আবারো ঢামেকে ‘ভুলভাল ইংরেজি’ বলে ধরা খেলেন ভুয়া চিকিৎসক

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে ফের এক ভুয়া নারী চিকিৎসককে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে হাসপাতালটির বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের তৃতীয় তলা থেকে চিকিৎসক পরিচয়দানকারী ডালিয়া (৩৫) নামের ওই নারীকে প্রথমে আনসারের সদস্যরা আটক করে। পরে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিতে আসা যুবক আরমান গণমাধ্যমকে জানান, তার বাসা কেরানীগঞ্জে। গত এক বছর আগে কক্সবাজারে ঘুরতে গিয়ে পায়ে আঘাত পান। এরপর গত এক বছর ধরে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছে ডাক্তার সালমা আমানের কাছে। তখন থেকেই ডালিয়া তাদের সাথে দেখাসাক্ষাৎ করত এবং হাসপাতালেও আসত। সে আমাদের দুসম্পর্কের আত্মীয়। সে নিজে আমাদের কাছেও ডাক্তার পরিচয় দেয়। আজকে জানলাম সে ডাক্তার না। তিনি বলেন, মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে ফলোআপ চিকিৎসার জন্য বার্ন ইউনিটে আসি। সাথে ডালিয়াও ছিল। তার চিকিৎসার বিষয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসকের সাথে কথপোকথনের সময় ভুলভাল ইংরেজি বলছিল ডালিয়া। তখন কর্তব্যরত ওই চিকিৎসকই তাকে ভুয়া চিকিৎসক বলে শনাক্ত করেন। ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার নাসির উদ্দিন বলেন, ‘অ্যাপ্রোন পরা ও গলায় স্টেথোস্কোপ লাগানো এক তরুণীকে আটক করা হয়েছে। সে নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিলেও আটক হওয়ার পর কোন কথা বলতে রাজি হয়নি। তার কাছ থেকে কোন ধরনের তথ্য বের করা সম্ভব হয়নি। তবে তার আচরণ দেখে মনে হয়েছে সে প্রফেশনাল প্রতারক। তাকে আইনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আইনুযায়ী তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক বলেন, ‘বার্ন ইউনিট কর্তৃপক্ষ ভুয়া চিকিৎসক পরিচয় দানকারী ডালিয়া নামে ভুয়া চিকিৎসক আটক করে আমাদের কাছে সোপর্দ করে। পরে আমরা তাকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করেছি। শাহবাগ থানা পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করবে।’ এর আগে, গত বছরের ১৭ নভেম্বর হাসপাতালটি থেকে আটক হয় পাপিয়া আক্তার স্বর্ণা নামে এক ভুয়া নারী চিকিৎসক। আর ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আটক হয় আরেক প্রতারক ও ভুয়া চিকিৎসক টিকটকার মুনিয়া খান রোজা।

এইচএমপিভি: বিমানবন্দর ও এয়ারলাইন্সগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা

চীনসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আতঙ্ক ছড়ানো হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) বাংলাদেশেও শনাক্ত হয়েছে। এ অবস্থায় ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে বিশেষ নির্দেশনা জারি করেছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক কামরুল ইসলাম দেশের সব এয়ারলাইন্স ও বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নির্দেশনার বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার নির্দেশনা অনুযায়ী বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট সবাইকে এইচএমপিভির বিষয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে আপাতত আতঙ্কিত হওয়ার কিছু হয়নি। বিমানবন্দরের যাত্রী, স্টাফ ও দর্শনার্থীদের সবাইকে মুখে মাস্ক রাখা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয়েছে। যদি কারো মধ্যে জ্বর, কফ, শ্বাস ছোট হওয়ার মত এইচএমপিভির লক্ষণ দেখা দেয় সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে বিমানবন্দরের হেলথ সার্ভিসে জানাতে হবে।’ দেশের বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনাকারী দেশি ও বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এবং যেসব দেশে এইচএমপিভির আক্রান্ত রোগী রয়েছে, সেসব দেশ থেকে যাত্রী আনার ক্ষেত্রেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। প্লেনের ভেতর যদি কারো মধ্যে জ্বর, কফের মত এইচএমপিভির লক্ষণ দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে বিমানবন্দরের হেলথ সার্ভিসে জানাতে হবে। ফ্লাইটে এইচএমপিভির আক্রান্ত রোগী থাকলে তাদের কীভাবে হ্যান্ডেল করতে হবে সে বিষয়ে এয়ারলাইন্সের ক্রু ও যাত্রীদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নির্দেশনাবলি জানার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চিঠিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জারি করা ৭টি নির্দেশনা মানতে বলা হয়েছে। সংক্রমণ প্রতিরোধে নির্দেশনাগুলো হল- শীতকালীন শ্বাসতন্ত্রের রোগগুলো থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য মাস্ক ব্যবহার করা; হাঁচি/কাশির সময় বাহু/টিস্যু দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখা; ব্যবহৃত টিস্যুটি অবিলম্বে ঢাকনাযুক্ত ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ফেলুন ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়া; আক্রান্ত হয়েছেন- এমন ব্যক্তিদের সম্পন্ন এড়িয়ে চলুন ও কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা; ঘনঘন সাবান ও পানি কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধৌত করুন (অন্তত ২০ সেকেন্ড); অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ না ধরা এবং জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট আক্রান্ত হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকা। প্রয়োজন হলে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করা। রোববার (১২ জানুয়ারি) রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে এইচএমপিভি আক্রান্ত ব্যক্তি একজন নারী, যার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরব এলাকায়। চলতি বছরের জানুয়ারির শুরুতে পূর্ব এশিয়ার দেশ চীনে প্রথম এর সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর জাপানে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। এখন এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাব মালয়েশিয়া ও ভারতেও ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এইচএমপিভি ২০০১ সাল থেকেই বাংলাদেশে আছে। এমনকি এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে যথেষ্ট অ্যান্টিবডিও তৈরি হয়েছে। যে কারণে করোনাভাইরাসের মত এই ভাইরাস নিয়ে এত ভয়ের কিছু নেই। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, ‘২০০১ সালে বিশ্বে প্রথম এই ভাইরাস শনাক্ত হয়।’ কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘হয়ত আরো অনেক যুগ আগে থেকেই এই ভাইরাসের অস্তিত্ব ছিল পৃথিবীতে।’ কেউ কেউ বলছেন, ‘১৯৫৮ সাল থেকেই রোগটা আছে বলেও যোগসূত্র পাওয়া যায়।’ সিডিসি বলছে, ‘এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে যে কোন বয়সী মানুষের ব্রংকাইটিস বা নিউমোনিয়ার মত অসুখ হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত এটি শিশু, বয়স্ক মানুষ ও যাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল তাদের মধ্যেই বেশি দেখা গেছে।’

ওমরাহ করতেও লাগবে মেনিনজাইটিস টিকা

যারা হজ পালন করতে যান, তাদের বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকা (মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা) নিতে হয়। এবার যারা ওমরাহ বা ভিজিট ভিসায় সৌদি আরব যাবেন, তাদের জন্যও এই টিকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এটি কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়। তবে, বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয় সৌদি সরকারের নতুন এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানলেও অফিসিয়াল কোনো চিঠি পায়নি। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মো. মঞ্জুরুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিষয়টি আমরা মৌখিকভাবে শুনেছি। সৌদি সরকার ও দূতাবাস থেকে অফিসিয়ালভাবে কোনো কিছু জানায়নি।’ ‘যারা হজ করতে যান, তাদের বাধ্যতামূলক মেনিনজাইটিস টিকা নিতে হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই টিকা হজযাত্রীদের বিনামূল্যে সরবরাহ করে। এখন যদি ওমরাহ করতে যাওয়া ব্যক্তিদের জন্য সেটি বাধ্যতামূলক করা হয়, তাহলে সেটি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ সৌদির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ওমরাহ বা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব ভ্রমণকারী সব যাত্রীকে কোয়াড্রিভ্যালেন্ট নেইসেরিয়া মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিন নিতে হবে। এই ভ্যাকসিনের ধরন হতে হবে পলিস্যাকরাইড বা কনজুগেট। টিকা সম্পর্কিত শর্তাবলি: টিকা প্রাপ্তির তারিখ: ভ্রমণের অন্তত ১০ দিন আগে টিকা নিতে হবে। পলিস্যাকরাইড টাইপ টিকা: সর্বোচ্চ ৩ বছর পর্যন্ত মেয়াদ থাকবে। কনজুগেট টাইপ টিকা: সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত মেয়াদ থাকবে। যাত্রীদের চেক-ইন কাউন্টারে একটি বৈধ টিকা সনদপত্র (ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট) জমা দিতে হবে। সৌদি সরকারের এমন সিদ্ধান্তে ফলে ওমরাহ করতে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়তে হবে বলে জানিয়েছে একটি এজেন্সির মালিক। তিনি বলেন, ‘এর ফলে অনেকেই ওমরাহ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। টিকা নিতে গিয়ে নানা ধরনের বিড়ম্বনায় পড়বেন।’

ঠান্ডা লাগলে কলা খাওয়া যাবে কি?

