ট্রাম্পের সাথে কখনো দেখা হয়নি ড. ইউনূসের, তবে.....
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৫:১৪ পিএম, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রের পুনরায় নির্বাচিত নয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে কখনো কথা হয়নি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে, তিনি জানিয়েছেন, রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক উভয় দলেই তার বন্ধু আছেন।
সম্প্রতি আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ- ২৯-এর ফাঁকে কাতারভিত্তিক সংবাদ সংস্থা আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান ড. ইউনূস। রোববার (১৭ নভেম্বর) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়।
২৮ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের সাক্ষাৎকারে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে সৃষ্ট সংকট, অন্তর্বর্তী সরকার, চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া, আগামী নির্বাচন, সংখ্যালঘু পরিস্থিতি, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পর্ক কেমন হতে পারে- এমন বহু ব্যাপারে কথা বলেছেন মুহাম্মদ ইউনূস।
সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে দেশের সংখ্যালঘুদের অধিকারের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয় ড. ইউনূসকে। সেখানে বলা হয়, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।’
এ ব্যাপারে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে পূর্ণ মনোযোগ রাখছি। আর সংখ্যালঘুরা এ দেশের নাগরিক। তাই, তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই, সংবিধান আপনাকে আপনার অধিকার দিয়েছে, স্বাধীনতা দিয়েছে, নিজেকে প্রকাশ করার অধিকার দিয়েছে, নিজের ধর্ম পালনের অধিকার দিয়েছে। তাই, সরকার হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হল সংবিধানে যে-সব অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো যাতে নাগরিকেরা ভোগ করতে পারে, তা নিশ্চিত করা।’
তবে সাক্ষাৎকারে উপদেষ্টাকে পালটা প্রশ্নে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা বাড়ছে।’ এর উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, ‘সহিংসতা বাড়েনি। আমি বলব, সহিংসতা কমেছে। বিপ্লবের সময় সহিংসতা শুরু হয়েছিল। হিন্দু বা অন্যান্য ধর্মাবলম্বী হওয়ার কারণে তাদের ওপর সহিংসতা হয়নি। বরং, তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের লোক ছিল। সুতরাং, সহিংসতা হয়েছিল আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগের লোকজনের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল।’
এ ব্যাপারটিকে কীভাবে সামাল দিচ্ছেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা একে অপরের মধ্যে কোন বিভক্তি সৃষ্টি করিনি। বরং, আমরা বলেছি, আমরা সকলে মিলে একটি পরিবার। আমাদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। কিন্তু, তার অর্থ এই নয় যে, আমরা একে অপরের শত্রু। আমাদের আইন আছে, অধিকার আছে। আমাদের দায়িত্ব হল সব নাগরিকের সব অধিকার নিশ্চিত করা।’
সাক্ষাৎকারের এ পর্যায়ে ডোনাল ট্রাম্পের প্রসঙ্গ আসে। ড. ইউনূসের সাক্ষাৎকার নেওয়া উপস্থাপক জানান, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের সাথে যে আচরণ করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের পূর্বে ট্রাম্প তার নিন্দা জানিয়েছিলেন।
এ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এগুলোর বেশিরভাগই ছিল প্রোপাগান্ডা (অপপ্রচার)। এগুলো ভিত্তিহীন ও দুর্ভাগ্যজনক। আর এসব অপপ্রচারের বেশির ভাগই হয়েছে ভারতে। সম্ভবত এ উত্তেজনা জিইয়ে রাখতেই এটা করা হয়েছে। কিন্তু, বাস্তবে এর কোন অস্তিত্ব নেই। হিন্দুদের সবচেয়ে বড় পূজা হাজার হাজার স্থানে উৎসবমুখর পরিবেশে কোন অঘটন ছাড়াই উদযাপিত হয়েছে।’
ট্রাম্পের সাথে উত্তেজনা থাকা ও তা মোকাবিলা করা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ট্রাম্পের সাথে আমার পূর্বে কখনো কথা হয়নি। তাই, ব্যক্তিগতভাবে তার সাথে আমার কোন সমস্যা নেই। আর আপনি যদি রিপাবলিকান দলের কথা বলেন, তাহলে বলব, আমার ডেমোক্রেটিক পার্টিতে যেমন বন্ধু আছে, তেমনি রিপাবলিকান পার্টিতেও বন্ধু রয়েছে। আমাকে হাউস (মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ) কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল দিয়েছিল। এ নিয়ে উভয় পার্টির সদস্যরা একমত হয়ে এ পুরস্কার দিয়েছিলেন। তাই, আপনি যদি রিপাবলিকান বা ডেমোক্রেটিক বা ট্রাম্পকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে বলেন, তাহলে আমি বলব আসলে এখানে নেতিবাচক তেমন কিছু নেই। আর আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি প্রেসিডেন্টের ওপর নির্ভর করে না। তাই, নতুন প্রেসিডেন্ট আসায় এর তেমন কোন পরিবর্তন আসবে না, এটি স্থিতিশীলই থাকবে।’
ড. ইউনূসের এমন উত্তরের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন করা হয়, ‘তাহলে আপনি কি মনে করেন না, ট্রাম্প এ অঞ্চলের বিষয়ে একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিতে পারেন?’
এর জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি তেমনটা মনে করি না। একেবারেই না।’
উপস্থাপক আরো বলেন, ‘শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন, তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ছিল। বাইডেন প্রশাসন এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।’
এ নিয়ে ড. ইউনূস উপস্থাপককে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ওই সময়টাতে বাংলাদেশে থেকে এমনটা ভাবতে গেলে আপনাকে অবশ্যই পাগল হতে হবে। কারণ, সেসময় শিক্ষার্থীরা রাজপথে বিক্ষোভ করেছেন, প্রাণ দিয়েছেন। তারা ক্ষুব্ধ। সবাই তখন সবদিক থেকে শেখ হাসিনার বাড়ির দিকে যাচ্ছিল। সেসময় তার পরিবারই তাকে পালাতে বলেছে। না হলে আন্দোলনকারীরা তাদের পুরো বাড়ি দখল করে ফেলবে। এ পরিস্থিতিতে দেশ থেকে বের হয়ে ভারতে চলে যেতে শেখ হাসিনাকে সহায়তা করেছিল সেনাবাহিনী। এভাবেই বিষয়টি ঘটেছিল। এটা ছিল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। আর তাতে দেশের সব মানুষ যোগ দিয়েছিল।’
ঘটনা যখন ঘটে সে বিষয়ে অবাক হয়েছিলেন কিনা এমন প্রশ্নে ড. ইউনূস বলেন, ‘প্রথমত আমি তখন দেশে ছিলাম না। তাই, ঘণ্টায় ঘণ্টায় কী ঘটছিল, তা আমি জানতে পারছিলাম না। গণমাধ্যমে যা আসছিল, আমি শুধু তা-ই জানতে পারছিলাম। আমি চূড়ান্ত ফলাফল জানতে পেয়েছিলাম। কারণ, আমাকে সরকার গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমাকে ফোন করে বলা হয়েছিল, আমরা আপনাকে সরকার গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানাই। এ পরিস্থিতিতে দেশে তিন দিন সরকার ছিল না। কারণ, আমি দেশে ছিলাম না। দেশে আসার পর আমি শপথ নিই। এভাবে সরকার গঠিত হয়। সুতরাং, তখন এ অনিশ্চয়তা, অপ্রত্যাশিত বিভিন্ন ঘটনা ঘটছিল। এ সবকিছু ঘটানোর জন্য কেউ কোথাও থেকে পরিকল্পনা করেনি। এ রকম কিছু ঘটেনি।’