শীর্ষ খেলাপিদের তথ্য প্রকাশ করলো অগ্রণী ব্যাংক


News Defalt/agrani-bank-plc.jpg

শীর্ষ খেলাপিদের তথ্য প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক। ব্যাংকটি খেলাপি ঋণ কমাতে আদায় জোরদার করেছে। ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণ ২৬ হাজার ৮৯১ কোটি টাকার মধ্যে আট হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা বা ৩৩ শতাংশ আটকে আছে শীর্ষ ১৮ খেলাপি গ্রাহকের কাছে। আবার এসব খেলাপির কাছ থেকে অর্থ আদায়ের হারও নগণ্য। চলতি বছরের প্রথম ৬ মাস (জানুয়ারি-জুন) শীর্ষ এসব ঋণ খেলাপির কাছ থেকে মাত্র ২৮ কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব হয়েছে।

অগ্রণী ব্যাংকের রিকভারি অ্যান্ড এনপিএ ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য ওঠে এসেছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ঋণের নামে এসব অর্থ বের করে নেয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত জামানত না থাকায় এসব খেলাপির কাছ থেকে অর্থ আদায়ও করা যাচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে বছরের পর বছর মামলা চললেও বাস্তব অগ্রগতি তেমন নেই।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অগ্রণী ব্যাংকে জাকিয়া গ্রুপরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ২১০ কোটি টাকা। জজ ভূঞা গ্রুপটির ৬টি ঋণ হিসাবে ১ হাজার ৮৯ কোটি টাকার খেলাপি রয়েছে। এছাড়া ব্যাংকটিতে তানাকা গ্রুপের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯২৬ কোটি টাকা, সাত্তার গ্রুপের খেলাপি ৫৫০ কোটি টাকা এবং মুন গ্রুপের খেলাপি ঋণ ৫২৪ কোটি টাকা। শীর্ষ এই পাঁচ গ্রুপের কাছেই অগ্রণীর ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংকে সোনালী গ্রুপের খেলাপি ঋণ ৫২২ কোটি টাকা। অ্যারোস্টোকেট গ্রুপের খেলাপি ৪৬২ কোটি টাকা,  ঢাকা হাইড অ্যান্ড স্কিনের ৪৫৭ কোটি টাকা, প্যাসিফিক গ্রুপের ৪৪৩ কোটি টাকা এবং সাদ মূসা ফেব্রিক্সের ৪১০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ।

প্রতিবেদনের তথ্যে আরও দেখা যায়, ব্যাংকটিতে সাহাবা ইয়ার্নের খেলাপি ৩৭৪ কোটি টাকা, নাভানা ফার্নিচারের ২৭২ কোটি টাকা, অ্যাডভান্স কম্পোজিট মিলসের ৩১৮ কোটি টাকা, প্রাইম কম্পোজিট মিলসের ৩১২ কোটি টাকা, লিউ ফ্যাশনের ২২৯ কোটি টাকা, আর্থ অ্যাগ্রো ফার্মসের ২২৩ কোটি টাকা, জুলিয়া সোয়েটার কম্পোজিট এবং আর সোয়েটার কম্পোজিটের ২১৯ কোটি

সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ২৬ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা। চলতি বছরের প্রথম ৬ মাস (জানুয়ারি-জুন) শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছ থেকে মাত্র ২৮ কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব হয়েছে টাকা।

তথ্য বলছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর অগ্রণী ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের স্থিতি ছিল ৬৯ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ২৬ হাজার ৮৯১ কোটি ৭১ লাখ টাকা; যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৩৮ দশমিক ৭২ শতাংশ।

অপরদিকে সেপ্টেম্বর শেষে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। আলোচিত সময়ে ব্যাংকটির প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ১৩ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা। কিন্তু এর বিপরীতে প্রভিশন রেখেছে ৬ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। এতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে ৭ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা। বিগত সরকারের সময়ে দেশের ব্যাংক খাতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। নানা ছাড় ও সুবিধা অব্যাহত রাখার পরও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানো যায়নি। উলটো ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ আরও বেড়েছে।

খেলাপি ঋণ ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিগত সরকারের আমলে স্বার্থান্বেষী মহলগুলো কারসাজি করে ব্যাংক খাতের অনেক তথ্য লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। তবে সরকারের পতনের পর থেকে প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। এ খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপির হার ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এর আগের প্রান্তিক জুন শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ছিলো ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। এর মানে অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) খেলাপির পরিমাণ বেড়েছে ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এনেছে সরকার। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছেন, বাহ্যিক দৃষ্টিতে গত দেড় দশকে অগ্রণী ব্যাংক অনেক বড় হয়েছে। ব্যালান্স শিটে সম্পদের আকার লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে ব্যাংকটির ভেতরে ‘ফোকলা’ করে ফেলা হয়েছে। অল্প কিছু প্রভাবশালী গ্রাহকের কাছে পুরো ব্যাংকটি কেন্দ্রীভূত। এ কারণে ব্যাংকের খেলাপি ঋণসহ সব সূচকেরই বিপর্যয়কর চিত্র ফুটে উঠতে শুরু করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদকে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০০৪ থেকে ২০১০ সালের মার্চ পর্যন্ত তিনি ব্যাংকটির এমডির দায়িত্বে ছিলেন।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×