ঠান্ডা লাগলে কলা খাওয়া নিয়ে সাধারণত কোন কঠোর বিধিনিষেধ নেই। তবে, এটি নির্ভর করে ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার ও কোন পরিস্থিতিতে ঠান্ডা লেগেছে তার ওপর। অনেকের ধারণা, ঠান্ডা লাগলে কলা খাওয়া একেবারেই নিষেধ। কিন্তু ততটা বিধিনিষেধের কথা বলেননি চিকিৎসকরাও। কলা একটি পুষ্টিকর ফল, যাতে ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি, পটাসিয়াম ও প্রাকৃতিক শর্করা থাকে। এটি ঠান্ডা লাগার সময় শক্তি জোগাতে সাহায্য করতে পারে। তাছাড়া, কলা সহজেই হজম হয় এবং গলা বা পেটের ওপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে না। কখন কলা এড়িয়ে চলা ভাল: ঠান্ডা ও গলার সমস্যা: যদি আপনার ঠান্ডার সঙ্গে গলা ব্যথা বা কাশি থাকে, তবে ঠান্ডা খাবার বা ফল এড়িয়ে চলা ভালো। অনেকের ক্ষেত্রে কলা শ্লেষ্মা বাড়াতে পারে। অ্যালার্জি: কারও যদি কলায় অ্যালার্জি থাকে বা ঠান্ডা লাগার সময় শরীর অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়, তাহলে এড়িয়ে চলা উচিত।পরামর্শ: যদি খেতে ইচ্ছা করে, তবে ঘরের তাপমাত্রায় রাখা কলা খান; ঠান্ডা বা ফ্রিজ থেকে বের করা কলা খাওয়া এড়িয়ে চলুন। কারণ, এটি সমস্যা বাড়াতে পারে; প্রচুর পানি ও গরম তরল (যেমন গরম চা বা স্যুপ) গ্রহণ করুন এবংযদি আপনার ঠান্ডা সমস্যা দীর্ঘ স্থায়ী হয় বা বারবার হয়, তবে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

দেশে পাঁচ দিন পর ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু

দেশে পাঁচ দিন পর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে চারজনের মৃত্যু হলো। শনিবার (১১ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ডেঙ্গুতে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ব্যক্তি ময়মনসিংহ বিভাগের হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এর আগে গত ৬ জানুয়ারি দুই জনের প্রাণ যায়। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৫ জন। এ নিয়ে নতুন বছরে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা দাঁড়াল ৫৭৩ জনে। ভর্তি রোগীদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ২৬ জন, ঢাকা বিভাগে সাতজন, ময়মনসিংহ বিভাগে একজন, চট্টগ্রাম বিভাগে চারজন, খুলনা বিভাগে একজন, রাজশাহী বিভাগে পাঁচজন এবং বরিশাল বিভাগের হাসপাতালে একজন ভর্তি হয়েছেন। ডেঙ্গু নিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৩২০ জন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ১৭২ জন, ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে রয়েছেন ১৪৮ জন।

এইচএমপিভি নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ

গোটা পৃথিবীকে নাড়িয়ে দিয়েছিল করোনা ভাইরাস মহামারি। করোনায় মৃত্যু-আক্রান্ত-আতঙ্ক ছড়িয়েছিল প্রায় সব দেশেই। সেই মহামারি কাটিয়ে স্বাভাবিক হয়েছে বিশ্ব। এর মধ্যেই ফের হুমকি হয়ে উঠছে নতুন মহামারি। সামনের দিনগুলোতে ফের এমন মহামারি বা সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ভাইরোলজিস্টরা। এ অবস্থায় চীন-জাপানে নতুন আতঙ্ক দ্য হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাসের (এইচএমপিভি) প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। চীন-জাপান ছাড়িয়ে মালয়েশিয়া-ভারতেও এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এটা নতুন কোন রোগ নয়। এর ভয়াবহতার ঝুঁকিও কম। এ নিয়ে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এটি পুরোনো রোগ, নতুন কিছু না বলেও জানিয়েছেন তারা। দেশে আগেও এইচএমপিভি রোগী শনাক্ত হয়েছিল, আতঙ্কের কিছু নেই: সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডাক্তার আহমেদ নওশের আলম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘এ ভাইরাস নিয়ে অতিরিক্ত ভয়ের কিছু নেই। এতে বড় ধরনের হুমকি নেই। এর আগেও দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিল।’ তিনি আরো বলেন, ‘এই ভাইরাসে আক্রান্তদের ইনফ্লুয়েঞ্জা ও করোনাভাইরাসের মতই সিম্পটম (উপসর্গ) দেখা দিতে পারে। তবে এতে বড় সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এই রোগের আলাদা ভ্যাকসিন নেই। তবে প্রচলিত চিকিৎসায় এই রোগ ভাল হয়।’ আইইডিসিআরের পরিচালক তাহমিনা শিরীন বলেন, ‘এইচএমপিভি ভাইরাস এর আগেও বাংলাদেশে পাওয়া গেছে। এটি নতুন কোন ভাইরাস নয়। মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘২০১৭ সাল থেকেই আমাদের দেশে এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়ে আসছিল। আমরা আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তারা বলেছে এ বছর এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি।’ তিনি আরো বলেন, ‘চীন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গেও আমরা আলাপ করেছি। চীন জানিয়েছে, তারা এই রোগের কারণে কোন জরুরি অবস্থা জারি করেনি। অনেক ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে এ বিষয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে, আমরা এ বিষয়ে আলোচনায় বসেছি। আমরা ফের এই রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসবো। চীন-জাপানে ছড়িয়ে পড়েছে এইচএমপিবি ভাইরাস: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া চীনের কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাসের সময়ের মতই ভিড়। এছাড়া, জাপানেও একই অবস্থা দেখা যায়। দেশগুলোতে এই রোগ নিয়ে সতর্ক অবস্থানেও যেতে দেখা যাচ্ছে। তবে, এই রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়লেও এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কিংবা দেশগুলোর সরকার সতর্কতা জারি করেনি। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের তথ্যে জানা যায়, চীনে এই রোগে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা। বিশেষ করে আগে যাদের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ছিল, তারা নতুন এই ভাইরাসের আক্রমণে নাজুক অবস্থায় আছেন। এইচএমপিভি ভাইরাস নিয়ে বিশ্বের অন্য দেশগুলোকে উদ্বিগ্ন না হওয়ার জন্য বলেছে চীন। তারা জানায়, এটি মৌসুমী অর্থাৎ শীতকালীন সংক্রমণ মাত্র। ভারতেও দুইজনের শরীরের এইচএমপিবি ভাইরাস: চীন, জাপান ও মালেশিয়ার পর ভারতেও শনাক্ত হয়েছে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি)। সোমবার (৬ জানুয়ারি) সকালে দেশটির কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে দুইটি শিশুর শরীরে এইচএমপিভি শনাক্ত হয়। দেশটির সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভির তথ্যে জানা যায়, সোমবার সকালে বেঙ্গালুরুতে প্রথমে আট মাস বয়সী এক শিশুর শরীরে এইচএমপিভি ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়। পরে তিন মাসের এক শিশুর শরীরেও এই ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া যায়। এ নিয়ে ভারতের কর্ণাটকের স্বাস্থ্যমন্ত্রী দীনেশ গুন্ডু রাও বলেন, ‘এই ভাইরাস নিয়ে চিন্তা করার কোন প্রয়োজন নেই। এইচএমপিভি ভারতেও রয়েছে। তবে এই ভাইরাসের রূপান্তর হয়েছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।’ অতীতেও ভারতে সাধারণ এইচএমপিভি দেখা গেছে বলে জানান তিনি। প্রায় দুই দশক আগে প্রথম বারের মত এইচএমপিভির উপস্থিতি জানান দিলেও এখন পর্যন্ত এর টিকা আবিষ্কার হয়নি। চিকিৎসকরা বলছেন, ‘করোনা মোকাবিলায় যেসব সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল, একই পদক্ষেপে এই ভাইরাসও প্রতিরোধ করা সম্ভব। টানা ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া, অপরিষ্কার হাতে নাক-মুখ স্পর্শ না করা এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার মধ্যদিয়ে এইচএমপিভি থেকে নিরাপদ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।’

সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান ট্রেইনি চিকিৎসকদের, অবরোধ অব্যাহত

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার সায়েদুর রহমানের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আপাতত ৩০ হাজার টাকা ভাতার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিল আন্দোলনরত পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের প্রতিনিধি দল। কিন্তু, আন্দোলনরত অন্যদের সঙ্গে আলোচনা শেষে সেই সিদ্ধান্ত পাল্টেছেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। আপাতত ৩০ হাজার টাকা ভাতার সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে তারা দাবি জানিয়েছেন, জানুয়ারি মাস থেকেই ৩৫ হাজার টাকার ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। অন্যথায় চিকিৎসকরা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন। রোববার (২৯ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে পাঁচটায় আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার নুরুন্নবী এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘সায়েদুর রহমান স্যারের আমন্ত্রণে আমরা চারজনের একটি প্রতিনিধি দল আলোচনায় বসেছিলাম। সেখানে ড্যাব-এনডিএফের পাশাপাশি জাতীয় নাগরিক কমিটির কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সায়েদুর রহমান স্যার জানান, সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ে আমাদের অতিরিক্ত দেওয়ার মত কোন টাকা নেই, তাই আপাতত আন্দোলন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। একইসঙ্গে তিনি আগামী জুলাই মাস থেকে ৩৫ হাজার টাকা ভাতা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। আমরা সেখান থেকে আলোচনা শেষ করে ফিরে এসেছি।’ নুরুন্নবী বলেন, ‘আমরা স্যারের কাছে একটা পার্মানেন্ট সলিউশন চেয়েছি, আমাদের যেন বারবার রাস্তায় নামতে না হয়। স্যার বললেন, তোমাদের ৩৫ হাজারই দেব, সেটা জুলাই থেকে। তোমাদের দাবি আমরা মেনে নিচ্ছি কিন্তু আমাদেরকে সময় দিতে হবে। তবে এখানে আসার পর আমরা বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং সবার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জানুয়ারি মাস থেকেই ৩৫ হাজার টাকা ভাতা দাবি করছি।’ এ সময় সাধারণ মানুষের ভোগান্তিতে দুঃখপ্রকাশ করলেও দাবি আদায়ে আর কোন পথ খোলা নেই বলে জানান বিক্ষোভকারী চিকিৎসকরা। তারা বলেন, ‘বিগত সরকার ২০২৪’-এর জানুয়ারি থেকে ৩০ হাজার কার্যকরের প্রতিশ্রুতি দিলেও সেটি কার্যকর হয় ডিসেম্বরে এসে। তাই, এবার কারো আশ্বাসে তারা আন্দোলন ছেড়ে যাবেন না।’ এর আগে রোববার বিকালে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের ভাতা ৩৫ হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে সেটি আগামী বছরের জুলাই মাস থেকে চালু হবে জানিয়ে বলা হয়, ‘আপাতত ৩০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন চিকিৎসকরা।’ এমনকি সরকারের এ সিদ্ধান্ত মেনে কাজে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্তও নেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের চার প্রতিনিধি। তবে শেষ মুহূর্তে আন্দোলনকারী অন্য চিকিৎসকদের চাপের মুখে আবারও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। উল্লেখ্য, ভাতা বৃদ্ধির একই দাবিতে এর আগে গত ২২ ডিসেম্বরও শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছিলেন চিকিৎসকরা। তখন পাঁচ হাজার টাকা ভাতা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। এর আগে ভাতা বাড়াতে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন ট্রেইনি চিকিৎসকরা। দাবি না মানলে দেশের প্রায় ১৩ হাজার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসক একযোগে কর্মবিরতিতে যাবেন বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন না হওয়ায় ২২ ডিসেম্বর ট্রেইনি চিকিৎসকেরা আন্দোলন শুরু করেন। তাদের একটি অংশ শাহবাগ অবরোধ করে। পরে সরকার ভাতা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার করার ঘোষণা দেয়। ট্রেইনি চিকিৎসকরা এ সিদ্ধান্তও প্রত্যাখ্যান করেন ও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

কাজে ফিরছেন ট্রেইনি চিকিৎসকরা: আপাতত ৩০ হাজারই থাকছে ভাতা, জুলাই থেকে ৩৫

পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের ভাতা ৩৫ হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে সেটি চালু হবে আগামী বছরের জুলাই মাস থেকে। আপাতত ৩০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন চিকিৎসকরা। সরকারের এই সিদ্ধান্ত মেনে কাজে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। রোববার (২৯ ডিসেম্বর) বিকালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকের একটি বিশ্বস্ত সূত্র সংবাদ মাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানিয়েছে, জানুয়ারি মাস থেকে ৩০ হাজার ও জুলাই থেকে ৩৫ হাজার টাকা ভাতা পাবেন চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডাক্তার সায়েদুর রহমানের নেতৃত্বে আয়োজিত এই বৈঠকে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সোসাইটির সভাপতি ডাক্তার জাবির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার নুরুন্নবী প্রমুক উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে জাতীয় নাগরিক কমিটির ডাক্তার মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, ডাক্তার হুমায়ুন কবীর হিমু, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ড্যাব) কোষাধ্যক্ষ ডাক্তার জহিরুল ইসলাম শাকিল, ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিএফ) ভাইস প্রেসিডেন্ট আতিয়ার রহমান, যুগ্ম সম্পাদক ডাক্তার রুহুল কুদ্দুস বিপ্লব ছিলেন। এর আগে, ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী রোববার সকাল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বটতলা চত্বরে জড়ো হতে থাকেন প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকরা। এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এ সময় তারা ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। তাদের অবরোধের কারণে আশপাশের এলাকায় ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। দ্বিতীয় দফায় চিকিৎসকদের এই অবরোধকে কেন্দ্র করে সতর্ক অবস্থানে থাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শাহবাগ মোড়ে প্রস্তুত রাখা হয় সাঁজোয়া যান এপিসি ও জলকামান। প্রথম দফায় আন্দোলনের সময়ের তুলনায় রোববার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। একই দাবিতে গত ২২ ডিসেম্বরও শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছিলেন চিকিৎসকরা। তখন পাঁচ হাজার টাকা ভাতা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। এর আগে ভাতা বাড়াতে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন ট্রেইনি চিকিৎসকরা। দাবি না মানলে দেশের প্রায় ১৩ হাজার পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসক একযোগে কর্মবিরতিতে যাবেন বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন না হওয়ায় ২২ ডিসেম্বর ট্রেইনি চিকিৎসকেরা আন্দোলন শুরু করেন। তাদের একটি অংশ শাহবাগ অবরোধ করে। পরে সরকার ভাতা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার করার ঘোষণা দেয়। ট্রেইনি চিকিৎসকরা এই সিদ্ধান্তও প্রত্যাখ্যান করেন এবং আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

