বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা নিয়ে অসন্তুষ্টি ও ক্ষোভ অংশীজনদের


30 November/Shahajalal Third Termina Biman.jpg

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ‘তৃতীয় টার্মিনাল: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে শাহজালাল বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১ ও টার্মিনাল-২-এ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা নিয়ে অসন্তুষ্টি ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অংশীজনেরা। বিমানের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান দিয়ে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

এভিয়েশন এন্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশের (এটিজেএফবি)  আয়োজনে  ‘তৃতীয় টার্মিনাল: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এ বৈঠক সোমবার (২ ডিসেম্বর) লা মেরিডিয়ান ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়।  

বৈঠকে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এভিয়েশন অপারেটর’স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) সেক্রেটারি জেনারেল ও নভোএয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন এটিজেএফবির সভাপতি তানজীম আনোয়ার। 

বৈঠকে অন্তবর্তী সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হাসান আরিফ, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়াসহ শাহজালাল বিমানবন্দরের অংশীজনেরা অংশ নেন।

বৈঠকে হাসান আরিফ বলেন, ‘বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ে সক্ষমতার বিষয়টি আমরা দেখব। দুই বছর যে আমরা হাত দিয়ে বসে থাকব, বিষয়টা এমন নয়। যদি তার সক্ষমতার ঘাটতি হয়, বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

তিনি তৃতীয় টার্মিনাল চালু হতে আরও এক বছর লাগবে বলে জানান।

উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ বিমানের তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হেন্ডলিং মত সক্ষমতা আছে কি নেই, এটা প্রাথমিকভাবে পারসেপশনের একটি বিষয়। তার কারণ, বিমানের এত দিন যে সার্ভিস আমরা পেয়ে আসছি, সেটা মনপুত না। একটি কমন অভিযোগ, আমি টিকিট পাই না। কিন্তু, বিমানে উঠে দেখি পুরো বিমান ফাঁকা। বিমান যেহেতু এখন আমার দায়িত্বে, সক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যাপারে কি কি পদক্ষেপ নিতে হবে, সেগুলো নিয়ে গতকাল আলোচনা করেছি। শুধু আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না, আমি এগুলোর ইনেশপেকশনে যাই। আমাকে আপনার মুভিং কন্ট্রোল রুম বলতে পারেন। যদি বিমানের সক্ষমতার অভাব হয়, সেটার বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করব।’

হাসান আরিফ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল তৈরিতে ২৩ হাজার কোটি ব্যয় হয়েছে। একটি কি-নোট পেপারে দেখলাম দূর্নীতি না হলে এত টাকা খরচ হওয়া কথা না। নিশ্চয়ই আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’

তিনি বলেন, ‘সবকিছুতেই সংস্কারের একটি বিষয় আসছে। দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) সংস্কার করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বিষয় যেটি বিগত সরকারের ১৭ বছরে ঘটেছে, সেগুলোর শেত্বপত্র আসছে। সেভাবে বিমানেরও শেত্বপত্র আসবে। শেত্বপত্র মানে শুধু অভিযোগই আনা না, এটি আত্মশুদ্ধির একটি প্রক্রিয়া।’

মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, ‘শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালসহ দেশের সব টার্মিনালগুলোকে উন্নত করার জন্য বেবিচক কাজ করছে। এসব টার্মিনালের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য উপদেষ্টার সাথে আমাদের কথা হয়েছে। এখন শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল চালু জাতির কাছে একটা স্বপ্ন। তবে এ জন্য বেবিচক বসে নেই। সংশ্লিষ্ট সবাই কাজ করে যাচ্ছেন।’

এর আগে প্রবন্ধে মফিজুর রহমান বলেন, ‘সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বিমানের জিম্মায় তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা দুই বছরের জন্য প্রদানের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জোর বিতর্ক চলমান ও তা যৌক্তিক। তৃতীয় টার্মিনাল অপারেশনের ক্ষেত্রে যেন রাজনীতির উপর অপারেশনাল বিষয় প্রাধান্য পায়, তার জোর দাবি রাখব।’

