বিশ্ব ইজতেমা: বাদ আসর হবে যৌতুকবিহীন বিয়ে
- গাজীপুর প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ১১:১৮ এম, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

গাজীপুরের টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার ময়দান ও এর আশপাশের এলাকা মুসলমানদের পদচারণায় জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। লাখো মানুষের জিকির আসকার, তসবিহ পাঠ ও ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে তুরাগ তীর।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এবারের ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিন। বাদ আসর অনুষ্ঠিত হবে এ আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণ যৌতুকবিহীন বিয়ে।
বাংলাদেশ তাবলিগ জামাত শুরায়ে নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান জানিয়েছেন, শনিবার ফজরের নামাজের পর থেকেই বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা খোরশেদ। বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা ওবায়দুর রহমান।
তাবলীগের ছয় উসুলের বয়ানে মানুষের মধ্যে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা এবং দ্বীনের বাণী সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার পদ্ধতি এবং বিশ্বের মুসলমানদের কীভাবে ঐক্যবদ্ধ করা যায়, সেসব বিষয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, শনিবার বাদ আসর বয়ানের পর ইজতেমার মাঠে যৌতুকবিহীন বিয়ে পড়াবেন ভারতের মাওলানা জুহায়ের।
রেওয়াজ অনুযায়ী বয়ান মঞ্চের মিম্বরের কামরার পাশে শনিবার সকাল থেকেই যৌতুকবিহীন বিয়ের হবু দম্পতির নামের তালিকাভুক্তির কাজ শুরু হয় এবং তা চলে আসর নামাজের আগ পর্যন্ত।
একটি রেজিস্ট্রারে নাম তালিকাভুক্তির পর হবু দম্পতির লোকজনদের কাছে একটি করে সিরিয়ালের টোকেন দেওয়া হয়। সবকিছু ঠিকঠাক হওয়ার পর বয়ান মঞ্চ থেকেই এ বিয়ে পড়ানো হবে।
তিনি জানান, নিয়ম অনুযায়ী কনের অনুপস্থিতিতে বর-কনের অভিভাবক এবং বর সশরীরে বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। বিয়ের আগে বর-কনের উদ্দেশ্যে বয়ান এবং বিয়ের পর বয়ান মঞ্চ থেকেই মোনাজাতের মাধ্যমে নব দম্পতিদের সুখ-সমৃদ্ধিময় জীবন কামনা করা হয়।
পরে বর-কনের অভিভাবকরা বয়ান মঞ্চের আশে-পাশে উপস্থিত মানুষদের মধ্যে খেজুর বিতরণ করেন। ‘মোহর ফাতেমী’র নিয়মানুযায়ী এ বিয়েতে মোহরানা ধরা হয় দেড়শ’ তোলা রুপা বা এর সমমূল্যের অর্থ।
বয়ানে পারস্পরিক সহাবস্থান ও তাবলিগ জামাতের উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা: ইজতেমার প্রথম দিন শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বাদ মাগরিব বয়ান করেছেন মাওলানা আহমাদ লাট। তা বাংলায় তরজমা (অনুবাদ) করেছেন মাওলানা ওমর ফারুক।
তিনি তার বয়ানে কোরআন সুন্নাহ, রাসূল (সা.) ও সাহাবিদের অনুসরণ, পারস্পরিক সহাবস্থান ও তাবলীগ জামাতের উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করেছেন।
বয়ানে আহমাদ লাট বলেন, ‘তাবলিগের কাজকে প্রথাগত কাজ মনে করা যাবে না বরং তা নবীওয়ালা কাজ মনে করতে হবে। মানুষের হক নষ্ট করে তাবলিগের কাজ করা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘আল্লাহ রহমান, দয়ালু সবার ওপর দয়া করেন তিনি। কোনো বিনিময় ছাড়া তিনি বান্দার ওপর দয়া করেন, ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি ও বান্দা হিসেবে আমাদেরও সবাইকে ক্ষমা করার গুণ অর্জন করতে হবে। আমরা যখন প্রতিশোধ না নিয়ে কাউকে ক্ষমা করবে, আল্লাহ তায়ালা আমাদের ওপর অনুগ্রহ করবেন।’
আহমাদ লাট বলেন, ‘আল্লাহর হুকুম মানার পদ্ধতি হলো কোরআন অনুসরণ করা। যখন মানুষ আল্লাহর কালাম অনুযায়ী জীবনযাপন করবে তখন তাদের মাঝে কোনো বিভেদ থাকবে না। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য হলো আমরা আল্লাহর কালামকে নিজের জীবন থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছি। এ কারণে আমরা সব কল্যাণ থেকে দূরে।’
ইজতেমায় আরও একজনের মৃত্যু: টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে আসা আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এবারের ইজতেমায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজক কর্তৃপক্ষ।
মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, শুক্রবার রাতে হৃদযন্ত্র ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন হবিগঞ্জের বাহুবল থানার রাগবপুর এলাকার নওয়াব উল্লার ছেলে মো. ইয়াকুব আলী (৬০)।
এর আগে শুক্রবার সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে খুলনার ডুমুরিয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা লোকমান হোসেন গাজীর ছেলে আব্দুল কুদ্দুস গাজী (৬০) এবং দুপুরে শেরপুরের শ্রীবর্দী থানার রাণী শিমুল এলাকার মো. আব্দুল্লাহর ছেলে ছাবেদ আলী (৭০) মারা গেছেন।
হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, ‘ইজতেমা ময়দানেই তাদের লাশের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। পরে লাশ গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়।’
আয়োজকরা বলছেন, এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে দুই ধাপে। এর মধ্যে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলছে প্রথম ধাপের ইজতেমা। এ ধাপে অংশগ্রহণ করছেন ৪১ জেলা ও ঢাকার একাংশের মানুষ।
এরপর আগামী ৩-৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমা। এ ধাপে অংশ নেবেন ২২ জেলা ও ঢাকার বাকি অংশের মানুষ। এ দুই ধাপের আখেরি মোনাজাত হবে যথাক্রমে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি ও ৫ ফেব্রুয়ারি।
আর দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা ১৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে।