পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল প্রশ্নে চূড়ান্ত রায় ১৭ ডিসেম্বর

তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না, এই মর্মে জারি করা রুলের রায়ের জন্য ১৭ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন। গতকাল বুধবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ-সংক্রান্ত শুনানি শেষ হয়। রায় কবে দেওয়া হবে আজ সেই তারিখ নির্ধারণ করা হয়।গতকাল আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফিদা এম কামাল ও শাহরিয়ার কবির।আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনী আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়। এ আইন চ্যালেঞ্জ করে গত ১৮ আগস্ট সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্টজন রিট করেন।প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত ১৯ আগস্ট রুল দেন। রুলে পঞ্চদশ সংশোধনী কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।রুলে বিএনপি, জামায়াত, গণফোরামসহ বেশ কয়েকটি সংস্থা ও ব্যক্তি পক্ষভুক্ত হন। শুনানিতে আইনজীবী বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীতে একই সঙ্গে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ও ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়টি রাখা হয়েছে; যা পরস্পরবিরোধী ও সাংঘর্ষিক। এই সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে।২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাস হয় এবং রাষ্ট্রপতি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তাতে অনুমোদন দেন। ওই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ট্রাইব্যুনালে আবেদন

গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছে প্রসিকিউশন। বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে প্রসিকিউশনের পক্ষে সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদনটি করা হয়। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের বেঞ্চে আবেদনের ওপর শুনানি হবে। বিষয়টি ঢাকা মেইলকে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আল নোমান। তিনি বলেন, আবেদনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রেস কনফারেন্স করা হবে। ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তখন থেকে তিনি ভারতেই আছেন। সেখান থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করে যাচ্ছেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে সেই বক্তব্য আবার নিজেই ছড়িয়ে দিতে বলছেন। সেগুলো আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরালও হয়েছে। পলাতক থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিদ্বেষমূলক বক্তব্য গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আবেদন করে প্রসিকিউশন। এদিকে জুলাই-আগস্টে গণহত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্ত এক মাসের মধ্যে শেষ করতে গত ১৮ নভেম্বর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে এই প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।

আমু ও কামরুলকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পাঠানো হলো কারাগারে

জুলাই-আগস্টে সংঘটিত নজিরবিহীন গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক দুই মন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও কামরুল ইসলামকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আগামী ১৮ ডিসেম্বর তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করার কথাও বলেছেন আদালত। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট গাজী এম এইচ তামিম। তিনি বলেন, গত ১৭ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে সাবেক এই দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পরে তাদের আদালতে তোলা হয় ও নিউমার্কেট এলাকার একটি মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে ২ ডিসেম্বর তাদের ট্রাইব্যুনালে তোলার জন্য আমরা আবেদন করি। আদালত তা মঞ্জুর করে আজকের দিন ধার্য করেন। তিনি আরো বলেন, তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের মাধ্যমে যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে তা আমরা ট্রাইব্যুনালের কাছে উপস্থাপন করেছি। আমাদের আবেদন মঞ্জুর করে ট্রাইব্যুনালের মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং আগামী ১৮ ডিসেম্বর তাদের অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে ট্রাইব্যুনালে হাজির করানো হবে। পলাতক থাকা আসামিদের বিষয়ে এম এইচ তামিম বলেন, ট্রাইব্যুনাল থেকে এরইমধ্যে ৭০ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলেও সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। অল্প কয়েকজন ব্যক্তিকেই গ্রেপ্তার করা গেছে। বাকিরা পলাতক থাকার মাধ্যমে মামলার তদন্তে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছেন। সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ থাকবে, দ্রুত বাকি ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার নিশ্চিত করা।

হারিছ চৌধুরীর ডিএনএ মিলেছে , রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের নির্দেশ

বিএনপি নেতা আবুল হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নির্ধারণে কবর থেকে তুলে করা ডিএনএ টেস্ট তার পরিবারের সঙ্গে মিলেছে। এখন পরিবারে পছন্দমতো কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে হারিছ চৌধুরীর মরদেহ দাফন করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের পর বুধবার বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মাহদীন চৌধুরী।

