফর রাজধানীর গুলশান থানায় শেখ হাসিনাসহ ১০৫ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে আরও ২০০-৩০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।

নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধা নেই খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের

সব মামলা নিষ্পত্তি হওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরবর্তী নির্বাচনে অংশগ্রহণে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত এক ছায়া সংসদে এ কথা বলেন তিনি।অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত হলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলটির নেতারা আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তবে আপাতত সব মামলার নিষ্পত্তি হওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরবর্তী নির্বাচনে অংশগ্রহণে কোনো আইনি বাধা নেই।তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে নানা অনিয়মের কারণে পূর্বের গণপ্রতিনিধি আইন অনুযায়ী দলটির নির্বাচনী অপরাধীদের বিচার করা হবে।এ সময় মো. আসাদুজ্জামান বলেন, কোনো ষড়যন্ত্রের কাছে জুলাই বিপ্লব ব্যর্থ হতে পারে না। ষড়যন্ত্রকারীরা যত শক্তিশালীই হোক না কেন, এ বিপ্লব মুছে ফেলা যাবে না।অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, হাসিনার নির্মম পরিণামের পর তার পাশে দলের কেউ দাঁড়াতে সাহস পাচ্ছে না। যারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল, সংবিধান কেটে-ছিঁড়ে মানুষের অধিকার ভূলুণ্ঠিত করেছিল, তারা ইতিহাসের খলনায়ক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।ছায়া সংসদে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। তিনি বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারকে চিরদিন ক্ষমতায় রাখার অসৎ উদ্দেশে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার রায় জালিয়াতির দায়ে খায়রুল হকের গ্রেপ্তার ও বিচার সময়ের দাবি।তিনি আরও বলেন, এ দেশে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল পতিত আওয়ামী সরকার। ডামি, একতরফা ও মধ্যরাতের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছে। গত তিনটি নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, পুলিশ, রিটার্নিং অফিসার, পোলিং অফিসারসহ নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত প্রায় সবাই জাল-জালিয়াতির অপরাধে অপরাধী। যারা এসব নির্বাচনী অপরাধ করেছে, তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

সাবেক মন্ত্রী কামরুল ও সাংসদ সোলায়মান কারাগারে

বিএনপির মহাসমাবেশে যুবদলের নেতা শামীম হত্যা মামলায় চার দিনের রিমান্ড শেষে সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সাংসদ সোলায়মান সেলিমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) তাদের দুইজনকে রিমান্ড শেষে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর তাদের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা মতিঝিল জোনাল টিমের উপ-পরিদর্শক ফেরদৌস জামান। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী এর বিরোধিতা করেন। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমানের আদালত তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর তাদের দুইজনকে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী মহাসমাবেশ ডাকে। এই মহাসমাবেশকে পণ্ড করার জন্য একই দিনে আওয়ামী লীগ পাল্টা সমাবেশ ডাকে। বিএনপির নেতাকর্মীদের হত্যা ও গুম করার উদ্দেশ্যে পুলিশের সহায়তায় বিএনপির ঢাকার মহাসমাবেশে হামলা চালানো হয়। এতে অনেক বিএনপির নেতা কর্মী আহত হন। যুবদলের নেতা শামীম মারা যায়। এ ঘটনায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।

নসরুল হামিদের ৩৬ কোটি টাকার সম্পদ, অস্বাভাবিক লেনদেন ৩১৮১ কোটি

৩৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ ও ৯৮ ব্যাংক হিসাবে তিন হাজার ১৮১ কোটি ৫৮ লাখ ৮৩ হাজার টাকা অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ওরফে নসরুল হামিদ বিপুর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামলার এজাহার বলা হয়, ‘বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের বিরুদ্ধে দায়িত্বশীল পদে থেকে অবৈধ উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ৩৬ কোটি ৩৬ লাখ ৯৯ হাজার ৬৫৭ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখেছেন। অন্যদিকে, নিজ নামে ৯৮টি ব্যাংক হিসাবে মোট তিন হাজার ১৮১ কোটি ৫৮ লাখ ৮৩ হাজার ৩১৩ টাকা জমা ও অধিকাংশ টাকাই উত্তোলনের মাধ্যমে অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। যা মানি লন্ডারিংয়ের সম্পৃক্ত অপরাধ হিসাবেই দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে।’ সব মিলিয়ে দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ বা সম্পত্তির অবৈধ উৎস গোপন করার উদ্দেশ্যে হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪’-এর ২৭ (১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২’-এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়। গেল ২২ আগস্ট তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক। ওই দিন তার প্রতিষ্ঠান হামিদ গ্রুপে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। ঢাকা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনী এ অভিযান চালায়। এ সময় ‘প্রিয় প্রাঙ্গণ’ নামে ভবনের ভেতর থেকে বেশ কয়েকটি ভল্টে থাকা নগদ অর্থ ও বৈদেশিক মুদ্রা (প্রায় দশ লাখ টাকা ও ২০০ তুর্কি মুদ্রা) এবং অস্ত্র-গুলিসহ অন্যান্য সামগ্রী জব্দ করা হয়। অন্যদিকে, গেল ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর আত্মগোপনে আছেন নসরুল হামিদ।

আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতার লাশে আগুন: সেই কনস্টেবল মুকুল কারাগারে

জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সাভারের আশুলিয়ায় নিহত ছয়জনের লাশ পোড়ানোর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পুলিশ কনস্টেবল মো. মুকুল চকদারকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বেলা ১২টার পর বিচারপতি মো. গোলাম মোর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আদালত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে আগামী ২৬ জানুয়ারি এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। এদিন দুপুর পৌনে বারোটায় আদালতের কাঠগোড়ায় আনা হয় আসামি মুকুলকে। শুরুতেই রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম মো. মকবুল চাকদারকে কারাগারে রাখার আবেদন করেন। এরপর আদালত তার আবেদন মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ওই মামলায় আসামির কী সম্পৃক্ততা রয়েছে তা আদালতে উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এ সময় আদালতের কাঠগড়ায় নিশ্চুপ বসেছিলেন মুকুল চকদার। পরে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, আশুলিয়া ছয়জনকে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। মামলায় ইতোমধ্যে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আমরা এ মামলার সমস্ত বিষয় তদন্ত সংস্থাকে জানিয়েছি তারা তদন্ত করছে। ছাত্র আন্দোলনের সময় সাভারের আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় সাবেক এক এমপিসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গত মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এরপরই বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে এসআই মালেককে কিশোরগঞ্জ থেকে এবং কনস্টেবল মুকুলকে নবাবগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

খুনের মামলায় এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর কারাগারে

দুই বছর আগে বিএনপির কার্যালয়ে পুলিশের অভিযানে গুলিতে মকবুল নামের বিএনপির কর্মী নিহতের ঘটনায় করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তিন দিনের রিমান্ড শেষে নজিবুর রহমানকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুজ্জামান তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর এ মামলায় তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর এক দফা দাবি আদায়ের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। এর আগে ৭ ডিসেম্বর ডিবি পুলিশের হারুন অর রশীদ, মেহেদী হাসান ও বিপ্লব কুমার বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে অভিযান চালায়। কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায়। কার্যালয়ের পাশে থাকা হাজার হাজার নেতাকর্মীর ওপর হামলা চালায়। এতে মকবুল হোসেন নামে এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে শেখ হাসিনাসহ ২৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

আশুলিয়ায় ৬  মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় আশুলিয়ায় ছয় মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া বাকি চারজনই পুলিশ কর্মকর্তা বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তবে তাদের পরিচয় জানাতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।তদন্ত সংস্থার আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি গোলাম মোর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বে দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনাল মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। একইসঙ্গে আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালে সোপর্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। গ্রেফতার সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৬ জানুয়ারি পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।আদেশের পর চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, গত ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর তাদের লাশ চ্যাংদোলা করে ভ্যানে উঠিয়ে আগুনে পোড়ানো হয়। যেন কেউ বুঝতে না পারে তারা লাশ পুড়িয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত রাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এখন তদন্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কিছু কর্মকর্তার নাম পাওয়া গেছে।তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত আরও কর্মকর্তার নাম পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা চাওয়া হবে।ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের।সেদিন ঢাকার আশুলিয়ায় পুলিশভ্যানে ছাত্র-জনতার মরদেহ পোড়ানোর অভিযোগ ওঠে। গুলি করে হত্যার পর ভ্যানগাড়িতে উঠিয়ে এরপর মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়। ভ্যানে লাশ তোলার পর সেগুলো পোড়ানোর একাধিক ভিডিও প্রকাশ্যে এলে সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের দেশত্যাগে মানা

