তুরস্কে গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরেছেন এরদোয়ান


March 2025/Erdoan democracy.jpg
রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান

রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ২২ বছর ধরে তুরস্ক শাসন করছেন। তার শাসনামলে দেশটির গণতান্ত্রিক ভিত্তি ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়েছে। ২০১৭ সালে সংবিধান পরিবর্তনের পর থেকে এরদোয়ান প্রায় অবারিত ক্ষমতায় দেশ পরিচালনা করছেন। তার সরকার এখন তুরস্কের বিচার বিভাগ, নিরাপত্তা সংস্থাসহ প্রায় সব গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। সংবাদ দ্য ইকোনমিস্টের।

তবুও এত দিন পর্যন্ত রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা তুরস্ককে ‘প্রতিযোগিতামূলক স্বৈরতন্ত্র’ বলে অভিহিত করতেন- যেখানে বিরোধী দল তত্ত্বগতভাবে নির্বাচন জিততে পারে এবং স্থানীয় পর্যায়ে মাঝে মাঝে জিতেও থাকে। কিন্তু, গত ১৯ মার্চ ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর গ্রেফতারের ঘটনা সেই চিত্র বদলে দিতে পারে।

এরদোয়ানকে অনেকেই ১৯৯০-এর দশক থেকে সম্ভাব্য একনায়ক হিসেবে দেখে আসছেন। তিনি এক বার বলেছিলেন, ‘গণতন্ত্র হলো একটি ট্রাম; গন্তব্যে পৌঁছালে তা থেকে নেমে যেতে হয়।’ যদিও ক্ষমতার শুরুর বছরগুলোতে এরদোয়ান অনেককে আশ্বস্ত করেছিলেন, তবে পরে তিনি বিরোধীদের দমন করতে গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন।

২০১৫ সালে কুর্দিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়ে বহু নেতাকে কারাগারে পাঠান এরদোয়ান। পরের বছর ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর হাজার হাজার মানুষকে আটক করা হয়, যাদের অনেকেরই অভ্যুত্থানের সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। একই সঙ্গে তিনি গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করেন।

কিন্তু ইমামোগলুর গ্রেফতার এক নতুন মোড় নিয়ে এসেছে। ইস্তাম্বুলের এই জনপ্রিয় মেয়র ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোয়ানের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে আসছিলেন। গত বছর তার দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) স্থানীয় নির্বাচনে এরদোয়ানের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (একেপি) পার্টিকে পরাজিত করে চমক দেখায়। অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও দুর্নীতির অভিযোগ এরদোয়ানের জনপ্রিয়তায় ধস নামিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইমামোগলু সিএইচপির প্রধান নেতা হয়ে উঠলে তুরস্কে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতা পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হয়। কিন্তু তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে কারাগারে পাঠানো প্রমাণ করে, এরদোয়ান ক্ষমতা হারানোর চেয়ে গণতন্ত্র বিলুপ্ত করাকেই শ্রেয় মনে করছেন।

এরদোয়ান এমন পদক্ষেপ নেওয়ার কারণ আন্তর্জাতিক মহল এখন দুর্বল প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক গণতন্ত্রের মানদণ্ড নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাচ্ছে না। ইউরোপ ব্যস্ত রয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ ও ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন নিয়ে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তুরস্ককে প্রয়োজন মনে করছে, বিশেষত ইউক্রেনের জন্য সম্ভাব্য শান্তিরক্ষী বাহিনী সরবরাহের ক্ষেত্রে। একই সঙ্গে, ২০১৫-১৬ সালের শরণার্থী সংকটের পর থেকে ইইউ তুরস্কের ওপর নির্ভর করছে অভিবাসীদের আটকে রাখার জন্য।

ইমামোগলুর গ্রেফতারের পর ইউরোপীয় কমিশনের প্রতিক্রিয়াও ছিল নড়বড়ে, তারা কেবল তুরস্ককে ‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বজায় রাখতে’ বলেই ক্ষান্ত থেকেছে। যদিও ফ্রান্স ও জার্মানি তুলনামূলকভাবে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। আসলে, ইউরোপ আরও কঠোর হতে পারতো। তুরস্কের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদের প্রক্রিয়া স্থগিত রেখে এবং এরদোয়ানের কৌশলগত স্বার্থে আঘাত হেনে ইইউ তাকে চাপ দিতে পারতো।

তবে আন্তর্জাতিক শক্তি এরদোয়ানকে স্বৈরতন্ত্রে রূপ নেওয়া থেকে বিরত রাখতে পারবে না—তা পারে কেবল তুর্কি জনগণই। কিছু নাগরিক তার কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিষয়ে শঙ্কিত, অন্যরা ক্রমশ খারাপ হতে থাকা অর্থনীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিনিয়োগকারীরা সংস্কারের আশা ছাড়ছেন।

এরই মধ্যে ইমামোগলুর গ্রেফতারের প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমেছে এবং পুলিশি দমন-পীড়নের মুখোমুখি হচ্ছে। গণতান্ত্রিক বিশ্ব তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করবে, কিন্তু বাস্তবে তাদের জন্য কিছু করার সম্ভাবনা খুব কম।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×