
আর্থিক খাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পুঁজিবাজার পুরোপুরি ব্যর্থ: ডিএসইর চেয়ারম্যান
পুঁজিবাজার ভীষণভাবে সংকোচিত হয়েছে, আর্থিক খাতে যে ভূমিকা রাখার কথা ছিল তা রাখতে পুরোপুরি ব্যর্থ। দীর্ঘ দিন ধরে যে অনিয়ম অদক্ষতাকে আমরা লালন করেছি, সেটাই পুঁজিবাজারকে ইতিবাচক হতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) ঢাকা ক্লাবে ডিএসই আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত ১০ বছরে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা মূল্যের দুর্বল আইপিও বাজার এসেছে। ভাল কোম্পানি আসছে একেবারেই নগণ্য। বাজারে বিনিয়োগকারী সংখ্যা গত ১০ বছরে অর্ধেকে নেমে এসেছে। সক্রিয় বিনিয়োগকারী আরো অনেক কম।’ তিনি আরো বলেন, ‘পুঁজিবাজারে সক্ষমতা পরিমাপের অন্যতম একক বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ। বর্তমানে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ এক শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। কর্পোরেট বন্ডের পরিমাণ যদিও এক শতাংশ বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে তা শুন্য দশমিক ৫১ শতাংশের বেশি নয়। বাজারে নতুন আইপিও, কর্পোরেট বন্ড ও মিউচুয়াল ফান্ড আমাদের অগ্রাধিকারী রয়েছে।’ মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলোকে যদি আমরা সক্ষম করতে না পারি, তাহলে হয়তো আবারো ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে চলে যাব। প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্ষম করতে হলে কিছুটা সময় আমাদের লাগবে। পুঁজিবাজার লিডিং এবং কোঅর্ডিনেশনের জায়গায়টা হোল্ড করবে। ডিএসইকে সামনে এগিয়ে নিতে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত লোকবল লাগবে। আমরা নেতৃত্ব গুণাবলী সম্পূর্ণ লোকবল নিয়োগ দিচ্ছি। আমরা আশা করছি, বাজারে আস্থা আগের চাইতে ভাল হবে, বিনিয়োগকারীরা আবার ফিরে আসবে। আইটি সিকিউরিটি অডিট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডিএসই ওয়েব সাইটকে আমরা রিভাইব করছি। বিশেষ করে কিভাবে আইপিওটাকে ডিজিটালাইজড করা যায়। বন্ড মার্কেটও পরিচালনা সমস্যা, আমরা বিএসইসির সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করছি।’ মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের নিয়ে কাজ করছি এবং ভবিষ্যতে যেন কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সে কাজও আমরা করছি। ইনসাইডার ট্রেড ও ম্যানুপুলেশন কিভাবে রোধ করা যায় তা নিয়ে কাছ করছি। মার্কেট ডিভলমেন্টের ক্ষেত্রে রিসার্চ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বাজারে রিসার্চের মাত্রা খুবই কম এবং এটা কিভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে কাজ করছি।’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, ‘ডিএসইর সুরক্ষা যদি আইনগত হয় তবে আমরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারব। সিসিবিএল থাকবে এমনটা আমরা চাই না। বিএসইসি, ডিএসই, সিসিবিএল এ বিষয়ে সকাজ করছে। জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই দক্ষতাকে গুরুত্ব দিচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে সরকারের নজরে থাকলেও পুঁজিবাজার উপেক্ষিত হয়েছে। পুঁজিবাজার কিভাবে সরকারের পাইরোটি লিস্টে আসে তা নিয়ে কাজ করছি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পুঁজিবাজার ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করেছে। আমাদের দেশেও এটা করা সম্ভব।’ চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান একেএম হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আমাদের কোন কিছু চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে না। আমরা সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করছি।’ ডিবিএর চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পুঁজিবাজারে যে পেশার গ্রুপগুলো হয়েছে। আমাদের দেশে সেগুলো পুরোপুরি কাজ করেছে, এমন কোন ভাল অতীত নেই। তবে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার চাপের ফলে বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ দেখা গেছে। এটা বাজারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।’ বিকেন্দ্রীকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিকেন্দ্রীকরণের পরিবর্তে সবকিছু এফআইডি নির্ভর করা হচ্ছে। অনেক কিছুই প্রাইমারি রেগুলেটরের হাত থেকে নিয়ে মন্ত্রণালয় কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যার ফলে আমরা বিভিন্ন রকম সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছি।’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ‘ডিএসই যদি প্রভাব মুক্ত থাকতে পারে, তাহলে পুঁজিবাজার ইতিবাচক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। ১৫ বছরের অনিয়মের বিচার বিশ্লেষণ করা দরকার। আপনাদের কাছ থেকে কিছু তথ্য উঠে এসেছে। তবে সামগ্রিকভাবে সব অনিয়মের তথ্য উঠে আসছে না। আপনারা সহযোগিতা করলে; অনিয়মের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া আমাদের জন্য সহজ হয়। আপনারা তুলে নিয়ে আসুন, আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করি।’ সংবাদ সম্মেলনে ডিএসইর পরিচালক মো. শাকিল রিজভী, মো. শাহজাহান, রিচার্ড ডি রোজারিও, বিএম বিএ প্রেসিডেন্ট মাজেদা খাতুন এবং ডিএসই ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাত্ত্বিক আহমেদ শাহ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশে অস্ত্র বিক্রি করতে আগ্রহী তুরস্ক
বাংলাদেশের কাছে তুরস্ক অস্ত্র বিক্রির আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সচিবালয়ে তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী ওমর বোলাটের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে তিনি এ তথ্য জানান। শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘তবে অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন আলোচনা হয়নি।’ তিনি আরো বলেন, ‘দুই দেশের সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গার্মেন্টস, ফার্মেসি ও খাদ্যসহ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’ বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ চাইলে তুরস্ক আলাদা ইকোনমিক জোন করে দিতে আগ্রহী। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ দেশে ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।’ এ সময় টিসিবির কার্ড নিয়েও কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের এ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে টিসিবির কার্ড দেওয়া হয়েছিল। একই পরিবারের অনেককে দেওয়া হত। সেটি বাদ দিয়ে এখন ১ কোটি থেকে ৬৩ লাখ করা হয়েছে।’

আলাদিনের চেরাগ নেই, যে সুইচ দিলেন আর বাজার ঠিক হয়ে যাবে
চালের দাম নিয়ন্ত্রণে নিজের কাছে কোন মেশিন নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেছেন, ‘সম্প্রতি চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের কষ্ট হচ্ছে, এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে এ সমস্যা সাময়িক। আসলে এমন কোন আলাদিনের চেরাগতো নেই যে, সুইচ দিলেন আর কালকেই বাজার ঠিক হয়ে যাবে। তবে বাজার স্বাভাবিক রাখতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে।’ বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী ড. ওমর বোলাতের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ বশিরউদ্দীনের এসব কথা বলেন। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমদানি উদার করা হয়েছে। শুল্ক ৬৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। আমদানি শুরু হলেই যদি কেউ অনায্যভাবে মজুদ করে থাকে তাহলে তারাও ছাড়তে বাধ্য হবে। বাজারেও স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে আসবে।’ এ সময়ের মধ্যেইতো অসাধু ব্যবসায়ীরা শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেবে- এমন প্রশ্নে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে বিষয়টি সাময়িক। কোন আলাদিনের চেরাগ নেই যে, আপনি সুইচ দিলেন আর কালকেই মার্কেটটা ঠিক হয়ে যাবে।’ শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘চালের মজুদে কোন সমস্যা নেই। তারপরও খাদ্য মন্ত্রণালয় ভারতের পাশাপাশি পাকিস্তান ও মিয়ানমার থেকে কয়েক লাখ টন চাল আমদানি করছে। এছাড়া, নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে ওএমএস এবং টিসিবির কার্যক্রম বাড়ানো হচ্ছে।’

সম্পত্তির নিলাম ঠেকাতে আদালতে যাচ্ছে এস আলম গ্রুপ
খেলাপি ঋণের পৌনে চার হাজার কোটি টাকা আদায়ে এস আলম গ্রুপের দুই কোম্পানির সম্পত্তি নিলামে তোলার যে উদ্যোগ জনতা ব্যাংক নিয়েছে, তা ঠেকাতে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রামভিত্তিক এই শিল্পগ্রুপ। এর মধ্যে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের কাছে জনতা ব্যাংকের পাওনা এক হাজার ৭৭৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। আর এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের কাছে দুই হাজার তিন কোটি ৩৭ লাখ টাকা পাওনা। ব্যাংকটি বলেছে, ‘শর্তানুযায়ী কিস্তি পরিশোধ না করায় ঋণগুলো খেলাপিতে পরিণত হয়। অসংখ্য বার তলব-তাগাদা দিলেও ঋণ গ্রহীতা পাওনা পরিশোধ করেনি। সে কারণে অর্থঋণ আদালতের আইন অনুযায়ী নিলাম ডেকেছে ব্যাংক।’ এর মধ্যে এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। বুধবার (৮ জানুয়ারি) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে কোম্পানিটি জানিয়েছে, জনতা ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেবে গ্রুপের লিগ্যাল বিভাগ। শিগগিরই পদপেক্ষর বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলসের কোম্পানি সচিব আল মামুন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘ডিএসই আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিল। আমরা জানিয়েছি, লিগ্যাল বিভাগের আইনজীবীরা দ্রুত জনতা ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবেন।’ ‘এস আলম গ্রুপের জমি নিলামে তুলেছে জনতা ব্যাংক’ শিরোনামে গত ১ জানুয়ারি প্রতিবেদন প্রকাশ হয় কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে। এরপর এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলসের কোম্পানির কাছে ব্যাখ্যা চায় ডিএসই। উত্তরে ওই কোম্পানি ডিএসইকে জানায়, কোম্পানি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ, ব্যাংকের বিধি নিষেধের কারণে এলসি খোলা যাচ্ছে না। তাতে কোম্পানি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ‘এ রকম পরিস্থিতিতে ঋণদাতা ব্যাংক বন্ধকী সম্পত্তি নিলামে তুলেছে। এটা হয়েছে সম্প্রতি তৈরি হওয়া দেশের রাজনৈতিক সংকটের কারণে, যা আমাদের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। আমরা জানাতে চাই, মজুদ থাকা কাঁচামাল দিয়ে উৎপাদন, পণ্য বিপণন ও অন্যান্য ব্যবসায় বাণিজ্য কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ রকম নিলামের নোটিস কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যক্রমে কোন প্রভাব ফেলবে না।’ কোম্পানির পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বলা হয়, ‘ঋণদাতা ব্যাংকের নিলাম নোটিসের বিরুদ্ধে কোম্পানির পক্ষ থেকে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’ সম্পত্তি নিলামে তোলার বিষয়ে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল জব্বার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘ব্যাংক টাকা পাবে, এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো তো ব্যাংকের টাকা ফেরত দিচ্ছে না। নিয়মানুযায়ী তাদের খেলাপি দেখানো হয়েছে। ব্যাংক এখন খেলাপি ঋণ আদায়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এছাড়া, তো কোন বিকল্প নেই। আইন মেনেই তাদের সম্পত্তি নিলামে তোলা হয়েছে।’ শিল্পী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের ব্যবসায় রয়েছে চিনি, তেলসহ ভোগ্যপণ্য, ইস্পাত, ব্যাগ, সিমেন্ট, বস্ত্র, জ্বালানী, আমদানি-রপ্তানি, পরিবহন, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বিভিন্ন খাতে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের আমলে সুবিধাভোগী ব্যবসায়িক গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত এস আলম গ্রুপ সরকার পতনের পর ব্যবসায় পরিচালনায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নামে ও ভিন্ন নামে বিপুল অঙ্কের ঋণ নেওয়া শিল্পগ্রুপটির চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ বিদেশে চলে গেছেন। তার ও পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত শুরু করেছে। বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা শেয়ার হস্তান্তরের উপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো। ইতোমধ্যে বেসরকারি আটটি ব্যাংক এস আলমের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়েছে। ঋণের অর্থ আদায়ে বিভিন্ন ব্যাংক তৎপর হয়েছে। এর মধ্যে অনেক ঋণ আগ থেকে খেলাপি হয়ে পড়লেও ব্যাংকগুলো তা আগে দেখায়নি। উল্টো দিন দিন বেড়েছে গ্রুপটির ব্যাংক ঋণের অঙ্ক। কর ফঁকির অভিযোগ এনে এস আলম গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠানের বিন (বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বার বা ব্যবসায় পরিচিতি নম্বর) বন্ধ রেখেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তাতে গ্রুপটির মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন ঋণ না দেওয়ায় অর্থ সংকট দেখা দেওয়ায় এস আলমের কোম্পানিগুলোর কয়েকটি মাত্র চলছে কোনমতে। কাঁচামাল আমদানি করতে না পারা ও মজুদ ফুরিয়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে গ্রুপের আটটি কোম্পানি গত ২৪ ডিসেম্বর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, যদিও সেগুলো পরে ফের খুলে দেওয়া হয়েছে। গত ৩০ ডিসেম্বর এসব কোম্পানির ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে সম্পত্তি নিলামে তোলা এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি ও এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলসও রয়েছে। গত নভেম্বর পর্যন্ত দুইটি কোম্পানির কাছে জনতা ব্যাংকের মোট বকেয়া দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৭৮০ কোটি ৭৫ লাখ টাকার বেশি। জনতা ব্যাংকের চট্টগ্রাম সাধারণ বীমা ভবন শাখা এ দুইটি কোম্পানির ঋণের বিপরীতে বন্ধক রাখা সম্পত্তি বিক্রি করতে ২৩ জানুয়ারি নিলামের তারিখ রেখে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলের নামে নেওয়া ঋণের বিপরীতে ঢাকার গাজীপুর ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় দুই হাজার ৬৮৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ জমি বন্ধক রাখা হয়েছে। এর মধ্যে গাজীপুর সদরে রয়েছে ২০১ শতাংশ জমি। এস আলম গ্রুপের এ কোম্পানির দুইটি ইউনিটের দৈনিক দুই হাজার ৪০০ টন চিনি পরিশোধনের সক্ষমতা রয়েছে। অন্যদিকে, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলের ঋণের বিপরীতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা ও গাজীপুরের শ্রীপুর মিলিয়ে দুই হাজার ৯৭১ দশমিক ২৭ শতাংশ জমি বন্ধক রয়েছে ব্যাংকের কাছে। যার মধ্যে গাজীপুরে ২৭৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ রয়েছে। নিলামে সেসব জমি ও তার উপর নির্মিত অবকাঠামো বিক্রি করে অর্থ আদায়ের পরিকল্পনা করেছে জনতা ব্যাংক। ডিএসইর তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলসের ঋণের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৪১২ কোটি ১২ লাখ টাকা। পরিশোধ না করায় সুদসহ তা দুই হাজার তিন কোটি ৩৭ লাখ টাকায় উন্নীত হয়। এ কোম্পানি ২০২৩ সালে কর পরবর্তী নিট মুনাফা করেছিল চার কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সবশেষ ২০২৩ সালে বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগের দিন, ২০২৪ সালের ৪ অগাস্ট ২১ টাকা ৭০ পয়সায় হাত বদল হওয়া এ কোম্পানির শেয়ার এখন অভিহিত মূল্য ১০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

