জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের প্রতিবেদন

গাজায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও যৌন সহিংসতার অভিযোগ


March25 Naeem/gaza.jpg

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা এক প্রতিবেদনে অভিযোগ করেছেন যে, গাজায় ইসরায়েল নারীর স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড’ চালিয়েছে এবং যৌন সহিংসতাকে যুদ্ধ কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজায় ফিলিস্তিনিদের প্রজনন ক্ষমতা আংশিকভাবে ধ্বংস করেছে এবং জন্মনিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে, যা রোম সংবিধি ও গণহত্যা কনভেনশনে গণহত্যার একটি বিভাগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই প্রতিবেদনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, এটি পক্ষপাতদুষ্ট ও ইহুদিবিরোধী। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, সন্ত্রাসী সংগঠন হামাসের মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের দিকে মনোযোগ দেওয়ার পরিবর্তে জাতিসংঘ আবারও মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ইসরায়েল রাষ্ট্রকে আক্রমণ করেছে।

জাতিসংঘের স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন বলেছে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ গাজায় ফিলিস্তিনিদের প্রজনন ক্ষমতা আংশিকভাবে ধ্বংস করেছে। এর মধ্যে রয়েছে জন্মনিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া, যা গণহত্যার একটি শর্ত। কমিশন বলেছে, চিকিৎসা সরবরাহে বাধার কারণে মাতৃমৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়াও মানবতাবিরোধী অপরাধের অন্তর্ভুক্ত। 

প্রতিবেদনে আরও অভিযোগ করা হয়েছে যে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের নেতৃত্বে দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার পর ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী ফিলিস্তিনিদের শাস্তি দেওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক প্রকাশ্য নগ্নতা ও যৌন সহিংসতাকে তাদের আদর্শ কার্যপদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করেছে। 

ইসরায়েল এই অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে। জেনেভায় জাতিসংঘে ইসরায়েলের স্থায়ী মিশন এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) নির্দিষ্ট নির্দেশিকা ও নীতি রয়েছে, যা এই ধরনের অপকর্মকে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করে। তারা আরও বলেছে যে, তাদের পর্যালোচনা প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। 

২০২৪ সালের জুনে প্রকাশিত কমিশনের একটি পূর্ববর্তী প্রতিবেদনে হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছিল। গত বছরের মার্চে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের একটি দল বলেছিল যে, হামাসের হামলার সময় বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণসহ যৌন সহিংসতা ঘটেছে বলে বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ রয়েছে। 

ইসরায়েল গণহত্যা কনভেনশনের সদস্য এবং ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশনা পেয়েছে যে, হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় গণহত্যার কাজ প্রতিরোধ করতে হবে। তবে ইসরায়েল রোম সংবিধির সদস্য নয়, যা আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ব্যক্তিগত মামলাগুলোতে রায় দিতে সক্ষম করে। 

দক্ষিণ আফ্রিকা গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার মামলা দায়ের করেছে। 

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস দক্ষিণ ইসরায়েলে সীমান্ত পেরিয়ে হামলা চালায়, যার ফলে গাজা উপত্যকায় একটি ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়। গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, এই যুদ্ধে ৪৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ইসরায়েলি হিসাব অনুযায়ী, হামাসের যোদ্ধারা ১ হাজার ২০০ মানুষকে হত্যা করেছে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করেছে।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×