ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতা

গণঅভ্যুত্থানের পরে সমাজে কোনো পরিবর্তন আসেনি : ড. সামিনা লুৎফা


March25 Naeem/samina lutfa.jpg

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো না থাকলে অন্য ঘটনার সঙ্গে নারীর ওপর অভিঘাত বেশি হয়। নির্যাতন, হামলা ও ধর্ষণের ঘটনা বাড়ে। আদতে গণঅভ্যুত্থানের পর সমাজে কোনো পরিবর্তন আসেনি। এর মানে এটা না, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলের  চেয়েও পরিস্থিতি অনেক খারাপ হয়ে গেছে। তবে কয়েক দিনের ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে নির্যাতকের পক্ষে সাফাই গাওয়ায় অনেক বেশি প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। বিশেষত নারীরা অনেক বেশি ক্ষুদ্ধ হয়েছেন।

লালমাটিয়ায় ভুক্তভোগী নারীর ওপর হামলা হয়েছে, যা ফৌজদারি অপরাধ। কিন্তু সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে এ ঘটনায় হামলাকারীদের তো আইনের আওতায় নেওয়াই হয়নি বরং সরকারের পক্ষ থেকে হামলাকারীদের মুরব্বি বলে তাদের পক্ষালম্বন করা হয়েছে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী নির্যাতনের ঘটনায় এ রকম একটা পরিস্থিতি তৈরি করা হলো, নির্যাতনের পক্ষে একটা গোষ্ঠী সারারাত থানার সামনে অবস্থান করল। স্বীকৃত নির্যাতকের মুক্তির দাবি জানানো হলো। সর্বশেষ সরকার এ রকম একটা অপরাধীকে এক দিনের মাথায় জামিন দিতে বাধ্য হলো। পরে সেই অপরাধীকে নির্ধারিত গোষ্ঠীটি বীরের বেশে বরণ করে নিল। একজন অপরাধীকে যদি বীর হিসেবে দেখানো হয়, তবে অন্যরাও একই অপরাধ করতে অনুপ্রাণিত হবে। আর বাদী নিরাপত্তাহীন হয়ে ভাববে, সে মামলা চালাবে কিনা?

এই পরিস্থিতিতে নারীরা দেখতে পেল সমাজ ও রাষ্ট্রে ধর্ষণ আর হত্যাকাণ্ড বেড়ে যাওয়ার পরও সরকার ও বিভিন্ন গোষ্ঠী নারীর বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকেও সহযোগিতা পাচ্ছে না তারা। গত শনিবার পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল এসব নিয়ে কথা বলেনি। আর আট বছর বয়সী শিশু ধর্ষণের ঘটনাটি নারীদের মধ্যে ক্ষোভের স্ফুলিঙ্গ হিসেবে কাজ করে। তারা তাদের আত্মসম্মান ও অধিকার ফিরে পেতে রাস্তায় নেমেছে। তাই শনিবার আন্তর্জাতিক নারী দিবসটি কেটেছে অত্যন্ত বেদনার মধ্যে। এর চেয়ে আরও বেদনাদায়ক হচ্ছে, আমাদের  সমাজে নির্যাতনের শিকার একজন নারীকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়। আমাদের মূলধারার গণমাধ্যম এসব বিষয়ে সতর্ক থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্যাতনের শিকার নারীর নাম, পরিচয় ও ছবি প্রকাশ করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে আমরা একবারও খেয়াল করছি না, মেয়েটা যদি বেঁচে যায় তাহলে সে কি সমাজে যেতে পারবে? তার পরিবার সমাজে কীভাবে চলবে? নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুর পরিচয় প্রকাশে বিধিনিষেধ আছে। কিন্তু এই আইন মানছে না কেউ। নির্যাতনের শিকার নারীর পরিচয় প্রকাশের ক্ষেত্রে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।

সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনায় নারী নির্যাতনকারীকে জনসমক্ষে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি আবার উঠেছে। এটা আরও ভয়াবহ। শাস্তি যত কঠোর, মামলায় জেতার সম্ভাবনা তত কম। কারণ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভিকটিমকে বাঁচতে দেওয়া হবে না। সাম্প্রতিক সময়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের লোকজন নারী নির্যাতনকে ঘিরে মিথ্যা তথ্যও ছড়াচ্ছে। তবে প্রতিটি ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনার বিচার করতে হবে।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×