
কনটেন্ট ক্রিয়েটর কাফির গ্রেপ্তার নিয়ে যা জানা গেল
কিছু দিন আগেই আগুনে পুড়ে গেছে কনটেন্ট ক্রিয়েটর নুরুজ্জামান কাফির বাড়ি। গত ১২ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ৩টা ৫৫ মিনিটে কাফি নিজ ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তার বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করেন। এরই প্রেক্ষিতে, ‘নিজের বাড়িতে নিজে আগুন দিয়ে অগ্নিসংযোগের নাটক। যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার কনটেন্ট ক্রিয়েটর কাফি’ শীর্ষক একটি দাবি প্রচার করা হয়েছে। শনিবার (১ মার্চ) আন্তর্জাতিক স্বীকৃত বাংলাদেশের ফ্যাক্ট চেকিং বা তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাদের অনুসন্ধানে জানা যায়, কনটেন্ট ক্রিয়েটর নুরুজ্জামান কাফিকে যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়নি বরং কোন প্রকার তথ্য প্রমাণ ছাড়াই এমন দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে ব্যবহৃত ফুটেজগুলো পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওর শুরুতে এক সংবাদ উপস্থাপকের সংবাদ পাঠের ফুটেজ দেখানো হয়। উপস্থাপককে বলতে দেখা যায়, ‘কনটেন্ট ক্রিয়েটর নুরুজ্জামান কাফিকে যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, অভিযোগ ছিল সে নিজের বাড়িতে নিজেই অগ্নি সংযোগের নাটক সাজিয়েছে।’ তবে, পর্যবেক্ষণে উপস্থাপকের কথা বলার ভঙ্গির সাথে অডিওর অসামঞ্জস্যতা পাওয়া যায়। এছাড়া ভিডিওতে দাবি করা হয়, যৌথ বাহিনীর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে অগ্নিসংযোগের মূল হোতা কাফি নিজেই। আরও বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নুরুজ্জামান কাফি পূর্বপরিকল্পিতভাবে নিজ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন এবং পরে রাজনৈতিকভাবে সুবিধা আদায়ের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেন। তবে নুরুজ্জামান কাফি পূর্বপরিকল্পিতভাবে নিজ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন দাবিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে কিনা জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও মূলধারার গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, নুরুজ্জামান কাফির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, তিনি নিয়মিত ফেসবুকে সক্রিয় রয়েছেন। অর্থাৎ, এটি নিশ্চিত যে নুরুজ্জামান কাফির গ্রেপ্তারের দাবিটি মিথ্যা। আলোচিত ভিডিওগুলোর থাম্বনেইলে কাফির গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো আলাদাভাবে যাচাই করে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। ছবি যাচাই ১: ছবিটি রিভার্স ইমেজে সার্চ করে ডেইলি সানের ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর প্রকাশিত ‘ইফরান সেলিম, বডিগার্ড পুট গস ফাইভ-ডে রিমান্ড’ শীর্ষক শিরোনামের প্রতিবেদনের ফিচার ইমেজের সঙ্গে আলোচিত ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, এটি ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে তোলা হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমের ছবি। সেদিন (৮ নভেম্বর) একাধিক মামলায় ইরফান সেলিমকে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। অর্থাৎ, কাফির ছবি দাবিতে প্রচারিত এই ছবিটি এডিট করা। এখানে ইরফান সেলিমের মুখে সম্পাদনার মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করে কাফির মুখ বসানো হয়েছে। ছবি যাচাই ২: ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ওয়েবসাইটে গত ২১ জানুয়ারি প্রকাশিত ‘কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা কবির শিকদার গ্রেপ্তার’ শীর্ষক শিরোনামের প্রতিবেদনের ফিচার ইমেজের সাথে আলোচিত ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা কবির শিকদারকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। গত ১৬ জানুয়ারি দিবাগত রাত তিনটায় সেনাবাহিনী কুমিল্লা ২৩ বীর অভিযান চালিয়ে নগরীর মোঘলটুলি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। অর্থাৎ, কাফির ছবি দাবিতে প্রচারিত এই ছবিটিও এডিটেড। এখানে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা কবির শিকদারের গ্রেপ্তারকৃত ছবিতে কাফির মুখমণ্ডল বসানো হয়েছে। ছবি যাচাই ৩: ছবিটি রিভার্স ইমেজে সার্চ করে সময় টিভির ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ১০ ডিসেম্বর ‘ফেনীতে ভুয়া সেনা সদস্য আটক’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ফিচার ইমেজের সঙ্গে মিল রয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ফেনীর মহিপাল সার্কিট হাউজ রোড এলাকা থেকে মো. নাজমুল হাসান (২৫) নামের এক ভুয়া সেনা সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথবাহিনী। সোমবার (২০২৪ সালের ৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে মহিপাল এলাকা থেকে তাকে আটক করে। অর্থাৎ, কাফির ছবি দাবিতে প্রচারিত এই ছবিও এডিট করা। এখানে গ্রেপ্তারকৃত ভুয়া সেনা সদস্যের মুখমণ্ডলে কাফির মুখমণ্ডল বসানো হয়েছে। সুতরাং, নিজের বাড়িতে নিজে আগুন দেওয়ার অভিযোগ কনটেন্ট ক্রিয়েটর নুরুজ্জামান কাফিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

ছিনতাইয়ের ভিডিও নিয়ে বিতর্ক, ক্ষমা চাইলেন সংশ্লিষ্টরা
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া রাজধানীর হাতিরঝিলে ‘অস্ত্র ঠেকিয়ে’ ছিনতাইয়ের ৩২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় চলছে। ভিডিওটি আপলোড করেছিলেন একটি ইউটিউব টিমের একজন সদস্য, যা পরে বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও ব্যক্তিগত আইডি থেকে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে সংশ্লিষ্টরা নানা হুমকি ও সমালোচনার মুখে পড়েছেন। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ভিডিও নির্মাতারা এক ভিডিও বার্তায় দেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিরা একটি ভিডিও বার্তায় জানান, ‘এটি মূলত বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নির্মিত একটি শর্ট ফিল্মের অংশ ছিল। তবে ভিডিওটির একটি অংশ ভুলবশত অনলাইনে ফাঁস হয়ে যায়, যা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে।’ তারা বলেন, আমরা এখনও একই পোশাকে আছি। দয়া করে এ নিয়ে কেউ বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। যদি ভুল হয়ে থাকে, আমরা দেশ ও জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ভিডিওতে ইয়াসিন নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা কোনও চক্রান্তের শিকার নই। ব্যক্তিগতভাবে আমি দুবাই প্রবাসী ছিলাম এবং জুলাই আন্দোলনের সময় গ্রেফতার হয়ে কারাভোগ করেছি। এরপর দেশে ফিরে এসেছি। অনেকে এটিকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করছেন, যা দুঃখজনক। তবে এমন ঘটনার জন্য আমরা দেশবাসীর কাছে আবারও ক্ষমাপ্রার্থী।’ এদিকে এই ঘটনার নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে পুলিশ। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তালেবুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ ঘটনা না জেনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খণ্ডিত ভিডিও প্রচার করা জনমনে শঙ্কা ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করতে পারে। ফলে এমন ভিডিও নির্মাণ এবং প্রচারে শতর্কতা অনুসরণ করতে হবে।’ তিনি সবাইকে প্রকৃত ঘটনা যাচাই না করে বিভ্রান্তিকর ভিডিও শেয়ার না করার অনুরোধ জানান।

জানা গেল রাশিয়ান তরুণীর সঙ্গে কক্সবাজারে কী ঘটেছিল
কক্সবাজার বেড়াতে গিয়ে মানিব্যাগ হারিয়ে ফেলা রাশিয়ান তরুণীর ব্যাগ উদ্ধার করে প্রশংসায় ভাসছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। আর এই ব্যাগ খুঁজতে মাত্র দুদিন সময় নিয়েছে পুলিশের সদস্যরা। তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সফলতার জন্য বিশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন রাশিয়ান তরুণী। বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ টুরিস্ট পুলিশের ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়। এতে জানানো হয়, রাশিয়া থেকে আগত মিস মনিকা কবির ২৩ ফেব্রুয়ারি তার বিদেশি টাকা, ভিসা কার্ড, রাশিয়ার আইডি কার্ডসহ ব্যক্তিগত মানিব্যাগ কক্সবাজারে ঘুরতে গিয়ে টমটমে থাকা অবস্থায় হারিয়ে ফেলেন। পরে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের একটা বিশেষ টিম অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদের নির্দেশনায় মাত্র দুইদিনের মধ্যে রাশিয়ান নাগরিকের হারিয়ে যাওয়া বিদেশি টাকাসহ মানিব্যাগটি উদ্ধার করতে সমর্থ হয়। তরুণী মানিব্যাগটি ফিরে পেয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত ছিলেন। এসময় তিনি কক্সবাজার ও বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট পুলিশকেও ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি। টুরিস্ট পুলিশের ফেসবুকে শেয়ার করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রাশিয়ান নাগরিককে তার মানিব্যাগটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এগুলো পেয়ে রাশিয়ান ওই তরুণী ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এদিকে রাশিয়ান নাগরিকের মানিব্যাগ এত দ্রুত উদ্ধার করায় নেটিজেনদের প্রশংসার জোয়ারে ভাসছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। শামিম রহমান নামের একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘স্যালুট পুলিশ বাহিনীকে, বিদেশি নাগরিকের কাছে দেশের মান রক্ষা করায়। এত দ্রুত মানিব্যাগটি উদ্ধার করায় ধন্যবাদ।’

আন্দোলনে ‘ধর্ষণের শিকার’ দাবি করা মাহির অডিও ফাঁস
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্রলীগ নেতাদের ধর্ষণের শিকার হয়েছেন দাবি করা আদ্রিনা মাহি ইস্যুতে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। গত ২২ ফেব্রুয়ারি শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নারীদের সম্মুখ ভূমিকা নিয়ে ছবি ও তথ্যচিত্রের আর্কাইভ প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে তিনি ওই দাবি করেন। তবে একই দিন (২২ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টা ১২ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সায়মা মাসুদ মোমো ফেসবুকে নিজের আইডিতে ওই শিক্ষার্থী সম্পর্কে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন। যেখানে সায়মা লেখেন, ‘আদ্রিনা মাহিকে ধর্ষণ এবং পরবর্তীতে তাকে সমন্বয়কদের সাহায্য না করা প্রসঙ্গ’— ‘প্রথমেই বলছি, সত্য-মিথ্যার বিচার আমি করব না, আমি শুধু পুরো ঘটনার বিস্তারিত বলব। অনেক লম্বা কাহিনি, পুরোটা পড়ার অনুরোধ রইল, বিচারের দায়িত্ব আপনাদের হাতে।’ ‘ঘটনার শুরু : আদ্রিনা মাহির সাথে আমার পরিচয় হয় আগস্টের পরে, নারায়ণগঞ্জে যাবার পর। আমার সঙ্গে তার খুবই ভালো সম্পর্ক। আমি সিনিয়র হওয়া সত্ত্বেও আমার কাছে তার এমন একটা কম্ফোর্ট জোন আছে যে সে আমাকে ‘আপু’ না ডেকে তুমি করেই বলে। তারিখটা ঠিক মনে নেই, একদিন হঠাৎ সে এসে বলতেসে, ‘মম, আমার সাথে তো আন্দোলনের সময় খারাপ কাহিনি ঘটেছে। আমি তো আন্দোলনের সময় রেইপড হয়েছিলাম, এ জন্য আমাকে এখন আমার বাসা (নারায়ণগঞ্জ) থেকে বের করে দিয়েছে।’ তারপর আমি তার কাছ থেকে এ ঘটনা শুনে তাকে পরামর্শ দিলাম, সান্ত্বনা দিলাম, স্টেপ নিতে চাইলাম কিন্তু সে ওই ব্যাপারে আগালো না তেমন একটা। একদিন হঠাৎ মাহি আমার কাছে এসে বলে ঢাবিতে অনেক আসন ফাঁকা আছে, তার জন্য যেন একটা সিটের ব্যবস্থা করে দিই। আমি তখন ওকে বোঝাই যে এটা পুরোপুরিভাবে অবৈধ এবং এটা করাও সম্ভব না। যাহোক, এর অনেক দিন পর ১৩ নভেম্বর, ২০২৪ সকাল সাড়ে ৫টা-৬টার মধ্যে সে আমাকে কল দেয়। কল দিয়ে বলে, ‘আমি তো প্রেগন্যান্ট হয়ে গিয়েছি, এখন বুঝতে পারতেসি না কী করব, আমি তো সুইসাইডাল হয়ে যাচ্ছি।’ সেই সাথে তখন মাহি আমাকে মেসেঞ্জারে একটা প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের ছবি দেয়। আমি তখন খুবই কন্সার্ন্ড হয়ে পড়ি এটা নিয়ে এবং তাকে আমার হলের সামনে আসতে বলি। সে আমার হলের সামনে এলে আমরা ১৩ নভেম্বর সকাল ৮টার দিকে ধানমন্ডি লেকের উদ্দেশে রওনা দিই, সেখানে রেস্টুরেন্টে বসে তার সাথে আমার প্রায় ২ ঘণ্টার মতো কথাবার্তা হয়, সেগুলো নিচে উপস্থাপন করছি— আদ্রিনা মাহিকে আমি প্রথমেই সান্ত্বনা দিই এবং ভেঙে পড়তে না করি। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করি যে কী কী হয়েছিল ডিটেইলসে বলতে, যাতে তাকে যথাযথ সহায়তা করতে পারি। মাহি আমাকে বলে যে ৪ আগস্ট সে সকাল ৯টার দিকে আন্দোলন করার জন্য নারায়ণগঞ্জের একটি স্থানে (চাষাড়া বা গোল চত্বর, স্থানের নামটা আমার এক্সাক্টলি মনে নেই) অটো থেকে নামে। অটো থেকে নামার পর নাকি তাকে ৪-৫ জন আওয়ামী লীগের কর্মী ঘিরে ধরে এবং তাকে টেনেহিঁচড়ে রিকশায় তুলে নিয়ে যায়। মাহি আমাকে জানায়, সে আন্দোলন করার জন্য মাইক নিয়ে আসছিল এবং সেটা সে অটোওয়ালার কাছে লুকিয়ে রাখে, অটোওয়ালা প্রকাশ্যে তার কাছে মাইক হ্যান্ডওভার করার কারণে আওয়ামী লীগের কর্মীরা তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়। ৩ আগস্ট মাহিকে নাকি আন্দোলন শেষে বিকালে বাসায় যাওয়ার সময় আওয়ামী লীগের নেতারা থ্রেট দিয়েছিল রেইপ করার। তখন স্বাভাবিকভাবে আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, তোমাকে থ্রেট দেয়ার ঘটনা আর কেউ কি জানত বা কাউকে বলেছিলে? মাহি বলে যে, মাহি আন্দোলন শেষে ৩-৪ জন ফ্রেন্ডের সাথে মিলে বাসায় ফিরত (নাসিমা, রাতুল, সাইফুল, সাফা, নিরব)। কিন্তু কেউই এই হুমকি সম্পর্কে জানত না, সে জানায় নাই। এরপর মাহি জানায়, তাকে আওয়ামী লীগের কর্মীরা শামীম ওসমানের ভাইয়ের বাসায় নিয়ে যায় এবং সেখানে ধর্ষণ করে। তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করি যে ধর্ষণকারী কারোর নাম সে জানে কি না বা এখন দেখলে চিনতে পারবে কি না? মাহি বলে যে তার কারও চেহারাই মনে নেই, সে কাউকে চিনতে পারবে না। তবে একজনের বয়স ৩০-এর মতো ছিল বাকিরা ইয়াং ছিল। তারপর একপর্যায়ে সে নাকি তাদের আওয়ামী লীগের এক নেতার নাম বলে যে মাহির পরিচিত, সেই আওয়ামী লীগ নেতার নাম শোনার পর তাকে দুপুর ১২.৩০-এ ধর্ষকরা ছেড়ে দেয়। এরপর সে রিকশা নিয়ে বাসায় চলে আসে। এই ঘটনা সে বাসায় কাউকে জানায় না। এমনকি নাসিমাসহ তার আন্দোলনে থাকা কোনো সহযোদ্ধাকেও জানায় না।’ ‘ঘটনার দ্বিতীয় অংশ : মাহি আমাকে জানায় ৪ আগস্ট আন্দোলনে ধর্ষণ হবার পর দ্বিতীয়বার সে আবার ধর্ষিত হয় ১০ আগস্ট। মাহির ভাষ্যমতে, সেদিন মাহি ঢাকার বাইরে এক আত্মীয়ের বিয়ে খেতে গিয়েছিল একা একা। ফিরতে ফিরতে রাত ১০টা বেজে যায়। তখন সে উবারে বাইক কল করে এবং বাইক দিয়ে ফেরার পথে বাইক ড্রাইভার তাকে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ, যাত্রাবাড়ীর আশপাশে একটা এলাকায় নিয়ে ধর্ষণ করে। তখন আমি মাহির কাছে ওর কল লিস্ট ঘেঁটে বাইক ড্রাইভারের নম্বরটা দিতে বলি, যেহেতু তার ভাষ্যমতে সে উবারে বাইক কল করেছে, সো, রাইডারের নম্বর বা ট্র্যাকিং হিস্ট্রি থাকার কথা। তৎক্ষণাৎ মাহি আমাকে জানায় সে ভুল বলেছে, উবারে বাইক কল করেনি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা এক বাইকারের বাইকে উঠেছে। তারপর আমি তাকে জিজ্ঞেস করি সে বাইকারকে চিনতে পারবে কি না। সে বলল চিনতে পারবে না, কারণ ধর্ষণ করার সময় বাইকারের মাথায় হেলমেট পরা ছিল। তাই মাহি বাইকারের চেহারা দেখতে পায়নি। পরবর্তীতে সে বাসায় চলে আসে এবং এই ঘটনাও সে কাউকে জানায় না। ১০ তারিখ রাতে নাকি তার মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছিল তখন সে বাইকারের ফোন থেকে তার আম্মুকে কল দেয়। আমি তখন মাহিকে বলি, ওর আম্মুর ফোন থেকে বাইকারের নম্বর নিয়ে দিতে। মাহি জানায়, তার বাসার সাথে এখন তার কোনোই যোগাযোগ নেই, তাই সে নম্বর বের করতে পারবে না। ১৩ নভেম্বরের ঘটনায় আবার ফেরত আসি, এসব কিছু মাহির কাছ থেকে জানার পর আমি মাহিকে জিজ্ঞেস করি সে এই ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের কোনো সমন্বয়ক বা পুলিশের কাউকে জানিয়েছে কি না? মাহি জানায়, মাহি পুলিশের কাছে গিয়েছিল কিন্তু কোনো প্রমাণ না থাকায় পুলিশ মামলা নেয় নি। আমি তখন জিজ্ঞেস করলাম, জিডিও করেনি? সে বললো না। তখন আমি মাহিকে পরামর্শ দিলাম নারায়ণগঞ্জ থানায় গিয়ে অজ্ঞাত নামা মামলা করতে, অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনার জন্য তাকে সাহায্য করতে চেয়েছি আমি। এমনকি নারায়ণগঞ্জের এসপির কাছেও ব্যাপারটা জানাতে চেয়েছি। মাহি সেটাও তখন করতে চায়নি, মানে ও তখন অজ্ঞাতনামা মামলাও করতে চায়নি। এরপর মাহি আরও অনেককেই এই ঘটনা সম্পর্কে জানায়। তাকে আমি হাসপাতালে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সে আমার সাথে হাসপাতালে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। সারজিস ভাই মাহির সাথে সরাসরি এ ব্যাপারে কথা বলে এবং তাকে হেল্প করতে চায়, কিন্তু মাহি তখনো গড়িমসি করে। সারজিস ভাইকে আমি আবারও মাহির ব্যাপারটা নিয়ে জানাই, তখন উনি আমাকে পপুলার হাসপাতালের একজন ডাক্তারের সাথে মাহির শারীরিক অবস্থা নিয়ে পরামর্শ করার জন্য জানান। তখন মাহিকে পপুলার হাসপাতালের একজন ডাক্তারের অ্যাড্রেস দিয়ে বলি ওই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে। কারণ, মাহির দেওয়া তথ্যমতে তখন ৩ মাস ওভার হয়ে গেছে, এই মুহূর্তে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো স্টেপ নেওয়া উচিত না। উল্লেখ্য, মাহি সুইসাইডাল হয়ে এবোরশনের স্টেপ নিতে চাচ্ছিল বারবার। সেদিন আমি তাকে অনেক সাপোর্ট ও সান্ত্বনা দিয়ে এবোরশন ছাড়া অন্য বিভিন্ন অল্টারনেটিভ উপায়ের কথা বলি, যাতে সে সুইসাইডাল হওয়া থেকে বিরত থাকে। তারপর আমি তাকে রিকশায় করে ঢাকায় যেই মেসে সে থাকে, সেই মেসের সামনে দিয়ে আসি। মাহির ভাষ্যমতে, তার পরিবার তাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে, তার থাকার জায়গা নেই। সেই মুহূর্তে বৈষম্যবিরোধীরই একজন সিনিয়র আপু তাকে আশ্রয় দেয় তার অসহায়ত্বের কথা শুনে। আমি মাহিকে বলি সে যেন বাসায় যোগাযোগ করে এবং তার বাসার নম্বরটা আমাকে দেয়, আমি ওর বাসায় কথা বলে সব বুঝিয়ে বলতে চাই কারণ ঢাকা শহরে একটা মেয়ের এই অবস্থায় একা থাকা সমীচীন না। মাহি তখন তার পরিবারের নম্বর দিতে অস্বীকৃতি জানায়। যাহোক, পরবর্তীতে সে বৈষম্যবিরোধীর আরও ককয়েকজনের কাছে এই ব্যাপারে জানায়। নুসরাত তাবাসসুম আপুর সাথে মাহির কথা হলে, মাহি নুসরাত আপুকে জানায় যে সে এবোরশন করাতে চায়। কিন্তু নুসরাত আপু মাহিকে জানায়, যেহেতু তিন মাস পেরিয়ে চার মাস প্রায় হয়ে যাচ্ছে, তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এ ব্যাপারে আগানো এখন মাহির শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। নুসরাত আপু তাকে ভালো হাসপাতালে নিয়ে যেতে চায় এবং ব্লাড টেস্ট-সহ আনুষঙ্গিক চিকিৎসা এগিয়ে নিতে বলে। একই সাথে মাহি নিজে মামলা করতে না চাইলে বৈষম্যবিরোধীর পক্ষ থেকে কিংবা অন্য কারো মাধ্যমে যদি মাহি কম্ফোর্টেবল তাহলেও যেন বাদি হয়ে মামলা করায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে চায়। হান্নান মাসঊদ ভাইকেও মাহি এ ব্যাপারে জানায় এবং সাথে এটাও জানায় যে, আমার সাথে তার (মাহির) আগে কথা হয়েছে এ ব্যাপারে এবং আমি তাকে সাহায্য করছি। তখন হান্নান মাসঊদ ভাই সাথে সাথেই আমাকে কল দেয় এবং মাহিকে যেন সর্বোচ্চ ও দ্রুত হেল্প করার জন্য পদক্ষেপ নিই, সে জন্য তাগাদা দেয়। উমামা ফাতেমা আপুর সাথে মাহির এ ব্যাপারে কথা হয় এবং উমামা আপুও তাকে মামলার ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য তৎপর হয়। প্রত্যেকে তাকে আইনি পদক্ষেপসহ মেডিক্যাল রিলেটেড ব্যাপারেও হেল্প করতে চায় কিন্তু সে বিভিন্নভাবে ইনিয়ে-বিনিয়ে গড়িমসি করতে থাকে, কোনো ডাক্তারের কাছে যায় না, কোনো প্রেসক্রিপশনও দেখাতে পারে না, মামলা করার জন্য স্টেপ নিলেও সে আগাতে চায় না, গড়িমসি করে। এরপর একদিন হঠাৎ আমি তার ফেসবুক স্টোরি / নোট দেখি। সেখানে লেখা ছিল, ‘আল্লাহ তুমি যা ছিনিয়ে নাও তা কেন দাও?’ এই নোট দেখে আমার মনে হলো মাহির হয়তো মিসক্যারেজ হয়েছে, তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম। মাহি আমাকে জানায়, ৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধীর প্রোগ্রামে গিয়ে গাড়ি থেকে নামার সময় হঠাৎ করেই তার ব্লিডিং শুরু হয়, তারপর সে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসে এবং বাসার ওয়াশরুমের কমোডে এক বাচ্চা পড়ে যায়, আরেক বাচ্চা ওয়াশরুমের ফ্লোরে পড়ে যায়। তাকে আমি বারবার জিজ্ঞেস করি, কোনো আঘাত লেগেছিল কি না, অথবা স্লিপ কেটেছিল কি না? সে আমাকে জানায় কোনো আঘাত ছাড়াই নাকি তার মিসক্যারেজ হয়েছে। আমি সত্য-মিথ্যা বা কোনো কনক্লুশন দেব না। পুরো পোস্টটা যারা পড়েছেন, তাদের অনেক জায়গায়ই কনফিউশন থাকতে পারে, আমারও ছিল। কিন্তু মাহির সাথে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল বিধায় তার ইমেজের কথা চিন্তা করে আমি এর ডিপ ডাউন এনালাইসিস এ যাইনি এত দিন। কিন্তু আজকে সে শিল্পকলা একাডেমিতে যেই বক্তব্য দিয়েছে, সেটা স্পষ্টতই মিথ্যাচার। সমন্বয়কদের অনেকেই ওকে অনেকবার সহায়তার কথা বলেছে কিন্তু সে বিভিন্নভাবে গড়িমসি করে সহায়তার দিকে আগায়নি। স্ট্যাটাসে কিছু ছবি ও ভিডিওর লিংক দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মোমো বলেন, ‘মাহির সাথে আমার ১৩ নভেম্বর কথা হবার দিন আমি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো নোট করেছিলাম আমার নোটখাতায়, সেগুলোর ছবি দিচ্ছি। একটা ড্রাইভ লিংক শেয়ার করছি, যেখানে মাহির সাথে আমার ৪২ মিনিটের কথোপকথন আছে। আমার সাথে ওর সরাসরি ২ ঘণ্টা কথা হয়েছে, কিন্তু ওর কথা শোনার অর্ধেক সময় পর হঠাৎ কেমন জানি সব অগোছালো লাগতে শুরু করল। তখন আমি মোবাইলের রেকর্ডার অন করি। সেই সাথে আমার সাথে মাহির চ্যাটিংয়ের কিছু স্ক্রিনশটও দিচ্ছি।’ মাহির উদ্দেশে মোমো লেখেন, ‘মাহি তুমি আমাকেসহ অনেককেই বলেছ যে আমি তোমাকে পুরোটা সময় বোনের মতো সাপোর্ট দিয়েছি। তোমাকে আমি আহ্বান করছি, সামনে আসো, মুখোমুখি হও এবং বিনা কারণে মিথ্যাচার না করে সত্যটা সামনাসামনি পরিষ্কার করো সৎসাহস থাকলে।’ মাহিকে এই পোস্টের কথা প্রমাণের তাগাদা দিয়ে তিনি বলেন, ‘যেভাবে আজ ওপেনলি একপাক্ষিক বক্তব্য দিয়ে সবার সামনে মিথ্যাচার করেছ, সেভাবে সামনাসামনি হয়ে বলো যে তোমাকে বৈষম্যবিরোধীর সকলে সাপোর্ট দিতে চেয়েছে কি না? তুমি গড়িমসি করেছ কি না? আমি চাই এবার সকল রহস্যের জট খুলুক। মাহিকে জবাবদিহিতার আওতায় আনানো হলে থলের বেড়ালও বের হয়ে আসবে। সাহস এবং প্রমাণ থাকলে, এসে বলো যে আমার পোস্টে বলা কথাগুলো মিথ্যা।’

আবরার হত্যা মামলার আসামিপক্ষ থেকে সরে দাঁড়ালেন অ্যাডভোকেট শিশির মনির
আলোচিত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েকজন আসামির পক্ষে হাইকোর্টে আইনি লড়াই করেছেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। এরইমধ্যে হাইকোর্টে এই মামলার আপিল শুনানি শেষ হয়েছে। মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) নিজ ফেসবুক পোস্টে তিনি এ ঘোষণা দেন। এর আগে আইনজীবী শিশির মনির আবরার হত্যা মামলার আসামিদের পক্ষে শুনানি করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই তার সমালোচনা করতে থাকেন। অনেকে ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, শিশির মনির ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন। তিনি জামায়াত ইসলামীর অন্যতম আইনজীবী। এছাড়া সুনামগঞ্জ-২ আসন থেকে জামায়াতে ইসলামী শিশির মনিরকে আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তাই আবরার হত্যা মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী হওয়া শিশির মনিরের আদর্শের সঙ্গে যায় না। এ অবস্থায় আবরার হত্যা মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে ভবিষ্যতে আইনি লড়াই না করার ঘোষণা দিয়েছেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, হাইকোর্টে শহীদ আবরার ফাহাদের মামলার শুনানি শেষ। রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ। বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া সমীচীন হবে না। আমি আপনাদের আবেগ-অনুভূতির প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, হাইকোর্টের রায় যাই হোক-আপিল বিভাগে কারও পক্ষে আমি এই মামলা পরিচালনা করবো না, ইনশাল্লাহ। বিষয়টি নিয়ে শহীদ আবরারের পরিবারের সাথেও আমি কথা বলবো। আশা করি, সবাই বিষয়টি সৌহার্দপূর্ণ দৃষ্টিতে দেখবেন। প্রসঙ্গত, আলোচিত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় যেকোনও দিন রায় ঘোষণার করবেন হাইকোর্ট। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে বি রুমি। তাদের সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার সুমাইয়া আজিজ ও জামিউল হক ফয়সাল। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও আইনজীবী শিশির মনির।

