হজ ফ্লাইট শুরুর তারিখ ঘোষণা

হজ ফ্লাইট শুরুর তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি বছরের হজ ফ্লাইট শুরু হবে আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে। এ ফ্লাইট চলবে ৩১ মে পর্যন্ত। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পর্যটন ভবনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহানের সভাপতিত্বে সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সভায় এ তথ্য জানানো হয়। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এ বছর ৮৭ হাজার ১০০ হজযাত্রী বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব যাবেন। আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হবে। চলবে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হজযাত্রীদের পরিবহন ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে আগের বছরগুলোর মতো এ বছরও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস মোট হজযাত্রীর ৫০ শতাংশ অর্থাৎ ৪৩ হাজার ৫৫০ এবং সৌদিয়া এয়ারলাইনস ও ফ্লাইনাস মিলে বহন করবে বাকি অর্ধেক অর্থাৎ ৪৩ হাজার ৫৫০ হজযাত্রী। বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, এ বছর হজের উড়োজাহাজ ভাড়া জনপ্রতি ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সভায় ফ্লাইট শিডিউল, বিদেশে রেজিস্ট্রেশনকৃত বাংলাদেশিদের হজ ফ্লাইট, প্রতিটি ফ্লাইট-পরবর্তী যাত্রী সংখ্যা ও অন্য তথ্য পোর্টালে আপলোডকরণ, হজযাত্রীদের লাগেজ ব্যবস্থাপনা পর্যালোচনা এবং হজযাত্রীদের পরিবহন সেবা নিশ্চিতকরণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

ইজতেমা চলছে দ্বিতীয় দিনের বয়ান, বিকেলে যৌতুকবিহীন বিয়ে

টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে তাবলীগ জামাত আয়োজিত বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিনে শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লির উদ্দেশে কোরআন-হাদিসের আলোকে বয়ান চলছে। বিশেষ করে ইজতেমার প্রথম দিন পবিত্র শবে বরাত হওয়ায় ময়দানের মুসল্লিরা সারারাত ইবাদত বন্দেগিতে কাটিয়েছেন। আজ আসরের পর যৌতুকবিহীন বিয়ে সম্পন্ন হবে। টঙ্গীর ইজতেমা ময়দান এরইমধ্যে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। রোববার (১৫ ফেব্রুয়ারি) আখেরি মোনাজাতে শরিক হবেন মুসল্লিরা। মোনাজাতের আগ পর্যন্ত এ ঢল অব্যাহত থাকবে। দু’দিন ধরে সার্বক্ষণিক ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত রয়েছেন মুসল্লিরা। প্রতিদিন ফজর থেকে এশা পর্যন্ত ঈমান, আমল, আখলাক ও দ্বিনের পথে মেহনতের ওপর আমবয়ান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাবলিগের ৬ উসুলের (মৌলিক বিষয়ে) ওপর শনিবার বাদ ফজর ভারতের হযরত মাওলানা ইলিয়াস বিন সাদ এর বয়ানের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় দিনের বয়ান শুরু হয়। বয়ানের বাংলা অনুবাদ করেন মাওলানা ওসামা ইসলাম। বাদ জোহর বয়ান করবেন সৌদি আরবের মাওলানা। তার বয়ান করবেন মাওলানা মোস্তফা খলিল। বাদ আসর বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা মঞ্জুর (নিজামউদ্দিন)। তার বয়ান তরজমা করবেন বাংলাদেশের মাওলানা রুহুল আমিন। বাদ মাগরিব বয়ান করবেন মাওলানা সাদ এর ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ। তার বয়ান বাংলায় তরজমা করবেন বাংলাদেশের মাওলানা মুনির বিন ইউসুফ। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিনই জর্ডান, লিবিয়া, আফ্রিকা, লেবানন, আফগানিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, ইরাক, সৌদি আরব, ভারত, পাকিস্তানসহ বিশ্বের ৪৯টি দেশ থেকে প্রায় দেড় হাজার মুসল্লি আসেন। ভাষাভাষী ও মহাদেশ অনুসারে ময়দানে ৪ তাবুতে রয়েছেন মেহমানরা। এর মধ্যে রয়েছে ইংরেজি খিমা, উর্দু খিমা, আরবি খিমা ও বাংলা খিমা। বিশ্ব ইজতেমায় আগত দেশ বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লিদের চিকিৎসা সেবা দিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও মুসল্লিদের ফ্রি স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে ১২টি মেডিকেল টিম, ৬টি বিশেষায়িত মেডিকেল টিম, কন্ট্রোল রুম, একটি স্বাস্থ্য শিক্ষা টিম, রেডিওলজি, প্যাথলজি, ফার্মাসিস্ট টিম ও ১১টি স্যানেটারি ইন্সপেক্টর টিম গঠন করা হয়েছে। ১৯৪৬ সালে প্রথম কাকরাইল মসজিদে ইজতেমা আয়োজন করা হয়। ১৯৬৬ সালে গাজীপুরে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বর্তমান ময়দানে স্থানান্তর করা হয় বিশ্ব ইজতেমা। এবছর শুরায়ি নেজাত তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের আয়োজনে ৩১ জানুয়ারি শুরু হয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হয়। মাঝে ৮ দিন বিরতি দিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাযের অনুসারী (মাওলানা সাদপন্থি) মুসল্লিরা বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিয়েছেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এবারের বিশ্ব ইজতেমার পরিসমাপ্তি ঘটবে।

হারাম টাকার মালিকদের এবাদত কবুল হয় না: ধর্ম উপদেষ্টা

ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, যারা হারাম টাকার মালিক, অবৈধ টাকার মালিক তাদের এবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে শবে বরাতের ফজিলত বয়ানে তিনি এসব কথা বলেন। ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা চাকরি করলাম সরকারি-বেসরকারি, তারপর টাকা লুট করে বিদেশে বাড়ি বানাইলাম। সম্পূর্ণ অবৈধ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠাই নাই, মানিলন্ডারিং করে পাঠিয়েছি। আল্লাহর কাছে এসবের জবাব দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমি নিজে ২৬ বছর একটা কলেজে প্রফেসর ছিলাম। মাদ্রাসায় পড়িয়েছি। এখানে আসার আগে ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেছি। তিরমিজি আউয়াল পড়াইতাম। তারপরও অবসর নেই।’ ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘চাকরি শেষ হয়ে গেলে মানুষ হজে যায়। চাকরি শেষ হলে মসজিদ কমিটির সভাপতি, মাদ্রাসা কমিটির সেক্রেটারি, ঈদগা কমিটির অর্থ সম্পাদক হয়। এটা আমাদের সমাজের নিয়মিত চিত্র।’ ঢাকা শহরে সাত তলা বাড়ি হয় কী করে? এমন প্রশ্ন রেখে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘কী করা হয় ঢাকা শহরে? আপনার বেতন কত? আপনার স্কেল কত? আমি ২৬ বছর একটা অনার্স কলেজে শিক্ষকতা করেছি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতা করেছি, ওয়াজ করেছি, ওয়াজে তো মানুষ কিছু হাদিয়াও দেয়, তারপরও তো চট্টগ্রাম শহরে একটা বাড়ি করতে পারিনি। আমার তো কোনো ফ্ল্যাট নেই। হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। এতে আমার কোনো দুঃখ নেই, কারণ আমি আল্লাহর কাছে জবাব দিতে পারব।’ তিনি বলেন,‘যিনি যত বেশি দুই নম্বরি করে টাকা জোগাড় করে বিদেশে ৩৭০টা বাড়ি করতে পারে তার মর্যাদা তত বেশি। আসুন আমরা এই কালচার বদলে ফেলি।’

শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস ও এর ফজিলত

শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে ‘শবে বরাত’ বলা হয়। শবে বরাত কথাটি ফারসি থেকে এসেছে। ‘শব’ মানে রাত, ‘বরাত’ মানে মুক্তি। শবে বরাত অর্থ মুক্তির রাত। শবে বরাতের আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাআত’। হাদিস শরিফে যাকে ‘নিসফ শাবান’ বা ‘শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী’ বলা হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশ, পারস্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশের ফারসি, উর্দু, বাংলা, হিন্দিসহ নানা ভাষায় যা ‘শবে বরাত’ নামেই অধিক পরিচিত। কোরআনুল কারিমে এসেছে, ‘হা-মিম! শপথ! উজ্জ্বল কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি তা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে; নিশ্চয়ই আমি ছিলাম সতর্ককারী। যাতে সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়। এ নির্দেশ আমার তরফ থেকে, নিশ্চয়ই আমিই দূত পাঠিয়ে থাকি।’ (সুরা-৪৪ দুখান, আয়াত: ১-৫)। মুফাসসিরিনগণ বলেন: এখানে ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ বা বরকতময় রজনী বলে শাবান মাসে পূর্ণিমা রাতকেই বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে মাজহারি, রুহুল মাআনি ও রুহুল বায়ান)। হজরত ইকরিমা (রা.) প্রমুখ কয়েকজন তাফসিরবিদ থেকে বর্ণিত আছে, সুরা দুখান–এর দ্বিতীয় আয়াতে বরকতের রাত বলে শবে বরাতকে বোঝানো হয়েছে। (মাআরিফুল কোরআন)। হাদিস শরিফে আছে, ‘হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধশাবানের রাতে মাখলুকাতের দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫, ইবনে মাজাহ: ১৩৯০, রাজিন: ২০৪৮; ইবনে খুজাইমা, কিতাবুত তাওহিদ, পৃষ্ঠা: ১৩৬, মুসনাদে আহমদ, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা: ১৭৬)। হজরত আয়শা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সিজদা করলেন যে আমার ধারণা হলো তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল; তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ করে বললেন, “হে আয়শা! তোমার কি এ আশঙ্কা হয়েছে?” আমি উত্তরে বললাম, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.), আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না।’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘তুমি কি জানো এটা কোন রাত?’ আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলই ভালো জানেন।’ তখন নবীজি (সা.) বললেন, ‘এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত। এ রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন, ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন।’ (শুআবুল ইমান, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩৮২)।শবে বরাত পালনের তাৎপর্য হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে: নবীজি (সা.) এ রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করতেন। তিনি আরও বলেন, নবীজি (সা.) তাঁকে বলেছেন, এ রাতে বনি কালবের ভেড়া–বকরির পশমের (সংখ্যার পরিমাণের) চেয়েও বেশিসংখ্যক গুনাহগারকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি: ৭৩৯)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন শাবানের মধ্য দিবস আসবে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত করবে ও দিনে রোজা পালন করবে। (ইবনে মাজাহ)। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ১৪ শাবান দিবাগত রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাত ইবাদত–বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখো। কেননা, এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন, ‘কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি? আমি ক্ষমা করব; কোনো রিজিক প্রার্থী আছ কি? আমি রিজিক দেব; আছ কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি উদ্ধার করব।’ এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ্বান করতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৪)।শবে বরাতে করণীয় ও বর্জনীয় এ ছাড়া প্রতি মাসের ৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ আইয়ামেবিদের নফল রোজা তো আছেই, যা হজরত আদম (আ.) পালন করেছিলেন এবং আমাদের প্রিয় নবী (সা.)ও পালন করতেন, যা মূলত সুন্নাত। বিখ্যাত মুহাদ্দিস ফকিহ হাফিজ ইবনে রজব (রা.) বলেন, এদিনের রোজা আইয়ামেবিদের রোজার অন্তর্ভুক্ত। (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা: ১৫১)। এ ছাড়া মাসের প্রথম তারিখ, মধ্য তারিখ ও শেষ তারিখ নফল রোজা গুরুত্বপূর্ণ। শবে বরাতের রোজা এর আওতায়ও পড়ে। সওমে দাউদি পদ্ধতিতে এক দিন পর এক দিন রোজা পালন করলেও প্রতিটি বিজোড় তারিখ রোজা হয় এবং শবে বরাতের রোজার শামিল হয়ে যায়। সর্বোপরি রাসুল (সা.) রমজান মাসের পর রজব-শাবান মাসে বেশি নফল নামাজ ও নফল রোজা পালন করতেন, শাবান মাসে কখনো ১০টি, কখনো ১৫টি, কখনো ২০টি নফল রোজা, কখনো আরও বেশি রাখতেন। এমনকি উম্মুহাতুল মুমিনিনগণ বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসে এভাবে নফল রোজা রাখা শুরু করতেন, মনে হতো, তিনি আর কখনো রোজা ছাড়বেন না। (মুসলিম)।