সেই মাহমুদুর রহমানই হারিছ চৌধুরী

বিএনপি নেতা আবুল হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নির্ধারণে কবর থেকে তুলে করা ডিএনএ টেস্ট তার পরিবারের সঙ্গে মিলেছে। এখন পরিবারের পছন্দমতো কবরস্থানে হারিছ চৌধুরীর মরদেহ দাফন করা যাবে। এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের পর বুধবার (৪ ডিসেম্বের) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মাহদীন চৌধুরী। এর আগে ৫ সেপ্টেম্বর তার মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিনের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ আবুল হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নির্ধারণে কবর থেকে তুলে করা ডিএনএ টেস্ট করার নির্দেশ দেন। ২০২১ সালে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ওই সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ও বিএনপির সাবেক নেতা আবুল হারিছ চৌধুরী ‘মাহমুদুর রহমান’ পরিচয়ে ঢাকার সাভারের জালালাবাদ এলাকায় একটি মাদ্রাসার কবরস্থানে দাফন করা হয়। হারিছ চৌধুরীর মেয়ে জানান, সদ্য বিদায়ী স্বৈরাচারী সরকার ওদের গোয়েন্দা বিভাগ একটা নাটক রচনা করে বাবার মৃত্যুকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। মিডিয়া একটার পর একটা রিপোর্ট করেছে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। এটা নিয়ে যেন কখনো প্রশ্ন না উঠে সেটা ডিটারমিন করার জন্য এ রিট করেছি। আমার বাবার মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ থাকবে সন্তান হিসেবে এটা খুব মর্মান্তিক, কষ্টদায়ক। এখনো মানুষ জিজ্ঞেস করে সত্যিই কি মারা গেছেন! আমাদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। তাই এটা শেষ করতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। আদালত নিরাশ করেননি। সাভারের জামিয়া খাতামুন নাবিয়্যিন মাদ্রাসার কবরস্থানে মাহমুদুর রহমান নামে কবর দেওয়া হয় আবুল হারিছ চৌধুরীকে। তার পরিচয় নির্ধারণে কবর থেকে তুলে ডিএনএ টেস্ট করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসার পর আবুল হারিছ চৌধুরীর নামে ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করা হবে না ও তার নামে থাকা ইন্টারপোল রেড নোটিশ কেন প্রত্যাহার করা হবে না, তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী নিজ জেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধার যথাযথ সম্মান দিয়ে কেন কবরস্থ করা হবে না এই মর্মে রুল জারি করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, রেজিস্ট্রার জেনারেল( জন্ম ও মৃত্যু), সিআইডির পরিচালক, ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার ও সাভার মডেল থানার ওসিকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর হারিছ চৌধুরী সস্ত্রীক তার গ্রামের বাড়ি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দর্পনগরে যান। রাত ১২টার পর তার ব্যক্তিগত সহকারী আতিক মোবাইল ফোনে জানান, ঢাকায় বিএনপি নেতাদের বাসভবনে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে। কয়েক ঘণ্টা পর যৌথ বাহিনী হারিছের বাড়িতে হানা দেয়। কিন্তু তার আগেই তিনি সটকে পড়েছিলেন। কিছুদিন সিলেটে এখানে-ওখানে লুকিয়ে থাকার পর ওই বছরের ২৯ জানুয়ারি জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে রাতের আঁধারে ভারতে চলে যান। ভারতের আসামের করিমগঞ্জ জেলার বদরপুরে তার নানাবাড়ি। সেখানেই তিনি ওঠেন। সেখান থেকেই বিদেশে যাতায়াত করতেন।

গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে ট্রাইব্যুনালে আনা হলো সাবেক দুই মন্ত্রীকে

জুলাই-আগস্টে সংঘটিত নজিরবিহীন গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক দুই মন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও কামরুল ইসলামকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ০৩/২০২৪ নম্বর মামলার পরোয়ানায় কামরুল ইসলাম এবং আমির হোসেন আমুকে বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ২০ মিনিটে প্রিজন ভ্যানে করে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। এরপর তাদের রাখা হয় ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায়। সেখান থেকে তাদেরকে তোলা হবে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায়। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন কক্ষে তাদের শুনানি করবেন প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ ও গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম। গত ৬ নভেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে আমির হোসেন আমুকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম উত্তরায় গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেপ্তার হন গত ১৮ নভেম্বর। গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের কয়েকশ অভিযোগ এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন অফিসে জমা পড়েছে। গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। এরইমধ্যে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ৯ মন্ত্রী, দুই উপদেষ্টা, অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতি ও সাবেক সচিবকে কারাগারে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

হত্যা মামলায় ৩ দিনের রিমান্ডে সাবেক কাউন্সিলর জামাল ও মহিলা লীগ নেতা রোকেয়া

পল্টন থানার যুবদল নেতা শামীম হত্যা মামলায় মিরপুরের সাবেক কাউন্সিলর জামাল মোস্তফা ও মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রোকেয়া জামানের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার (৪ নভেম্বর) তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।মোহাম্মদপুর থানার হত্যা মামলায় আনিসুল হককে নতুন করে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে শাহবাগ থানার একটি মামলায় আনিসুল হক, হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেননকে নতুন করে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।এ ছাড়াও, পল্টন থানার একটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানকে নতুন করে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।আসামি পক্ষের আইনজীবী মোর্শেদ হোসেন শাহীন জানান, বার বার একই আসামিদের বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখানো মানবাধিকার লঙ্ঘন। জামিন আসামির অধিকার। জামিন না দিয়ে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, আসামিরা সবাই ফ্যাসিস্ট হাসিনার সহযোগী। তারা ছাত্র আন্দোলন দমাতে মাঠে ছিলো। তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হস্তক্ষেপে এতো মানুষ প্রাণ হারান। তাই তাদের জামিনের বিরোধিতা করা হয়েছে। আসামিদের হয়রানি করা লক্ষ্য নয়। হত্যার বিচার করাই বর্তমান সরকারের লক্ষ্য।

সারজিস-হাসনাতের গাড়িতে ট্রাকের ধাক্কা: চালক-সহকারী দুই দিনের রিমান্ড

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলমের গাড়িবহরে ধাক্কার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেফতার ট্রাকচালক ও তার সহকারীর দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হকের আদালত এই আদেশ দেন। শুনানিতে অংশ নেওয়া আইনজীবী মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, গত ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রামে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের কবর জিয়ারত শেষে ফেরার পথে হাসনাত-সারজিসের গাড়িবহরে ট্রাকচাপার ঘটনা ঘটে। এই অভিযোগে নিরাপদ সড়ক আইনে করা মামলায় ট্রাকচালক মুজিবুর রহমান ও সহকারী রিফাত মিয়াকে রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। বাদী পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শাহজাহান এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, পুলিশের পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত দুই দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন। দুর্ঘটনায় হাসনাত-সারজিস অক্ষত থাকলেও তাদের গাড়িবহরে থাকা একটি গাড়ির সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনার পরদিন ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িটির চালক আহমেদ নেওয়াজ বাদী হয়ে লোহাগাড়া থানায় মামলা করেন।

১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলার তালিকা পাঠাতে চিঠি

রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলার তালিকা পাঠানোর জন্য দেশের সব পাবলিক প্রসিকিউটরকে চিঠি দিয়েছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। আগামী ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে। উপ-সলিসিটর সানা মো. মাহরুফ হোসাইনের সই করা চিঠিতে এই তালিকা চাওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের, বিশেষ করে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এবং পরে রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা করা হয়, যা অনেক ক্ষেত্রে ‘গায়েবি মামলা’ নামে পরিচিত। এসব মামলা সংক্রান্তে সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য না থাকায় আইনানুগভাবে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই নির্ধারিত ছকে এসব মামলার তথ্য জরুরি। মামলার তালিকা তৈরিতে বিশেষভাবে যত্নবান ও দায়িত্বশীল হওয়াসহ সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। মামলার তালিকা পাওয়ার পর মন্ত্রণালয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করবে বলে চিঠিতে বলা হয়েছে। যেসব তথ্য আবশ্যক ১. জেলার নামসহ আদালতের নাম, মামলার নম্বর, এজাহারকারী বা নালিশকারীর নাম ও পরিচয়, মোট আসামির সংখ্যা এবং এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা এজাহারে উল্লিখিত ঘটনার তারিখ, আসামির সংখ্যা, মামলাটি কোন আইনের কোন ধারায়, মামলাটি কোন পর্যায়ে (তদন্তাধীন, নাকি বিচারাধীন)। ২. মামলার তালিকা প্রণয়নে বিশেষভাবে যত্নবান ও দায়িত্বশীল হওয়াসহ সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। উল্লেখ্য, প্রাপ্ত মামলার তালিকা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই বাছাই করা হবে। ৩. উল্লিখিত ছক অনুসারে বর্ণিত সময়ে আপনার জেলায় অথবা মহানগরে দায়েরকৃত রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলার তালিকা আগামী ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ মধ্যে সলিসিটর, সলিসিটর অনুবিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ, ঢাকা বরাবর (ই-মেইল: solicitor@lawjusticediv.gov.bd ) প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

