দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধানদের সাথে এফবিসিসিআইর মত বিনিময় সভা
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৮:০৮ পিএম, ০৫ জুন ২০২৪
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা নিশ্চিতে বেসরকারি খাত এবং ব্যাংকিং সেক্টর একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে। এক্ষেত্রে ব্যাংক হচ্ছে ব্যবসা সহযোগী (Partner in Business)। দেশের শিল্পায়ন ও বিনিয়োগে ব্যাংকিং সেক্টরের ভূমিকা অপরিসীম। ব্যাংকিং সুযোগ-সবিধাসমুহ যত সহজলভ্য ও বাধাহীনভাবে এবং দ্রুততরভাবে নিশ্চিত করা যাবে ততই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
বুধবার ০৫ জুন বিকেলে এফবিসিসিআই’র গুলশান কার্যালয়ে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং ব্যাংকিং খাত বিষয়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্বকালে এই মন্তব্য করেন শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন এফবিসিসিআই এর সভাপতি মাহবুবুল আলম। এতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন।
আলোচনায় উভয় পক্ষ ব্যবসা ও ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে নিজেদের মধ্যে নিবিড়ভাবে ও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে একমত পোষণ করে। এজন্য নিয়মিত বিরতীতে সভা আয়োজনের বিষয়ে সম্মতিও প্রকাশ করেন তারা।
সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বিগত দুই দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রগতি বিস্ময়কর। তবে কোভিডের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। বিদ্যমান বিশ্ব অর্থনীতির সংকটময় পরিস্থিতিতেও মাথাপিছু আয়সহ আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন সূচকে আমরা অগ্রগতি অর্জন করেছি। এ অর্জন সম্ভব হয়েছে সরকার, বেসরকারি খাত ও ব্যাংকিং সেক্টরের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়।
এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, দেশের শিল্পায়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণে ব্যাংকিং খাতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকে ৪৬০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি অর্জনের ক্ষেত্রে ব্যাংকিং খাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের পুঁজি যোগান থেকে শুরু করে চলতি মুলধন ও অন্যান্য সব অর্থায়ন হয়ে থাকে ব্যাংক খাতের মাধ্যমে। অর্থনৈতিক কার্যক্রম যথাযথভাবে এগিয়ে নেয়ার জন্য এফবিসিসিআই-এর সাথে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের নিবিড় যোগাযোগ থাকা জরুরী বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশের বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য সহায়ক পরিবেশকে আরও সুদৃঢ় ও জোরদার করা জরুরী হয়ে পড়েছে। কেননা চলমান তীব্র প্রতিদ্বন্দিতামূলক বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে আমাদের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এলডিসি গ্রাজুয়েশন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে টেকসই উত্তরণ ও এসডিজি অর্জনে ব্যাংকিং খাতের সক্রিয় সহযোগিতা সর্বাত্মকভাবে প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মাহবুবুল আলম বলেন, রাজনৈতিক ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিক কারণে শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশের ব্যাপক মূল্য বৃদ্ধি, জ্বালানী খরচ ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির কারনে ব্যবসা পরিচালনা ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ। স্থানীয় শিল্প ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে আমাদের শিল্প ও রপ্তানি খাতকে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এফবিসিসিআই এবং ব্যাংকিং খাত যৌথভাবে কাজ করতে পারে বলে মন্তব্য করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
এসময় এফবিসিসিআই সভাপতি দেশের বিরাজমান ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতি এবং সংকট মোকাবেলায় কতিপয় সুপারিশ তুলে ধরেন। এর মধ্যে বর্তমান গ্রাহক ঋণসীমা (Single borrower exposure limit) ১৫% হতে বৃদ্ধি করে ২৫%-এর ব্যবস্থাকরণ, উৎপাদনকারীগণকে সুরক্ষার লক্ষ্যে স্বল্প মেয়াদি ঋণকে দীর্ঘমেয়াদী ঋণে রূপান্তরকরণ, ডলারের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা এবং নিয়মিতভাবে যাতে এলসি খোলা যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ, সুদের হার বৃদ্ধি না করা, মেয়াদোত্তীর্ণ মেয়াদী ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ৬ (ছয়) মাস গ্রেস পিরিয়ড প্রদান করা, ডলার সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, ব্যাংকের চার্জ ও কমিশন যৌক্তিকীকরণ, দূর্বল ও ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পকে Exit প্রদানের সুপারিশ করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
এর পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পখাত ও মহিলা উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা সম্প্রসারণে সকল ব্যাংকের শাখাসমূহে এসএমই-দের সহায়তায় হেল্প ডেস্ক কার্যকরভাবে নিশ্চিত করা, এসএমই ও মহিলা উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ও জামানতহীন ঋণের সুযোগ দেয়া, দ্রুত এবং কার্যকর ঋণ বিতরণের জন্য ডকুমেন্টেশন সহজ করা, যেসব এসএমই-দের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই সংশ্লিষ্ট ট্রেডবডির সুপারিশ অনুযায়ী তাদের ঋণ দেয়ার মাধ্যমে অথবা অন্য কোন উপায়ে ব্যাংকিং চ্যানেলের আওতায় আনা, ব্যবসা খরচ কমিয়ে আনার স্বার্থে গত ৮ মে, ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ঘোষিত সুদ হারের অতিরিক্ত কোন সার্ভিস চার্জ আরোপ/আদায় না করার নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করা ও সুপারভিশন চার্জ আদায় না হয় তা নিশ্চিত করা, এক্সপোর্ট বিল পরিশোধের সুপারিশের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে ব্যবসা-বান্ধব সহযোগিতার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম। এসময় খেলাপী ঋণ দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে বিশাল অন্তরায় উল্লেখ করে অনাদায়ী/খেলাপী ঋণের পরিমান কমিয়ে আনার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।
সভায় অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন বলেন, বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় ডলার বেচা-কেনা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এক থেকে দুই মাসের মধ্যে অবস্থা আরও স্বস্তিদায়ক হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সুদ হার ১৪ শতাংশের মধ্যে রাখতে ব্যাংকগুলো সবার্ত্মক চেষ্টা করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ও সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বলেন, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং ব্যাংকিং খাত বিষয়ে এফবিসিসিআই ও ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টরা মাঝে-মধ্যে এমন বৈঠক করতে পারলে অনেক সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে বেড় করা যাবে। এর ফলে ব্যাংক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে দূরত্বও আরও কমে আসবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সমাপনী বক্তব্যে এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ আমিন হেলালী বৃহৎ শিল্পের ন্যায় কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী, ও উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবসা বান্ধব ব্যাংকিং নীতিমালা করতে ব্যাংক প্রধানদের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বৃহৎ শিল্পগুলোও এক সময় এসএমই ছিলো। ব্যাংক তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলো বলেই আজ তারা দাঁড়াতে পেরেছে। এখন আবার সময় এসেছে স্টার্ট-আপ, কুটির ও ক্ষুদ্র ব্যবসা উদ্যোগ সমূহকে লালন-পালন করে প্রতিষ্টিত করার। কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্পের প্রতি ব্যাংকগুলোকে আরও আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আনোয়ার সাদাত সরকার, ড. যশোদা জীবন দেবনাথ, শমী কায়সার, মো. মুনির হোসেন, এফবিসিসিআই মহাসচিব মো. আলমগীর, বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।