‘গণআত্মাহুতির’ হুমকি শিক্ষক পদে নিয়োগ বাতিল হওয়া প্রার্থীদের
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ১০:৫২ পিএম, ০১ মার্চ ২০২৫

হাই কোর্টের রায়ে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ বাতিল হওয়া প্রার্থীরা নিয়োগ না পেলে ‘গণআত্মাহুতির’ হুমকি দিয়েছেন।
শনিবার (১ মার্চ) রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে তারা নিয়োগ ফিরে পাওয়ার দাবিতে ‘প্রতীকী ফাঁসি’ কর্মসূচি পালন করে এ হুমকি দেন।
নিয়োগ ফিরে পাওয়ার দাবিতে ২৪ দিন টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। দুই বিভাগে নিয়োগ সুপারিশ পাওয়া ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ বাতিল করে দেওয়া হাই কোর্টের রায় পুনর্বিবেচনায় আপিল করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
রোববার (২ মার্চ) সেই আপিল শুনানির তারিখ নির্ধারিত আছে। এদিন আপিল বিভাগের রায় আসতে পারে বলে আশা প্রার্থীদের।
শনিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত তারা রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরে সেখান থেকে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ শিরোনামে র্যালি বের করেন।
র্যালিটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘুরে ফের শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এসে শেষ হয়। পরে তারা সেখানেই অবস্থান নেন। রাতেও তারা সেখানে অবস্থান করছিলেন।
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার নিয়োগ বাতিল হওয়া আন্দোলনর প্রার্থী মো. মজিবুর রহমান রাসেল বলেন, “নিয়োগ নিশ্চিতের দাবিতে আমরা বিকালে প্রতীকী ফাঁসি কর্মসূচি পালন করেছি। এসময় ছয়জন প্রার্থী গায়ে কাফনের কাপড় জড়িয়ে গলায় ফাঁসির দড়ি পরে নিয়োগ নিশ্চিত করার দাবি জানান। আরও বেশ কয়েকজন প্রার্থী গায়ে কাফনের কাপড় জড়িয়ে নিজেদের শেকলবন্দি করে কর্মসূচিতে অংশ নেন।
‘আগামী কাল আপিল শুনানির তারিখ নির্ধারিত আছে। আমরা সবাই রায়ের অপেক্ষায় আছি। আশা করছি আপিল বিভাগ হাই কোর্টের রায় বাতিল করে দেবে। কিন্তু তা না হলে আমাদের মৃত্যু ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই। নিয়োগ নিশ্চিত জানার পর চাকরি না পাওয়ার কষ্ট আর সামাজিক বঞ্চনা আর কেউ বুঝবে কি না জানি না। তবে আপিলের রায়ের মাধ্যমে আমাদের নিয়োগ নিশ্চিত না হলে আমরা সবাই একসঙ্গে আত্মহত্যা করব।’
তিনি বলেন, “রমজানেও আমাদের রাজপথে থাকতে হবে সেটা কল্পনাও করিনি। কিন্তু আমরা রাজপথ ছাড়ব না। রাতে আমরা জাদুঘরের সামনেই তারাবির নামাজ আদায় করব, এখানেই সেহেরি করে রোজা রাখব।”
নিয়োগ বাতিল হওয়ার আরেক প্রার্থী মো. আশরাফ উদ্দিন রমিজ বলেন, ‘এটা আমাদের যৌক্তিক দাবি। তিন মন্ত্রণালায়ের মতামত নিয়ে আমাদের নির্বাচিত করে ফল দেওয়া হয়েছিল। তারপরও কেন আমাদের নিয়োগ অনিশ্চিত। রোববার আমাদের শুনানি রয়েছে। শুনানিতে যেন আমাদের পক্ষে রায় দেওয়া হয়, আমরা আশাও করি আমাদের পক্ষে রায় আসবে।’
‘আমরা তো মেধার জোরে শিক্ষক হিসাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি, কিন্তু তারপরেও কেন চাকরির দাবিতে রাস্তায় থাকতে হচ্ছে? সুপারিশ হয়েছে, মেডিকেল হয়েছে; আমরা টেস্টের জন্য রক্ত পর্যন্ত দিয়ে এসেছি কিন্তু পরে ফল বাতিল করে হাই কোর্ট রায় দিল। বাংলাদেশে বৈষম্যের এমন নজির দুঃখজনক।’
শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য নির্বাচিত হয়ে অনেকে আগের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিন্তু শিক্ষক পদে নিয়োগ বাতিল করে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ে আমরা চরমভাবে হতাশাগ্রস্ত। ২৪ দিন ধরে আমরা রাস্তায়! এই সরকার আমাদের সুপারিশ করেছে, তাহলে কেন এত তালবাহানা। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের পক্ষে রায় না আসছে, আমরা রাস্তা থেকে সরছি না।’
গত ৩১ অক্টোবর তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য ৬ হাজার ৫৩১ জন প্রার্থীকে নির্বাচিত করে তৃতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। ২০২৩ সালের ১৪ জুন এ নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে কোটায় নির্বাচিত হওয়া ৬ হাজার ৫৩১ জনের ফল বাতিল করে হাই কোর্ট। আদালত মেধার ভিত্তিতে নতুন করে ফল প্রকাশের আদেশও দেয়। সেদিন রাত থেকেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন নিয়োগ বাতিল হওয়া প্রার্থীরা।
৩০ চাকরিপ্রার্থীর করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে গত ১৯ নভেম্বর হাই কোর্ট বেঞ্চ এ নিয়োগ প্রক্রিয়া ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে রুলসহ আদেশ দিয়েছিল। ফলে ৬ হাজার ৫৩১ জন উত্তীর্ণ প্রার্থীর নিয়োগ আটকে যায়। গত ৬ ফেব্রুয়ারি সেই রুলের ওপর রায় দেয় হাই কোর্ট।
নিয়োগ বাতিলের রায় ঘোষণার পরদিন গত ৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে প্রার্থীরা নিয়োগ নিশ্চিতের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের দিকে পদযাত্রা করলে পুলিশ লাঠিপেটা করে এবং জলকামান ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
পরে তারা একাধিক বার শাহবাগ মোড় অবরোধ করলে একইভাবে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়।