ডা. গোলাম সাব্বির আহমেদের জামিন শুনানি পিছিয়েছে

মানবতাবিরোধী অপরাধে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ডা. গোলাম ছাব্বির আহমেদের জামিন শুনানি পিছিয়ে ১২ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে, চেয়ারম্যান গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম দেশের বাইরে থাকায় শুনানি পিছানো হয়। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ এই জামিন শুনানির জন্য ১২ ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেছে। শুনানিতে আসামির পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান, এবং প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন গাজী এম এইচ তানিম। এর আগে ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর, মানবতাবিরোধী অপরাধে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ডা. গোলাম ছাব্বির আহমেদ ও আব্দুস সাত্তারের জামিন আবেদন নাকচ করে দেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এর নেতৃত্বে ৬ বিচারপতির একটি বেঞ্চ ওই রায় দেন। ২০২৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারিতে, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ডা. গোলাম ছাব্বির আহমেদসহ পাঁচ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্যান্য কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন: মো. হরমুজ আলী, ফখরুজ্জামান, আব্দুস সাত্তার, এবং খন্দকার গোলাম রব্বানী।

দেশে ভারতীয় টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ চেয়ে হাইকোর্টে রিট

বাংলাদেশে ভারতীয় সব টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধের দাবিতে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়েছে। সোমবার (২ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী এই রিটটি দায়ের করেন। হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে চলতি সপ্তাহে এই রিটের ওপর শুনানি হতে পারে। রিটে বলা হয়েছে, ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন ২০০৬ এর ২৯ ধারা অনুসারে ভারতীয় সব টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার নিষিদ্ধ করার নির্দেশনা দেওয়া হোক। একই সঙ্গে, বাংলাদেশে ভারতীয় চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধের বিষয়ে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আবেদন করা হয়েছে। এ ঘটনায় তথ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) সহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়েছে। রিটের আইনজীবী বলেন, ভারতীয় চ্যানেলগুলোর মধ্যে যেমন স্টার জলসা, স্টার প্লাস, জি বাংলা, রিপাবলিক বাংলা এবং অন্যান্য চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে। তার মতে—ভারতীয় টিভি চ্যানেলে বিভিন্ন উসকানিমূলক সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে, যা বাংলাদেশে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া, এসব চ্যানেলে বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিরোধী অনুষ্ঠান প্রচারের কারণে যুব সমাজের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। রিটকারীর অভিযোগ, এসব চ্যানেল কোনো আইন মানছে না, যার ফলে তাদের সম্প্রচার বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে।

গুমের অভিযোগ: ট্রাইব্যুনালে র‌্যাবের সাবেক ২ কর্মকর্তা

গুমের অভিযোগে র‌্যাব-২ এর সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) মহিউদ্দিন ফারুকী ও বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। সোমবার (২ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাদের হাজির করার তথ্য জানিয়েছেন প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আল নোমান। এর আগে গত ২৮ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাদের হাজির করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেদিন শুনানি শেষে প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম বলেন, সাবেক দুজন র‌্যাব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে তিনটি অ্যাপ্লিকেশন করেছিলাম। দুজনই র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) কর্মকর্তা ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য গুমের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্তের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। এর ভিত্তিতেই ট্রাইব্যুনালে দুটি আবেদন করা হয়। এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর শনির আখড়ায় জোবায়ের ওমর খানের মৃত্যুর মামলায় এ দুই কর্মকর্তা গ্রেফতার আছেন। গত ১৩ নভেম্বর রাতে বরিশাল মহানগর এলাকা থেকে আলেপ উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয় এবং একই দিন ভোরে রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী (বেতবুনিয়া) এলাকা থেকে মহিউদ্দিন ফারুকীকে গ্রেফতার করা হয়।

‘জয় বাংলা’ জাতীয় স্লোগান : রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন

‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। সোমবার (২ ডিসেম্বর) অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আগামী রোববার (৮ ডিসেম্বর) আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসবে। ২০২০ সালের ১০ মার্চ জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে রায় দেন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। বাংলায় দেওয়া রায়ের আদেশের অংশে আদালত বলেন, ‘আমরা ঘোষণা করছি যে জয় বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে।’ ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা চেয়ে ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. বশির আহমেদের করা রিটের শুনানি শেষে এ রায় দেন হাইকোর্ট। পরে ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেয় শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভা।

নতুন মামলায় গ্রেফতার ইনু-মেনন-দীপু-পলক

রাজধানীর রামপুরা, হাতিরঝিল ও শাহবাগ থানায় করা নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক চার মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে। গ্রেফতার দেখানোর পর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সোমবার (২ ডিসেম্বর) সকালে এসব মামলায় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। নতুন মামলা গ্রেফতার দেখানো চারজন হলেন- সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং সাবেক সমাজ কল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। হাতিরঝিল থানার খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলার মামলায় হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেননকে গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন আদালত। শাহবাগ থানার নতুন হত্যা মামলায় দীপু মনি ও জুনায়েদ পলককে এবং রামপুরা থানার নতুন হত্যা মামলায় হাসানুল হক ইনুকে গ্রেফতার দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানান, জুলাই-আগস্টের গণহত্যায় তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মদদ রয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন মামলায় রিমান্ডে ছিলেন তারা।

১৫ আগস্ট সাধারণ ছুটির রায় আপিল বিভাগে স্থগিত

‘জাতীয় শোক দিবস’ উপলক্ষে ১৫ আগস্ট সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। সোমবার (২ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে করা আবেদনের শুনানি করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আগে গত ১৩ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ১৫ আগস্টের ছুটি বাতিল করা হয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর ওইদিন এ বিষয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে ব্যাপক ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঘোষিত ১৫ আগস্টের সাধারণ ছুটি বাতিলের বিষয়টি উপদেষ্টামণ্ডলীর বৈঠকে অনুমোদিত হয়েছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হয়েছিল। কিন্তু বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় এসে ২০০২ সালে জাতীয় শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত বাতিল করে। এর ছয় বছর পর হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পুনর্বহাল করা হয়।

উচ্চ আদালতে জামিন পেয়েও মুক্তি পেলেন না বাবুল আক্তার

উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েও এখনও কারাগার থেকে মুক্তি পাননি স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু খুনে বাদী থেকে আসামি বনে যাওয়া আলোচিত সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার। রোববার (১ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল তার।জামিন-সংক্রান্ত কাগজপত্র বিকেল পৌনে ৫টার দিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষের হাতে আসে। কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, জামিননামা পৌঁছানোর আগেই কারাগারের বন্দিদের তালাবদ্ধ করা হয়ে যায়। তাই, জামিননামাটি এখনও যাচাইবাছাই চলছে। নথি যাচাই-বাছাই শেষে তিনি মুক্তি পাবেন।ফলে আজ সোমবার তিনি মুক্তি পাবেন বলে কারা কর্তৃপক্ষ তার আইনজীবীকে জানিয়েছেন।এদিকে, আসামির শ্বশুর ও মামলার বাদী মোশাররফ হোসেন এই জামিননামা স্থগিত চেয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। স্ত্রী হত্যা মামলায় বুধবার অন্তর্বর্তী জামিন পান বাবুল।উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন বাবুলের স্ত্রী মিতুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। পিবিআইয়ের তদন্ত ও শ্বশুরের করা মামলায় বাবুল’সহ ৮ জনকে আসামি করা হয়।

সব বিচারপতিকে নিয়ে বিশেষ সভা ডেকেছেন প্রধান বিচারপতি

সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতির অংশগ্রহণে বিশেষ সভা ডেকেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। আগামী মঙ্গলবার (৩ ডিসম্বের) বিকাল চারটায় সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের জাজেস লাউঞ্জে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। রোববার (১ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে একটি স্মারক জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। ‘বিশেষ সভা অনুষ্ঠান’ শীর্ষক স্মারকে বলা হয়, ‘আগামী ৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকাল চারটায় সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের অংশগ্রহণে সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত জাজেস লাউঞ্জে বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হবে।’

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা: তারেক রহমানসহ সব আসামি খালাস

বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়্যারম্যান তারেক রহমাহসহ সকল আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি এই মামলার অভিযোগপত্রও অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। রোববার (১ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার পর বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, মামলার চার্জশিটে গ্রেনেড সরবরাহকারীর নাম উল্লেখ ছিল না। এছাড়া ঘটনাস্থলে কারা গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছিল তাও সাক্ষীদের বক্তব্যে উঠে আসেনি। এ সময় আসামিপক্ষের যুক্তিও রায়ে উল্লেখ করেন বিচারপতিরা। আদালত বলেন, মামলার চার্জশিট বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে গ্রহণ করানো হয়নি। এটি আইনের লংঘন। এর আগে, এই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় নিম্ন আদালত। এছাড়া, তারেক রহমানসহ ১৯ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। প্রসঙ্গত, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর গত ২৩ অক্টোবর চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির দফতর থেকে হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পরে ৩১ অক্টোবর মামলার পেপারবুক পাঠের মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ শুনানি শুরু করে। গত ২১ নভেম্বর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি গ্রহণ শেষ হয়।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা: হাইকোর্টে রায় ঘোষণা শুরু

বহুল আলোচিত একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলের রায় পড়া শুরু হয়েছে। রোববার (১ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রায় পড়া শুরু হয়। এর আগে চার দিন আপিলের ওপর শুনানি হয়। শুনানি শেষে রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য ছিল। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে ফাঁসি এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা কাজী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। পরে ওই বছরের ২৭ নভেম্বর মামলার বিচারিক আদালতের রায় প্রয়োজনীয় নথিসহ হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় এসে পৌঁছে। নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৯ আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ, জঙ্গি নেতা মাওলানা তাজউদ্দীন, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মাওলানা শেখ ফরিদ, মাওলানা আবু সাইদ, মুফতি মঈনউদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, হাফেজ আবু তাহের, মো. ইউসুফ ভাট ওরফে মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক, মফিজুর রহমান ওরফে মহিবুল্লাহ, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হোসাইন আহমেদ তামিম, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ও মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১৯ আসামি শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ ওরফের আবু ওমর, আবু হোমাইরা ওরফে পীরসাহেব, মাওলানা সাব্বির আহমদ ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, আরিফ হাসান ওরফে সুজন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, আবু বকর ওরফে সেলিম হাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফ, মহিবুল মোত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন (পলাতক), আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন (পলাতক), মো. খলিল (পলাতক), জাহাঙ্গীর আলম বদর ওরফে ওস্তাদ জাহাঙ্গীর (পলাতক), মো. ইকবাল (পলাতক), লিটন ওরফে মাওলানা লিটন (পলাতক), তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়া (পলাতক), হারিছ চৌধুরী (পলাতক), কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ (পলাতক), মুফতি শফিকুর রহমান (পলাতক), মুফতি আবদুল হাই (পলাতক) এবং রাতুল আহম্মেদ বাবু ওরফে বাবু ওরফে রাতুল বাবু (পলাতক)। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া দুই মামলার রায়সহ প্রায় ৩৭ হাজার ৩৮৫ পাতার নথি ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এসে পৌঁছায়। পরে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানির জন্য মামলার পেপারবুক তৈরির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। সেই আদেশের ধারাবাহিকতায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সাড়ে ১০ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়। আসামিদের মধ্যে ২২ জন খালাস চেয়ে আপিল করেছেন। অপরদিকে ১২ জন আসামির জেল আপিল দায়ের হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ওই হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা-বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কয়েকশ নেতা-কর্মী। তাদের অনেকে আজও শরীরে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার নিয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করছেন। অনেকে চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায়ের রিভিউ শুনানি ১৯ জানুয়ারি

