ট্রাম্পের সাথে বিবাদ মিটিয়ে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারবেন ইউনূস!
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৫:৪৩ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০২৪
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে দূরত্ব মিটিয়ে নয়া মার্কিন প্রশাসনের সাথে সম্পর্ক এগিযে নিতে পারবেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে হংকংভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট প্রতিবেদনে এমন প্রত্যাশার কথা বলা হয়েছে।
ট্রাম্পের সাথে ইউনূসের দূরত্ব ও বিরোধপূর্ণ সম্পর্কটি ‘ওপেন সিক্রেট’। কিন্তু, বাংলাদেশের সাথে ভারত ও চীনের কৌশলগত ভাল সম্পর্ক থাকায় বাংলাদেশকেও যুক্তরাষ্ট্রের দরকার রয়েছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘ট্রাম্প এমন সময়ে ক্ষমতায় এসেছেন, যখন শেখ হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশ পুনর্গঠন ও স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন ইউনূস। তাই, আমি মনে করি ইউনূস খুব দ্রুতই ট্রাম্পের সাথে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলবেন।’
কুগেলম্যান আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, ইউনূস পুনরায় ট্রাম্পের সমালোচনা করবেন না। ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পরপরই ইউনূসের পক্ষ থেকে অভিনন্দন বার্তা সেই ইঙ্গিতই দেয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, ‘ইউনূস বর্তমানে ১৭ কোটি মানুষের একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন, যে দেশটির ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে দক্ষিণ এশিয়া এবং এর বাইরেও। সুতরাং, তখনকার ও বর্তমানের পরিস্থিতি ভিন্ন। ইউনূস বাংলাদেশের বৈদেশিক সম্পর্কগুলো বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে নিপুণভাবে পরিচালনা করছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতি ট্রাম্পের নীতি পরিবর্তনের চেয়ে বেশি চলমান থাকবে। কারণ, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেন।’
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইপিএজি এশিয়া-প্যাসিফিক অস্ট্রেলিয়ার চেয়ারম্যান সৈয়দ মুনির খসরু বলেন, ‘ট্রাম্প-ইউনূসের ‘সম্পর্ক জটিল করেছে’, ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনকে ইউনূস যে ডোনেশন দিয়েছিলেন, সেই ব্যাপারটি।’
তবে, ব্যাপারটি বাংলাদেশের পুরো বৈদেশিক নীতির প্রতিনিধিত্ব করে না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশ পারস্পরিক লাভজনক ক্ষেত্র- যেমন ব্যবসায়, উন্নয়ন ও প্রযুক্তিতে ভাল সম্পর্ক বজায় রেখেছে বলেও জানান তিনি।
২০২২ সালে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। এই বিশ্লেষকের মতে, ট্রাম্পের নয়া প্রশাসনের সাথে বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করবে, বিশেষ করে ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে। তার মতে, নির্বাচনের পূর্বে ট্রাম্প বাংলাদেশকে নিয়ে যে পোস্ট দিয়েছিলেন, সেটি তার নীতির প্রতিনিধিত্ব নয়, মূলত নির্বাচনী প্রচারণার অংশ ছিল।
গেল ৫ নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলে ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস ট্রাম্পকে বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানান। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অংশীদারত্ব জোরদার করার জন্য উন্মুখ বলেও শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি উল্লেখ।
ইউনূস ও ট্রাম্পের মধ্যে বিরোধ মূলত ২০১৬ সালে ট্রাম্প প্রথম বার যুক্তরাষ্ট্রেওর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সময় শুরু হয়। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ইউনূস তার কড়া সমালোচনা করেছিলেন এবং ট্রাম্পের জয়কে ‘একটি সূর্যগ্রহণ’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।
অন্য দিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক দলের নেতাদের সাথে ইউনূসের সম্পর্ক বরাবরই হৃদত্যাপূর্ণ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও বিলের স্ত্রী প্রাক্তন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের খুব ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত।