বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রপথে হজযাত্রী পাঠানোর প্রস্তাবে সৌদির সম্মতি
বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রপথে জাহাজে হাজযাত্রী পাঠানোর প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে সৌদি সরকার। রোববার সৌদি আরবের জেদ্দায় বাংলাদেশের ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সময় সৌদির হজ ও উমরাহ বিষয়ক মন্ত্রী তাওফিক ফাউযান আল রাবিয়া এ সম্মতির কথা জানান। এর আগে সমুদ্র পথে হজযাত্রী পাঠানোর বিষয়ে প্রস্তাব দেন ধর্ম উপদেষ্টা।সোমবার (৭ অক্টোবর) ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।উপদেষ্টার প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি হজ ও উমরাহ বিষয়ক মন্ত্রী জানান, সমুদ্রপথে বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রী পাঠানোর ক্ষেত্রে সৌদি সরকারের কোনো আপত্তি নেই। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন আছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকেও জাহাজ কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।এ বছর পরীক্ষামূলক পানিপথে জাহাজযোগে দুই-তিন হাজার হাজযাত্রী পাঠানোর ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার চিন্তা-ভাবনা করছে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।
দেশে ফিরলেন মিজানুর রহমান আজহারী
দীর্ঘদিন পর মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী। বুধবার (২ অক্টোবর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেশে ফেরার কথা জানান তিনি। পেজে দেয়া এক পোস্টে তিনি লিখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, সালামাতে প্রিয় মাতৃভূমিতে এসে পৌঁছালাম। পরম করুণাময় এই প্রত্যাবর্তনকে বরকতময় করুন।' আলাদা এক পোস্টে মিজানুর রহমান আজহারীর মামা মোশারফ হোসেন বিমানবন্দরে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছার ছবি পোস্ট করেন। তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের প্রিয় রাহবার এখন প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে।’ মিজানুর রহমান আজহারী ২০২০ সাল থেকে মালয়েশিয়াতে অবস্থান করছেন। এর আগে এ বছর আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে ফেরার ঘোষণা দেন তিনি। তখন তার ফেসবুক পেজে লিখেন, ‘অনেকে আমাকে মেসেজ করে ও ব্যক্তিগতভাবে ফোন করে জানতে চেয়েছেন, আমি কবে দেশে ফিরব। আমি তাদের বলতে চাই, আমি দ্রুতই দেশে ফিরব। আপনাদের সঙ্গে দেখা করার অপেক্ষাতে রয়েছি আমি নিজেও। শিগগির সাম্য, মানবিকতার মুক্ত-স্বাধীন, বাংলাদেশে আমি আপনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাই। তিনি আরও লেখেন, ‘তাজা রক্তের মাধ্যমে যারা আন্দোলনকে সফল করেছেন সেই শহিদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি ও রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং এখনো কষ্ট করে যাচ্ছেন তাদের শুভেচ্ছা জানাই।’
জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি রুহুল আমিনকে অপসারণ
ঢাকা: বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মো. রুহুল আমিনকে অপসারণ করা হয়েছে।রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবুবকর সিদ্দীক স্বাক্ষরিত এ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মো. রুহুল আমিনকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে খতিবের পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে- ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়৷’আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর খতিব মো. রুহুল আমিন অনুপস্থিত ছিলেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার মসজিদে জুমার নামাজ শুরুর আগে বায়তুল মোকাররমের বর্তমান খতিব হাফেজ মাওলানা ড. মুফতি ওয়ালিয়ুর রহমান খান বয়ান করছিলেন।এমন সময় দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকা খতিব মাওলানা মুফতি রুহুল আমীন অনুসারীদের নিয়ে মসজিদে আসেন। এরপর তিনি বর্তমান খতিবের মাইক্রোফোনে হাত দেন।এ সময় বর্তমান খতিবের অনুসারীরা রুহুল আমিনের অনুসারীদের প্রতিরোধ করেন।তখন দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে খতিব মুফতি রুহুল আমিন নামাজ না পড়িয়ে মসজিদ ত্যাগ করেন।এ ঘটনায় মসজিদের সাধারণ মুসল্লিরা বিচলিত হয়ে পড়েন। পরে খবর পেয়ে মসজিদে আসেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা ও পরিস্থিতি শান্ত করেন তারা।
আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী
আজ ১২ই রবিউল আউয়াল। মহানবী (সঃ)-এর জন্মদিন উপলক্ষ্যে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা হয়। নানা আনুষ্ঠানিকতায় দিনটি পালন করেন মুসলিমরা।এই উপমহাদেশে মিলাদুন্নবী পালনে ঐতিহ্য ৪০০ বছরের। সুন্নী মতাদর্শী ইসলামি চিন্তাবিদরা বলছেন, শরীয়ত সম্মতভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের তাৎপর্য রয়েছে। তবে এ নিয়ে কিছু ইসলামী চিন্তাবিদের দ্বিমতও রয়েছে।মহানবীর আগমন পুরা জাহানের জন্য বরকতময় বলে উল্লেখ করে ইসলামি চিন্তাবিদরা এদিন মিলাদ, নফল রোজা ও ইসলামি বয়ানের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।ঈদে মিলাদুন্নবী পালন হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেশে। বাংলাদেশে এই দিন সরকারি ছুটি থাকে।
এক সপ্তাহে হজের নিবন্ধন করলেন মাত্র ১৩০ জন
২০২৫ সালে হজে গমনেচ্ছুদের জন্য নিবন্ধন পোর্টাল চালু হয়েছে গত ১ সেপ্টেম্বর। তবে শুরুতেই হজ নিবন্ধনের ভাটা পড়েছে। সাত দিনে নিবন্ধন করেছেন মাত্র ১৩০ জন। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১২৩ জন বাকি সাতজন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়।ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ নিবন্ধন চলবে আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। সরকারি-বেসরকারি দুই মাধ্যমেই এই নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে। প্রাথমিক নিবন্ধনের সময়ের পর আর সময় বাড়ানো হবে না।প্রাথমিকভাবে তিন লাখ টাকা জমা দিয়ে এ নিবন্ধন করা যাবে। বাকি টাকা হজের অন্যান্য কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে দিতে হবে।গত বছর সৌদি সরকারের দেওয়া কোটা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। তখন ৪২ হাজার কোটা ফাঁকা ছিল। হজের খরচ বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হজ এজেন্সির নেতারা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার হজের খরচ কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু কত টাকা কমাবে সেটি এখনও বলেন। এজন্য আগ্রহী হজযাত্রীদের মধ্যে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। যদিও শিগগিরই হজ প্যাকেজ ঘোষণা করার কথা জানিয়েছেন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা।গত কয়েক বছর ধরে সৌদি সরকার বাংলাদেশের জন্য ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালনের কোটা দিয়ে থাকে। কিন্তু গত দুবছর হজে খরচ বেড়ে যাওয়ায় সৌদির দেওয়া কোটা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। গত বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গাইডসহ হজ পালন করেছেন ৮৫ হাজার ২৫২ জন। এর মধ্যে সরকারিভাবে ৪ হাজার ৫৬২ জন। আর বেসরকারিভাবে ৮০ হাজার ৬৯৫ জন। এতে প্রায় ৪২ হাজার কোটাই ফাঁকা ছিল।যেভাবে নিবন্ধন করা যাবেই-হজ সিস্টেম (www.hajj.gov.bd) ই-হজ বিডি মোবাইল অ্যাপ থেকে সরকারি মাধ্যমে হজে গমনেচ্ছু ব্যক্তিরা সব ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, বায়তুল মোকাররম মসজিদ এবং ঢাকার আশকোনার হজ অফিস হতে প্রাক-নিবন্ধন ও প্রাথমিক নিবন্ধন করতে পারবেন। বেসরকারি মাধ্যমের হজযাত্রীদেরকে অনুমোদিত এজেন্সি কর্তৃক প্রাথমিক নিবন্ধন করতে হবে। প্রাথমিক নিবন্ধনের সময় প্রাক-নিবন্ধন সনদ ও পাসপোর্ট প্রয়োজন হবে।
হজ শেষে দেশে ফিরেছেন ৪৩ হাজার হাজি
ঢাকা: সৌদি আরবে পবিত্র হজ পালন শেষে ৪৩ হাজার ৮৩ হাজি দেশে ফিরেছেন। বুধবার (৩ জুলাই) ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজবিষয়ক প্রতিদিনের বুলেটিন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। জানা যায়, পবিত্র হজ পালন শেষে এখন পর্যন্ত ৪৩ হাজার ৮৩ জন হাজি দেশে ফিরেছেন। সৌদি থেকে ১০৯টি ফ্লাইটে এসব হাজি বাংলাদেশে এসেছেন। এবার হজে গিয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৫৮ বাংলাদেশি। এ বছর হজ করতে বাংলাদেশ থেকে ২১৮ ফ্লাইটে ৮৫ হাজার ২৫৭ জন সৌদি আরব গেছেন। প্রথম হজ ফ্লাইট ছিল ৯ মে এবং সর্বশেষ ফ্লাইট ছিল ১২ জুন। গত ১৫ জুলাই পবিত্র হজের প্রধান কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। হজ শেষে ২০ জুন থেকে দেশে ফেরার ফ্লাইট শুরু হয়। ফেরার ফ্লাইট চলবে আগামী ২২ জুলাই পর্যন্ত।
পবিত্র হজ আজ, আরাফাত ময়দানে মুখর লাব্বাইক ধ্বনি
আজ (শনিবার, ১৫ জুন) পবিত্র হজ। আজ আরাফাতের ময়দান মুখর হবে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এই ময়দানে অবস্থান করবেন বিশ্বের দেড় শতাধিক দেশ থেকে আগত লাখ লাখ মুসলমান। আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। শুক্রবার (১৪ জুন) মিনায় অবস্থান করেছেন হজযাত্রীরা। সেলাইবিহীন দুই টুকরা সাদা কাপড় পরে হজের নিয়ত করে তাঁরা মক্কা থেকে মিনায় যান। মিনায় নিজ নিজ তাঁবুর মধ্যে নামাজ আদায়সহ অন্যান্য ইবাদত করেন। আজ ফজরের নামাজ আদায় করেই তাঁরা যাবেন আরাফাতের ময়দানে। লাখো কণ্ঠে আরাফাতের ময়দানে ধ্বনিত হবে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক। ’ অর্থাৎ আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার। পবিত্র হজ মহান আল্লাহর একটি বিশেষ বিধান। হজ শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘ইচ্ছা করা’। হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান সব মুসলমান পুরুষ ও নারীর ওপর হজ ফরজ। আরাফাতের ময়দান মক্কা থেকে ২২ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। এটি দৈর্ঘ্যে দুই কিলোমিটার, প্রস্থেও দুই কিলোমিটার। এই ময়দানের তিন দিক পাহাড়বেষ্টিত। আরাফাতে রয়েছে জাবালে রহমত বা রহমতের পাহাড়। এই ময়দানে উপস্থিত হাজিদের উদ্দেশে খুতবা দেওয়া সুন্নত। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এখানকার মসজিদে নামিরা থেকে বিখ্যাত বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। আরাফাতে অবস্থান হজের শ্রেষ্ঠ রুকন। কারণ আরাফাতের ময়দান যেন বিশ্ব সম্মিলন। লাখ লাখ হাজির এ ময়দানে মুসলিমদের একতার ইঙ্গিত বহন করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে এই নামাজ আদায় করেছে আর এর আগে আরাফায় অবস্থান করেছে দিনে বা রাতে, তার হজ পূর্ণ হয়েছে এবং সে তার ইহরাম শেষ করেছে। ’ (সুনানে নাসায়ি) আরাফাতের ময়দান থেকে মুসলিমদের ঐক্য, শৃঙ্খলা ও শান্তির বার্তা সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। মহান আল্লাহ আরাফাতের দিন ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে ঘোষণা দেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বিন পূর্ণাঙ্গ করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করলাম এবং ইসলাম তোমাদের দ্বিন মনোনীত করলাম। ’(সুরা : মায়েদা, আয়াত: ৩) আজ মসজিদে নামিরা থেকে খুতবা দেবেন পবিত্র মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়খ মাহের বিন হামাদ আল-মুয়াইকিলি। স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মানারাতুল হারামাইন (manaratal haramain) ওয়েবসাইটসহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে তা সরাসরি সম্প্রচারিত হবে। এদিকে কয়েক বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় এ খুতবার অনুবাদ সম্প্রচার করা হচ্ছে। টানা পাঁচ বছরের মতো এবারও বাংলাসহ ২০টির বেশি ভাষায় আরাফাতের খুতবার অনুবাদ সম্প্রচার করা হবে। এ বছর এর বাংলা অনুবাদ উপস্থাপন করবেন মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ড. খলীলুর রহমান। হজের অংশ হিসেবে জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ এই পাঁচ দিনে মিনা, আরাফাত, মুজদালিফা ও মক্কায় অবস্থান করে হজযাত্রীরা হজের কার্যক্রম পালন করবেন। এর মধ্যে আজ শনিবার (০৯ জিলহজ) আরাফাতের ময়দানে জোহর ও আসর নামাজ একসঙ্গে পড়বেন। এরপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া-মোনাজাতে মগ্ন থাকবেন। সূর্যাস্তের পর সবাই আরাফাত থেকে ৯ কিলোমিটার দূরত্বে মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা দেবেন। সেখানে একসঙ্গে মাগরিব ও এশার নামাজ পড়ে রাত্রিযাপন করবেন। মুজদালিফা থেকে তিন জামারার জন্য তাঁরা পাথর সংগ্রহ করবেন। পরদিন রোববার (১০ জিলহজ) মিনায় বড় জামারায় গিয়ে পাথর নিক্ষেপ করবেন। এরপর কোরবানি করে মাথা ন্যাড়া করবেন। তখন ইহরামের কাপড় বদলে স্বাভাবিক পোশাক পরে মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে পবিত্র কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করবেন। কাবার সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় সাঈ (সাতবার দৌড়ানো) করবেন। সেখান থেকে তাঁরা আবার মিনায় ফিরে যাবেন। সেখানে তাঁরা দুই দিন বা তিন দিন (১১ থেকে ১২ বা ১৩ জিলহজ) (বড়, মধ্যম, ছোট) জামারায় সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করবেন। এরপর মক্কায় বিদায়ি তাওয়াফ করে হজের সব কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন। সৌদি আরবের গণমাধ্যম জানিয়েছে, এবার হজে অংশ নিতে বিভিন্ন দেশ থেকে ১৫ লাখের বেশি হজযাত্রী দেশটিতে গেছেন। প্রতি বছরের মতো এবারও সৌদি বাদশাহ সালমানের আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বাংলাদেশসহ ৮৮টি দেশের এক হাজার ৩২২ জন হজ করছেন। তা ছাড়া এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ইসরায়েলি হামলায় নিহত বা আহত ফিলিস্তিনি পরিবারের আরও এক হাজার জন হজ করছেন। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের ৪ হাজার ২০০ জন ফিলিস্তিনি এবার হজ করছেন। এদিকে দীর্ঘ এক যুগ পর সিরিয়া থেকে সৌদি আরবের হজ ফ্লাইট চালু হয়। এবার দেশটি থেকে ১৭ হাজারের বেশি মুসল্লি হজে অংশ নিচ্ছেন। হজের স্থানগুলোর আশপাশে ৩২টি হাসপাতালসহ ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিক আছে। এসব স্থানে পাঁচ হাজারের বেশি চিকিৎসকসহ ৩২ হাজারের বেশি চিকিৎসাকর্মী রয়েছেন। তা ছাড়া সৌদি রেড ক্রিসেন্ট কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাকর্মীসহ দুই হাজার ৫৪০ জনের বেশি জরুরি সেবা দিচ্ছেন। আল্লাহর মেহমানদের যাতে কষ্ট না হয়, সে জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষ হাজিদের জন্য ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। হজের সময় তীব্র তাপমাত্রা নিয়ে সতর্ক করে হজযাত্রীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছে সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এবারে, তীব্র গরম উপেক্ষা করে বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা প্রান্তের প্রায় ১৮ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ করতে পবিত্র মক্কা নগরীতে সমবেত হয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে এবার পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরব পৌঁছেছেন ৮৫ হাজার ১২৯ জন।
হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু
সৌদি আরবের মক্কা নগরে শুরু হয়েছে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা। পাঁচ দিনের হজে ‘লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখর হবে মিনা, আরাফাতের ময়দান ও মুজদালিফা। হিজরি ১৪৪৫ সালের জিলহজ মাসের ৮ তারিখ আজ। আরবি বর্ষপঞ্জিকার শেষ মাস জিলহজের ৮ তারিখ থেকে শুরু হয় হজ।এরপর ৯ জিলহজে অবস্থান করতে হয় আরাফাতের ময়দানে। আর ১০ জিলহজে পশু কোরবানি করেন হাজিরা।পশু কোরবানি শেষে আরও দুদিন থাকে হজের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা। হজ সম্পন্ন করতে সব মিলিয়ে পাঁচদিন সময় লাগে। প্রথম দিন হজযাত্রীরা (পুরুষ) সেলাই ছাড়া ইহরাম বা সাদা কাপড় পরেন। অপরদিকে নারীরা ঢিলেঢালা পোশাক পরেন। এদিন আরও কিছু নিয়ম নীতি মানতে হয়। যেমন কারও সঙ্গে রাগারাগি না করা এবং যৌন সম্পর্কে লিপ্ত না হওয়া। ইহরাম পরার পর দলে দলে হাজিরা মিনায় যান। মিনায় হাজিরা ৮ জিলহজ জোহর থেকে ৯ জিলহজ ফজরসহ মোট পাঁচ ওয়াক্ত আদায় করবেন। ফজরের নামাজ আদায় করার পর তারা রওনা দেবেন ১৪ দশমিক ৪ কিলোমিটার দূরত্বের আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশ্যে।আরাফাতের দিবসকে ধরা হয় মূল হজ হিসেবে। মিনা থেকে ৯ জিলহজ ভোর থেকেই হজযাত্রীরা ‘লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হবেন। তাদের সমস্বরে উচ্চারিত ‘লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত হবে আরাফাতের আকাশ বাতাস। দুপুরে হজের খুৎবা শুনবেন তারা। তারপর এক আজানে হবে জোহর ও আসরের নামাজ। সূর্যাস্তের পর হজযাত্রীরা আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করে যাত্রা করবেন নয় কিলোমিটার দূরের মুজদালিফার পথে। সেখানে আবার তারা এক আজানে আদায় করবেন মাগরিব ও এশার নামাজ। এ রাতে মুজদালিফায় তারা খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করবেন।এসময় তারা মুজদালিফা থেকে পাথর সংগ্রহ করবেন জামারায় প্রতীকী শয়তানকে নিক্ষেপের জন্য। এরপর শনিবার সকালে সূর্যোদয়ের পর জামারায় প্রতীকী বড় শয়তানকে লক্ষ্য করে ছোট সাতটি নুড়ি পাথর নিক্ষেপ করবেন হজযাত্রীরা। এরপর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করবেন। কোরবানি করে মাথা মুণ্ডন করবেন। এহরাম খুলে পরবেন সাধারণ পোশাক। আবার কাবাঘর তাওয়াফ করবেন। সাফা-মারওয়ায় সাতবার সাঈ (চক্কর) করবেন। এরপর আবার ফিরে যাবেন মিনায়। এর পরদিন এবং তার পরদিন অর্থাৎ টানা দুদিন দ্বিতীয় ও ছোট শয়তানকে পাথর মারার মধ্য দিয়ে শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা।মহান আল্লাহ হজরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে (আ.) নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি যেন তার সবচেয়ে প্রিয় কিছু আল্লাহর জন্য কোরবানি করেন। হজরত ইসমাইল (আ.) ছিলেন হজরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের সবচেয়ে প্রিয়। মিনার এ স্থানে তিনি আল্লাহকে খুশি করতে যখন নিজের সবচেয়ে প্রিয় পুত্রকে নিয়ে যান, তখন সেখানে উপস্থিত হয় শয়তান। যেটি নবী ইব্রাহিমকে আল্লাহর আদেশ অমান্য করতে প্ররোচনা দিচ্ছিল। ওই সময় ইব্রাহিম (আ.) শয়তানকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করেন। এখন হাজিরা এ স্থানে প্রতীকি শয়তানকে লক্ষ্য করে পাথর মারেন। ইব্রাহিম (আ.) যখন তার পুত্রকে কোরবানি করতে যান তখন সেখানে আল্লাহ তায়ালা একটি ভেড়াকে এনে দেন।মিনার আনুষ্ঠানিকতা শেষে হাজিরা মক্কায় ফিরে যান এবং শেষবারের মতো কাবা তাওয়াফ করেন। যা ‘বিদায়ী তাওয়াফ’ নামেও পরিচিত।নিজ বাড়িতে বা দেশে ফেরার আগে বেশিরভাগ হাজি মদিনায় হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের (সা.) রওজা মোবারক জিয়ারত করেন। সূত্র: আলজাজিরা
অনিদ্রায় যে দোয়া পড়বেন
অনেকেই ঘুমের সমস্যায় ভোগেন। প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা এখন অনেক সময় ব্যয় করি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ ইন্টারনেটে। এর একটা প্রভাব পড়ে মনোজগতে। এর ফল হিসেবে সময়মতো ঘুম না আসার মতো সমস্যাগুলো বেশি দেখা যাচ্ছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি তোমাদের রাতকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী। ’ (সুরা নাবা, আয়াত : ০৯) কিন্তু দেখা যায়, কারও কারও রাতে ঘুম আসে না। নিদ্রাহীনতায় রাত কাটে। বিছানায় ছটফট করে সময় ফুরায়। তাই যারা অনিদ্রার রোগে আক্রান্ত তাদের জন্য আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর শেখানো দোয়া রয়েছে। সেই দোয়া ও আমল করলে, আল্লাহ তাআলা অনিদ্রা দূর করে দেবেন ইনশাআল্লাহ। اَللّٰهُمَّ رَبَّ السَّمَوَاتِ السَّبْعِ وَمَا اَظَلَّتْ وَرَبَّ الْاَرَضِيْنَ وَمَا اَقَلَّتْ وَرَبَّ الشَّيَاطِيْنَ وَمَا اَضَلَّتْ كُنْ لِّيْ جَارًا مِّنْ شَرِّ خَلْقِكَ كُلِّهِمْ جَمِيْعًا اَنْ يَفْرُطَ عَلَيَّ اَحَدٌ مِّنْهُمْ اَوْ اَنْ يَّبْغِيَ عَزَّ جَارُكَ وَجَلَّ ثَنَاؤُكَ لَاۤ اِلٰهَ غَيْرُكَ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ . উচ্চারণ: আল্লাাহুম্মা রব্বাস সামাওয়াা তিস সাব‘ই ওয়ামাা আযা ল্লাত ওয়া রব্বাল আরাযীনা ওয়ামাা আক্বাল লাত ওয়া রব্বাশ শায়াা ত্বীনি ওয়ামাা আযাল লাত কুন লী জাা রন মিন শাররি খলক্বিকা কুল্লিহিম জামী‘আন আন ইয়াফরুত্বা ‘আলাইয়্যা আহাদুন মিনহুম আউ আন ইয়াবগিয়া ‘আযযা জাা রুকা ওয়া জাল্লা সানাা উকা ওয়ালাা ইলাহা গইরুকা লাা ইলাাহা ইল্লাা আনতা। অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি সপ্ত আকাশের প্রতিপালক এবং ওই সব বস্তুর প্রতিপালক, যার উপর সপ্তম আকাশ বিস্তার করে আছে এবং যিনি সমগ্র জমিনের প্রতিপালক এবং ওইসব বস্তুর প্রতিপালক যা সমগ্র জমিন বহন করে আছে এবং যিনি শয়তান ও ওই লোকদের প্রতিপালক যাদেরকে শয়তান গোমরা করেছে। দোয়া ২: উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল ওয়াহিদুল কাহহার, রব্বুস-সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়ামা বায়নাহুমাল আজিজুল গাফফার। অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই, যিনি একক ও প্রবল প্রতাপের অধিকারী। আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী এবং উভয়ের মধ্যবর্তী সব বস্তুর প্রতিপালক। যিনি পরাক্রমশলী, ক্ষমাশীল। উপকারিতা : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন রাতে ছটফট করতেন, তখন উল্লিখিত দোয়া পাঠ করতেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৫৫৩০)
পরকালে যেসব আমলের সওয়াব স্থায়ী হবে
মানুষের মৃত্যুর পর পৃথিবীর সব কিছুর সঙ্গে মৃত ব্যক্তির সব বন্ধন শেষ হয়ে যায়। রক্তের সম্পর্ক কিংবা ধনদৌলতের প্রতাপ কিছুই কাজে আসে না। কেবল নেক আমলই তার সঙ্গী হয়ে পরকালীন প্রতিটি ধাপে তাকে সাহায্য করবে। এ জন্যই আল্লাহ সন্তান ও সম্পদকে দুনিয়ার সৌন্দর্য হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন আর কঠিন সময়ে সঙ্গদানকারী নেক আমলকে বাকিয়াতুস সালিহাত তথা স্থায়ী সৎকর্ম বলে উল্লেখ করেছেন।ইরশাদ হয়েছে, ‘ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য এবং স্থায়ী সৎকর্মসমূহ আপনার পালনকর্তার কাছে প্রতিদানপ্রাপ্তি ও আশা লাভের জন্য উত্তম। ’ (সুরা : কাহাফ, আয়াত : ৪৬) উক্ত আয়াতে বর্ণিত বাকিয়াতুস সালিহাত তথা স্থায়ী সৎকর্মের বিশ্লেষণ নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ বলেছেন, বাকিয়াতুস সালিহাত হলো পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ। যেমনটি হাদিস শরিফে এসেছে, উবায়দুল্লাহ বিন উতবা (রহ.) সাহাবি ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, বাকিয়াতুস সালিহাত তথা স্থায়ী সৎকর্ম হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। আরও কয়েকটি সনদে হজরত সাঈদ বিন জুবাইর ও আমর বিন শুরাহবিল (রহ.) থেকেও অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। আরেক দল উলামায়ে কিরাম বাকিয়াতুস সালিহাত-এর ব্যাখ্যায় বলেন, স্থায়ী সৎকর্ম হলো তাসবিহ-তাহলিলের মাধ্যমে আল্লাহর জিকির করা। তারা নিজেদের কথার সমর্থনে নবীজির হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়েছেন। এক বর্ণনায় এসেছে, উমারা ইবনু সাইয়্যাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (রা.)