একদিন নাহিদ দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন : প্রেস সচিব
নতুন রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব নিতে পদত্যাগ করা অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে, নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি লেখেন ‘দেশের সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নাহিদ ইসলাম।’ তিনি লেখেন, তার বয়স মাত্র ২৬ এবং এরই মধ্যে তিনি একজন নৃশংস স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে একটি বড় বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি দেশের রাজনীতির অঙ্গনে আরও কয়েক দশক বড় বৈশিষ্ট্য হয়ে থাকবেন।’ পোস্টের সবশেষে তিনি লিখেছেন, আর আল্লাহ জানে, একদিন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। এর আগে, মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেন মো. নাহিদ ইসলাম। নাহিদ ইসলাম অন্তর্বর্তী সরকারে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছিলেন। গত কয়েকদিন ধরেই গুঞ্জন চলছিল নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল আসছে। উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামও বেশ কয়েকবার জানিয়েছিলেন পদত্যাগ করেই তিনি নতুন দলে যোগ দেবেন। আজকে তার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে সে পথ অনেকটা সুগম হলো। উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছে। এই দলের নেতৃত্ব দিতে পারেন নাহিদ ইসলাম। সে কারণে তিনি উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি নতুন এ রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হওয়ার কথা রয়েছে।

এনআরবিসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার ফরাছত আলী ও সাবেক পরিচালক সরোয়ার জামান চৌধুরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারী) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, দুদকের উপপরিচালক আফরোজা হক খান দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, ইঞ্জিনিয়ার ফরাছত আলী ও সরোয়ার জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ, হুন্ডির ব্যবসা, ঋণ প্রদানে অনিয়মের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং বিদেশে অর্থপাচারসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগটি অনুসন্ধানে তিন সদস্য বিশিষ্ট টিম গঠন করা হয়। অনুসন্ধানকালে গোপন সূত্রে জানা যায় যে, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কাজ ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের বিদেশ গমন রহিত করা একান্ত প্রয়োজন।

নাহিদকে উদ্দেশ্য করে সারজিস বললেন, রাজপথে স্বাগতম সহযোদ্ধা
অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন মো. নাহিদ ইসলাম। তার পদত্যাগের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। মঙ্গলবার দুপুরে সারজিস আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে নাহিদ ইসলামকে ট্যাগ করে এই স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসে সারিজিস বলেন, ‘এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার। রাজপথে স্বাগতম, সহযোদ্ধা।’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করছে। এই দলে আহ্বায়ক হিসেবে থাকার কথা রয়েছে নাহিদ ইসলামের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র নাহিদ ইসলাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ছাত্র–জনতার গণ–অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এর তিন দিনের মাথায় ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। সেই সরকারে উপদেষ্টা হন নাহিদ ইসলাম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সাবেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক নেতা মাহফুজ আলম প্রথমে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এবং পরে উপদেষ্টা হন। ঢাকার বনশ্রীর ছেলে নাহিদ ইসলাম ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। তিনি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী।

ইন্টারনেট শাটডাউন চিরতরে বন্ধের জন্যই স্টারলিংক আসছে: প্রেস সচিব
ইলন মাস্কের স্টারলিংককে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানো এবং তা চালু করার মূল কারণ হচ্ছে অনলাইন শাটডাউন চিরতরে বন্ধ করার জন্য। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একথা জানিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) তিনি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে একথা বলেন। প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার পোস্টে লেখেন, ‘অনলাইন শাটডাউন চিরতরে বন্ধ করার ইলন মাস্কের স্টারলিঙ্ক বাংলাদেশে ইনভাইট করে চালু হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে অনলাইন শাটডাউন ব্যবসা চিরতরে বন্ধ করা। শেখ হাসিনা একনায়কতন্ত্র ১৬ বছরের শাসনকালে অনেকবার ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে। ইন্টারনেট শাটডাউন হচ্ছে স্বৈরশাসক ও স্বৈরাচারীদের একটি প্রিয় হাতিয়ার বিক্ষোভ দমন করতে বা কোন প্রধান বিরোধী আন্দোলন দমন করতে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায়, হাজার হাজার ফ্রি ল্যান্সার আক্রান্ত হয়েছিল। কেউ কেউ তাদের চুক্তি এবং চাকরি চিরতরে হারিয়ে ফেলে। বাংলাদেশের বাজারে স্টারলিংকের আগমন মানে ভবিষ্যৎ কোন সরকারই ইন্টারনেট সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে পারবে না। অন্তত বিপিও প্রতিষ্ঠান, কল সেন্টার এবং ফ্রি ল্যান্সাররা নেট বন্ধ করার নতুন চেষ্টায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।বাংলাদেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা স্টারলিংক চালুর বিষয়ে আলোচনা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও শীর্ষ মার্কিন ব্যবসায়ী ইলন মাস্ক। বৃস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ভিডিও এক ভার্চুয়াল বৈঠকে তাদের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস স্পেসএক্স এর প্রতিষ্ঠাতা, টেসলা এবং এক্স-এর মালিক ইলন মাস্কের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। বৈঠকে বাংলাদেশে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা চালুর বিষয়ে ভবিষ্যৎ সহযোগিতা ও সম্ভাব্য অগ্রগতির বিষয়ে আলোচনা করেন তারা।

রাতে গরম বাড়বে, অপরিবর্তিত থাকবে দিনের তাপমাত্রা
শীত প্রায় বিদায় নিয়েছে। সারাদেশে কুয়াশাও অনেকটাই কমে গেছে। বেড়েছে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আগামী ৩ দিন দেশে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনাও নেই। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এছাড়াও শেষরাত থেকে ভোর পর্যন্ত শুধু দেশের নদী অববাহিকার কোথাও কোথাও হালকা কুয়াশা পড়তে পারে। আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক জানিয়েছেন, গ্রামাঞ্চল ছাড়া এখন কুয়াশা অনেক কম পড়ছে। শুধু নদী অববাহিকায় কুয়াশা হালকা কুয়াশা পড়তে পারে। এ মাসে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই। আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল শ্রীমঙ্গলে। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৮.৭ ডিগ্রি।

প্রতারণার মামলায় খালাস পেলেন চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল
প্রতারণার অভিযোগে করা মামলায় আলোচিত চিত্রনায়ক ও ব্যবসায়ী অনন্ত জলিলসহ ছয়জনকে খালাস দিয়েছেন আদালত। রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্ল্যাহ মামলার দায় থেকে তাদের খালাস দেন। মামলার অন্যরা হলেন— পোলো কম্পোজিট নিট ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহানারা বেগম, ফাইন্যান্স পরিচালক মো. শরীফ হোসাইন, সহকারী ব্যবস্থাপক সাকিবুল ইসলাম, সিনিয়র মার্চেন্ডাইজার মো. মিলন ও বাজেট অ্যান্ড অডিটের হেড অফ কস্ট শহিদুল ইসলাম। আদালত সূত্রে জানা গেছে, অনন্ত জলিলসহ ছয়জনের আদালতে হাজির হওয়ার জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে মামলার বাদী শাফিল নাওয়াজ চৌধুরী দুই পক্ষের মধ্যে আপোষ মীমাংসা হয়েছে বলে মামলা প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত সার্বিক বিবেচনায় মামলাটি প্রত্যাহার করে আসামিদের খালাস প্রদান করেন। এর আগে ২০২৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের আদালতে এ মামলা হয়। পরে তদন্ত শেষে গত ২৩ নভেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআই পরিদর্শক তাপস চন্দ্র পন্ডিত সত্যতা পেয়ে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। গত ৩০ ডিসেম্বর আদালত এই তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে আসামিদের হাজির হতে সমন জারি করেন। মামলায় অভিযোগ বলা হয়, ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর আসামিরা পলো কম্পোজিট কোম্পানির নামে ব্যবসায়ী শাফিল নাওয়াজের কাছে গার্মেন্টস সম্পর্কিত কিছু কাজের জন্য অর্ডার দেন। এরপর শাফিল কাজ শুরু করে টাকা চান। অভিযুক্তরা কাজ চালিয়ে যেতে বলেন এবং এলসির মাধ্যমে টাকা দেবেন বলে জানান। পরবর্তী সময়ে তারা আরও বেশ কিছু কাজের অর্ডার দেন। একই বছরের মার্চ পর্যন্ত বাদী সবগুলো কাজ আসামিদের বুঝিয়ে দেন। গত বছরের ১৫ মার্চ টাকা পরিশোধের জন্য মার্কেন্টাইল ব্যাংকে অভিযুক্তরা শাফিলের নামে একটি এলসি করেন। শাফিল টাকার জন্য ব্যাংকে যোগাযোগ করলে এলসির কাগজপত্রে ত্রুটির জন্য টাকা ওঠাতে ব্যর্থ হন। শাফিল চুক্তি অনুযায়ী প্রায় ২৯ হাজার ২০০ ডলারের কাজ শেষ করলেও অনন্ত জলিলের মালিকানাধীন কোম্পানিটি এখন পর্যন্ত এক টাকাও পরিশোধ করেনি।

আন্দোলনকালে ধর্ষণের শিকার তরুণীকে নিয়ে সমন্বয়ক মমের স্ট্যাটাস
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্রলীগের নেতাদের ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন এক ছাত্রী। একই সঙ্গে সমন্বয়ক থেকে শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রায় সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বিচার পাননি বলে দাবি করেছেন তিনি। তার এই অভিযোগের বিষয়ে খোলাসা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামছুন্নাহার হলের সমন্বয়ক সায়মা মাসুদ মম।শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে পুরো বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।তিনি পোস্টে লেখেন, ভুক্তভোগীকে প্রত্যেকে আইনি পদক্ষেপসহ মেডিক্যাল রিলেটেড ব্যাপারেও হেল্প করতে চায় কিন্তু সে বিভিন্নভাবে ইনিয়ে বিনিয়ে গড়িমসি করতে থাকে, কোনো ডাক্তারের কাছে যায় না, কোনো প্রেসক্রিপশন ও দেখাতে পারে না, মামলা করার জন্য স্টেপ নিলেও সে আগাতে চায় না গড়িমসি করে।মম আরও লেখেন, আজকে সে শিল্পকলা একাডেমিতে যেই বক্তব্য দিয়েছে সেটা স্পষ্টতই মিথ্যাচার। সমন্বয়কদের অনেকেই ওকে অনেকবার সহায়তার কথা বলেছে কিন্তু সে বিভিন্নভাবে গড়িমসি করে সহায়তার দিকে আগায় নি।ধর্ষণের শিকার তরুণীর উদ্দেশ্যে এই সমন্বয় লেখেন, তুমি আমাকেসহ অনেককেই বলেছো যে, আমি তোমাকে পুরোটা সময় বোনের মতো সাপোর্ট দিয়েছি। তোমাকে আমি আহ্বান করছি, সামনে আসো, মুখোমুখি হও এবং বিনা কারণে মিথ্যাচার না করে সত্যটা সামনাসামনি পরিষ্কার করো সৎসাহস থাকলে। যেভাবে আজকে ওপেনলি একপাক্ষিক বক্তব্য দিয়ে সবার সামনে মিথ্যাচার করেছো, সেভাবে সামনাসামনি হয়ে বলো যে তোমাকে বৈষম্যবিরোধীর সকলে সাপোর্ট দিতে চেয়েছে কি না? তুমি গড়িমসি করেছো কি না?সবশেষে তিনি লেখেন, আমি চাই এবার সকল রহস্যের জট খুলুক। ওই তরুণীকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হলে থলের বেড়ালও বের হয়ে আসবে। সাহস এবং প্রমাণ থাকলে, এসে বলো যে আমার পোস্টে বলা কথাগুলো মিথ্যা! এর আগে, শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নারীদের সম্মুখ ভূমিকা নিয়ে ছবি ও তথ্যচিত্রের আর্কাইভ প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে ওই তরুণী অভিযোগ করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্রলীগের নেতাদের ধর্ষণের শিকার হন। একই সঙ্গে সমন্বয়ক থেকে শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রায় সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বিচার পাননি বলে দাবি করেন তিনি।ওই ছাত্রী বলেন, গত ৪ আগস্ট সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চাষাঢ়া গোলচত্বর থেকে ছাত্রলীগের নেতারা আমাকে তুলে নিয়ে যায়। তারা ২০-২৫ জন ছিল। তারা আমাকে টেনেহিঁচড়ে মারতে মারতে তোলারাম কলেজের পাশে তাদের একটি অফিসে নিয়ে যায়। তারা আমার ফোন কেড়ে নেয়, অনেক বাজে কথা শোনায় এবং গালি দেয়।একপর্যায়ে সবাই অফিস থেকে চলে যায় শুধু দুজন থাকে। সে দুজন আমাকে ধর্ষণ করে।

খিলগাঁওয়ে গ্যারেজপট্টির আগুনের উৎস নিয়ে রহস্য, ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ‘অর্ধশত’ কোটি
৩০ বছর আগে রাজধানীর শাহজাহানপুরে হাকিম অটোমোবাইলস নামে গাড়ি মেরামতের একটি ওয়ার্কশপ খুলেছিলেন আব্দুল হাকিম। ১০ বছর পর প্রতিষ্ঠানটি সেখান থেকে স্থানান্তর করে নিয়ে আসেন খিলগাঁওয়ের তালতলা মার্কেট এলাকায়। টানা লেগে থাকার কারণে ব্যবসায় আলোর মুখ দেখেছিলেন তিনি। ৩ বছর আগে হঠাৎ মারা যান তিনি। তখন অর্ধশত কর্মচারী ও প্রতিষ্ঠানটি চালু রাখা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় তার পরিবারের সদস্যরা। হাল না ছেড়ে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব নেন তার স্ত্রী শিরিনা বেগম ও মেয়ে শারমিন আক্তার শিখা। কন্যাকে সঙ্গে নিয়ে শত বাধা পেরিয়ে স্বামীর প্রতিষ্ঠানটি সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন শিরিনা। দীর্ঘদিনের পরিশ্রমে গড়া প্রতিষ্ঠানটি আকস্মিক অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা এলাকার গ্যারেজপট্টিতে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ৯টা ৩৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এতে শুধু হাকিম অটোমোবাইলসই নয়, পুড়ে গেছে আরও ১৭ থেকে ১৮টি গ্যারেজ। অগ্নিকাণ্ডে ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে অনুমান ক্ষতিগ্রস্ত গ্যারেজ মালিক সমিতির। একই সঙ্গে শুক্রবার বন্ধের দিন ও গ্যারেজ মালিক সমিতির পিকনিক থাকায় এ অগ্নিকাণ্ডকে সন্দেহের চোখে দেখছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, বাংলাদেশ গ্যারেজ মালিক সমিতির পিকনিক আয়োজনের জন্য ৬ মাস আগে এই দিনটিতে নির্ধারণ করা ছিল। এদিন সারাদেশ থেকে আসা গ্যারেজ মালিক এবং শ্রমিকরা পিকনিকে গাজীপুরে ছিলেন। কেউ গ্যারেজে না থাকায় এবং চারদিক থেকে আগুন লাগায় এ অগ্নিকাণ্ডকে সন্দেহের চোখে দেখছেন তারা। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানান, গ্যারেজগুলোতে অক্সিজেনের সিলিন্ডার ছিল। আবার গাড়িতে থাকা গ্যাস সিলিন্ডারও ছিল। আগুনে সেগুলো বিস্ফোরিত হয়েছে বলে তাদের ধারণা। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে গেলে দেখা যায়, চারদিকে বিভিন্ন ধরনের পোড়া গাড়ি পড়ে আছে। দোকানের পোড়া টিন আর বিভিন্ন প্রকারের যন্ত্রাংশ জায়গায় জায়গায় পড়ে আছে। এছাড়া গ্যারেজের পাশে থাকা একটি স’ মিল ও সেখানে থাকা বেশ কিছু কাঠ পুড়ে গেছে আগুনে। আগুন থেকে বাঁচতে পারেনি আশেপাশের গাছপালাও। একের পর এক সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুনের স্ফূলিঙ্গ অনেক উপরেও উঠে যায়। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ৩০০ কর্মচারী কাজ করতো। দীর্ঘদিন ধরে গ্যারেজগুলোতে কাজ করা কর্মচারীরা এখন বেকার হয়ে পড়েছেন। পোড়া গ্যারেজের সামনে গালে হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে তাদের কয়েকজনকে। কম বয়সী কিছু গ্যারেজশ্রমিককেও দেখা গেছে। আলিফ, হানিফ, সজল, রাতুল ও রোমান নামে এ শ্রমিকদের সবার বয়সই ১২ থেকে ১৪ বছর। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে কাজে এসেছেন তারা। অভাবের সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে অল্প টাকা বেতনে চাকরি করতো তারা। আগুন তাদের স্বপ্নকেও পুড়িয়ে দিয়েছে। হাকিম অটোমোবাইলসের স্বত্বাধিকারী শারমিন আক্তার শিখা বলেন, আমাদের এই ব্যবসা ৩০ বছরের। আজ আগুন আমাদের সব নিয়ে গেলো। আমরা পথে বসে গেছি। আমাদের গ্যারেজে যে কয়টি গাড়ি ছিল সব মিলিয়ে প্রায় তিন কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কর্মচারীদের বেতন দেবো বলে গতকাল (বৃহস্পতিবার) তিন লাখ টাকা নগদ রেখেছিলাম ক্যাশে। সব ছাই হয়ে গেছে। তিনি বলেন, কীভাবে এত বড় আগুন লাগলো কিছুই বুঝতেছি না। আর সমিতির পিকনিকের দিনেই কেন হবে এ ঘটনা। আমরা মনে করি, এটা পরিকল্পিত। আমরা চাই প্রশাসন যেন তদন্ত করে এর রহস্য বের করে আনে। বাংলাদেশ অটোমোবাইল মালিক সমিতির সভাপতি (অঞ্চলভিত্তিক) ও মাসুম অটো ওয়ার্কশপের মালিক মো. মাসুম বলেন, ছয় মাস আগে আমাদের পিকনিকের একটা পরিকল্পনা করা হয়। গতকাল এই মার্কেটের এবং সারা বাংলাদেশের যত ওয়ার্কশপ মালিক সমিতি আছে সবাই পিকনিকে ছিলাম। কেউই এখানে ছিল না। প্রতিটা ওয়ার্কশপ বন্ধ ছিল। আমরা সকালে এখান থেকেই গাড়ি নিয়ে পিকনিকে চলে গেছি। সন্ধ্যা ৭টার দিকে গ্যারেজে আগুন লাগার খবর পাই। পরে আমরা সবাই সেখান থেকে দ্রুত যে যার মতো চলে এসেছি। এসে দেখি সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, কিছুই অবশিষ্ট পাইনি। তিনি বলেন, আমরা গত ২০ বছর যাবত এখানে ব্যবসা করছি। বিভিন্ন সময়ে আমাদের মার্কেট বন্ধ থাকে। কিন্তু তখন কেউ না কেউ এখানে থাকতো। কোনোদিন সমস্যা হয়নি। কিন্তু কাল কেউ ছিল না, ঠিক এদিনটাতেই আগুন লাগলো। তিনি বলেন, এক পাশে প্রথম আগুন লাগে। সেই আগুন এত দ্রুত অন্য পাশে চলে আসাটা আশ্চর্যজনক লাগছে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে সব পুড়ে গেছে। আমাদের সন্দেহ হচ্ছে। বাংলাদেশ অটোমোবাইল মালিক সমিতির মতিঝিল আঞ্চলিক থানা সভাপতি মো. মুজিবুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা জানতে পারিনি যে কোথা থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটছে। এই ওয়ার্কশপ পল্লীর ১৭টা প্রতিষ্ঠান পুড়ে ছাই হয়েছে। সরকার যদি এই অসহায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর দিকে না তাকায় তাহলে জীবনেও তারা উঠে দাঁড়াতে পারবে না। এ প্রসঙ্গে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দাউদ হোসেন বলেন, গতকালের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি জিডি করা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ড কীভাবে হয়েছে, পরিকল্পিত না দুর্ঘটনা সেটি তদন্তের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের বাইরে আমরা কোনও কিছু বলতে পারবো না। রাসায়নিকে ড্রাম বিস্ফোরণের কারণে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে একটি স’ মিলে লাগা আগুন চারদিক ছড়িয়ে পড়ে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। আগুনের উৎস নিয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেনেন্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, তদন্ত ছাড়া এই মুহূর্তে এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। সিগারেটের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে নাকি সাবোটেজ হয়েছে এই প্রত্যেকটা বিষয়ে আমাদেরকে বিচার করে দেখতে হবে। অনেকগুলো সোর্স থেকে আগুনের সৃষ্টি হতে পারে। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকেও আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।

