বাতাসে লাশের গন্ধ: স্বজন হারানোর বেদনায় কাঁদছে মিয়ানমার


March 2025/Myanmar.jpg

মিয়ানমারের সাগাইং শহরে গত ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর বাতাসে ভাসছে লাশের গন্ধ। স্থানীয় বাসিন্দা থার ন্‌গের কথায়, এখন বাতাসের প্রতি ঝাপটাতেই মরদেহের গন্ধ বাতাসে ভেসে আসছে।

গত শুক্রবারের (২৮ মার্চ) ওই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের সবচেয়ে কাছাকাছি শহর সাগাইং। সেখানে এখন জীবিতদের চেয়ে মরদেহই বেশি উদ্ধার হচ্ছে। রোববার আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে থার ন্‌গে জানান, মান্দালয় থেকে উদ্ধারকর্মীরা মাত্র কিছুক্ষণ আগে সেখানে পৌঁছেছে, কারণ ইরাবতি নদীর ওপর ইয়াদানাবন সেতু খুলে দেওয়া হয়েছে।

৯০ বছর আগে ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত অ্যাভা সেতুসহ বহু অবকাঠামো এই ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৭০০র বেশি মানুষ নিহত এবং ৩ হাজার ৪০০র বেশি আহত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

থার ন্‌গে বলেন, মান্দালয় থেকে উদ্ধারকারী দল আসতে পারেনি। কারণ একটি সেতু ধসে পড়েছিল। তাই তারা আজই এখানে পৌঁছেছেন।

তিনি জানান, প্রায় ৯০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, যেখানে মাত্র ৩৬ জনকে জীবিত অবস্থায় ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করা সম্ভব হয়েছে। শহরের বহু মানুষ প্রিয়জনদের হারিয়েছেন।

সাগাইং শহরের অনেক মঠ ও নানাবাস ভেঙে পড়েছে, যেখানে বহু সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনী আটকা পড়েছেন। তিনি বলেন, এখন আর জীবিত উদ্ধারের দিকে তেমন নজর নেই, বরং মরদেহ বের করে সমাহিত করাই প্রধান লক্ষ্য হয়ে উঠেছে।

মান্দালয় শহরটি ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে মাত্র ২২ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। সেখানে বিশেষায়িত যন্ত্রপাতির অভাবে উদ্ধারকর্মী ও স্বজনেরা খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে জীবিতদের বের করার চেষ্টা করছেন।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের ফলে রাস্তা ভেঙে পড়েছে, বহু ভবন ধসে পড়েছে এবং পুরো মান্দালয় ও সাগাইং অঞ্চলের অধিকাংশ জায়গায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এর মধ্যে রোববার তাপমাত্রা ছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা উদ্ধারকাজকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
গরমে পচে যাচ্ছে মরদেহ

উদ্ধারকারী হ্‌তেত ওয়াই ইয়াঙ্গুন থেকে মান্দালয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ভূমিকম্পের পর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সংযোগ সীমিত থাকায় ফেসবুকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই তারা উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন।

হ্‌তেত বলেন, যেখানে উদ্ধার অভিযান চালাতে গিয়েছি, সেখানে প্রথমেই একটি মরদেহ উদ্ধার করতে হয়েছে। এই গরমের মধ্যে মরদেহ দ্রুত পচে যাচ্ছে, ফলে আমরা আরও বেশি মরদেহের সন্ধান পাবো বলে আশঙ্কা করছি। তবে যতটা সম্ভব প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করবো।

তিনি জানান, উদ্ধারকাজে দক্ষ কর্মী ও ভারী যন্ত্রপাতির পাশাপাশি এখন সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন মরদেহ বহনের ব্যাগের।

আবহাওয়া পূর্বাভাস বলছে, আগামী কয়েক দিনে মিয়ানমারের এই অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি উঠতে পারে। হ্‌তেত ওয়াই বলেন, আমরা যে দেহটি উদ্ধার করেছি, তাতে এরই মধ্যে পচন ধরেছে। এটি হৃদয়বিদারক।

তিনি বলেন, এই দুর্যোগের মাত্রা এত বড় যে, আমাদের একার পক্ষে এটি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×