জানুয়ারিতে আসছে পৌনে দুই লাখ টন চাল, দাম কমার আশা উপদেষ্টার
বিভিন্ন দেশ থেকে চলতি জানুয়ারি মাসে সরকারিভাবে এক লাখ ৭৫ হাজার টন চাল দেশে আসবে বলে জানিয়েছেন খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। এ চাল এলে বাজারে দাম কমবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। বুধবার (৮ জানুয়ারি) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান উপদেষ্টা। ক্রমেই বাড়ছে চালের দাম- এ নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘বন্যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আমনের ক্ষতি হয়েছে। আমরা চাল আমদানির ব্যবস্থা নিয়েছি। বেসরকারিভাবে চাল আমদানির জন্য শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের চাল আমদানির জন্য উৎসাহিত করছি।’ তিনি জানান, এরই মধ্যে আড়াই লাখ টন চাল আমদানির জন্য দরপত্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। মিয়ানমার থেকে জি-টু-জি (দুই দেশের সরকারের মধ্যে চুক্তি) ভিত্তিতে এক লাখ টন চাল আনা হবে। পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন চাল আনার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। চলতি মাসে সরকারিভাবে এক লাখ ৭৫ হাজার টন চাল আসবে জানিয়ে খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘এ চাল এলে দাম কমবে বলে আশা করি।’ আলী ইমাম মজুমদার আরও বলেন, ‘চালের শুল্ক ছাড় দিয়েছি, ওএমএস কার্যক্রম চলছে, সেটি আরও জোরদার করা হবে। টিসিবির অধীনে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টন চাল দেওয়া হচ্ছে। মার্চ থেকে শুরু হবে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি। এ কর্মসূচির অধীনে ৫০ লাখ পরিবার ১৫ টাকা কেজি দরে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘মজুতবিরোধী আইন প্রয়োগে জেলা প্রশাসক ও ইউএনওদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের পর দায়িত্ব নিয়ে সরকার একটি বিধ্বস্ত প্রশাসন ব্যবস্থা পেয়েছে। এছাড়া, পেয়েছে বিধ্বস্ত পুলিশ, বিধ্বস্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। এগুলো একটা সেটে আনতে সময় লাগে। বাই দিস টাইম এটা চলে এসেছে।’

আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ৪১৩তম পর্ষদীয় সভা অনুষ্ঠিত
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক পিএলসির পরিচালনা পর্ষদের ৪১৩তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (৮ জানুয়ারি) এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। পর্ষদের চেয়ারম্যান খাজা শাহরিয়ারের সভাপতিত্বে সভায় ব্যাংকের সার্বিক ব্যবসায় পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করাহয় এবং বিভিন্ন নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সভায় পর্ষদের পরিচালক মো. শাহীন উল ইসলাম, মো. আব্দুল ওয়াদুদ, এম আবু ইউসুফ, মোহাম্মদ আশরাফুল হাছান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফরমান আর. চৌধুরী, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাফাত উল্লা খান, ব্যাংকের কোম্পানি সচিব মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইঞা ও সংশ্লিষ্ট নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।

গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের অংশীদারিত্ব ২৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার পরিকল্পনা
নোবেলজয়ী ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা কাঠামো ও পর্ষদে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটিতে সরকারের অংশীদারিত্ব ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নতুন অধ্যাদেশের খসড়ায় এ পরিকল্পনার রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। ওই অধ্যাদেশে ২০১৩ সালের গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধনের কথাও বলা হয়েছে। খসড়ায় বলা হয়, ‘গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৮৩ অনুযায়ী, গ্রামীণ ব্যাংকের ২৫ শতাংশ মালিকানা সরকারের এবং বাকি ৭৫ শতাংশ ঋণগ্রহীতাদের। তবে, প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ঋণগ্রহীতাদের কাছে ব্যাংকের ৯৫ শতাংশ শেয়ার হস্তান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে।’নতুন খসড়া অনুযায়ী, ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৩০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হবে। ঋণগ্রহীতারা ধীরে ধীরে মূলধনে অবদান বাড়িয়ে ৯৫ শতাংশ মালিকানা অর্জন করবেন। বোর্ড ঘোষিত যে কোন লভ্যাংশ মূলধনের ভিত্তিতে আনুপাতিকভাবে বিতরণ করা হবে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে সরকার-নিযুক্ত পরিচালকের সংখ্যা তিনজন থেকে কমিয়ে একজনে নামিয়ে আনা এবং ব্যাংকটির চেয়ারম্যান নিয়োগে সরকারের ভূমিকা বাতিলের কথা বলা হয়েছে। নতুন প্রস্তাবে ঋণগ্রহীতারা বোর্ডে ১১ জন পরিচালক নির্বাচনের সুযোগ পাবেন উল্লেখ করে খসড়ায় বলা হয়, ‘চেয়ারম্যান অক্ষম হলে, বোর্ডের সদস্যরা অন্য কোন পরিচালককে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের অনুমোদন দিতে পারবেন। এতে প্রতিষ্ঠানটির স্বায়ত্তশাসন সুদৃঢ় হবে।বর্তমান আইনে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জোবরা গ্রামে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের কোন উল্লেখ নেই। তবে খসড়া অধ্যাদেশে আইনের ধারা ৪-এ একটি ব্যাখ্যা যুক্ত করে এটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নতুন ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প বলতে ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধীনে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার জোবরা গ্রামে পরিচালিত ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমকে বোঝায়। এ প্রকল্প পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পায় এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক এতে অংশ নেয়।’এছাড়া বোর্ডের অনুমোদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মেয়াদ সর্বোচ্চ ৬৫ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে, যদি ব্যাংকের কার্যক্রমে তা প্রয়োজনীয় মনে হয়। পাশাপাশি, নতুন নির্বাচিত পরিচালকেরা তাদের দায়িত্ব গ্রহণ না করার আগ পর্যন্ত নির্বাচিত পরিচালকেরা তাদের পদে থাকবেন। শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে অনেক আলোচনা ও সমালোচনা হয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তবে, ২০১১ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। তার অবসরের বয়স পেরিয়ে গেছে কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল আওয়ামী সরকার।

একনেকে ৪ হাজার কোটি টাকার ১০ প্রকল্প অনুমোদন
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১০ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের খরচ হবে ৪ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। বুধবার (৮ জানুয়ারি) একনেক সভায় অনুমোদন করার জন্য প্রকল্পগুলো উত্থাপন করা হয়। পরিকল্পনা কমিশনে একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ও একনেকের চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সভায় চট্টগ্রাম কর ভবন নির্মাণ প্রকল্পের বিষয়ে আলোচনা হয়, যার মেয়াদকাল জুলাই ২০২৪ থেকে জুন ২০২৮ পর্যন্ত নির্ধারিত। প্রকল্পটির খরচ হবে ৪৩৭ কোটি ৭ লাখ টাকা এবং এটি সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। মোংলা বন্দরে পশুর চ্যানেলে সংরক্ষণ ড্রেজিং প্রকল্পও পরিকল্পনায় রয়েছে, যা জানুয়ারি ২০২৫ থেকে ডিসেম্বর ২০২৯ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ১৫৩৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা, যার মধ্যে ১ হাজার ৩৮৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে এবং ১৫৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে হবে। মোংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জলযান সংগ্রহ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পটি ৭৬৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা থেকে বেড়ে ৯৩৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা হবে। এটি বাস্তবায়ন করছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং মেয়াদকাল জুলাই ২০১৯ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত। এছাড়া, ‘এস্টাবলিস্টমেন্ট অফ গ্লোবাল ম্যারিটাইম ডিসট্রেস অ্যান্ড সেইফটি সিস্টেম অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটেড ম্যারিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম (ইজিআইএমএসএস)’ প্রকল্পটি ১১৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা থেকে বেড়ে ৯৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা হয়েছে, যা নৌপরিবহণ অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি জানুয়ারি ২০১৪ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত মেয়াদি। নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ও বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পটি ২২৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা থেকে বেড়ে ৬১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা হয়েছে, যা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পের মেয়াদকাল জানুয়ারি ২০২০ থেকে জুন ২০২৭ পর্যন্ত। ডাল ও তেলবীজ উৎপাদনের মাধ্যমে টেকসই পুষ্টি নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়) বাস্তবায়িত হবে ২৬৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকায়, যা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) পরিচালনা করবে। প্রকল্পটির মেয়াদকাল নভেম্বর ২০২৪ থেকে জুন ২০২৯ পর্যন্ত। সিলেট বিভাগে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পটি ৪৯৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকায় বাস্তবায়ন করবে বিএডিসি। এর মেয়াদকাল জানুয়ারি ২০২৫ থেকে ডিসেম্বর ২০২৯ পর্যন্ত। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের আয়রন ব্রিজ পুনঃনির্মাণ/পুনর্বাসন (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৭৭৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা হয়েছে, যা বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রকল্পটির মেয়াদকাল জুলাই ২০১৮ থেকে জুন ২০২৬ পর্যন্ত। ডুপিটিলা-১ ও কৈলাশটিলা-৯ নম্বর কূপ (অনুসন্ধান কূপ) খনন প্রকল্পটি সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল) বাস্তবায়ন করবে এবং এর ব্যয় হবে ৬৪৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটির মেয়াদকাল অক্টোবর ২০২৪ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত। শেষে, কনস্ট্রাকশন অফ বাংলাদেশ বুদ্দিস্ট মোনাস্টারি কমপ্লেক্স এট লুমবিনি কনজারভেশন এরিয়া, নেপাল প্রকল্পের ব্যয় হবে ৬৮ কোটি ৮ লাখ টাকা, যা বৌদ্ধধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটির মেয়াদকাল জুলাই ২০২৪ থেকে জুন ২০২৭ পর্যন্ত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নতুন উপদেষ্টা আহসান উল্লাহ
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পেয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির সাবেক নির্বাহী পরিচালক আহসান উল্লাহ। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক সংস্কার কার্যক্রম বিষয়ে গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে সহায়তা করবেন। সোমবার (৭ জানুয়ারি) এই নিয়োগ দেওয়ার পর আহসান উল্লাহ উপদেষ্টা পদে যোগ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে বাংরাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ আদেশে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক সংস্কার কার্যক্রম বিষয়ে গভর্নরের উপদেষ্টা পদে আহসান উল্লাহকে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হল।’ গেল সেপ্টেম্বরে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আরএফ হোসেন গভর্নরের সঙ্গে এক সভা শেষে জানিয়েছিলেন, দেশের ব্যাংক খাতের পরিস্থিতি উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক তিনটি টাস্কফোর্স গঠন করবে। ব্যাংক খাতের পরিস্থিতি উন্নয়নে খেলাপি ঋণ (এনপিএল) ব্যবস্থাপনা, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকাণ্ড শক্তিশালী প্রকল্প ও আইনি কাঠামো বিষয়ে তিনটি আলাদা টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। এর পরপরই ব্যাংক খাত সংস্কারের লক্ষ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই টাস্কফোর্সে আর্থিক খাত বিষয়ে অভিজ্ঞ ছয়জনকে সদস্য করা হয়েছে। টাস্কফোর্সের সমন্বয়ক বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর নিজেই। ব্যাংক খাত সংস্কারে নানা পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে এই টাস্কফোর্স। টাস্কফোর্সের বাকি ছয় সদস্য হলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, সাবেক ডেপুটি গভর্নর মুহাম্মদ এ রুমি আলী, ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান মেহরিয়ার এম হাসান, বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন, জেডএনআরএফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সের উপাচার্য এম জুবায়দুর রহমান ও হিসাববিদ কোম্পানি হুদা ভাসি চৌধুরীর অংশীদার সাব্বির আহমেদ। তারা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। পাশাপাশি ছয় ব্যাংকের নিরীক্ষা শুরু করেছে দুই বিদেশি প্রতিষ্ঠান। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক সংস্কার ও শক্তিশালীকরণের জন্য গভর্নরের উপদেষ্টা পদে আহসান উল্লাহকে নিয়োগ দেওয়া হল। নিয়মিত অবসরের পর তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা পদে কাজ করেছেন এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টে (বিআইবিএম) শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত হন।

গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্তের কারণ জানালেন বাণিজ্য উপদেষ্টা
শিল্পখাতে গ্যাসের দাম ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা করার প্রস্তাবনা প্রসঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ‘গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্তটি সরকারের জন্য সুখকর নয়।’ নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের কথা বলে ২০২৩ সালে নির্বাহী আদেশে শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে তিন গুণ করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম বৃহৎ শিল্পে ১১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়। ক্যাপটিভে ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়। এরপর গত বছর ক্যাপটিভে প্রতি ইউনিটে আরও ৭৫ পয়সা দাম বাড়ানো হয়। তবে দুই বছর পরও শিল্পে গ্যাস সংকট কাটেনি। এ অবস্থায় সরবরাহ বাড়ানোর কথা বলে ফের গ্যাসের দাম আড়াই গুণ বাড়াতে চায় সরকার। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে পেট্রোবাংলার পাঠানো প্রস্তাবনায় প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে পুরো গ্যাস বিল হবে নতুন দামে। পুরোনোদের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় থাকছে প্রস্তাবে। তবে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়ায় বুধবার (৮ জানুয়ারি) ঢাকার কুড়িলে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় গ্যাপএক্সপো-২০২৫’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ক্ষোভ জানান ব্যবসায়ীরা। গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে শিল্প উদ্যোক্তারা কারখানা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কোন আলোচনা না করেই অন্তর্বর্তী সরকার গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করার উদ্যোগ নিচ্ছে। তাহলে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার আর বর্তমানের অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে পার্থক্য কী থাকল?’ আর বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘শিল্পখাতে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে ৭০-৭৫ টাকা কেন করা হবে? এত বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কেন আলোচনা করা হল না?’ এ সময় শেখ বশিরউদ্দীন আশ্বস্ত করে বলেন, ‘গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্তটি সরকারের জন্য সুখকর নয়। তারপরও করতে হবে। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের মাধ্যমে শিল্পখাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে।’

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশে ফের অনিয়ম, পদ খোয়ালেন নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান
পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান ও নিজের জামাতাকে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইসলামী ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির (ইসি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে ইতিমধ্যে তাকে ইসির চেয়ারম্যান পদ থেকে গত সোমবার (৬ জানুয়ারি) সরিয়ে দিয়েছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ইসলামী ব্যাংক পরিচালনায় যাদের স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন সাবেক ব্যাংকার আব্দুল জলিল। তাকে ইসির চেয়ারম্যান করা হয়। সেই সুযোগে তিনি অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন বলে ব্যাংকটির একটি সূত্র জানায়। ইসলামী ব্যাংকের অর্ধেক ঋণ বহুল আলোচিত এস আলম গ্রুপ নিয়ে গেছে। ব্যাংকটির এখন ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা নেই। এমন পরিস্থিতিতে খেলাপি গ্রাহকের নামে নতুন ঋণ অনুমোদন করে ইসির সভা। জানতে চাইলে মো. আব্দুল জলিল সংবাদ মাধ্যমের কাছে নিজের পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান ও জামাতাকে ইসলামী ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের এমডি করার অভিযোগ অস্বীকার করেন। সূত্র জানায়, ইসলামী ব্যাংকের নতুন ঋণ বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও গত ১০ ডিসেম্বর ইসির সভায় ‘ট্রু ফেব্রিকস লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে ২৫০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করা হয়। প্রথমে প্রস্তাবিত ঋণের অঙ্ক ছিল ২২৫ কোটি টাকা। ঋণ অনুমোদনের দিন সকালে একপ্রকার তড়িঘড়ি করে ইসির চেয়ারম্যানের মৌখিক নির্দেশে তা বাড়িয়ে ২৫০ কোটি টাকা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) তথ্যানুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি ঋণখেলাপি ও তাদের কাছে ব্যাংকের ১৮ কোটি টাকা অনাদায়ি। এর পরের সভায় ঋণ অনুমোদন নিশ্চিত করে শাখাকে চিঠি দেওয়ার কথা থাকলেও সে পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়নি। অনুমোদনের পর দিনই তড়িঘড়ি করে ঋণ বিতরণ করা হয়। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ সোমবার ইসির চেয়ারম্যানের পদ থেকে আব্দুল জলিলকে সরিয়ে দেয়। তার পরিবর্তে স্বতন্ত্র পরিচালক মুহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাবকে ইসির চেয়ারম্যান করা হয়েছে। এর আগে তিনি ইসি কমিটির সদস্য ছিলেন। মো. আব্দুল জলিল সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘যে প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেটি এই ব্যাংকের পুরনো গ্রাহক। তাদের কারখানা চলমান রাখতে ঋণের প্রয়োজন ছিল। সেজন্য ব্যাংক ঋণ দিয়েছে। আমি কোন প্রভাব খাটাইনি।’ আব্দুল জলিল এক সময় ইসলামী ব্যাংক ও আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে চাকরি করতেন। এরপর তিনি ট্রু ফেব্রিকস লিমিটেডে কাজ করেন। এ দিকে, আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে গত মাসে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে মশিউর রহমান নামে একজনকে ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজের এমডি করার অভিযোগ উঠেছে। মশিউর রহমান সম্পর্কে আব্দুল জলিলের জামাতা। আব্দুল জলিল ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজেরও চেয়ারম্যান। জামাতাকে ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজের এমডি পদে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগও অস্বীকার করেন আব্দুল জলিল। বলেন, ‘আমার আত্মীয় হলেও তাকে আমি নিয়োগ দেইনি। তিনি ওই পদের জন্য যোগ্য বলে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষই তাকে সেখানে বসিয়েছে। ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তিত হওয়ার পর নামে-বেনামে বিপুল অঙ্কের টাকা বের করে নেয় এস আলম গ্রুপ। গত ১৮ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ও ইসলামী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ সংবাদ সম্মেলনে জানান, এস আলম ইসলামী ব্যাংকের ১৭টি শাখা থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছেন। শুধু টাকাই নেননি, আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ব্যাংকের যে সম্পর্ক ছিল, সেটিও ধ্বংস করে দিয়ে গেছেন।

