
সাবেক মন্ত্রী-উপদেষ্টাসহ ১৬ জনকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছে
জুলাই-আগস্টে গণহত্যার মামলায় গ্রেফতার আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ মোট ১৬ জনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় প্রিজন ভ্যানে করে দ্বিতীয়বারের মতো তাদের ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। বিভিন্ন কারাগার থেকে সাবেক এসব মন্ত্রী, উপদেষ্টা, আমলা, বিচারপতি ও রাজনীতিবিদদের আদালতে আনা হয়। এর মধ্যে গোলাম দস্তগীর গাজীকে আনা হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে। এর আগে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আল নোমান জানিয়েছেন, জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা দুই মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত এক মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তদন্ত শেষ করে আজ ১৭ ডিসেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের কথা রয়েছে। এই মামলাতেই তাদেরকে হাজির করা হয়েছে। অভিযুক্তরা হলেন- সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, ড. দীপু মনি, রাশেদ খান মেনন, আব্দুর রাজ্জাক, হাসানুল হক ইনু, জুনাইদ আহমেদ পলক, শাজাহান খান, গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তৌফিক-ই-ইলাহী, সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও সচিব জাহাংগীর আলম, আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু এবং কামরুল ইসলাম। ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে ‘গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ’ সংঘটনের অভিযোগে গত ১৭ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতার পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। ২৭ অক্টোবর আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ১০ মন্ত্রী, দুই উপদেষ্টা, অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতি ও সাবেক এক সচিবসহ মোট ১৪ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে ১৮ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ১৮ নভেম্বর সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ আসামিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি, হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বিচারে হত্যা চালায়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে হাইকোর্টের রায় ঘোষণা শুরু
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ বেশকিছু বিষয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না, এই মর্মে জারি করা রুলের রায় ঘোষণা শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল ১০ টা ৫০ মিনিটের দিকে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা শুরু করেন। এর আগে, গত ৫ ডিসেম্বর এই রুলের রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট। ২৩ কার্যদিবস শুনানি শেষে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করা হয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন, রিটকারী সুজনের বদিউল আলমের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া। বিএনপির পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল। জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিকী। ইনসানিয়াত বিপ্লবের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান, চার আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জুনায়েদ আহমেদ চৌধুরী, ইন্টারভেনর হিসেবে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলে বিএনপির পক্ষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার পক্ষভুক্ত হন। এরপর ইনসানিয়াত বিপ্লব, গণফোরাম, চার আবেদনকারী রুলে ইন্টারভেনর হিসেবে পক্ষভুক্ত হন। গত ১৯ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সে সময় বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেছিলেন। উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই সংশোধনীর দ্বারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।

ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রিভা দুই দিনের রিমান্ডে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় হত্যাচেষ্টা মামলায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ইডেন মহিলা কলেজ শাখার সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভার (৩২) দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) শুনানি শেষে এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর হাকিম মোস্তাফিজুর রহমান। সোমবার তাকে আদালতে হাজির করে দশ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ মাসুদ সরদার। আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখি রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। উভয়ের পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আদেশ দেয়। রোববার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে ঢাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনে ক্যাম্পাস ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান রিভা। এরপর তাকে আর জনসম্মুখে দেখা যায়নি। বিভিন্ন সময়ে ‘বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের’ জন্য আলোচিত রিভা ইডেন কলেজের মার্কেটিং বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এর আগে শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নিশীতা ইকবাল নদীকে গ্রেফতার করে ডিবি। কলাগান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা একটি মামলায় তাকে দুই দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। আওয়ামী লীগ সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে ‘সন্ত্রাসী’ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২৩ অক্টোবর ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের আয়কর নথি জব্দের আদেশ
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের আয়কর নথি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়া এ আদেশ দেন। বৃহস্পতিবার দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম আসাদুজ্জামান খানের আয়কর নথি জব্দের আদেশ চেয়ে আবেদন করেন। এ বিষয়ে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) সালাউদ্দিন ইস্কান্দার কিং শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেন। এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর আসাদুজ্জামান খান কামাল, তার স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান ও কন্যা সাফিয়া তাসনিম খানসহ দশজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। গত ১৫ সেপ্টেম্বর দুদকের প্রধান কার্যালয়ের আসাদুজ্জামান খান কামালসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে পৃথক পাঁচটি মামলা করেন। তাদের বিরুদ্ধে মোট ৭৯ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার পর গত ৪ নভেম্বর আসাদুজ্জামান খান কামালের নয়টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করেন আদালত। এতে ১২ কোটি ১১ লাখ ৯৪ হাজার ১৮০ টাকা রয়েছে। আসাদুজ্জামান খান কামাল ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ঢাকা-১১ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১২ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত হন। পরে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি তৃতীয় বারের মত সাংসদ নির্বাচিত হন এবং পুনরায় শপথ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন। গেল ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ থেকে পালিয়ে ভারত চলে যান। পরে রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিলে আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংসদ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ হারান। এরপর থেকে তিনি অজ্ঞাতস্থানে আত্মগোপনে আছেন।

স্থগিত হল শমী কায়সারের জামিন
ঢাকার উত্তরা পূর্ব থানায় জুলাই-আগস্টের ঘটনায় দায়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলায় ই-কর্মাস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাবেক সভাপতি ও অভিনেত্রী শমী কায়সারকে দেওয়া হাইকোর্টের জামিন আদেশ স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ। একই সাথে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি আগামী ৬ জানুয়ারি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) এ আদেশ দেন। এ মামলায় রোববার (৮ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জামিন চেয়ে আবেদন করেছিলেন তিনি। গত ৫ নভেম্বর শমী কায়সারকে উত্তরার একটি বাসা থেকে গ্রেফার করে পুলিশ। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই ইশতিয়াক মাহমুদ নামের এক ব্যবসায়ীসহ অন্যরা কর্মসূচিতে অংশ নেন। উত্তরা পূর্ব থানাধীন চার নম্বর সেক্টরের আজমপুর নওয়াব হাবিবুল্লাহ হাই স্কুলের সামনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ হামলা চালায় ও গুলিবর্ষণ করে। এ সময় ইশতিয়াকের পেটে গুলি লাগে। তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।’ এ ঘটনায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর ইশতিয়াক মাহমুদ বাদী হয়ে উত্তরা পূর্ব থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ ১২৬ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় শমী কায়সার ২৪ নম্বর এজাহারভুক্ত আসামি। ৯০ দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শমী কায়সার শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সার এবং ঔপন্যাসিক ও সাবেক সাংসদ পান্না কায়সারের সন্তান। শমী কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর আওয়ামী লীগ সরকারের দমনপীড়ন চলাকালে সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে তুমুল সমালোচিত হন।

গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের ১০ বছরের খালাসের রায় বহাল
জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে হাইকোর্টের দেওয়া খালাসের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। এ বিষয়ে মামুনের আপিল মঞ্জুর করে বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন। গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের আইনজীবী সাব্বির হামজা চৌধুরী বলেন, এক এগারোর সময় এ মামলা দায়ের করা হয়। বিচারিক আদালত ১০ বছরের সাজা দেন। পরে হাইকোর্ট খালাস দেন। এর বিরুদ্ধে দুদক আপিল বিভাগে আবেদন করে। আপিল বিভাগ মামলাটি পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির জন্য পাঠানো হয়। পুনরায় শুনানির আদেশের বিরুদ্ধে গিয়াস উদ্দিন মামুন রিভিউ করেন। সেই রিভিউ আদালত মঞ্জুর করেন। এরপর তিনি আপিল করেন। আজ সেই আপিল মঞ্জুর করেছেন। ফলে হাইকোর্টের খালাসের রায় বহাল। ২০০৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দুদকের নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে সম্পদের হিসাব দাখিল না করায় একই সালের ৮ মে দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম ক্যান্টনমেন্ট থানায় এ মামলা করেন। মামলায় মামুনের বিরুদ্ধে ১০১ কোটি ৭৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩৬৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ মার্চ বিচারিক আদালত মামুনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অনাদায়ে আরও এক বছরের দণ্ড দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করলে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চে ২০১২ সালের ৩০ জুলাই খালাস পান মামুন। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে পরে লিভ টু আপিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১৫ সালের ১ নভেম্বর হাইকোর্টের খালাসের রায় বাতিল করেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে মামলার পুনরায় আপিল শুনানির জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। আপিল বিভাগের ওই আদেশ রিভিউ চেয়ে গিয়াস উদ্দিন মামুন আবেদন করেন। আপিল বিভাগ তার রিভিউ মঞ্জুর করলে তিনি আপিল করেন। আজ সেই আপিল মঞ্জুর করা হয়।

আরও এক মামলা থেকে খালাস পেলেন গিয়াস উদ্দিন আল মামুন
জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে হাইকোর্টের দেওয়া খালাসের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। রায়ের পর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন গিয়াস উদ্দিন আল মামুন আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন। বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের আপিল বিভাগ এ রায় দেন। গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের পক্ষে শুনানি করেন ফিদা এম কামাল, আর দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আসিফ হোসেন। ২০০৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দুদকের নোটিশের প্রেক্ষিতে সম্পদের হিসাব দাখিল না করায় একই সালের ৮ মে দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম ক্যান্টনমেন্ট থানায় এ মামলা করে। মামলায় মামুনের বিরুদ্ধে ১০১ কোটি ৭৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩’শ ৬৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ মার্চ বিচারিক আদালত মামুনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা অনাদায়ে আরও এক বছরের দণ্ড দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করলে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চ ২০১২ সালের ৩০ জুলাই খালাস পায় মামুন। পরে এ মামলায় আপিল বিভাগে যায় দুদক। এর আগে গত ৫ ডিসেম্বর অর্থপাচারের অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলা থেকে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে খালাস দেয় হাইকোর্ট। বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ে মামুনের সাত বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। ২০০৭ সালের ৩০ জানুয়ারি যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন গিয়াস উদ্দিন আল মামুন। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই ছিলেন। পরে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দিন তিনি কারাগার থেকে জামিনে বের হন।