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন, তার স্ত্রী ফারহানা সাঈদ, মা শাহানা হানিফ ও ভাই জাবেদ আহমেদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের অবকাশকালীন বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়া দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানিলন্ডারিং) মো. মাসুদুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, ‘অভিযোগ সংশ্লিষ্ট শাহানা হানিফ, সাঈদ খোকন ও জাবেদ আহমেদের নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবগুলোতে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।’ ‘অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার পদের অপব্যবহার করে ও রাজনৈতিক পরিচয়ের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ও বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন মর্মে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। দেশের বর্তমান বাস্তবতায় শাহানা হানিফ, মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, জাবেদ আহমেদ ও ফারহানা সাঈদ দেশত্যাগ করতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই, সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমন রহিত করা আবশ্যক।’ সোমবার দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন।

নতুন মামলায় সালমান, আনিসুল ও পলককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে

আওয়ামী লীগ সরকারের গ্রেফতার সাবেক উপদেষ্টা, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সেনাকর্মকর্তাসহ ৯ জনকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেয়া হয়েছে। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে তাদেরকে আদালতে তোলা হয়। পরে নতুন বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছেন আদালত।সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলককে নিউ মার্কেট থানার মামলায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে যাত্রাবাড়ী থানার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। যাত্রাবাড়ি থানার একই হত্যা মামলায় আরও গ্রেফতার দেখানো হয়েছে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল আল মামুন, সাবেক এমপি ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে।সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত জিয়াউল আহসান ও সাবেক এমপি সাদেক খানকে মোহাম্মদপুর থানার হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছেন আদালত। এছাড়া, নরসিংদীর সাবেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খানকে পল্টন থানার মামলায় ৩ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করেছে ইন্টারপোল।রোববার (২২ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ তথ্য জানান।এর আগে, গত ১০ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল গণমাধ্যমকে বলেন, শেখ হাসিনাসহ জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় অভিযুক্ত পলাতক সব আসামিকে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট নোটিশ জারি করতে যাচ্ছে সরকার।পরে ১২ নভেম্বর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনা গণহত্যা, গুমসহ অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত এবং মামলার আসামি। তবে তিনি পালিয়ে গেছেন এবং বর্তমানে দেশের সীমানার বাইরে অবস্থান করছেন। এরকম একজন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে বা তার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট নোটিশ জারি করতে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে ইন্টারপোলকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন।

পিলখানায় হত্যা: ট্রাইব্যুনালে হাসিনাসহ ৫৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

ঢাকার পিলখানায় ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকীসহ মোট ৫৭ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দপুর দুইটার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কাছে পিলখানা গণহত্যায় শহীদ সেনা অফিসারদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা এই অভিযোগ জমা দেন। অভিযোগ প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট উদয় তাসমীর বলেন, ‘২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা হত্যার সঙ্গে আমরা মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার সামঞ্জস্যতা পেয়েছি। এর সঙ্গে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার দোসররা জড়িত ছিলেন। শেখ হাসিনা স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বকে সংকটের মুখে ফেলার জন্য এবং তার স্বৈরশাসনকে দীর্ঘ স্থায়ী করার জন্য বৃহৎ এবং শক্তিশালী বাহিনীকে ধ্বংস করতে এই মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে। আজ আমরা শহীদ পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে একটি অভিযোগ দাখিল করেছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেছি, তাদের মধ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী, তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা, আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা রয়েছেন। আমাদের অভিযোগ খুবই সুস্পষ্ট। দুইটি বাহিনীকে ধ্বংস করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বকে সংকটের মুখে ফেলে আওয়ামি ফ্যাসিস্ট মতাদর্শকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য দেশপ্রেমিক এবং দক্ষ ও অফিসারদেরকে খুন করা হয়েছে। তাদের লাশে আগুন দেওয়া হয়েছে এবং বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে তাদের লাশকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। তাদের পরিবারকে আটক করে জিম্মি করা হয়েছে এবং লুটপাট করা হয়েছে। এসব কিছুই মানবতা বিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। তাই, কমিশন গঠনের মাধ্যমে এসব ঘটনার বিচারের দাবি জানানো হয়েছে।’

সাবেক আইজিপিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ

জুলাই আগস্টে আন্দোলনের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের মামলায় সাবেক পুলিশ প্রধান (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ঢাকা জেলার সাবেক পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহ আল কাফি ও ঢাকার সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুর ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। তাদেরকে আগামী ২৬, ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।এদিকে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানসহ ৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুই মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করতে বলা হয়েছে। একই আদালত এ আদেশ দেন।এর আগে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানসহ ৮ কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। অন্যরা হলেন- ঢাকা জেলার সাবেক পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহ আল কাফি, মিরপুর ডিএমপির সাবেক ডিসি মো. জসিম উদ্দিন মোল্লা, ঢাকার সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুর ইসলাম, গুলশান থানার সাবেক ওসি মাজহারুল হক, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান এবং ঢাকা উত্তর ডিবির সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন।গত ২০ নভেম্বর জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক পুলিশ প্রধান ও এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালকসহ আট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একসঙ্গে তাদের ট্রাইব্যুনালের মামলায় কারাগারে রাখতে নির্দেশ দেন আদালত। এই মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়।

দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা: খালাস পেলেও এখনই মুক্তি মিলছে না বাবরের

চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ছয়জন আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ মামলা থেকে খালাস পেলেও এখনই মুক্তি মিলছে না তার। কারণ, একই ঘটনায় আরেক মামলায় তার দণ্ড বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী। মামলাটিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর ছয় আসামির সাজা কমিয়ে দশ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি পরেশ বড়ুয়ার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আসামিদের আপিলের ওপর শুনানি শেষে বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে আসামি মহসীন ও এনামুলসহ পাঁচজনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এসএম শাহজাহান। নিজামী ও বাবরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আবদুর রহিম ও লিয়াকতের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ আহসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসিফ ইমরান জিসান। পলাতক আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হাসনা বেগম শুনানি করেন। নুরুল আমিনের পক্ষে আইনজীবী সাধন কুমার বণিক ও মো. মহিউদ্দিন শুনানিতে অংশ নেন। রায়ে আদালত বলেছেন, ‘লুৎফুজ্জামান বাবর, রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসীন উদ্দিন তালুকদার, তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কেএম এনামুল হক ও প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। যে কারণে তারা অভিযোগ থেকে খালাস পাওয়ার অধিকারী। তাদের খালাস দেওয়া হল। ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড ও জরিমানা হয়েছিল।’ হাইকোর্ট রায়ে বলেছেন, ‘মারা যাওয়ায় তার আপিল মেরিটে নিষ্পত্তি করে অব্যাহতি (বাদ) দেওয়া হল।’ মামলাটিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব নুরুল আমিনকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। তার বিষয়ে রায়ে আদালত বলেছেন, ‘বিচারের শুরু থেকেই তিনি পলাতক। তার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। তাই, তিনি অভিযোগ থেকে খালাস পাওয়ার অধিকারী।’ পরেশ বড়ুয়ার যাবজ্জীবন: মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়ার মৃত্যুদণ্ড ও জরিমানা হয়েছিল। তার বিষয়ে হাইকোর্ট রায়ে বলেন, ‘শুরু থেকেই তিনি পলাতক। তার বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত এবং পারিপার্শ্বিকতা ও সাক্ষ্য-প্রমাণ বিবেচনায় নিয়ে তার সাজা পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করা হলে ন্যায়বিচার হবে। তাই, সাজা মৃত্যুদণ্ড থেকে কমিয়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হল।’ ছয়জনের দশ বছর করে কারাদণ্ড: বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামিকে দশ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। তারা হলেন জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) সংস্থার তৎকালীন মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, এনএসআইয়ের সাবেক উপপরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন, তৎকালীন পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) সাহাব উদ্দিন আহাম্মদ, চোরাকারবারি হাফিজুর রহমান, শ্রমিক সরবরাহকারী দ্বীন মোহাম্মদ ও ট্রলারমালিক হাজি সোবহান। বিচারিক আদালতের রায়ে তাদের পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছিল। সেটা জরিমানা পরিবর্তন করে তাদের দশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। রহিমের জরিমানা কমে দশ হাজার: ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আবদুর রহিমের মৃত্যুদণ্ড ও জরিমানা হয়েছিল। তার বিষয়ে রায়ে হাইকোর্ট বলেন, ‘মারা যাওয়ার কারণে তার আপিল অ্যাবেট (পরিসমাপ্তি) ঘোষণা করা হল। বিচারিক আদালতের দেওয়া জরিমানার আদেশ সংশোধন করে দশ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করা হল।’ বাবরের বিষয়ে তার আইনজীবী মুহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, ‘দশ ট্রাক-সংক্রান্ত অপর একটি মামলায় দণ্ড থাকায় এখনই বাবর কারামুক্তি পাচ্ছেন না। ওই মামলায় বাবরের করা আপিল হাইকোর্টে শুনানির জন্য রয়েছে।’ ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল সিইউএফএল ঘাট থেকে আটক করা হয় দশ ট্রাক ভর্তি অস্ত্রের চালান। এ নিয়ে কর্ণফুলী থানায় ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইন ও ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে চোরাচালানের অভিযোগ এনে দুইটি মামলা হয়। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) পুলিশ দুইটি মামলা একসঙ্গে তদন্ত করে। এর বিচারও একসঙ্গে শুরু হয়। অস্ত্র আইনে করা অন্য মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ হয় একই আসামিদের। বিচারিক আদালতের রায়ের পর ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রায়সহ মামলার নথিপত্র হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছায়, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। অন্য দিকে, দণ্ডিত আসামিরা সাজার রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন। এর আগে ওই মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দেন। বিচারিক আদালতের রায়ে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী (অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর), লুৎফুজ্জামান বাবর, পরেশ বড়ুয়া ও দুইটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। এরপর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। দণ্ডিত ১২ জন পৃথক আপিল করেন। মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের ওপর গত ৬ নভেম্বর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়। ১৩তম দিনে শুনানি শেষে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স নাকচের পাশাপাশি কোন ক্ষেত্রে আপিল মঞ্জুর আবার কোন ক্ষেত্রে, আপিল নামঞ্জুর করে সাজা সংশোধন করে বুধবার রায় দেওয়া হয়।

