বরিশালে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় তদন্ত দাবি
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৩:০৪ পিএম, ২৫ জুলাই ২০২৪
বরিশাল: কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে সংবাদ সংগ্রহ ও প্রকাশ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের হেনস্তা ও মারধরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বরিশালের সাংবাদিকরা।
এরই মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও হতাহতের ঘটনায় বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি (বিআরইউ) উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
ওই বিবৃতিতে বিআরইউ’র নেতৃবৃন্দ বলেছেন, আন্দোলন কর্মসূচির সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে গত কয়েক দিনে বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকেরা হামলার শিকার হয়েছেন। গণমাধ্যমের ক্যামেরা, গাড়ি ভাঙচুর করা হচ্ছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলা অগ্রহণযোগ্য। অনতিবিলম্বে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের শনাক্ত করে বিচারের দাবি জানায় বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি (বিআরইউ)।
পেশাগত সাংবদিকদের নিয়ে গঠিত এই সংগঠনের সাবেক সভাপতি আনিছুর রহমান স্বপন বলেন, নিঃসন্দেহে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও হতাহতের ঘটনা উদ্বেগজনক। এগুলোর কারণ অবশ্যই সরকারকে খুঁজে বের করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আর বিচার নিশ্চিত না হলে এ ধরনের ঘটনা বার বার ঘটবে। তবে সাংবাদিকতা বা সাংবাদিকদের যে ভাবমূর্তি আগে ছিল, এখন মনে হয় সেটি সেই জায়গাতে নেই। নির্দলীয় স্বাধীন সাংবাদিকতা বজায় রাখলে হয়তো এমনটা হতো না। তবে কোনো গোষ্ঠী বিশেষ কোনো স্বার্থে সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়েছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা উচিত।
শহিদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন বলেন, এবারে যে ঘটনা ঘটেছে আগে কখনও এমনটা দেখা যায়নি। যে কোনো আন্দোলন সংগ্রামে সাংবাদিকরা নিরাপদেই কাজ করেছে। তবে এবার ভিন্নতা দেখা দিয়েছে। সাংবাদিকদের সংবাদ প্রকাশ নিয়ে যেমন ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে, তেমনি হেনস্তা এমনকি মারধরও করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শুধু বরিশালে নয়, এবারের মতো সাংবাদিকদের শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তা গোটা দেশেই প্রথম। আমি বলব, কোটা সংস্কার নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে যা ঘটেছে, তা নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা উচিত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দেওয়া হোক।
উল্লেখ্য, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ নগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংবাদ যথাযথভাবে প্রকাশ করে আসছিলেন বরিশালের গণমাধ্যমকর্মীরা। কিন্তু জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে বিপাকে পড়েন গণমাধ্যমকর্মীরা। বিশেষ করে বিভিন্ন টেলিভিশনে কর্মরত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে অপ্রীতিকর মন্তব্য, লাইভ চলাকালীন সময়ে অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করে প্রতিবেদককে উদ্দেশ্য করে কথাবার্তা বলা, লাইভ শুরুর আগে প্রতিবেদককে নিউজ প্রকাশের বিষয় নিয়ে সতর্ক করে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।
তবে ১৬ জুলাই থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমের নাম উল্লেখ করে তার প্রতিবেদককে খোঁজা এবং খুঁজে পেতে পুরস্কার ঘোষণা করা, ধরে নিয়ে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করতে বলার মতো ঘটনা ঘটে। সেইসাথে এদিন যমুনা টেলিভিশনের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। আর ১৭ জুলাই তো পুলিশ সদস্যদের সাথে সাথে দৈনিক যুগান্তরের ফটো সাংবাদিক শামীম আহম্মেদসহ বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মী বিক্ষোভকারীদের হামলায় আহত হয়। যেখানে ক্যামেরা ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে।
পাশাপাশি ১৭ জুলাই বরিশাল নগরের নথুল্লাবাদ এলাকায় বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে টানা ১০ ঘণ্টা ধরে যারা ছিলেন, সেই সকল গণমাধ্যমকর্মীরা জানিয়েছেন, তারা যে কোন কাজে ইট-পাটকেল নিক্ষেপকারীদের পাশ দিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছিলেন। রাতে পুলিশ চলে যাওয়ার পর অনেকেই তাদের মোটরসাইকেলে থাকা গণমাধ্যমের স্টিকার খুলে, গলায় থাকা আইডিকার্ড খুলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছেন। কারণ তখন যারা নথুল্লাবাদে ছিলেন তাদের মধ্যে কোন ছাত্রের দেখা তো পাওয়াই যায়নি এবং নগরের পরিচিত কাউকে দেখতেও পাননি, বিপদে পড়লে যাদের সহায়তা নেওয়া যায়।