মিয়ানমারে নিহতের সংখ্যা হাজার ছাড়াল, নিখোঁজ ৩০

মিয়ানমারের ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। নিহতের সরকারি সংখ্যা ১০০২ জনে পৌঁছেছে। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। খবর-বিবিসি নিহতদের বেশিরভাগই মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের। মান্দালয় ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের সবচেয়ে কাছের শহর। ভূমিকম্পে আহতের সংখ্যা ২,৩৭৬ জন। এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন ৩০ জন। মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের উদ্ধারকর্মীরা এখনও জীবিতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে মিয়ানমারে। এর কেন্দ্রস্থল ছিল দেশটির উত্তর-পশ্চিমের শহর সাগাইং থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে। এলাকাটি রাজধানী নেপিদো থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তরে। ভূমিকম্পটির তীব্র প্রভাব অনুভূত হয় প্রতিবেশী বাংলাদেশ, চীন, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে। ভূকম্পন এতটাই শক্তিশালী ছিল, প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূরে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে জোরালো কম্পন অনুভূত হয়। মিয়ানমারের জান্তা সরকারের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি জানায়, দেশটিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রাজধানী নেপিদোতে। সেখানে কমপক্ষে ৯৬ জন নিহত হয়েছেন। সাগাইংয়ে ১৮ জন ও মান্দালয়ে ৩০ জন নিহত হন। এর মধ্যে জুমার নামাজের সময় দুটি মসজিদ ধসে পড়ে কমপক্ষে ৩৪ জন নিহত হয়েছেন। থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, তাদের একটি নির্মাণাধীন ভবনে শতাধিক শ্রমিক কাজ করছিলেন। এটি ধসে পড়লে অন্তত ৯০ জন নিখোঁজ আছেন। ৬ জন নিহত ও ২২ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে রাজধানী ব্যাংককের কর্তৃপক্ষ। শক্তিশালী ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত মিয়ানমারের সামরিক সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য আবেদন করেছে। সামরিক শাসক মিন অং হ্লাইং ভূমিকম্পের পর বলেন, ‘মিয়ানমারের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করতে চাওয়া যে কোনো দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে সহায়তা গ্রহণ করতে আমরা প্রস্তুত।’ সামরিক শাসনের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া মিয়ানমারের জন্য এটি একটি বিরল ঘোষণা। সেনা মুখপাত্র জাও মিন তুন বলেছেন, ‘আমরা চাই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যত দ্রুত সম্ভব মানবিক সহায়তা দিক।’ ভয়াবহ এ ভূমিকম্পের পর জাতিসংঘ তাদের আঞ্চলিক সহায়তা কার্যক্রম সক্রিয় করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ সহায়তা দিতে প্রস্তুত।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দুবাই থেকে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠিয়েছে। ভূমিকম্প-পরবর্তী সর্বাত্মক সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল বারো নিশ্চিত করেছেন, সহায়তা পাঠাতে প্রস্তুত ফ্রান্স। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাও ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা করছে। তবে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রবেশের সীমাবদ্ধতায় ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার কার্যক্রম। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ফুটেজে দেখা যায়, ভূমিকম্প শুরুর পর ব্যাংককে নির্মাণাধীন ভবন ধসে পড়ে। আশপাশের লোকজন আতঙ্কে পালাচ্ছেন; ধুলোয়-ধোঁয়ায় ছেয়ে যাচ্ছে আশপাশ। হোটেলে থাকা অনেকে গোসলের পোশাক ও সুইমিংয়ের পোশাক পরে দৌড়ে বেরিয়ে আসেন। থাইল্যান্ডের চিয়াং মাইয়ের বাসিন্দা ৭৬ বছরের সাই ভূমিকম্পের সময় একটি দোকানে কাজ করছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি দ্রুত অন্য গ্রাহকদের সঙ্গে দোকান থেকে বের হয়ে যাই। এটা আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প।’ থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা এক্সে লেখেন, তিনি ভূমিকম্পের পর জরুরি বৈঠক করতে দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ ফুকেটে তাঁর নির্ধারিত সরকারি সফর স্থগিত করেছেন। বিকেলে ব্যাংকক থেকে আলজাজিরার ইমরান খান জানান, ভূমিকম্পের কারণে শহরটিতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। লোকজন রাস্তায় নেমে আসেন। কোনো মেট্রোরেল চলাচল করছে না। শহরজুড়ে যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে। মিয়ানমারের অনেক স্থানে ভূপৃষ্ঠে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। অনেক সড়কে ফাটল ও মাটি দেবে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক ভবনের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারে তৎপরতা চলছে। মান্দালয় উদ্ধারকারী দলের এক সদস্য বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা শুধু এটুকু বলতে পারি, মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। এ সংখ্যা কয়েকশ হতে পারে। উদ্ধার অভিযান চলছে।’ মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার জানিয়েছে, ছয়টি অঞ্চল– সাগাইং, মান্দালয়, ম্যাগওয়ে, বাগো, ইস্টার শান রাজ্য ও নেপিদো অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। মিয়ানমার দমকল বিভাগের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, তারা অনুসন্ধান শুরু করেছেন। হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যাচাইয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে মিয়ানমারের ইয়াংঙ্গুনে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘সবকিছু কাঁপতে শুরু করলে আমরা সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে আসি। চোখের সামনে পাঁচতলা ভবন ধসে পড়তে দেখেছি। আমার শহরের সবাই রাস্তায় নেমে এসেছে। কেউ ভবনের ভেতরে ফিরে যেতে সাহস পাচ্ছে না।’ বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, ভূকম্পন মিয়ানমার সীমান্ত লাগোয়া চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমের প্রদেশ ইউনান ও সিচুয়ান প্রদেশেও অনুভূত হয়েছে। সেখানেও ভবন ধসে কয়েকজন আহত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত দুই দশকে মিয়ানমারে এমন শক্তিশালী ভূমিকম্প আর হয়নি। বৈশ্বিক ভূকম্পন ঝুঁকির ‘রেড জোনে’ রয়েছে মিয়ানমার। সাগাইং ফল্ট লাইনের মধ্যে এর অবস্থান। এর আগে সাগাইং ফল্টেই ১৯৩০ ও ১৯৫৬ সালে শক্তিশালী ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ২০১৬ সালে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে মিয়ানমারে তিনজন নিহত হন।

মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯৪

মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯৪ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন অন্তত ১ হাজার ৬৭০ জন। স্থানীয় সময় আজ শনিবার (২৯ মার্চ) দেশটির জান্তা সরকার এ তথ্য জানিয়েছে। খবর এএফপির। শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে মিয়ানমারে। এর কেন্দ্রস্থল ছিল দেশটির উত্তর-পশ্চিমের শহর সাগাইং থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে। এলাকাটি রাজধানী নেপিদো থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তরে। ভূমিকম্পটির তীব্র প্রভাব অনুভূত হয় প্রতিবেশী বাংলাদেশ, চীন, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামেও।

মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহত অন্তত ১৪৪, আহত ৭৩২

শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাতে মিয়ানমারে অন্তত ১৪৪ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইং। এখন পর্যন্ত ৭৩২ জন আহত হওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। খবর বিবিসির। সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে রাজধানী নেপিদোতে। সেখানে অন্তত ৯৬ জন মারা গেছেন। এছাড়া, মান্দালয়ে ৩০ এবং সাগায় ১৮ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছেন মি. হ্লাইং। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে ভবন ধসে তিনজন নিহতের কথা জানা গেছে। আটকা পড়েছেন ৮১জন নির্মাণ শ্রমিক। থাই সামরিক বাহিনীর তথ্য মতে, ধসে পড়া ভবনের বেশিরভাগই নির্মাণাধীন।

