আওয়ামী লীগের আমলের গুম নিয়ে যে আশঙ্কার কথা জানালেন ড. ইউনূস
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৮:০৮ পিএম, ১৭ নভেম্বর ২০২৪
এখন পর্যন্ত এক হাজার ৬০০ গুম হওয়া মানুষের তথ্য পেয়েছে গুমের তদন্তে গঠিত কমিশন। বিগত আওয়ামী লীগের শাসন আমলে গুম হওয়া মানুষের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০তম দিন উপলক্ষে রোববার (নভেম্বর ১৭) সন্ধ্যা সাতটায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এ তথ্য জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা গুমের তদন্তে একটি কমিশন গঠন করেছি। কমিশন প্রধান আমাকে জানিয়েছেন অক্টোবর পর্যন্ত তারা এক হাজার ৬০০ গুমের তথ্য পেয়েছেন। তাদের ধারণা এই সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার ছাড়িয়ে যাবে।’
গুমের শিকার হওয়া অনেকে অভিযোগ করতে ভয় পাচ্ছেন জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘অনেকেই কমিশনের কাছে গুমের অভিযোগ করতে ভয় পাচ্ছেন এই ভেবে যে, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্বারা তারা ফের আক্রান্ত হতে পারেন, ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।’
সকলকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আপনারা দ্বিধাহীন চিত্তে কমিশনকে আপনাদের অভিযোগ জানান। কারো সাধ্য নেই আপনাদের গায়ে ফের হাত দেয়।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘গুম কমিশনের সদস্যদের কাছে ভুক্তভোগীদের যে বিবরণ আমরা পেয়েছি, তা অত্যন্ত মর্মান্তিক। জুলাই-আগেস্টের বিপ্লবের পর ছাত্র-ছাত্রীরা শহর বন্দরের দেয়ালে- দেয়ালে তাদের মনের কথা লিখেছে। তাদেরও পূর্বে যারা গুমের শিকার হয়েছে, প্রতিটি গোপন আস্তানার দেয়ালে- দেয়ালে তারা লিখে গেছেন রেখেছেন, তাদের কষ্টের মর্মস্পর্শী বিবরণ। তাদের এসব কষ্টের কথা শুনে আমাদের হৃদয় কেঁপে উঠেছে।’
তিনি বলেন, ‘এসবের সাথে জড়িতদের আমরা বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবই। অভিযুক্ত যতই শক্তিশালী হোক, যে বাহিনীরই হোক তাকে ছাড় দেওয়ার কোন সুযোগ নেই।’
কেবল দেশে নয়, গুম, খুন ও জুলাই-আগস্ট গণহত্যার সাথে জড়িতদের আন্তর্জাতিক আদালতেও বিচারের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের প্রধান কৌশলী করিম খানের সাথে আমার এ বিষয়ে ইতোমধ্যে কথা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কেবল জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডই নয়, আমরা গত ১৫ বছরে সব অপকর্মের বিচার করব। অসংখ্য মানুষ গুম হয়েছে, খুন হয়েছে এই সময়ে।’
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর কোন সদস্য কিংবা অন্য কেউ যাতে হত্যা, গুমসহ এ ধরনের কোন অপরাধে জড়িয়ে পড়তে না পারে, এ জন্য গুম বিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে সই করার কথা উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন। জাতিসংঘ জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের তদন্তে আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই তারা আমাদেরকে তাদের রিপোর্ট হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।’
ড. ইউনূস জানান, অতীতের গুমের ঘটনাগুলো তদন্ত কাজেও আমরা নিয়মিত তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। মানবাধিকার রক্ষায় সহযোগিতা করতে ঢাকায় তারা তাদের জনবল বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা এই প্রস্তাব গ্রহণ করেছি।’