যে আয়াত জীবনকে পরিবর্তন করে দেবে!

আমাদের সমাজ যেসব রোগে প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হয়। যে রোগগুলো আমাদের আত্মার সঙ্গে মিশে আছে, কিন্তু অনেক সময় রোগগুলো দেখা যায় না— তার একটি হলো হিংসা। হিংসা মানুষের একটি আত্মিক রোগ। মরণ-ব্যাধির চেয়েও ভয়ঙ্কর। নেক আমল ও পুণ্যকর্ম বরবাদ করে দেয়। আত্মাকে দুষিত ও কলুষিত করে। হিংসার ব্যাপারে আল্লাহর রাসুল (সা.) সর্বদা সতর্ক করতেন। এই রোগের ক্ষতির দিকগুলো বারবার বর্ণনা করেছেন। বিভিন্নভাবে এবং বিভিন্নভাবে আঙ্গিকে এ রোগ থেকে বেঁচে থাকতে আদেশ দিয়েছেন। এ রোগের ক্ষতির স্থানগুলো চিহ্নিত করেছেন। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে হিংসা থেকে বেঁচে থাকার জোর নির্দেশনা এসেছে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! পুরুষগণ যেন অপর পুরুষদের উপহাস না করে। তারা (অর্থাৎ যাদের উপহাস করা হচ্ছে) তাদের চেয়ে উত্তম হতে পারে এবং নারীগণও যেন অপর নারীদের উপহাস না করে। তারা (অর্থাৎ যে নারীদের উপহাস করা হচ্ছে) তাদের চেয়ে উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অন্যকে দোষারোপ করো না। এবং একে অন্যকে মন্দ উপাধিতে ডেক না। ঈমানের পর গোনাহের নাম যুক্ত হওয়া বড় খারাপ কথা। যারা এসব থেকে বিরত না হবে তারাই জালেম। ’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১১) আয়াতে বলা হয়েছে, কোনো পুরুষ বা নারী অন্যকোনো পুরুষ বা নারীকে ‘সাখার’ না করে। ‘সাখার’ অর্থ হলো হিংসা-বিদ্বেষ, দোষারোপ, উপহাস ও বিদ্রুপ করা ইত্যাদি। সুতরাং এ আয়াত থেকে আমরা জানতে পারলাম, একে অপরে হিংসা করা যাবে না, অন্যের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা যাবে না, অন্যকে উপহাস করা যাবে না, অন্যকে নিয়ে হাসি-তামাশা ও বিদ্রুপ করা যাবে না। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসির কুরাইরিতে এসেছে, ‘আল্লাহ তায়ালা মানুষকে আদেশ দিচ্ছেন যে, মানুষকে ঘৃণা হেয়জ্ঞান অবজ্ঞা না করতে, গিবত না করতে, অধিকার সম্পর্কে অপমান না করতে ইত্যাদি। ’ সমাজে এক শ্রেণির লোক রয়েছে যাদের কাজই হলো, কে করলো, তার কি দোষ আছে— তা খুটে খুটে বের করা। যদি মানুষ নিজেদের মধ্যকার দোষগুলো তালাশ করতে থাকে, তাহলে কেউ নির্দোষ বা বিপদমুক্ত থাকতে পারবে না। বরং সমাজের স্থিতি সম্পূর্ণরূপে ভেঙে যাবে। অন্যের দোষ তালাশ করা এমন একটি রোগ— যা রোগীকে শান্তি তো দেয়ই না, বরং সমাজকেও অশান্তির অনলে জ্বালায়। আয়াতে অন্যকে মন্দ উপাধিতে ডাকা থেকে বেঁচের থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাফসিরে জালালাইনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা একে অপরকে এমন উপাধিতে ডেকো না যা অপছন্দনীয়। যেমন হে কাফের! হে ফাসেক! ইত্যাদি। ’ (তাফসিরে জালালাইন) মন্দ উপাধির কতগুলো রূপ আছে। কারো নাম ব্যঙ্গ করে ডাকা। নামের উচ্চারণে ব্যঙ্গাত্মক সুর বা শব্দ করা। নামের আগে পরে ব্যঙ্গাত্মক শব্দজুড়ে দেওয়া ইত্যাদি। আয়াতে আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেন, ঈমান গ্রহণ করার পর মন্দ কথা বড়োই পাপের বিষয়। কোনো ঈমানদারের ভূষণ হতে পারে না যে, সে অন্যকে বিদ্রুপ করবে, অন্যকে দোষারোপ করবে, অন্যকে মন্দ নামে ডাকবে। ঈমান গ্রহণের পরও যে এই সব ঘৃণিত কাজ পরিহার করবে না— সে অবশ্যই জালেম শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। আলোচনা থেকে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হলো, কোনো ঈমানদার অন্য কাউকে বিদ্রুপ, উপহাস, হেয়জ্ঞান ও হাসি-তামাশা করতে পারে না। নিজেরা একে অপরকে দোষারোপ করা বা দোষারোপের পেছনে লেগে থাকে না। যদি আমরা সবাই জীবনের ও সমাজের সব ক্ষেত্রে আলোচ্য আয়াতটি পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহেল আমার নিজের জীবন যেমন আশান্তি মুক্ত হবে, তেমনি সমাজও হবে অশান্তিমুক্ত একটি সুন্দর সুখি সমাজ। আল্লাহ পাক আমাদের এ আয়াতের ওপর আমল করা তৌফিক দান করুন। আমিন। ঢাকাওয়াচ/টিআর

আবারো শিক্ষার্থীতে মুখরিত থাকুক আলীয়া মাদ্রাসাগুলোর হাদিসের দারস: ইআবি ভিসি

ঢাকার প্রাচীন দ্বীনি প্রতিষ্ঠান নেছারিয়া কামিল মাদরাসায় (৭ ফেব্রুয়ারী) বুধবার সকালে কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা ও কামিল প্রথম বর্ষের সবক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডঃ মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন কামিল মাদ্রাসা গুলো বুখারী মুসলিম শরীফ সহ সিহা সিত্তা হাদিসের দরসে মুখরিত হোক। আমাদের শিক্ষার্থীরা হাদিসের দরস আসাতিজায়ে কিরামদের জবান থেকে শোনার জন্য প্রতিযোগিতা করুক। হক্কানি রাব্বানী আলেম ওলামায়ে কিরাম তৈরি হোক উস্তাদদের মুখ থেকে সরাসরি হাদিসের দারস বক্ষে ধারণ করুক। একটা সময়ে বাংলাদেশের আলীয়া মাদ্রাসাগুলোতে হাদিসের দারসে শিক্ষার্থীরা ভরপুর থাকতো। সহপাঠীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলত কার আগে কে হাদিসের দারসে আগে বসতে পারে। কে আগে ইবারত পড়বে প্রতিযোগিতা করত! আমাদের শিক্ষা জীবনে হাদিসের দারস উস্তাদ এর সামনে বসে শোনার জন্য প্রতিযোগিতা করতাম। কিন্তু এখন সেই জুলুস সেই আগ্রহ সেই প্রতিযোগিতা নাই বললে চলে!আলীয়া মাদ্রাসাগুলোতে কামিল শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তি হয় অনেক! কিন্তু ক্লাস করে গুটিকয়েক শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতি বৃদ্ধির জন্য দেশের আলীয়া মাদ্রাসার শিক্ষকদেরকে শিক্ষার্থীদের প্রতি আরো আন্তরিকতা ও দেখভাল বাড়ানোর আহবান জানান। আব্দুর রশীদ ছারছীনা মাদ্রাসার কামিলের দারসের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ছারছীনার মরহুম পীর সাহেব আবু জাফর সালেহ (রহ) হুজুর মাদ্রাসায় কিতাব দারসের পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় মাহফিলে গেলে সফরসঙ্গীরা সাথে কিতাব নিয়ে যাইতেন যাতে আধুনিক কোনো মাসয়ালার প্রশ্নের সম্মুখীন হলে সাথে সাথে সমাধান বের করা যায়। শিক্ষার্থীরা হুজুরকে বিভিন্ন প্রশ্ন করত হুজুর উত্তর দিতো নিমিষেই। যাহা পবিত্র কোরআনের আয়াতের রেফারেন্স টেনে বলেন, “ফাস্ আলু আহলায যিকরি ইনকুনতুম লা তালামুন” অর্থ :- তোমরা যা জান না অথবা তোমাদের যে বিষয়ে জ্ঞান নেই তা জ্ঞানীদের কে ( আহলে জিকিরকারী) কে জিঞ্জাসা কর । রাজধানীর নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা ও কামিলের সবক অনুষ্টানে অধ্যক্ষ শরিফ মুহাম্মদ আবু হানিফের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্ণর অধ্যক্ষ কফিলউদ্দিন সরকার সালেহী সহ মাদ্রাসার সর্বস্তরের মুহাদ্দিস, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। ঢাকাওয়াচ/স

আ.লীগ সবসময় ইসলামের খেদমতে কাজ করে : ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক

ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেছেন, আওয়ামী লীগ সবসময়ই ইসলামের খেদমত ও উন্নয়নে কাজ করেছে। সরকারের সময়োচিত নানা পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশে ইসলাম চর্চার ক্ষেত্র প্রসারিত হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনই আওয়ামী লীগ সরকারের একমাত্র লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য অর্জনেই কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। শনিবার (২৭ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় বাইতুশ শরফ আনজুমানে ইত্তেহাদ বাংলাদেশ আয়োজিত বার্ষিক ইছালে সাওয়াব মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মো. ফরিদুল হক খান বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে, তখনই ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর খেদমতে ভূমিকা রেখেছে। ইসলাম ও মুসলমানদের খেদমতে অন্যদের তুলনায় সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে। মো. ফরিদুল হক খান বলেন, আদর্শ সমাজ ও শান্তিপূর্ণ দেশ গঠনে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে অবদান রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে ইসলামের খেদমতের কথা চিন্তা করেন সেভাবে পূর্বে কোনো রাষ্ট্রনায়ক চিন্তাও করেননি। সারাদেশে নির্মাণাধীন মডেল মসজিদগুলোর সুযোগ-সুবিধা দেখলে বোঝা যায়, তিনি কতটা সুনিপুণভাবে ইসলামের খেদমত করে যাচ্ছেন। এদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে ইসলামের প্রতি শেখ হাসিনার খেদমতের অমরগাঁথা। ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর খেদমতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা উল্লেখ করে ধর্মমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যেমন একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্থপতি, তেমনি তিনি এদেশে ইসলামের প্রচার-প্রসারেরও পথিকৃৎ। তার শাসনামলে ইসলামের খেদমতে এদেশে অনেক যুগান্তকারী কার্যক্রম গৃহীত ও বাস্তবায়িত হয়েছে। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সংসদ সদস্য এম এ মোতালেব এমপি, লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইনামুল হোসেন, লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন হিরু ও লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল ইসলামসহ বায়তুশ শরফের অনুসারীরা উপস্থিত ছিলেন। ঢাকাওয়াচ/টিআর

ইসলামে শিক্ষকের মর্যাদা

শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত মানুষ রূপে গড়ে ওঠার পেছনে বাবা-মা’র যেমন অবদান থাকে; শিক্ষকেরও তেমন থাকে বৃহৎ ভূমিকা। আল্লাহ তাআলা শিক্ষকদের আলাদা মর্যাদা দিয়েছেন। তাদের সম্মানে ভূষিত করেছেন। ফলে মুসলিমসমাজে শিক্ষকমাত্রই বিশেষ মর্যাদা ও সম্মানের ব্যক্তি। শিক্ষাকে যাবতীয় উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হলে, শিক্ষকের ভূমিকার গুরুত্ব অপরিসীম। বলতে গেলে এর বিকল্প নেই। পবিত্র কোরআনে নাজিলকৃত প্রথম আয়াতে জ্ঞানার্জন ও শিক্ষাসংক্রান্ত কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘পড়! তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একবিন্দু জমাট রক্ত থেকে। পড়! আর তোমার প্রতিপালক পরম সম্মানিত। যিনি কলমের দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না। ’ (সুরা আলাক, আয়াত ১-৫) প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা জ্ঞান অর্জন করো এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য আদব-শিষ্টাচার শেখো। এবং যার কাছ থেকে তোমরা জ্ঞান অর্জন করো, তাকে সম্মান করো। ’ (আল-মুজামুল আওসাত, হাদিস ৬১৮৪) সমাজে শিক্ষকদের সম্মানের দৃষ্টিতে দেখার ঐতিহ্য ও রীতি বেশ প্রাচীন। শিক্ষা অনুযায়ী মানবচরিত্র ও কর্মের সমন্বয় সাধনই হচ্ছে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর তাগিদ। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘আল্লাহর পরে, রাসূলের পরে ওই ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা মহানুভব যে জ্ঞানার্জন করে ও পরে তা প্রচার করে। ’ (মিশকাত শরিফ) জায়েদ ইবনে সাবেত (রা.) একবার তার সওয়ারিতে (বাহন) ওঠার জন্য রেকাবে (সিঁড়িতে) পা রাখলেন। তখন ইবনে আব্বাস (রা.) রেকাবটি শক্ত করে ধরলেন। এ সময় জায়েদ ইবনে সাবেত (রা.) বললেন, হে রাসুল (সা.)-এর চাচাতো ভাই, আপনি হাত সরান। উত্তরে ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, না, আলেম ও বড়দের সঙ্গে এমন সম্মানসূচক আচরণই করতে হয়। (আল ফকিহ ওয়াল-মুতাফাক্কিহ ২১৯৭) খেলাফতের যুগেই ইসলাম প্রত্যেকের জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে। শিক্ষাকে সহজলভ্য করতে তখন শিক্ষকের জন্য সম্মানজনক পারিশ্রমিকও নির্ধারণ করা হয়েছিল। যদিও দ্বীনি শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষকরা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জ্ঞান বিতরণ করতেন। আর তারা যেহেতু নিজেদের জীবিকার পেছনে ব্যতিব্যস্ত সময় পার না করে, শান্ত-সৌম্য মস্তিষ্কে জ্ঞান বিতরণের পবিত্র কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন, তাই তৎকালীন খেলাফত ব্যবস্থা বা সরকার তাদের সম্মানে অভিষিক্ত করেছিলেন। তাদের জ্ঞান বিতরণের এ মহৎ কাজকে সম্মান জানিয়ে তাদের পরিবার-পরিজনের যাবতীয় আর্থিক খরচ বহন করেছিলেন। যেন জীবনের তাগিদে শিক্ষকদের ভিন্ন কোনো পথে পা বাড়াতে না হয়। উমর (রা.) ও উসমান (রা.) তাদের শাসনামলে শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তারা শিক্ষক ও ধর্মপ্রচারকদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করেছিলেন। আবদুর রহমান ইবনুল জাওজি (রহ.) তার বিখ্যাত ‘সিরাতুল উমরাইন’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) হজরত ওসমান ইবনে আফ্ফান (রা.)-এর যুগে মুয়াজ্জিন, ইমাম ও শিক্ষকদের সরকারি ভাতা দেওয়া হতো। (কিতাবুল আমওয়াল, পৃষ্ঠা ১৬৫) উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.)-ও তার যুগে ইয়াজিদ ইবনে আবি মালেক ও হারেছ ইবনে ইউমজিদ আশারি (রহ.)-কে ওই অঞ্চলে দ্বীন শেখানোর কাজে নিযুক্ত করেছিলেন। বিনিময়ে তাদের জন্য সম্মানজনক পারিশ্রমিকও নির্ধারণ করা হয়েছিল। অবশ্য ইয়াজিদ (রহ.) তা গ্রহণ করলেও হারেছ (রহ.) তা গ্রহণ করেননি। (কিতাবুল আমওয়াল, পৃষ্ঠা ২৬২)। ঢাকাওয়াচ/টিআর

সৌদির আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ, ঈদ শুক্রবার

সৌদি আরবের আকাশে পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো আগামীকাল শুক্রবার পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হবে। আজ বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর দেশটির রাজকীয় আদালত চাঁদ দেখার খবর জানায়। খালিজ টাইমসের খবর। এক মাস রোজা রাখার পর শাওয়াল মাসের প্রথম দিন মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। বাংলাদেশে সাধারণত সৌদি আরবের এক দিন পর ঈদ উদযাপিত হয়ে থাকে। তবে চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার, চাঁদপুর ও জামালপুরের বেশ কয়েকটি গ্রামে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করা হয়। ঢাকাওয়াচ/স

যুক্তরাজ্যের ১০ শহরে উন্মুক্ত ইফতার আয়োজনের উদ্যোগ

যুক্তরাজ্যে রমজান উপলক্ষে আয়োজিত সর্ববৃহৎ আয়োজন উন্মুক্ত ইফতার। এক দশকে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ এই আয়োজনে যুক্ত হয়েছে। এখন তা যুক্তরাজ্যের মুসলমানদের জনপ্রিয় উৎসবগুলোর একটি। প্রতিষ্ঠার ১০ বছর পূর্তিতে এবার যুক্তরাজ্যের ১০টি শহরে মাসজুড়ে উন্মুক্ত ইফতার ও রমজান উৎসবের আয়োজন করছে দাতব্য সংস্থা রমজান টেন্ট প্রজেক্ট।এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ২৩ মার্চ ব্র্যাডফোর্ড ক্যাথেড্রালে আয়োজনের মধ্য দিয়ে উন্মুক্ত ইফতারের এই উৎসব শুরু হবে। এরপর ২৪ মার্চ লন্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আলবার্ট মিউজিয়ামে এবং পরদিন বিশপসগেটে অনুষ্ঠিত হবে। ২৬ মার্চ লন্ডনের স্টেডিয়াম স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে চেলসি ক্লাবের সহযোগিতায় উন্মুক্ত ইফতারের আয়োজন করা হবে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের ইতিহাসে এবারই প্রথম কোনো ক্লাব এমন আয়োজন করতে যাচ্ছে। আরো যেসব শহরে এই ইফতার আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে তা হলো—ব্রাইটনের হোভ অ্যালবিয়ন, শেফিল্ডের আইসল্যান্ড মিউজিয়াম, ম্যানচেস্টার ক্যাথিড্রাল, কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্স, লন্ডনের ব্রিটিশ লাইব্রেরি, লিভারপুল ব্রডগেট, গ্রেনারি স্কয়ার, গেটসহেডের বালটিক সেন্টার, বার্মিংহাম, ক্যামব্রিজ, গ্লুচেস্টার ও কনভেনট্রি ক্যাথেড্রাল। রমজান টেন্ট প্রজেক্টের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ওমর সালহা বলেন, ‘রমজান উৎসব ও উন্মুক্ত ইফতারের মাধ্যমে গত এক দশকে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ যুক্ত হয়েছে। রমজান টেন্ট প্রজেক্টের দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে আমরা যুক্তরাজ্যের ১০টি শহরে এ আয়োজন করতে যাচ্ছি। এতে সব ধর্ম, বর্ণ ও সম্প্রদায়ের লোকদের আমন্ত্রণ।’ ২০১৩ সালে সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের শিক্ষার্থী ওমর সালহার নেতৃত্বে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইফতার আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়, যা পরবর্তী সময়ে রমজান টেন্ট প্রজেক্ট হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এরপর প্রতিবছর যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে এই আয়োজনের পরিধি বাড়তে থাকে। এরই মধ্যে ২০টির বেশি শহরে এবং চার মহাদেশে এই সংস্থার আওতায় উন্মুক্ত ইফতার অনুষ্ঠিত হয়। ২০২২ সালে সামাজিক সংগঠন হিসেবে তা ন্যাশনাল ডাইভারসিটি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে। এর প্রধান নির্বাহী হিসেবে কাজ করছেন ওমর সালহা। ঢাকাওয়াচ/স

রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাচ্ছে বায়তুল মোকাররম

মুজিববর্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় মসজিদের স্বীকৃতি পাচ্ছে বায়তুল মোকাররম মসজিদ। রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমসহ সব গণমাধ্যমে এটিকে জাতীয় মসজিদ হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও এর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি নেই। ফলে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবের সার-সংক্ষেপ অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে এটি শিগগিরই মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। এর সত্যতা নিশ্চিত করে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘বায়তুল মোকাররম- জাতীয় মসজিদ এটা সবাই জানে কিন্তু এর কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই, সেটা কেউ এতদিন খেয়ালও করেনি। আমরা মুজিববর্ষে এর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়ার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রস্তাব পাঠিয়েছি।’ কথা হয় মসজিদটির দেখভালের দায়িত্বে থাকা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক (ডিজি) মু আ হামিদ জমাদ্দারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ হিসেবে সারা দেশে পরিচিতি লাভ করেছে। এমনকি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার পাঠ্যপুস্তকেও এমন তথ্য স্থান পেয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হল, কাগজে-কলমে এর কোনো ভিত্তি নেই। তাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষে’ মসজিদটির আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিতে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবের সার-সংক্ষেপ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।’ দেশের সবচেয়ে বড় শোলাকিয়া ঈদগাহের ঈমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকলেও দেশ-বিদেশে জাতীয় মসজিদ হিসেবে বায়তুল মোকাররমই পরিচিতি পেয়েছে। মুজিববর্ষে এটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় মসজিদের স্বীকৃতি দেয়া হলে তা সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ হিসেবে সবাই জানবে। তবে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এর কোনো সুবিধা বা অসুবিধা নেই। পবিত্র কাবা, মসজিদে নববী ও বায়তুল মোকাদ্দাস ছাড়া পৃথিবীর সব মসজিদ একই মর্যাদার।’ মন্ত্রিসভার জন্য পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়েছে- ঢাকা মহানগরীর প্রাণকেন্দ্রে বায়তুল মোকাররম মসজিদ। দেশের প্রধান ও বড় মসজিদ হিসেবে এটি দেশবাসীর কাছে পরিচিত। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে এটি ‘জাতীয় মসজিদ’ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনসহ সব প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতেও জাতীয় মসজিদ হিসেবে বায়তুল মোকাররমের নাম প্রচার করা হয়। মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধান ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের বিভিন্ন দেশের অতিথিরাও এ মসজিদে নামাজ আদায় করে থাকেন। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জানাজার নামাজ আদায়েও এ মসজিদটিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। ঈদুল ফিতর ও আজহা, শবেমেরাজ, শবেবরাত ও শবেকদরসহ জুমাতুল বিদা ও ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ইত্যাদি জাতীয় ও ধর্মীয় দিবসে বিপুলসংখ্যক মানুষ এ মসজিদে ইবাদত বন্দেগি করে থাকেন। অথচ আনুষ্ঠানিকভাবে এ দৃষ্টিনন্দন ও গুরুত্বপূর্ণ মসজিদটিকে জাতীয় মসজিদ হিসেবে ঘোষণা বা স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। প্রস্তাবে বলা হয়েছে- দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করে এমন অনেক শ্রেষ্ঠ জিনিসের নামের সঙ্গে ‘জাতীয়’ শব্দ যুক্ত করে এগুলোর ঐতিহ্য স্মারক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফলে বায়তুল মোকাররম মসজিদের সঙ্গে জাতীয় শব্দ যুক্ত করা হলে এটির ভাব-গাম্ভীর্য বৃদ্ধি পাবে। একে কেন্দ্র করে দেশের সম্মান ও মর্যাদাও বৃদ্ধি পাবে। এটি করা হলে অতিরিক্ত কোনো অর্থের প্রয়োজন হবে না। তাই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ২০২০ সালকে ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করা হয়েছে। মুজিববর্ষে জাতীয় মসজিদ হিসেবে বায়তুল মোকাররমকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিলে দেশ-বিদেশে এবং ধর্মীয় ক্ষেত্রে সরকারের ভাব-মর্যাদা আরও উজ্জ্বল হবে। ঢাকাওয়াচ/স