-কে বলতে শুনেছেন, ‘বাকিয়াতুস সালিহাত’ (যা কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে) সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহু আকবারু ওয়া সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ হচ্ছে বাকিয়াতুস সালিহাত। (মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস : ৪৭৭) অন্য বর্ণনায় এসেছে, আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, স্থায়ী সৎকাজ বা যে সৎকাজের পুণ্য স্থায়ী হবে, সে দোয়াটি হচ্ছে এই—‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া সুবহানাল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবারু ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। ’ অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, আল্লাহর জন্যই পবিত্রতা, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহর জন্যই যাবতীয় প্রশংসা, পাপকাজ হতে দূরে থাকার এবং পুণ্যকাজ সম্পাদন করার ক্ষমতা আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কারো নেই। (বুলুগুল মারাম, হাদিস : ১৫৪৫) আবার কেউ কেউ বলেছেন, স্থায়ী সৎকর্ম হলো উত্তম কথা বলা। (জামেউল বয়ান : ২৮/৩৫) তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও ভারসাম্যপূর্ণ মত হলো- সব ধরনের সৎকর্ম, যা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা হয়—এ সব কিছুই বাকিয়াতুস সালিহাত তথা স্থায়ী সৎকর্মের অন্তর্ভুক্ত। যেমন—আল্লাহর জিকির দরুদ শরিফ পাঠ করা, রোজা রাখা, নামাজ পড়া, হজ করা, সদকা করা, দাস মুক্ত করা, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা এবং সব ধরনের নেক আমলই বাকিয়াতুস সালিহাত, যা বাকি থাকবে যত দিন আসমান-জমিন থাকবে বান্দাকে জান্নাতে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত। শেষোক্ত মতটিই অধিকতর নির্ভরযোগ্য। কেননা আল্লাহ তাআলা এর ব্যাখ্যায় আয়াতে এবং নবী করিম (সা.) হাদিসে অন্য সব আমল থেকে নির্দিষ্ট কোনো আমল উল্লেখ করেননি। হাদিসের বিভিন্ন স্থানে নানা ধরনের আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, সেখানে বোঝানো হয়েছে যে এ সবই হলো স্থায়ী সৎকর্ম। কোথাও এ কথা বলা হয়নি যে শুধু এগুলোই বাকিয়াতুস সালিহাত, বরং হাদিসে যেসব সৎকাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে আর যা উল্লেখ করা হয়নি—সবই স্থায়ী সৎকর্ম। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে স্থায়ী সৎকর্মের ওপর অটল থাকার তাওফিক দান করুন।
গৃহকর্মীর সঙ্গে রাসূল (সা.)-এর আচরণ
গৃহকর্মীর প্রতি রাসূল (সা.)-এর ক্ষমা ও সহনশীলতা সম্পর্কে আনাস (রা.) বলেন, ‘আমি দশ বছর ধরে রাসূল (সা.) এর খেদমত করেছি। আল্লাহর কসম! তিনি কোনো দিন আমাকে বকা দেননি। কোনো দিন উফ্ বলেননি। কখনো বলেননি, এ কাজটি কেন করেছ? এ কাজটি কেন করোনি?’ (বুখারি, হাদিস নং : ৬৪৩০) আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) কখনো কোনো বস্তুকে কিছু দিয়ে আঘাত করেননি। তার কোনো স্ত্রী ও সেবক-গৃহকর্মীকে প্রহার করেননি। শুধুমাত্র তিনি আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করেছিলেন। কারো থেকে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। কিন্তু আল্লাহর অসম্মানী করা হলে, তখন আল্লাহর জন্য প্রতিশোধ নিয়েছেন। ’ (মুসলিম, হাদিস নং: ২৩২৮) বাস্তবতার বিচারে সেবক ও গৃহকর্মীরা নির্ভুল থাকে না। কখনো না কখনো ভুল করেই থাকে। কাজের ক্ষেত্রে তাদের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়ে থাকে। এতদাসত্ত্বেও রাসূল (সা.) তাদের ভুল-ত্রুটিগুলোর দিকে নজর দিতেন না। বরং তাদের দুর্বলতাগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতেন। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, একলোক একবার রাসূল (সা.)-এর কাছে এসে বলে, গৃহকর্মীদের আমরা আর কত ক্ষমা করবো? তখন তিনি চুপ থাকেন। লোকটি আবার একই প্রশ্ন করে। এভাবে তিনবার প্রশ্ন করার পর রাসূল (সা.) বলেন, ‘তাদের দৈনিক সত্তর বার করে ক্ষমা করো। ’ (আবু দাউদ, হাদিস নং : ৪৪৯৬) ঢাকাওয়াচ/টিআর
বৃষ্টি শেষে যে দোয়া পড়তে হয়
বৃষ্টি আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনের এক নেয়ামত এবং রহমত। নবী করিম (সা.) বৃষ্টির পানি গায়ে লাগাতেন। তিনি তার উম্মতদেরও বৃষ্টির পানি গায়ে লাগানোর জন্য বলেছেন। বৃষ্টি শেষে যে দোয়া পড়তে হয় উচ্চারণ: ‘মুতিরনা বিফাদলিল্লাহি ওয়া রহমাতিহ। ’ অর্থ: ‘আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে। ’ উপকার: বৃষ্টি শেষে রাসুল (সা.) সাহাবায়ে কেরামদের এই বিশেষ দোয়াটি পড়ার তাগিদ দিয়েছেন। কারণ মক্কার কাফিররা ভাবত বিভিন্ন তারকার প্রভাবে পৃথিবীতে বৃষ্টি হয়। (বুখারি, হাদিস: ১০৩৮) ঢাকাওয়াচ/টিআর
জুমার দিন কখন দোয়া কবুল হয়
মানুষের সহস্র প্রয়োজন ও চাহিদা থাকে। প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ সব করে। চাহিদা পূরণে কেউ সাধ্যের কমতি করে না। ধর্মপ্রাণ মানুষ বিশ্বাস করে, আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজন ও চাহিদার কথা তুলে ধরলে আল্লাহ প্রয়োজন পূরণ করেন। চাহিদায় ঘাটতি থাকলে তা দূর করে দেন। এ জন্য সবাই চায়, আল্লাহর কাছে তার কথা গৃহিত হোক। তার দোয়া কবুল হোক। স্বাভাবিকভাবে শুক্রবার বা জুমার দিন একটি গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ দিন। এ দিনের কিছু সময়ে আল্লাহ বান্দার দোয়া ফিরিয়ে দেন না বলে হাদিসে এসেছে। বিভিন্ন বর্ণনায় বিভিন্ন সময়ের কথা উল্লেখ হয়েছে। তবে জুমার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার বিশেষ সময় কোনটি সে সম্পর্কে মতানৈক্য থাকলেও দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) আমাদের সঙ্গে একদিন শুক্রবারের ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, সেই সময়টায় যদি কোনো মুসলিম নামাজ আদায়রত অবস্থায় থাকে এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ অবশ্যই তার সে চাহিদা বা দোয়া কবুল করবেন এবং এরপর রাসুল (সা.) তার হাত দিয়ে ইশারা করে সময়টির সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন। ’ (বুখারি) আবু দারদা ইবনে আবু মুসা আশআরি (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি জুমার দিনের বিশেষ মুহূর্তটি সম্পর্কে বলেছেন, ইমামের মিম্বরে বসার সময় থেকে নামাজ শেষ করা পর্যন্ত সময়টিই সেই বিশেষ মুহূর্ত। (মুসলিম, মিশকাত) আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইমাম মিম্বরে বসা থেকে নামাজ শেষ করা পর্যন্ত। ’ (মুসলিম, ইবনু খুজাইমা, বয়হাকি) রাসুল (সা.) থেকে জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেন, জুমার দিনে ১২ ঘণ্টা রয়েছে। তাতে এমন একটা সময়ে রয়েছে, যাতে আল্লাহর বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায় আল্লাহ তাই দেন। অতএব তোমরা আছরের শেষ সময়ে তা তালাস করো। (আবু দাউদ, হাদিস নং : ১০৪৮, নাসাঈ, হাদিস নং : ১৩৮৯) আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বর্ণনা করেন, শুক্রবারে আছরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া কবুল হয়। বিখ্যাত সিরাতগ্রন্থ যাদুল মাআ’দ-এ বর্ণিত আছে, জুমার দিন আছরের নামাজ আদায়ের পর দোয়া কবুল হয়। (২/৩৯৪) ইমাম আহমদ (রহ.)-ও একই কথা বলেছেন। (তিরমিজির ২য় খণ্ডের ৩৬০ নং পৃষ্ঠায় কথাটি উল্লেখ আছে) মোট কথা, জুমার দিনে বিশেষ একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে সময় আল্লাহ তাআলা বান্দার দোয়া কবুল করে থাকেন। এ সময় সম্পর্কে আরো কিছু অভিমত তুলে ধরা হলো: জুমার নামাজে সুরা ফাতিহার পর আমিন বলার সময়। আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়ে। মুয়াজ্জিন আজান দেয়ার সময়। জুমার দিন সূর্য ঢলে পড়ার সময়। ইমাম খুতবা দেয়ার জন্য মিম্বরে দাঁড়ানোর সময়। উভয় খুতবার মধ্যবর্তী সময়। জুমার দিন ফজরের আজানের সময়। প্রত্যেক জুমায় আলাদা আলাদা সময়ে। গুরুত্বপূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য কথা হলো, দোয়া কবুলের সময়টি পুরোদিনের ভেতর লুকিয়ে আছে। পুরোপুরি নির্ধারিত না করার উদ্দেশ্য হলো, বান্দা যেন জুমার দিন সর্বদা ইবাদত-বন্দেগি ও দোয়ায় মশগুল থাকে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। ঢাকাওয়াচ/টিআর
যেভাবে কথা বলতেন প্রিয় রাসুল (সা.)