পবিত্র শবে বরাত আজ

সারাদেশে আজ (শুক্রবার) দিবাগত রাতে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে। হিজরি সালের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি মুসলমানরা শবে বরাত বা সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পালন করে থাকেন। রাতটি ‘লাইলাতুল বরাত’ হিসেবেও পরিচিত। পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন। এ উপলক্ষ্যে আগামীকাল শনিবার সরকারি ছুটি থাকবে। এই রাতে বাসাবাড়ি ছাড়াও মসজিদগুলোতে নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, ওয়াজ, মিলাদ মাহফিলসহ ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটাবেন। মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মুসলমানরা বিশেষ মোনাজাত করবেন। শবে বরাত উপলক্ষ্যে আজ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ওয়াজ, দোয়া, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, হামদ-নাতসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে বায়তুল মোকাররম মসজিদে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে লাইলাতুল বরাতের শিক্ষা ও করণীয় বিষয়ে ওয়াজ করবেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন বায়তুল মোকাররম মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও এ উপলক্ষ্যে ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।

আয়নাঘরের বিভীষিকা যেন আর ফিরে না আসে: শায়খ আহমাদুল্লাহ

আয়নাঘরের বিভীষিকাময় দিনগুলো যেন এই দেশে আর ফিরে না আসে সেই আশা ব্যক্ত করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন প্রখ্যাত ইসলামি আলোচক ও সমাজ সেবক শায়খ আহমাদুল্লাহ। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, আয়নাঘরের সে বীভৎস দিনগুলো আর কখনো ফিরে না আসুক এদেশে। এর আগেও আয়নাঘর নিয়ে নিজের উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন এই স্কলার। এক স্ট্যাটাসে তিনি বলেছিলেন, গুয়ানতানামো বে কিংবা আবু গারিব কারাগারের নাম শুনলেই আমাদের গা শিউরে ওঠে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে লোমহর্ষক নির্যাতনের মর্মান্তিক সব দৃশ্য। অথচ আমরা এখন আয়নাঘরের যে বীভৎসতার খবর জানছি, তা যেন গুয়ানতানামো বে, আবু গারিব কারাগারকেও হার মানায়। গতকাল বুধবার শায়খ আহমাদুল্লাহর সে কথার প্রমাণ মিলেছে। রাজধানীর কচুক্ষেত, আগারগাঁও এবং উত্তরা এলাকার তিনটি আয়নাঘর পরিদর্শন করেন ড. ইউনূস। যেগুলো স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় টর্চার সেল এবং গোপন বন্দিশালা হিসেবে ব্যবহার হতো। পরিদর্শনকালে প্রধান উপদেষ্টাসহ উপস্থিত প্রতিনিধিরা সেখানে ইলেকট্রিক চেয়ারসহ নির্যাতনের জন্য ব্যবহৃত উপকরণ দেখতে পান। এসময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমের প্রতিনিধি ও ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগীরা তাদের নির্যাতনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। আয়নাঘর পরিদর্শনশেষে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এরকম টর্চার সেল সারা বাংলাদেশজুড়ে আছে। আমার ধারণা ছিল, শুধু এখানে আয়নাঘর বলতে কয়েকটা আছে। এখন শুনতেছি, আয়নাঘরের বিভিন্ন ভার্সন সারা দেশজুড়ে আছে। কেউ বলে ৭০০, কেউ বলে ৮০০। সে সংখ্যাটা এখনো নিরূপণ করা যায়নি, কতটা জানা আছে, কতটা অজানা আছে। তিনি বলেন, আইয়ামে জাহেলিয়াত নামে একটা কথা আছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আইয়ামে জাহেলিয়াত প্রতিষ্ঠিত করে গেছে সর্বক্ষেত্রে। আয়নাঘর তার একটা নমুনা মাত্র।

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

১৫ শাবান রাত (১৪ তারিখ দিবাগত রাত) হল শবে বরাত। ফারসি ভাষায় শব অর্থ রাত ও বরাত অর্থ মুক্তি। শবে বরাত অর্থ মুক্তির রাত। এই রাতে আল্লাহ মুক্তি ও মাগফিরাতের দুয়ার খুলে দেন। সৃষ্টিকুলের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। এটি নিঃসন্দেহে বরকতময় রাত। রাতটি শাবান মাসের মধ্যবর্তী হিসেবে হাদিসে এই রাতকে লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান তথা অর্ধ শাবানের রাত বলা হয়েছে। বিশ্ব মুসলিমবাসীর বিশ্বাস, এ রাতে অসংখ্য বান্দা আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও আশীর্বাদ লাভ করে থাকে। এ কারণে এ রজনীকে আরবিতে ‘লাইলাতুল বারাআত’ বা ‘নিষ্কৃতি/মুক্তির রজনী’ বলা হয়। হযরত মোহাম্মদ (সা.) এ রজনী সম্পর্কে বলেছেন, ‘এই রাত্রিতে এবাদতকারীদের গুণাহরাশি আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। তবে কেবল আল্লাহর সঙ্গে শিরককারী, সুদখোর, গণক, যাদুকর, কৃপণ, শরাবী, যিনাকারী ও পিতা-মাতাকে কষ্টদানকারীকে আল্লাহ মাফ করবেন না। শবে বরাতের নামাজ এবং নিয়ম কানুন: প্রকৃত অর্থে শবে বরাতের নামাজ বলে আলাদা কিছু নেই, যেহেতু এই রাতটি ইবাদত বন্দেগি করে কাটাতে হবে তাই হাদিসেই এই সমাধান দেয়া হয়েছে। আর বিশ্ব মুসলিম এই বিশেষ কিছু ইবাদত পালন করে থাকেন। সন্ধ্যায়- এই রাতে মাগরিব নামাজের পর হায়াতের বরকত, ঈমানের হেফাযত ও অন্যের মুখাপেক্ষী না হওয়ার জন্য দুই রাকাত করে মোট ৬ রাকাত নফল নামায পড়া উত্তম। এই ৬ রাকাত নফল নামাজের নিয়ম- প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা এরপর যে কোন একটি সূরা পড়তে হবে। দুই রাকাত নামাজ শেষ করে সূরা ইয়াছিন বা সূরা এখলাছ ২১ বার তিলাওয়াত করতে হবে। শবে বরাতের নফল নামাজ: দুই রাকাত তহিয়াতুল অজুর নামাজ, নিয়ম- প্রতি রাকাতে আল হামদুলিল্লাহ (সূরা ফাতিহা) পড়ার পর, ১ বার আয়াতুল কুরসি এবং তিন বার ক্বুলহু আল্লাহ (সূরা এখলাছ)। ফজিলত: প্রতি ফোটা পানির বদলে সাতশত নেকী লিখা হবে। দুই রাকাত নফল নামাজ, নিয়ম- ১ নম্বর নামাজের মত, প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর, ১ বার আয়াতুল কুরসি এবং ১৫ বার করে সূরা এখলাছ, অতঃপর সালাম ফিরানোর পর ১২ বার দুরূদ শরীফ। ফজিলত: রুজিতে বরকত, দুঃখ-কষ্ট হতে মুক্তি লাভ করবে, গুনাহ হতে মাগফিরাতের বকশিস পাওয়া যাবে। আট রাকাত নফল নামাজ দুই রাকাত করে পড়তে হবে, নিয়ম- প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর, সূরা এখলাছ ৫ বার করে। একই নিয়মে বাকি সব। ফজিলত: গুনাহ থেকে পাক হবে, দু’আ কবুল হবে এবং বেশি বেশি নেকী পাওয়া যাবে। ১২ রাকাত নফল নামাজ দুই রাকাত করে, নিয়ম- প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর, ১০ বার সূরা এখলাছ এবং এই নিয়মে বাকি নামাজ শেষ করে, ১০ বার কালেমা তওহীদ, ১০ বার কলেমা তামজীদ ও ১০ বার দুরূদ শরীফ। ১৪ রাকাত নফল নামাজ দুই রাকাত করে, নিয়ম- প্রতি রাকাত সূরা ফাতিহার পর যে কোন একটি সূরা পড়ুন। ফজিলত: যে কোনো দু’আ চাইলে তা কবুল হবে। চার রাকাত নফল নামাজ এক সালামে পড়তে হবে, নিয়ম- প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পর ৫০ বার সূরা এখলাছ শরীফ। ফজিলত: গুনাহ থেকে এমনভাবে পাক হবে যে সদ্য মায়ের গর্ভ হতে ভূমিষ্ঠ হয়েছে। আট রাকাত নফল নামাজ এক সালামে, নিয়ম- প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ১১ বার সূরা এখলাছ শরীফ। ফজিলত: এর ফজিলতে সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, হযরতে সৈয়্যদাতুনা ফাতেমা রাদিআল্লাহু আনহা এরশাদ করেছেন, ‘আমি ওই নামাজ আদায় কারীর সাফায়াত করা ব্যতীত জান্নাতে কদম রাখব না। রোজার ফজিলত হুজুর সালল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, ‘যে শাবানে ১ দিন রোজা রেখেছে, তাকে আমার সাফায়াত হবে।’ আরো একটি হাদিস শরীফে আছে যে, হুজুর সালল্লাহু তালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি শাবানের ১৫ তারিখে রোজা রাখবে, তাকে জাহান্নামের আগুন ছোঁবে না।’ এছাড়াও পড়তে পারেন ‘সালাতুল তাসবীহ এর নামাজ। এই নামাজের অনেক ফজিলত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) স্বীয় চাচা হযরত আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহুকে এই নামায শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে, ‘এই নামাজ পড়লে আল্লাহ আয-যাওযাল আপনার আউয়াল আখেরের সগীরা কবীরা জানা অজানা সকল গুণাহ মাফ করে দেবেন।’ ‘হে চাচা জান! আপনি যদি পারেন, তবে দৈনিক এক বার করে এই নামাজ পড়বেন। যদি দৈনিক না পারেন, তবে সপ্তাহে একবার পড়বেন। যদি সপ্তাহে না পারেন, তবে মাসে একবার পড়বেন। যদি মাসে না পারেন, তবে বছরে এক বার পড়বেন। যদি এটাও না পারেন, তবে সারা জীবনে একবার হলেও এই নামাজ পড়বেন (তবুও ছাড়বেন না।’ শবে বরাতের নামাজের নিয়ত: নাওয়াইতুআন্ উছল্লিয়া লিল্লা-হি তাআ-লা- রাকআতাই ছালা-তি লাইলাতিল বারা-তিন্ -নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কাবাতিশ্ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার। বাংলায় নিয়ত করলে এভাবে করতে পারেন: ‘শবে বরাতের দুই রাকাত নফল নামাজ/ সালাত কিবলামুখী হয়ে পড়ছি, আল্লাহু আকবর’। সতর্কতা: মনে রাখতে হবে, ফরজ নফলের চেয়ে অনেক বড় শবে বরাতের নামাজ। যেহেতু নফল সেহেতু নফল পড়তে পড়তে ফরজ পড়া ভুলে গেলে বা ঘুমের কারণে পড়তে না পারলে কিন্তু সবই শেষ। অর্থাৎ, নফল নামাজ পড়ে পড়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন আর এই দিকে ফজরের নামাজ পড়তে পারলেন না। সাবধান এ যেন না হয়। ভাল হয় শবে বরাতের নফল শেষ করে বেতের নামাজ পড়ে এর পর ফজর পড়া। যাই করেন নামাজ পড়েন আর ঘুমান সমস্যা নেই, ঠিক সময় মত উঠে ফজর নামাজ যেন পড়তে পারেন, সেই দিকে খেয়াল রাখবেন।