মোদীর ব্যাংকক সফরের সূচিতে ইউনূসের সাথে বৈঠক নেই

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে প্রধান উপদেষ্টা ড, মুহাম্মদ ইউনূসের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজনের যে প্রস্তাব ঢাকা দিয়েছিল, তাতে নয়াদিল্লীর সাড়া মেলেনি। থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অনুষ্ঠেয় বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে মোদীর সফরসূচি নিয়ে শুক্রবার (২৮ মার্চ) যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তাতে ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের কোনো কথা রাখা হয়নি। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে বিমসটেকের বর্তমান সভাপতি, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার সঙ্গে বৈঠক হবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর।’ বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের সাত দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিষয়ক জোট বিমসটেকের ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলন শুরু হচ্ছে আগামী ৪ এপ্রিল। এ সম্মেলনে যোগ দিতে থাইল্যান্ডে যাচ্ছেন ইউনূস ও মোদী। সেখানে দুই নেতার মধ্যে বৈঠকের ইচ্ছা জানিয়ে দিল্লিকে বার্তা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল ঢাকা। ওই চিঠির প্রতিউত্তরের জন্য অপেক্ষা থাকার কথা জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বলছে, ‘বৈঠকটি হলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ‘স্থরিবতা’ কাটার সম্ভাবনা তৈরি হবে।’ পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) এক সম্মেলনে বলেন, “আমরা যে কোনো দেশের সাথে শীর্ষ পর্যায়ের যে বৈঠক, সেই বৈঠককে আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি এবং ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্কের বর্তমান যে প্রেক্ষাপট, সেই প্রেক্ষাপটে এই বৈঠকটিকে আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। ‘এবং আমরা আশা করি যে, যদি এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে যে স্থবিরতা, সেটা কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।’ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট ক্ষমতাচ্যুত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিনই তিনি ভারতে চলে যান। তিন দিন পর সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেয় মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর থেকে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে প্রতিবেশী ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর দুই দফায় দেখা হওয়ার সুযোগ তৈরি হলেও তা হয়ে ওঠেনি। বিমসটেকের সম্মেলনে তাদের বৈঠক হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছিল। ৩ এপ্রিল ঢাকা থেকে গিয়ে পর দিন ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। আর নরেন্দ্র মোদী ৩ এপ্রিল থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিনাওয়াত্রার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। পর দিন বিমসটেক নেতাদের টেবিলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে দেখা হবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর। এ জোটের ষষ্ঠ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। কিন্তু থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে তা পিছিয়ে নভেম্বরে করার চিন্তাভাবনা করা হয়। ওই সময়ও ইউনূস ও মোদীর বৈঠকের কথা উঠেছিল। এর আগে সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে দুই নেতার মধ্যে বৈঠকের কথা উঠেছিল। কিন্তু শেষমেশ তা হয়নি। কারণ হিসেবে গত ২১ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা নিউ ইয়র্কে পৌঁছানোর আগেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নিউ ইয়র্ক ত্যাগ করবেন বলে জানা গেছে। কাজেই সেখানে তাদের দেখা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে হচ্ছে।’ ওই বৈঠক না হওয়ার কারণ হিসেবে সেসময় মুহাম্মদ ইউনূসের ‘একটি সাক্ষাৎকারকে’ সামনে আনে কোনো কোনো ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়ে জানাশোনা আছে- এমন ব্যক্তিদের বরাতে হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়, ‘ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউনূসের বিভিন্ন মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে মনে হচ্ছে, বৈঠকটি হবে না। ইউনূসের বক্তব্য নয়াদিল্লি ভালোভাবে নেয়নি।’ গত বছরের অক্টোবরে সামোয়াতে কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনেও মুহাম্মদ ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে সাক্ষাৎ হতে পারত। কিন্তু দুই নেতার কেউই তাতে যোগ দেননি।

ভূমিকম্পে মিয়ানমারে ধসে পড়ল ব্রিটিশ আমলের সেতু

শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে মিয়ানমারে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৭। ভূমিকম্পে দেশটির ইরাবতী নদীতে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ৯১ বছরের পুরনো একটি সেতু ধসে পড়েছে। মিয়ানমার-ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম দ্য ইরাবতী জানিয়েছে, শক্তিশালী ভূমিকম্পে মিয়ানমারের মান্ডালায়, নেপিদো ও অন্যান্য কয়েকটি এলাকায় ভবন ধসে পড়ে। ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল ছিল সাগাইং শহরে।ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে ঔপনিবেশিক আমলে নির্মিত ৯১ বছর বয়সি আভা সেতু ভেঙে পড়ে, যা পুরাতন সাগাইং সেতু নামেও পরিচিত। মান্ডালায় এবং সাগাইং অঞ্চলের মধ্যে ইরাবতী নদীতে ব্রিটিশরা এই সেতু নির্মাণ করেছিল।বার্তাসংস্থা এএফপি মিয়ামারের রাজধানী নেপিদো থেকে জানিয়েছে, ভূমিকম্পের তীব্রতায় রাস্তাঘাট স্তব্ধ হয়ে গেছে এবং ভবন থেকে ছাদের টুকরো ভেঙে পড়েছে।সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, শুক্রবার (২৮ মার্চ) স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে মিয়ানমারে প্রথম ভূমিকম্প আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৭। আর ১টা ২ মিনিটে দ্বিতীয় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। সেটির মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৪।ভূমিকম্পের প্রভাব পড়েছে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ড, লাওস এবং চীনে।থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে শক্তিশালী কম্পন অনুভূত হয়েছে। ব্যাংকক পোস্ট শুক্রবার বিকেলে মিয়ানমারে ৭ দশমিক ৪ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে এবং এর জেরে ব্যাংককে কম্পন অনুভূত হয়েছে।থাই আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, ব্যাংককসহ থাইল্যান্ডের অনেক জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। দেশটিতে নির্মাণাধীন একটি বহুতল ভবনও ধসে পড়েছে।

মিয়ানমারে ভূমিকম্পে ২০ জনের মৃত্যু, আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন

মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্পে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ২০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জানিয়েছে, শুক্রবার (২৮ মার্চ) দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে মিয়ানমারে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। পরে ১টা ২ মিনিটের দিকে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার একটি আফটারশক আঘাত হানে। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল সাগাইং শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে এবং ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, ভূমিকম্পে মিয়ানমারে এখন পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।দেশটির মান্দালয় শহরে একটি মসজিদ ধসে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। দুজন প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে বলেন, যখন কম্পন শুরু হয় আমরা প্রার্থনা করছিলাম। মসজিদ ধসে তিনজন ঘটনাস্থলে মারা গেছেন।ভূমিকম্পে বহু হতাহত হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে ১ হাজার শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতালে অনেক চিকিৎসা নিচ্ছেন।এক সরকারি বিবৃতিতে মিয়ানমার সরকার ভূমিকম্পের পর ছয়টি অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া ভয়াবহ এই ভূমিকম্পের পর আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা।অন্যদিকে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাতের পর থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। ব্যাংককে মেট্রো ও রেল পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে। থাই প্রধানমন্ত্রী পেতাংতার্ন সিনাওয়াত্রা জানিয়েছেন, মিয়ানমারকে কেন্দ্র করে একটি বড় ভূমিকম্পে ব্যাংকক শহরে আঘাত হানার পর শুক্রবার থাই কর্তৃপক্ষ ব্যাংককে জরুরি অবস্থা করেছে।চীনের ইউনান প্রদেশেও শক্তিশালী ভূমিকম্পের খবর পাওয়া গেছে। দেশটির ভূমিকম্প নেটওয়ার্ক কেন্দ্র জানিয়েছে, এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৯। ভারতের কলকাতা ও মণিপুরের কিছু অংশ থেকেও ভূমিকম্পের খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি জায়গায় কম্পন অনুভূত হয়েছে।