হে প্রভু আপনার স্মরণে যেন মগ্ন থাকতে পারি

হে প্রভু, আপনাকে যারা স্মরণ করে, আপনার স্মরণ তাদের জন্য সম্মানের। হে প্রভু, আপনার কৃতজ্ঞতা জানানোর কারণে, তাদের উন্নতি দান করুন; যারা আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানায়। হে প্রভু, আপনাকে মান্য করার কারণে, তাদের প্রতিকার করে দিন যারা আপনাকে মান্য করে। হজরত মুহাম্মদ এবং তার বংশধরদের ওপর অনুগ্রহ করুন এবং আমাদের দিল অন্য জিনিসের চিন্তাভাবনা থেকে ফিরিয়ে আনুন, যাতে আমরা আপনার স্মরণে মজে থাকতে পারি। আমাদের জিহ্বাকে অন্য জিনিসের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা থেকে বাঁচিয়ে দিন, যাতে সর্বদা আমরা আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি। অন্যান্য কাজ রেখে যাতে আমরা আপনার ইবাদতে মনোনিবেশ থেকে মগ্ন হতে পারি, সেই তৌফিক দিন। আপনি যদি আমাদের সব কাজকর্ম থেকে মুক্ত করে থাকেন, তাহলে আমাদের অবসরকে শান্তিদায়ক করুন; যাতে কোনো মন্দ ফলাফল আমাদের ওপর না বর্ষায়। কোনো দুঃখ আমাদের গ্রাস না করে। ওই পর্যন্ত যখন যারা আমাদের কাজগুলো লিপিবদ্ধ করে আপনার কাছে ফেরত যায়, গুনাহমুক্ত একটি ফিরিস্তি নিয়ে এবং ওই পর্যন্ত যখন আমাদের নেক আমল নথিভুক্ত করেন নেক আমলে খুশি হয়ে তারা আনন্দ চিত্তে ফিরে যায়। যখন আমাদের আয়ুর দিন ফুরিয়ে, আমাদের জীবনের সময় শেষ হয়ে যাবে এবং আপনার ওই অলঙ্ঘনীয় এবং প্রতিপালনীয় কথা আমাদের ওপর আসবে, হজরত মুহাম্মদ এবং তার বংশধরদের ওপর অনুগ্রহ করুন। আমাদের ফিরিস্তিতে কাতেবিন ফেরেশতারা যা লিপিবদ্ধ করবে তার উপসংহারে আমাদের গ্রহণীয় তওবা কবুল করুন, যাতে আমরা ওইসব পাপে আপনার সামনে লাঞ্ছিত না হই, যেসব অপরাধ যাতে আমরা অর্জন করেছি। যেদিন আপনার মাখলুকের আমলনামা পরীক্ষা করা হবে সেদিন আমাদের ওপর যে পর্দা রেখেছেন তা সরিয়ে দেবেন না দয়া করে। হে প্রভু, আপনি তো তার ওপর করুণাশীল যে, আপনার বন্দেগি করে এবং তার ডাকে সাড়া দেন যে আপনাকে সারাক্ষণ ডাকে। ইমাম জয়নাল আবদীনের আল সহিফা আল সাজ্জাদিয়া থেকে নেয়া ঢাকাওয়াচ/স

কোরআন মাজিদে চুমু দেয়া কি জায়েজ?

কোরআন মজিদ আল্লাহ তায়ালার সেই পবিত্র বাণী, যা রহমান ও রহিম খোদা অবতীর্ণ করেছেন। আর এটি এক পরিপূর্ণ এবং স্থায়ী শরিয়ত হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে এক নূর এবং উজ্জ্বল কিতাবও। এর মাধ্যমে আল্লাহ সেসব লোককে শান্তির পথে পরিচালিত করেন, যারা তার সন্তুষ্টির পথে চলে। আর তিনি নিজ আদেশে তাদের অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে যান এবং সরল সুদৃঢ় পথে তাদের পরিচালিত করেন’ (সূরা মায়েদা : ১৫-১৬)। পবিত্র কোরআন বিশ্ব মানবতার আলোর দিশারী। ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় সৌহার্দ্য ও সহিষ্ণুতার এক মূর্তিমান প্রতীক। তাই স্বাভাবিকভাবেই কোরআন শরিফকে মুসলমান মাত্রই ভক্তি ও আদবের সঙ্গে স্পর্ষ করে। বিভিন্ন সময়ে কোরআন শরিফের সঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ হয়ে গেলে অথবা তিলাওয়াতের আগে-পরে স্বাভাবিকভাবে আমরা কোরআনে চুমু দিই, চোখে লাগাই। বিষয়টি কতটুকু শরীয়ত সম্মত? এখানে মূলকথা হল, ভক্তি বা শ্রদ্ধার উদ্দেশ্যেই সাধারণত কোরআনে চুমু দেয়া হয়। এটি ধর্মপ্রাণ মানুষের আবেগ ও ভক্তির একটি বহিঃপ্রকাশ। সে হিসেবে কোরআনুল কারিমে চুমু দেয়া জায়েজ আছে। সাহাবাদের আমলেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। হযরত ইকরিমা (রা.) থেকে কোরআন মাজিদ চেহারায় লাগানো ও চুমু দেয়া প্রমাণিত (সুনানে দারিমি, হাদিস : ৩৩৫৩)। তাই কোরআনে চুমু দিলে তা না জায়েজ হবে না। তবে অসতর্কতাবশত কোরআন মাজিদের সঙ্গে অসম্মানজনক কিছু হয়ে গেলে সে ক্ষেত্রে তাওবা-ইস্তিগফার করাই প্রথম কাজ। সূত্র : মাজমাউজ জাওয়াইদ, হাদিস ১৬০৪৯; আদ্দুররুল মুখতার : ৬/৩৮৪; হাশিয়াতুত তাহতাবি আলাল মারাকি, পৃষ্ঠা ১৭৫; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/৬০। ঢাকাওয়াচ/স