তিনি আরো বলেন, ‘তৃতীয় টার্মিনাল গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা ও টার্মিনাল অপারেশন উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বর্তমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং মনোপলি ভেঙ্গে একাধিক কোম্পানিকে দেয়া হোক। এখানে বিমান প্রসঙ্গ নয়। বরং, গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবার মনোপলি ভাঙ্গা সম্ভব হলে চূড়ান্ত বিচারে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। আর অন্য অপারেটরের সাথে যোগ্য বিবেচনা হলে বিমানকেও জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবার দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। এতে দেশ এবং জনগণ একধারে আর্থিকভাবে লাভবান হবে ও উন্নত সেবা পাবে।’ 

কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘বিশ্বের কোথাও রাজধানী বাস ঘরের ভিতর বিমানবন্দর নেই। সেখানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তথা তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের সময় তার বিবেচনা করা হয়নি। এমন অপরিকল্পিত কার্যক্রমের জন্য ৫৪ বছরেও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) অর্জন শূন্য।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্বের কোথাও কোন একটি সংস্থা এককভাবে বিমানবন্দর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করে না। সেখানে শাহজালাল বিমানবন্দরসহ দেশের সব বিমানবন্দর এককভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করছে বিমান। বিষয়ে সেবা দিতে গিয়ে বিমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। এখন তারা শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। এটা তারা সঠিকভাবে চালাতে পারবে, তা বলা যায় না।’

ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের জিএসএ রিদম গ্রুপের হেড অব বিজনেস মাসুদুজ্জামান বলেন, ‘বিমান বাংলাদেশের জাতীয় এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠান। আমরা চাই, বিমান গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করুক। কিন্তু, দুঃখজনক বিষয় হল তাদের কাজের প্রক্রিয়া দীর্ঘ। বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনার আগে বিমান থেকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবার অনুমতি নিতে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের চার মাসে বেশি সময় ঘুরতে হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘শাহজালালের নতুন কার্গো টার্মিনাল দেখার আমার সুযোগ হয়েছে। এ টার্মিনালটি বিশ্বের অন্যতম বড় ও আধুনিক। কিন্তু, এখন যারা শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ব্যবস্থাপনা করছে, তাদের দিয়ে আদৌ তা ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হবে কিনা, তা পর্যালোচনা জরুরী।’

এয়ারলাইন্স অপারেটরস কমিটির ঢাকার (এওসি) চেয়ারপারসন দিলারা হোসেন বলেন, ‘শাহজালাল বিমানবন্দরে আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগে যেসব অভিযোগ শুনেছি, এখনো একই ধরনের অভিযোগ আসছে। এই বিমানবন্দরে ক্রমেই বিদেশি এয়ারলাইন্স বাড়ছে। কিন্তু, গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের সেবার মান বাড়ছে না।’

বৈঠকে বেবিচকের সদস্য (অপারেশন্স এন্ড প্ল্যানিং) এয়ার কমোডর আবু সাঈদ মেহবুব খান, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম, বাংলাদেশ মনিটরের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম, এয়ার এ্যাস্ট্রার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরান আসিফ, কাতার এয়ারওয়েজের কার্গো ম্যানেজার সুহেদ আহমেদ চৌধুরী, এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ উইং কমান্ডার এটিএম নজরুল ইসলাম, লা মেরিডিয়াল বাংলাদেশের জেনারেল ম্যানেজার কনস্টান্টিনোস গ্যাভরিয়েল, বেঙ্গল এয়ারলিফটের গ্রুপ সিইও বাহাউদ্দিন মিয়া, থাই এয়ারওয়েজের এয়ারপোর্ট সার্ভিস সুপারইন্টেন্ডেন্ট সৈয়দ ইয়াসেরুল আলম, এয়ার ইন্ডিয়ার এয়ারপোর্ট ম্যানেজার শয়নদেব ঘোষ, তার্কিশ এয়ারলাইন্সের স্টেশন ম্যানেজার সেরকান অ্যাকেন , ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের জিএম (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট কবির আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×