ট্রাম্পের হুমকিতে ঘাবড়ে গেছে ভারত, নিচ্ছে নানা পদক্ষেপ


Feb 2025/Trump Modi.jpg

মোটরসাইকেলের আমদানি শুল্ক গত সপ্তাহে আরও কমিয়েছে ভারত। ১ হাজার ৬০০ সিসির বেশি ইঞ্জিন ক্ষমতাসম্পন্ন ভারী মোটরসাইকেলের শুল্ক ৫০ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ এবং ছোট মোটরসাইকেলের শুল্ক ৫০ থেকে কমিয়ে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ হারলে ডেভিডসনের মতো মার্কিন মোটরসাইকেল কোম্পানিগুলোর ভারতীয় বাজারে প্রবেশ সহজ করার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য শুল্ক হুমকি এড়ানোর চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত বছর ভারতে মার্কিন মোটরসাইকেল রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩ মিলিয়ন ডলার। খবর বিবিসির।

ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পরপরই প্রতিবেশী দেশ, মিত্র ও চীনের মতো বড় প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে চড়া শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। ভারতের ধারণা, তারা এই খেলায় এগিয়ে আছে। তবে এখন প্রশ্ন হলো ভারতের আগাম শুল্ক হ্রাস কি ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট করতে পারবে, নাকি দেশটির ওপর ট্রাম্পের শুল্ক খড়গ নেমে আসবে?

দিল্লিভিত্তিক থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (জিটিআরআই) প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব বলেছেন, ‘কানাডা ও মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রের দুই বাহু। তিনি যদি তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারেন, তাহলে ভারতের বিরুদ্ধেও সহজেই পদক্ষেপ নিতে পারেন।’

গত মাসের শেষের দিকে ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে টেলিফোন আলোচনায় ট্রাম্প মোদিকে আরও বেশি মার্কিন অস্ত্র কিনতে এবং বাণিজ্য ভারসাম্য ন্যায্য করতে চাপ দিয়েছেন। ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ভারতের উচ্চ শুল্কনীতির সমালোচনা করেছিলেন। তিনি হারলে ডেভিডসনের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ককে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে বার বার সমালোচনা করেছিলেন এবং এটিকে তার বাণিজ্য ন্যায্যতা আন্দোলনের একটি মূল বিষয় হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। তিনি ভারতকে ‘শুল্ক রাজা’ ও বাণিজ্য সম্পর্কের ‘বড় অপব্যবহারকারী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

ভারত তার শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত উপভোগ করে। ২০২৩ সালে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১৯০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি ৪০ শতাংশ বেড়ে ১২৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। অন্যদিকে সেবা রপ্তানি ২২ শতাংশ বেড়ে ৬৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এদিকে ভারতে মার্কিন রপ্তানির পরিমাণ ৭০ বিলিয়ন ডলার।

মোটরসাইকেল ছাড়াও ভারত স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড ইনস্টলেশনের ওপর আমদানি শুল্ক শূন্যে নামিয়ে এনেছে, যা ২০২৩ সালে ৯২ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করা মার্কিন রপ্তানিকারকদের উপকৃত করবে। সিনথেটিক ফ্লেভারিং এসেন্সের শুল্ক ১০০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। অন্যদিকে জলজ খাবারের জন্য ফিশ হাইড্রোলাইজেটের শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে (২০২৪ সালে মার্কিন রপ্তানি ৩৫ মিলিয়ন ডলার)। ভারত কিছু বর্জ্য এবং স্ক্র্যাপ আইটেমের উপর শুল্কও বাতিল করেছে, যেখানে গত বছর মার্কিন রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।

২০২৩ সালে ভারতে শীর্ষ মার্কিন রপ্তানির মধ্যে রয়েছে অপরিশোধিত তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্য (১৪ বিলিয়ন ডলার), এলএনজি, কয়লা, মেডিকেল ডিভাইস, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, স্ক্র্যাপ ধাতু, টার্বোজেট, কম্পিউটার ও বাদাম।

অজয় শ্রীবাস্তব বলেছেন, ‘যদিও ট্রাম্প ভারতের শুল্কনীতির সমালোচনা করেছেন। সাম্প্রতিক শুল্ক হ্রাস একটি নীতি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় যা বিভিন্ন খাতে মার্কিন রপ্তানি বাড়াতে পারে। প্রযুক্তি, অটোমোবাইল, শিল্প ও বর্জ্য আমদানির ওপর মূল শুল্ক হ্রাসের মাধ্যমে ভারত বাণিজ্য সহজীকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যদিও বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিবেশ এখনো উত্তপ্ত রয়েছে।’

এদিকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের তালিকা বেশ বৈচিত্র্যময়। টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য থেকে শুরু করে পেট্রোলিয়াম তেল, যন্ত্রপাতি ও কাটা হীরা। এ ছাড়া স্মার্টফোন, অটো পার্টস, চিংড়ি, সোনার গহনা, জুতা এবং লোহা ও ইস্পাত রপ্তানি করে ভারত। এর ফলে ভারত বৈশ্বিক বাণিজ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়।

বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিৎ ধর মনে করেন যে, ট্রাম্পের আমেরিকা ফার্স্ট নীতির অধীনে ভারত এখন একটি প্রধান টার্গেট। তিনি বলেছেন, কৃষি বাজারে প্রবেশাধিকার যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় বাধা হয়ে রয়েছে।

ভারত ২০২৩ সালে মার্কিন-নির্মিত বাদাম, আপেল, ছোলা, মসুর ডাল এবং আখরোটের ওপর প্রতিশোধমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। তবে ট্রাম্প সম্ভবত আরও বেশি দাবি করবেন। তবে কৃষি বিষয়ে দেশীয় রাজনৈতিক সংবেদনশীলতার কারণে ভারত দৃঢ় থাকতে পারে। ট্রাম্প সতর্ক করেছেন, এখানেই আমরা কঠোর চুক্তি করব, এবং সমস্যা দেখা দিতে পারে।

তবে চীনকে মোকাবিলায় কোয়াড সদস্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের কৌশলগত সম্পর্ক এই চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। বিশ্বজিৎ ধর জানান, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ভারতের অনীহা না দেখানো একটি ইতিবাচক সংকেত পাঠিয়েছে। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞরা মোদি ও ট্রাম্পের মধ্যে উষ্ণ ব্যক্তিগত সম্পর্ককে একটি সুবিধা হিসেবে দেখছেন। 

কিছু প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্পের আমন্ত্রণে এই মাসে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হোয়াইট হাউস সফর করলে কিছু স্পষ্টতা আসবে।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×