ভূমিকম্পে ব্যাংককে ৩০ তলা ভবনধস, আটকা ৮০ শ্রমিক

ভূমিকম্পের আঘাতে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে একটি নির্মাণাধীন ৩০ তলা বিশিষ্ট আকাশচুম্বী ভবন ধসে পড়েছে। এতে কমপক্ষে ৮০ জন শ্রমিক ভবনের ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের উদ্ধারে অনুসন্ধান অভিযান শুরু চলছে। খবর সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের। শুক্রবার (২৮ মার্চ) মিয়ানমারে ৭.৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে দেশটির পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডর রাজধানী শহর ব্যাংকককেও প্রকম্পিত করেছে। এতে শহরের অনেক এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।ভূমিকম্পে স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে থাই রাজধানীর উত্তরে অবস্থিত একটি নির্মাণাধীন সরকারি ভবন ধসে পড়ে। ফোন ক্যামেরায় ধারণ করা একটি ভিডিওতে ভবনধসের দৃশ্য ধরা পড়েছে।তাতে দেখা যাচ্ছে, শহরের চাতুচক জেলার ৩০ তলা ভবনটি ভেঙে পড়ছে। ভবনটি অনেকটা তাসের ঘরের মতো কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।সরকারি চ্যানেল এনবিটির তথ্যানুসারে, ভূমিকম্পের সময় ব্যাংককের জনপ্রিয় জেজে মার্কেটের কাছের ভবনটিতে ৪০০ জনের মতো শ্রমিক কাজ করছিল। এর মধ্যে ৮০ জন শ্রমিকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তারা ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপে অনুসন্ধান শুরু করেছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রা আগামী কয়েক ঘন্টায় ভূমিকম্পের আফটারশকের জন্য জনসাধারণকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমি আপনাদের সকলকে শান্ত থাকার অনুরোধ করছি, প্রতিটি সংস্থা ও মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে এবং তারা (সাহায্য করার) জন্য প্রস্তুত।’খবরে বলা হয়েছে, রাজধানী ও এর বাইরে অন্য ভবনগুলো ভূমিকম্পে দুলছিল এবং অনেক ভবনের ছাদের সুইমিং পুলগুলোর পানি ছড়িয়ে পড়ছিল। ভূমিকম্পের মুহূর্তে শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মানুষজন ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় নেমে আসে।

মিয়ানমারে ভূমিকম্পে বড় ক্ষতির আশঙ্কা, বিভিন্ন অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা

পরপর দুইটি ভূমিকম্প শুক্রবার (২৮ মার্চ) দুপুরে আঘাত হেনেছে মিয়ানমারে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্যানুযায়ী, প্রথম ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৭। উৎপত্তিস্থলের ২০ কিলোমিটার দূরে ৬ দশমিক ৪ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প (পরাঘাত) হয়েছে। এর উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারের মান্দালয় যা বাংলাদেশে থেকে ৫৯৭ কিলোমিটার দূরে। এতে শুধু মিয়ানমার নয়, এর প্রভাব অনুভূত হয়েছে ভারত, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে। খবর রয়টার্স ও ব্যাংকক পোস্টের। রাজধানী নেপিদোতে এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগের বাইরে আহতদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। কেউ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন, কেউ শক্তিশালী ভূমিকম্পের তীব্রতায় হতবাক হয়ে পড়েন। আহতদের মধ্যে অনেককে গাড়িতে ও পিকআপে হাসপাতালে আনা হয়। তাদের শরীর রক্তাক্ত ও ধুলোয় ঢাকা। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সামরিক বাহিনী বিভিন্ন অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি সম্পর্কে দ্রুত অনুসন্ধান এবং মানবিক সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হবে। ভূমিকম্পে কতটা ক্ষতি হয়েছে মিয়ানমারে তার সঠিক কোনো তথ্য জানা যায়নি। বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে মিয়ানমার থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি। খবর-রয়টার্স তবে এখন পর্যন্ত যে পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে তাতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশটিতে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। দেশটির অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, ‌‘আমরা হতাহত এবং ক্ষয়ক্ষতির খোঁজে ইয়াঙ্গুনে অনুসন্ধান শুরু করেছি। ঘুরে ঘুরে দেখছি। এখনও পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনও তথ্য নেই।’ মান্দালয় শহরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে ধসে পড়া ভবন এবং শহরের রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ধ্বংসাবশেষ দেখা গেছে। রয়টার্স তাৎক্ষণিকভাবে পোস্টগুলো যাচাই করতে পারেনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, মান্দালয়ে একাধিক ভবন ধসে পড়েছে। মান্দালয়ের তিন বাসিন্দা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ভূমিকম্প আঘাত হানার সময় রাস্তায় লোকজন ছুটে আসার সঙ্গে সঙ্গে তারা বেশ কয়েকটি ভবন ধসে পড়তে দেখেছেন। ফয়েজ নামে একজন বাসিন্দা জানান ভূমিকম্পের সময় তিনি একটি মসজিদে নামাজ পড়ছিলেন। তিনি বলেন, আমি নামাজ পড়ার জন্য হাত পরিষ্কার করার সময় কাঁপতে শুরু করে। আমরা সবাই মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসি। আরেক বাসিন্দা হেত নাইং বলেন, ‘রাস্তার পাশে তার একটি চায়ের দোকান ধসে পড়েছে। লোকজন ভেতরে আটকা পড়ে। আমরা ভেতরে যেতে পারিনি। পরিস্থিতি খুবই খারাপ।’

মিয়ানমারে ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্প, থাইল্যান্ডেও ক্ষয়ক্ষতি

মিয়ানমারে আজ শুক্রবার (২৮ মার্চ) দুপুরের দিকে সাত দশমিক সাত মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল দেশটির উত্তর-পশ্চিমের শহর সাগাইং থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে। এলাকাটি রাজধানী নেপিডো থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তরে। নেপিডো থেকে বার্তা সংস্থা এএফপির সংবাদদাতা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের আঘাতে সেখানে বিভিন্ন রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অনেক ভবনের ছাদ থেকে আস্তরণ খসে পড়েছে। ভূমিকম্প এতই শক্তিশালী ছিল যে শত শত মাইল দূরে চীন ও থাইল্যান্ড থেকেই কম্পন অনুভূত হয়। একটি তাৎক্ষণিক বৈঠকের পর ব্যাংককে জরুরি অবস্থা জারি করেছে থাই সরকার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিভিন্ন ভবন থেকে লোকজন বের হয়ে এসে রাস্তায় জড়ো হচ্ছে। একটি ভবনের ছাদের সুইমিং পুল থেকে পানি বাইরে নিচের দিকে ছিটকে পড়তে দেখা গেছে। ব্যাংকক থেকে বিবিসির সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের কারণে ভবনগুলো দুলতে শুরু করে। কয়েকটি ভবনের জানালাও ভেঙে পড়তে দেখা গেছে। থাইল্যান্ডের তুলনায় মিয়ানমারে ভূমিকম্প তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। ১৯৩০ সাল থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে দেশটিতে সাত মাত্রার ছয়টি ভূমিকম্প আঘাত হানে যার সবগুলোই ছিল সাগাইং ফল্টের কাছে। ভূপৃষ্ঠের নিচের ওই ফাটল দেশটির মাঝ বরাবর চলে গেছে। থাইল্যান্ড মূলত ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল নয়। কিন্তু সেখানে অনুভূত হওয়া প্রায় সব ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হয় প্রতিবেশী মিয়ানমার। ব্যাংককের ভবনগুলোর শক্তিশালী ভূমিকম্প সহ্য করার ক্ষমতাসম্পন্ন নয়, এ কারণে সেখানে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় অকাঠামোগত ক্ষতি হতে পারে। ব্যাংককে বসবাসকারী বিবিসি সাংবাদিক বুই থু বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের নিউজ ডে প্রোগ্রামকে বলেছেন, ভূমিকম্পের সময় তিনি বাড়িতে রান্না করছিলেন। ‘আমি খুব বিহ্বল হয়ে পড়েছিলাম, খুব আতঙ্কিত ছিলাম। আমি জানতাম না এটা কী ছিল। আমার মনে হয় গত এক দশকে ব্যাংককে এই রকম শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়নি।’ ‘আমার অ্যাপার্টমেন্টের দেয়ালে কিছু ফাটল দেখতে পাচ্ছি। সুইমিং পুল থেকে পানি ছলকে পড়ছে এবং মানুষজন শুধু চিৎকার করছে।’ আফটারশকের পরে তিনি অন্যান্য লোকজনের সঙ্গে দৌড়ে রাস্তায় বের হয়ে আসেন। বুই থু বলেন, ‘আমরা মাথা ঘুরিয়ে শুধু বোঝার চেষ্টা করছিলাম চারপাশে কী ঘটছে। ব্যাংককের বিল্ডিংগুলো ভূমিকম্প সহনশীল করে তৈনি করা হয়নি। আমি মনে করি সে কারণেই বড় ক্ষতি হতে চলেছে।’

