চা শ্রমিকদের জীবন ব্যথা দিয়ে গড়া!


Jan 2025/Tea Laborer.jpg

পূর্ব পুরুষের দেখানো পথে যুগ যুগ থেকে চা বাগানে শ্রমিক হিসেবে কাটিয়ে দিচ্ছেন জীবন। যেখানে নুন আনতে পান্তা টুকু শেষ হয়ে আসে সেখানে দিনের পর দিন দৈনিক ১৭০ টাকা মজুরিতে কাজ করে যাচ্ছেন সিলেটের হাজার হাজার চা শ্রমিক। তার ব্যাতিক্রম নয় সিলেট শহরের হালুচড়া ও মালনিচড়া চা বাগানের চা শ্রমিকরা। জীবনের মানে যদি হয় যুদ্ধ তবে সেই যুদ্ধের অঘোষিত মুক্তিযোদ্ধা এ সব চা শ্রমিকরা। প্রতিদিন সকালে প্রায় আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টার দীর্ঘ পথ হেটে আসেন কাজে। দৈনিক এই আয়ের উপর নির্ভর করে তাদের সংসার আর সন্তানদের পড়ালেখার খরচ। তবে, বেশিরভাগই চা শ্রমিকরা তাদের সন্তানদের লেখা পড়ার খরচ যোগাতে হিমশিম খান যার। ফলে, প্রাথমিকের গন্ডি কোন মতে পেরুলেও মাধ্যমিকের শিক্ষাগ্রহণের স্বাদ নেয়া হয়না।

এদের মতোই একজন রিনা দাস, দীর্ঘ দিন থেকে হিলুয়াছুড়া চা বাগানে কর্মরত স্বামী অসুস্থ থাকার ফলে স্বামীর সেবা সন্তানদের দেখভাল করে প্রতিদিন ১৭০ টাকা রোজে আধ ঘন্টার দীর্ঘ পথ পায়ে হেটে আসেন কাজে। নুন আনতে পান্তা ফুরোনো রিনা দাস বলেন, ‘আমরা পূর্ব পুরুষদের দেখানো পথ ধরেই বাগানে চা শ্রমিক হিসেবে কাজ করছি। স্বামী অসুস্থ থাকার ফলে সংসারের দায়িত্ব আমার উপর পড়েছে। মাঝেমধ্যে নিজেকে খুব হতাশ মনে হয় ,তার পরেও যেন জীবনে চলতে হয়।’

মাধ্যমিকে ভর্তি হতে না পারা ছোট বোন বাসানি বাউরি ষষ্ঠ শ্রেণীতে টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছে না। সেখানে অসুস্থ বাবা আর ছোট ভাইদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চা শ্রমিক শিখা বাউরি। তিনি বলেন, ‘সংসারের অভাবের মধ্যে নিজে লেখাপড়া করতে পারিনি। এখন ছোট বোনকেও লেখাপড়া করতে পারব বলে মনে হয় না। প্রতিদিন সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। নিজের কত খারাপ লাগে বুঝাতে পারবো না।’ 

গত ৫ নভেম্বর টানা ১৫ দিনের কর্মবিরতিরসহ সিলেটে বিক্ষোভ সমাবেশ করে লাক্কাতুরাসহ বেশ কয়েকটি চা বাগানের শ্রমিকরা। যেখানে ন্যাশনাল টি কোম্পানির লাক্কাতুরা, কেওয়াচড়া, দলদলি চা বাগানের শ্রমিকদের উপস্থিতিতে ছেলে-বুড়ো, নারী-পুরুষসহ সব বয়সী মানুষ নানা ধরনের প্রতিবাদী স্লোগানে (‘বেতন নিয়ে টালবাহানা, চলবে না, চলবে না’, ‘বেতন-ভাতা না পেলে, রাজপথ ছাড়বো না’, ‘মালিকের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’) চারপাশ মুখরিত করে তুলেন। তবে, বাগান মালিক সূত্রে জানা যায়, প্রতি সপ্তাহে সাড়ে তিন কেজি চালসহ বিভিন্ন সময় সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়ে থাকে এসব বাগান শ্রমিকদের।

সিলেটে চায়ের জন্য বিখ্যাত জেলার ১৯ টি চা বাগান থেকে প্রতি বছরই আয় হয় কাড়িকাড়ি টাকা। তবে, দিনের পর দিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খাটা এসব চা শ্রমিক এভাবেই কাটিয়ে দিচ্ছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। 

সুযোগ-সুবিধা আর দৈনিক মজুরি বাড়ানোর দাবিতে নানা সময় আন্দোলন করলেও আশানুরুপ ফলাফল পাননি তারা। আক্ষেপ আর হতাশা বুকে চেপে বেশিরভাগ মহিলার ধরেছেন সংসারের হাল; যেখানে অনেকের স্বামী পঙ্গু হয়ে ঘরে পড়ে আছে। আবার কারো বাবা নেই। এ যেন লুকানো এক চাপা কষ্ট নিয়ে বসবাস করছেন তারা। 

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট জেলা শাখার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘চা বাগানের শ্রমিকদের ১৭০ টাকা মজুরিতে কাজ করার বিষয়টি মানবিক দিক থেকেই অন্য রকম খারাপ লাগা কাজ করে। আমার মনে হয়, নূন্যতম মজুরি ৩০০ টাকা হওয়া উচিত। এ ছাড়া সব শ্রেণীর শ্রমিকদের প্রতি নজর দেয়া উচিত।’

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×