কথাবার্তা দিয়ে একজন মানুষের ভালো-মন্দ যাচাই করা যায়। এরই মধ্যে ফুটে ওঠে তার ব্যক্তিত্ব ও স্বভাব। এই কথা মানুষকে যেমন জান্নাতে পৌঁছাতে সাহায্য করে, অনুরূপ জাহান্নামের পথেও নিয়ে যায়। একজন মুমিনের কথাবার্তা কেমন হবে, কেমন হবে তার সম্বোধন—তার উত্তম দৃষ্টান্ত রয়েছে রাসুল (সা.)-এর জীবনে। নিম্নে মহানবী (সা.)-এর কথাবার্তা ও বাকভঙ্গির নানা দিক তুলে ধরা হলো— সত্যবাদিতা কথার সত্যতা হলো কথার সঙ্গে বাস্তবতার মিল থাকা। সত্যের একটা প্রভাব আছে, যা মানুষকে আকর্ষণ করে। কোরআনে সত্য কথার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো। ’ (সুরা তওবা, আয়াত ১১৯) রাসুল (সা.) নবুয়তের আগে ও পরে সত্যবাদী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সত্যবাদী হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল শৈশব থেকে। রাসুল (সা.) সাহাবিদের সত্য বলতে উৎসাহিত করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, নিশ্চয়ই সত্য ভালো কাজের পথ দেখায় আর ভালো কাজ জান্নাতের পথ দেখায়। আর মানুষ সত্য কথা বলতে অভ্যস্ত হলে আল্লাহর কাছে সত্যবাদী হিসেবে (তার নাম) লিপিবদ্ধ হয়। নিশ্চয়ই অসত্য পাপের পথ দেখায় আর পাপ জাহান্নামের পথ দেখায়। কোনো ব্যক্তি মিথ্যায় রত থাকলে পরিশেষে আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদী হিসেবেই (তার নাম) লিপিবদ্ধ করা হয়। (বুখারি, হাদিস ৬০৯৩) স্পষ্টতা স্পষ্টতা কথার অন্যতম গুণ। শ্রোতার মনে স্পষ্ট কথার প্রভাব বেশি পড়ে। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.)-এর কথা এত সুস্পষ্ট ছিল যে প্রত্যেক শ্রোতা তাঁর কথা বুঝত। ’ (আবু দাউদ, হাদিস ৪৮৩৯) ধীরস্থিরতা ধীরস্থিরতা কথার অন্যতম গুণ। দ্রুত গতিতে কথা বলা, যা মানুষের বুঝতে কষ্ট হয় দূষণীয়। রাসুল (সা.) কথাবার্তায় ধীরস্থির ছিলেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) এমনভাবে কথা বলতেন যদি কোনো গণনাকারীর গণনা করতে ইচ্ছা করে তবে সে গুনতে পারবে। ’ (মুসলিম, হাদিস ৭৩৯৯) মিষ্টভাষী রাসুল (সা.) কথাবার্তায় ও আচার-আচরণে কোমলতা অবলম্বন করতেন। কর্কশ ও রূঢ় ভাষায় কারো সঙ্গে কথা বলতেন না এবং কাউকে সম্বোধনও করতেন না। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি যদি কঠোর হৃদয়ের হতেন, তবে মানুষ আপনার থেকে দূরে চলে যেত। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৫৯) বাহুল্য বর্জন রাসুল (সা.) কখনো প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতেন না। সওয়াবহীন কাজে কখনো সময় ব্যয় করতেন না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, কোনো ব্যক্তির ইসলাম পালনের অন্যতম সৌন্দর্য হলো অনর্থক কথা ও কাজ ত্যাগ করা। ’ (তিরমিজি, হাদিস ২৩১৮) শালীনতা রাসুল (সা.)-এর কথাবার্তা শালীনতার চাদরে আবৃত ছিল। তিনি কখনো অশালীন কথা বলেননি। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) অশালীন, অভিশাপকারী ও গালিদাতা ছিলেন না। তিনি কাউকে তিরস্কার করার সময় শুধু এটুকু বলতেন—কী হলো তার তার কপাল ধূলিমলিন হোক। ’ (বুখারি, হাদিস ৬০৬৪) বিশুদ্ধভাষী রাসুল (সা.) ছিলেন সবচেয়ে বিশুদ্ধ ভাষার অধিকারী। তাঁর উচ্চারণ, শব্দ প্রয়োগ ও বাচনভঙ্গি সবই ছিল বিশুদ্ধতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ। হিন্দ ইবনে আবু হালা (রা.)-কে রাসুল (সা.)-এর বাচনভঙ্গি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, রাসুল (সা.) তিনি বেশির ভাগ সময় নীরব থাকতেন। বিনা প্রয়োজনে কথা বলতেন না। তিনি স্পষ্টভাবে কথা বলতেন। তিনি ব্যাপক অর্থবোধক বাক্যালাপ করতেন। তাঁর কথা ছিল একটি থেকে অপরটি পৃথক। তাঁর কথাবার্তা অতি বিস্তারিত কিংবা অতি সংক্ষিপ্তও ছিল না। অর্থাৎ তাঁর কথার মর্মার্থ অনুধাবনে কোনো প্রকার অসুবিধা হতো না। তাঁর কথায় কঠোরতার ছাপ ছিল না, থাকত না তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের ভাব। ’ (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস ১৬৭) ঢাকাওয়াচ/টিআর
রোগী দেখতে যাওয়া একটি উত্তম নফল ইবাদত
একজন মুসলমানের প্রতি অপর মুসলমানের দায়িত্ব-কর্তব্য (হক) সম্পর্কে যে কয়েকটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে, সেগুলোর প্রত্যেকটিতে ‘রোগীর পরিচর্যা’র বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত আছে। এ ছাড়াও কিয়ামতের ময়দানে রুগ্ন ব্যক্তির পক্ষে মহান আল্লাহ নিজেই ফরিয়াদি হয়ে আদম সন্তানকে জিজ্ঞেস করবেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি রুগ্ন ছিলাম তুমি পরিচর্যা করোনি। ’ -মুসলিম অসুস্থ কোনো মুসলমান ভাইয়ের সেবায় নিয়োজিত হতে পারাকে নিজের জন্য সৌভাগ্যের বিষয় মনে করতে হবে। রুগ্ন ব্যক্তির সেবার মাধ্যমে প্রভুর নৈকট্য লাভ করা সহজ। রোগী পরিচর্যার ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। নফল ইবাদতগুলোর মধ্যে রোগী দেখতে যাওয়া একটি উত্তম ইবাদত। এ প্রসঙ্গে হজরত আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘যে কোনো মুসলমান সকালবেলা যদি কোনো রুগ্ন মুসলমানকে দেখতে যায়, তার জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা সন্ধ্যা পর্যন্ত দোয়া করতে থাকে। আর যদি সে তাকে সন্ধ্যা বেলায় দেখতে যায়, তাহলে তার জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা সকাল পর্যন্ত দোয়া করতে থাকে এবং তার জন্য জান্নাতে একটি ফলের বাগান তৈরি করা হয়। -তিরমিজি ও আবু দাউদ হজরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে উত্তমরূপে অজু করে সওয়াবের উদ্দেশ্যে তার কোনো মুসলমান রুগ্ন ভাইকে দেখতে যাবে, তাকে জাহান্নাম থেকে ৬০ বছরের পথ দূরে রাখা হবে। ’ -আবু দাউদ হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে কোনো মুসলমান কোনো রুগ্ন মুসলমানকে দেখতে যায় এবং ৭ বার বলে, আমি মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি, যিনি মহান আরশের অধিকারী, তিনি যেন আপনাকে আরোগ্য দান করেন। এতে তাকে নিশ্চয় আরোগ্য দান করা হয়, যদি না তার মৃত্যু উপস্থিত হয়। -আবু দাউদ ও তিরমিজি রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে নবী করিম (সা.) তাদের জন্য নিম্নোক্ত দোয়া করতেন— ‘আজহিবিল বাছা রাব্বান-নাসি, ওয়াশফি আনতাশ শাফি, লা শিফায়া ইল্লা শিয়ায়ুকা- শিফায়ুন লা ইউগাদিরু সাকামান। ’ হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) স্বীয় পরিবারের কোনো রোগীকে দেখতে গেলে তার গায়ে হাত রেখে বলতেন, ‘হে আল্লাহ! হে মানুষের প্রভু! রোগ দূর কর, রোগ-মুক্তি দান কর। তুমিই রোগ-মুক্তি দানকারী। তোমার রোগ-মুক্তি ছাড়া কোনো রোগ-মুক্তি নেই। এমন রোগ-মুক্তি কোনো রোগ বাকী রাখে না। ’ –বোখারি হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখতে রওয়ানা হলো, সে আল্লাহর রহমতের সাগরে সাঁতার কাটতে থাকলো, যতক্ষণ না সে তথায় গিয়ে বসে। যখন সে গিয়ে বসল, তখন সে রহমতের সাগরে ডুব দিল। -মালেক ও আহমদ রোগীকে দেখতে গেলে সামাজিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধি পায়। মান-অভিমান থাকলে তাও দূর হয়ে যায়। রোগী দেখার নিয়ম হলো, রোগীর কাছে এত সময় অপেক্ষা করা যাবে না যাতে রোগী বিরক্তিবোধ করে। রোগীকে আশ্বস্ত করতে হবে; তার মনোবল চাঙ্গা করার চেষ্টা করতে হবে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) শিখিয়েছেন, রোগীর কাছে গিয়ে বলতে হবে, ইনশাআল্লাহ আপনি শিগগির ভালো হয়ে যাবেন। অসুস্থতার কারণে গোনাহ মাফ হয়। এ জন্য রোগীর কাছে নিজের জন্য দোয়া চাইতে হবে। কোনো রোগ বা রোগীকে ঘৃণা করা যাবে না। রোগী দেখলে অন্তর নরম হয়, স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ জাগে। এ জন্য বেশি বেশি রোগী দেখা এবং রোগীর সেবা করার কথা বলা হয়েছে। মানুষ তার মানবিক বিবেচনা থেকেই অসুস্থ ব্যক্তির পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন। ঢাকাওয়াচ/টিআর
পণ্যে ভেজাল মেশানো হারাম
পণ্য সামগ্রীতে যেকোনো ধরনের ভেজাল মেশানো দেশীয়, সামাজিক এবং ইসলামী শরিয়তেও অপরাধ হিসেবে গণ্য। পণ্যে শুধু বর্জ্যপদার্থ, ভিনজাতীয় পদার্থ বা বিষ মেশানোকেই ভেজাল বোঝায় না। বরং ব্যবসাজনিত কর্মকাণ্ডের যাবতীয় লেনদেনে বস্তুর দোষত্রুটি গোপন করা, ওজনে কম দেওয়া, অসত্য তথ্য দেওয়া, ধোঁকা দেওয়া, নিম্নমানের পণ্য মিশিয়ে দেয়া, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি করা ইত্যাদিও ভেজালের অন্তর্ভুক্ত। ইসলামে সব ধরনের ভেজাল-মিশ্রণ হারাম বা নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে আহলে কিতাবরা! কেন তোমরা জেনে-শুনে সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে সংমিশ্রিত করছো এবং সত্যকে গোপন করছো। ‘ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৭১) পণ্যে ভেজাল মিশ্রণ করে ক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা করা সম্পূর্ণ অনৈতিক। ইসলামে সব ধরনের প্রতারণা নিষিদ্ধ। আবু হুরায়রাহ (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) বাজারে খাদ্য স্তুপের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। খাদ্য স্তুপের ভেতরে হাত দিয়ে দেখলেন ভেতরের খাদ্যগুলো ভেজা। বিক্রেতার কাছে তিনি জানতে চাইলেন, এমনটি কেনো করা হলো বিক্রেতা বললেন, আল্লাহর রাসুল! বৃষ্টিতে এগুলো ভিজে গেছে। তখন রাসুল (সা.) বললেন, তাহলে তুমি খাদ্যগুলো উপরে রাখনি কেনো যাতে মানুষ দেখতে পেত। এরপর রাসুল (সা.) বললেন, যে ব্যক্তি প্রতারণা করবে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। (মুসলিম, হাদিস নং ১০২) অন্য হাদিসে ব্যবসায়ীকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, ‘যদি তোমার পণ্যদ্রব্যে কোনো দোষ-ত্রুটি থাকে, তবে তা কখনো গোপন করবে না। কারণ, তা গোপন করলে ব্যবসায় বরকত হয় না। ’ (বুখারি ও মুসলিম)। আরেক হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম করে পণ্য বিক্রি করে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তার দিকে ফিরেও তাকাবেন না। ’ (সহিহ বুখারি) ঢাকাওয়াচ/টিআর
তরমুজ খাওয়া সুন্নত, নবীজি (সা.) যেভাবে খেতেন
গ্রীষ্মকালীন ফল হলো তরমুজ। রসালো ও সুস্বাদু এ ফলটি উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে কাজ করে। এতে ফাইবারের পরিমাণ কম হলেও পানির পরিমাণ বেশি। আবার ক্যালরি খুব কম থাকায় ওজন বাড়ারও ভয় নেই। তাই নিশ্চিন্তে খেতে পারেন তরমুজ। পানির পরিমাণ বেশি থাকায় এটি গরমে পানিশূন্যতা ধরে রাখতে ও শরীর আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগেও এ ফলটি ছিল। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও এ ফল খেতেন। তবে নবীজির এ ফল গ্রহণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়মের বর্ণনা পাওয়া যায় হাদিসে। তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে তরমুজ খেতেন, যাতে এর ক্ষতিকর প্রভাব শরীরে না পড়ে। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাজা খেজুর দিয়ে তরমুজ খেতেন। তিনি বলতেন, এর ঠান্ডা ওর (খেজুরের) গরম কমাবে, এবং এর (খেজুরের) গরম ওর (তরমুজের) ঠান্ডা কমিয়ে দেবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮৩৬) এ হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, খাদ্যগ্রহণের ক্ষেত্রে নবীজি (সা.) অত্যন্ত সতর্ক ছিলেন। প্রতিটি মুমিনেরই উচিত জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে সতর্কতা অবলম্বন করা, বুঝেশুনে কাজ করা; এমনকি খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রেও নবীজি (সা.) এর সুন্নত অনুসরণ করা। তরমুজ খাওয়ার ক্ষেত্রে হাদিসের আমল অনুসরণ করা যেতে পারে। কারণ, এ ফলটি মাত্রার চেয়ে বেশি খেলে কখনো কখনো হিতে বিপরীত হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। যেমন—তরমুজে প্রচুর পানি ও ডায়েটারি ফাইবার থাকে। বেশি পরিমাণে তরমুজ খেলে হজমে গোলযোগ দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ডায়রিয়া, খাবার হজম না হওয়া, গ্যাসের মতো নানা সমস্যা দেখা দেয়। এতে চিনির যৌগ হিসেবে পরিচিত সরবিটল থাকে, যাতে গ্যাসের সমস্যা ও পাতলা পায়খানা তৈরি করে। তাই এ ধরনের ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যালান্স রক্ষা করা জরুরি। ঢাকাওয়াচ/টিআর
পবিত্র শবে কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম রাত
২০ রমজানের পর যেকোনো বিজোড় রাতই হতে পারে শবে কদর। তবে ২৬ রমজানের দিবাগত রাতেই শবে কদর আসে বলে অনেক আলেমদের অভিমত। সে হিসেবে আজ হতে পারে পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর। ‘শবেকদর’ ফারসি শব্দ। শব মানে রাত বা রজনী। আর কদর মানে সম্মান, মর্যাদা, গুণাগুণ, সম্ভাবনা, ভাগ্য ইত্যাদি। শনিবার (৬ মার্চ) দিবাগত রাতে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে পালিত হবে এটি। আরবি দিন যেহেতু সূর্যাস্ত থেকে শুরু হয় তাই সন্ধ্যার পর থেকেই পবিত্র শবে কদরের মাহেন্দ্রক্ষণ এসে হাজির হবে মুসল্লিদের কাছে। পবিত্র রমজান মাসের লাইলাতুল কদরের রাতে নাজিল হয়েছিল পবিত্র কোরআন। তাই মহান আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন। এ রাতে নফল নামাজ আদায়, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের মধ্য দিয়ে শবে কদরের রজনী কাটাবেন তারা। এই রাতের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিসেও বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। এই মাসের শেষ দশকে যেকোন দিন ‘লাইলাতুল কদর’ হতে পারে, তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ দশককে এত বেশি গুরুত্ব দিতেন যে, তিনি ইবাদতের জন্য পূর্ব থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন এবং পুরো রাত জাগ্রত থেকে নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, দোয়া ও জিকিরের মাধ্যমে অতিবাহিত করতেন। এমনকি তিনি তার পরিবারের সদস্যদেরও ইবাদত করার জন্য ঘুম থেকে জাগিয়ে দিতেন। পবিত্র কোরআনের সুরা কদরের ৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।’ ফলে, এই রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা উত্তম। আর হাজার মাসে ৮৩ বছর ৪ মাস হয়। এছাড়া, সূরার বাকি আয়াতে আরও বলা হয়েছে, এ রাতে ফেরেশতারা আল্লাহর নির্দেশে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। ফজর পর্যন্ত প্রশান্তি বর্ষিত হয় এ রাতে। পবিত্র শবে কদর উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলসহ বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিওগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। রোববার (৭ এপ্রিল) সরকারি ছুটি থাকবে। ঢাকাওয়াচ/টিআর
পবিত্র শবে কদর আগামীকাল
পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর আগামীকাল শনিবার। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে শনিবার সন্ধ্যা থেকে সারা দেশে পবিত্র শবে কদর পালিত হবে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য ও রহমত লাভের আশায় ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে পবিত্র লাইলাতুল কদরের রজনী পালন করবেন। মহান আল্লাহ তায়ালা লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম। এই রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়। পবিত্র এই রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় এবাদত-বন্দেগি করে থাকেন। পবিত্র রমজান মাসের লাইলাতুল কদরে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছিল। তাই মহান আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন। মুসলমানরা নফল নামাজ আদায়, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া, মিলাদ মাহফিলের মধ্য দিয়ে শবে কদরের রজনী কাটাবেন। পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। পবিত্র শবে কদর উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। শবে কদর উপলক্ষ্যে আগামী রোববার সরকারি ছুটি থাকবে। ঢাকাওয়াচ/টিআর
জুমাতুল বিদায় মুসল্লিদের ঢল, ক্ষমা ও রহমত কামনা
আরবিতে ‘বিদা’ শব্দের অর্থ শেষ। জুমাতুল বিদা মানে শেষ শুক্রবার বা শেষ জুমা। পবিত্র মাহে রমজানের শেষ জুমার দিনটি মুসলিম বিশ্বে জুমাতুল বিদা নামে পরিচিত। সে অনুযায়ী আজ রমজান মাসের শেষ শুক্রবার (৫ এপ্রিল)। জুমাতুল বিদা রোজাদারকে স্মরণ করিয়ে দেয়, রমজানের শেষলগ্নে এর চেয়ে ভালো কোনো দিন আর পাওয়া যাবে না। সরেজমিন দেখা যায়, এদিন জুমার নামাজ ও মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় আজানের আগেই মসজিদে প্রবেশ করেন অনেকে। অন্যরকম উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে জুমা পড়তে আসে শিশু-কিশোররাও। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে পবিত্র এই দিনে জুমার নামাজ আদায়ের পাশাপাশি বেশি বেশি নফল ইবাদত করেছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। মুসলমানদের কাছে এমনিতেই সপ্তাহের অন্য দিনের চেয়ে শুক্রবারের মর্যাদা বেশি। আর রমজান মাসের শুক্রবারগুলোর মর্যাদা আরও অধিকতর বলে জানান মুসল্লিরা। বরকতময় দিনটিতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমত চান তারা। মসজিদে মসজিদে জুমার খুতবায় রমজান মাসের ফজিলত ও ইবাদতের গুরুত্ব ব্যাখ্যাসহ বিশেষ দোয়া করা হয়। পবিত্র রমজানের ওছিলায় প্রয়াত স্বজনদের জন্যও ক্ষমা চান মুসল্লিরা। ঢাকাওয়াচ/টিআর
পৃথিবীর প্রথম জমিন পবিত্র কাবা শরিফ
বাইতুল্লাহ বা আল্লাহর ঘর। কাবা শরিফ ও পবিত্র কাবাঘরও বলা হয়। পৃথিবীর কোটি কোটি প্রাণ প্রতিদিন এ ঘরের অভিমুখী হয়ে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করেন। এটি পৃথিবীতে মহান আল্লাহর জীবন্ত নিদর্শন। সৃষ্টির সূচনা থেকেই মহান পবিত্র এই কাবাকে মহান আল্লাহ তার মনোনীত বান্দাদের মিলনস্থল করেছেন। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান, যা পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল হিসেবে বিবেচিত। এ বিষয়ে ড. হুসাইন কামাল উদ্দীন আহমদ পিএইচডি করেছেন। তার থিসিসের শিরোনাম হলো—‘ইসকাতুল কুররাতিল আরধিয়্যা বিন্ নিসবতে লি মাক্কাতিল মুকাররামা। ’ (মাজাল্লাতুল বুহুসুল ইসলামিয়া, রিয়াদ ২২৯২) ওই থিসিসে তিনি প্রাচীন ও আধুনিক দলিল-দস্তাবেজের আলোকে এ কথা প্রমাণ করেছেন যে, কাবাই পৃথিবীর মেরুদণ্ড ও পৃথিবীর মধ্যস্থলে অবস্থিত। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পানিসর্বস্ব পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি এ কাবাকে কেন্দ্র করেই হয়েছে। উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকেন্দ্রের পরিচালক ড. খালিদ বাবতিনের গবেষণায় দেখা গেছে, সৌদি আরবে অবস্থিত পবিত্র কাবাই পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু। (আল-আরাবিয়া ২৩ জুলাই, ২০১২) আরেকটি বিষয় হলো, বছরের বিশেষ একটি দিন দুপুরে সূর্য ঠিক কাবার মাথার ওপর থাকে। তখন পবিত্র কাবা বা মক্কায় অবস্থিত কোনো অট্টালিকায় ছায়া দৃষ্টিগোচর হয় না। যেমন—২০১৪ সালের ২৮ মে দুপুর ১২টা ১৮ মিনিটে সূর্য ছিল পবিত্র কাবার ঠিক মাথার ওপর। পৃথিবীর আর কোথাও এমনটি হয় না। কাবাঘরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এটি পৃথিবীর সর্বপ্রথম ও সুপ্রাচীন ঘর। কোরআনের ভাষায়, ‘নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য নির্ধারিত হয়েছে, সেটিই হচ্ছে এ ঘর, যা বাক্কায় (মক্কা নগরীতে) অবস্থিত। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৯৬) মাটিতে রূপান্তর হওয়ার আগে কাবা সাদা ফেনা আকারে ছিল। সে সময় পৃথিবীতে পানি ছাড়া কিছু ছিল না। আল্লাহর আরশ ছিল পানির ওপর। হাদিসের ভাষ্য মতে, কাবার নিচের অংশটুকু পৃথিবীর প্রথম জমিন। বিশাল সাগরের মাঝে এর সৃষ্টি। ধীরে ধীরে এর চারপাশ ভরাট হতে থাকে। সৃষ্টি হয় একটি বিশাল মহাদেশের। এক মহাদেশ থেকেই সৃষ্টি হয় অন্য সব দেশ-মহাদেশ। মাটি বিছানোর পর জমিন নড়তে থাকে। হেলতে থাকে। এর জন্য মহান আল্লাহ পাহাড় সৃষ্টি করেন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদের নিয়ে আন্দোলিত না হয় (হেলে না যায়)। ’ (সুরা নাহল, আয়াত ১৫) পবিত্র কাবার বরকতে পৃথিবী এভাবেই স্থির হয়ে যায়। ধীরে ধীরে এখানে গোড়াপত্তন হয় মানবসভ্যতার। ঢাকাওয়াচ/টিআর
হজ ব্যবস্থাপনাকে বিশ্বের মডেল হিসেবে দাঁড় করাতে চাই: ধর্মমন্ত্রী
ঢাকা: ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের হজ ব্যবস্থাপনাকে স্মার্ট করতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট হজ এ প্রত্যয়ে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনাকে আমরা বিশ্বের মধ্যে একটি মডেল হিসেবে দাঁড় করাতে চাই। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বিকেলে ঢাকা অফিসার্স ক্লাবে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) আয়োজিত আলোচনা, দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, সরকার হজযাত্রীদের কল্যাণে সম্ভাব্য সব ধরনের ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণে বদ্ধপরিকর। আল্লাহর মেহমানদের আমরা যথাযথ সম্মানের সঙ্গে হজব্রত পালন করানোর জন্য যাবতীয় উদ্যোগ নিতে সদাপ্রস্তুত। এক্ষেত্রে হাবের সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমাদের হজ ব্যবস্থাপনায় কোনো দুর্বলতা থাকলে সেগুলো চিহ্নিত করতে হবে এবং এর সম্ভাব্য সমাধানের সব পথ বের করতে হবে। কী কী পদক্ষেপ নিলে হজযাত্রীরা আরেকটু বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন সেগুলো নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হবে। হজ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে সরকারের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, গত দেড় দশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে। বিশেষ করে হজ ব্যবস্থাপনায় নানা ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। হজ ও উমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। আশকোনা হজক্যাম্প হজযাত্রীদের জন্য উপযোগী করা হয়েছে। ই-হজ ব্যবস্থাপনা চালু করা হয়েছে। জেদ্দা হজ টার্মিনালে বাংলাদেশ প্লাজা স্থাপন করা হয়েছে। গত ১৫ বছরে রেকর্ডসংখ্যক ১৩ লাখ ৯০ হাজার ৬৩৫ জন হজযাত্রী হজব্রত পালন করেছেন। হজ ব্যবস্থাপনায় হাবের ভূমিকা তুলে ধরে ধর্মমন্ত্রী বলেন, এদেশের হজ ব্যবস্থাপনায় হাব একটি বড় অংশীদার। সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে হাবের ইতিবাচক ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে হজযাত্রায় উদ্বুদ্ধকরণ, হজযাত্রী সংগ্রহ ও হজ বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টি প্রভৃতিক্ষেত্রে হাবের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আগামীতে হজযাত্রীদের কল্যাণে হাবের ভূমিকাকে আরও বেশি ফলপ্রসূ ও কল্যাণমুখী করার জন্য মন্ত্রী হাবের প্রতি অনুরোধ জানান। হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম, হাবের মহাসচিব ফারুক আহমেদ সরদার, সিনিয়র সহ সভাপতি মওলানা ইয়াকুব শরাফতীসহ হাবের নেতারা। ঢাকাওয়াচ/টিআর
ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর উপার্জন
নানাবিধ কারণে বর্তমানে নারীর উপার্জন বিষয়ে প্রচুর আলোচনা-সমালোচনা ও তর্ক-বিতর্ক চলছে। অতি রক্ষণশীলরা নারীদের উপাজর্নের বিষয়টি এখনও মেনে নিতে পারেননি। অবশ্য মধ্যপন্থীদের অভিমত হলো, নারী তার স্বকীয়তা, আলাদা বৈশিষ্ট্য ও মান-সম্মান বজায় রেখে আয় উপার্জনের পথ বেছে নিতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ তারা নবীর (সা.) আমলের বেশ কয়েকজন মহিলা সাহাবির কথা উল্লেখ করেন। ওই সাহাবিরা মদিনার বাজারে বিভিন্ন ব্যবসা করত এমনকি অনেকে কৃষি কাজও করেছেন। সেসব অবশ্য ভিন্ন প্রসঙ্গ। একটি উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানাসহ অন্যান্য শিল্প-প্রতিষ্ঠানে পুরুষের পাশাপাশি চল্লিশ লক্ষাধিক নারী কাজ করেন। এই কর্মজীবী নারীদের উপার্জন সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে এটা অনস্বীকার্য। ইসলাম সর্বদা নারীদের শালীন পরিবেশে শিক্ষা, কাজ ও চলাফেরার কথা বলে। শরিয়ত নির্ধারিত গণ্ডির মধ্যে থেকে নারীরা অবশ্যই শিক্ষা অর্জনসহ অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারবে। ইসলাম কোথাও নারীকে বন্দি করে রাখার কথা বলেনি। ইসলাম নারী শিক্ষার প্রতি যেমন গুরুত্বারোপ করেছে তেমনি নারী-পুরুষের ভোটাধিকারেও কোনো ধরনের পার্থক্য সৃষ্টি করেনি। এমনকি ইসলাম নারীকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে কাজ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের অধিকারও প্রদান করেছে। কোরআনে কারিমের সূরা বাকারার ১৮৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমি ব্যবসাকে হালাল করেছি এবং সুদকে হারাম করেছি। ’ এই আয়াতে ব্যবসা হালাল হওয়া এবং সুদ হারাম হওয়া নারী-পুরুষের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। একজন পুরুষ হালাল পন্থায় যেসব ব্যবসা করতে পারবে। নারীও সে ধরনের ব্যবসা করতে পারবে। সে বিবাহিত হোক কিংবা অবিবাহিত হোক। সে তার অর্জিত সম্পদের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণকারী। সে কোনো বিধিনিষেধ ছাড়াই তার সম্পত্তির ব্যাপারে সব ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে, যা একজন পুরুষের জন্যও প্রযোজ্য। কোরআন ও হাদিসের কোনো স্থানে নারীর কাজকর্মের ব্যাপারে কোনো বিধিনিষেধ আরোপিত হয়নি। শুধু দুটি বিষয়ের প্রতি সঙ্গত কারণে নির্দেশ দিয়েছে। শর্ত দুটি হলো প্রথমত, ব্যবসা হতে হবে হালাল পদ্ধতিতে ও শরিয়ত নির্ধারিত সীমারেখার মধ্যে। দ্বিতীয়ত, পর্দা রক্ষা করতে হবে। তাছাড়া ইসলাম নারীদের সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী কোনো পেশায় নিয়োজিত হতেও নিষেধ করেছে। এছাড়া শরিয়ত অনুমোদিত সব ব্যবসা বা কাজ করার অনুমতি দিয়েছে ইসলাম। এখানে ভুল বোঝাবুঝির কোনো অবকাশ নেই। এখানে একটি কথা বলে রাখা ভালো, ইসলাম কিন্তু নারীদের কোনো আয়-রোজগারের দায়িত্ব দেয়নি। দেয়নি পরিবার লালন-পালন ও ভরণ-পোষণের কর্তব্য। ইসলামের পারিবারিক ব্যবস্থায় গোটা পরিবারের অর্থনৈতিক প্রয়োজন ও চাহিদা পূরণের দায়িত্ব একমাত্র পুরুষের। ইসলামের পারিবারিক ব্যবস্থায় নারীর আয়ের অনেক উৎস ও মাধ্যম থাকলেও ব্যয়ের বাধ্যতামূলক কোনো খাত নেই। ইসলাম নারীর ওপর অর্থনৈতিক কোনো দায়-দায়িত্ব চাপায়নি। পরিবারের যাবতীয় আর্থিক দায়-দায়িত্ব বহন করা পুরুষের ওপর অর্পিত হয়েছে। সেহেতু নারীকে তার জীবিকার জন্য চাকরি করার প্রয়োজন নেই, সেহেতু নারীর চাকরি তার ইচ্ছাধীন। তবে পুরুষের উপার্জত যদি সংসার চালানোর জন্য যথেষ্ট না হয় এবং প্রকৃত অভাবের সময়, সংকটকালে উভয়েরই চাকরি করার প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে চাকরির বিষয়ে নারীর স্বাধীনতা রয়েছে। ইচ্ছা করলে সে চাকরি করতে পারে, ইচ্ছা করলে নাও করতে পারে। কেউ জোর করে তার ঘাড়ে চাকরির বোঝা চাপিয়ে দিতে পারে না। এমনকি তার উপার্জিত অর্থ-সম্পদও কেউ নিতে পারবে না। তার জমা-খরচে কেউ খবরদারি ও নজরদারি করতে পারবে না। উপার্জনকারী নারী তার ইচ্ছামতো খরচের অধিকার রাখে। এটাই ইসলামের বিধান। ঢাকাওয়াচ/টিআর
ইসলামে সঞ্চয় করার বিধান
ইসলামে সম্পদ খরচের ক্ষেত্রে কৃপণ হওয়া যেমন নিষিদ্ধ, তেমনি প্রাচুর্যের সময় অপচয় অপব্যয় করে সম্পদ খরচ করাও নিষিদ্ধ। পবিত্র কোরআনে কারিমে অপচয় ত্যাগের কঠোর নির্দেশ জারি করে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আহার এবং পান করো, আর অপচয় করো না; তিনি (আল্লাহ) অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না। ইসলামে সম্পদ খরচের ক্ষেত্রে কৃপণ হওয়া যেমন নিষিদ্ধ, তেমনি প্রাচুর্যের সময় অপচয় অপব্যয় করে সম্পদ খরচ করাও নিষিদ্ধ। পবিত্র কোরআনে কারিমে অপচয় ত্যাগের কঠোর নির্দেশ জারি করে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আহার এবং পান করো, আর অপচয় করো না; তিনি (আল্লাহ) অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না। ’ -সূরা আরাফ ৩২ অপচয় এবং কৃপণতা দুটোই ইসলামে অনুমোদিত। এই দুই প্রান্তিকতার মাঝখানে মধ্যমপন্থা হিসেবে মিতব্যয়ী হয়ে ভবিষ্যতের জন্য কিছু অর্থ সঞ্চয় করে রাখা ইসলামের শিক্ষা। যারা অপচয় এবং কৃপণতার পথ পরিহার করে মিতব্যয়িতার পথ অবলম্বন করবে আল্লাহ তাদেরকে নিজের বান্দা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ প্রসঙ্গে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘(রহমানের বান্দা তো তারাই) যারা অপব্যায়ও করে না আবার কৃপণতাও করে না। তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী। ’ -সূরা ফুরকান ৬৭ অর্থোপার্জন, খরচ ও সঞ্চয়ের ব্যাপারে মাধ্যমপন্থার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। মনে রাখতে হবে, সঞ্চয় করতে গিয়ে কৃপণের তালিকায় যেন আপনার নাম না উঠে। কৃপণতা ও অপব্যয় সম্পর্কে সমাজের প্রচলিত ধারণাটি ভুল। যাকে বলে গোড়ায় গলদ। অনেকে মনে করেন, জন্মদিন, মৃত্যুদিবস, বিবাহবার্ষিকী ও ভালোবাসা দিবসের মতো বিভিন্ন দিবস কিংবা বার্ষিকীতে প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে নির্বিচারে ধার-দেনা করে হলেও খরচ করতে পারাই যেন উদারতা। ক্রমবর্ধমান এমন অযাচিত খরচের জোগান ও আনুষ্ঠানিকতায় তাল মেলাতে কালো টাকার পেছনে দৌড়ানো এবং চোরাপথ আবিষ্কার করাও যেন দূষণীয় নয়! পক্ষান্তরে যে হালাল-হারাম, পাপ-পুণ্য, প্রয়োজন-অপ্রয়োজন বিবেচনা করে খরচ করেন এবং অপব্যয়-অপচয় থেকে বিরত থাকেন- তাকে মনে করা হয় ‘কৃপণ’। স্ত্রী, সন্তান-সন্ততির ভরণপোষণ, পিতামাতার প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের মতো আল্লাহ নির্দেশিত খাতে খরচ করতে অবহেলাই হলো- প্রকৃত কৃপণতা। অনেকে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও পরিবারের প্রয়োজনীয় খরচটুকু করতে করে না, অভাবগ্রস্তকে কিছু দান করে না; জরুরি দ্বীনি কাজে অর্থ ব্যয় করে না- তাকেও কৃপণ বলা হয়। এর বাইরে যে ব্যক্তি এসব খাতে খরচ করতে অকুণ্ঠ কিংবা দ্বিধাবোধ করেন না, তবে বিভিন্ন দিবস-বার্ষিকীর অপ্রয়োজনীয় ও অবৈধ খরচে রাজি নন- সমাজের কিছু লোক তাকে ‘মহা কৃপণ’ বললেও তিনি কিছুতেই কৃপণ নন। বরং তিনি মিতব্যয়ী। বস্তুত হালাল-হারামের বিধিনিষেধ মেনে খরচকে সীমাবদ্ধ করতে হবে। প্রাচুর্যের সময় খরচের উৎসবে মেতে না উঠে অপ্রয়োজনীয় কিংবা হারাম খরচ বাদ দিয়ে মিতব্যয়িতার পথ অবলম্বন করে উদ্ধৃত অর্থ ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করতে হবে। যেন পরে নিজের প্রয়োজনে অন্যের কাছে হাত পাতার মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি না হতে হয়। পবিত্র কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, তুমি (কৃপণতাবশে) নিজের হাত ঘাড়ের সঙ্গে বেঁধে রেখে একেবারে ব্যয়-কুণ্ঠ হয়ো না। আবার (অপব্যয়ী হয়ে) একেবারে মুক্তহস্তও হয়ো না, তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে। ’ –সূরা বনি ইসরাইল ২৯ অপব্যয় না করে সন্তানদের জন্য কিছু সঞ্চয় করাও ইসলামের শিক্ষা। সন্তানদের কারও মুখাপেক্ষী রেখে যাওয়া নবী (সা.) পছন্দ করেননি। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তুমি তোমার উত্তরাধিকারীদেরকে মানুষের করুণার মুখাপেক্ষী রেখে যাওয়ার চেয়ে তাদেরকে সচ্ছল রেখে যাবে- এটাই উত্তম। ’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম ইসলাম সঞ্চয়কে কতটুকু গুরুত্ব দিয়েছে তা আরও স্পষ্ট হয় রাসূলে কারিম (সা.)-এর হাদিস থেকে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘উত্তম দান তাই, যা নিজ অভাবমুক্ততা রক্ষার সঙ্গে হয়। ’ –সহিহ বোখারি ২১১২ কৃপণ না হয়ে ইসলাম নির্দেশিত খাতে খরচে কোনো রকম দ্বিধা না করে, হারাম পথে খরচের সব পথ বন্ধ করে দিয়ে; অপচয়-অপব্যয় না করার মাধ্যমে মিতব্যয়ী হলে দারিদ্রমুক্ত জীবন আল্লাহ তাকে দান করবেন। এটা রাসূলে কারিম (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলে কারিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পরিমিত ব্যয় করে সে নিঃস্ব হয় না। ’ -মুসনাদে আহমাদ ৭৩০৩ অর্থাৎ যে ব্যক্তি অর্থব্যয়ে পরিমিতিবোধের চর্চা করবে, অনটন তার নাগাল পাবে না। ইসলামের এ মহান শিক্ষাটি যথাযথ অনুসরণ না করার কারণে মানুষ উপার্জনের যাচিত সুফল থেকে বঞ্চিত। কৃপণ না হয়ে মিতব্যয়ী হয়ে সঞ্চয় করলে হাজার কোটি টাকার মালিক হতেও ইসলাম নিষেধ করে না। সঞ্চিত অর্থ থাকলেই তো অর্থনির্ভর আমলগুলো করা যাবে। রোজাদারকে ইফতার করানো যাবে। শরিক হওয়া যাবে জনকল্যাণমূলক নানা কাজে। চালু করা যাবে সদকায়ে জারিয়ার অফুরন্ত ধারা। আবার উদ্ধৃত অর্থ যখন নেসাব পরিমাণ হবে এবং তা বর্ষপূর্তি হবে তখন সেখানে এসে যাবে জাকাতের মতো আরেকটি মহান ইবাদতের সুযোগ। ঢাকাওয়াচ/টিআর