শবে বরাতে রোজা কীভাবে রাখবেন

শবে বরাত ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাতগুলোর একটি। যা হিজরি ক্যালেন্ডারের ১৪ শাবান রাতে উদযাপন করা হয়। এটি ‘লাইলাতুল বরাত’ নামেও পরিচিত। যার অর্থ হলো মুক্তির রাত। এই রাতে আল্লাহ বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন, রহমত বর্ষণ করেন এবং তাকদিরের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেন বলে হাদিসে উল্লেখ আছে। শবে বরাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো নফল নামাজ, দোয়া, তাসবিহ-তাহলিল ও নফল রোজা রাখা। অনেকে এই দিনের রোজাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন এবং এটি পালন করাকে বরকতের কাজ বলে মনে করেন। শবে বরাতের রোজার রাখার ফজিলত রয়েছে। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় বেশি রোজা রাখতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহকে (সা.) শাবান মাসের চেয়ে বেশি রোজা রাখতে দেখিনি।’ (বুখারি, মুসলিম) এটি প্রমাণ করে যে, শাবান মাসের রোজার বিশেষ ফজিলত রয়েছে এবং শবে বরাতের রোজা রাখা একটি ভালো আমল। শবে বরাতের রাতে আল্লাহ বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন এবং পরবর্তী বছরের তাকদিরের ফায়সালা করেন। তাই, এই দিনের রোজা রাখা অতিরিক্ত ইবাদতের মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে। এছাড়াও রোজা মানুষের আত্মাকে পবিত্র করে, গুনাহ মাফের পথ প্রশস্ত করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সহায়তা করে। পাশাপশি শাবান মাসের রোজা রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে কাজ করে। এতে শরীর ও আত্মা রমজানের জন্য অভ্যস্ত হয়ে যায়। শবে বরাতে রোজা রাখার নিয়ম: শবে বরাতের রোজা রাখা সুন্নত বা ওয়াজিব নয়। তবে এটি একটি মুস্তাহাব (উত্তম) আমল। রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসে অধিক পরিমাণে রোজা রাখতেন, বিশেষ করে ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে নফল রোজা রাখার সুপারিশ করেছেন। তাই, যারা শবে বরাতের রাতে ইবাদত করেন, তারা পর দিন অর্থাৎ ১৫ শাবান নফল রোজা রাখতে পারেন। রোজার নিয়ত করার নিয়ম: রোজার জন্য নিয়ত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রোজার নিয়ত মূলত অন্তরের ইচ্ছা দ্বারা সম্পন্ন হয়, তবে মুখে উচ্চারণ করাও উত্তম। নিয়ত হতে হবে- ‘নাওয়াইতু আন আসুমা গাদাল লিল্লাহি তাআলা’....। অর্থ: আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাল রোজা রাখার নিয়ত করলাম। সাহরি খাওয়ার নিয়ম: সাহরি খাওয়া সুন্নত এবং এটি ফজরের কিছুক্ষণ আগে খাওয়া উত্তম। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সাহরির খাবারে বরকত রয়েছে, তাই সাহরি খাও।’ (বুখারি, মুসলিম) সাহরি দেরি করে খাওয়া উত্তম, তবে ফজরের আজানের আগে অবশ্যই শেষ করতে হবে। ইফতারের নিয়ম: সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত ইফতার করা সুন্নত। ইফতারের আগে দোয়া পড়া উত্তম-‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া বিকা আমানতু ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতরতু’....। অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি, তোমার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছি, তোমার ওপর ভরসা করেছি এবং তোমার দেওয়া রিজিক দ্বারা ইফতার করছি। শবে বরাতের রোজার বিষয়ে কিছু ভুল ধারণা: অনেকে মনে করেন যে, ১৫ শাবানের রোজা ফরজ বা অত্যাবশ্যকীয়। এটি একটি ভুল ধারণা। এই রোজা নফল এবং এটি রাখা না রাখার স্বাধীনতা রয়েছে। শবে বরাতের রাতের ফজিলত সম্পর্কে কিছু সহিহ হাদিস পাওয়া গেলেও, এই দিনের রোজা রাখা সম্পর্কে কোনো নির্দিষ্ট সহিহ হাদিস নেই। তবে শাবান মাসে বেশি রোজা রাখার সুন্নত রয়েছে। অনেকে মনে করেন যে, এই দিনের রোজার সঙ্গে বিশেষ কোনো দোয়া বা আমল জুড়ে দিতে হবে। কিন্তু ইসলামে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এটি স্বাভাবিক নফল রোজার মতোই পালন করতে হবে।

মসজিদে নামাজের মধ্যে মোবাইল বেজে উঠলে করণীয়

মোবাইল ব্যবহারকারীদের কর্তব্য হলো, মসজিদে ঢোকার আগেই মোবাইল বন্ধ করে দেওয়া যেন মসজিদে মোবাইল বেজে নামাজরত কারো মনোযোগ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। মসজিদে ঢোকার সময় বন্ধ না করলে নামাজে দাঁড়ানোর সময় অবশ্যই মোবাইল ফোনটি সাইলেন্ট বা বন্ধ করে দিতে হবে। কেউ যদি কখনও মোবাইল বন্ধ করতে ভুলে যায় এবং নামাজের মধ্যে মোবাইল বেজে ওঠে তাহলে এক হাতে কল কেটে দেওয়া উচিত। এক হাতে কল কেটে দিলে নামাজ ভেঙে যাবে না। যেহেতু এটা আমলে কাসির বা বেশি কাজ নয়। তবে মোবাইল বন্ধ করার সময় প্রয়োজন অতিরিক্ত কোনো কাজ যেন না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। কল কাটার জন্য প্রয়োজন হলে বাটন বা স্ক্রিনের দিকে তাকানো যেতে পারে। প্রয়োজন ছাড়া কাজ যেমন কে ফোন করেছে দেখার জন্য স্ক্রিনের দিকে তাকালে নামাজ না ভাঙলেও মাকরুহ হবে। নামাজের মধ্যে কল কাটা বা মোবাইল বন্ধ করার জন্য একসাথে দুই হাত ব্যবহার করা যাবে না। এক সাথে দুই হাত ব্যবহার করলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। কল কাটার জন্য নামাজের অবস্থা থেকে সরে গেলে যেমন সিজদা বা রুকু থেকে উঠে গেলেও নামাজ ভেঙে যাবে। নামাজ মহান আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্কের মাধ্যম। নামাজে বান্দা সরাসরি আল্লাহ তাআলার দরবারে দাঁড়ায়। তার প্রতি প্রশংসা নিবেদন করে, তার কাছে প্রার্থনা করে। তাই বান্দার অবশ্যকর্তব্য নামাজ শুরুর আগে দুনিয়াবি সব কাজ ও চিন্তা ভাবনা থেকে পুরোপুরি বিযুক্ত হওয়া। মোবাইলের মতো নামাজে মনোযোগ নষ্ট করতে পারে এমন জিনিস সাথে না রাখা বা নিস্ক্রীয় করা। নামাজে অত্যন্ত বিনয়ী ও বিনম্র থাকা। নিজের আত্মা ও অন্তরকে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহমুখী করা। নামাজে যিনি যত বেশি আল্লাহমুখী তার নামাজ ততই প্রাণবন্ত। খুশুখুজু বা বিনয় ও একাগ্রতা নামাজের সৌন্দর্য। নামাজে যার মনোযোগ যত বেশি, তার নামাজ ততই গ্রহণযোগ্য। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয়ই সফলতা অর্জন করেছে মুমিনগণ, যারা নিজেদের নামাজে বিনয়ী ও একাগ্র। (সুরা মুমিনুন: ১, ২) নামাজে অমনোযোগিতা ও লোক দেখানোর প্রবণতার জন্য শাস্তির ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, সেই নামাজ আদায়কারীদের জন্য দুর্ভোগ, যারা নিজদের নামাজে অমনোযোগী, যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে। (সুরা মাউন: ৪-৬)

রমাযান দ্বারপ্রান্তে: প্রস্তুতি নেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়

মুফতী মোহাম্মদ এনামুল হাসান: আজিমুশ্মান মাহে রমাযান বিশ্ব মুসলিম মিল্লাতের অত্যন্ত সন্নিকটে। আর মাত্র কয়েক দিন পরই শুরু হতে যাচ্ছে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস মাহে রমাযান। ইতিমধ্যেই বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় রমাযানকে স্বাগত জানাতে যাবতীয় প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। মুসলিম উম্মাহ অধীর অপেক্ষায় রয়েছে রমাযানের চাঁদ উদয় হওয়ার। আল্লাহর নেককার বান্দাহ বান্দীগণ সারা বছরই মাহে রমাযানের অপেক্ষা করতে থাকে।বিশেষ করে তারা শা'বান মাস আসার সাথে সাথেই দুনিয়াবি কাজকর্ম গুছিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে মাহে রমাযানের আগমনের। রমাযান মাস কোনো উৎসবের মাস নয়, বরং রোযা রাখার মাধ্যমে তাক্বওয়া অর্জন ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের মাস রমযান। রুহকে কলুষমুক্ত করার মাস রমযান। রমাযান আরবি শব্দ ‘রময’ ধাতু থেকে এর উৎপত্তি। অর্থ দহন করা, ঝলসে দেওয়া। দীর্ঘ এক মাস রোযা রাখার মাধ্যমে রোযাদারের সব পাপ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। মুমিনের হৃদয়ে উজ্জ্বলতা আসে, আত্মার কালিমা ধুয়ে মুছে পবিত্র হয়ে যায়। এ জন্যই এ মাসকে রমাযান রাখা হয়েছে। রমাযানকে রমাযান হিসেবে নাম রাখার কারণ সম্পর্কে হযরত আনাস (রা.) হুজুর (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন যে, রমাযানকে রমাযান নাম রাখার কারণ হলো যে, রমাযান গোনাহকে জ্বালিয়ে দেয়। মহাগ্রন্থ কুরআন শরীফে সাওম বা সিয়াম শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। যার অর্থ বিরত থাকা। রোযা শব্দটি মূলত ফার্সী, আরবি সাওম শব্দের প্রতিশব্দ রুপেই উর্দু ও বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়। শরিয়তের পরিভাষায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়ত সহকারে পানাহার এবং স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকাকে সাওম বা রোযা বলা হয়। রোযার বিধান সম্পর্কে আল্লাহ কুরআন শরীফে বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পার। (সুরা বাক্বারা, আয়াত ১৮৩)। অতএব, আসুন, রমাযানে রোযা রাখার জন্য এখন থেকেই শারীরিক মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করি। রমাযানের পূর্বেই সব প্রকার গোনাহ থেকে তাওবা করে পূতপবিত্র অবস্থায় রমাযানের রোযা রেখে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে মনোনিবেশ করি। লেখক: মুফতী মোহাম্মদ এনামুল হাসানপরিচালকফখরে বাঙ্গাল ইসলামিয়া মাদরাসা ব্রাহ্মণবাড়িয়া

বিশ্ব ইজতেমা: বাদ আসর হবে যৌতুকবিহীন বিয়ে

গাজীপুরের টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার ময়দান ও এর আশপাশের এলাকা মুসলমানদের পদচারণায় জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। লাখো মানুষের জিকির আসকার, তসবিহ পাঠ ও ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে তুরাগ তীর। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এবারের ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিন। বাদ আসর অনুষ্ঠিত হবে এ আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণ যৌতুকবিহীন বিয়ে। বাংলাদেশ তাবলিগ জামাত শুরায়ে নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান জানিয়েছেন, শনিবার ফজরের নামাজের পর থেকেই বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা খোরশেদ। বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা ওবায়দুর রহমান। তাবলীগের ছয় উসুলের বয়ানে মানুষের মধ্যে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা এবং দ্বীনের বাণী সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার পদ্ধতি এবং বিশ্বের মুসলমানদের কীভাবে ঐক্যবদ্ধ করা যায়, সেসব বিষয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, শনিবার বাদ আসর বয়ানের পর ইজতেমার মাঠে যৌতুকবিহীন বিয়ে পড়াবেন ভারতের মাওলানা জুহায়ের। রেওয়াজ অনুযায়ী বয়ান মঞ্চের মিম্বরের কামরার পাশে শনিবার সকাল থেকেই যৌতুকবিহীন বিয়ের হবু দম্পতির নামের তালিকাভুক্তির কাজ শুরু হয় এবং তা চলে আসর নামাজের আগ পর্যন্ত। একটি রেজিস্ট্রারে নাম তালিকাভুক্তির পর হবু দম্পতির লোকজনদের কাছে একটি করে সিরিয়ালের টোকেন দেওয়া হয়। সবকিছু ঠিকঠাক হওয়ার পর বয়ান মঞ্চ থেকেই এ বিয়ে পড়ানো হবে। তিনি জানান, নিয়ম অনুযায়ী কনের অনুপস্থিতিতে বর-কনের অভিভাবক এবং বর সশরীরে বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। বিয়ের আগে বর-কনের উদ্দেশ্যে বয়ান এবং বিয়ের পর বয়ান মঞ্চ থেকেই মোনাজাতের মাধ্যমে নব দম্পতিদের সুখ-সমৃদ্ধিময় জীবন কামনা করা হয়। পরে বর-কনের অভিভাবকরা বয়ান মঞ্চের আশে-পাশে উপস্থিত মানুষদের মধ্যে খেজুর বিতরণ করেন। ‘মোহর ফাতেমী’র নিয়মানুযায়ী এ বিয়েতে মোহরানা ধরা হয় দেড়শ’ তোলা রুপা বা এর সমমূল্যের অর্থ। বয়ানে পারস্পরিক সহাবস্থান ও তাবলিগ জামাতের উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা: ইজতেমার প্রথম দিন শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বাদ মাগরিব বয়ান করেছেন মাওলানা আহমাদ লাট। তা বাংলায় তরজমা (অনুবাদ) করেছেন মাওলানা ওমর ফারুক। তিনি তার বয়ানে কোরআন সুন্নাহ, রাসূল (সা.) ও সাহাবিদের অনুসরণ, পারস্পরিক সহাবস্থান ও তাবলীগ জামাতের উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করেছেন। বয়ানে আহমাদ লাট বলেন, ‘তাবলিগের কাজকে প্রথাগত কাজ মনে করা যাবে না বরং তা নবীওয়ালা কাজ মনে করতে হবে। মানুষের হক নষ্ট করে তাবলিগের কাজ করা যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আল্লাহ রহমান, দয়ালু সবার ওপর দয়া করেন তিনি। কোনো বিনিময় ছাড়া তিনি বান্দার ওপর দয়া করেন, ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি ও বান্দা হিসেবে আমাদেরও সবাইকে ক্ষমা করার গুণ অর্জন করতে হবে। আমরা যখন প্রতিশোধ না নিয়ে কাউকে ক্ষমা করবে, আল্লাহ তায়ালা আমাদের ওপর অনুগ্রহ করবেন।’ আহমাদ লাট বলেন, ‘আল্লাহর হুকুম মানার পদ্ধতি হলো কোরআন অনুসরণ করা। যখন মানুষ আল্লাহর কালাম অনুযায়ী জীবনযাপন করবে তখন তাদের মাঝে কোনো বিভেদ থাকবে না। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য হলো আমরা আল্লাহর কালামকে নিজের জীবন থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছি। এ কারণে আমরা সব কল্যাণ থেকে দূরে।’ ইজতেমায় আরও একজনের মৃত্যু: টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে আসা আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এবারের ইজতেমায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজক কর্তৃপক্ষ। মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, শুক্রবার রাতে হৃদযন্ত্র ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন হবিগঞ্জের বাহুবল থানার রাগবপুর এলাকার নওয়াব উল্লার ছেলে মো. ইয়াকুব আলী (৬০)। এর আগে শুক্রবার সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে খুলনার ডুমুরিয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা লোকমান হোসেন গাজীর ছেলে আব্দুল কুদ্দুস গাজী (৬০) এবং দুপুরে শেরপুরের শ্রীবর্দী থানার রাণী শিমুল এলাকার মো. আব্দুল্লাহর ছেলে ছাবেদ আলী (৭০) মারা গেছেন। হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, ‘ইজতেমা ময়দানেই তাদের লাশের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। পরে লাশ গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়।’ আয়োজকরা বলছেন, এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে দুই ধাপে। এর মধ্যে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলছে প্রথম ধাপের ইজতেমা। এ ধাপে অংশগ্রহণ করছেন ৪১ জেলা ও ঢাকার একাংশের মানুষ। এরপর আগামী ৩-৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমা। এ ধাপে অংশ নেবেন ২২ জেলা ও ঢাকার বাকি অংশের মানুষ। এ দুই ধাপের আখেরি মোনাজাত হবে যথাক্রমে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি ও ৫ ফেব্রুয়ারি। আর দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা ১৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে।