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য করা তিনটি আবেদন একসঙ্গে শুনতে ১৯ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। রোববার (১ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৬ সদস্যের আপিল বিভাগ শুনানির জন্য নতুন দিন ধার্য করেন। বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষ থেকে সময় আবেদনের করা হলে সর্বোচ্চ আদালতের এই সিদ্ধান্ত দেন। এর আগে সকালে বিএনপির পক্ষে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন এক মাস সময় আবেদন করেন। এ সময় জামায়াতও এ বিষয়ে আদালতে সময় আবেদন করেন। আপিল বিভাগ বলেন, এই মামলার সঙ্গে পঞ্চদশ সংশোধনীর মামলার কোনো সম্পর্ক আছে কি না। আপিল বিভাগ আরও বলেন, ১৯ জানুয়ারি এর শুনানি হবে। ওদিন সময় চাইলেও আর দেওয়া হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করে আনা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে বাতিল ঘোষণা করে রায় দেয় আপিল বিভাগের সাত বিচারকের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের করা আপিল মঞ্জুর করে ওই রায় দেওয়া হয়। সেই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য গত অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে একটি আবেদন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর আগে রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন। অন্য চার ব্যক্তি হলেন তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান। এ দুটি রিভিউ আবেদন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য তোলার মধ্যেই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আরেকটি আবেদন করেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন একটি সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচন হলেও তখন বিষয়টি সংবিধানে যুক্ত করা হয়নি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধীদলগুলোর আন্দোলনের চাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান এনে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী সংসদে পাস করে বিএনপি। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। পরের বিএনপি সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট সেই রিট খারিজ হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধই থাকে। হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে আপিল করেন রিটকারীরা। ২০০৬ সালে রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে জরুরি অবস্থা জারির পর গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর ক্ষমতায় থাকার পর এ পদ্ধতির দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পরে আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে ২০১০ সালের ১ মার্চ আপিল বিভাগে ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে আপিল আবেদনকারী এবং রাষ্ট্রপক্ষ ছাড়াও অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে শীর্ষস্থানীয় ৮ জন আইনজীবী বক্তব্য দেন। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন। এমনকি তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও এর পক্ষে মত দেন। ওই আপিল মঞ্জুর করে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেয়। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার আগেই ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয় এবং ৩ জুলাই তাতে অনুমোদন দেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি।

গ্রেনেড হামলা মামলার আপিলের রায়ের অপেক্ষা

বহুল আলোচিত একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলের রায় ঘোষণা করা হবে আজ রোববার (১ ডিসেম্বর)। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করবেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী শিশির মনির গতকাল শনিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের আইনজীবী শিশির মনির ঢাকা মেইলকে বলেন, রোববার একুশে আগস্ট গ্রেনেড মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। আশা করছি এ মামলায় বাবর সাহেব খালাস পাবেন। গত ২৩ অক্টোবর গ্রেনেড হামলা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চে পাঠানো হয়। ৩১ অক্টোবর এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে ২১ নভেম্বর বেঞ্চ রায় ঘোষণার জন্য মামলাটি অপেক্ষমাণ রাখেন। ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর আলোচিত এ মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় ১৯ জনকে। এই রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আপিল করেন বেশ কয়েকজন আসামি, যার শুনানি শেষ হয় বৃহস্পতিবার। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কোনো সংশ্লিষ্টতা মেলেনি। ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়। ভয়াবহ এ হামলায় ২৪ জন নিহত হন। আহত হন অন্তত চার শতাধিক।

বিচার বিভাগ আমাদের গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ

বিচার বিভাগকে বাংলাদেশের ‘গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ’ হিসেবে তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, ‘বেঞ্চ ও বারের পারস্পরিক সুষম সহযোগিতার ওপর এর শক্তি নির্ভর করে।’ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে ২০২৪ সালে সদস্যভুক্ত হওয়া আইনজীবীদের উদ্দেশে বক্তব্য তিনি এ কথা বলেন। শনিবার (৩০ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিচার বিভাগ আমাদের গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ এবং এর শক্তি নির্ভর করে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ - বেঞ্চ ও বারের সুষম সহযোগিতার ওপর।’ ‘বার (আইনজীবী সমিতি) শুধু বিচার প্রক্রিয়ার একটি অংশ নয়, বরং ন্যায়বিচারের পবিত্রতা ও কার্যকারিতা রক্ষারও সমান অংশীদার।’ আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য হিসেবে আপনার ভূমিকা শুধু আইনজীবী হিসেবে সীমাবদ্ধ নয়; আপনি আইন পেশার অভিভাবক ও বিচার বিভাগের প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী।’ ‘জাতি ও ব্যক্তিগতভাবে আমার প্রত্যাশা, আপনারা যত্ন, পেশাদারিত্ব ও গভীর দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করবেন, যাতে বিচার বিভাগ সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে সমর্থ হয়।’ সৈয়দ রেফাত আহমেদ প্রধান বিচারপতি হিসেবে তার দায়িত্ব গ্রহণের পর নেওয়া কয়েকটি পদক্ষেপের কথা সভায় তুলে ধরেন। বিচার বিভাগের সংস্কারে এরই মধ্যে তার নেওয়া রোডম্যাপ ঘোষণার কথা তিনি তুলে ধরেন। একই সঙ্গে এ রোডম্যাপের অংশ হিসেবে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় করা এবং ‘জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল’ গঠনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা বলেন তিনি। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিচারপতি অপসারণে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠন হয়েছে, যা আগে পার্লামেন্টের কাছে ছিল।’ কর্মশালা শুরুর আগে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ, ২০২৪ সালে গণ আন্দোলনে নিহত ও অতি সম্প্রতি চট্টগ্রামে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুব উদ্দিন খোকন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন উপস্থিত ছিলেন।

আইনের শাসন নিশ্চিতে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ আলাদা করতে হবে

আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হলে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ আলাদা করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকালে সুপ্রিম কোর্ট বার আয়োজিত নবীন আইনজীবীদের কর্মশালায় এ কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারপতি অপসারণে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠন হয়েছে; যা আগে পার্লামেন্টের কাছে ছিলো। বিচার বিভাগ আলাদা করার জন্য সরকারকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। নবীন আইনজীবীদের সততার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক স্বশাসন বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। নবীন আইনজীবীরা বিচারবিভাগের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট হতে হবে। সাম্প্রতিক আদালত অঙ্গনে ঘটে যাওয়া ঘটনায় আইনজীবীদের আরও দায়বদ্ধ থেকে কাজ করতে হবে। সার্বিকভাবে বিচারবিভাগ বার ও বেঞ্চের সমন্বয়ে এগিয়ে যাবে। এ সময় চট্টগ্রামে আইনজীবী আলিফ হত্যার ঘটনায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে ৫ আগস্ট ঘিরে আন্দোলনে নিহত আহতদের নিয়ে বিশেষ দোয়া হয়। উল্লেখ্য আজকের কর্মশালায় চট্টগ্রামের আইনজীবী আলিফেরও থাকার কথা ছিলো। এসময় আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান , সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন উপস্থিত ছিলেন। এসময় সারা দেশ থেকে প্রায় এক হাজার ৫০০ নবীন আইনজীবী যারা বারে নতুন সদস্য হয়েছেন তারা উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল হত্যার ঘটনায় মামলা, আসামি ৩১ জন

চট্টগ্রাম আদালত থেকে সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে কারাগারে নেওয়ার সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। নিহত আলিফের বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলাটি করেন। মামলায় ৩১ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া আদালতে আইনজীবী ও পুলিশের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় নিহত আলিফের ভাই আরেকটি মামলা করেছেন। ১১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। এর আগে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে তিনটি মামলা করা হয়েছিল। গত মঙ্গলবারের ওই সহিংসতার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা তিনটি করে। এ তিন মামলায় ৭৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১ হাজার ৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। সংঘর্ষের ওই ঘটনায় গ্রেফতার ৩৮ জনের মধ্যে আইনজীবী হত্যায় নয়জন জড়িত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। হত্যা মামলা হলে তাদের ওই মামলায়ও গ্রেফতার দেখানো হবে বলে জানিয়েছিল পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীর জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশের পর চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজন ভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ করে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন। আড়াই ঘণ্টা পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে চিন্ময় দাশকে কারাগারে নিয়ে যায়। বিক্ষোভকারীরা আদালত সড়কে রাখা বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাঙচুর করে। এরপর আদালতের সাধারণ আইনজীবী ও কর্মচারীরা মিলে তাদের ধাওয়া করে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে খুন হয় আইনজীবী আলিফ। সড়কে লুটিয়ে পড়া অবস্থায় তাকে বেশ কয়েকজন এলোপাথাড়ি মারধর করছে। ভিডিওতে হেলমেট পরে ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়ানোদের মধ্যে যাদের ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, তাদের অনেককেই শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন উপকমিশনার রইছ উদ্দিন। পুলিশ বলছে, গ্রেফতারদের মধ্যে রুমিত দাশ, গগন দাশ, সুমিত দাশ, নয়ন দাশ, বিশাল দাশ, মনু মেথর, আমান দাশ ও রাজীব ভট্টাচার্য পুলিশের ওপর হামলার মামলার আসামি। পাশাপাশি তারা হত্যাকাণ্ডেরও জড়িত ছিলেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।