শমী কায়সারের জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ঢাকার উত্তরা পূর্ব থানায় করা মামলায় অভিনেত্রী শমী কায়সারকে তিন মাসের জামিন দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এবার তার জামিন স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা এ আবেদন করেছেন। আজই এর শুনানি হতে পারে। এর আগে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এদিন আদালতে শমী কায়সারের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ বি এম হামিদুল মেজবাহ।রোববার (৮ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় উত্তরা পূর্ব থানার হত্যাচেষ্টা মামলায় হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন ই-কর্মাস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাবেক সভাপতি ও অভিনেত্রী শমী কায়সার।গত ৫ নভেম্বর দিবাগত রাতে উত্তরার চার নম্বর সেক্টরের ছয় নম্বর রোডের ৫৩ নম্বর বাসা থেকে শমী কায়সারকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। গত ৯ নভেম্বর শমী কায়সারকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠান আদালত।জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই ইশতিয়াক মাহমুদ নামে এক ব্যবসায়ীসহ অন্যরা কর্মসূচিতে অংশ নেন। উত্তরা পূর্ব থানাধীন চার নম্বর সেক্টরের আজমপুর নওয়াব হাবিবুল্লাহ হাই স্কুলের সামনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ হামলা চালায় ও গুলিবর্ষণ করে। এ সময় ইশতিয়াকের পেটে গুলি লাগে। তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।এ ঘটনায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর ইশতিয়াক মাহমুদ বাদী হয়ে উত্তরা পূর্ব থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ ১২৬ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় শমী কায়সার ২৪ নম্বর এজাহারভুক্ত আসামি। রিমান্ড শেষে শমী কায়সারকে ৯ নভেম্বর কারাগারে পাঠান ঢাকার আদালত।

পিরোজপুরে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা থেকে খালাস পেলেন তারেক রহমান
পিরোজপুর জেলার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে খালাস দিয়েছেন আদালত। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে পিরোজপুরের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. হেলাল উদ্দিন এ আদেশ দেন।দায়ের হওয়া মামলার নথি ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুর জেলা আইনজীবী সমিতির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. দেলোয়ার হোসেন ২০১৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর দণ্ডবিধি ১২৩ (ক) ধারায় বিএনপির তখনকার জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দেশের সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট করা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়া, নিন্দাবাদ ও উসকানিমূলক বক্তব্য রাখার অভিযোগ এনে পিরোজপুর সদর থানায় এ মামলা করেন। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য থাকায় আদালতের বিচারক তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন উপাদান না থাকায় তাকে দায় থেকে অব্যাহতি দেন এবং মামলাটি খারিজ করেন। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন মামনুন আহসান। পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপি ও তারেক রহমানকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল আওয়ামী লীগ। দেশে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত দ্বিতীয় স্বাধীনতায় আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিধায় আজ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পিরোজপুরে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় সম্পূর্ণ খালাস ও মামলাটি খারিজ হয়েছে। সব মামলায় তারেক রহমান খালাস পাবেন ও দেশে ফিরবেন বলে আশা রাখছি।’

হাসিনাকে পলাতক দেখিয়ে বিচার করতে বাধা নেই বললেন টবি ক্যাডম্যান
শেখ হাসিনাকে পলাতক দেখিয়ে বিচার করতে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ টবি ক্যাডম্যান। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে প্রসিকিউশন টিমের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা বলেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক ক্যাডম্যান। এ সময় শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত দিতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানান আন্তর্জাতিক এই অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ। টবি ক্যাডম্যান বলেন, শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারত কী করবে জানি না। আশা করছি ভারত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। তারা বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি সম্মান জানিয়ে জুলাই গণহত্যার প্রধান আসামি শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাবে। তবে ভারত যদি না ফেরত দেয় তাহলে তার অনুপস্থিতিতেই বিচার চলবে। জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচারে আন্তর্জাতিক মান মেনে চলা হচ্ছে জানিয়ে চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক বলেন, নিশ্চিত করা হবে আন্তর্জাতিক মান ও ন্যায়বিচার। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতেও যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এর আগে সকালে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর ও তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ক্যাডম্যান। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের বিশেষ পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় লন্ডনভিত্তিক গার্নিকা ৩৭ ল’ ফার্মের যুগ্ম প্রধান টবি ক্যাডম্যানকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে টবি ক্যাডম্যান লেখেন, ‘এই ঘোষণা দিতে পেরে আমি আনন্দিত ও খুবই সম্মানিত বোধ করছি যে আমাকে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন স্পেশাল প্রসিকিউটর অ্যাডভাইজার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সংক্রান্ত সব বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটরকে পরামর্শ দেওয়া বি ক্যাডম্যানের ভূমিকা হবে বলে পৃথক আরেকটি পোস্টে জানিয়েছে টবি ক্যাডম্যানের ল’ ফার্ম গার্নিকা ৩৭। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে এসেছিলেন টবি ক্যাডম্যান। গত ২ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় সাক্ষাৎ করেছিলেন ক্যাডম্যান।

আজ থেকে 'জয় বাংলা' আর জাতীয় স্লোগান নয়, হাইকোর্টের রায় স্থগিত
‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।আদেশের বিষয়টি জানান অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনিক আর হক। এর আগে ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা চেয়ে ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. বশির আহমেদের হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। পরে ২০২০ সালের ১০ মার্চ ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে রায় দেন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। বাংলায় দেওয়া রায়ের আদেশের একটি অংশে আদালত বলেন, ‘আমরা ঘোষণা করছি যে জয় বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে।’ পরে ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভা। এর আগে, গত ২ ডিসেম্বর ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

সিঙ্গাপুরে অর্থপাচার মামলায় তারেক রহমানের সাজা স্থগিত
সিঙ্গাপুরে অর্থপাচারের অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৭ বছরের সাজা স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। একই মামলায় তারেক রহমানের বন্ধু ও ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের সাত বছরের সাজাও স্থগিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর সিঙ্গাপুরে অর্থপাচারের মামলায় ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালত তারেক রহমানকে খালাস দেন। ওই মামলায় তারেকের বন্ধু ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে দুদক তারেক রহমানকে খালাস দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে। ওই আপিল শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ২১ জুলাই বিচারিক আদালতের খালাসের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন। পাশাপাশি ২০ কোটি টাকা জরিমানা করেন। ২০১০ সালে মামলাটিতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

হত্যাচেষ্টা মামলায় জামিন পেলেন অভিনেত্রী শমী কায়সার
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানায় করা মামলায় অভিনেত্রী শমী কায়সারের জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ই-কর্মাস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাবেক সভাপতি ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে আজ শমী কায়সারের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ বি এম হামিদুল মেজবাহ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই ইশতিয়াক মাহমুদ নামের এক ব্যবসায়ীকে হত্যার চেষ্টা হয়। ওই ঘটনায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর উত্তরা পূর্ব থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা হয়। সে মামলায় শমী কায়সারকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে রিমান্ড শেষে শমী কায়সারকে গত ৯ নভেম্বর কারাগারে পাঠান ঢাকার আদালত।

চট্টগ্রাম আদালতে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় ৮ আসামি রিমান্ডে
চট্টগ্রাম আদালতে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুরকে কেন্দ্র করে পুলিশের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের মামলায় আট আসামির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর হোসেনের আদালত এ আদেশ দেন। রিমান্ডে পাঠানো ব্যক্তিরা হলেন- সুমন দাস, সাকিবুল আলম, আহমদ হোসেন, সুজন চন্দ্র দাস, ইমন চক্রবর্তী, রূপন দাস, মো. রাকিব ও সৌরভ দাস। চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী বলেন, চিন্ময় অনুসারীদের তাণ্ডবের ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় আট আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত রোববার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রথম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বক্কর ছিদ্দিকের আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৬৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলার আবেদন করেন এনামুল হক নামে এক ব্যবসায়ী। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ ওইদিন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৬৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার একটি আরজি দায়ের করা হয়েছে। ২৬ নভেম্বরের ঘটনায় এ মামলার আবেদন করা হয়েছে। বাদীপক্ষের আইনজীবী শামসুল আলম বলেন, ২৬ নভেম্বর চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনার সময় এনামুল হক নামে এক ব্যবসায়ী মারধরের শিকার হন। দাঁড়ি-টুপি থাকায় চিন্ময় কৃষ্ণের অনুসারীরা তাকে মেরে ডান হাত ভেঙে দেন। এ ছাড়া তার মাথায় কিরিচ দিয়ে কোপ দিয়েছেন চিম্ময়ের অনুসারীরা। এ ঘটনায় চিন্ময় কৃষ্ণকে প্রধান আসামি করে ১৬৪ জনের নামে মামলার আবেদন করা হয়েছে। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন। চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানায় করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গত ২৫ নভেম্বর রাতে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইসকনের বহিষ্কৃত সংগঠক ও সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে তাকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে বিক্ষোভ শুরু করেন তার অনুসারীরা। প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে থাকার পর একপর্যায়ে পুলিশ, বিজিবি লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখনই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরবর্তীতে নগরীর লালদিঘীর পাড় থেকে কোতোয়ালি এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেন তার অনুসারীরা। এ ঘটনায় সাইফুলের বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধাদান এবং আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও পাঁচটি মামলা হয়। ছয় মামলায় ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১০ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

