এসকে সুরের ৩ লকার থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণ উদ্ধার
- ফরিদ শ্রাবণ
- প্রকাশঃ ১০:০২ পিএম, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরীর (এসকে সুর) ব্যক্তিগত তিনটি লকারে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণ পাওয়া গেছে।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ৭ সদস্যের দল সুরের লকার ভেঙে এসব টাকা ও স্বর্ণ উদ্ধার করে।
দুদকের পরিচালক কাজী মো. সায়েমুজ্জামান জানান, তিনটি লকার থেকে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৩০০ ডলার, ৫৫ হাজার ইউরো, এক কেজি ৫৪ গ্রাম স্বর্ণ ও ৭০ লাখ টাকার এফডিআর পাওয়া গিয়েছে।
এর আগে রোববার বেলা ১১টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দা সালেহা নুর ও দুদকের পরিচালক কাজী মো. সায়েমুজ্জামানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংকে উপস্থিত হয়। এরপর লকারের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী পরিচালকের সঙ্গে মিটিং সম্পন্ন হয়। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা নাটকীয়তায় দুদক প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংকেই অবস্থান করেন। দীর্ঘ সময়েও তারা সুরের ব্যক্তিগত লকার খুলতে পারেননি। পরে সুরের তিনটি লকার তারা খুলতে সমর্থ হন।
গত ১৯ জানুয়ারি এসকে সুরের ধানমণ্ডির বাসা থেকে ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা ও সাড়ে চার কোটি টাকার ফিক্স ডিপোজিটের ডকুমেন্ট উদ্ধার করে সংস্থাটি। সেখানেই বাংলাদেশ ব্যাংকে তিনটি লকার থাকার নথি পায় তারা। আদালতের নির্দেশে এসব লকার খোলার অনুমতি পায় দুদক।
মূলত এসকে সুর ডেপুটি গভর্নর থাকাকালে আলোচিত এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারের (পিকে হালদার) ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় সহযোগিতা করেছেন ও সুবিধা নিয়েছেন। কয়েকজন আসামির জবানবন্দিতে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
এর আগে গত আগস্টে এসকে সুরের পরিবারের সব ধরনের লেনদেনের তথ্য চেয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেয় দুদক। আলোচিত পিকে হালদারের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে নাম আসায় ২০২২ সালে এসকে সুরসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
এরপর দুদক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে দেওয়া চিঠিতে লকারের সামগ্রী স্থানান্তর ও হস্তান্তর না করতে বলে। গেল ২১ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরাপত্তা শাখা থেকে দুদককে ফিরতি চিঠি দিয়ে লকারের সামগ্রী স্থানান্তর স্থগিত করার তথ্য জানায়।
চিঠিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের লকারে বিধি অনুযায়ী ব্যাংকে কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত মূল্যবান সামগ্রী তাদের নিজ নামে প্যাকেট অথবা কৌটায় নিজ দায়িত্বে সিলগালাযুক্ত অবস্থায় জমার তারিখ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত রাখা হয়।’
এরপর বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংক আরেক চিঠিতে জানায়, এসকে সুর তিনটি লকার নম্বরে মূল্যবান সামগ্রী রেখেছেন। এর মধ্যে তিনি গত বছর ২৫ সেপ্টেম্বরের এসডি-৪৪/৬১ ও ২০১৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারির এসডি-৪৮/১২ নম্বরের নমিনি করেছেন স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরীকে।
এর আগে গত ২৯ মার্চ এসকে সুরকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল) থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ লুটপাটের ঘটনায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল বলে জানা গেছে। এসকে সুর চৌধুরী ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ডেপুটি গভর্নরের পদ থেকে অবসরে যান। অবসরে যাওয়ার পর তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।