রমজানের সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি প্রকাশ

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এবার পবিত্র রমজান মাস শুরু হবে আগামী ২ বা ৩ মার্চ। তবে রমজান শুরুর সময় ২ মার্চ ধরে ঢাকার সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি প্রকাশ করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। গত সোমবার (২৭ জানুয়ারি) ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৪৪৬ হিজরির রমজান মাসের সেহরি ও ইফতারের এই সময়সূচি চূড়ান্ত করা হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দ্বিনি দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক সরকার সরোয়ার আলম গণমাধ্যমকে সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সময়সূচি অনুযায়ী, আগামী ২ মার্চ প্রথম রমজানে ঢাকায় সেহরির শেষ সময় ভোররাত ৫টা ৪ মিনিট ও ইফতারির সময় ৬টা ২ মিনিট।

বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দিনেই ৩ মুসল্লির মৃত্যু

গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দিনে এখন পর্যন্ত তিন মুসল্লির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপির) গোয়েন্দা বিভাগ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। নিহতরা হলেন আমিরুল ইসলাম (৪০), আবদুল কুদ্দুস গাজী (৬০) ও সাবেদ আলী (৭০)। এর মধ্যে আব্দুল কুদ্দুস ইজতেমা ময়দানে এবং বাকি দুজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এর আগে, বৃহস্পতিবার মাগরিবের পর আম বয়ানের মধ্য বিশ্ব ইজতেমা শুরু হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠের ৬৮টি খিত্তায় অবস্থান করছেন। ইজতেমা ও জুম্মার নামাজ উপলক্ষে আশপাশের এলাকারসহ পাঁচ লাখ মুসল্লির আগমন ঘটে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপির) গোয়েন্দা বিভাগের তথ্যে জানা গেছে, ৪৬টি দেশের বিদেশি মুসল্লি এবারের প্রথম পর্বের ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন। ইজতেমা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশ ও র‌্যাবের কন্ট্রোল রুম এবং ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। মনিটরিং করা হচ্ছে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে। ইজতেমা আয়োজক কমিটির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রায় ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। উল্লেখ্য, এবারের ইজতেমার প্রথম পর্ব দুই ভাগে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপ এবং ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপে ৪১টি জেলা এবং ঢাকার একাংশ অংশগ্রহণ করবে। এছাড়া, দ্বিতীয় ধাপে প্রায় ২২টি জেলা এবং ঢাকার বাকি অংশ অংশগ্রহণ করবে।

লাখো মুসল্লির সমাগমে ইজতেমা ময়দানে দেশের সর্ববৃহৎ জুমা অনুষ্ঠিত

বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে আজ শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) লাখ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশের বৃহত্তম জুমার জামাত। এই নামাজে ময়দান ছাড়িয়ে আশপাশে সড়ক, মহাসড়ক, ফুটপাত ও বিভিন্ন অলিগলি মুসল্লিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। দুপুর ১টা ৫১ মিনিটে জুমার নামাজের জামাত শুরু হয়। এতে ইমামতি করেন বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়ের সাহেব। দেশের বৃহত্তম জুমার নামাজে অংশ নিতে সকালে থেকেই ইজতেমা ময়দানের উদ্দেশে মুসল্লিদের ঢল নামে। বিশেষ করে ঢাকা ও গাজীপুরের আশপাশের বিভিন্ন জেলার মানুষ ইজতেমা ময়দানে সমবেত হন। মুসল্লিদের অনেকে জানিয়েছেন, দেশের বৃহত্তম জুমার নামাজে অংশগ্রহণের জন্যই তারা এসেছেন। এবারের ইজতেমা ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে শুরায়ী নেজামের অধীনে দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম পর্ব ৩১ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ৩ ফেব্রুয়ারি। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। আজ শুক্রবার সকালে ফজরের নামাজের পর আম বয়ান করেছেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক। তাৎক্ষণিকভাবে তা বাংলায় অনুবাদ করছেন মাওলানা নুরুর রহমান। শুক্রবার পৌনে ১০টায় খিত্তায় খিত্তায় তালিমের আমল করা হয়েছে। তালিমের আগে মোজাকেরা (আলোচনা) করেন ভারতের মাওলানা জামাল সাহেব। এছাড়া বিশেষ কিছু অনুষ্ঠান হয়েছে। যেমন, সকাল ১০টায় শিক্ষকদের বয়ানের মিম্বারে বয়ান করেছেন ভারতের মাওলানা ফারাহিম সাহেব। ছাত্রদের সঙ্গে নামাজের মিম্বারে বয়ান করেছেন প্রফেসর আব্দুল মান্নান সাহেব, খাওয়াছদের (গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ) মাঝে টিনশেড মসজিদে বয়ান করেছেন ভারতের মাওলানা আকবর শরিফ সাহেব। এর আগে গতকাল (৩০ জানুয়ারি) মাওলানা ইব্রাহিম দেওলার আম বয়ানের মধ্য দিয়ে ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

শুরু হলো প্রথম ধাপের ইজতেমা

গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুরু হয়েছে ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার মূল আনুষ্ঠানিকতা। বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব আম বয়ানের মাধ্যমে এই পর্বের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। আজ শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হবে বৃহত্তম জুমার নামাজ। জুমার নামাজ পড়াবেন মাওলানা মুহাম্মদ জুবায়ের। ইজতেমার এই পর্বে অংশ নিয়েছেন ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে শুরায়ী নেজামের তাবলীগের সাথীরা। ইজতেমা উপলক্ষে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মুসল্লিদের সুবিধার্থে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। ইজতেমায় মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, বিগত বছরগুলোতে শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মাধ্যমে ইজতেমা শুরু হলেও এবার মাগরিবের নামাজের পর আম বয়ান হয়েছে। নামাজের পরে ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলার আম বয়ানের মাধ্যমে এবারের টঙ্গীর ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। বয়ানের তরজমা করেছেন বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়ের। শুক্রবার বাদ ফজর বয়ান করছেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়া উল হক। আজ সকাল ১০টায় বিভিন্ন খিত্তায় খিত্তায় তালিমের আমল হবে। দুপুরে অনুষ্ঠিত হবে বৃহত্তম জুমার নামাজ। জুমার নামাজ পড়াবেন মাওলানা মুহাম্মদ জুবায়ের। আজ জুমার নামাজে টঙ্গী ও আশপাশের এলাকা থেকে মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করবেন। সকাল থেকে তারা দলে দলে আসতে শুরু করেছেন। এদিকে, ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সুবিধার্থে ১৪টি বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালু করেছে রেলওয়ে। এ ছাড়া মহাসড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। এ ছাড়া ইজতেমার নিরাপত্তায় নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা বলয়। পুরো ময়দান ৫টি সেক্টরে ভাগ করে কাজ শুরু করেছে প্রায় ১০ হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এবারের ইজতেমা ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে শুরায়ী নেজামের অধীনে দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম পর্ব ৩১ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ৩ ফেব্রুয়ারি। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। এরপর আট দিন বিরতি দিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সাদপন্থিদের ইজতেমা শুরু হবে, যা ১৬ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।

আম বয়ানে বিশ্ব ইজতেমা শুরু, মুসল্লিদের ঢল

গাজীপুর জেলার টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বাদ মাগরিব ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলার আম বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার ৫৮তম জমায়েত শুরু হয়েছে। বয়ানের অনুবাদ করছেন বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়ের। তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নিজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব ইব্রাহিম দেওলার আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এবারের বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বাদ ফজর বয়ান করবেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক। শুক্রবার সকাল ১০টায় বিভিন্ন খিত্তায় খিত্তায় তালিমের আমল হবে। এরপর অনুষ্ঠিত হবে দেশের বৃহত্তম জুমার নামাজ। এতে ইমামতি করবেন মাওলানা জুবায়ের। ইজতেমার আয়োজকরা জানান, এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে দুই ধাপে। এর মধ্যে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হবে প্রথম ধাপের ইজতেমা। এ ধাপে অংশগ্রহণ করবেন ৪১ জেলা ও ঢাকার একাংশের মুসল্লিরা। এরপর আগামী ৩-৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমা। এ ধাপে অংশ নেবেন ২২ জেলা ও ঢাকার বাকি অংশের মুসল্লিরা। দুই ধাপের আখেরি মোনাজাত হবে যথাক্রমে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি ও ৫ ফেব্রুয়ারি। এদিকে, ইজতেমার প্রথম পর্বে অংশ নিতে বুধবার (২৯ জানুয়ারি) থেকেই ময়দানে আসতে শুরু করেন মুসল্লিরা। বৃহস্পতিবার বাস, ট্রাক, পিকআপ ভ্যান করে ময়দানে আসছেন মুসল্লিরা। ইজতেমা মাঠের প্রায় প্রতিটি প্রবেশপথেই মুসল্লিদের জটলা দেখা গেছে। ঢল নেমেছে মুসল্লিদের। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফিন সাংবাদিকদের জানান, ময়দানে আগত মুসল্লিদের আগমন ও স্থান সংকলন করতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এবারের বিশ্ব ইজতেমাকে সামনে রেখে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরবর্তী সুবিশাল এলাকায় প্রায় ১৬০ একর জমির ওপর তাবলিগ জামাতের সদস্যদের থাকার জন্য বিশাল চটের প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণে টিনের চালা দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে বিদেশি মেহমানদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা। আন্তর্জাতিক নিবাসে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও টেলিফোন সংযোগসহ আধুনিক বিভিন্ন সুবিধাসমূহসহ সর্বাত্মক ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ইজতেমার মাঠে আগত মুসল্লিদের সুবিধার্থে খাবার পানি, অজুখানা, পুরোনো টিউবওয়েল, বাথরুম ও কাচা পাকা টয়লেট সংস্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য ইটের সলিং করার রাস্তা তৈরি ও পুরোনো ভাঙাচোরা রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। বিদ্যুৎ লাইন, গ্যাস লাইন, পানির পাইপলাইন, পানির ট্যাংক বসানোরসহ বাঁশের খুঁটি বসানো হয়েছে। মুসল্লিদের যাতায়াতে যাতে কোনো রকম ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য তুরাগ নদে এবার সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা ভাসমান সেতু নির্মাণ করেছেন।’

