মৃত্যুপুরীতে ঈদ, তবুও সন্তানদের খুশি রাখার চেষ্টা গাজার মায়েদের
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১০:০১ পিএম, ৩০ মার্চ ২০২৫

দীর্ঘ ১ মাস সিয়াম সাধনার পর মুসলিমদের ঘরে আনন্দের বার্তা নিয়ে এসেছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। কিন্তু উৎসবের আমেজ ফেরেনি গাজাবাসীর জীবনে। নেই নতুন কাপড় কিংবা ভালো খাবারের আয়োজন। এর মধ্যেই ইসরাইলের হামলা চলছে। ভয়ে ঘর ছেড়ে বের হতে নারাজ কোমলমতি শিশুরাও। এর মধ্যেই শিশুদের মুখে হাসি ফোঁটানোর জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গাজার মায়েরা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর অবরুদ্ধ উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনী হামলা শুরু হয়। টানা ১৫ মাস পর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও তা স্থায়ী হয়নি। চুক্তি লঙ্ঘন করে গত ১৮ মার্চ থেকে বিরামহীন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। ফলে প্রতিক্ষণে ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। দীর্ঘ হচ্ছে হতাহতের তালিকা।
এমন রক্তপাত ও ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেই দ্বিতীয়বারের মতো এলো ঈদুল ফিতর। বিশ্ব মুসলিমের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব সবার জন্য খুশির বার্তা নিয়ে আসলেও গাজার বাসিন্দাদের মধ্যে তার ছিটেফোঁটাও নেই।
গত ২ মার্চ থেকে ইসরাইল গাজা উপত্যকার ওপর পূর্ণ অবরোধ আরোপ করেছে। সমস্ত সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দিয়েছে। মানবিক, চিকিৎসা ও ত্রাণ সহায়তা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ফলে বাজারগুলো প্রায় খালি। অবশিষ্ট পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। ফলে যুদ্ধের কারণে দরিদ্র ফিলিস্তিনিদের জন্য মৌলিক চাহিদা পূরণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
গত সপ্তাহে গাজা সরকারি মিডিয়া অফিস জানায়, অব্যাহত অবরোধ ও জীবন রক্ষাকারী সহায়তা প্রবেশে বাধার কারণে পুরো অঞ্চল দুর্ভিক্ষের প্রথম পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। এরই মধ্য উপত্যকাটি ছেড়ে পালাতে হয়েছে অনেক পরিবারকে।
এক কথায়, গাজার জীবন এখন এক অবর্ণনীয় যন্ত্রণার নাম। ঈদ বা রমজানে এখানকার শিশুদের বিশেষ কোন আনন্দ নেই। উৎসব উদযাপনেও কারও কাছে নেই প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ। এমন নাজুক অবস্থার মধ্যেও ক্ষীণ আশা বুকে নিয়ে টিকে থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন গাজাবাসী।
টিকে থাকার সেই চেষ্টারই পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে ঈদের দিনেও। রোববার (৩০ মার্চ) ঈদের সকালেও গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় বোমা হামলা চালানো হয়েছে। এতে শিশুসহ বেশ কয়েকজন নিহত হয়। এর মধ্যেও আশ্রয়কেন্দ্রের তাঁবুতে বসবাসরত মায়েরা শিশু সন্তানদের মুখি একটু হাসি ফোটানোর জন্য চেষ্টা করছেন।
যেমন খান ইউনিসের একটি আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দা কাউসার হুসেইন। ঈদের সকালে আশ্রয়কেন্দ্রের একটি তাঁবুর কোণে বসে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করছিলেন, যখন গাজা উপত্যকার কাছাকাছি এলাকায় ইসরাইলি কামান থেকে গোলাবর্ষণ চলছে। উদ্দেশ্য, ঐতিহ্যবাহী বিস্কুক কাক বানানো যা শিশুদের খুবই প্রিয়।
অবরোধের কারণে রান্নার গ্যাসের কোন ব্যবস্থা না থাকায়, নারীরা রান্নার জন্য পিচবোর্ড ও কাঠ ব্যবহার করছেন, যা সময়সাপেক্ষ ও ক্লান্তিকর। এতে প্রচণ্ড ধোঁয়াও নির্গত হয়। সেই ধোঁয়া উপেক্ষা করেই হুসেইন সাবধানে ট্রেতে বিস্কুট দিয়ে সেকা শুরু করেন।
হুসেইন বলছিলেন, ‘এখানকার পরিবেশ খুবই দুঃখজনক। আমরা অনেক আত্মীয়স্বজন ও প্রিয়জনকে হারিয়েছি এবং আমরা একটি বড় মানবিক সংকটে ভুগছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন একটি জাতি যারা জীবনকে ভালোবাসি। আমরা চাই না আমাদের সন্তানরা বঞ্চনার মধ্যে থাকুক। আমরা তাদের যথাসাধ্য সবকিছু দেয়ার চেষ্টা করি, এমনকি যদি তা সামান্যও হয়।’
যুদ্ধের আগে হুসেইন প্রতি ঈদের সময় প্রায় ৯ কেজি বিস্কুট বা কুকিজ তৈরি করতেন। কিন্তু এ বছর মাত্র এক কেজি কুকিজ তৈরি করেন তিনি। যদিও চারপাশে শোকের চিহ্ণ। কিন্তু এরপর হুসেইনের বিশ্বাস, ঈদ উদযাপন এখনও ‘আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন একটি আচার-অনুষ্ঠান যা পুনরুজ্জীবিত করা উচিত’।