ট্রেইনি চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে হাসপাতালের সেবায় ব্যাঘাত


December 2024/Trainee Doctor.jpg

মাসিক বেতন ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মত কর্মবিরতি পালন করছেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। তারা ঘোষণা দিয়েছেন, দাবি পূরণের প্রজ্ঞাপন না পাওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মবিরতি চলবে। এ অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বিঘ্নিত হওয়ার সংবাদ আসছে।

Your Image

সারাদেশে প্রায় দশ হাজার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসক রয়েছেন। উচ্চতর শিক্ষার পাশাপাশি তারা হাসপাতালে রোগীদের সেবা দেন।

ভাতা বাড়ানোর দাবিতে রোববার (২২ ডিসেম্বর) প্রথমে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান নেন চিকিৎসকরা। এক পর্যায়ে দুপুরের পর শাহবাগে সড়ক অবরোধ করলে সেখানে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা সারজিস ইসলাম আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে সাড়ে চার ঘণ্টা পর রাস্তা ছাড়েন চিকিৎসকরা।

পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডাক্তার জাবির হোসেন সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের দাবি আদায়ের আশ্বাস পেয়েছি। সে কারণে অবস্থান কর্মসূচি বা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি প্রহ্যাহার করে নিয়েছি। কিন্তু, ভাতা বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মবিরতি চলবে। আমরা হাসপাতালের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকব।’

ট্রেইনি চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ কাজ না করায় বিপাকে পড়েছে দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল।

ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসক আছেন ৫০০ জনের মত। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আছেন মেডিসিন বিভাগে। পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা না আসায় হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ওই হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের কেউ হাসপাতালে আসেননি। হাসপাতালের নিয়মিত চিকিৎসক, ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেডিসিন বিভাগের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘আমরা যারা সরকারি চিকিৎসক আছি, শুধু তারা চিকিৎসা দিচ্ছি। এতে কিছুটা সমস্যা তো হচ্ছেই। আগে যেখানে একসঙ্গে ১৫ জন ডিউটি করতাম, এখন পাঁটজন করছি। সেবা ওয়ান থার্ডে নেমে এসেছে।’

শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার শফিউর রহমান অবশ্য দাবি করেছেন, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা কাজে না আসায় রোগীদের সেবা দিতে সমস্যা হওয়ার কোন তথ্য তিনি ‘জানেন না’।

‘আমাদের এখানে পর্যাপ্ত ইন্টার্ন, রেজিস্ট্রার আছেন। এ কারণে সার্ভিস ব্যাহত হচ্ছে না। পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা কাজে না আসায় সার্ভিস হ্যাম্পার হচ্ছে বলে আমাকে কেউ জানায়নি।’

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে প্রায় ৫০ জন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসক কাজ করেন। তারা সকালের পালায় কাজে আসেননি বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মাহমুদুল হক চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই কর্মসূচিতে গেছেন। এ ধরনের চিকিৎসকরা মূলত রোগীদের ফলোআপ করেন। এখন তারা সকালের শিফটে আসছেন না, তবে বিকেল ও রাতের শিফটে আসছেন। না আসায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে, তবে আমরা অন্যদের দিয়ে কাজ চালাচ্ছি।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকের সংখ্যা হাজারের উপরে। সোমবার তারা কেউ হাসপাতালে যাননি।

সার্জারি বিভাগের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘একটা কাজ পাঁচজন মিলে করা হত। এখন সেটা করতে হচ্ছে দুইজনে। সার্ভিস হ্যাম্পার হচ্ছে, কাজটা এখন যে করছে তার কষ্ট হচ্ছে, সেবার মান খারাপ হচ্ছে।’

ভাতা বাড়ানোর দাবিতে ২০২২ সাল থেকে আন্দোলন করে আসছেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। দাবি আদায়ের জন্য বিভিন্ন সময় কর্মবিরতি, অবস্থান, কর্মসূচি পালন করে আসছেন তারা। আন্দোলনের পর গত বছরের জুলাইয়ে পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট চিকিৎসকদের মাসিক ভাতা পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হয়। তবে ওই ভাতাও যৌক্তিক নয় বলে চিকিৎসকদের ভাষ্য। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ফের ভাতা বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে নামেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা।

তারা বলছেন, ‘ভাতা বাড়ানোর জন্য বিসিপিএস, বিএসএমএমইউ, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর,স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সবার সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। সবাই ভাতা বৃদ্ধির দাবিকে ‘যৌক্তিক’ বলেছেন, এটি দ্রুত বাস্তবায়নের ‘আশ্বাস’ দিয়েছেন।’

ভাতা বৃদ্ধির সুপারিশ অর্থ মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেখানে আর কোন অগ্রগতি হয়নি। সেটি অনুমোদিত হয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আসেনি বলে আন্দোলনকারীদের ভাষ্য।

গেল ১৪ ডিসেম্বর ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সোসাইটি এ দাবিতে শহীদ মিনার থেকে রাজু ভাস্কর্য পর্যন্ত মশাল মিছিল করেন। সেদিন তারা ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন। এরপর ১৫ ডিসেম্বর চিকিৎসকদের প্রতিনিধি, নাগরিক কমিটি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র সারজিস আলমসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে নথিটি অনুমোদন দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা জানানো হয়। তবে সেটিও আর হয়নি।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×