ব্যাংকে ডলার সংকটের তথ্য সঠিক নয়: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ব্যাংকে ডলারের সংকট আছে বলে যে তথ্য, তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। বুধবার (৮ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর বেগুনবাড়ি দীপিকার মোড়ে টিসিবির স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে পণ্য বিক্রির কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা জানান তিনি। বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, গত বছর আমাদের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে। আমাদের রপ্তানিতে প্রায় ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। ব্যাংকে ডলার সংকট, এ তথ্য সঠিক নয়। ব্যাংকে কোনো ডলার সংকট নেই। ভরা মৌসুমেও চালের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাজারে চালের কোনো ঘাটতি নেই। নিজস্ব মজুদেও ঘাটতি নেই। স্থানীয় উৎপাদনেও ঘাটতি নেই। আমরা আমনের ভরা মৌসুম পার করছি। ঠিক এই মুহূর্তে বাজারে এই দামের কোনো যৌক্তিক কারণ আমরা দেখছি না। এটার কারণ আমরা খোঁজার চেষ্টা করছি, বোঝার চেষ্টা করছি। আমাদের কাছে এটা অযৌক্তিক মনে হচ্ছে। আশা করি, কিছুদিনের মধ্যে দাম নেমে আসবে। শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, এই মুহূর্তে আলুর দাম ৫০ টাকারও কম। কিছুদিন আগেও অপ্রত্যাশিতভাবে আলুর দাম বেড়ে গিয়েছিল। আস্তে আস্তে সহনীয় পর্যায়ে আসছে। আরো সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে। সরকারি পর্যায়ে বছর শেষে কিছু আলু মজুত করব। প্রয়োজন হলে আমদানি করে মজুত করব। গত বছর মূল্য বেশি হওয়ার কারণে আলুর চাষ ব্যাপক হয়েছে। এ বছর স্বাভাবিকভাবে আলু ও পেঁয়াজের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে থাকবে বলে আশা করা করা যায়। তিনি বলেন, শুধু বাজার মূল্য না, কৃষকদের কথাও চিন্তা করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য একটা যৌক্তিক পর্যায়ে বাজার ব্যবস্থা করা। উপদেষ্টা বলেন, আজ থেকে টিসিবির কাগজের কার্ডের যে ব্যবস্থা ছিল, সেই ব্যবস্থাকে বাতিল করা হলো। নতুন স্মার্ট কার্ডেই টিসিবির পণ্য বিতরণ কার্যক্রম হবে। টিসিবির পণ্যের ক্ষেত্রে যে ধরনের নৈরাজ্য এবং দুর্বৃত্তায়ন হয়েছিল, এটাকে ডিজিটাল করার মাধ্যমে যত ধরনের অনিয়ম ছিল তার একটা বড় অংশ দূর করতে পেরেছি। এ প্রক্রিয়া চলমান। এক কোটি কার্ডের মধ্যে প্রথমে ৫৭ লাখ, পরে আরো ৬ লাখ ডিজিটাল কার্ড বাজারে ছেড়েছি। আমরা আরো ৩০ থেকে ৩৫ লাখ কার্ড দিতে পারি। সেটা আমরা নিয়ে আসবো। তিনি আরও বলেন, আমরা টিসিবির ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ এবং আরো অংশগ্রহণমূলক করতে চাই। আমরা আরও বেশি লোকের কাছে এই উপকার পৌঁছে দিতে পারব। অনুষ্ঠানে টিসিবির চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

৬ লাখ কোটি টাকা ছাড়াতে পারে খেলাপি ঋণ: বাংলাদেশ ব্যাংক
দেশের ব্যাংক খাতের জন্য বিষফোঁড়ার মতো একটি বিষয় খেলাপি ঋণ। বর্তমানে এ ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ কোটি টাকা বা তার বেশি বলে ধারণা করা হলেও পুরো তথ্য সামনে এলে তা ৬ লাখ কোটি টাকাও ছাড়াতে পারে। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে এমনই উদ্বেগজনক তথ্য দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা। তিনি বলেন, আগে খেলাপি ঋণের তথ্য লুকানো হতো। এখন লুকিয়ে রাখা সব তথ্য প্রকাশ্যে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, খেলাপি ঋণ ৪ লাখ কোটি টাকা বা তার চেয়ে বেশি। তবে, পুরো তথ্য সামনে এলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ কোটিও ছাড়াতে পারে। হুসনে আরা শিখা বলেন, এই মুহূর্তে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর মতো কোনো চিন্তা আমাদের নেই। তদন্ত শেষ হলে খেলাপি কমানোর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সম্পর্কে জানা যাবে। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক রুলস ফলো করার চেষ্টা করছে। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির এটাও একটি কারণ হতে পারে। তবে তথ্য যাইহোক, এখন আমরা সবই প্রকাশ করে দিচ্ছি, আগে যেটা লুকানো হতো। এদিকে আর্থিক স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে গত পাঁচ মাসের অর্জনেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র। হুসনে আরা শিখা বলেছেন, ভালো দিক হলো, এরইমধ্যে আর্থিক ভীতি কেটে গেছে। গত পাঁচ মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন, ব্যাংকিং টাস্কফোর্স গঠন, ডলার বাজার স্থিতিশীলতা ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ অন্যান্য বিষয়ে বহু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে এসব উদ্যোগের মাধ্যমে কিছু সুফল পাওয়া গেছে, কিছু ফলাফল আসতে আরও সময় লাগবে। তবে, আর্থিক খাতে এখনো পুরোপুরি স্থিতিশীলতা ফিরে আসেনি। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক খুব বেশি খুশি নয়। এছাড়া বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তিনি বলেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ কোন ব্যাংকের মাধ্যমে কী পরিমাণ টাকা কোন দেশে পাচার হয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট জানা যাবে। পাচারের টাকা ফেরত আনা একটি সময় সাপেক্ষ প্রক্রিয়া হলেও নির্ধারিত সংস্থাগুলো বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। নিরাপত্তার স্বার্থেই তারা এ বিষয়গুলো আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেন না।

১০০ টাকার মোবাইল রিচার্জে দিতে হতে পারে ৩০ টাকা কর
মুঠোফোন সেবার ওপর বছর বছর কর বাড়িয়েছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। এখন মুঠোফোনে ১০০ টাকা ভরলে ২৮ টাকার মতো নিয়ে যায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের ১০০ টাকা আয়ের ৫৪ টাকার বেশি কর ও ফি বাবদ চলে যায় সরকারের কোষাগারে। নতুন সরকার আবার মুঠোফোনে কর বাড়ানোর চিন্তা করছে। এনবিআরের একটি সূত্র জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার মুঠোফোন সেবায় নতুন করে ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করতে পারে। বিষয়টি এখন সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিবেচনাধীন। মোবাইল অপারেটররা জানিয়েছে, এই হারে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হলে প্রতি ১০০ টাকা রিচার্জের (মুঠোফোনে ভরা) বিপরীতে সরকার শুধু কর বাবদ পাবে প্রায় ৩০ টাকা। তরঙ্গ, লাইসেন্স ও অন্যান্য ফি তো রয়েছেই। আওয়ামী লীগ সরকার চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে, অর্থাৎ গত জুনে মুঠোফোন সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করেছিল। এখন সম্পূরক শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) ও সারচার্জ মিলিয়ে মোট করভার ৩৯ শতাংশের বেশি। একদিকে সরকার কর বাড়িয়েছে, অন্যদিকে মোবাইল অপারেটরগুলো সেবা মূল্য বাড়িয়েছে। এর মাশুল দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। মুঠোফোন সেবায় কর বৃদ্ধির মানে হলো, গ্রামের দরিদ্র মানুষকে এবং শহরের ধনী ব্যক্তিদের একই হারে কর দিতে হবে; বরং শহরের মানুষের খরচ তুলনামূলক কম। কারণ, তাঁরা ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে কথা বলেন। গ্রামের মানুষের মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহারের হার কম। মোবাইল অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএমএ গত অক্টোবরে এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশে গ্রামে মুঠোফোন ব্যবহারকারীর মাত্র ২৬ শতাংশ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। বাকিরা ব্যবহার করেন ফিচার ফোন, যা বাটন ফোন নামে পরিচিত। জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের নীতি পরামর্শক (সমন্বয় ও সংস্কার) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, মুঠোফোন সেবায় কর বাড়ানোর বিষয়টি মন্ত্রণালয় থেকে পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ করা হবে। সরকার মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কমানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। সরকার এমন একটি সময়ে মুঠোফোন সেবায় আবার কর বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে, যখন দেশে নিত্যপণ্য ও সেবার দাম চড়া। মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি। অপারেটররা বলছে, জীবনযাত্রার ব্যয়, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও অন্যান্য কারণে মুঠোফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কমছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর মাসে মুঠোফোনের গ্রাহক দাঁড়ায় ১৮ কোটি ৮৭ লাখ (এক ব্যক্তির একাধিক সিম থাকতে পারে), যা গত জুনের চেয়ে ৭৩ লাখ কম। অন্যদিকে জুনের চেয়ে মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯৭ লাখ কমে ১৩ কোটি ২৮ লাখে নেমেছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব মনে করেন, জুয়া, হুন্ডি ও বহুস্তর বিপণনের (এমএলএম) সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের অনেকে জড়িত ছিল। ওই অপরাধী চক্র পালিয়ে যাওয়ায় গ্রাহক কমে যেতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল কেবলের (আইটিসি) মাধ্যমে আসা কিছু ট্রাফিক পর্যবেক্ষণের বাইরে থেকে যেতে পারে, যা ইন্টারনেট ব্যবহার কমিয়ে ফেলার ওপর প্রভাব রাখতে পারে। আওয়ামী লীগ সরকার চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে, অর্থাৎ গত জুনে মুঠোফোন সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করেছিল। এখন সম্পূরক শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) ও সারচার্জ মিলিয়ে মোট করভার ৩৯ শতাংশের বেশি। যদিও মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের মহাসচিব মোহাম্মদ জুলফিকার মনে করেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং চলতি জাতীয় বাজেটে শুল্ক ও সিমকর বাড়ানোর কারণে চার-পাঁচ মাস ধরে গ্রাহক কমছে। তিনি বলেন, আবার কর বৃদ্ধি করা হলে গ্রাহকেরা কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহার কমিয়ে দিতে পারেন। গ্রাহকেরা ব্যবহার কমিয়ে দিলে সরকারের রাজস্বেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশ আগে থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারে পিছিয়ে। জিএসএমএ গত অক্টোবরের প্রতিবেদনে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার নিম্নমধ্যম আয়ের ১২টি দেশ—বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মিসর, কেনিয়া, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, ইথিওপিয়া, উগান্ডা, গুয়াতেমালা ও মেক্সিকোর মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার-সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দিক নিয়ে তথ্য তুলে ধরে। সেখানে দেখা যায়, ইন্টারনেট ব্যবহারে ওই সব দেশের মধ্যে শুধু ইথিওপিয়া বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে।

এবার দেশীয় ফ্রিজ এসি মোটরসাইকেল শিল্পে কর দ্বিগুণ করল সরকার
খুচরা যন্ত্রাংশসহ পূর্ণ ফ্রিজ, রেফ্রিজারেটর, মোটরসাইকেল, এয়ার কন্ডিশনার ও কম্প্রেসার তৈরির প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট কর বৃদ্ধি করে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে দেশীয় মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, এসি ও কম্প্রেসারের দাম বাড়তে পারে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান সই করা প্রজ্ঞাপন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, খুচরা যন্ত্রাংশসহ পূর্ণাঙ্গ ফ্রিজার, রেফ্রিজারেটর, মোটরসাইকেল, এয়ারকন্ডিশনার ও কম্প্রেসর তৈরির ক্ষমতাসম্পন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কেবল এই শিল্পের ব্যবসা থেকে অর্জিত আয়ের উপর প্রদেয় আয়কর হার ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো। বর্তমানে এ ধরনের শিল্প তাদের আয়ের উপর ১০ শতাংশ কর দিচ্ছে। এ বিষয়ে এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশে উৎপাদিত মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, এসি ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স পণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে কিছু পণ্য বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে এসব ভারী শিল্প দেশে স্থাপিত হয়েছে। এসব শিল্প স্থাপনে সরকার বিপুল পরিমাণ কর, ভ্যাট ছাড় দিয়েছে। করছাড় দেওয়ার ফলে এসব শিল্প এখন অনেকটাই স্বাবলম্বী হয়েছে। বর্তমানে এ ধরনের শিল্প তাদের আয়ের উপর ১০ শতাংশ কর দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সাধারণত এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ২০-২২ শতাংশ কর্পোরেট কর দিতে হয়। দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় এবং তাদের স্বাবলম্বী করতে এতদিন তাদের কর কমানো ছিল। ওটাই বাড়ানো হয়েছে। মানে করছাড় প্রত্যাহার করে নিলো এনবিআর। এনবিআরের ওই আদেশ ২০২৫-২০২৬ করবর্ষ থেকে কার্যকর হবে, যা ২০৩২ সালে ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকিবে। প্রজ্ঞাপনে বেশকিছু শর্তের কথা বলা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- # শিল্প প্রতিষ্ঠানটি কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ এর অধীন নিবন্ধিত হতে হবে। # শিল্প প্রতিষ্ঠানটিকে আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ৭৬ এর উপ-ধারা (৫) এবং (৬) সহ অন্যান্য বিধানাবলি পরিপালন করতে হবে। # শিল্প প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব মোল্ড ও ডাইস তৈরির ক্ষমতা থাকতে হবে। # শিল্প প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব পলি ইউরিথিন ফোমিং প্ল্যান, পাউডার কোটিং প্ল্যান্ট এবং সক্রিয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট এর ব্যবস্থা থাকতে হবে। # শিল্প প্রতিষ্ঠানটি এনবিআরের অনুমোদিত হতে হবে এবং বিদ্যমান ব্যবসার পুনর্গঠন বা এইরূপ ব্যবসা বিভাজন দ্বারা গঠিত শিল্প প্রতিষ্ঠান অথবা বাংলাদেশে বিদ্যমান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মেশিনারি অথবা স্থাপনা হস্তান্তরের মাধ্যমে গঠিত কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান হতে পারবে না। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী অব্যাহতিপ্রাপ্ত কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান শর্ত পরিপালনে ব্যর্থ হলে এনবিআর প্রদত্ত অনুমোদন প্রত্যাহার করতে পারবে। এনবিআর সূত্রে আরো জানা যায়, খুচরা যন্ত্রাংশসহ পূর্ণ ফ্রিজ, রেফ্রিজারেটর, মোটরসাইকেল, এয়ার কন্ডিশনার ও কম্প্রেসার তৈরির প্রতিষ্ঠানকে কর ছাড় দিয়ে ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর এনবিআর থেকে আদেশ জারি করা হয়েছে। যাতে শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে ২০৩২ সালের ৩০ জুন পর্যআন্ত কর হ্রাস করে ১০ শতাংশ করা হয়। উৎপাদনের তারিখ হতে এসব প্রতিষ্ঠান তাদের আয়ের উপর ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হতো। এর আগে ২০০৯ সাল থেকে এসব খাতকে করছাড় দিয়ে আসছে এনবিআর। সে সময় ৫ শতাংশ হারে কর দিতো হতো। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ফ্রিজ ও এসির কম্প্রেসার বাজারজাত করে ওয়ালটন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি দেশীয় ফ্রিজের বাজারে মার্কেট লিডার। এসি তৈরিতেও তারা শক্ত স্থান লাভ করছে। দেশে মোটরসাইকেল খাতে নতুন করে হোন্ডা, টিভিএস, হিরো ও রানার – এ চারটি কোম্পানিতে ম্যানুফেকচারিং শুরু করেছে, যেখানে বিদেশি বিনিয়োগও আছে। এছাড়া বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী তৈরি করছে। যার ফলে আমদানি নির্ভরতা প্রতিনিয়ত কমছে। অতিরিক্ত করারোপের ফলে এসব উদীয়মান শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

টিসিবির ক্রয় কার্যক্রম আরও বেশি স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ক্রয় কার্যক্রমকে আরও বেশি স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে টিসিবির স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডের পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা জানান তিনি। বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, টিসিবি বছরে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার পণ্য ক্রয় করে। বড় ক্রেতার পাশাপাশি টিসিবি বছরে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদান করে। আমরা টিসিবির ক্রয় কার্যক্রমকে আরও বেশি স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক করতে চাই। সেই সঙ্গে আরও বেশি ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ চাই। তিনি বলেন, পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে আমারা যদি ১২ হাজার কোটি টাকার মধ্যে এক হাজার কোটি টাকাও বাঁচাতে পারি, তবে আরও বেশি মানুষের কাছে এই উপকার পৌঁছে দিতে পারবো। এ সময় রমজানকেন্দ্রিক টিসিবির প্রস্তুতিগুলোয় সাধারণ মানুষের জীবন আরও সহজ হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বুধবার থেকে শুরু হওয়া ভর্তুকি মূল্যে এই পণ্য বিক্রির কার্যক্রমের মাধ্যমে সারা দেশের এক কোটি স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে পণ্য বিক্রি করবে টিসিবি। এই দফায় একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ১০০ টাকা দরে ২ লিটার ভোজ্যতেল (সয়াবিন বা কুঁড়ার তেল), ৬০ টাকা দরে ২ কেজি মসুর ডাল ও ৭০ টাকা দরে ১ কেজি চিনি কিনতে পারবেন। তবে গত বছর টিসিবির পণ্যের তালিকায় চাল থাকলেও এই দফায় চাল বিক্রি করছে না সরকারি সংস্থাটি।

শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার পরিবারের সব সদস্যের ব্যাংক হিসাব তলব
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা এবং তাদের পরিবারের সব সদস্যদের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ (বিএফআইইউ) দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নির্দেশনা পাঠিয়ে এই তথ্য চেয়েছে। এর আওতায় শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন (পুতুল), ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ (জয়), শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক (ববি) এবং দুই মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিকের হিসাবের তথ্য চাওয়া হয়েছে। এই তলবের উদ্দেশ্য হলো, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা কোনো আর্থিক অপরাধে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা। বিএফআইইউ জানিয়েছে, এটি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা অনুযায়ী কার্যক্রম চলছে। সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘ফিন্যান্সিয়াল টাইমস’ এবং ‘সানডে টাইমস’-এ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যেখানে বলা হয় যে, টিউলিপ সিদ্দিককে বিনা মূল্যে ফ্ল্যাট দেয়া হয়েছিল, যা ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে সংযুক্ত আবাসন ব্যবসায়ী আবদুল মোতালিফের মাধ্যমে হয়েছিল। এর মধ্যে একটি ফ্ল্যাট ছিল উত্তর লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড এলাকায়, যেটি টিউলিপ সিদ্দিকের খালা শেখ হাসিনার এক মিত্রের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছিল। শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন এবং টিউলিপ সিদ্দিক তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের জন্য যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা লাউরি ম্যাগনাসের কাছে চিঠি লিখেছেন।

পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ও উন্নয়নের রোডম্যাপ বিষয়ে এক গোলটেবিল বৈঠক
নিকুজ্ঞে ডিএসই টাওয়ারে পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ও উন্নয়নের রোডম্যাপ বিষয়ে এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) গোলটেবিল বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ ও বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন৷ উল্লেখ্য যে, এই প্রথম সরকারের কোন অর্থমন্ত্রী বা অর্থ উপদেষ্টা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে আসেন। বৈঠকে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসি’র মাননীয় চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ৷ গোলটেবিল বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন ডিএসই’র চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম৷ আরো উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনারবৃন্দ, বাংলাদেশ ব্যাংক, ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ, ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড, ডিএসই ব্রোকারস এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন, অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ড এবং ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি’র শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধিবৃন্দ। বৈঠকের শুরুতেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম স্বাগত বক্তব্য ও পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ও উন্নয়নের রোডম্যাপ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন৷ স্বাগত বক্তব্য ও মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, আজ ডিএসই’র জন্য একটি বিশেষ দিন, কারণ এই প্রথম কোন অর্থমন্ত্রী বা অর্থ উপদেষ্টা ডিএসইতে এসেছেন। আজকের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হলো পুঁজিবাজারকে কিভাবে বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষনীয় করা যায়। বিগত দিনে অদক্ষতা এবং দুর্নীতির কারণে আমাদের পুঁজিবাজার সংকুচিত হয়ে আছে এবং আমাদের অর্থনীতির জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারছে না। কিন্তু বর্তমান সরকার আসার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা, স্টক এক্সচেঞ্জ ও মার্কেট ইন্টারমিডিয়ারিজ একযোগে কাজ করছে। আমরা আশা করছি পুঁজিবাজার খুব শীঘ্রই তার সুফল ভোগ করবে।তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ডিএসই’র মার্কেটক্যাপের ৫৪% এখনও ইক্যুইটি। এখানে এখনও তালিকাভুক্ত কর্পোরেট বন্ড এবং মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সংখ্যা অনেক কম। কর্পোরেট বন্ড ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সংখ্যা বৃদ্ধি করা এখন একটি চ্যালেঞ্জের বিষয়। আমরা হয়তো নতুন প্রোডাক্টের দিকে যাব, কিন্তু মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং বন্ড মার্কেট যেহেতু তেমন কার্যকর হয়নি, সেহেতু নতুন প্রোডাক্টের দিকে এখনই নজর না দিয়ে এগুলোর উন্নয়নের জন্য আরও কাজ করা উচিত। গত ১০ বছরে আইপিও’র মাধ্যমে প্রতিবছর গড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলন করা হয়েছে । ফ্লোর প্রাইস আরোপের মতো কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আশা করি রেগুলেটর ভবিষতে এই ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকবে।তিনি আরও বলেন, আমাদের মার্কেট ক্যাপ টু জিডিপি রেশিও পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় অনেক কম। এটিকে বৃদ্ধি করার উপায় বের করতে হবে। আমাদের মার্কেটের আকারের তুলনায় ইন্টারমিডিয়ারিজ এর সংখ্যা অনেক বেশি । যার ফলে রেগুলেটরদের পক্ষে তাদের মনিটর করা অনেক কঠিন। শিল্প ঋণের বিষয়ে ডিএসই’র চেয়ারম্যান জনাব মমিনুল ইসলাম বলেন, দেশের শিল্প উদ্যোক্তারা দীর্ঘমেয়াদী শিল্প ঋণের জন্য ব্যাংকের দ্বারস্থ হচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পলিসি ফ্রেমওয়ার্কের সংশোধনের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের পুঁজিবাজার মুখী করার উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। অতীতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুঁজিবাজারে যে অযাচিত হস্তক্ষেপ করেছে ভবিষ্যতে এ রকম যাতে না হয় সেজন্য রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্কে সংস্কার করতে হবে। রেগুলেটর অপারেটরের ভূমিকায় চলে আসলে এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম সংকুচিত হয়ে যায়। ভাল প্রতিষ্ঠানগুলো পুঁজিবাজারে না আসার কারণ খুঁজে এটি থেকে উত্তরণের জন্য কাজ করতে হবে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনগুলোর বিশ্বস্ততা বৃদ্ধি করার জন্য এফআসির ভূমিকা রাখতে হবে। আমাদের মার্কেট ইন্টারমিডিয়ারিজের ক্যাপাসিটি ও গভার্ন্যান্সকে শক্তিশালী করতে হবে। ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স এর সমস্যা সমাধানের জন্য আমি ডিএসই 'র পক্ষ থেকে অর্থ উপদেষ্টা ও এনবিআর এর চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানাই । এছাড়াও আমাদের বর্তমানের পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা ফেরানোর জন্য ফিসক্যাল পলিসি সাপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ্। রিজিওন্যাল মার্কেটের যে সমস্ত বিষয় প্রচলিত রয়েছে সেগুলোতে অনুসরণ করে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করতে চাই।বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা যদি তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করেন তাহলে বিএসইসি’র একার পক্ষে পুঁজিবাজার সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। আমাদের যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলো আমরা আমাদের ট্রান্সফোর্স-এর সামনে রেখেছি। আমরা নিজেরা সব কিছু করার চেষ্টা করছি না। রাষ্ট্রের যে সংস্কার হচ্ছে তার অংশ হিসেবে আমরা কাজ করছি। আমরা মন্ত্রণালয়ের সাথে আইপিও সহজিকরণ, মিউচ্যুয়াল ফান্ড, মার্জিন লোন সংশোধন এবং নেগেটিভিটি নিয়ে কাজ করছি। তিনি আরও বলেন, বিএসইসি’র মূল কাজ হওয়া উচিত দীর্ঘমেয়াদি পলিসি প্রণয়ন এবং এর প্রয়োগ। ঠিক সেটাতেই আমরা মনোনিবেশ করতে করছি। তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত চারমাসে আমরা বাজারে ইন্টারমিডিয়ারিজদের হস্তক্ষেপ করিনি। বরং তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির উপর জোড় দিয়েছি। আমরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় “The scope of the role of the capital market” বাস্তবায়ন করতে চাই। একটা কোম্পানি ফাইন্যান্সিং-এ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে, কতটা মানি মার্কেটে থেকে মূলধন সংগ্রহ করবে, আর কতটা ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে মূলধন সংগ্রহ করবে, সেই বিষয়টার স্টাকচারটা এখনো তৈরি হয়নি। মানি মার্কেটের স্ট্যাবিলিটির জন্য ক্যাপিটাল মার্কেট প্রয়োজন। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে আমরা আলোচনা করছি। একটা কোম্পানির লংটার্ম ফাইন্যান্সিং প্রয়োজন হলে, সেটি পুঁজিবাজার থেকে নিতে হবে। এই কাজ করতে পারলে আমাদের সমস্যা অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে রেগুলেটরি কমপ্লায়েন্সের জন্য এক্সটা কস্ট থাকবে, সেটার জন্য নন-লিস্টেড কোম্পানি সাথে ট্যাক্স ডিফারেন্সটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ ব্যাপারে এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা প্রয়োজন। বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, বিএসইসি, ইডরা, এফআরসি, আইসিবিসহ সংশ্লিষ্ট স্ট্যাকহোল্ডাররা যদি একটা সিংক্রোনাইজেশনের মধ্যে না চলে, ক্যাপিটাল মার্কেট বা মানি মার্কেট কোনটাই সঠিকভাবে কার্যকর হবে না।অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক (Nazma Mobarek) বলেন, এখানে মাননীয় অর্থ উপদেষ্টাসহ এনবিআর, এফআরসি, ইডরা, মার্চেন্ট ব্যাংক, আইসিবি সহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারের উপস্থিতিতে এ ধরনের একটি সম্মিলিত আলোচনা এবং সকলের মতামত পাওয়া সত্যিকার অর্থেই একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান যেমনটা বলেছেন যে, এই সময়টা হচ্ছে সংস্কারের সময়। এখন পর্যালোচনার সময় এসেছে কোথায় আমাদের গ্যাপ আছে, কোথায় চ্যালেঞ্জ আছে, এগুলো মোকাবেলা করার জন্য কি কি কৌশল অবলম্ভবন করা যায়, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া। ব্যাংকগুলো সর্ট টার্ম ডিপোজিট নিয়ে লং টার্ম ঋণ দিচ্ছে। এখানে ম্যাচ্যুউরিটি মিসম্যাচ হচ্ছে। এই ম্যাচ্যুউরিটি মিচম্যাচের কারণে আমাদের ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আমাদের ব্যাংকগুলোকে হেলদি রাখার জন্য লংটার্ম ফাইন্যান্সিং ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে করতে হবে। এজন্য আমাদের বিএসইসি’র চেয়ারম্যান ইতমধ্যেই বলেছেন যে, আমাদের ফিসক্যাল পলিসি সাপোর্ট দরকার। আমরা দেখেছি লিস্টেড কোম্পানি এবং নব-লিস্টেড কোম্পানি এদের মধ্যে ট্যাক্স ডিফারেন্স খুব একটা বেশি না। এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহ কম থাকে। এখানে এনবিআর কর্তৃপক্ষ আছেন, তারা দেখতে পারে কিভাবে ট্যাক্স বেনিফিট দিয়ে কোম্পানিগুলোর আগ্রহ বাড়ানো যায়। আমরা মনে করছি, এখানে আলোচনার মাধ্যমে একটা যৌক্তিক অবস্থানে পৌঁছাতে পারবো। এছাড়াও একটা কোম্পানিকে আইপিও’র মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসতে অনেক প্রসিডিউর, কমপ্লায়েন্স এবং দীর্ঘপক্রিয়া পার করতে হয়। তাই এই পক্রিয়া সহজ করে কিভাবে ভালো কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা যায় সেদিকেও আমরা নজর দিতে পারি।ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, বাজারের মূল সমস্যা হচ্ছে স্বচ্ছতার অভাব, জবাবদিহিতার অভাব, বিনিয়োগযোগ্য সিকিউরিটিজ এর অভাব। এখানে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করলে ১০ থেকে ২০টার বেশি সিকিউরিটিজ পাওয়া যাচ্ছে না। আর একটা বিষয় হচ্ছে প্রয়োজনের বেশি মার্কেট ইন্টারমিডিয়ারিজ। বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্টক এক্সচেঞ্জ চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জ যার ট্রেড ভলিউম ১০ থেকে ২০ কোটি টাকা। তাহলে আন্তর্জঅতিক পর্যায়ে এর কোন মূল্য থাকে না। গত ১৫ বছরে স্টক এক্সচেঞ্জকে ডিসফাংশনাল করা হয়েছে। যার হাতিয়ার হিসেবে ছিলো ডিমিউচ্যূয়ালাইজেশন স্কিম ও ডিমিউচ্যুয়ারাইজেশন এ্যাক্ট। যখন এটা করা হয় তখন বলা হয়েছিল ৫ বছর পর এটা রিভিউ করা হবে। কিন্তু আজকে ১০ বছরের উপরে হয়ে গেছে কিন্তু এই আইনের কোন রিভিউ করা হয়নি। আমরা বিশেষভাবে অনুরোধ করবো এই ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইনটা রিভিউ করার জন্য। আমরা বিএসইসিকে একটা উচ্চ পর্যায়ের পলিসি মেকার হিসেবে দেখতে চাই।বিশ্বে অন্যান্য দেশে যেমন আমেরিকা, জাপান, চীন ইন্টারমিডিয়ারিজদের দিয়ে একটা অর্গানাইজেশন গঠন করা হয়েছে। যা মার্কেট ইন্টারমিডিয়ারিজদের গভার্ন করে। ফিসকাল এবং মনিটরিং পলিসির ক্ষেত্রে বিএসইসি’র সময় অনেক বেশি লাগে। এক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জের যদি আমরা ফাংশনাল করতে পারি, তাহলে এই কাজগুলো স্টক এক্সচেঞ্জই করতে পারে। ইন্ডিয়াতে গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মার্কেট ক্যাপ হয়েছে সাপ্লাই চেইনের কারণে। তারা বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে তাদের স্টক এক্সচেঞ্জগুলোতে তালিকাভুক্ত করতে পেরেছেন। বর্তমানে আমাদের দেশের মাল্টন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করার একটা সুযোগ রয়েছে। যা কোন পলিটিক্যাল গভর্নমেন্ট দ্বারা আদায় করা প্রায় অসম্ভব। তাই মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিসহ সরকারের কাছে যে শেয়ারগুলো রয়েছে তা পুঁজিবাজারে আনার এখনই উপযুক্ত সময়। যা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করবে।বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মাজেদা খাতুন বলেন, আমাদের দীর্ঘমেয়াদে অর্থায়নের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার থেকে এক শতাংশের কম অর্থায়ন হয়। সরকারের অর্থায়ন পলিসিতে পুঁজিবাজারকে অন্তর্ভূক্ত করা হয় তাহলে অনেক ভাল হবে। বর্তমানে আরজেএসসিতে দুই লক্ষের অধিক কোম্পানি রেজিস্ট্রার্ড রয়েছে, সে কোম্পানিগুলোর কাজ করার ক্ষেত্রে মার্চেন্ট ব্যাংকে সুযোগ করে দিতে হবে। এছাড়াও সকল পলিসি জনস্বার্থে বা বৃহত্তর স্বার্থে নেয়া প্রয়োজন। পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য গভর্মেন্ট বন্ড ইস্যু করা গেলে এক্ষেত্রে ব্যাংকিং সেক্টরে কম চাপ পড়বে। বিনিয়োগকারীরা যাতে বিভিন্ন প্রোডাক্ট ইস্যু করার ক্ষেত্রে এনবিআর থেকে কোন পলিসি সাপোর্ট দেয়া যায় তবে বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবে। এছাড়াও পুঁজিবাজারে ভাল কোম্পানি বৃদ্ধি করতে হবে একই সাথে নেগেটিভ ইক্যুইটি নিয়ে কাজ করতে হবে।বিআইপিবি এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির সিইও শহীদুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশের কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনগুলোকে বিশ্বাস করা যায় না। যে কারণে সরকার ট্যাক্স পায়না সে কারণে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন হয় না। আমাদের রেগুলেটরদের যে কাজ করা প্রয়োজন সেগুলো করা হয় নি। রেগুলেটরদের তাদের নির্ধারিত কাজ করতে হবে এতে মার্কেট কি হবে এটি দেখার বিষয় নয়। এ কাজগুলো করা হয়নি বলে আজ এ অবস্থা। আজকে সঠিক কাজ অর্থাৎ এনফোর্সমেন্ট অ্যাকশন নিয়ে কয়েকবছর পর বাজার ভাল হবে। আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। আর যেসব ভুল হয়েছে সেগুলো সংশোধন করতে হবে।আইসিবি’র চেয়ারম্যান আবু আহমেদ বলেন, আইসিবি একটি সরকারি ইনভেস্টমেন্ট প্রতিষ্ঠান। এটির একটি জবাবদিহিতা থাকা উচিত। ১৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠানটি অনেক রিসোর্সফুল ছিল। কিন্তু এটি কেন দুর্বল হলো তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। আমি নমনীয়ভাবে আর্থিক উপদেষ্টাকে আইসিবি’র অবস্থান তুলে ধরলাম। আমি বললাম আইসিবিকে যদি বাঁচাতে হয়, তবে কিছু টাকা দেন। একটি ওয়ার্ক প্ল্যানের মাধ্যমে আইসিবিকে তিন হাজার কোটি টাকা দেয়া হলো। কিন্তু এর মধ্যে দুই হাজার কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি এক হাজার কোটি টাকা থেকে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছি। আমরা শুধুমাত্র বেস্ট অব দি বেস্ট শেয়ার কিনছি এবং এটি আলাদা বিও একাউন্টে কেনা হচ্ছে। এছাড়া আইসবির ৯,৬০০ কোটি টাকার উপরে ঋণ আছে, সেগুলো আইসিবি বন্ড ইস্যু করেছে অথবা সরকারের বিভিন্ন খাত ঋণ নিয়েছে। আমাদের বাজারে সাপ্লাই বাড়াতে হবে, কোয়ালিটি সম্পন্ন শেয়ার আনতে হবে। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। তাদেরকে ঠিক মতো এপ্রোচ করলে আশা করি তারা তালিকাভুক্ত হবে।পুঁজিবাজার বিষয়ক ট্রাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান এ. কে. এম মাজেদুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বেশি কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা। এই অব্যাহতির পেছনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের অবদান রয়েছে। এই অব্যাহতি যেমন দিতে হবে, একইসাথে ট্যাক্স আদায়ও করতে হবে। এখন আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের কাজ চলছে। তাই এই বিষয়টি নজরে রাখতে হবে। একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি ৫ শতাংশ ট্যাক্স ডিফারেন্স এর জন্য পুঁজিবাজারে আসতে চাইবে না। তাই এই ট্যাক্স ডিফারেন্স কমপক্ষে ১০ শতাংশ করা প্রয়োজন। অনেক আগে এফডিআই-তে ৩২ টা কোম্পানি একটা তালিকা করা হয়েছিল। সেখানে গভার্নমেন্টের কিছু কোম্পানিকে ডাইরেক্ট লিস্টিং এর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা কথা বলা হয়েছিল। সে বিষয়ে আমাদের নজর দিতে হবে। বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রসঙ্গে জনাব মাজেদুর রহমান বলেন, ফরেন ইনভেস্টরদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ডাবল টেক্সেশন (double taxation) বিষয়টা নজর দিতে হবে। আমাদের ফান্ডামেন্টাল যে ইস্যুগুলো আছে, সেগুলো নিয়ে ট্রান্সফোর্স কাজ করছে। আমাদের রিটেইল ইনভেস্টরা না জেনে বুঝে বিনিয়োগ করে ক্ষতির সম্মুখিত হয়। সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে। এই বিনিয়োগগুলো যদি মিউচ্যুয়াল ফান্ড বা এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট এর মাধ্যমে আসে, সেই বিষয়ে আমরা আস্তে আস্তে কমিশনের মাধ্যমে পদক্ষেপ নিতে পারি। সিসিবিএল এবং সিডিবিএল কে একত্রীকরণ করে তাদের কার্যক্রম কিভাবে আরও কার্যকর করা যায়, সে ব্যাপারেও কাজ করা যেতে পারে। তিনি আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটে ৬০০ এর বেশি ইন্টারমেডিয়ারিজ আছে। এক্ষেত্রে আর যেন অতিরিক্ত লাইসেন্স ইস্যু করতে না পারা যায় তার একটি প্রদ্ধতি প্রনয়নের ব্যাপারে নজর দেয়া উচিত বলে উল্লেখ করেন।।ডিএসই'র পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, বিএসইসির বর্তমান নেতৃত্বের কারণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ একটি দক্ষ বোর্ড পেয়েছে। বর্তমান কমিশনের বয়স মাত্র তিন থেকে চার মাস। সততার জায়গায় যদি সঠিকভাবে কাজ করে, তবে বাজারের উন্নয়ন তরান্বিত হবে। দক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে যদি বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিষয় বিবেচনা করা হয়, তাহলে পুঁজিবাজার দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘুড়ে দাঁড়াবে।বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রণালয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, শেয়ারবাজারে কিছু সংস্কার হচ্ছে। সব সংস্কারেরই কিছু যন্ত্রণা থাকে। তাই শেয়ারবাজারের সংস্কার কার্যক্রমেরও কিছু যন্ত্রণা সাময়িকভাবে সইতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান হচ্ছে শেয়ারবাজারকে শক্তিশালী করা। ব্যাংকের ঋণনির্ভর অর্থনীতি টেকসই কোনো অর্থনীতি নয়। ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে শিল্প গড়লে অনেক সময় টাকা ফেরত না দিলেও চলে। এ কারণে আমাদের দেশে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণনির্ভরতা বেশি।ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের শেয়ারবাজারের গভীরতা অনেক কম। ভালো ভালো কোম্পানিগুলো এই বাজারে আসতে খুব বেশি আগ্রহী নয়। এসব কোম্পানির মালিকেরা ভাবেন, ছেলে হবে পরিচালক, বউ চেয়ারম্যান। ব্যবসায় যা মুনাফা হবে, তা নিজেরা ভোগ করবেন। শেয়ারবাজারে আসা মানেই ভালো ব্যবস্থাপনা, করপোরেট সুশাসন ইত্যাদি উন্নত হওয়া। কিন্তু অনেকে এসব বিষয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চান না। তাই তাঁরা বাজারে আসতে আগ্রহী নন। কিন্তু সময় এসেছে বাজারের গভীরতা বাড়ানোর। এ জন্য ভালো ভালো কোম্পানি বাজারে আনতে হবে। আর তার জন্য করের সুবিধাসহ সরকারি যেসব নীতি–সহায়তা দরকার, সেসব বিষয় সরকার বিবেচনা করবে। কিছু সরকারি কোম্পানি বাজারে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দেশে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়েরও বড় সমস্যা রয়েছে। সেই সঙ্গে দলগতভাবে দেশের কল্যাণে কাজ করার উদ্যোগেরও ঘাটতি আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির মধ্যে সমন্বয় বা যোগাযোগ আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। শেয়ারবাজারের স্বার্থে এই যোগাযোগ ও সমন্বয় বাড়ানোর পাশাপাশি দলগতভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে বাজার–সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে।’শেয়ারবাজারে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ বাড়াতে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ডিএসইসহ শেয়ারবাজার–সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ভারতের শেয়ারবাজারে দেশটির প্রবাসীদের বড় ধরনের বিনিয়োগ রয়েছে। আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেও অনেকের বিনিয়োগের সামর্থ্য রয়েছে। তাঁদের বিনিয়োগের জন্য উৎসাহিত করতে হবে। আর এ জন্য বাজারকে আকর্ষণীয় করতে হবে।’এ সময় ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘শেয়ারবাজারে সূচক বাড়লেই সবাই খুশি হন। কিন্তু বাজার যখন বেশি ওপরের দিকে যায়, তখন একটু সতর্ক হতে হবে। অনেক সময় নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভুল নীতির কারণেও শেয়ারবাজারে সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ব্যাংকগুলো বাজারে বেশি বিনিয়োগ করায় বাজার অনেক ওপরে উঠে গিয়েছিল। এরপর হঠাৎ ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগ কমিয়ে আনার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’পরিশেষে, বিএসইসি’র চেয়ারম্যান, ফিনান্সিয়াল ইন্সটিটিউড ডিভিশন-এর সচিব, ডিএসই’র চেয়ারম্যান এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারগণ পুঁজিবাজার উন্নয়নে বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন।

টিউলিপসহ সাতজনের ব্যাংক হিসাব তলব
যুক্তরাজ্যের সিনিয়র ট্রেজারি মন্ত্রী টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিকের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। একই সাথে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল ওে আজমিনা সিদ্দিকের ব্যাংক হিসাবের সব লেনদেনের তথ্য চেয়েছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থাটি। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) ব্যাংকগুলোর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে এসব তথ্য চাওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় হিসাব তলব করা ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট তথ্য বা দলিল যেমন হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী ইত্যাদি চিঠি দেওয়ার তারিখ থেকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে বিএফআইইউতে পাঠানোর জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলা হয়েছে। চিঠিতে তলব করা ব্যক্তির নাম, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দেওয়া হয়েছে।

শিল্প খাতে গ্যাসের দাম দেড়গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব
শিল্প খাতে গ্যাসের দাম ফের বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে দেড়গুণ বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা করার প্রস্তাব করেছে প্রতিষ্ঠানটি। জ্বালানি বিভাগের অনুমোদনের পর গতকাল সোমবার (৬ জানুয়ারি) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে এ প্রস্তাব করেছে পেট্রোবাংলা। কমিশন সভায় বিইআরসি বাড়তি দামের অনুমোদন দিলেই বাড়বে গ্যাসের দাম। তবে এ বিষয়ে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) বিকালে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সচিব মো. খলিলুর রহমান খান বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘চলতি মাসের কমিশন সভা হয়েছে। ২ ফেব্রুয়ারির পরবর্তী কমিশন সভা বসবে। সেখানে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ এর আগে গতকাল সোমবার বিইআরসিকে পাঠানো পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে বলা হয়, ‘পুরোনো গ্রাহকের ক্ষেত্রে অনুমোদিত লোডের বাড়তি ব্যবহৃত গ্যাসের বিল হবে নতুন দামে। যেসব শিল্পকারখানা নতুন সংযোগের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে অনুমোদিত লোডের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত আগের দাম দিতে হবে। এর বাইরে বাকি খরচের জন্য নতুন দাম প্রস্তাব করা হয়েছে।’ শিল্পে গ্যাস ব্যবহারের এক চিত্র তুলে ধরেছে পেট্রোবাংলা। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে গত অক্টোবর পর্যন্ত হিসাবে দেখা গেছে, শিল্পে অনুমোদিত লোডের চেয়ে ১৪ কোটি ৭৮ লাখ ঘনমিটার গ্যাস বাড়তি ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া, ক্যাপটিভে পাঁচ কোটি ৭৬ লাখ ঘনমিটার গ্যাস বাড়তি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রস্তাব অনুসারে পুরোনো কারখানায় বাড়তি এমন ব্যবহারের ক্ষেত্রে গ্যাসের বিল হবে নতুন দামে। পেট্রোবাংলা বিভিন্ন কোম্পানি থেকে দেশে উৎপাদিত গ্যাস কিনে নেয়। এতে প্রতি ইউনিটে তাদের গড়ে খরচ হয় ৬ টাকা ৭ পয়সা। এছাড়া তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে খরচ হচ্ছে প্রতি ইউনিটে ৭৫ টাকার বেশি। এতে লোকসানে আছে সংস্থাটি। তবে নতুন করে ভর্তুকি দিতে রাজি নয় সরকার। ফলে এখন এলএনজি আমদানির খরচ পুরোটাই শিল্পের ওপর চাপাতে চাইছে পেট্রোবাংলা। এলএনজি আমদানি করে চলতি অর্থবছর (২০২৪-২৫) ১৬ হাজার ১৬২ কোটি টাকা ঘাটতি হতে পারে বলে এক হিসাব দেখিয়েছে পেট্রোবাংলা। গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কেনা এলএনজির খরচ হিসাব করে প্রতি ইউনিটের দাম প্রস্তাব করেছে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা। এর মধ্যে আমদানি খরচ ৬৩ টাকা ৫৮ পয়সা। বাকিটা শুল্ক, কর ও পরিচালন খরচ হিসেবে দেখানো হয়েছে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাহী আদেশে গ্যাসের দাম গড়ে ৮২ শতাংশ বাড়ানো হয়। তখন শিল্পে গ্যাসের মূল্য ১১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে করা হয় ৩০ টাকা। ক্যাপটিভে ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছিল। পরে ক্যাপটিভে আরেক দফা গ্যাসের দাম বাড়িয়ে করা হয় ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা। গত বছরের ২৮ আগস্ট গণশুনানি ছাড়াই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিইআরসির নির্বাহী ক্ষমতা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। আইন মন্ত্রণালয়ের জারি করা গেজেটে বলা হয়, ‘এই সংশোধনীর মাধ্যমে বিইআরসি আইন ২০০৩’-এর ৩৪ (ক) ধারা বিলুপ্ত হবে। এতে গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী ক্ষমতার মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা সরকারকে দিয়ে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ৩৪ (ক) ধারা প্রবর্তন করেছিল, সেটি বাতিল হয়।’ এর আগে ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন ২০০৩’-এর সংশোধন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। আইনটির ৩৪ (ক) ধারায় সংশোধন করা হয়।