পবিত্র শবে বরাত ১৪ ফেব্রুয়ারি

দেশের আকাশে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র শাবান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। এ হিসাবে আগামী শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) থেকে পবিত্র শাবান মাস গণনা করা হবে। তাই, ১৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।সভায় ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের আকাশে আজ কোথাও ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র শাবান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে আগামীকাল শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) পবিত্র রজব মাস ৩০ দিন পূর্ণ হবে এবং আগামী শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) থেকে পবিত্র শাবান মাস গণনা করা হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে।’শবে বরাতের পর দিন বাংলাদেশে নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি থাকে। এবার সরকারি ছুটি পড়বে ১৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার।পবিত্র শাবান মাসের চাঁদ দেখা সম্পর্কে সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়সমূহ, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আজ ২৯ রজব ১৪৪৬ হিজরি, ১৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের আকাশে কোথাও পবিত্র শাবান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি।এ অবস্থায়, কাল শুক্রবার ১৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ খ্রি. শুক্রবার পবিত্র রজব মাস ৩০ দিন পূর্ণ হবে। আগামী ১৮ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ শনিবার থেকে ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র শাবান মাস গণনা শুরু হবে।

শবে মেরাজে মসজিদে কোরআন তিলাওয়াতের সময় ইমামের মৃত্যু

চলতি বছরের শবে মেরাজে ইন্দোনেশিয়ায় একটি মসজিদে একজন ইমামের মৃত্যু হয়েছে। শবে মেরাজ উপলক্ষে মসজিদে ধর্মীয় আলোচনার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় কোরআন তিলাওয়াত করার সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ইমাম। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে এই চিত্র দেখা গেছে বলে জানিয়েছে কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। ভিডিওতে দেখা গেছে, মসজিদে উপস্থিত মুসল্লিদের সামনে কোরআন তিলাওয়াতের সময় হঠাৎ মাইকসহ পড়ে যান মসজিদের ইমাম। এরপর তার মৃত্যু হয়। এটি ইন্দোনেশিয়ার একটি মসজিদের ঘটনা বলে জানিয়েছে আল জাজিরা। ইন্দোনেশিয়া বৃহত্তর মুসলিম জনসংখ্যার দেশগুলোর একটি। দেশটিত প্রায় ২৪১ মিলিয়ন মানুষ বাস করে, যাদের অধিকাংশই মুসলিম। বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবের মতো শবে মেরাজ ও ইসরাকেও সেখানে গুরুত্ব দিয়ে পালন করা হয়। এ দিন দেশটির বিভিন্ন মসজিদে কোরআন তিলাওয়া করা হয়। চলতি বছরের শবে মেরাজে মসজিদে কোরআন তিলাওয়াতের এমন একটি অনুষ্ঠানেই মৃত্যু হয়েছে এই ইমামের। জানা গেছে, ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের একটি মসজিদে শবে মেরাজ উপলক্ষে আয়োজিত মাহফিলে ঘটনাটি ঘটে। বরেণ্য ওই কারীর নাম তেংকু হাসবি আহমাদ। বয়স ৫৫। যে মসজিদটিতে ওই কারী ইন্তেকাল করলেন, তিনি সেখানকার একজন ইমাম। মসজিদটির নাম ‘মসজিদুল মুজাহিদীন’। মাহফিলে উপস্থিত একজন দর্শক মোবাইল ফোনে ওই কারীর তিলাওয়াতের ভিডিও ধারণ করছিলেন। এর মাঝেই আকস্মিক তিনি পড়ে যান। ওই ভিডিওটিতে দেখা যায়- তিনি পড়ে যাওয়ার সাথে সাথেই মুসল্লিরা তার কাছে ছুটে আসেন। মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানায়, এরপর কারী তেংকু হাসবি আহমাদকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মেডিকেল টিম তাকে মৃত ঘোষণা করে। অথচ মৃত্যুর দুই ঘণ্টা আগে মাগরিবের সময় যখন তিনি মসজিদে প্রবেশ করেন, তখনও তিনি সুস্থ ছিলেন। সূত্র : আল জাজিরা মুবাশির

আগামীকাল শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা

টঙ্গীর তুরাগ তীরে আগামীকাল শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) থেকে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমা। শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মাধ্যমে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার ৫৮তম আয়োজন। এতে অংশ গ্রহণ করবেন ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে শুরায়ী নেজামের তাবলীগের সাথীরা। প্রথম পর্বের ইজতেমায় অংশগ্রহণের জন্য বিভিন্ন খিত্তা ও পয়েন্টের জিম্মাদার মুসল্লিরা এরই মধ্যে ময়দানে আসতে শুরু করেছেন। যারা ইজতেমা ময়দানে এসেছেন তারা তাদের নিজ নিজ খিত্তায় অবস্থান করছেন। এবারের ইজতেমা ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে শুরায়ী নেজামের অধীনে দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম পর্ব ৩১ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ৩ ফেব্রুয়ারি। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। প্রথম পর্বে অংশগ্রহণ করবে গাজীপুর, টঙ্গী, ধামরাই, গাইবান্ধা, মিরপুর, কাকরাইল, নাটোর, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, দোহার, ডেমরা, কাকরাইল, নড়াইল, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, নবাবগঞ্জ, নীলফামারী, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, যশোর, মাগুরা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, নেত্রকোনা, শেরপুর, ফরিদপুর, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খুলনা, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, ঝিনাইদহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পিরোজপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, রাজবাড়ী জেলা। এই ধাপে ঢাকার একাংশসহ মোট ৪১টি জেলা অংশগ্রহণ করছে। তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ শুরায়ী নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, তাবলিগের মেহনত একটি দ্বীনের অন্যতম মেহনত এবং দ্বীনের ধারক-বাহক হচ্ছেন ওলামায়ে কেরাম। ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ভাইয়েরা উলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে থেকেই তাবলিগের মেহনত করতে চান। এই সংখ্যাটা এত ব্যাপক যে, টঙ্গী মাঠের ১৬০ একর জায়গায় তাদের অবস্থান করাটা খুবই কষ্টদায়ক হয়ে যায়।

স্ত্রীকে তালাক দেয়ার ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা

বিয়ে একটি মধুর সম্পর্ক গড়ার অন্যতম উপায়। এটি মানসিকতার প্রশান্তি দেয়। এই বিবাহের জন্য প্রতীক্ষায় থাকে প্রতিটি যুবক-যুবতীর জীবন। অপেক্ষার প্রহর গুনতে-গুনতে এক সময় ধরা দেয় কাঙ্ক্ষিত এই বিবাহ। যদিও গুটি কয়েকজনের ক্ষেত্রে থেকে যায় অধরা। বিবাহের পর অনেকের জীবনেই অর্জিত হয় অনাবিল সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি। নিয়ে আসে একটি কোমল-স্বচ্ছ জীবন। কিন্তু, কখনও কারও জীবনে নিয়ে আসে হতাশা ও অস্থিরতা। স্বামী স্ত্রীর যে মধুর সম্পর্ক হওয়ার কথা ছিল, সেটি আর বহাল থাকে না। কখনও তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে যায় তার সোনালি দিনের সম্পর্ক। তার জীবনের সেই সোনাঝরা দিন স্মৃতি হয়ে যায়।ইসলামি ধর্মে তালাকের মাধ্যমে ইতি ঘটে স্বামী-স্ত্রীর সেতুবন্ধন। কিন্তু ইসলামি শরিয়ত নির্দেশ দেয়,প্রাথমিকভাবে তালাক না দিতে, ধৈর্যের শিক্ষা গ্রহণ করতে। এ জন্য ঘোষণা করেছে, أبغض المباحات الطلاق অর্থাৎ বৈধ বিষয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে মন্দ বিষয় হল- তালাক দেয়া।ইসলাম ধর্ম প্রাথমিকভাবে তালাক না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। ধৈর্যধারণের শিক্ষা দিয়েছে। ধৈর্যধারণ করার পরও যদি স্ত্রী অবাধ্য থেকে যায়,তখন স্ত্রীকে তালাক প্রদানের অনুমতি দিয়েছে। তবে, তালাক প্রদানের ক্ষেত্রে ইসলাম একটি সুন্দর পরামর্শ দিয়েছে- যা সর্বজনীন হিসেবে বিবেচিত। এ জন্য ইসলাম তিনটি পদ্ধতি নির্বাচন করেছে। প্রতিটির আলাদা আলাদা বিধানও নির্ধারণ করেছে। তালাক প্রদানের তিনটি পদ্ধতি হলো- তালাকে আহসান, তালাকে হাসান, তালাকে বিদায়ী। প্রথম দুটিকে আবার ‘তালাকে সুন্নি’ও বলা হয়ে থাকে।‘তালাকে আহসান’ হল- মহিলাদের ঋতুস্রাবের পরবর্তী তুহর তথা পবিত্রতার সময় কেবল এক তালাক দেয়া। তবে, পবিত্রতার সময় সহবাসকৃতা না হতে হবে এবং তিনটি ঋতুস্রাব পর্যন্ত এভাবেই রেখে দেওয়া। এটি তিন প্রকারের মধ্যে সর্বোত্তম পদ্ধতি। রসুলের (সা.) সাহাবিরা এটাকে পছন্দ করতেন।এটাকে উত্তম বলার কিছু কারণও পাওয়া যায়, তন্মধ্যে একটি হল- কখনও স্বামী-স্ত্রীর দীর্ঘ দিনের সম্পর্কে ভাঁটা পড়ে স্রেফ তুচ্ছ বিষয় নিয়ে। একপর্যায়ে রাগের বশবর্তী হয়ে তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় স্বামী এবং তাড়াহুড়ো করে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেয়। কিন্তু পরবর্তী আক্ষেপের কোনো সীমা থাকে না। এ জন্য ইসলামের বিধান বলছে- এক তালাক দিতে, যাতে কখনও ফিরিয়ে আনার ইচ্ছে থাকলে আবার আনা সম্ভব হয়।তালাকে হাসান হলো- পূর্ব সহবাসকৃতা স্ত্রীকে ঋতুস্রাব পরবর্তী তিনটি তুহুর বা পবিত্রতায় একটি করে তিনটা তালাক দেয়া। বৃদ্ধা বা বয়সের স্বল্পতার দরুন ঋতুস্রাব না হলে প্রতি একমাস পরে একটি করে মোট তিনটা তালাক দেওয়া; তবে এ ক্ষেত্রেও তিনটি তুহুরে-ই তথা পবিত্রতায় সহবাস না পাওয়া যেতে হবে। এ প্রকারের হুকুম হল- এটা জায়েয তথা বৈধ।তালাকে বিদায়ী হল- স্ত্রীকে একসাথে তিন তালাক দেওয়া। যেমন বলা, ‘যা তোরে তিন তালাক দিয়ে দিলাম।’এভাবেও হতে পারে, পূর্ব সহবাসকৃতা স্ত্রীকে একই তুহুরে দুই বা তিন তালাক দেয়া অথবা স্ত্রীর ঋতুস্রাবের সময় এক তালাক দেয়া।এভাবে তালাক দেয়া শরিয়তে বৈধ নয়। কিন্তু অবৈধ হলেও তালাক পতিত হয়ে যাবে। তবে ঋতুস্রাব অবস্থায় এক তালাক দিলে ফিরিয়ে আনা উত্তম। হাদিসে এসেছে, ইবনে ওমর রা. তার স্ত্রীকে ঋতুস্রাব অবস্থায় তালাক দেন। তখন নবীজি (সা.) তাকে ফিরিয়ে আনতে নির্দেশ দেন। (বাদায়েউস-সানায়ে: ৩/১৪০,১৪১,১৪৯; হিদায়া: ২/ ২৫৪,২৫৬,২৫৭)