এক ফোঁটা রক্ত ঝরলে সারাদেশে স্বাস্থ্যসেবা বন্ধের হুমকি

বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ফের ঢাকার শাহবাগ মোড় অবরোধ করে সমাবেশ করছেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকরা। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে এ সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির পক্ষ থেকে সমর্থন জানান দলটির আহ্বায়ক ডাক্তার আব্দুল ওয়াহাব মিনার। এ সময় সেখানে উপস্থিত হয়ে এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘এক দিকে চিকিৎসকরা নিজেদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করছেন, অন্যদিকে পুলিশ প্রশাসন জলকামান আর সাঁজোয়া যান সাজিয়ে রেখেছে। আপনাদের মনে রাখা উচিত, ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে দেশছাড়া করেছে, এই ছাত্রজনতাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। এখানে এক ফোঁটা রক্ত ঝরলে সারাদেশে সেবা বন্ধ করে দেবেন চিকিৎসকরা ‘ তিনি বলেন, ‘আজকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোথায়, নাগরিক কমিটি কোথায়? কেন তারা চিকিৎসকদের আন্দোলনে আসছেন না? এই চিকিৎসকরাও তো দিনের পর দিন বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন। আপনারা কেন সরকারকে ৫০ হাজার টাকা ভাতা দিতে বাধ্য করছেন না?’ আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। কিন্তু আজকের দিনে এই চিকিৎসকদের প্রাপ্য ভাতার দাবিতে আন্দোলন করতে হয়, এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কি আছে?’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসনের প্রতিটি সেক্টরে ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসররা রয়ে গেছে। তারাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভিন্ন আন্দোলন উসকে দিচ্ছে। অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় ছাত্র-জনতাকে নিয়ে আমরা আবারও রাজপথে নামতে বাধ্য হবো। আমরা জানি কীভাবে দাবি আদায় করতে হয়।’ আব্দুল ওয়াহাব মিনার বলেন, ‘৫০ হাজার টাকা ভাতা এই চিকিৎসকদের দাবি নয়, অধিকার। এই অধিকার আদায়ে আমিও চিকিৎসকদের সঙ্গে রাজপথে আছি। এমনকি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকব।’ তিনি বলেন, ‘আগের আমলে আমরা ছিলাম রাজাকার, এখন হয়ে গেছি আওয়ামী লীগ। এগুলো তো আমরা বুঝি। চেয়ার পার্মানেন্ট না, পার্মানেন্ট হচ্ছে নৈতিকতা।’ ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিসের (ডিএমজে) সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার নুরুন্নবী বলেন, ‘দাবি পূরণে যত বিলম্ব হবে, আমরা তত ঐক্যবদ্ধ হব, শক্তি সঞ্চয় করব। আমাদেরকে চাপ দিয়ে লাভ নেই। তা না করে কীভাবে তাড়াতাড়ি প্রজ্ঞাপন দেবেন, সেটা নিয়ে ভাবেন। আমরা কারো দালাল নই।’ একই দাবিতে গত ২২ ডিসেম্বরও তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছিলেন। তখন পাঁচ হাজার টাকা ভাতা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। এর আগে ভাতা বাড়াতে গেল ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন ট্রেইনি চিকিৎসকরা। দাবি না মানলে দেশের প্রায় ১৩ হাজার পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসক একযোগে কর্মবিরতিতে যাবেন বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন না হওয়ায় ২২ ডিসেম্বর ট্রেইনি চিকিৎসকেরা আন্দোলন শুরু করেন। তাদেরই একটি অংশ শাহবাগ অবরোধ করে। পরে সরকার ট্রেইনি চিকিৎসকদের ভাতা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার করার ঘোষণা দেয়। ট্রেইনি চিকিৎসকরা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

ভ্রমণকারীদের জন্য মেডিকেল ডেবিট কার্ড আনল ভিসা ও ব্র্যাক ব্যাংক

ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসির সাথে অংশীদারিত্বে দেশের সর্বপ্রথম মেডিকেল ডেবিট কার্ড এনেছে ডিজিটাল পেমেন্টে নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠান ভিসা। আন্তর্জাতিক চিকিৎসা খরচে প্রয়োজনীয় অর্থের ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্য ও সহজলভ্যতা নিশ্চিত করবে এই কার্ড। সোমবার (২৩ ডিসেম্বরে) ঢাকার তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কার্ডটি উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও হেড অব রিটেইল ব্যাংকিং মো. মাহীয়ুল ইসলাম এবং ভিসার বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের কান্ট্রি ম্যানেজার সাব্বির আহমেদ। আন্তর্জাতিক খরচের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য জনপ্রতি বার্ষিক খরচের পরিমাণ বরাদ্দ রয়েছে। তা হল, সাধারণ আন্তর্জাতিক খরচের জন্য ১২ হাজার মার্কিন ডলার ও চিকিৎসার জন্য অতিরিক্ত দশ হাজার মার্কিন ডলার। তবে, চিকিৎসার জন্য এ ফান্ড ব্যবহার করা ও ব্যবস্থাপনা অনেক জটিল মনে হতে পারে। এই সমস্যার সমাধান হিসেবে ডুয়াল কারেন্সি ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে নাগরিকদের চিকিৎসা কোটার সহজ ব্যবহার নিশ্চিতে যৌথভাবে এ মেডিকেল ডেবিট কার্ড চালু করেছে ভিসা ও ব্র্যাক ব্যাংক। এ নিয়ে সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশিদের জন্য চিকিৎসা ভ্রমণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্র্যাক ব্যাংকের সাথে অংশীদারিত্বে দেশে প্রথম বারের মত এমন উদ্ভাবনী পণ্য চালু করতে পেরে আমরা আনন্দিত। এ দেশের নাগরিকদের চিকিৎসা ব্যয় সংক্রান্ত সকল চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে এই কার্ড। যারা চিকিৎসা অথবা অন্য কোন কারণে ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন, তারা খুব সহজেই এই কার্ডের মাধ্যমে সহজে তাদের কার্ডে ফান্ড ব্যবহার করতে পারবেন। ডেবিট কার্ডের সুবিধা ও দুটি বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডের আস্থার মাধ্যমে এই সমাধান আমাদের গ্রাহকদের চিকিৎসা ভ্রমণকে সহজ করবে।’ মো. মাহীয়ুল ইসলাম বলেন, ‘ভিসার সাথে পার্টনারশিপের মাধ্যমে দেশের প্রথম মেডিকেল কোটা ডেবিট কার্ড চালু করতে পেরে আমরা গর্বিত। এটি চিকিৎসার জন্য বিদেশ গমনকারী গ্রাহকদের মেডিকেল বিল প্রদানে অনেক স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে আসবে। এই বিশেষ ধরনের কার্ডটি গ্রাহকদের উন্নত ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা প্রদানে বিশেষ করে জরুরি স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনে তাদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতির প্রমাণ দেয়। এই কার্ডটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে গ্রাহকরা তাদের বার্ষিক ট্রাভেল কোটা অক্ষত রেখে বিদেশে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে পারেন। এই উদ্যোগটি গ্রাহকদের চাহিদার কথা বিবেচনায় রেখে বিশেষায়িত সলিউশনের চালুর মাধ্যমে তাদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলার একটি উদাহরণ।’ প্রিপেইড কার্ডের তুলনায় উল্লেখযোগ্য সুবিধা দেবে এই মেডিকেল কার্ড। সম্প্রতি, ডুয়াল কারেন্সি ডেবিট কার্ড দেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উদ্ভাবনী এই মেডিকেল ডেবিট কার্ড ভ্রমণকারীদের চিকিৎসা খরচের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে। কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই কার্ডধারীরা সরাসরি তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকেই চিকিৎসা, থাকা ও খাওয়ার খরচ বহন করতে পারবেন। এছাড়াও, বিদেশে চিকিৎসা খরচের ওপর ছাড়সহ বিশেষ সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। দেশের নাগরিকদের জন্য চিকিৎসা ভ্রমণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভারতের পাশাপাশি সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড চিকিৎসা ভ্রমণের জন্য জনপ্রিয় গন্তব্য। চিকিৎসা পর্যটনের গন্তব্য হিসেবে ভারত প্রথমে থাকলেও সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডের প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে। মেডিকেল ডেবিট কার্ডের এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক লেনদেনকে সহজ করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে আরও উৎসাহিত করবে।

