২৫ বিলিয়ন ডলার ফেরানোর মিশন গভর্নরের
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৩:০৮ পিএম, ৩০ মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য জোরালো মিশন শুরু করেছেন। এই উদ্যোগের আওতায় তিনি রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক অভিজাতদের বিদেশে পাচার করা বিপুল সম্পদ অনুসন্ধানে কাজ শুরু করেছেন। গত শুক্রবার (২৮ মার্চ) ‘বাংলাদেশ আপ এগেইনেস্ট টাইম টু ফাইন্ড স্টোলেন বিলিয়নস : সেন্ট্রাল ব্যাংক গভর্নর’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আলজাজিরা অনলাইন। সংবাদ মাধ্যমটির ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিটকে (আই-ইউনিট) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।
সাক্ষাৎকারে গভর্নর ড. আহসান মনসুর বিদেশে পাচার হওয়া বিপুল অর্থ দেশে ফেরত আনার বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন। বিশেষ করে তিনি ব্রিটেনকে প্রধান লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন, যেখানে পাচার করা আনুমানিক ২৫ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ উদ্ধার করতে বাংলাদেশের সরকার এরই মধ্যে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কমনওয়েলথ দপ্তর এবং লন্ডনের আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
আলজাজিরা জানায়, গভর্নর আহসান মনসুর ১১টি প্রভাবশালী পরিবারের বিরুদ্ধে বিদেশে পাচার করা অর্থ উদ্ধার করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তৎপর করেছেন। এই পরিবারগুলোর বিরুদ্ধে বিগত এক দশক ধরে ব্রিটেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে কোটি কোটি ডলার পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এই সম্পদের সন্ধানে ১১টি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করেছে।
১১টি পরিবারের মধ্যে একটি পরিবারের বিরুদ্ধে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদ পাচারের অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে একটি ব্যাংক থেকে প্রায় ৯০ শতাংশ আমানত তুলে নেওয়া হয়েছে, ফলে ব্যাংকটি প্রায় ভেঙে পড়ার অবস্থায় পৌঁছেছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক অর্থনীতিবিদ, গভর্নর আহসান মনসুর পাচারকৃত অর্থ দ্রুত উদ্ধার করার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অর্থের পরিমাণ কমে যেতে পারে।’
আহসান মনসুর জানিয়েছেন, অনেক পাচার করা সম্পদ ব্রিটেনের লন্ডনে রয়েছে এবং বাংলাদেশের উদ্দেশ্য হলো এ বিষয়টি বিশ্বে সচেতনতা সৃষ্টি করা, যাতে জানানো যায়, চুরি হওয়া সম্পদ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে ব্রিটেনে পাচার হয়েছে।
এর আগে আলজাজিরার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর লন্ডন ও দুবাইতে ৫০ কোটি ডলারের বেশি সম্পদ রয়েছে। গত বছর প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে জানা যায়, সাবেক এই মন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের ৩৬০টি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে, যার বেশির ভাগই লন্ডনে। দুর্নীতি দমন কমিশন এরই মধ্যেই সাইফুজ্জামানের ৪০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে এবং তাঁকে দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক এ সময় ব্রিটেন ও অন্যান্য দেশে এসব অভিজাত পরিবারের কোটি কোটি ডলার পাচারে সহায়তাকারী আইনজীবী, ব্যাংকার এবং এস্টেট এজেন্টদের তদন্তের আওতায় আনার কথা বলেছে।
গভর্নর আহসান মনসুর জানিয়েছেন, এই অপরাধীচক্রের মূল হোতার বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহ করতে বিদেশে সহায়তাকারীদের সঙ্গে দর-কষাকষি করার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে এবং হারিয়ে যাওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করারও পরিকল্পনা রয়েছে।
গভর্নর বলেন, ‘আইন লঙ্ঘন করে অপরাধীদের পুনর্বাসনে সহায়তা করছে এমন এজেন্ট বা ব্যাংক অপারেটরের সংখ্যা অনেক। এই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।’
গভর্নর জানিয়েছেন, পাচার করা অর্থের নিয়ন্ত্রণ পেতে পাঁচ বছর পর্যন্ত লাগতে পারে। তিনি স্বীকার করেন, কর্তৃপক্ষের কাজের মাত্রা এবং জটিলতা নিয়ে লড়াই করার কারণে অর্থ উদ্ধার কার্যক্রম কিছুটা ধীরগতিতে এগোচ্ছে।
তবে ব্রিটেন সরকার এ ক্ষেত্রে সহায়তা করছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার পরিবর্তনের পর পাচারকৃত কোটি কোটি ডলার উদ্ধারের কার্যক্রম পরিচালনা জটিল হয়ে পড়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) তহবিল স্থগিত করে দেওয়ার ফলে বাংলাদেশে যে তদন্তকারী সংস্থা কাজ শুরু করার কথা ছিল তাদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘মার্কিন কর্মকর্তাদের পূর্ণশক্তিতে ঢাকায় থাকার কথা ছিল। তাঁদের ইউএসএআইডির মাধ্যমে অর্থায়ন করা হয়েছে। তবে তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা আর আসতে পারেননি, যা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।’