১৭ লাখ ইমাম-মুয়াজ্জিনের জন্য সুখবর!

দেশের প্রায় সাড়ে তিন লাখ মসজিদের ১৭ লাখ ইমাম-মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের সম্মানী ভাতা দেবে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় এই ভাতা দেওয়া হবে। প্রথম দফায় দেশের ১০ শতাংশ মসজিদে এ সম্মানী চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে বাকি মসজিদগুলোকেও এই কর্মসূচির আওতায় আনা হবে। প্রাথমিকভাবে ইমামকে দেয়া হবে পাঁচ হাজার টাকা, মুয়াজ্জিন চার হাজার এবং খাদেম পাবেন তিন হাজার টাকা। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিব মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘সারা দেশে অন্তত সাড়ে তিন লাখ মসজিদ রয়েছে। এসব মসজিদে ১৭ লাখের বেশি ইমাম ও মুয়াজ্জিন রয়েছেন। এর বাইরে শহরের মসজিদগুলোতে খাদেম রয়েছেন। সরকার পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম দফায় দেশের ১০ শতাংশ মসজিদে এ কর্মসূচি চালু করবে। পরে ধাপে ধাপে সব মসজিদ এর আওতায় আসবে। কর্মসূচির আওতায় প্রতিটি মসজিদকে ১২ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে।’ একইভাবে মন্দিরের পুরোহিত ও অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও এ ভাতার আওতায় আসবেন বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এর আগে গত বছরের ৪ মার্চ জেলা প্রশাসক সম্মেলনের ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কর্ম অধিবেশন শেষে মন্ত্রিপরিষদসচিব মাহবুব হোসেন বলেছিলেন, ‘প্রতিটি জেলায় ইমাম, মুয়াজ্জিন, পুরোহিত ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অন্যদের তালিকা প্রস্তুত করতে ডিসিদের নির্দেশ দিয়েছে। তাঁদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ দেশের ৬৪ জেলায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ মসজিদ রয়েছে। এসব মসজিদে প্রায় ১৭ লাখ ইমাম-মুয়াজ্জিন কর্মরত। এর মধ্যে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদ এবং জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদে তিনজন খতিব, ছয়জন পেশ ইমাম ও ছয়জন মুয়াজ্জিনের বেতন-ভাতা রাজস্ব খাতভুক্ত।

থামছে ফিলিস্তিনের কান্না, ফিরে আসবে কি নিহতরা?

৪৬ হাজার ফিলিস্তিনির প্রাণহানির পর যুদ্ধবিরতি। থেমেছে ফিলিস্তিনের কান্না। কিন্তু নিহতরা কি ফিরে আসবে? ফিলিস্তিন মুসলমানদের কাছে একটি পবিত্র ভূমি। এটি কেবল ঐতিহাসিক বা রাজনৈতিক ইস্যু নয়; এটি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কুরআন ও হাদিসে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে মুসলিমদের একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পৃথিবীর প্রতিটি কোণে মানুষ ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করেছে। কিন্তু ফিলিস্তিনে যে নির্মম অত্যাচার, নিষ্পেষণ, ও অমানবিক আচরণ চলছে, তা আজও কোন স্থায়ী সমাধান পায়নি। সেই কান্না, সেই আর্তনাদ আজও আমাদের কানে পৌঁছায়, কিন্তু আমরা কি সত্যিই তাদের জন্য কিছু করতে পেরেছি? ফিলিস্তিন বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন আরব ভূখণ্ড, যা ইতিহাস, সংস্কৃতি ও পবিত্রতার এক অপূর্ব নিদর্শন। এ পবিত্র ভূমির প্রতিটি প্রান্ত জুড়ে ছড়িয়ে আছে আম্বিয়ায়ে কেরামের অজস্র স্মৃতি। ফিলিস্তিনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রায় পাঁচ হাজার নবী ও রাসুল আলাইহিমুস সালাম চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন। এটি এমন এক ভূমি, যা আম্বিয়ায়ে কিরামের দাওয়াত, ত্যাগ ও তাওহিদের বার্তায় পবিত্রতায় ভাস্বর।তাদের স্মৃতিচিহ্ন আজও ফিলিস্তিনের মাটি ও আকাশকে আলোকিত করে রেখেছে। ফিলিস্তিনের প্রতিটি ধূলিকণা যেন নবিদের পদচিহ্নের সাক্ষী। এখানকার প্রতিটি প্রান্তে লুকিয়ে আছে তাদের দাওয়াহর মর্মবাণী, যা আজও সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে আছে। এটি শুধু একটি ভূখণ্ড নয়; বরং মুসলমানদের জন্য ঈমানের অংশ ও ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের অমূল্য ধন।ফিলিস্তিনের ভূমি ও ইতিহাস: ফিলিস্তিন এক সময় ছিল শান্তিপূর্ণ এক ভূমি, যেখানে মুসলমান, খ্রিস্টান ও ইহুদিরা মিলেমিশে একসঙ্গে শান্তিতে বসবাস করত। তবে এই শান্তি দীর্ঘ স্থায়ী হয়নি। ১৯১৭ সালে কুখ্যাত বেলফোর ঘোষণা প্রচারিত হওয়ার মাধ্যমে ইহুদিবাদী ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভিত্তি স্থাপন হয়। এর কয়েক বছর পর ১৯২৪ সালে খেলাফতের উচ্ছেদ মুসলিম উম্মাহর জন্য এক গভীর সংকটের সূচনা করে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১৯২৬ সালে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ব মুসলিম সম্মেলন, যেখানে মুসলমানদের সমগ্রিক পরিস্থিতি ও বিশেষত ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হয়। এরপর, ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ও ধারাবাহিক ভূমি দখলের ফলে ফিলিস্তিনি জনগণের শান্তির সেই ভূমি এক মৃত্যুপুরীতে রূপান্তরিত হয়। আজ ফিলিস্তিনের অধিকাংশ অঞ্চল দখল হয়ে গেছে। গাজা ও পশ্চিম তীর পরিণত হয়েছে খোলা জেলখানায়, যেখানে ফিলিস্তিনিরা প্রতিনিয়ত নিপীড়ন ও বঞ্চনার শিকার। ফিলিস্তিনের এই করুণ অবস্থা মুসলিম উম্মাহর জন্য এক গভীর ক্ষত, যা অবিলম্বে সমাধানের দাবি রাখে।গাজার রক্তাক্ত বাস্তবতা: গাজা, বিশ্বের বৃহত্তম খোলা কারাগার, যেখানে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। ইসরায়েলের আরোপিত কঠোর অবরোধের ফলে পানি, খাদ্য, চিকিৎসা, বিদ্যুৎসহ মৌলিক চাহিদাগুলো চরম সংকটে পড়েছে। এখানে শিশুদের শিক্ষা ও স্বপ্ন বুলেট ও বোমার আঘাতে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গাজার ৮০ শতাংশ মানুষ মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। এই অবস্থা একদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রকৃষ্ট উদাহরণ, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতার প্রতীক। অবিলম্বে এই সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন।ফিলিস্তিনের শিশুদের কান্না: ফিলিস্তিনের শিশুরা পৃথিবীতে চোখ খুলেই দেখতে পায় যুদ্ধের নির্মমতা। তাদের জন্য শৈশব মানে নয়নাভিরাম রং, কাগজের নৌকা কিংবা মায়ের কোলের স্নেহ; বরং শৈশব তাদের কাছে পরিচিত গোলাগুলি, বোমার শেল আর প্রিয়জনের রক্তে ভেজা মাটি দিয়ে। প্রতিদিন তারা দেখে নিজেদের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যেতে, প্রিয়জনদের লাশ মাটিতে লুটিয়ে পড়তে। যেখানে আমাদের সন্তানেরা খেলনা নিয়ে হাসিমুখে শৈশব কাটায়, সেখানে ফিলিস্তিনের শিশুরা এক মুঠো খাবারের আশায় ক্ষুধার্ত পেটে রাত কাটায়। তাদের জীবন থেকে হাসি, শান্তি, ও নিরাপত্তা যেন চিরতরে হারিয়ে গেছে। আমরা কি পারি এই নিষ্ঠুর বৈষম্য মেনে নিতে? আমরা কি পারি সেই নিষ্পাপ মুখগুলোর আর্তনাদ শুনেও চোখ বুজে থাকতে? বিশ্বের নীরবতা: ফিলিস্তিনের এই অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের মাঝে, যখন প্রতি মুহূর্তে রক্ত ঝরছে ও নিরীহ মানুষের রাত্রি কাটছে আতঙ্কের মধ্যে, তখনও বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলি তাদের পাশে দাঁড়ানোর সাহস দেখায় না। জাতিসংঘ বারবার প্রস্তাব পাস করলেও, তা বাস্তবায়নে কোনো দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় না, যেন তাদের জন্য মানবতার কোনো মূল্য নেই। ইসলামি রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে দেখা যায় শুধুমাত্র কিছু শব্দ আর নিন্দার উচ্চারণ,কিন্তু তাতে কি বাস্তবিক পরিবর্তন এসেছে? তাদের প্রকৃত দায়িত্ব পালনে কোনো উদ্যোগ নেই, যেন ফিলিস্তিনের আর্তনাদ তাদের কানে পৌঁছায় না। আমরা কি কেবল শব্দের শক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকব? কেবল নিন্দা জানিয়ে নিজেদের কর্তব্য শেষ করে দেব? না, আমাদের দায়িত্ব অনেক বড়, ও ফিলিস্তিনের প্রতি আমাদের সহানুভূতি শুধু ভাষায় সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়।আমাদের করণীয়: ফিলিস্তিনের প্রতি আমাদের নীরবতা এক দিন আমাদের জন্য বড় অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে। ইসলামের আলোকে আমাদের করণীয় অনেক কিছুই রয়েছে, ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর ঐক্য অত্যন্ত জরুরি। দলাদলি, বিভাজন, ও রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে একত্রিত হওয়া দরকার। কুরআনের নির্দেশনা, তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো ও বিভক্ত হয়ো না। (সুরা আলে ইমরান, ১০৩) দোয়া করা, ফিলিস্তিনের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা, তাদের মুক্তি ও শান্তির জন্য প্রার্থনা করা আমাদের দায়িত্ব। আল্লাহ বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। (সূরা গাফির, ৬০) সাহায্য প্রদান, যারা আর্থিকভাবে সক্ষম, তাদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রেরণ করা জরুরি। ধন-সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করো, যাতে তোমরা পরিত্রাণ পেতে পারো।(সুরা বাকারা, ২৬۱) সচেতনতা বৃদ্ধি, সামাজিক মাধ্যমে ফিলিস্তিনের প্রকৃত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা ও সচেতনতা সৃষ্টি করা। আল্লাহ বলেন,তোমরা সত্যের ওপর দাঁড়াও, মিথ্যা থেকে দূরে থাকো। (সুরা আলে ইমরান, ১০৩) ইসরায়েলি পণ্য বর্জন করা, জালিমদের অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করতে তাদের পণ্য বর্জন একটি কার্যকর উপায়। এটি কুরআন ও সুন্নাহর আদর্শ অনুযায়ী। কুরআনের নির্দেশনা,তোমরা সত্যের পক্ষে থাকো, মিথ্যা ও অন্যায়ের পক্ষে কোনোভাবেই সহায়তা করো না। (সুরা নিসা: ১৩৫) ফিলিস্তিনের প্রতি আমাদের এই দায়িত্ব পূরণই ইসলামের শিক্ষা ও মানবতার প্রতি আমাদের অবদান। ফিলিস্তিন আমাদের কাছে শুধুমাত্র একটি ভূখণ্ড নয়, এটি আমাদের ঈমানের অংশ। এখানেই রয়েছে আল-আকসা মসজিদ, যা ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান। কুরআনের নির্দেশনা,পরম পবিত্র সেই সত্তা, যিনি তার বান্দাকে রাত্রিতে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছিলেন। (সুরা ইসরা, ১) ফিলিস্তিন শুধু একটি রাষ্ট্রের নাম নয়, এটি আজ আমাদের ঈমানের একটি অংশ। সেখানে আজ প্রতিটি ঘরে লাশ, প্রতিটি হৃদয়ে বিষাদ, আর প্রতিটি কোণে রক্তের স্রোত। এই কান্না, এই আর্তনাদ আমাদের কানে বাজলেও আমরা যদি নীরব থাকি, তবে আমাদের ঈমানের কোথায় স্থান? আজ যদি আমরা ফিলিস্তিনের কান্না শুনেও নির্বিকার থাকি, তবে আল্লাহর কাছে আমাদের কী জবাব থাকবে? রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোন মুমিনের দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন।’ (মুসলিম, ২৬৯৯)ফিলিস্তিনের মুক্তি আমাদের ঈমানের দাবিকে পূর্ণতা দেয়। নির্যাতিত মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানো কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী ফরজ দায়িত্ব। তাই, আমাদের দোয়া, সহায়তা, ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাদের মুক্তির পথে এগিয়ে যেতে হবে।আল্লাহ আমাদের ফিলিস্তিনের এই নিপীড়িত জনগণের পাশে দাঁড়ানোর তাওফিক দান করুন।

মেরাজের রাতে নবীজি যেসব নিদর্শন দেখেছেন

আল্লাহ যুগে যুগে বহু নবী-রসুল পাঠিয়েছেন। এমন কোন যুগ নেই নবী-রসুল থেকে খালি ছিল। নবী-রসুলদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হলেন আমাদের প্রিয়নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি নবী-রসুলদের সর্দার। রসুলের (সা.) নবুওয়াতকে শক্তিশালী করার জন্য দেয়া হয়েছে অগণিত মুজেজা। তন্মধ্যে মেরাজ অন্যতম। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদের (সা.) জীবনে যে সব অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিল, তার মধ্যে মিরাজের ঘটনা অন্যতম; যা কোরআন ও অসংখ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।মেরাজের উদ্দেশ্য সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا অর্থ: (মেরাজ সংঘটিত হয়েছিল) তাকে আমার নিদর্শন দেখাবার জন্যে।’ (সুরা বনি ইসরাইল ১)নবীজি (সা.) এ রাতে অসংখ্য বড় বড় নিদর্শন দেখেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল-মানবজাতির পিতা আদমকে (আ.) দেখেছেন। তার ডানপাশে ছিল শহিদদের (জান্নাতিদের) রুহ এবং বামপাশে ছিল জাহান্নামিদের রুহ।মেরাজের রাতে নবীজি জাহান্নাম দেখতে গেলে মালেক নামক জাহান্নামের প্রধান রক্ষী নবীজিকে সালাম ও অভ্যর্থনা জানান। (মুসলিম ১৬৫)রসুল (সা.) বলেন, ‘অতঃপর আমার সামনে বায়তুল মামুর উন্মুক্ত করা হল। বায়তুল মামুর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে জিবরাইল বললেন, এটি হলো বায়তুল মামুর। এতে প্রতিদিন ৭০ হাজার ফেরেশতা সালাত আদায় করে। এক বার যে সেখান থেকে বের হয়ে আসে, কেয়ামতের পূর্বে সে আর তাতে প্রবেশের সুযোগ পাবে না।’ রসুল (সা.) বলেন, ‘অতঃপর আমার জন্যে সিদরাতুল মুনতাহা তথা সীমান্তের কূলবৃক্ষ উন্মুক্ত করা হল। এ বৃক্ষের ফলগুলো ছিল কলসির ন্যায় বড়। গাছের পাতাগুলো ছিল হাতির কানের মত বৃহদাকার।’ নবীজি (সা.) দাজ্জালকেও দেখেছিলেন। (মুসলিম ১৬৫)

এবার সিলেটে মাহফিল করবেন আজহারি

কক্সবাজার ও যশোরের পর এবার সিলেটে তাফসীরুল কোরআন মাহফিলে যোগ দিতে যাচ্ছেন জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা ও গবেষক ড. মিজানুর রহমান আজহারি। আঞ্জুমানে খেদমতে কোরআনের উদ্যোগে শনিবার (১১ জানুয়ারি) সিলেটের এমসি কলেজ ময়দানে আয়োজিত মাহফিলে যোগ দেবেন তিনি। শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে এক ফেসবুক পোস্টে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আজহারি নিজেই। মাহফিল হবে ৯, ১০ ও ১১ জানুয়ারি। ৩ দিনব্যাপী ৩৬তম তাফসির মাহফিলের শেষদিনে প্রধান মুফাসসির হিসেবে আলোচনা পেশ করবেন গবেষক ড. মিজানুর রহমান আজহারি। এদিকে তার মাহফিল ঘিরে ইতোমধ্যে সিলেটের এমসি কলেজ মাঠে মঞ্চ ও প্যান্ডেল তৈরির কাজ শেষের পথে। এখন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য কাজ চলছে। এই মাহফিলে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হবে বলে ধারণা আয়োজকদের। মাহফিলের আয়োজকরা জানিয়েছেন, ধারণা করা হচ্ছে ৫ লাখের বেশি মুসল্লির সমাগম হবে এখানে। তাদের নিরাপত্তা ও সুব্যবস্থার জন্য স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী কাজ করবে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। বিদ্যুৎ বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট যারাই আছেন তাদের সহযোগিতায় কাজ করা হচ্ছে। মাঠের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষের দিকে। মিজানুর রহমান আজহারি ছাড়াও মাহফিলে তাফসির পেশ করবেন ইসলামি চিন্তাবিদ শায়েখ সাইয়্যেদ কামালুদ্দিন জাফরী, কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী, মুফতি আমির হামজা, মাওলানা সাদিকুর রহমান আনসারী, মাওলানা আবদুল্লাহ আল আমিন, শায়েখ ইসহাক আল মাদানিসহ দেশবরেণ্য উলামায়ে কেরাম।