নতুন সংগঠন ‘জুলাই সংগ্রাম পরিষদ’র আত্মপ্রকাশ
রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে এবং গণঅভ্যুত্থানকে বিপ্লবে পরিণত করার লক্ষ্যে’ ছাত্রজনতার উদ্যোগে ‘জুলাই সংগ্রাম পরিষদ’ নামে নতুন সাংস্কৃতিক সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছে। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকালে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে সংগঠনের আহ্বায়ক আবু বকর সিদ্দীক প্রান্তর বলেন, ‘যে বিচার ব্যবস্থা গণহত্যার বিচার করতে দেরি করছে, সেই বিচার ব্যবস্থার বিপ্লবী সংস্কার করতে হবে। যে আমলাতন্ত্রের কারণে আহত ও শহীদ পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না, সেই আমলাতন্ত্রের পুনর্গঠন করতে হবে। চাকরিবিধি সংস্কার করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। শুধু নিষিদ্ধ করলেই চলবে না, মুজিব ও হাসিনার আদর্শে কোনও রাজনীতি করা যাবে না মর্মে আইন করতে হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী যেমন ডিনাজিফিকেশন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল, তেমনি ডিআওয়ামীফিকেশন করতে হবে।’ সদস্যসচিব মো. মুনতাসির রহমান বলেন, ‘৫ আগস্টের পর আমরা সবাই ঘরে ফিরে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম যারা নেতৃত্ব আছে তারা বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গড়ে তুলবে এবং আমাদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি ৬ মাস পরও বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হয়নি। তাই আমরা জুলাই সংগ্রাম পরিষদ নিয়ে সামনে এসেছি।’ সংগঠনের মুখপাত্র নফিউল ইসলাম বলেন, ‘২ হাজারের কাছাকাছি মানুষের জীবন ত্যাগ, অসংখ্য শ্রমিক-ছাত্র-জনতার পঙ্গুত্ব বরণের মধ্যে দিয়ে গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে, আমরা হাসিনাকে উৎখাত করতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানকে বিজয়ী গণঅভ্যুত্থানে পরিণত করতে আমরা পারিনি, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার নামে গণঅভ্যুত্থানকে ফ্যাসিস্ট সংবিধানের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলা হয়েছে। এখনকার আমাদের লড়াই ও রাজনীতি হচ্ছে গণঅভ্যুত্থানকে বিজয়ী গণঅভ্যুত্থান পরিণত করা, তার জন্য যে ধরনের রাজনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক তৎপরতা দরকার তা করতে হবে।’ এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- জুলাই সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মোহাম্মদ মাসুদ হাসান সুইট, মাহফুর আর রহমান, আজহার উদ্দিন লিংকন, ইয়াসির আরাফাত, ফারদিন ইফতেখার, আসলাম সিদ্দিকী, সালাহ উদ্দীন গালিব, নাভিদ নওরোজ, এম আই রাসেল, জসিম উদ্দিন, মো. শফিকুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান হাবিব, আফজালুর রহমান সাজিদ, আমিনুল হুদা, মো. এনামুল হকসহ কেন্দ্রীয় কমিটির অন্য সদস্যরা।

আজহারের মুক্তির দাবিতে জামায়াত আমিরের স্বেচ্ছায় কারাবরণের ঘোষণা
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কারাবন্দি নেতা সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে জামিন দেওয়া নিয়ে বার বার কালক্ষেপণ করায় স্বেচ্ছায় কারাবরণের ঘোষণা দিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) নিজের ফেসবুকে দেওয়া এক বার্তায় এ ঘোষণা দেন তিনি। বার্তায় ডা. শফিকুর রহমান বলেন, প্রিয় দলীয় সহকর্মী ও সম্মানিত দেশবাসী, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, ফ্যাসিবাদের নিষ্ঠুর জুলুমের শিকার মজলুম জননেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম সাহেব এখনও কারাবন্দি রয়েছেন। তিনি বলেন, একে একে সব জাতীয় নেতা মুক্তি পেলেও তিনি বৈষম্য ও জুলুমের শিকার হয়ে বন্দি জীবনের কঠিন বোঝা বহন করে চলেছেন। তাকে কারাগারে রেখে বাইরে অবস্থান করা আমার পক্ষে আর একেবারেই সম্ভব নয়। আমরা সরকারকে যথেষ্ট সময় দিয়েছি। সেচ্ছায় গ্রেফতার হওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, এ জুলুমের প্রতিবাদে এবং এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে আমি নিজে গ্রেফতার হওয়ার জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির থাকবো। তিনি আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা নেবেন। সময় মতো আমাকে যথাস্থানে পাবেন, ইনশাআল্লাহ।

কাজী সায়েমুজ্জামানকে দুদক থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক কাজী মো. সায়েমুজ্জামানকে সংস্থাটি থেকে বদলি করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে তাকে বদলির এ আদেশ দেওয়া হয়। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে তাকে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হিসেবে বদলির আদেশ দেওয়া হয়। সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরী ওরফে এস কে সুরের বাসায় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের লকারে অভিযান চালিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন কাজী সায়েমুজ্জামান। এ ছাড়াও তিনি পি কে হালদারসহ বেশ কিছু আলোচিত আর্থিক দুর্নীতির মামলা তদারকি করেছিলেন। এসব তল্লাশি নিয়ে সায়েমুজ্জামানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে দুদকে নালিশ করা হয়। নালিশে বলা হয়, তিনি অভিযানের বিষয়ে ফেসবুকে লেখালেখি করে নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন। এই অভিযোগের দুই সপ্তাহের মাথায় তাকে দুদক থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো।
/sp-.webp)
কুষ্টিয়ার সাবেক এসপি তানভীর সাময়িক বরখাস্ত
কুষ্টিয়ার সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম তানভীর আরাফাতকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপনে সই করেন সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতকে (সাবেক পুলিশ সুপার কুষ্টিয়া) কুষ্টিয়া সদর থানার মামলায় গত ২৬ ডিসেম্বর গ্রেফতার করা হয়। একই দিন আদালতে হাজির করা হলে তাকে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান আদালত। তাই সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ (২০১৮ সালের ৫৭ নং আইন) এর ৩৯ (২) ধারার বিধান মোতাবেক সরকারি চাকরি থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি সিলেট রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত থাকবেন এবং বিধি অনুযায়ী খোরপোশ ভাতা পাবেন বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।