ঢামেক হাসপাতালে রোগীর স্বজনদের সাথে ডাক্তারের হাতাহাতি, নারী আটক

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে স্বজনদের সঙ্গে চিকিৎসকের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় শম্পা বেগম (৩৯) নামে নারীকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার (২২ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের দ্বিতীয় তলায় এই ঘটনাটি ঘটে। শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহমুদ হাসান জানান, ঢাকা মেডিকেলে এক নারী চিকিৎসকের সাথে রোগীর স্বজনদের হাতাহাতি হয়েছে। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী ডাক্তার মানার হাফিজ মারধর ও সরকারী কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এতে অভিযুক্ত শম্পাকে রাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে।হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী মোমেনা বেগমের (৪০) মেয়ে হাফিজা আক্তার জানান, তাদের বাড়ি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার মোজাখালী গ্রামে। তার মা স্ট্রোক করায় গত শনিবার (২১ ডিসেম্বর) ভোরে ঢাকা মেডিকেলের দ্বিতীয় তলায় ২০০ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, তার মায়ের অবস্থা ক্রিটিক্যাল। তার আইসিইউ সাপোর্ট লাগবে। এরপর বিভিন্ন জায়গায় আইসিইউ খুঁজতে থাকেন স্বজনরা। কিন্তু, কোথাও আইসিইউ ম্যানেজ করতে পারছিলেন না। রোগী মোমেনা হাসপাতালটিতেও বিছানা না পেয়ে ফ্লোরে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। অক্সিজেন সাপোর্টও পাচ্ছিলেন না। তিনি আরও দাবি করেন, রোববার (২২ ডিসেম্বর) সারাদিন চিকিৎসক রোগীর কাছে আসেননি। হাফিজা বলেন, ‘হাসপাতালে ছিল আমার খালা শম্পা ও খালু নাজির হোসেন। রোববার রাতে আমি আফতাব নগরের বাসায় ছিলাম। রাত দশটার দিকে খালা ফোন করে আমাকে জানান, আমার মায়ের অবস্থা ভাল না। এটি শুনে আমি দ্রুত হাসপাতালে আসি। এরপর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডাক্তার মানার হাফিজ আসেন ২০০ নম্বর ওয়ার্ডে রোগীর কাছে। চিকিৎসক রোগী দেখে জানান, আমার মা আর নেই!’তিনি আরো বলেন, ‘আমার মায়ের মৃত্যুর বিষয়টি বলার পর চিকিৎসক চলে যাওয়ার সময় আমার খালা শম্পা বেগম ওই চিকিৎসকের হাত ধরে টান দিয়ে বলেন, সারাদিন আমার বোনকে দেখতে আসেনি কোন চিকিৎসক। তবে চিকিৎসকের গায়ে হাত তোলা হয়নি। তখন চিকিৎসক উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করতে থাকে। এ সময় দায়িত্বরত আনসাররা জড়ো হয়ে যান। তখন বার বার চিকিৎসকের কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়। এ সময় পাশের বেডের একটি ছেলে চিকিৎসকের হাত ধরে ক্ষমা করে দিতে বললে তিনি আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন। পরে আমার বোনকে ধরে পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে যায়।’ ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক বলেন, ‘গতরাতে হাসপাতালে রোগী মারা যাওয়াকে কেন্দ্র করে এক নারী চিকিৎসকের গায়ে হাত দিয়েছেন রোগীর স্বজনরা। এই ঘটনায় রোগীর স্বজন শম্পা বেগম নামে একজনকে আটক করে শাহবাগ থানায় দেয়া হয়েছে।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের কয়েকজন রোগীর স্বজন বলেন, গত দুই দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসকের সংখ্যা খুবই কম। পরে জানতে পেরেছি, কিছুসংখ্যক চিকিৎসক বেতন ভাতার বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন করছেন। তারা বর্তমানে কর্মবিরতিতে আছেন। এর আগে, গত ৩১ আগস্ট অবহেলায় এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঢামেক হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে চিকিৎসকদের মারধরের ঘটনা ঘটে। হামলায় নিউরোসার্জারি বিভাগের কয়েকজন চিকিৎসক আহত হন।

ট্রেইনি চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে হাসপাতালের সেবায় ব্যাঘাত

মাসিক বেতন ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মত কর্মবিরতি পালন করছেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। তারা ঘোষণা দিয়েছেন, দাবি পূরণের প্রজ্ঞাপন না পাওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মবিরতি চলবে। এ অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বিঘ্নিত হওয়ার সংবাদ আসছে। সারাদেশে প্রায় দশ হাজার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসক রয়েছেন। উচ্চতর শিক্ষার পাশাপাশি তারা হাসপাতালে রোগীদের সেবা দেন। ভাতা বাড়ানোর দাবিতে রোববার (২২ ডিসেম্বর) প্রথমে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান নেন চিকিৎসকরা। এক পর্যায়ে দুপুরের পর শাহবাগে সড়ক অবরোধ করলে সেখানে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা সারজিস ইসলাম আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে সাড়ে চার ঘণ্টা পর রাস্তা ছাড়েন চিকিৎসকরা। পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডাক্তার জাবির হোসেন সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের দাবি আদায়ের আশ্বাস পেয়েছি। সে কারণে অবস্থান কর্মসূচি বা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি প্রহ্যাহার করে নিয়েছি। কিন্তু, ভাতা বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মবিরতি চলবে। আমরা হাসপাতালের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকব।’ ট্রেইনি চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ কাজ না করায় বিপাকে পড়েছে দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল। ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসক আছেন ৫০০ জনের মত। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আছেন মেডিসিন বিভাগে। পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা না আসায় হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ওই হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের কেউ হাসপাতালে আসেননি। হাসপাতালের নিয়মিত চিকিৎসক, ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেডিসিন বিভাগের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘আমরা যারা সরকারি চিকিৎসক আছি, শুধু তারা চিকিৎসা দিচ্ছি। এতে কিছুটা সমস্যা তো হচ্ছেই। আগে যেখানে একসঙ্গে ১৫ জন ডিউটি করতাম, এখন পাঁটজন করছি। সেবা ওয়ান থার্ডে নেমে এসেছে।’ শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার শফিউর রহমান অবশ্য দাবি করেছেন, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা কাজে না আসায় রোগীদের সেবা দিতে সমস্যা হওয়ার কোন তথ্য তিনি ‘জানেন না’। ‘আমাদের এখানে পর্যাপ্ত ইন্টার্ন, রেজিস্ট্রার আছেন। এ কারণে সার্ভিস ব্যাহত হচ্ছে না। পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা কাজে না আসায় সার্ভিস হ্যাম্পার হচ্ছে বলে আমাকে কেউ জানায়নি।’ বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে প্রায় ৫০ জন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসক কাজ করেন। তারা সকালের পালায় কাজে আসেননি বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মাহমুদুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই কর্মসূচিতে গেছেন। এ ধরনের চিকিৎসকরা মূলত রোগীদের ফলোআপ করেন। এখন তারা সকালের শিফটে আসছেন না, তবে বিকেল ও রাতের শিফটে আসছেন। না আসায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে, তবে আমরা অন্যদের দিয়ে কাজ চালাচ্ছি।’ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকের সংখ্যা হাজারের উপরে। সোমবার তারা কেউ হাসপাতালে যাননি। সার্জারি বিভাগের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘একটা কাজ পাঁচজন মিলে করা হত। এখন সেটা করতে হচ্ছে দুইজনে। সার্ভিস হ্যাম্পার হচ্ছে, কাজটা এখন যে করছে তার কষ্ট হচ্ছে, সেবার মান খারাপ হচ্ছে।’ ভাতা বাড়ানোর দাবিতে ২০২২ সাল থেকে আন্দোলন করে আসছেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। দাবি আদায়ের জন্য বিভিন্ন সময় কর্মবিরতি, অবস্থান, কর্মসূচি পালন করে আসছেন তারা। আন্দোলনের পর গত বছরের জুলাইয়ে পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট চিকিৎসকদের মাসিক ভাতা পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হয়। তবে ওই ভাতাও যৌক্তিক নয় বলে চিকিৎসকদের ভাষ্য। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ফের ভাতা বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে নামেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, ‘ভাতা বাড়ানোর জন্য বিসিপিএস, বিএসএমএমইউ, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর,স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সবার সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। সবাই ভাতা বৃদ্ধির দাবিকে ‘যৌক্তিক’ বলেছেন, এটি দ্রুত বাস্তবায়নের ‘আশ্বাস’ দিয়েছেন।’ ভাতা বৃদ্ধির সুপারিশ অর্থ মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেখানে আর কোন অগ্রগতি হয়নি। সেটি অনুমোদিত হয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আসেনি বলে আন্দোলনকারীদের ভাষ্য। গেল ১৪ ডিসেম্বর ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সোসাইটি এ দাবিতে শহীদ মিনার থেকে রাজু ভাস্কর্য পর্যন্ত মশাল মিছিল করেন। সেদিন তারা ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন। এরপর ১৫ ডিসেম্বর চিকিৎসকদের প্রতিনিধি, নাগরিক কমিটি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র সারজিস আলমসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে নথিটি অনুমোদন দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা জানানো হয়। তবে সেটিও আর হয়নি।

ডেঙ্গুতে মৃত্যু আরও দুইজনের, নতুন রোগী ১৬৫

দেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গেল ২৪ ঘণ্টায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৬৫ জন। এ নিয়ে চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫৬৩ জন এবং শনাক্ত রোগী বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৯৪ জনে। রোববার (২২ ডিসেম্বর) বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া দুইজনের মধ্যে বরিশাল বিভাগের একজন এবং ঢাকা বিভাগের একজন রয়েছেন।’ ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি নতুন রোগীদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ৩৫, চট্টগ্রাম বিভাগে ২১, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৩২, ঢাকা উত্তর সিটিতে ২৩, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২১, খুলনা বিভাগে ২২, রাজশাহী বিভাগে তিন, ময়মনসিংহে সাত ও রংপুর বিভাগে একজন রয়েছেন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এক লাখ ১৯৪ জনের মধ্যে ৬৩ দশমিক এক শতাংশ পুরুষ ও ৩৬ দশমিক নয় শতাংশ নারী। একই সময়ে ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ৫৬৩ জনের মধ্যে ৫১ দশমিক নয় শতাংশ নারী ও ৪৮ দশমিক এক শতাংশ পুরুষ।

শাহবাগ ছাড়লেন চিকিৎসকরা, চলবে কর্মবিরতি

কর্মবিরতি চলমান রাখার ঘোষণা দিয়ে শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনকারী পোস্টগ্র্যাজুয়েট বেসরকারি প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকরা। তাদের দাবি, আগামী বৃহস্পতিবারের (২৬ ডিসেম্বর) মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করে বেতন বাড়াতে হবে। এর মধ্যে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলবে বলেও জানানো হয়েছে। রোববার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে শাহবাগ অবরোধ ছাড়ার ঘোষণা দেন ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সোসাইটির সভাপতি ডাক্তার জাবির হোসেন। তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা আন্দোলন চলা অবস্থায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বসেছিলাম। এছাড়াও, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আমাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। তাই, আমরা আগামী বৃহস্পতিবার বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত ভাতা বৃদ্ধির আলটিমেটাম দিচ্ছি এবং আজকের মত আমাদের আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করছি।’ এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডক্টরদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করছি। এই আন্দোলন শতভাগ যৌক্তিক। এ বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা হয়েছে। নবম গ্রেড সমমান সুযোগ সুবিধা দেওয়ার দাবি জানিয়েছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরাও চাই বৃহস্পতিবার বিকাল পাঁচটার মধ্যে দাবি বাস্তবায়নের ঘোষণা আসতে হবে। যদি ঘোষণা না আসে, তাহলে চিকিৎসকদের সঙ্গে আমরাই রাজপথে নামব।’

চিকিৎসকদের শাহবাগ ছাড়ার অনুরোধ বিএসএমএমইউর উপাচার্যের

ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীসহ সাধারণ মানুষের ভোগান্তি এড়াতে আন্দোলনরত প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের শাহবাগ মোড় ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডাক্তার শাহিনুল আলম। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকদের ভাতা বৃদ্ধির দাবি যৌক্তিক ও উপাচার্য হিসেবে দাবি আদায়ে সব ধরনের চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। এমনকি ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়েই রয়েছে, যা এই সপ্তাহের মধ্যেই প্রজ্ঞাপন চলে আসবে বলে আশা করছি।’ রোববার (২২ ডিসেম্বর) বিকাল চারটার দিকে শাহবাগে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন উপাচার্য। এ সময় তিনি চিকিৎসকদের দাবি আদায়ের আন্দোলনে পাশে থাকারও ঘোষণা দেন। উপাচার্য বলেন, ‘চিকিৎসকদের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যের একটি বিষয় হল সেবা ছেড়ে রাজপথে এসে আন্দোলন করা। আমরা চাই আর কখনই যেন চিকিৎসকদের দাবি-দাওয়া আদায়ে এভাবে রাজপথে নামতে না হয়। আমরা চাই, আজকের মত আপনারা ঘরে ফিরে যান। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শাহবাগের চতুর্দিকে যানজট ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে সাধারণ মানুষ যেমন ভোগান্তিতে পড়েছে, বিভিন্ন দিক থেকে হাসপাতালে আসা রোগীরাও দুর্ভোগে পড়েছে।’ ভাতা বৃদ্ধি করে ৫০ হাজার টাকা করার দাবিতে কর্মবিরতি ও শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত পোস্টগ্র্যাজুয়েট বেসরকারি প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকরা। ভাতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির সিদ্ধান্ত না নেওয়া হলে তারা ঘরে ফিরবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

রোগীর মৃত্যু, গ্রীন লাইফ হাসপাতালের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ

ঢাকার ধানমন্ডির গ্রীন লাইফ হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত এক রোগী মারা গেছেন। স্বজনদের দাবি, ওপেন হার্ট সার্জারির সময় তিনি মারা যান; যা নিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোগীর মৃত্যুরও সাড়ে তিন ঘণ্টা পর জানানো হয় পরিবারকে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে দেয়া হয় চাকরি ও অর্থের প্রলোভন। জানা গেছে, গেল বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) হৃদরোগে আক্রান্ত মোশাররফ হোসেন নামে এক রোগীকে গ্রীন লাইফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার পরিবার বলছে, ‘অস্ত্রোপচারের আগেও স্বাভাবিক ছিলেন তিনি। তবে শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ওপেন হার্ট সার্জারি করতে গিয়ে তার মৃত্যু হয়।’ভুক্তভোগীর ছেলে আতিকুর রহমান লিটু বলেন, ‘ভুল চিকিৎসার কারণে আমাদের উপার্জনক্ষম লোকের মৃত্যু হলো। এর দায় কে নেবে? এর দায় গ্রীন লাইফ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।’ রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, অপারেশন করতে গিয়ে রোগীর মৃত্যুর পর ছলচাতুরীর আশ্রয় নেয় কর্তৃপক্ষ। মৃত্যুর খবর পরিবারকে সাড়ে তিন ঘণ্টা পর জানানো ছাড়াও দেয়া হয় অর্থ ও চাকরির প্রলোভন।এ নিয়ে ভুক্তভোগীর মেয়ে ফারজানা আক্তার বলেন, ‘আমার পড়ালেখার খরচ ও পড়ালেখা শেষে গ্রীন লাইফে চাকরি দেয়া হবে বলে প্রস্তাব দেয় হাসপতাল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া, চিকিৎসকের সহকারীর হাতে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে বলা হয়েছে রোগীর স্বজনদের দেয়ার জন্য।’এ দিকে, ভুল চিকিৎসার অভিযোগ অস্বীকার করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে, ঘটনা তদন্ত করে কারও গাফিলতি পেলে ব্যবস্থার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।গ্রীন লাইফ হাসপাতালের জেনারেল বিভাগের পরিচালক হাসান খালিদ বলেন, ‘সার্জনই কাজটা করে। কিন্তু ড্রেসিং, রোগীকে বেডে নেয়া, পজিশনিং করা, তৈরি করার কাজ করতে সব সময় সার্জন লাগে না।’এ ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিৎসকের শাস্তির দাবি করে হাসপাতালে হট্টগোল করেন বিক্ষুব্ধ স্বজনরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। এ সময় পরিবারকে দেয়া হাসপাতালের বিল ভাউচারে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে বলে জানায় পুলিশ। পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসে শনিবার রাত তিনটার দিকে মরদেহ নিয়ে যায় পরিবার।কলাবাগান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের ম্যানেজমেন্টে সমস্যা আছে। সেটা হল- টাকা দেয়ার পর রশিদ দেয়ার কথা। কিন্তু, সেটা না দিয়ে হাতে লিখা একটা রশিদ দেয়া হয়েছে। তারা আমাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে এলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শাহবাগ অবরোধ বিএসএমএমইউয়ের চিকিৎসকদের

বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে তারা শাহবাগ মোড় অবরাধ করেন। এতে করে বন্ধ হয়ে গেছে যান চলাচল। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, ‘রোববার দুপুর দেড়টার দিকে চিকিৎসকরা শাহবাগ মোড় বন্ধ করে অবস্থান নিয়েছেন। এর ফলে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা কথা বলে তাদেরকে সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’ এ দিকে, রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ভাতা বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন প্রকাশিত না হওয়ায় সারাদেশে ফের কর্মবিরতিতে নেমেছেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকরা। আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সোসাইটির (ডিএমজেএস) পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। সংগঠনটির সভাপতি ডাক্তার জাবির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার মো. নুরুন নবী জানান, ডাক্তারদের অধিকার আদায়ের প্রতিষ্ঠান ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সোসাইটি ও তার সহযোগী সংগঠন পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন (পিপিটিডিএ) ২০২২ সাল থেকেই বেসরকারি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট চিকিৎসকদের যৌক্তিক দাবি- ভাতা বৃদ্ধির জন্য রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। সংগঠনটি জানায়, স্বাস্থ্য খাতের স্টেকহোল্ডার- বিসিপিএস, বিএসএমএমইউ, স্বাস্থ্য শিক্ষা মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য সচিব ও সহকারী স্বাস্থ্য উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাক্তার সায়েদুর রহমানসহ সবাই ভাতা বৃদ্ধির দাবিকে যৌক্তিক বলেছেন। দ্রুত বাস্তবায়ন করবেন বলে কথাও দিয়েছেন। এছাড়া, ভাতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় নথি যথার্থ ধাপ পার করে অর্থ মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়। কিন্তু, দুঃখজনক বিষয় হল ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ে নথিভুক্ত হয়ে পড়ে আছে। এর প্রতিবাদে গত ১৪ ডিসেম্বর, ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সোসাইটির নেতৃত্বে শহীদ মিনার থেকে রাজু ভাস্কর্য পর্যন্ত মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয় এবং ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটামও ঘোষণা করা হয়েছিল। সংগঠনটি আরও জানায়, গেল ১৫ ডিসেম্বর ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস থেকে দুইজন মুখপাত্র ডাক্তার জাবির হোসেন এবং ডাক্তার তানভীর আহমেদ, নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে ডাক্তার আহাদ এবং ডাক্তার আশরাফ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র সারজিস আলমসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ে মিটিং করা হয়। আশ্বস্ত করা হয় সেদিনই (১৫ ডিসেম্বর) এই নথিটি অনুমোদন দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আজ পর্যন্ত ভাতা বৃদ্ধির নথি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়নি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

ডেঙ্গু আক্রান্ত লাখ ছাড়াল, এক দিনে আরও তিন মৃত্যু

এডিস মশাবাহী রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত এক দিনে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর মশাবাহী রোগটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৫৬১ জনে। এছাড়া, গত এক দিনে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪১ জন। তাদের নিয়ে এ বছর মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত এক লাখ ২৯ জনে দাঁড়াল। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গত এক দিনে ডেঙ্গুতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) একজনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি দুইজন বরিশাল ও খুলনা বিভাগের বাসিন্দা। অন্য দিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ছাড়াও ঢাকা বিভাগে মোট ৯২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে ৩৫ জন করে ৭০ জন এবং সিটি করপোরেশনের বাইরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২২ জন।’ অন্য দিকে, এই সময়ে বরিশাল বিভাগে ১৩ জন ছাড়াও চট্টগ্রাম বিভাগে ১২ জন, খুলনা বিভাগে ১১ জন, রাজশাহী বিভাগে আটজন ও ময়মনসিংহ বিভাগে পাঁচজন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম দিন থেকে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট ৫৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর এই সময়ে মশাবাহিত রোগটি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক লাখ ২৯ জন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায়। ডিএসসিসিতে মশাবাহিত রোগটিতে চলতি বছর মোট ২৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্য দিকে, গেল ১ জানুয়ারি থেকে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) ১০৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি, এই সময়ে বরিশাল বিভাগে ৫৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৩ জন, ঢাকা বিভাগে ৪৯ জন, খুলনা বিভাগে ৩৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৬ জন, রাজশাহী বিভাগে আটজন ছাড়াও রংপুর বিভাগে তিনজন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় ডেঙ্গুতে একজন মারা গেছেন।

ডেঙ্গুতে আরও পাঁচ মৃত্যু, এক দিনে হাসপাতালে ২৭৪ জন

এডিস মশাবাহী রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত এক দিনে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর মশাবাহী রোগটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৫৫৬ জনে। এছাড়া গত এক দিনে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৭৪ জন। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গত এক দিনে ডেঙ্গুতে মৃত পাঁছজনের মধ্যে চারজনই ঢাকার বাসিন্দা। এরমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) দুইজন ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি একজন খুলনা বিভাগের বাসিন্দা। অন্য দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী (৬১ জন) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।’ পাশাপাশি, এই সময়ে খুলনা বিভাগে ৪৩ জন ছাড়াও চট্টগ্রাম বিভাগে ৪১ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) ৪০ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) ৩৮ জন, বরিশাল বিভাগে ৩৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে নয়জন, রাজশাহী বিভাগে চারজন, রংপুর বিভাগে তিনজন ও সিলেট বিভাগে দুইজন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গেল ১ জানুয়ারি থেকে বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট ৫৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর এই সময়ে মশাবাহিত রোগটি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৯ হাজার ৫৬৯ জন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকায়। ডিএসসিসিতে মশাবাহিত রোগটিতে চলতি বছর মোট ২৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্য দিকে, গেল ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ঢাকা উত্তর সিটিতে ১০৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি, এই সময়ে বরিশাল বিভাগে ৫৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫২ জন, ঢাকা বিভাগে ৪৯ জন, খুলনা বিভাগে ৩৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৬ জন, রাজশাহী বিভাগে আটজন ছাড়াও রংপুর বিভাগে তিনজন এবং চট্টগ্রাম সিটিতে ডেঙ্গুতে একজন মারা গেছেন।

গ্রিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অবহেলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ, চিকিৎসক আটক

নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) খরচ বহন করতে পারবে না মন্তব্য করে চিকিৎসায় কালক্ষেপণ করার অভিযোগ উঠেছে ঢাকার গ্রিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক শিক্ষার্থীর বাবা মৃত্যুবরণ করলে ক্ষোভে ফুঁসে উঠে সহপাঠীরা জড়ো হন হাসপাতালে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে আটক করে অভিযুক্ত চিকিৎসককে।প্রাপ্ত তথ্যমতে, সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতে ষাটোর্ধ মো. আজিজুর রহমান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরলে তাকে গ্রিন রোডে অবস্থিত গ্রিন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।স্বজনদের দাবি, চিকিৎসায় কালক্ষেপণ ও চিকিৎসকের দায়িত্বে অবহেলায় এমন পরিণতি হয়েছে মৃতের। এ ঘটনায় রাতেই হাসপাতালে জড়ো হন ঢাবির প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উপস্থিত হয়ে অভিযুক্ত চিকিৎসক ডাক্তার সজিব নজরুলকে আটক করে পুলিশ।মরহুমের পুত্র সাজিদ হাসান সময় সংবাদকে বলেন, ‘আমার রোগীকে গুরুত্ব না দিয়ে তারা অন্য রোগীকে গুরুত্ব দেয়। পরে আমি যখন আইসিইউতে শিফট করতে বলি, তখন তারা বলেন, আইসিইউতে কত টাকা খরচ হবে, সেটা কি আপনার ধারণা আছে? আগে দেখেন এফরড করতে পারবেন কিনা।’ তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, চিকিৎসায় কোন গাফিলতি করা হয়নি। গ্রিন লাইফ হাসাপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক একরাম হোসেন বলেন, ‘রোগীকে জরুরি বিভাগে আসান পর মাত্র ১৯ মিনিটেই ভর্তি ছাড়া আইসিইউতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এখানে দায়িত্ব অবহেলার কোন প্রমাণ পাইনি।’এ ঘটনায় কলাবাগান থানায় এজাহার দায়ের করেন নিহতের স্বজনরা। কলাবাগান থানার ডিউটি অফিসার মো. বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘টাকা না দিলে চিকিৎসা হবে না বলে কালক্ষেপণ করার অভিযোগ করা হয়েছে। আর এ অবহেলাজনিত কারণেই রোগীর মৃত্যু হয়। এ অভিযোগে এজহার দায়ের করেন নিহতের স্বজনরা।’

আইন করে সাংসদ-মন্ত্রীদের দেশে চিকিৎসা নিতে বাধ্য করার দাবি

সাংসদ-মন্ত্রীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ ভিআইপিদের বাংলাদেশে চিকিৎসা নেওয়ায় বাধ্যবাধকতা আরোপের দাবি জানিয়েছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। তিনি বলেন, ‘সাংসদ-মন্ত্রীরা দেশে চিকিৎসা নেয় না বলেই দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হয় না। তাই, প্রয়োজনে আইন করেই তাদেরকে বাংলাদেশের চিকিৎসা নিতে বাধ্য করতে হবে।’ রোববার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ৪২তম বিশেষ বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে লিখিত ও মৌখিক উভয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগবঞ্চিত চিকিৎসকদের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ কর্তা-ব্যক্তিরা কিছু হলেই ডাক্তার দেখাতে বিদেশ চলে যান। এই দেশের নাগরিক হয়ে আরেক দেশে চিকিৎসা করাতে যারা চলে যায়, এমনকি যাওয়া এবং আসার সময়ে আবার গণমাধ্যমে ঢাক-ঢোল পেটায়, তাদের কি বিন্দু পরিমাণ লজ্জা হয় না? এ রকম একটা নির্লজ্জ রাষ্ট্রব্যবস্থা স্বাধীনতার ৫৩ বছরে আমরা পেয়েছি। কোন রাজনৈতিক নেতারাই এ জন্য লজ্জিত না। তারা স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিঙ্গাপুরে যাবে অথচ কখনোই ঢাকা মেডিকেলে যাবে না। তারা মরার জন্য থাইল্যান্ড চলে যাবে, ভারত-ব্যাংককে চলে যাবে তবুও দেশের স্বাস্থ্যখাতকে তারা ভাল করবে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘দেশের সব হর্তাকর্তা, ভিআইপিসহ সব রাজপুত্র-রাজকন্যাকে ঢাকা মেডিকেল ও পিজি হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) এনে লাইনে দাঁড় করিয়ে চিকিৎসা নিতে বাধ্য করতে হবে। তাহলে, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার চেহারা পরিবর্তন হয়ে যাবে। প্রয়োজনে আইন করার মাধ্যমে এসব ব্যক্তিদের দেশে চিকিৎসা নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া, কখনই দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়।’ বিশিষ্ট এই আইনজীবী বলেন, ‘যত দিন পর্যন্ত রাজনৈতিক ব্যক্তি-আমলাসহ কর্তাব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যাওয়া অ্যালাউ করবেন, তত দিন পর্যন্ত তারা বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ভাল হতে দেবে না। কারণ, তারা বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে বিশ্বাসই করে না। তাদের কারণে দেশের সাধারণ মানুষও চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে।’ দেশের চিকিৎসার ব্যবসায়ের উন্নয়নে মিডিয়ার ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অসংখ্য মিডিয়াতেই দেখবেন কিছু দিন পরপর নিউজ হয় ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থা বদলে গেল, উন্নত হয়ে গেল, বিশ্ব মানের হয়ে গেল। এই সংবাদগুলো বাংলাদেশের কিছু ভিডিও পরিকল্পিতভাবে করে থাকে। তারাই বাংলাদেশের চিকিৎসা নিয়ে নিউজ করে সম্পূর্ণ বিপরীত। বিনা চিকিৎসা মারা গেল, ভুল চিকিৎসা শিকার হল-এই নিউজগুলো বাংলাদেশ নিয়ে নিয়মিত আপনারা দেখবেন। একটা ছোট দুর্ঘটনা ঘটলে দশটা মিডিয়া প্রথম পাতায় বড় করে নিউজ করে দেয়। এগুলো পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর অনাস্থা তৈরি করতেই করা হয়ে থাকে। তাই, আমি মিডিয়াকর্মীদের আহ্বান করব, নিজেদের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার উন্নয়নের কথা ভেবে আমাদের মূল সমস্যাগুলো তুলে ধরুন এবং সংস্কারে সহযোগী ভূমিকা পালন করুন।’ ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, ‘দেশের মোট বাজেটের ১০-১২ শতাংশ বরাদ্দ স্বাস্থ্য খাতের জন্য রাখা উচিত। কিন্তু, আমরা কখনোই ৩-৪ শতাংশের বেশি দেখতে পাচ্ছি না। একটা রাষ্ট্রকে যদি সেবার মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, সেখানে জিডিপির ন্যূনতম ৫-৭ শতাংশ স্বাস্থ্য কাদের জন্য বরাদ্দ থাকা উচিত। ব্রিটেনসহ উন্নত দেশগুলোতে দেখেছি, এই খাতে বরাদ্দ ১০-১২ শতাংশও ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু, এই জায়গাতে ৫৩ বছর ধরে রাষ্ট্র যারা চালিয়েছেন, তাদের মধ্যে সেবা খাতটাকে রাষ্ট্রের উপযোগী করার সদিচ্ছার অভাব আমরা দেখেছি এবং দেখতে পাচ্ছি।’ দেশে চিকিৎসক সংকটের কথা উল্লেখ করে এ রাজনীতিবিদ আরও বলেন, ‘চিকিৎসক সংকটে আমাদের উপজেলা হাসপাতালগুলোতে যথাযথ চিকিৎসা হচ্ছে না। তাই, ৪২ বিসিএসে যে ভাই-বোনরা টিকে গেছেন ৪৩, ৪৪, ৪৭, ৪৯তম বিসিএসের নাটক না করে দ্রুত দেশের স্বার্থে দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে তাদের অ্যাপয়েন্টমেন্টের ব্যবস্থা করুন।’ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও এবি পার্টির আহ্বায়ক মেজর (অব.) ডাক্তার আব্দুল ওহাব মিনার, ৪২তম বিসিএসে নিয়োগবঞ্চিত ডাক্তার মো. রেজওয়ান কবীর, ডাক্তার ফাতেমা আক্তার, ডাক্তার আশিক আহমেদ।

বাংলাদেশ থেকে ওষুধ আমদানি করতে আগ্রহী পাকিস্তান

বাংলাদেশ ওষুধ শিল্পে বেশ ভাল অবস্থানে আছে, পাকিস্তান বাংলাদেশ থেকে ওষুধ আমদানিতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাই কমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ। রোববার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার অফিসকক্ষে উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন সৈয়দ আহমেদ মারুফ। তারা প্রায় এক ঘণ্টা দুই দেশের সম্পর্কসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। সাক্ষাতে সৈয়দ আহমেদ মারুফ ও স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম দুই দেশের স্বাস্থ্যসেবা, বাণিজ্যসহ সার্বিক বিষয়ে মতবিনিময় করেন। এ সময় পাকিস্তানের ডেপুটি হাই কমিশনার মোহাম্মদ মারুফ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. মামুনুর রশীদ উপস্থিত ছিলেন।

ভর্তির সুযোগের আবদারে ‘অনুত্তীর্ণ’ চিকিৎসকদের বিক্ষোভ, অবরুদ্ধ ভিসি

রেসিডেন্সি কোর্সে ভর্তির সুযোগের দাবিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডাক্তার মো. শাহিনুল আলমসহ সিন্ডিকেট সদস্যদের অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করছেন উত্তীর্ণ হতে না পারা চিকিৎসকরা। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ‘বঞ্চিত’ হয়েছেন- এমন দাবি করে তারা এবার বিশেষ বিবেচনায় ভর্তি হতে চান। বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার শাহবাগে ফজিলাতুন্নেসা মুজিব কনভেনশন হলে সিন্ডিকেট মিটিং চলাকালীন তাদের ঘেরাও করে বিএসএমএমইউয়ে কর্মরত এসব মেডিকেল কর্মকর্তারা। প্রাপ্ত তথ্যমতে, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৪তম সিন্ডিকেট সভা চলাকালে আচানক কিছু লোক এসে উত্তেজিত হয়ে হৈচৈ শুরু করে। তাদের দাবি, বিগত সরকারের দীর্ঘ সময়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও ভর্তি হতে পারেনি। আবার অনেকে পরীক্ষাও দিতে পারেনি। তারা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার। তাই, তাদের এবার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করে দিতে হবে। এ সময় তারা ভিসিসহ সিন্ডিকেট সদস্যদের আটকে রাখে। এমডি-এমএস রেসিডেন্সি ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করা ১৩ চিকিৎসক বৃহস্পতিবার সকালে সিন্ডিকেট সভা চলাকালে রুমের বাইরে হট্টগোল করে। চিকিৎসকদের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ড্যাব) দুই গ্রুপের ভেতরকার উত্তেজনায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী অফিসাররা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে ড্যাবের সাবেক আহ্বায়ক ও বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাক্তার ফরহাদ হালিম ডোনারের অনুসারী এবং কর্মীরা ভিসি ও সিন্ডিকেট সদস্যদের অবরুদ্ধ করে। এরপর খবর পেয়ে সেখানে আসে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডাক্তার এজেডএম জাহিদ হাসানের অনুসারীরা। এ সময় তারা অবৈধভাবে ভর্তির সুযোগ না দেওয়ার পক্ষে স্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে অনুত্তীর্ণ হয়েও ভর্তি হতে থাকা চিকিৎসকরা পিছু হটেন। এসব নিয়ে মো. শাহিনুল আলম বলেন, ‘২০০৩-২০০৬ সাল থেকে বিএসএমএমইউতে কর্মরত রয়েছেন, কিন্তু রেসিডেন্সি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি- এমন এক দল মেডিকেল অফিসার ‍বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে আচমকা এসেই হৈচৈ শুরু করে। তারা রেসিডেন্সি ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলেও উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এবার তারা বঞ্চিত বিবেচনায় ভর্তির সুযোগ চায়।’

ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল আরো সাতজনের মৃত্যু, শনাক্ত ৫৯৬

দেশে শনিবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল আটটা থেকে রোববার (৮ ডিসেম্বর) সকাল আটটা পর্যন্ত (এক দিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরো সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। একইসঙ্গে এই সময়ে ভাইরাসটি আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরো ৫৯৬ জন। রোববার (৮ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ৩১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৭ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৩৬, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৯৮, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৩০, খুলনা বিভাগে ৭২ জন রয়েছেন। এছাড়াও, রাজশাহী বিভাগে ৩২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২০ জন, রংপুর বিভাগে আটজন ও সিলেট বিভাগে দুইজন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।’ এ দিকে, গেল এক দিনে সারা দেশে ৭৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৯৩ হাজার ৪৬৭ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে ৯৬ হাজার ২২৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে, বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৫২৯ জনের। এছাড়াও, গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। মারা যান এক হাজার ৭০৫ জন।