শাহ কামাল দুই ও পলক তিন দিনের রিমান্ডে
শিক্ষার্থী মানিক হত্যার দায়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় করা মামলায় আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকার সিএমএম আদালত আনা হলে তার সাত দিনের পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এ সময় আসামির শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় রিমান্ড বাতিলের আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। শুনানি শেষে বিচারক তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই আদালত পল্টন থানার যুবদল নেতা শামীম হত্যা মামলায় সাবেক সচিব শাহ কামালকে দুই দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। এছাড়া ঢাকার বিভিন্ন থানায় করা মামলায় সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, রাশেদ খান মেনন, ডিবির সাবেক কর্মকর্তা মশিউর রহমান এবং গাজীপুরের সাবেক মেয়র আসাদুর রহমান কিরণকে নতুন করে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপরপর থেকে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও এমপি এবং নেতাকর্মীদের নামে অনেক মামলা হয়। ইতোমধ্যে অনেকে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। তাদের অনেককে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।

সাবেক সাংসদ ও জাপার নেতা টিপু জেলে
বরিশাল-৩ আসনের সাবেক সাংসদ ও জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপুর জামিন না মঞ্জুর করে জেলে পাঠানো হয়েছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতির মামলার আসামি হিসেবে রোববার (৮ ডিসেম্বর) বরিশালের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর রহমান জামিন না মঞ্জুর করে জেলে পাঠিয়েছেন বলে জিআরও এএসআই খাদিজা বেগম জানান। গেল ২১ নভেম্বর বাবুগঞ্জের দেহেরগতি ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন হেমায়েত বাদী হয়ে টিপুকে প্রধান আসামি করে নামধারী ১১ ও অজ্ঞাত আরো ১৫০ জনকে আসামি করে ওই মামলাটি করেন। খাদিজা বেগম জানান, মামলার আসামি হিসেবে টিপু আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গ্রেফতারি পরোয়ানা মূলে তাকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। এছাড়াও, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তাকে দশ দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করেন। আগামী ১০ ডিসেম্বর জামিন ও রিমান্ড আবেদনের শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৩ আসনে জাপার মনোনীত প্রার্থী হয়েছিলেন গোলাম কিবরিয়া টিপু। তিনি নির্বাচনে জয়ী হয়ে সাংসদ হয়েছিলেন। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাবুগঞ্জ উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ইউনিয়নের ‘ঠাকুর মল্লিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট চলাকালে সকাল ১০টার দিকে আসামিরা রামদা, লাঠিসোঁটা নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করে হামলা চালায়। এ সময় বিএনপির দলীয় প্রার্থীর এজেন্টদের মারধর করে। পরে ভোটকেন্দ্রে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এছাড়া, মামলার বাদী আনোয়ার হোসেনের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে তাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে ভোটকেন্দ্র দখল করে। পরে জাপার প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপুর ব্যালট পেপারে সিল মেরে তাকে অবৈধভাবে সাংসদ নির্বাচিত করেন। এ অভিযোগে করা ওই মামলার নামধারী অন্য আসামিরা হলেন একই আসনের সাবেক সাংসদ ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির বরিশাল জেলার সাধারণ সম্পাদক শেখ টিপু সুলতান, বাবুগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী এমদাদুল হক দুলাল, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সরদার খালেদ হোসেন স্বপন, উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ফারজানা বিনতে ওহাব, উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান মিলন, মাধবপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান, রিয়াজ সরদার, মাধবপাশা ইউনিয়ন তাঁতী দলের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মো. সোহেল সরদার। এ দিকে, গোলাম কিবরিয়া টিপুর আত্মসমর্পণের খবর পেয়ে বরিশাল-৩ আসনের মুলাদী ও বাবুগঞ্জ উপজেলার বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা তার ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।

‘জয় বাংলা’ স্লোগানের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন শুনানি চলতি সপ্তাহে
‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগানের রায় স্থগিত চেয়ে করা আবেদনের শুনানি চলতি সপ্তাহে হবে বলে জানিয়েছেন আপিল বিভাগ। রোববার (৮ ডিসেম্বর) সকালে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানির জন্য এ সময় নির্ধারণ করেন। হাইকোর্টের এ বেঞ্চে সকালে উপস্থিত হয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘এই মামলাটি আজ শুনানির জন্য টপে থাকার কথা ছিল। কিন্তু তা আসেনি। সেজন্য এটি দ্রুত শুনানির আবেদন করছি। বুধবার অথবা বৃহস্পতিবার এ রায় দেওয়ার অনুরোধ করছি। উত্তরে আপিল বিভাগ বলেন, চলতি সপ্তাহেই হয়ে যাবে।’ ২০২০ সালের ১০ মার্চ জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে রায় দেন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। বাংলায় দেওয়া ওই রায়ের আদেশের অংশে আদালত বলেন, ‘আমরা ঘোষণা করছি যে “জয় বাংলা” বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে।’ পরে ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তকে অনুমোদন দেয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভা। হাইকোর্টের দেওয়া এ রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত ২ ডিসেম্বর এ তথ্য জানান অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক।