মকবুল হত্যা মামলায় তিন দিনের রিমান্ডে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান

বিএনপিকর্মী মকবুল হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শরীফুর রহমানের আদালত রিমান্ডের এ আদেশ দেন। এদিন কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয় নজিবুর রহমানকে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তার ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে রিমান্ডের আদেশ দেন। মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর এক দফা দাবি আদায়ের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। ওই বছরের ৭ ডিসেম্বর ডিবি পুলিশের হারুন অর রশীদ, মেহেদী হাসান ও বিপ্লব কুমার বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে অভিযান চালান। কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান তারা। কার্যালয়ের পাশে থাকা হাজার হাজার নেতাকর্মীর ওপর হামলা চালান তারা। এতে মকবুল হোসেন নামে এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর মাহফুজুর রহমান নামে একজন বাদী হয়ে শেখ হাসিনাসহ ২৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন, যেখানে আসামি হিসেবে এজাহারভুক্ত করা হয় এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানকেও।

১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় লুৎফুজ্জামান বাবরকে খালাস দিলেন হাইকোর্ট

বহুল আলোচিত চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। এর আগে গত ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় করা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। সেদিন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ কয়েকজন আসামির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিশির মনির। ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল সিইউএফএল ঘাট থেকে আটক করা হয় ১০ ট্রাকভর্তি অস্ত্রের চালান। এ নিয়ে কর্ণফুলী থানায় অস্ত্র আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে চোরাচালানের অভিযোগ এনে দুটি মামলা হয়। মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দেন। এর মধ্যে অস্ত্র চোরাচালান মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী (অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর), সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া এবং দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। অস্ত্র আইনে করা অন্য মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ হয় একই আসামিদের। বিচারিক আদালতের রায়ের পর ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রায়সহ মামলার নথিপত্র হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছে, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। অন্যদিকে কারাগারে থাকা দণ্ডিত আসামিরা সাজার রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন।

এক যুগ পর দেশে ফিরছেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক

প্রখ্যাত আইনজীবী ও জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নেতা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আগামী ২৬ ডিসেম্বর দেশে আসছেন। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) তার চেম্বারের জুনিয়র কাউন্সেল ব্যারিস্টার মাহমুদ আল মামুন হিমু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন,'সব কিছু ঠিক থাকলে দীর্ঘ প্রায় এক যুগ পর আগামী ২৬ সে ডিসেম্বর সকালে সুপ্রিম কোর্টের সুনামধন্য আইনজীবী, আমাদের সিনিয়র দেশে আসছেন, ইনশাআল্লাহ।' জানা গেছে, তিনি সুপ্রিম কোর্টে আইনপেশায় নিয়মিত হবেন। তার দুই ছেলে ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিকী ও ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিকী সুপ্রিম কোর্টে আইনপেশা পরিচালনা করে আসছেন। শেখ হাসিনার শাসনামলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্টাইব্যুনালে বিচার শুরু হলে শুরু থেকে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক জামায়াত নেতাদের প্রধান আইনজীবী ছিলেন। ২০১৩ সালে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়। একই বছরের ১৭ ডিসেম্বর ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ইংল্যান্ডে চলে যান। এক পর্যায়ে তিনি জামায়াতে ইসলামী থেকে পদত্যাগ করেন। পরে তিনি এবি পার্টির প্রধান উপদেষ্টা হন। গত সেপ্টেম্বর মাসে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) থেকে পদত্যাগ করেন দলটির প্রধান উপদেষ্টা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।