কাকরাইলে উদ্বোধন হচ্ছে ‘গ্রান্ড প্যালেস হোটেল এন্ড রিসোর্টস’
পর্যটকদের নিরাপদ ও আন্তর্জাতিক মানের আবাসন নিশ্চিত করতে ঢাকায় আগামী বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ‘গ্রান্ড প্যালেস হোটেল এন্ড রিসোর্টস’ উদ্বোধন করা হবে। পাঁচ তারকা মানেইর এই হোটেলটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অবদান রাখবে। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা উত্তর সিটির কাকরাইলে অবস্থিত হোটেলটির বলরুমে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান এসএ গ্রুপের কর্ণধার সালাহউদ্দিন আহমেদ।সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এই হোটেলের মালিক দেশের জনগণ, আমরা হলাম উদ্যোগক্তা। আশা করি, হোটেলের সার্বিক সহযোগীতা পর্যটকদের হাত ধরেই আসবে। ৫ আগস্টের পর ব্যবসায়ীরা অনেকটাই কোনঠাসা হয়ে ছিল। যে কারণে প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জানাই জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী যোদ্ধাদের। এই আন্দোলনের যারা শহীদ ও আহত হয়েছেন, তাদের জন্য দোয়া কামনা করছি। আহত ব্যাক্তিদের সহযোগীতার বিষয়ে আমাদের আলাদা পরিকল্পনাও রয়েছে।’ এসএ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘ব্যবসায়ী হিসেবে বর্তমান সরকারের কাছে আমার একটাই চাওয়া, ব্যবসায়ের জন্য একটি সুষ্ঠ পরিবেশ নিশ্চিত করা। বিগত সরকার উন্নয়নের যে বুলি দিয়ে আসছে, আসলে প্রকৃত অর্থে কোন উন্নয়ন হয়নি। যতটুকু হয়েছে এর চেয়ে বেশি লুটপাট করেছে তারা।’ এই সরকারকে জনগনের অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অর্থ মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত দেখার মত কোন কাজ করতে পারেনি। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যহত রাখতে সরকারের পাশাপাশি আমরা বেসরকারি খাতের সবাই মিলে সহযোগীতা করতে প্রস্তুত রয়েছি।’সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, যোগ্য ও দক্ষ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে এর আগেও রংপুর ও সিলেটে বিশ্বমানের হোটেল নির্মাণ করা হয়। এবার ঢাকায় হোটেল গ্রান্ড প্যালেস চালু করা হল। যেখানে থাকবে অত্যাধুনিক স্থাপত্য নকশা, আন্তর্জাতিকমানের আভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা, সুললিত সংগীত ব্যবস্থা, সুপরিসর হোটেল রুম, উন্নত মানের আন্তর্জাতিক ও দেশীয় খাবার, দৃষ্টিনন্দন সুইমিংপুল, হেলথক্লাব ও কনফারেন্স সুবিধা।‘এক কথায় বলা যেতে পারে দেশী-বিদেশী সব পর্যটকের জন্য সব ধরনের সুবিধা সম্বলিত এই হোটেল।’ ‘গ্র্যান্ড প্যালেস’ দেশের ক্রমবর্ধমান পর্যটন শিল্পে ব্যাপক ভূমিকা পালনের পাশাপাশি এই শিল্পে কর্মসংস্থানের নতুন দ্বার উন্মুক্ত করবে এবং ঢাকাবাসী তাদের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনে এক নতুন পূর্ণাঙ্গ ফাইভস্টার সুবিধা ভোগ করার সুযোগ পাবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়

এনসিসি ব্যাংকের ১১তম বিশেষ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত
ন্যাশনাল ক্রেডিট এন্ড কমার্স (এনসিসি) ব্যাংক পিএলসির ১১তম বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ব্যাংকের আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশনের ৯১, ৯৪ (১) এবং ৯৪ (২) নম্বর আর্টিকেলের সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. নূরুন নেওয়াজ সেলিমের সভাপতিত্বে বিশেষ সাধারণ সভায় ভাইস চেয়ারম্যান এএসএম মাঈনউদ্দীন মোনেম, পরিচালক ও প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান সোহেলা হোসেন, পরিচালক সৈয়দ আসিফ নিজাম উদ্দীন, প্রাক্তন ভাইস-চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান খায়রুল আলম চাকলাদার, পরিচালক মোহাম্মদ সাজ্জাদ উন নেওয়াজ এবং স্বতন্ত্র পরিচালক ও অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মীর সাজেদ উল বাসার ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন। এ সময় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. শামসুল আরেফিন এবং উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কোম্পানী সচিব মো. মনিরুল আলম ছাড়াও ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারগণ অনলাইনে যোগ দেন এবং ভোটাধিকার প্রয়োগকরেন। সভায় মো. নূরুন নেওয়াজ সেলিম বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শের উপর ভিত্তি করে ১১তম বিশেষ সাধারণ সভায় যেসব সংশোধনী শেয়ারহোল্ডার কর্তৃক গৃহীত হয়েছে, তা ব্যাংকের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ এবং এরমাধ্যমে এনসিসি ব্যাংকের পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার নির্দেশনা পালন আরো সহজ হবে।’

চাল আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের বাস্তবমুখী সব সহযোগিতা নিশ্চিত করা হবে
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন চাল আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘ব্যবসায়-বাণিজ্যকে সহজ করতে সরকার কাজ করছে। বাস্তবমুখী সব সহযোগিতা নিশ্চিত করা হবে।’ মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) বিকালে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে চালের মজুত ও আমদানি পরিস্থিতি সংক্রান্ত সভায় তিনি এ কথা বলেন। সভায় অতিথি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। ব্যবসায়ীদের কোন সমস্যা থাকলে সরকার তা সমাধানের চেষ্টা করবে উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘পাইকারি বাজার ও খুচরা বাজারে চালের দামের বড় ব্যবধান দেখা যাচ্ছে। এটার প্রকৃত কারণ জেনে আমরা সমাধান করতে চাই। বাজারের স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে চাই ‘ সভাপতির বক্তব্যে সভায় শেখ বশিরউদ্দীন আরো বলেন, ‘অধিকাংশ পণ্যের দাম কমে এসেছে। চালের বাজারে দাম কিছুটা বেড়েছে।’ খুব শিগগিরই দাম কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। সভায় আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘সরকারি খাদ্য মজুত এখন ১২ লাখ টনের ওপরে। চলতি মাসেই মিয়ানমার থেকে এক লাখ টন চাল আসবে। পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশ থেকেও জিটুজি ভিত্তিতে চাল সংগ্রহের চেষ্টা চলমান রয়েছে।’ সরকার সিঙ্গেল সোর্স থেকে আমদানি নির্ভর না হয়ে বহুমুখী সোর্স থেকে চাল সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। আলী ইমাম মজুমদার আরো বলেন, ‘টিসিবির মাধ্যমে নিয়মিত স্বল্প আয়ের মানুষকে চাল দেওয়া হচ্ছে। খাদ্য বান্ধব কর্মসূচিতে ৩০ কেজি করে চাল পাচ্ছে পঞ্চাশ হাজার পরিবার। এছাড়াও, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম ওএমএস চালু রয়েছে।’ মজুমদার এগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রির আদিত্য মজুমদার বলেন, ‘ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে চাচ্ছে না। শতভাগ মার্জিনে এলসি খুলতে হচ্ছে। এতে আমদানিকারকরা চাল আমদানিতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন।’ তিনি এলসি মার্জিন কমিয়ে ডলার সরবারাহ নিশ্চিত করতে উপদেষ্টার সহযোগিতা কামনা করেন। চাল ব্যাবসায়ী নাজির প্রধান বলেন, ‘সরকারিভাবে চাল সংগ্রহকালে ব্যাবসায়ীরা প্রতিযোগিতা করে ধান কেনায় দাম বেড়ে যায়।’ তিনি চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে চাল সংগ্রহ করতে সরকারকে পরামর্শ দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এলসি খোলার ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খাদ্যপণ্যে এলসি খোলায় কোন রকম গাফলতি হলে তা খতিয়ে দেখা হবে।’ প্রবাসী আয় বেড়েছে, এলসি খোলায় আর সমস্যা হবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সভায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান, ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মইনুল খান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. আব্দুর রহিম খান, টিসিবির চেয়ারম্যান বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. মোস্তফা ইকবাল বক্তব্য দেন।

১০০ নয়, কেবল পাঁচ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাজ করবে অন্তর্বর্তী সরকার
সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার যে মিশন বিগত আওয়ামী লীগ সরকার নিয়েছিল, সেখান থেকে বেরিয়ে এসে অন্তর্বর্তী সরকার ‘অগ্রাধিকার’ ভিত্তিতে কেবল পাঁচটি অঞ্চল নিয়ে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। বর্তমান বাস্তবতায় এখনই ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির ‘প্রয়োজন নেই’ মন্তব্য করেন তিনি। আগামী দশ বছরে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করা গেলেই সেটি ‘যথেষ্ট’ হবে বলে তিনি মনে করেন আশিক চৌধুরী। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা জানান বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান। সংবাদ সম্মেলনে আশিক চৌধুরী বলেন, ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাঁচ সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাজ করা হবে। আমরা প্রমিজ করছি, এসব অর্থনৈতিক জোনে আগামী ১২-২৪ মাসের মধ্যে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও রাস্তার সংযোগ দেওয়া হবে।’ ‘চিহ্নিত পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চল সম্পূর্ণভাবে ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন হয়ে গেলে এবং পরবর্তী প্রয়োজন হলে আমরা বাকি পাঁচটি জোনে কাজ শুরু করব। এতে ৫-৭ বছর সময় লাগতে পারে।’ এই পাঁচ অঞ্চল হল জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল, মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল, জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। এসব অঞ্চলের পুরো জায়গাজুড়ে আবার কাজ করবে না অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ সেসব জায়গায় ‘স্বল্প পরিসরে’ কাজের পরিকল্পনা নিয়েছে। দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’-এর নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দেওয়া হয়েছে ‘জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’। চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই উপজেলা এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা ঘিরে এই শিল্পনগরের আয়তন ৩৩ হাজার ৮০৫ একর। এর মধ্যে কেবল এক হাজার ৪১ একরে আগামী দুই বছরে কাজ হবে। সংবাদ সম্মেলনে আশিক চৌধুরী জানান, তিনি বেজার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী ও সংস্থার সঙ্গে যে আলোচনা করেছেন, তাতে সম্পদ ও সেবার স্বল্পতার বিষয়টি বার বার উঠে এসেছে। সে কারণে আগামী দুই বছরকে চার ভাগে বিভক্ত করে এ পাঁচ অঞ্চলে ইউটিলিটি সেবা চালুর পরিকল্পনার কথা বলেন বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘আমরা এতকিছু করে কী আউটপুট দেখতে চাই? ২০২৬ সালের শেষে যেটা আমাদের এক্সপেক্টেশন, সেটা হল, এর মধ্যে আরও ১৩৩ জন বিনিয়োগকারীকে বেজাতে অপারেশনাল করব। ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ বাড়াব।’ ‘লোকাল ইনভেস্টমেন্ট ও ফরেন ইনভেস্টমেন্ট দুইটা মিলে আমরা টোটাল ইনভেস্টমেন্ট এক্সপেক্ট করছি ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। ফাইনালি এক্সপেক্ট করছি, আগামী দুই বছরে বেজাতে আড়াই লাখ লোকের এমপ্লয়মেন্ট জেনারেট করব।; আশিক চৌধুরী বলেন, ‘এটা যদি অ্যাচিভ করতে পারি, তাহলে আমরা মনে করব যে বেজার ’২৫, ’২৬ ইজ সাকসেসফুল। দিজ ইজ আওয়ার গোল।” যেসব জায়গা ইতোমধ্যে অধিগ্রহণ করা হয়েছে, কিন্তু অব্যবহৃত রয়েছে, সেখানে আগামী দুই বছরে অন্য কোন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড করা যায় কিনা, তাও বেজা ভেবে দেখছে বলে জানান নির্বাহী চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে মিরসরাইয়ে সোলার পাওয়ার প্লান্ট তৈরির সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে।’ নতুন করে অর্থনৈতিক অঞ্চল না করে বরং সরকারের পুরনো পাটকল, কারখানা যা এখন অব্যবহৃত আছে, কিন্তু জায়গা ও অবকাঠামো রয়েছে, সেগুলোকে অর্থনৈতিক অঞ্চলে রূপ দেওয়া যায় কিনা, তাও ভাবার কথা আশিক চৌধুরী বলেন। বর্তমানে দেশে সরকারি ও বেসরকারি মিলে ১৯টি ইকোনমিক জোনে কাজ চলছে। ১২২টি কোম্পানি নির্মাণ ও উৎপাদন পর্যায়ে আছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ৭ হাজার ২০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে এবং ৪৫ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। এখন পর্যন্ত এসব অঞ্চলে বিনিয়োগ করেছে ২১২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।