স্বাস্থ্যখাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পাঁচ দফা চিকিৎসকদের
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৫:২১ পিএম, ০৫ মার্চ ২০২৫

দেশের স্বাস্থ্যখাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ও চিকিৎসা পেশার মর্যাদা রক্ষায় পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। আগামী ১২ মার্চের মধ্যে এসব দাবি পূরণ না হলে সকল চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা যথাক্রমে কর্মবিরতি ও ক্লাস বর্জন করবেন। এমনকি ১২ মার্চ হাইকোর্ট কর্তৃক ‘ডাক্তার’ পদবী সংক্রান্ত রিটের চূড়ান্ত রায় ঘোষণা না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মসূচিতে যাওয়ারও হুমকি দিয়েছেন তারা।
বুধবার (৫ মার্চ) চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের সংগঠনগুলোর সম্মিলিত জোট ইউনাইটেড মেডিকেল অর্গানাইজেশনস অব বাংলাদেশের (ইউমব) পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টদের পক্ষ থেকে ২০১৩ সালে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করার জন্য আদালতে একটি রিট করা হয়েছিল, যার ফলে দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে বেআইনিভাবে তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করে দেশের সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। বিগত ১৩ বছরে ৯০ বার কজ লিস্টে আসার পর, এমনকি শুনানির পর্ব গত তিন মাস আগেই শেষ হয়ে যাওয়ার পরও নানাবিধ অদৃশ্য কারণে এই রিটের রায় প্রদান করা হচ্ছে না। এভাবে জনগুরুত্বপূর্ণ একটি রিটকে বারবার পেছানোর মধ্য দিয়ে এ দেশের মানুষকে সঠিক স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তির মৌলিক ও রাষ্ট্রীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
পাঁচ দফা দাবি হল এমবিবিএস/বিডিএস ডিগ্রীপ্রাপ্তগণ ব্যতীত অন্য কেউ নামের পূর্বে ‘ডাক্তার’ পদবী ব্যবহার করতে পারবে না এবং আদালতে চলমান এই সংক্রান্ত আইন ও জনস্বাস্থ্য বিরোধী সব রিট আগামী ১২ই মার্চের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে; রেজিস্টার্ড চিকিৎসক ছাড়া অন্য কেউ স্বাধীনভাবে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবে না মর্মে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে; আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্স কারিকুলাম সংস্কার কমিটি গঠন করে তাদের কোর্স কারিকুলাম পুনঃনির্ধারণ এবং মানহীন সব ম্যাটস (মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল) বন্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে; জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের জন্য শূন্যপদে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ এবং চিকিৎসকদের বিসিএসের বয়সসীমা ৩৪ বছরে উন্নীত করতে হবে এবং অনতিবিলম্বে চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং বেসরকারি চিকিৎসকদের জন্য সুনির্দিষ্ট বেতন কাঠামো (পে-স্কেল) প্রণয়ন করতে হবে।
ওপরের পাঁচ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে কিছু কর্মসূচি চলমান থাকবে। এগুলো হল ৬-১০ মার্চ দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ইন্টার্ন চিকিৎসকগণ কর্মবিরতি পালন করবেন এবং মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করবেন, পাশাপাশি নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন; ৫ মার্চ-১০ মার্চ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল, ডিরেক্টর এবং ডিপার্টমেন্ট প্রধানদের স্মারকলিপি প্রদান, কর্মসূচির ব্যাপারে অবহিতকরণ, সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ ও অনলাইন প্রচারণা; ১০ মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন; ১১ মার্চ দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সব চিকিৎসক কর্মবিরতি পালন করবেন এবং মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করবেন, পাশাপাশি নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন এবং ১২ মার্চ দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সব চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা যথাক্রমে কর্মবিরতি ও ক্লাস বর্জন করবেন। ১২ মার্চ ঢাকার সব চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হবেন এবং ঢাকার বাইরে সবাই নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন। (১২ মার্চ রায় প্রদান না করা হলে এবং অন্যান্য দাবি না মেনে নিলে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মসূচি চলমান থাকবে।
জানা গেছে, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টদের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে বর্তমানে তিনটি রিট চলমান। এগুলো হল ডাক্তার পদবি ব্যবহার সংক্রান্ত ২৭৩০/২০১৩, ডাক্তার পদবি সংক্রান্ত ‘বিএমডিসি অ্যাক্ট ২০১০’-এর ধারা ২৯’কে চ্যালেঞ্জ করে ১৩০৪৬/২০২৪ এবং আপডেটেড ওষুধ ও অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করার বৈধতা চেয়ে ১৩৪৬২/২০২৪। অনতিবিলম্বে এসব রিটের নিষ্পত্তিকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের নিকট উদাত্ত আহ্বান চিকিৎসক সমাজের। অনাথায় দেশের সচেতন চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও জনতা ক্রমান্বয়ে আদালত এবং সরকারের উপর আস্থা হারাতে বাধ্য হবে বলেও মনে করেন তারা।