ঢাকার বাতাস আজ ‘অস্বাস্থ্যকর’: আইকিউএয়ার
বিশ্বের ১২৫টি শহরের মধ্যে আজ রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বায়ুদূষণে শীর্ষস্থানে রয়েছে ভারতের রাজধানী দিল্লি। আইকিউএয়ারের বাতাসের মান সূচকে এসময় দিল্লির স্কোর ৩৭৮। বায়ুর এই মানকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়। ৩১৯ স্কোর নিয়ে ২য় স্থানে অবস্থান করছে পাকিস্তানের লাহোর। বাতাসের মানসূচকে যা ‘ খুবই অস্বাস্থ্যকর’। অন্যদিকে ১৯৭ স্কোর নিয়ে তালিকার ৩য় স্থানে অবস্থান করছে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু। এই স্কোরকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়। রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের ওয়েবসাইটে বায়ুদূষণের এই তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে হালনাগাদ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ১৮৪ স্কোর নিয়ে তালিকার ৪র্থ স্থানে অবস্থান করছে ভারতের কলকাতা। বায়ুর এই স্কোরকেও ‘অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়। এছাড়া ১৮৩ স্কোর নিয়ে তালিকার ৫ম স্থানে অবস্থান করছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। বায়ুর এই মানও ‘অস্বাস্থ্যকর’। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং সতর্ক করে। আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, স্কোর ৫১ থেকে ১০০ হলে তাকে ‘মাঝারি’ বা ‘গ্রহণযোগ্য’ মানের বায়ু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরকে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে তাকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু ধরা হয়। ৩০১ থেকে তার ওপরের স্কোরকে ‘বিপজ্জনক’ বা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ধরা হয়। ঢাকার বায়ুদূষণ থেকে বাঁচতে আইকিউএয়ার যে পরামর্শ দিয়েছে, তার মধ্যে আছে ঘরের বাইরে গেলে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর মানুষদের মাস্ক পরতে হবে। এ ছাড়া ঘরের বাইরে ব্যায়াম না করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

রবিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ
নানা প্রয়োজনে ঢাকার বাসিন্দারা দোকানপাট ও মার্কেট যান। কিন্তু তীব্র যানজট পেরিয়ে গিয়ে যদি দেখতে পান সব দোকানপাট বন্ধ, তাহলে বিফলে যাবে সব। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক রবিবার কোন কোন রাজধানীর এলাকায় দোকানপাট ও মার্কেট বন্ধ থাকবে। যেসব এলাকার দোকানপাট বন্ধ আগারগাঁও, তালতলা, শেরেবাংলা নগর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, পল্লবী, মিরপুর-১০, মিরপুর-১১, মিরপুর-১২, মিরপুর-১৩, মিরপুর-১৪, ইব্রাহীমপুর, কচুক্ষেত, কাফরুল, মহাখালী, নিউ ডিওএইচএস, ওল্ড ডিওএইচএস, কাকলী, তেজগাঁও ওল্ড এয়ারপোর্ট অঞ্চল, তেজগাঁও শিল্প অঞ্চল, ক্যান্টনমেন্ট, গুলশান-১, ২, বনানী, মহাখালী বাণিজ্যিক অঞ্চল, নাখালপাড়া, মহাখালী ইন্টারসিটি বাস টার্মিনাল অঞ্চল, রামপুরা, বনশ্রী, খিলগাঁও, গোড়ান, মালিবাগের একাংশ, বাসাবো, ধলপুর, সায়েদাবাদ, মাদারটেক, মুগদা, কমলাপুরের একাংশ, যাত্রাবাড়ীর একাংশ, শনির আখড়া, দনিয়া, রায়েরবাগ, সানারপাড়। বন্ধ থাকবে যেসব মার্কেট বিসিএস কম্পিউটার সিটি (আইডিবি), পল্লবী সুপার মার্কেট, মিরপুর বেনারসী পল্লী, ইব্রাহীমপুর বাজার, রজনীগন্ধা মার্কেট, ইউএই মৈত্রী কমপ্লেক্স, বনানী সুপার মার্কেট, ডিসিসি মার্কেট গুলশান-১ এবং ২, গুলশান পিংক সিটি, মোল্লা টাওয়ার, আল-আমিন সুপার মার্কেট, রামপুরা সুপার মার্কেট, মালিবাগ সুপার মার্কেট, তালতলা সিটি করপোরেশন মার্কেট, কমলাপুর স্টেডিয়াম মার্কেট, গোড়ান বাজার, আবেদিন টাওয়ার, ঢাকা শপিং সেন্টার, আয়েশা মোশারফ শপিং কমপ্লেক্স, মিতালী অ্যান্ড ফ্রেন্ডস সুপার মার্কেট।
/d-t-d.jpg)
কেমন থাকবে আজ ঢাকার আবহাওয়া
বসন্তের হিমেল হাওয়া এখনো শীতের জানান দিচ্ছে। এ অবস্থায় রাজধানীতে রাতের তাপমাত্রা সাধারণত অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য ৬ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য দেওয়া হয়। পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে মেঘলা থাকতে পারে। সেই সঙ্গে প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সেই সঙ্গে রাতের তাপমাত্রা সাধারণত অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এ অবস্থায় সারাদেশে আজ শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। শেষরাত থেকে ভোর পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেতে পারে।
/t-s.jpg)
শেখ হাসিনাকে 'ডেভিল রাণী` বললেন সোহেল তাজ
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ সম্প্রতি তার ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের আলোকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সমালোচনা করেছেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর অভিযানে প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। এছাড়াও, ১১,৭০০ জনেরও বেশি মানুষকে আটক করা হয়, এবং নিহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু ছিল। সোহেল তাজ তার স্ট্যাটাসের শেষে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এখন দেখার বিষয় আওয়ামী জোম্বিলবডিলীগ (Zombieleague) এর ব্রেইনওয়াশড জোম্বিরা জাতিসংঘের এই রিপোর্ট এর পর কি ভাবে তাদের জোম্বি/ডেভিল রানীর ছাফাই গাবে।’ জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সিস্টেমেটিকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, যা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয় যে, নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে, যার ফলে অনেক প্রাণহানি ও আহতের ঘটনা ঘটেছে।
/road accident.jpg)
যাত্রাবাড়ীতে গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ গেলো যুবকের
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মো. রিংকু (২২) নামে যুবক নিহত হয়েছে। তিনি কাঠমিস্ত্রীর কাজ করতেন। যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আওলাদ হোসেন তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ভোরে যাত্রাবাড়ীতে আল ফারুক সিএনজি ফিলিং স্টেশনের বিপরীত পাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির কোনও যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। খবর পেয়ে সেখান থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে আইনি প্রক্রিয়া শেষে ময়নাতদন্তের জন্য দুপুর ২টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে। মৃতের স্ত্রী জান্নাতুল আক্তার সাবিহার বরাত দিয়ে এসআই আরও বলেন, ‘মৃত রিংকু সানারপাড়ে একটি টিনশেড বাসায় ভাড়া থাকতেন। তিনি শবে বরাত উপলক্ষে রোজা রাখার জন্য ভোরে সেহেরি খেয়ে নামাজ পড়তে বের হয়েছিল। এসময় সড়কে কোনও যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান।’ তবে কোন গাড়ি তাকে চাপা দিয়ে পালিয়ে গেছে, তা তাৎক্ষণিক শনাক্ত করা যায়নি বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। মৃত রিংকু যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার কালিকুড়ি গ্রামের আব্দুল আলীমের ছেলে।
/book-fair-bo.jpg)
বসন্তের রঙে রঙিন বইমেলা
নাগরিক প্রাণে দোলা দিচ্ছে বসন্ত আর ভালোবাসা দিবস। দুই উৎসবের বাতাসে রঙিন বইমেলা। তবে অমর একুশের বইমেলায় বসন্তের রঙের ছোঁয়া লেগেছিল গতকালই। বেলা তিনটায় মেলার দ্বার খোলার পর থেকেই দলে দলে সুসজ্জিত নারী–পুরুষ আসতে থাকেন মেলা প্রাঙ্গণে। কিশোরী, তরুণী থেকে গৃহিণী—অধিকাংশ নারীর পরনেই ছিল বাসন্তী রঙের শাড়ি। মেলায় প্রবেশপথের সামনেই সারি দিয়ে বসেছে গাঁদা-গোলাপসহ মৌসুমি ফুলের পসরা। সেখান থেকে মালা বা ফুলের রিং কিনে তারা বসন্তের সাজ পূর্ণ করেছেন রঙিন ফুলে ফুলে। পুরুষদের পরনেও ছিল সঙ্গিনীর সঙ্গে মানানসই পাঞ্জাবি বা উজ্জ্বল রঙের পোশাক। তাতেই বসন্তের রঙিন আভাস ছড়িয়ে পড়েছিল বইমেলায়। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) মেলা আজ আরও বর্ণাঢ্য হয়ে উঠেছে সকাল থেকেই। ছুটির দিনে পড়েছে বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস। বেলা ১১টা থেকে মেলা শুরু হয় শিশুপ্রহর দিয়ে। শিশুপ্রহর চলবে বেলা একটা পর্যন্ত। পবিত্র শবে বরাতের কারণে মেলা রাত নয়টার পরিবর্তে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শেষ হবে। গতকাল মেলায় যেমন প্রাক্–বসন্তের রং লেগেছিল, তেমনি বিক্রিও বেড়েছিল আগের দিনের চেয়ে। সাধারণ গ্রন্থানুরাগীরা ছাড়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান সন্ধ্যায় এসেছিলেন বইমেলায়। তিনি মেলার বেশ কিছু স্টল ঘুরে দেখেন। সাংবাদিকদের বলেন, সব বয়সের পাঠকদের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি তরুণদের পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে প্রেরণা দিয়ে সবার মঙ্গল কামনা করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম, সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলামসহ নেতা-কর্মীরা। গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ৮৫টি। উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে কথা প্রকাশ এনেছে আহমাদ মোস্তফা কামালের গল্প রূপ নারানের কূলে; ঐতিহ্য এনেছে আলতাফ শাহনেওয়াজের কবিতার বই তবু আমরা জেগে থাকবো; প্রথমা এনেছে খন্দকার স্বনন শাহরিয়ারের উপন্যাস যেখানে সীমান্ত তোমার; পাঞ্জেরী এনেছে মনি হায়দারের কিশোর উপন্যাস উড়িতেছে সোনার ঘোড়া এবং পাঠক সমাবেশ এনেছে আবুল আহসান চৌধুরী সম্পাদিত বিশ শতকের কথাশিল্পী ফজলুর বারি চৌধুরীর আগুনের খেলা ও অন্যান্য গল্প। বাংলা একাডেমির সচিব ও বইমেলার টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক ড. সেলিম রেজা বলেন, বেচাকেনা কম হলেও নতুন বই প্রকাশের কমতি নেই। ১২ ফেব্রুয়ারি ৯১টি নতুন বইয়ের নাম এসেছে মেলার তথ্যকেন্দ্রে। উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে বাঙ্গালা গবেষণা এনেছে আবুল কাসেম ফজলুল হকের প্রবন্ধ আধুনিকতাবাদ ও জীবনানন্দের জীবনোৎকণ্ঠা, মাওলা ব্রাদার্স এনেছে মশিউল আলমের সঞ্চায়ন ও অনুবাদে বিষয় দস্তইয়েফ্স্কি, প্রথমা এনেছে আবুল বাসারের বিজ্ঞানভিত্তিক বই আবিষ্কারের কাহিনি, ঐতিহ্য এনেছে আনোয়ারা সৈয়দ হকের আত্মজৈবনিক দহসী জীবন, চৈতন্য এনেছে পার্থ প্রতীম নাথের পরিবেশবিষয়ক প্রবন্ধ রাতারগুলের ছাতা, আহমদ পাবলিশিং হাউস এনেছে মাহমুদুর রহমানের মোগল সম্রাটদের নিয়ে ঐতিহাসিক উপন্যাস মোগলনামা, অভিযান এনেছে সঞ্জয় দেওয়ানের কবিতা জলের ক্যালিগ্রাফি, আগামী এনেছে ফরহাদ মজহারের কবিতা আমাকে তুমি দাঁড় করিয়ে দিয়েছ বিপ্লবের সামনে, অনুপম এনেছে মৃত্যুঞ্জয় রায়ের জীববিজ্ঞানবিষয়ক সুন্দরবনের প্রাণী বৈচিত্র্য, ময়ূরপঙ্খি এনেছে শিশুতোষ গল্প আমি সত্য কথা বলতে চাই, জাগৃতি এনেছে আফজাল হোসেনের উপন্যাস কারিন।
/bosonto.jpg)
বর্ণিল বসন্ত উৎসব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
ফাগুনের আলোরাঙা প্রভাত; ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় বসন্তকে বরণ করে নিতে বসন্ত উৎসব আয়োজন করেছে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদ্যাপন পরিষদ। একই উৎসব সমগীত সঙ্গীতব্যান্ড আয়োজন করেছে বটতলায়। গান, দলীয় নাচ, কবিতার মধ্য দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয় ঋতুরাজ বসন্তকে। চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় আজ শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৭টায় শুরু হয় ‘বসন্ত উৎসব ১৪৩১ ’, শেষ হয় দুপুর ১২টায়। সমবেত বাদ্যযন্ত্র, বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা হয়। উৎসবে দেশের অগ্রগণ্য নৃত্য ও সংগীতের দলসমূহ, একক বরেণ্য শিল্পীবৃন্দ, শিশু-কিশোরদের পরিবেশনা ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিবেশনা ছাড়াও বসন্ত কথন পর্ব, প্রীতি বন্ধনী বিনিময়, আবির বিনিময়সহ নানা কার্যক্রম রাখা হয়। বসন্ত কথন পর্বে সভাপতিত্ব করেন, বসন্ত উৎসব উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি স্থপতি সফিউদ্দিন আহমদ, বক্তব্য দেন সহসভাপতি কাজল দেবনাথ ও সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইটসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তি। সমগ্র অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন নায়লা তারাননুম চৌধুরি কাকলি ও আহসান দিপু। উৎসবটিকে ঘিরে উৎসবমুখর রাজধানীর নানা স্থান থেকে আগত সংস্কৃতি প্রেমিক মানুষ। তাদের প্রত্যাশা বসন্ত উৎসব দেশের সংস্কৃতিতে বৈচিত্র্য নিয়ে আসবে; পারস্পরিক দূরত্ব ঘোচাতে সাহায্য করবে। সংগীতশিল্পী সমর বড়ুয়া বলেন, ‘দেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত বসন্ত উৎসব। এ দেশের অনিন্দ্য সুন্দর প্রকৃতি আর ঋতু বৈচিত্র্যকে ধারণ করে এই উৎসব। বাঙালি জাতির জীবনে যেকোনো উৎসবের চেয়ে এই উৎসবের তাৎপর্য কোনো অংশে কম নয়।’ সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য শ্যামলী বড়ুয়া বলেন, ‘বসন্ত উৎসব একটি মিলন মেলা। ধর্ম-বর্ণ-মতের ঊর্ধ্বে গিয়ে বসন্ত উৎসবের আনন্দ। জীবনের অনেকটা সময় ধরে আমরা নানা ঝামেলা নিয়ে থাকি। সবকিছুকে পাশ কাটিয়ে বসন্তের এই রঙিন মেলায় একত্রিত হই। এই রং আমাদের মনকে ভালো করে দেয়। এই যে এতগুলো মানুষের চোখেমুখে আনন্দ, এই আনন্দ জীবনের সকল ক্লান্তি দূর করে দেয়।’ শান্তিনগর থেকে আসা ব্যবসায়ী উজ্জ্বল বালো বলেন, ‘বসন্ত উৎসব বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিকে রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি এমন একটি উৎসব, যে উৎসব কোথাও বিরোধ তৈরি করে না। এ উৎসব এই বাংলার মাটি ও মানুষের জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এটি পরস্পরকে কাছে টানে, দূরত্বকে ঘুচিয়ে আনে।’ কলাভবনের বটতলায় প্রতিবছরের মতো এবারও বসন্ত উৎসবের আয়োজন করেছে সমগীত সংগীত ব্যান্ড। ‘পৃথিবীর নদী, বন কিংবা পাহাড়, মানুষ মালিক নয়, বন্ধু তাহার’ এই আহ্বানে সমগীত বসন্ত উৎসব উদ্যাপন করেছে তারা। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়েছে এই আয়োজন, চলবে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। সমগীত সতেরো বছর ধরে এই আয়োজন করে আসছে। এবারের আয়োজনে ‘সমগীত শ্রদ্ধার্ঘ্য’ গ্রহণ করবেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। শ্রদ্ধার্ঘ্য আয়োজনে আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীর। সমগীতের এই আয়োজনে গান গেয়েছেন শিল্পী কফিল আহমেদ, লীলা, কৃষ্ণকলি, সায়ান, সমগীত, আদিবাসী ব্যান্ড রেরে, সুডোস অন আ রং রুট, অমৌলিক, গঙ্গাফড়িং। এ ছাড়া নৃত্য নিয়ে ছিলেন আকরামুল হিজড়া, এবং সাচিং মং মারমা। যন্ত্রসংগীতে ছিলেন বিদ্যুৎ সরকার ও পিয়াস আকবর। আয়োজন নিয়ে সমগীতের সভাপতি কমল আকাশ বলেন, দেশের সব সংস্কৃতির মিলনমেলা ঘটে আমাদের এই আয়োজনে। এই উৎসব আমাদের প্রকৃতির প্রাণ উপলব্ধি করতে শেখায়। আজকাল আমরা বৈচিত্র্যময় ছয় ঋতুকে অনুভব করতে ভুলে যাই। সবচেয়ে রঙিন ঋতু বসন্তকে উপলব্ধির মাধ্যমে আমাদের সেই সংকট কাটাতে চাই। প্রকৃতির প্রতি যত্নশীল হওয়ার এবং প্রকৃতিকে রক্ষা করার প্রতি সবাইকে উদ্বুদ্ধ করাও এই আয়োজনের অন্যতম লক্ষ্য।