থাইল্যান্ডে ভূমিকম্প: মুহূর্তে ধসে পড়ল বহুতল ভবন

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে ভূমিকম্পে নির্মাণাধীন একটি বহুতল ভবন মুহূর্তে ধসে পড়েছে। উত্তর ও মধ্য থাইল্যান্ডের বিভিন্ন এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে প্রচারিত একটি ভিডিওতে ভবনগুলো কাঁপতে দেখা গেছে। আতঙ্কে লোকজন রাস্তায় ছোটাছুটি করেন। এনডিটিভিতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের ভিডিওটিতে দেখা গেছে, বড় একটি বহুতল ভবন সম্পূর্ণরূপে ধসে পড়ছে। স্থানীয়রা ভবনটির ভেঙে পড়ার ছবি মোবাইল ফোনে ধারণ করছেন। পর্যটন শহর চিয়াং মাইয়ের বাসিন্দা ডুয়াংজাই এএফপিকে বলেন, ‌‘আমি ঘরে ঘুমাচ্ছিলাম। ভূমিকম্প টের পেয়ে যত দ্রুত সম্ভব ভবন থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসি।’ ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি বড় বহুতল ভবনের ছাদ থেকে সুইমিং পুলের পানি বাইরে নিচের দিকে ছিটকে পড়ছে। আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি বাড়ির ছোট সুইমিং পুলের পানি প্রচণ্ডভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছে, যা দেখতে ​​সুনামির মতো। ব্যাংককে ভূমিকম্পের কারণে ভবনগুলো দুলতে শুরু করে। কয়েককটি ভবনের জানালাও ভেঙে পড়তে দেখা গেছে। অনেক সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবনের ছাদ থেকে আস্তরণ খসে পড়েছে। ব্যাংককে বিভিন্ন ভবন থেকে লোকজন বের হয়ে এসে রাস্তায় জড়ো হন। আজ শুক্রবার (২৮ মার্চ) মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে ৭ দশমিক ৭ এবং ৬ দশমিক ৪ মাত্রার দুটি বড় ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ঢাকা থেকে ৫৯৭ কিলোমিটার দূরে মিয়ানমারের মান্দালয় ৭ দশমিক ৭ রিখটার স্কেলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস বলছে, ‘ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৭। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল সাগাইং শহরের ১৬ থেকে ১৮ কিলোমিটারের মধ্যে, যা রাজধানী নেপিদো থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে।’

২৪ ঘণ্টায় গাজায় ৪০ জনের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করল ইসরায়েল

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা চলছেই। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গাজার মধ্যাঞ্চলে একটি ব্যস্ত বাজারে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার (২৮ মার্চ) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (আনরোয়া) জানিয়েছে, তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে গাজায় কোনো সহায়তা প্রবেশ করেনি। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সতর্ক করে দিয়েছে যে, গাজায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি তীব্র ক্ষুধা ও অপুষ্টির মুখোমুখি হচ্ছে। গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় প্রতি ৪৫ মিনিটে একটি শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল কমপক্ষে ১৭ হাজার ৪০০ শিশুকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৬০০ শিশুকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও অনেকে চাপা পড়ে আছে, যাদের বেশিরভাগকেই মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে। গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৩ লাখই শিশু। গত ১৭ মাস ধরে ইসরায়েলি হামলার কারণে তাদের ঘর-বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে, তাদের স্কুল ধ্বংস করা হয়েছে এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোও ধ্বংস হয়ে গেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫০ হাজার ২০৮ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছে আরও এক লাখ ১৩ হাজার ৯১০ জন। এর মধ্যে অধিকাংশই নারী এবং শিশু। যদিও গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বলছে, ‘মোট নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে। কারণ যারা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছেন তারা আর বেঁচে নেই বলে ধরে নেওয়া হয়েছে।’ এদিকে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গাজা থেকে তাদের এক-তৃতীয়াংশ কর্মীকে সরিয়ে আনা হবে। কোনোভাবেই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ফলে কর্মীদের তারা গাজায় রাখতে চাইছেন না।

যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে রোহিঙ্গারা

মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে জোরপূর্বক যুদ্ধে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী উভয় পক্ষই রোহিঙ্গা যুবকদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধে ব্যবহার করছে। সম্প্রতি কয়েকজন রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা গোপনে অস্ত্র চালনা ও যুদ্ধকৌশলের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট। ১৩ বছর বয়সী মোহাম্মদ রিয়াসের জীবন বদলে গেছে গত বছরের ডিসেম্বরে। পরীক্ষার দিনে স্কুলে যাওয়ার পরিবর্তে তাকে পালাতে হয়েছে বাড়ি থেকে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মি উভয়ই রোহিঙ্গা যুবকদের জোর করে সেনাদলে ভর্তি করছে। রিয়াস বলেন, আমাদের লক্ষ্য জান্তা বাহিনী ও অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে প্রতিহত করে নিজেদের ভূমি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা। আগে শুধু জান্তার সঙ্গে লড়াই করার চিন্তা ছিল, এখন প্রয়োজনে আরকান আর্মির (এএ) বিরুদ্ধেও আমরা অস্ত্র ধরতে প্রস্তুত। বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্টকে জানান, গোপন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে প্রথমে ফিটনেস ট্রেনিং দেওয়া হয়। এরপর তাদের কয়েকটি দলে ভাগ করা হয়। এদের মধ্যে কেউ কেউ অস্ত্র চালনা শেখেন। এছাড়া মার্শাল আর্টও শেখানো হয় ক্যাম্পে। অবশ্য এসব অস্ত্র কোথা থেকে আসে, সে ব্যাপারে প্রতিবেদনে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি। আরেকটি দল সোশ্যাল মিডিয়া, কাউন্টার সারভেইলেন্স ও শত্রুদের অবস্থান শনাক্ত করার কৌশল শেখেন। এক রোহিঙ্গা বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য শান্তিতে ও সব অধিকার নিয়ে নিজ দেশে বসবাসের অধিকার ফিরে পাওয়া। সরকার ও বিদ্রোহীরা উভয়ই আমাদের ভূমি দখল করেছে।এখন আমরা আমাদের মাতৃভূমি ফিরে পেতে চাই ও আমরা এর জন্য লড়াই করব। কোন গ্রুপের অধীনে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, সে ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি রিয়াস। তিনি বলেন, ১ হাজারের বেশি লোক এখন প্রশিক্ষণে যোগ দিয়েছেন। সব শিবির থেকেই এই প্রশিক্ষণে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ইসলামিক মাহাজ নামের একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত এক রোহিঙ্গা নাগরিক ইনডিপেনডেন্টকে জানান, তারাও প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এই ইসলামিক মাহাজটি রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশনের (আরএসও) একটি অঙ্গ সংগঠন। সংবাদমাধ্যম দ্য ইনডিপেনডেন্ট বলছে, বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ডজনখানেক সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বেশ কয়েকবার এ নিয়ে উদ্বেগও জানানো হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, এসব গোষ্ঠী মাদক, মানবপাচার, হত্যা, চাঁদাবাজি ও ক্যাম্পের অন্তর্কোন্দলের সঙ্গে যুক্ত। এ তালিকায় রয়েছে ইসলামিক মাহাজ, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশনের (আরএসও), আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (এআরএসএ) ও আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (এআরএ)। রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা ফোর্টিফাই রাইটসের পরিচালক জন কুইনলি বলছেন, তারা বছরের পর বছর ধরে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম তদন্ত করে আসছেন। যে শিবিরগুলোতে স্বেচ্ছায় ও জোরপূর্বক নিয়োগ চলছে সেখান থেকে সাক্ষ্য, ভিডিও ও অডিও প্রমাণ সংগ্রহ করছেন। জন কুইনলি বলেন, ক্যাম্পে রোহিঙ্গা জনগণের জীবনের প্রতিটি দিকই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে, অনেক রোহিঙ্গা সশস্ত্র প্রতিরোধের মাধ্যমে তাদের সম্প্রদায়কে মুক্ত করার চেষ্টা করছে। ফোর্টিফাই রাইটসের প্রতিবেদন অনুসারে, এ নিয়ে বাংলাদেশে কর্মরত একটি মানবিক সমন্বয় গোষ্ঠীর একটি অভ্যন্তরীণ স্মারকলিপি প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, গত বছরের মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে শরণার্থী শিবির থেকে প্রায় ২ হাজার লোককে নিয়োগ করা হয়েছিল প্রশিক্ষণের জন্য। দ্য ইনডিপেনডেন্ট এ বিষয়ে বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) অফিসের মন্তব্য চেয়েছিল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়েও মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করে তারা। কিন্তু কোনো পক্ষ থেকেই সাড়া মেলেনি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা যুক্তরাজ্যভিত্তিক সহায়তা সংস্থা ক্যাফোডের বাংলাদেশ সমন্বয়ক ফিল টালম্যান বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই সংকটে এগিয়ে আসতে হবে। কারিতাস বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রধান আলেকজান্ডার ত্রিপুরা বলেন, ২০১৭ সাল থেকে আমরা ১৭ লাখ শরণার্থীকে সহায়তা দিচ্ছি। কিন্তু তাদের জন্য আরও সাহায্য প্রয়োজন। সূত্র: ইনডিপেনডেন্ট