বিশ্ব ইজতেমা শুরু ১০ জানুয়ারি

এবার তাবলিগ জামাতের ইজতেমা শুরু হচ্ছে ১০ জানুয়ারি। মাওলানা জুবায়েরপন্থীদের মাধ্যমে সেটা ১০ জানুয়ারি শুরু হয়ে ১২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। পরের সপ্তাহে মাওলানা সাদের অনুসারীরা ইজতেমা করলেও সেটাকে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব বলতে নারাজ বিরোধী পক্ষের মুরব্বিরা। তাদের মতে, দিল্লির মাওলানা সাদকে কেন্দ্র করে তাবলিগ জামাতে যে মতবিরোধ সেটা নেতৃত্বের কোনো বিরোধ নয়, আদর্শিক কারণে বিরোধ। বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় তাবলিগের মুরব্বিরা এসব কথা বলেন। ‘তাবলিগ জামাতের চলমান পরিস্থিতি ও বিশ্ব ইজতেমা-২০২০ এর প্রস্তুতি’ শীর্ষক বৈঠকে তাবলিগ জামাতের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ, মাওলানা আমানুল হক, ক্যাপ্টেন ইফখোর আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার আনিসুর রহমান প্রমুখ। এছাড়া পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল ও টেলিভিশনের প্রায় ৩০ জন রিপোর্টার অংশগ্রহণ করেন। তারা বলেন, মাওলানা সাদের ভ্রান্ত মতাদর্শের কারণেই মূলত আলেমরা তার বিরোধিতা করছেন। শুধু বাংলাদেশের আলেমরা নন, সারা বিশ্বের আলেমরাই তার বিরোধিতা করেছেন। খোদ দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজ থেকেই প্রথম সাদবিরোধিতা শুরু হয়। পরে দারুল উলুম দেওবন্দও এ ব্যাপারে ফতোয়া দেন। সেই ফতোয়ার ভিত্তিতেই বাংলাদেশের আলেমরা সাদ সাহেবের ভ্রান্ত মতাদর্শের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। বৈঠকে তাবলিগের ইতিহাস, তাবলিগের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। আলোচনায় উঠে আসে তাবলিগের সংকটের বিষয়টিও। এ বিষয়ে উপস্থিত মুরব্বিরা জানান, তাবলিগের সংকটের মূলে রয়েছে, যৌথ নেতৃত্ব তথা পরামর্শভিত্তিক পদ্ধতি বাদ দিয়ে একক নেতৃত্বে কাজ চালানো, মাওলানা সাদের কোরআন-হাদিসবিরোধী মনগড়া নানা মন্তব্যে অনঢ় থাকা এবং পূর্ববতী তিন হজরতজির উসুল ও কর্মপন্থা থেকে সরে যাওয়া। একজন মাওলানা সাদের সঙ্গে বিশ্বের অন্য মুরুব্বিদের মতবিরোধ নেতৃত্ব নিয়ে নয়, আদর্শিক কারণে। মুরব্বিরা বলেন, বাংলাদেশে অনেকে তাবলিগের সংকটকে সাদপন্থী ও জুবায়েরপন্থী বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেন, এটাও ভুল। কারণ, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাবলিগ পরিচালিত হচ্ছে যৌথ নেতৃত্ব তথা শুরার মাধ্যমে। এখানে একক কেউ নেই। তাবলিগের জুবায়েরপন্থী মুরব্বিরা জানান, এবার তাবলিগ জামাতের ইজতেমা এক পর্বেই হচ্ছে। আর সেটা ১০ জানুয়ারি শুরু হয়ে ১২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। পরের সপ্তাহে মাওলানা সাদের অনুসারীরা ইজতেমা করলেও সেটাকে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব বলতে নারাজ বিরোধী পক্ষের মুরব্বিরা। তাবলিগ জামাতের চলমান সংকট নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তাবলিগের মুরব্বিরা। তাবলিগ ও ইজতেমা সম্পর্কে যেকোনো বিষয়ে জানার থাকলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার আহ্বান জানান। ঢাকাওয়াচ/স

ইসলামী আদব অনুসরণ মুমিনদের অবশ্যকর্তব্য

ইসলামী আদব তথা রীতিনীতি যথাযথভাবে অবলম্বন করা মুমিনদের অবশ্যকর্তব্য। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ইসলামী রীতি অবলম্বন করে নিজেরা দোজখের আগুন থেকে বাঁচ এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে তা থেকে বাঁচাও।’ হাদিসে আছে, প্রত্যেক সন্তান ইসলামী আদর্শ গ্রহণের যোগ্যতা লাভ করে ভূমিষ্ঠ হয়। কিন্তু তার পিতামাতা তাকে ইহুদি বা খ্রিস্টান বা অগ্নিপূজারী বানিয়ে নেয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, ‘হে দুনিয়ার মানুষ! তোমরা ইসলামী স্বভাব গ্রহণ কর যার ওপর রেখে আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেন। আল্লাহর সৃষ্টিগত এই ইসলামী স্বভাবকে তোমরা পরিবর্তন করো না। প্রকৃতপক্ষে এটাই মজবুত ও সুদৃঢ় জীবনব্যবস্থা।’ হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে আদব শিক্ষা দিয়েছেন এবং উত্তম আদব শিক্ষা দিয়েছেন আর তিনিই আমাকে জ্ঞান দান করেছেন এবং উত্তম জ্ঞান দান করেছেন।’ হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমি ১০ বছর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেতমত করেছি। তিনি আমাকে কখনো উহ্ শব্দটুকু বলেননি এবং এ কথাও বলেননি যে, তুমি কেন করলে বা তুমি কেন করলে না।’ হজরত আবু সাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্দানশিন কুমারী মেয়েদের চেয়েও লাজুক ছিলেন। যখন তিনি কোনো কাজ অপছন্দ করতেন, তখন তাঁর চেহারায় আমরা সে পরিচয় পেতাম।’ বুখারি, মুসলিম। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যখন নামাজ কায়েমের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা দৌড়াতে দৌড়াতে নামাজের দিকে এসো না, বরং ওই সময় তোমরা সেদিকে শান্তভাবে ধীরগতিতে চলে আসবে। অতঃপর নামাজের যতটুকু পাও আদায় করবে। আর বাকিটুকু পুরা করে নেবে।’ বুখারি, মুসলিম। হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘প্রত্যেক কাজ ডান দিক থেকে সম্পন্ন করা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খুব পছন্দনীয় ছিল। যেমন পবিত্রতা, মাথা আঁচড়ানো ও জুতা পরিধান ইত্যাদি।’ বুখারি, মুসলিম। হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ খাবার খায় তখন সে যেন আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে, যদি কেউ প্রথমে ভুলে যায় তখন খাওয়ার মধ্যে যখনই স্মরণ হয় সে যেন বলে আমি আল্লাহর নাম প্রথম ও শেষে উচ্চারণ করলাম।’ আবু দাউদ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইসলামী আদব তথা রীতিনীতি অবলম্বনের তৌফিক দিন। লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক। ঢাকাওয়াচ/স

ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাধীনতা ও বিজয়

ইসলামে বিজয় ও স্বাধীনতার গুরুত্ব অপরিসীম। স্বাধীনতা সম্পর্কে ইসলামী আদর্শের মূল কথা হলো মানুষ মানুষের গোলামি করবে না। মানুষ একমাত্র তার সৃষ্টিকর্তার গোলামি করবে। পৃথিবীতে লক্ষাধিক নবী-রসুলের আগমন হয়েছে। তাঁরা সবাই সমাজ, দেশ, জাতি তথা মানুষের স্বাধীনতার জন্য কাজ করেছেন। মানুষের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য নবী-রসুলগণ অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। বলা যায়, সব ধরনের দাসত্ব ও পরাধীনতা থেকে মুক্ত করাই হচ্ছে মহান আল্লাহর প্রেরিত নবী-রসুলদের কাজ। এই স্বাধীনতার জন্যই রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করে মদিনায় সংগঠিত হয়ে মক্কাকে করেছিলেন স্বাধীন। সবাইকে উপভোগ করতে দিয়েছিলেন মক্কা বিজয় তথা স্বাধীনতার প্রকৃত আনন্দ। বিজয় সম্পর্কে আল কোরআনে দুটি সূরা রয়েছে। একটি সূরা ফাতাহ বা বিজয়, আরেকটি সূরা আন নাসর বা মুক্তি ও সাহায্য। আসলে বিজয়ের যে আনন্দ তা আল্লাহর শুকরিয়া, আল্লাহর পবিত্রতা ও বড়ত্ব বর্ণনার মাধ্যমেই প্রকাশ করার শিক্ষা ইসলাম আমাদের দেয়। যারা রাষ্ট্রের স্বাধীনতা অর্জন বা সুরক্ষার জন্য অবদান রাখেন তাদের মর্যাদাও ঘোষণা করেছেন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। একাধিক হাদিসে তিনি মুসলমানদের তাদের মাতৃভূমির সীমান্ত পাহারা দেওয়ার মর্যাদা বর্ণনা করেছেন। এক হাদিসে তিনি শত্রুর আক্রমণ থেকে মাতৃভূমি রক্ষার জন্য এক রাত পাহারা দেওয়াকে এক মাস নফল নামাজ ও রোজার চেয়ে উত্তম বলে গণ্য করেছেন। ইসলামে নামাজ ও রোজার মর্যাদা অপরিসীম। মাতৃভূমির সুরক্ষাকে সে মর্যাদার অনুষঙ্গ করা হয়েছে। ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী শত্রুদের দ্বারা আক্রান্ত হলে যেমন সে আক্রমণ প্রতিহত করা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য তেমন মাতৃভূমি আক্রান্ত হলেও তা রক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ। একবার রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সাহাবির জানাজা পড়ার জন্য প্রস্তুত হলেন। হজরত ওমর (রা.) তাঁকে বলেন, ‘ইয়া রসুলুল্লাহ! এই ব্যক্তি খারাপ ছিল, তার জানাজা পড়বেন না।’ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত সাহাবিদের দিকে ফিরে তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমরা কেউ কি এই লোকটিকে ইসলামের কোনো কাজে দেখেছ?’ একজন সাহাবি বললেন, ‘হ্যাঁ, সে আল্লাহর জন্য সীমান্ত (স্বাধীনতার) পাহারায় একটি রাত জেগে ছিল।’ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জানাজা পড়লেন এবং তাঁকে দাফন করলেন। তারপর (সেই সাহাবির বিষয়ে) বললেন, ‘তোমার সাথীরা মনে করছে যে তুমি একজন জাহান্নামি মানুষ, আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি জান্নাতের অধিবাসী।’ বায়হাকি। মহান আল্লাহ মুক্তিযোদ্ধাদের দুনিয়ায় নেক হায়াত ও পরকালে জান্নাত দিয়ে ধন্য করুন! লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক। ঢাকাওয়াচ/স