ন্যাশনাল ব্যাংকের টাকা লোপাটকারীরা চিহ্নিত, আগামী সপ্তাহ থেকে একশন
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৩:০৬ পিএম, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেছেন, ‘যারা ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে, তাদেরকে আমরা চিহ্নিত করেছি। সেই টাকাগুলো উদ্ধারের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক সহায়তায় কার্যক্রম চলছে। আগামী সপ্তাহ থেকে আমরা এটাচমেন্ট (আদায়ের মাধ্যমে সমন্বয়) শুরু করে দিব। আশা করি, আগামী তিন মাসের মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াবে।’
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকায় ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মোয়াজ্জেম হোসেন আরো বলেন, ‘যারা ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে, তাদের নামে, বেনামে, স্থাবর, অস্থাবর যেসব সম্পত্তি আছে, সেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এমনও গ্রাহকও আছে, গুলশানে তাদের এক হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এগুলো সব নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি ব্যাংকের পক্ষ থেকে। যারা এই ব্যাংক থেকে সবচেয়ে বেশি টাকা নিয়েছে, তাদেরকে আমরা ধরার কার্যকরী উদ্যোগ নিয়েছি।’
ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘আতঙ্ক ও গুজবে ব্যাংক খাত থেকে আস্থা হারিয়েছেন আমানতকারীরা। এ খাতে অনিয়ম ছিল না তা বলব না। ব্যাংকিং খাতে বহুমাত্রিক ও বহু পাক্ষিক অনিয়ম হয়েছে। তবে, ন্যাশনাল ব্যাংকে এখন আন্তর্জাতিক ও দেশীয়সহ পাঁচটি অডিট ফার্ম কাজ করছে। তাদের প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী করণীয় আমরা নির্ধারণ করব। আমি এতটুকু নিশ্চিত করতে পারি, এত দিন যত অনিয়ম হয়েছে, এখন তা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ। এখন আমরা অবলোপন থেকে ও মন্দ মানে খেলাপি হয়ে যাওয়া ঋণ গুলো আদায়ের চেষ্টা করছি। পাশাপাশি, বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং রেমিটেন্সের উপর জোর দিয়েছি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় খুব ওই ঘুরে দাঁড়ানোর আশা ব্যক্ত করেন চেয়ারম্যান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আব্দুল আউয়াল মিন্টু জানান, দেশের কঠিন সময়েও ন্যাশনাল ব্যাংক দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত গার্মেন্টস শিল্প ও কারখানাগুলোর পাশে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। বিশেষত এলসি সুবিধা প্রদানসহ গার্মেন্টস কর্মীদের বেতন-ভাতা সময়মত পরিশোধ নিশ্চিত করায় ন্যাশনাল ব্যাংক সদা সচেষ্ট। এর পাশাপাশি, দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রেও ন্যাশনাল ব্যাংক সচেষ্ট। নেশনাল ব্যাংক গেল অক্টোবর পর্যন্ত ৯০০ কোটি টাকার খেলাপি আদায় করেছে এবং চলতি বছরের মধ্যে আরও ৪০০ কোটি টাকা আদায়ের প্রক্রিয়া চলছে।
বলে রাখা ভাল, গেল ২০ আগস্ট বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ন্যাশনাল ব্যাংকের আগের পরিচালকদের অনেকেই চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের নামে-বেনামে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ছিলেন। ফলে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ব্যাংকটিকে এস আলম গ্রুপের হাত থেকে মুক্ত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গেল ডিসেম্বর পর্যন্ত ন্যাশনাল ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ২৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খাতা-কলমে খেলাপি হয়ে পড়েছিল ১২ হাজার ৩৬৫ কোটি। বিতরণকৃত মোট ঋণের ২৯ শতাংশ। প্রকৃতপক্ষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ আরও বেশি বলে অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ বর্তমানে ১১ হাজার ৬৯৮ কোটি।