কোর্ট থেকে লাথি মেরে চিফ জাস্টিসকে বের করে দিয়েছিল ডিজিএফআই

কোর্টে এসে লাথি মেরে এক চিফ জাস্টিসকে বের করে দিয়েছিল ডিজিএফআই; এটা কি তাদের কাজ? দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার শুনানিতে এমন প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকালে দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক শুনানিতে এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করেন বিচারপতি মোস্তফা জামার ইসলামের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ। ব্রিগেডিয়ার (জেনারেল অব) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীর পক্ষে যখন যুক্তিতর্ক তুলে ধরছিলেন তার আইনজীবী, তখন হাইকোর্ট বলেন, ‘ডিজিএফআই এসব কি করে। এটা কি ধরনের কাজ।’ কাল চূড়ান্ত যুক্তি তর্ক শেষ করে সময় পেলে রায় দেয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। বহুল আলোচিত চট্টগ্রামে দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে। এর আগে গেল ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় করা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। সেদিন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ কয়েকজন আসামির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এসএম শাহজাহান। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিশির মনির। ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল সিইউএফএল ঘাট থেকে আটক করা হয় দশ ট্রাক ভর্তি অস্ত্রের চালান। এ নিয়ে কর্ণফুলী থানায় অস্ত্র আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে চোরাচালানের অভিযোগ এনে দুইটি মামলা হয়। মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দেন। এর মধ্যে অস্ত্র চোরাচালান মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী (অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর), লুৎফুজ্জামান বাবর, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া এবং দুইটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। অস্ত্র আইনে করা অন্য মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ হয় একই আসামিদের। বিচারিক আদালতের রায়ের পর ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রায়সহ মামলার নথিপত্র হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছে, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। অন্য দিকে, কারাগারে থাকা দণ্ডিত আসামিরা সাজার রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ বেশকিছু বিষয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। এর আগে, গত ৫ ডিসেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ বেশকিছু বিষয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না, এই মর্মে জারি করা রুলের রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট। ২৩ কার্যদিবস শুনানি শেষে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করা হয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন, রিটকারী সুজনের বদিউল আলমের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া। বিএনপির পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল। জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিকী। ইনসানিয়াত বিপ্লবের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান, চার আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জুনায়েদ আহমেদ চৌধুরী, ইন্টারভেনর হিসেবে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলে বিএনপির পক্ষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার পক্ষভুক্ত হন। এরপর ইনসানিয়াত বিপ্লব, গণফোরাম, চার আবেদনকারী রুলে ইন্টারভেনর হিসেবে পক্ষভুক্ত হন। গত ১৯ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সে সময় বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেছিলেন। উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই সংশোধনীর দ্বারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।

সাবেক মন্ত্রী-উপদেষ্টাসহ ১৬ জনকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছে

জুলাই-আগস্টে গণহত্যার মামলায় গ্রেফতার আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ মোট ১৬ জনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় প্রিজন ভ্যানে করে দ্বিতীয়বারের মতো তাদের ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। বিভিন্ন কারাগার থেকে সাবেক এসব মন্ত্রী, উপদেষ্টা, আমলা, বিচারপতি ও রাজনীতিবিদদের আদালতে আনা হয়। এর মধ্যে গোলাম দস্তগীর গাজীকে আনা হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে। এর আগে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আল নোমান জানিয়েছেন, জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা দুই মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত এক মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তদন্ত শেষ করে আজ ১৭ ডিসেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের কথা রয়েছে। এই মামলাতেই তাদেরকে হাজির করা হয়েছে। অভিযুক্তরা হলেন- সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, ড. দীপু মনি, রাশেদ খান মেনন, আব্দুর রাজ্জাক, হাসানুল হক ইনু, জুনাইদ আহমেদ পলক, শাজাহান খান, গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তৌফিক-ই-ইলাহী, সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও সচিব জাহাংগীর আলম, আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু এবং কামরুল ইসলাম। ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে ‘গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ’ সংঘটনের অভিযোগে গত ১৭ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতার পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। ২৭ অক্টোবর আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ১০ মন্ত্রী, দুই উপদেষ্টা, অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতি ও সাবেক এক সচিবসহ মোট ১৪ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে ১৮ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ১৮ নভেম্বর সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ আসামিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি, হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বিচারে হত্যা চালায়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়।