
যুক্তরাষ্ট্রের বিমানপরিবহন শিল্প শাটডাউনের প্রভাবের তীব্রতা অনুভব করছে। শুক্রবার (৭ নভেম্বর) দেশটির বিভিন্ন বিমানবন্দরে একদিনে ৫ হাজারেরও বেশি ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্বের ঘটনা ঘটেছে। এটির পেছনে কারণ হলো নতুন সরকারি নির্দেশনা, যার ফলে এয়ারলাইনগুলোকে ফ্লাইট সংখ্যা সীমিত করতে হয়েছে।
শুক্রবার থেকে কার্যকর হওয়া এই জরুরি নির্দেশনার আওতায় দেশের ৪০টি প্রধান বিমানবন্দরে ফ্লাইট সংখ্যা ৪ শতাংশ কমানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ এই হ্রাস ১০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাবে বলে জানিয়েছে ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ)।
সরকারের এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো বেতনহীন অবস্থায় কর্মরত এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারসহ অপরিহার্য সরকারি কর্মীদের ওপর চাপ কমানো। শাটডাউনের শুরু থেকেই অনেক কর্মী অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অথবা জীবিকা নির্বাহের জন্য বিকল্প কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের চলমান এই শাটডাউন দেশটির ইতিহাসের দীর্ঘতম। এতে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা বিনা বেতনে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। দীর্ঘদিন বেতন না পাওয়ার কারণে অনেকে মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছেন।
ন্যাশনাল এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নিক ড্যানিয়েলস বলেন, "আমরা যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। কিন্তু আমরা নিজের পকেটের টাকা ঢালতে পারি না; সরকার চালু করাই একমাত্র সমাধান।"
পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি জানান, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট এখনো তেমন প্রভাবিত হয়নি। "যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক চুক্তির কারণে নির্দিষ্ট রুট বজায় রাখতে বাধ্য," তিনি বলেন। তবে সতর্ক করে তিনি জানাচ্ছেন, শাটডাউন দীর্ঘায়িত হলে ফ্লাইট কর্তনের হার ২০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
নতুন নির্দেশনা কার্যকর হওয়ার পর থেকে বিমানবন্দরগুলোতে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন, ফ্লাইট বিলম্ব ও বাতিলের বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে।
ডেল্টা, ইউনাইটেড ও আমেরিকান এয়ারলাইনসসহ বেশ কিছু এয়ারলাইন যাত্রীদের বিনা ফিতে টিকিট পরিবর্তন বা রিফান্ডের সুযোগ দিয়েছে।
ওয়াশিংটন ডিসির রিগ্যান ন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে আটলান্টার উদ্দেশে যাত্রা করা যাত্রী জো সুলিভান বলেন, "বিমানবন্দরে পৌঁছানোর আগেই ফ্লাইট বাতিলের খবর পাই। নতুন ফ্লাইট পাওয়া গেছে ১২ ঘণ্টা পর, পরের দিন সকালে। বিয়েতে যেতে পারব হয়তো, কিন্তু পরিবারের সঙ্গে আগেভাগে সময় কাটানোর পরিকল্পনা ভেস্তে গেল।"
অন্য একজন যাত্রী জানান, ফ্লাইট বাতিলের সম্ভাবনা এড়াতে তিনি ৩০০ ডলারের ট্রেন টিকিট কিনেছেন। এতে তিনি সাত ঘণ্টায় গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন, যেখানে ফ্লাইটের সময় মাত্র এক ঘণ্টা ছিল।
ফেডারেল কর্মী আরিয়ানা জাকোভলজেভিচ বলেন, "আমি সদ্য কলেজ শেষ করে প্রথম চাকরি শুরু করেছি। এখন শাটডাউনের কারণে বেতন বন্ধ। আশা করছি দ্রুত সমাধান হবে।"
৩৮ দিন ধরে চলা শাটডাউনের সমাপ্তি এখনো অনিশ্চিত। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে রাজনৈতিক অচলাবস্থা অব্যাহত থাকলেও সম্প্রতি আলোচনার কিছু সূচনামূলক ইঙ্গিত দেখা দিয়েছে।
ডেমোক্র্যাটরা শুক্রবার একটি নতুন তহবিল বিল প্রস্তাব করেছেন, তবে রিপাবলিকানদের সমর্থন না থাকায় এর পাস হওয়ার সম্ভাবনা কম। মার্কিন সিনেটে কোনো বিল পাস করার জন্য ৬০ ভোট প্রয়োজন, যেখানে রিপাবলিকানদের সংখ্যা ৫৩ ও ডেমোক্র্যাটদের ৪৭।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিলিবাস্টার নিয়ম বাতিল করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বিল পাসের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে প্রস্তাবে দলীয় বিভাজন স্পষ্ট, কারণ উভয় দলের বেশিরভাগ সিনেটর নিয়ম পরিবর্তনের বিরোধী।
ট্রাম্প শুক্রবার ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লেখেন, "ডেমোক্র্যাটদের শাটডাউন শেষ না হওয়া পর্যন্ত সিনেটের কাজ থামানো উচিত নয়। যদি চুক্তি না হয়, তবে রিপাবলিকানদের উচিত অবিলম্বে ফিলিবাস্টার বাতিল করা এবং আমেরিকার পরিশ্রমী জনগণের পাশে দাঁড়ানো।"