১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু
চারদলীয় জোট সরকারের আমলে চট্টগ্রামে বহুল আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনার মামলায় আপিল শুনানিতে আসামিদের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়েছে। রোববার (৮ ডিসেম্বর) বেলা সোয়া ১১টায় বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। আদালতে আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। এর আগে গত ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় করা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। সেদিন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ কয়েকজন আসামির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান। ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) ঘাট থেকে আটক করা হয় ১০ ট্রাকভর্তি অস্ত্রের চালান। এ নিয়ে কর্ণফুলী থানায় অস্ত্র আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে চোরাচালানের অভিযোগ এনে দুটি মামলা হয়। মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দেন। এর মধ্যে অস্ত্র চোরাচালান মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী (অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর), সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া এবং দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। অস্ত্র আইনে করা অন্য মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ হয় একই আসামিদের। বিচারিক আদালতের রায়ের পর ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রায়সহ মামলার নথিপত্র হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছে, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। অন্যদিকে কারাগারে থাকা দণ্ডিত আসামিরা সাজার রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন।

হত্যা মামলায় সাবেক বিমানমন্ত্রীসহ চারজন রিমান্ডে
রাজধানীর ধানমন্ডি থানার শিক্ষার্থী শামীম হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খানসহ চারজনের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। অন্যরা হলেন— সাবেক সংসদ সদস্য সাদেক খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ও সাবেক কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক। রোববার (৮ ডিসেম্বর) সকালে আসামিদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করে ৫ দিনের করে পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, আসামিদের সরাসরি ইন্ধনে উক্ত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এবং মূল রহস্য উদঘাটনসহ আরও কারা কারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত তা জানতে রিমান্ডের প্রয়োজন। তবে আসামি পক্ষের আইনজীবী জানান আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী আসামিদের স্বৈরাচারের দোসর উল্লেখ করে রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহীন রেজার আদালত তাদের প্রত্যেকের ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগেও একাধিক মামলায় ফারুক খান, সাদেক খান, তানভীর সৈকত, হাসিবুর রহমান মানিক রিমান্ডে ছিলেন।

প্রধান উপদেষ্টার বিরুদ্ধে শ্রম আইনের ৫ মামলা বাতিলের রায় বহাল
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইনের পাঁচ মামলার কার্যক্রম বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখা হয়েছে। রোববার (৮ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল খারিজ করে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। এই আদেশের ফলে শ্রম আইনের পাঁচ মামলার কার্যক্রম বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল থাকল বলে জানিয়েছেন ড. ইউনূসের পক্ষের আইনজীবী। আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান খান। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। গত ২৪ অক্টোবর বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইনের এই পাঁচ মামলায় ও মানহানির এক মামলার কার্যক্রম বাতিল করে রায় দেন। ড. ইউনূসের নামে যখন শ্রম আদালতে পৃথক পাঁচটি মামলা হয়, তখন তিনি গ্রামীণ টেলিকমিউনিকেশন্সের চেয়ারম্যান ছিলেন। প্রস্তাবিত ট্রেড ইউনিয়ন ঘিরে কর্মীর চাকরিচ্যুতির অভিযোগ তুলে ২০১৯ সালে এসব মামলা করা হয়।