লিথুনিয়ায় নিখোঁজ ৪ মার্কিন সেনা

লিথুনিয়ার বেলারুশ সীমান্তের কাছে সামরিক প্রশিক্ষণ চলাকালে নিখোঁজ হয়েছেন চার মার্কিন সেনা। তাদের উদ্ধারের জন্য জোর অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী। এরই মধ্যে ওই সেনাদের ব্যবহৃত সাঁজোয়া যানটি ডুবে থাকা অবস্থায় একটি জলাশয় থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) লিথুনিয়ার জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের প্রমাণ বা তথ্য পাওয়া যায়নি। লিথুনিয়ার সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে, মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে পাব্রাদে শহরের কাছে প্রশিক্ষণ এলাকায় ওই সেনারা নিখোঁজ হন। পরদিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, নিখোঁজ সেনারা এম-৮৮ মডেলের যে সাঁজোয়া যানটি ব্যবহার করেছিলেন, সেটি প্রশিক্ষণ এলাকায় পানির নিচে পাওয়া গেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী, লিথুনিয়ার সশস্ত্র বাহিনী ও অন্যান্য লিথুনিয়ান কর্তৃপক্ষের যৌথ অভিযানে যানটি একটি জলাশয়ে নিমজ্জিত অবস্থায় পাওয়া গেছে। উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে ও নিখোঁজ সেনাদের সন্ধান অব্যাহত রয়েছে। লিথুনিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোভিলে শাকালিয়েন জানিয়েছেন, উদ্ধারকারীরা ঘটনাস্থলে একটি জলাভূমির গভীরে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সাঁজোয়া যানটি ওই জলাভূমির পাঁচ মিটার গভীর থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে ওই জলাশয়ের পানিও নিষ্কাশন করা হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, নিখোঁজ সেনারা যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের প্রথম ব্রিগেডের সদস্য ও তারা পূর্বনির্ধারিত কৌশলগত প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছিলেন। লিথুনিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী শাকালিয়েন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে নিখোঁজ সেনাদের ব্যাপারে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সবাই প্রস্তুত আছে। জরুরি চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার জন্য আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। আমরা ক্লান্তিহীন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ‘আটলান্টিক রিজলভ’ নামে পূর্ব ইউরোপ ও বাল্টিক অঞ্চলে সেনা মোতায়েন করে রেখেছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশ লিথুনিয়ায় শত শত মার্কিন সেনা পর্যায়ক্রমে অবস্থান করেন। ২০২১ সালের আগস্টে লিথুনিয়ার পাব্রাদে শহরে ‘ক্যাম্প হারকাস’ নামে একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ক্যাম্পটিতে ৭০০ সেনাকে দীর্ঘ মেয়াদে ও স্বল্পমেয়াদে ১ হাজার সেনা থাকতে পারেন। সূত্র: সিএনএন, রয়টার্স

বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে দিল্লিতে ভারত সরকারের উদ্যোগে গোলটেবিল

আলোচকদের মধ্যে ছিলেন (বাঁ থেকে) কানওয়াল সিব্বাল, স্বরূপ প্রসাদ ঘোষ, ভিনা সিক্রি ও জেনারেল ভিকে চতুর্বেদীআলোচকদের মধ্যে ছিলেন (বাঁ থেকে) কানওয়াল সিব্বাল, স্বরূপ প্রসাদ ঘোষ, ভিনা সিক্রি ও জেনারেল ভিকে চতুর্বেদী বাংলাদেশের তথাকথিত ‘রাজনৈতিক অস্থিরতা’র কী প্রভাব দেশে ও দেশের বাইরে পড়তে পারে, তা নিয়ে ভারত সরকারের উদ্যোগে একটি দু’দিনব্যাপী গোলটেবল অনুষ্ঠিত হলো রাজধানী দিল্লিতে। গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পর ভারত সরকারের দিক থেকে এটাই ছিল এই ধরনের প্রথম উদ্যোগ। ভারতের প্রথম সারির সরকারি কর্মকর্তা, বিশ্লেষক, সাবেক কূটনীতিবিদ, থিঙ্কট্যাঙ্ক ফেলো, সাংবাদিক, গবেষক, অর্থনীতিবিদ, সাবেক সেনা কর্মকর্তারা দুদিনের আলোচনায় বাংলাদেশ পরিস্থিতির বিভিন্ন দিক নিয়ে চুলচেরা আলোচনা করেছেন। ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট অব এশিয়ান স্টাডিজ (মাকাইয়াস) ছিল এই অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা। তাদের সঙ্গে আরএসএস প্রভাবিত ‘অন্তর রাষ্ট্রীয় সহযোগ পরিষদ’ (এআরএসপি) ও কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস’ (সিএসআইআর) এই অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিল সহযোগী প্রতিষ্ঠান বা ‘নলেজ পার্টনার’ হিসেবে। দিল্লির প্রাণকেন্দ্র লোদী গার্ডেন সংলগ্ন ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে (আইআইসি) ২৬ ও ২৭ মার্চ এই গোলটেবিল অনুষ্ঠিত হয়। ভারত সরকার যে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই উদ্যোগে সব ধরনের সমর্থন দিয়েছে, সেটাও কোনও গোপন বিষয় নয়। আলোচনার বিভিন্ন সেসনের মূল বিষয়গুলো ও প্যানেলিস্টরা ছিলেন এরকম— ২৬ মার্চ সকালে অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন মাকাইয়াসের কার্যনিবাহী পরিষদের চেয়ারম্যান, অধ্যাপক রাধারমণ চক্রবর্তী। তার পর ঢাকায় ভারতের সাবেক হাই কমিশনার ভিনা সিক্রির উদ্বোধনী ভাষণের মধ্যে দিয়ে আলোচনার সূচনা হয়। প্রথম সেসনের বিষয় ছিল ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ডেভেলপমন্ট সমূহ’। সঞ্চালনা করেন মাকাইয়াসের ‘আজাদ ফেলো’ অধ্যাপক রূপেন্দ্র কুমার চ্যাটার্জি; আলোচনায় অংশ নেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী দেবেন্দ্র শর্মা, ইকোনমিক টাইমসের কূটনৈতিক সম্পাদক দীপাঞ্জন রায়চৌধুরী ও দ্য ইন্ডিয়ান এক্সেপ্রেসের কূটনৈতিক সংবাদদাতা শুভজিৎ রায়। দ্বিতীয় সেসনের বিষয় ছিল ‘বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান মৌলবাদ ও সংখ্যালঘুদের অবস্থা’। সাবেক রাষ্ট্রদূত ভিনা সিক্রি, অধ্যাপক রঞ্জন মল্লিক ও মাকাইয়াসের পরিচালক ড. স্বরূপ প্রসাদ ঘোষকে নিয়ে গঠিত প্যানেলের সঞ্চালক ছিলেন লেখক-সাংবাদিক ও রাজ্যসভার সাবেক এমপি স্বপন দাশগুপ্ত। অনুষ্ঠানের একটি আমন্ত্রণলিপি দিনের দ্বিতীয়ার্ধে তৃতীয় সেসনটি আলোচনা করে ‘বাংলাদেশের সংকটে বাইরের শক্তিগুলোর ভূমিকা’ নিয়ে। ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব কানওয়াল সিবাল ছিলেন সঞ্চালকের চেয়ারে, আলোচনায় অংশ নেন সাংবাদিক জয়ন্ত রায়চৌধুরী, জেএনইউ-এর অধ্যাপক স্বরণ সিং, মনন দ্বিবেদী ও সাবেক রাষ্ট্রদূত আর কে রায়না – যিনি বাংলাদেশে ভারতের সহকারী হাই কমিশনার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রথম দিনের চতুর্থ তথা শেষ সেসনের আলোচ্য বিষয় ছিল ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব কী পড়বে?’ দিল্লির থিঙ্কট্যাঙ্ক আরআইএসের মহাপরিচালক, অধ্যাপক শচীন চতুর্বেদীর সঞ্চালনায় ওই আলোচনাতে অংশ নেন জম্মু ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ দীপঙ্কর সেনগুপ্ত, আরআইএসের অর্থনীতিবিদ ড: সব্যসাচী সাহা এবং ‘দ্য হিন্দু বিজনেসলাইনে’র সাংবাদিক প্রতিমরঞ্জন বোস। দ্বিতীয় দিনের (২৭ মার্চ) আলোচনা শুরুই হয় ‘বাংলাদেশের প্রতিবেশীদের জন্য বর্ডার ম্যানেজমেন্ট (সীমান্ত ব্যবস্থাপনা)’ নিয়ে। পন্ডিচেরি ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক গুরমিত সিং আলোচনাটি চেয়ার করেন, যাতে অংশ নেন দিল্লির নামী থিঙ্কট্যাঙ্ক আইডিএসএ-র দুজন ফেলো পুষ্পিতা দাস ও উত্তম কুমার সিনহা এবং ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক এস কে সুদ। আলোচনার শেষ অ্যাকাডেমিক সেসনটির বিষয় ছিল ‘বাংলাদেশ সংকটের সিকিওরিটি ইমপ্লিকেশসন (নিরাপত্তাগত প্রভাব)’। ভারতের বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী জেনারেল ভি কে চতুর্বেদীর সঞ্চালনায় এই আলোচনায় অংশ নেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল নিতিন কোহলি এবং মনোহর পারিকর-আইডিএসএ’র দু’জন সিনিয়র গবেষক তথা বাংলাদেশ ওয়াচার, স্ম্রুতি পট্টনায়ক আর রাজীব নয়ন। অনুষ্ঠানের মূল আয়োজক, কলকাতার ‘মাকাইয়াস’ বৃহস্পতিবার আলোচনার শেষ দিনে দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে রুদ্ধদ্বার কক্ষে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ভারতের বিভিন্ন থিঙ্কট্যাঙ্ক, যারা বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করে থাকে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে এই আলোচনাটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ – এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন আলোচনায় অংশ নেওয়া একজন সাবেক শীর্ষ কূটনীতিবিদ।

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ৩৯ ফিলিস্তিনি

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলের হামলায় আরও ৩৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক। এর ফলে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার ২০০ জনে পৌঁছে গেছে। বুধবার (২৬ মার্চ) প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে আরও ৩৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যার ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনে ভূখণ্ডটিতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫০ হাজার ১৮৩ জনে পৌঁছেছে বলে বুধবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এছাড়া ইসরায়েলি আক্রমণে আরও ১২৪ জন আহত হয়েছেন। তাদেরকে হাসপাতারে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে সংঘাতের শুরু থেকে আহতের সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ১৩ হাজার ৮২৮ জনে পৌঁছেছে। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি। প্রসঙ্গত, গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৮৩০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় ১৮০০ জন আহত হয়েছেন। ইসরায়েলের বর্বর এই হামলা চলতি বছরের জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে দিয়েছে। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে আগ্রাসনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখিও হয়েছে ইসরায়েল।

এবার গাড়ি আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্কারোপের ঘোষণা ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার গাড়ি আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্ত বাণিজ্যিক অংশীদারদের পাল্টা ব্যবস্থা নিতে উৎসাহিত করবে। ফলে বাণিজযুদ্ধ আরও ছড়িয়ে পড়বে। এমন ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) এশিয়ার বাজার খোলার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি নির্মাতাদের শেয়ারের দাম ব্যাপকভাবে কমে গেছে। সংবাদ এএফপির। জাপান সরকার ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপকে অত্যন্ত দুঃখজনক বলে বর্ণনা করেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা বলেছেন, ‘টোকিও সব ধরনের পাল্টা ব্যবস্থা বিবেচনা করছে।’ ট্রাম্প ওভাল অফিসে আদেশে সই করার সময় বলেন, ‘আমরা যা করতে যাচ্ছি তা হলো যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি নয় এমন সব গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা। এই শুল্ক ৩ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।’ কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি ট্রাম্পের শুল্ক আরোপকে তার দেশের কর্মীদের ওপর সরাসরি আক্রমণ বলে অভিহিত করেছেন। পাল্টা পদক্ষেপের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠক করবে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা সব ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশেষজ্ঞদের মতে, তার এই নতুন বাণিজ্যনীতিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে কানাডার ওপর। কানাডা ও মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় ইস্পাত বাণিজ্য অংশীদার। পাশাপাশি, কানাডা দেশটির সবচেয়ে বড় অ্যালুমিনিয়াম সরবরাহকারীও বটে। সম্প্রতি ফ্রান্স ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর ওয়াইন-শ্যাম্পেনসহ অন্যান্য অ্যালকোহলযুক্ত পণ্যের ওপর দুইশ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। মূলত যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত হুইস্কির ওপর ইউরোপের শুল্কের প্রতিশোধ হিসেবেই এই পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

এশিয়ার দেশগুলোর ভাগ্য একে অপরের সাথে জড়িত: ড. ইউনূস

অভিন্ন ভবিষ্যৎ ও সমৃদ্ধির জন্য এশিয়ার দেশগুলোকে একটি পরিষ্কার রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। হস্পতিবার (২৭ মার্চ) সকালে চীনের হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি। মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এই পরিবর্তিত বিশ্বে, এশিয়ার দেশগুলোর ভাগ্য একে অপরের সাথে জড়িত।’ আর্থিক সহযোগিতার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এশিয়াকে অবশ্যই একটি টেকসই অর্থায়ন ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। আমাদের নির্ভরযোগ্য তহবিলের প্রয়োজন যা আমাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করে।’ বাণিজ্য সহযোগিতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এশিয়া এখনও সবচেয়ে কম সংহত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। আমাদের অবিলম্বে বাণিজ্য সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করতে হবে।’ খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা সম্পর্কে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এশিয়ার দেশগুলোকে সম্পদ-দক্ষ কৃষিকাজকে উৎসাহিত করতে হবে এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে।’ ‘আমাদের আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। প্রযুক্তিভিত্তিক টেকসই কৃষি সমাধান সম্প্রসারণ এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য ও ‘জলবায়ু-স্মার্ট’ কৃষিকাজে উদ্ভাবন গুরুত্বপূর্ণ।’ প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এশিয়াকে একটি শক্তিশালী প্রযুক্তিগত ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হবে, যা পুনরুদ্ধারমূলক, বিতরণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া উচিত।’ ‘আমাদের জ্ঞান ও তথ্য ভাগাভাগি করতে হবে এবং প্রযুক্তির বিকাশ ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে। ডিজিটাল সমাধানের ক্ষেত্রে সহযোগিতা অগ্রগতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশ ও ড. ইউনূসকে ট্রাম্পের শুভেচ্ছা

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুভেচ্ছা বার্তায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘প্রিয় প্রধান উপদেষ্টা: আমেরিকার জনগণের পক্ষ থেকে, আমি আপনাকে এবং বাংলাদেশের জনগণকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। পরিবর্তিত এই সময় বাংলাদেশের জনগণের জন্য গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং নিরাপত্তা বৃদ্ধির সক্ষমতা তৈরির সুযোগ এনে দিয়েছে।’ আগামী বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব অব্যাহত রাখতে উন্মুখ বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেন তিনি। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী যে, আমরা আমাদের সম্পর্ক জোরদার করার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে পারব এবং ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আঞ্চলিক নিরাপত্তা উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করতে পারব।’ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এর আগে মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) বিবৃতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘২৬ মার্চ বাংলাদেশের জনগণ যখন স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছে, তখন আমি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি।’ বিবৃতিতে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে বলা হয়, ‘এবারের স্বাধীনতা দিবস এমন এক সময়ে উদযাপিত হচ্ছে, যখন অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে এমন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করছে, যা জনগণকে তাদের ভবিষ্যৎ পথ নির্ধারণের সুযোগ দেবে। বাংলাদেশকে একটি উজ্জ্বল ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র তার সমর্থন অব্যাহত রাখবে।’ মার্কো রুবিও আরও বলেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্ব অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা করছি।’ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশের জনগণকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই এবং আমাদের উভয় দেশকে আরও নিরাপদ, শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি।

‘র’-এর বিরুদ্ধে মার্কিন সংস্থার নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব, ভারতের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংস্থার ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং)-এর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাবের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ভারত সরকার। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ)-এর বার্ষিক প্রতিবেদনে এই সুপারিশ করা হয়েছে। এতে ‘র’-এর বিরুদ্ধে ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠে এসেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির বাংলা সংস্করণে এ খবর জানা গেছে। বুধবার সন্ধ্যায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল একটি কঠোর বিবৃতিতে ইউএসসিআইআরএফ-এর প্রতিবেদনকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে আখ্যা দেন। বিবৃতিতে সংস্থাটিকে ‘উদ্বেগের সংস্থা’ (এনটিটি অব কনসার্ন) হিসেবে চিহ্নিত করারও দাবি করা হয়। জয়সওয়াল বলেন, এই সংস্থার প্রতিবেদনে তথ্য বিকৃত করা হয়েছে এবং ভারতের বহুত্ববাদী সমাজকে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ইউএসসিআইআরএফ-এর ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে প্রকৃত উদ্বেগ নেই—এটি একটি রাজনৈতিক এজেন্ডা মাত্র। ২০২৩ সালে নিউ ইয়র্কে একজন শিখ নাগরিকের হত্যাচেষ্টায় ‘র’-এর এক কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ ইউএসসিআইআরএফ পুনরায় উত্থাপন করেছে। তবে ভারত সরকার এই দাবিকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে খারিজ করে দিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১৪০ কোটি মানুষের এই দেশে বিশ্বের সব প্রধান ধর্মের অনুসারীদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান রয়েছে। কিন্তু ইউএসসিআইআরএফ কখনোই ভারতের এই সত্যিকারের চিত্র স্বীকার করবে না। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এখনও এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে গত কয়েক মাসে ভারত-মার্কিন সম্পর্কে কিছুটা টানাপোড়েন লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে শিখ কর্মী গুরুপাতওয়ান্ত সিং পান্নুনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগকে কেন্দ্র করে। রিপোর্টে সরাসরি ‘র’-এর নাম উল্লেখ করে সংস্থাটিকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার সুপারিশ করা হলেও, ভারতের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, গোয়েন্দা সংস্থার কাজ কখনোই ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে না। বিশ্লেষকদের মতে, ইউএসসিআইআরএফ-এর এই প্রতিবেদন ভারত-মার্কিন কৌশলগত সম্পর্কে নতুন বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তবে নয়া দিল্লি ইতোমধ্যে বিষয়টিকে ‘অগ্রহণযোগ্য হস্তক্ষেপ’ হিসেবে দেখছে এবং কূটনৈতিক স্তরে আরও কঠোর পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছে। উল্লেখ্য, ইউএসসিআইআরএফ একটি স্বাধীন মার্কিন ফেডারেল পরামর্শক সংস্থা। এই সংস্থার সুপারিশ বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক নয়। ২০২০ সালেও ইউএসসিআইআরএফ ভারতকে ধর্মীয় স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ তালিকাভুক্ত করেছিল।

ইসলামাবাদে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্‌যাপন

ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশন যথাযোগ্য মর্যাদা, উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্‌যাপন করেছে। বুধবার (২৬ মার্চ) এ উপলক্ষ্যে দূতালয় প্রাঙ্গণ বর্ণাঢ্য ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে সুসজ্জিত করা হয়। সকালে দূতালয় প্রাঙ্গণে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. ইকবাল হোসেন খান। এ সময় সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে আলোচনা পর্ব শুরু হয়। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে প্রেরিত রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বাণী পাঠ করা হয়। অনুষ্ঠানে ‘জুলাই আপস্প্রিং’ -শীর্ষক একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানিয়ে হাইকমিশনার মো. ইকবাল হোসেন খান মহান মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং সব বীরাঙ্গনা, রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ২৪ এর জুলাই-আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ছাত্র-জনতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে হাইকমিশনার বলেন, স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ও আন্তরিকভাবে সচেষ্ট থেকে এগিয়ে নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ২০২৪ সাল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় সংযোজন করেছে। ২০২৪ সালের বৈষম্য বিরোধী গণ-অভ্যুথান বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করার এক অনন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। ৭১ ও ২৪ এর বীর যোদ্ধাদের আত্মত্যাগকে মহিমান্বিত করার লক্ষ্যে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত, সুখী, সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গঠনে সবাইকে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার অনুরোধ করেন। আলোচনা শেষে অনুষ্ঠানে ৭১-এর সব শহীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ২৪ এর জুলাই-আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ছাত্র-জনতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র-এর বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ

ভারতে সংখ্যালঘুরা ক্রমবর্ধমান অমানবিক আচরণের শিকার হচ্ছেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের স্বাধীন প্যানেল ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডমের (ইউএসসিআইআরএফ) এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের হত্যা পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ভারতের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের (র) ওপর সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে। মার্কিন এই প্যানেলের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমিউনিস্ট-শাসিত ভিয়েতনাম ধর্মীয় বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রচেষ্টা বৃদ্ধি করেছে। যে কারণে ভিয়েতনামকে ‘‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’’ হিসাবে তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। যদিও ভারতের মতো চীনকে নিয়ে অভিন্ন উদ্বেগের কারণে ভিয়েতনামের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় ওয়াশিংটন। বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে এশিয়া এবং অন্যান্য অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের পাল্টা হিসাবে নয়াদিল্লিকে দেখছে ওয়াশিংটন। এর ফলে ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো বিষয়গুলো উপেক্ষিত রয়ে গেছে। তবে প্যানেলের সুপারিশ বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক না হওয়ায় ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র-এর ওপর মার্কিন সরকারের নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্ভাবনা নেই। ২০২৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের ভারত নিশানা করছে বলে অভিযোগ করেছে দেশ দুটি। এই অভিযোগ ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের সম্পর্কে জটিলতা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি র-এর সাবেক কর্মকর্তা বিকাশ যাদবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী এক নেতাকে ব্যর্থ হত্যাচেষ্টা চালানোর অভিযোগ আনা হয়। শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে মনে করে ভারত। একই সঙ্গে বিদেশে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হত্যা চেষ্টার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে দেশটি। ইউএসসিআইআরএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে ২০২৪ সালে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও বৈষম্য বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশটিতে ধর্মীয় স্বাধীনতা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এতে বলা হয়েছে, গত বছরের নির্বাচনী প্রচারের সময় ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা ও ভুল তথ্য প্রচার করে। গত বছরের এপ্রিলে দেশটিতে বসবাসরত মুসলমানদের ‘‘অনুপ্রবেশকারী’’ আখ্যা দিয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ‘‘মুসলিমরা বেশি বেশি সন্তান’’ নেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক প্রতিবেদনে গত কয়েক বছরে ভারতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়নের কথা উল্লেখ করা হয়। তবে নয়াদিল্লি যুক্তরাষ্ট্রের এসব প্রতিবেদনকে ‘‘অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট’’ বলে অভিহিত করেছে। ২০১৪ সাল থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় রয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর বৈষম্যের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেছেন, তার সরকারের বিদ্যুৎ ও ভর্তুকির মতো প্রকল্পগুলো সকল সম্প্রদায়কে সহায়তা করে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের ওই স্বাধীন প্যানেল ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের দায়ে ভারতকে ‘‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’’ হিসাবে মনোনীত করার এবং যাদব ও র’এর বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারের সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেছে। তবে এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ভারতীয় দূতাবাসের তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। সূত্র: রয়টার্স।

কলকাতায় বাংলাদেশ মিশনে স্বাধীনতা দিবস পালিত

পরাধীনতার শিকল ভেঙে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। তাই ২৬ মার্চকে বাংলাদেশে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করা হয়। দিবসটি কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়েছে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বুধবার (২৬ মার্চ) সকালে মিশন প্রাঙ্গণে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন মিশনের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি হাইকমিশনার জনাব মহম্মদ আশরাফুর রহমান শিকদার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মিশনের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীসহ সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তারা। এরপর মিশনের অবস্থিত বাংলাদেশ গ্যালারিতে মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাণী পাঠ করেন মিশনের কর্মকর্তারা। দিবসটি উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন মিশনের ভারপ্রাপ্ত উপ-হাইকমিশনার শিকদার। পরে বাংলাদেশ ও দেশবাসীর জন্য মোনাজাত করা হয়। বিদেশের মাটিতে কলকাতার এই ভবনেই প্রথম উঠেছিল বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে বেলা ১২টার পর বাংলাদেশের পতাকা তোলেন তৎকালীন হাইকমিশনার। ফলে কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের একটি ঐতিহাসিক গুরুত্বও রয়েছে।

তুরস্কে গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরেছেন এরদোয়ান

রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ২২ বছর ধরে তুরস্ক শাসন করছেন। তার শাসনামলে দেশটির গণতান্ত্রিক ভিত্তি ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়েছে। ২০১৭ সালে সংবিধান পরিবর্তনের পর থেকে এরদোয়ান প্রায় অবারিত ক্ষমতায় দেশ পরিচালনা করছেন। তার সরকার এখন তুরস্কের বিচার বিভাগ, নিরাপত্তা সংস্থাসহ প্রায় সব গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। সংবাদ দ্য ইকোনমিস্টের। তবুও এত দিন পর্যন্ত রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা তুরস্ককে ‘প্রতিযোগিতামূলক স্বৈরতন্ত্র’ বলে অভিহিত করতেন- যেখানে বিরোধী দল তত্ত্বগতভাবে নির্বাচন জিততে পারে এবং স্থানীয় পর্যায়ে মাঝে মাঝে জিতেও থাকে। কিন্তু, গত ১৯ মার্চ ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর গ্রেফতারের ঘটনা সেই চিত্র বদলে দিতে পারে। এরদোয়ানকে অনেকেই ১৯৯০-এর দশক থেকে সম্ভাব্য একনায়ক হিসেবে দেখে আসছেন। তিনি এক বার বলেছিলেন, ‘গণতন্ত্র হলো একটি ট্রাম; গন্তব্যে পৌঁছালে তা থেকে নেমে যেতে হয়।’ যদিও ক্ষমতার শুরুর বছরগুলোতে এরদোয়ান অনেককে আশ্বস্ত করেছিলেন, তবে পরে তিনি বিরোধীদের দমন করতে গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। ২০১৫ সালে কুর্দিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়ে বহু নেতাকে কারাগারে পাঠান এরদোয়ান। পরের বছর ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর হাজার হাজার মানুষকে আটক করা হয়, যাদের অনেকেরই অভ্যুত্থানের সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। একই সঙ্গে তিনি গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করেন। কিন্তু ইমামোগলুর গ্রেফতার এক নতুন মোড় নিয়ে এসেছে। ইস্তাম্বুলের এই জনপ্রিয় মেয়র ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোয়ানের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে আসছিলেন। গত বছর তার দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) স্থানীয় নির্বাচনে এরদোয়ানের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (একেপি) পার্টিকে পরাজিত করে চমক দেখায়। অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও দুর্নীতির অভিযোগ এরদোয়ানের জনপ্রিয়তায় ধস নামিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইমামোগলু সিএইচপির প্রধান নেতা হয়ে উঠলে তুরস্কে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতা পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হয়। কিন্তু তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে কারাগারে পাঠানো প্রমাণ করে, এরদোয়ান ক্ষমতা হারানোর চেয়ে গণতন্ত্র বিলুপ্ত করাকেই শ্রেয় মনে করছেন। এরদোয়ান এমন পদক্ষেপ নেওয়ার কারণ আন্তর্জাতিক মহল এখন দুর্বল প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক গণতন্ত্রের মানদণ্ড নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাচ্ছে না। ইউরোপ ব্যস্ত রয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ ও ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন নিয়ে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তুরস্ককে প্রয়োজন মনে করছে, বিশেষত ইউক্রেনের জন্য সম্ভাব্য শান্তিরক্ষী বাহিনী সরবরাহের ক্ষেত্রে। একই সঙ্গে, ২০১৫-১৬ সালের শরণার্থী সংকটের পর থেকে ইইউ তুরস্কের ওপর নির্ভর করছে অভিবাসীদের আটকে রাখার জন্য। ইমামোগলুর গ্রেফতারের পর ইউরোপীয় কমিশনের প্রতিক্রিয়াও ছিল নড়বড়ে, তারা কেবল তুরস্ককে ‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বজায় রাখতে’ বলেই ক্ষান্ত থেকেছে। যদিও ফ্রান্স ও জার্মানি তুলনামূলকভাবে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। আসলে, ইউরোপ আরও কঠোর হতে পারতো। তুরস্কের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদের প্রক্রিয়া স্থগিত রেখে এবং এরদোয়ানের কৌশলগত স্বার্থে আঘাত হেনে ইইউ তাকে চাপ দিতে পারতো। তবে আন্তর্জাতিক শক্তি এরদোয়ানকে স্বৈরতন্ত্রে রূপ নেওয়া থেকে বিরত রাখতে পারবে না—তা পারে কেবল তুর্কি জনগণই। কিছু নাগরিক তার কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিষয়ে শঙ্কিত, অন্যরা ক্রমশ খারাপ হতে থাকা অর্থনীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিনিয়োগকারীরা সংস্কারের আশা ছাড়ছেন। এরই মধ্যে ইমামোগলুর গ্রেফতারের প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমেছে এবং পুলিশি দমন-পীড়নের মুখোমুখি হচ্ছে। গণতান্ত্রিক বিশ্ব তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করবে, কিন্তু বাস্তবে তাদের জন্য কিছু করার সম্ভাবনা খুব কম।

স্বাধীনতা দিবস: বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে পাশে থাকার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) বিবৃতিতে এই শুভেচ্ছা জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘২৬ মার্চ বাংলাদেশের জনগণ যখন স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছে, তখন আমি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি।’ বিবৃতিতে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে বলা হয়, ‘এবারের স্বাধীনতা দিবস এমন এক সময়ে উদযাপিত হচ্ছে, যখন অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে এমন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করছে, যা জনগণকে তাদের ভবিষ্যৎ পথ নির্ধারণের সুযোগ দেবে। বাংলাদেশকে একটি উজ্জ্বল ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র তার সমর্থন অব্যাহত রাখবে।’ মার্কো রুবিও আরও বলেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্ব অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা করছি।’ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের জনগণকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই এবং আমাদের উভয় দেশকে আরও নিরাপদ, শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি।’