মারধর করে ‘গান বাংলা দখল’: তাপস-মুন্নীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
কৌশিক হোসেন তাপস ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা মুন্নী। ফাইল ছবিঅস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মারধর করে গানভিত্তিক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘গান বাংলার’ মালিকানা দখলের অভিযোগে ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৌশিক হোসেন তাপস ও স্ত্রী চেয়ারম্যান ফারজানা মুন্নীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ছানাউল্ল্যাহর আদালতে গত ২৫ নভেম্বর সৈয়দ শামস উদ্দিন আহমেদ মামলার আবেদন করেন। পরে আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।আজ শুক্রবার আদালত সূত্রে মামলার বিষয় জানা গেছে।মামলায় অন্য আসামিরা হলেন—রবি শংকর মৈত্রী, এম. আমানুল্লাহ খান (চঞ্চল খান), সৈয়দ নাবিল আশরাফ। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে।এ মামলায় তাপসকে গত ৪ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার সাব-ইন্সপেক্টর হারুনুর রশীদ গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেছেন। আগামী ৯ ডিসেম্বর তাঁর উপস্থিতিতে গ্রেপ্তারের বিষয়ে শুনানি হবে।সৈয়দ সামস উদ্দিন আহমেদ মামলায় অভিযোগ করেন, ২০১১ সালের ২৫ জুলাই মো. বদরুদ্দোজা সাগর, বখতিয়ার শিকদার ও রবি শংকর মৈত্রী মিলে প্রাইভেট স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল প্রতিষ্ঠার জন্য বার্ডস আই ম্যাস মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন পিএলসি নামের একটি প্রতিষ্ঠান রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের কার্যালয় থেকে নিবন্ধন নেন। কোম্পানি গঠনের সময় মামলার বাদী ৭ হাজার প্রাথমিক শেয়ার এবং বখতিয়ার শিখদার, রবি শংকর মৈত্রী ও বদরুদ্দোজা সাগর প্রত্যেকে ১ হাজার করে সর্বমোট ১০ হাজার শেয়ার নেন, যার প্রাথমিক মূলধন ১ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।২০১১ সালের ২২ ডিসেম্বর সৈয়দ সামস বার্ডস আই মাস মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন পিএলসির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং গান বাংলা স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল (প্রস্তাবিত) ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে থাকার সময় আমানুল্লাহ খানের বাসায় যান। আসামি রবি শংকর ও এম আমানুল্লাহ খানের অনুরোধে তিনি ওই বাসায় গিয়েছিলেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।এতে আরও বলা হয়, আনুমানিক রাত ৮টার দিকে আসামি কৌশিক হোসেন তাপস, ফারজানা মুন্নী, সৈয়দ নাবিল আশরাফসহ অজ্ঞাত ৪ থেকে ৫ জন কিছু কাগজ নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন। কোশিক হোসেন তাপস ও সৈয়দ নাবিল আশরাফের হাতে থাকা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ফিল্মি কায়দায় সকল আসামির সহযোগিতায় সৈয়দ শামস উদ্দিন আহমেদ ও মো. বদরুদ্দোজা সাগরকে কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে বলে।অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, আটকাবস্থায় আসামিদের কথাবার্তায় বাদী বুঝতে পারেন যে, আসামিরা বার্ডস আই ম্যাস মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন পিএলসি নামীয় কোম্পানিতে বাদী ও বদরুদ্দোজা সাগরের ৮ হাজার শেয়ারের মালিকানা আত্মসাৎ করবে। এক পর্যায়ে বাদী ও মো. বদরুদ্দোজা সাগর প্রাণনাশের ভয়ে ভীত হয়ে প্রাণে বাঁচতে কাগজে স্বাক্ষর করেন। স্বাক্ষর নেওয়ার পর আসামিরা বিভিন্ন কাগজপত্রে স্বাক্ষর গ্রহণের বিষয়ে কারো কাছে কোনো তথ্য প্রকাশ করলে তৎকালীন প্রশাসনকে অবৈধভাবে প্রভাবিত করে মামলায় জড়াবে এবং প্রয়োজনে জীবন শেষ করে দিবে বলে হুমকি দেয়।উল্লেখ থাকে, গত ৪ নভেম্বর রাজধানীর উত্তরা থেকে তাপসকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ইশতিয়াক মাহমুদ নামে এক ব্যবসায়ীকে হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।

আইনজীবী আলিফ হত্যা: ২ আসামির রিমান্ড মঞ্জুর
চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার প্রধান আসামি চন্দন দাসের সাত দিন এবং রিপন দাসের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ শুক্রবার বিকেলে স্পেশাল আদালতের বিচারক কাজী শরিফুল ইসলাম শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আলিফ হত্যা মামলার দুই আসামিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে আদালতে হাজির করা হয়। মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্য।গত ২৬ নভেম্বর বিকেলে চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সঙ্গে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হন। আদালত ভবনের মূল ফটকের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এই দিন সংঘর্ষে পুলিশের ১০ সদস্যসহ আহত হন অন্তত ৩৭ জন। এ ঘটনায় আলিফের বাবা জামাল উদ্দিন কোতোয়ালি থানায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ভৈরব থেকে চন্দন দাসকে ও সন্ধ্যায় আনোয়ারা থেকে রিপন দাসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে নগরীর কোতোয়ালি থানা হেফাজতে রাখা হয় তাঁদের।

টিকটকার প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের সত্যতা মিলেছে
ধর্ষণের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে টিকটকার প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ। ফলে, মামলায় প্রিন্স মামুনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটনের (ডিএমপি) ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশ। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ক্যান্টনমেন্ট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মুহাম্মদ শাহজাহান তদন্ত শেষে গেল ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ সংক্রান্ত অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন। পরে সেটি বিচারের জন্য ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৯ এ পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) আদালত সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এর আগে গত ৯ জুন ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থানায় প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন লায়লা। মামলার পর দিন তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে শুনানি শেষে জামিন ও রিমান্ড উভয় নামঞ্জুর করে এ টিকটকারকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এরপর গত ১ জুলাই জামিনে মুক্তি পান তিনি। বর্তমানে জামিনেই আছেন। তদন্তে যা পাওয়া গেছে: আসামি প্রিন্স মামুন একজন টিকটকার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যমে একজন টিকটকার হিসেবে পরিচিত তিনি। অপর দিকে, বাদি লায়লা ফেসবুকে বেশ পরিচিত মুখ। তিনি বিবাহিতা। স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না থাকার জন্য ফ্ল্যাটে সন্তানদের নিয়ে একাই থাকেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মামুনের সঙ্গে পরিচয় হয় লায়লার। পরে এক পর্যায়ে লায়লার সঙ্গে মিডিয়াতে কাজ করার আগ্রহ পোষণ করেন টিকটকার মামুন। এরপর ২০২২ সালের শুরুর দিকে একসঙ্গে পথচলা শুরু করেন মামুন ও লায়লা। পরবর্বী দুইজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। যা পাকাপোক্ত করার জন্য দুইজনই একসঙ্গে লায়লার বাসায় থাকা শুরু করেন। মামুনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের সত্যতা মিলেছে। সম্পর্ক ঘনিভূত হওয়ার কারণে আইডি, এনআইডি, পাসপোর্টসহ অন্যান্য কাগজপত্রে লায়লার ঠিকানা ব্যবহার করতে থাকেন মামুন। এরপর বিয়ে করবে- এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একই ফ্ল্যাটে বসবাস করতে থাকেন। আর একাধিক বার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে ধর্ষণ করেন। যা কিনা প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা মিলেছে। এর আগে মামলার অভিযোগে লায়লা উল্লেখ করেন, মামলার বিবাদী আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে প্রিন্স মামুনের সঙ্গে আমার গত তিন বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরিচয়ের এক পর্যায়ে মামুন আমাকে বিয়ে করবে মর্মে প্রলোভন দেখিয়ে আমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে। সে আমাকে জানায়, তার ঢাকায় থাকার মত নিজস্ব কোন বাসা নেই। যেহেতু প্রেমের সম্পর্ক সৃষ্টি হয় এবং মামুন আমাকে বিয়ে করবে বলে জানায়, তাই তার কথা সরল মনে বিশ্বাস করে তাকে আমার বাসায় থাকার অনুমতি দেই। ২০২২ সালের ৭ জানুয়ারি মামুন তার মাকে সঙ্গে নিয়ে আমার বাসায় এসে বসবাস করতে থাকে। ওই দিন থেকে সে আমার বাসায় আমার সঙ্গে একই রুমে থাকতে শুরু করে। আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে একাধিক বার আমার সঙ্গে শারীরিক সর্ম্পক স্থাপন করে। মামুন আমার বাসায় থাকাকালে তার বাবা-মা মাঝেমধ্যেই সেখানে এসে অবস্থান করত। আমি মামুনকে একাধিক বার বিয়ের বিষয় বললে সে বিভিন্ন অজুহাতে সময় ক্ষেপণ করতে থাকে। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৪ মার্চ মামুন আমার শয়ন কক্ষে আগের মত আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমাকে ধর্ষণ করে। পরবর্তী আমি তাকে বিয়ের বিষয়ে বললে সে আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। আমাকে বিভিন্ন অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে।

গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের কারাদণ্ডের রায় বাতিল
অর্থপাচারের অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলায় গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে বিচারিক আদালতের দেওয়া সাত বছরের কারাদণ্ডের রায় বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাকে খালাস দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে এদিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ওমর সাদাত ও সাব্বির হামজা। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান। এর আগে ২০১১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করে দুদক। মামলার অভিযোগে বলা হয়, বিটিএল ও গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালের চেয়ারম্যান এম শাহজাদ আলী নেদারল্যান্ডসের একটি ঠিকাদারি কোম্পানির বাংলাদেশের এজেন্ট ছিলেন। ওই কোম্পানি রেলওয়ের সিগন্যালিং আধুনিকীকরণের টেন্ডার পায়। কিন্তু ২০০৩ সালে কার্যাদেশ চূড়ান্ত করার সময় গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ওই কাজের বিপরীতে এম শাহজাদ আলীর কাছে অবৈধ কমিশন দাবি করেন। নতুবা কার্যাদেশ বাতিল করার হুমকি দেন। এরপর শাহজাদ আলী ২০০৪ সালে ৬ কোটি ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭৬২ টাকা মামুনের লন্ডনের ন্যাটওয়েস্ট ব্যাংকের হিসাবে জমা করেন। পরে এ মামলায় ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন। এছাড়া ১২ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ে লন্ডনের ন্যাটওয়েস্ট ব্যাংকের হিসাবে থাকা ৪৪ হাজার ৬১০ দশমিক শূন্য ৮ ব্রিটিশ স্টালিং (বাংলাদেশি টাকায় ৬ কোটি ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭৬২ টাকা) বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন তিনি। সেই আপিলের শুনানি শেষে আজ বৃহস্পতিবার রায় দিলেন হাইকোর্ট। প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালের ৩০ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হন গিয়াস উদ্দিন আল মামুন। চলতি বছরের ৬ আগস্ট তিনি কারামুক্ত হন।ওই ঘটনায় পরের বছরের ২৬ এপ্রিল দুদকের উপ-পরিচালক মো. ইব্রাহিম আদালতে মামুনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। একই বছরের ৩১ অক্টোবর আদালত মামুনের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে চার্জ গঠন করেন। বিচারকালে ১০ সাক্ষীর মধ্যে ৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত।