দুদক ও বিচার বিভাগ শেখ হাসিনার দাসে পরিণত হয়েছিল: আসিফ নজরুল
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৩:৩৭ পিএম, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪

অন্তর্বর্তী সরকারের আইন ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বিচার বিভাগ শেখ হাসিনার দাসে পরিণত হয়েছিল।’
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকার কাকরাইলে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দুদকের সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন।
গেল ১৬ বছরে সরকারি-বেসরকারি খাতে দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে আসিফ নজরুল বলেন, ‘দুদক ছিল, উচ্চ আদালত ছিল। কিন্তু, বিচার হয়নি। কিন্তু, বিচার হয়েছে খালেদা জিয়ার।’
বিচার না হওয়ায় দুর্নীতি সমাজে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বলেও জানান এই উপদেষ্টা।
দুর্নীতির বিচার না হওয়ার সংস্কৃতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি যে একটা খারাপ জিনিস, এটা ভাবার সংস্কৃতি আমাদের সমাজ থেকে চলে গেছে। গত ১৫ বছরে আমরা দেখেছি, ১০০ টাকার বালিশ নাকি চার হাজার, পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমরা দেখলাম ছয়টা ব্যাংক লুটপাট হয়েছে। বাংলাদেশের একজন সাধারণ ব্যবসায়ী সিঙ্গাপুরে সবচেয়ে বড় লোক হয়ে গেছে। আমরা দেখলাম একটা বেহায়া প্রধানমন্ত্রী, তার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়েছে। এটা হাসতে হাসতে সে জাতির সামনে বলছে।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়া তিন কোটি টাকা এক জায়গায় রেখেছে প্রক্রিয়াগত ভুলের কারণে। একটা টাকা সেখান থেকে আত্মসাৎ করেনি। তিন কোটি টাকা ছয় কোটি টাকা হয়েছে। ওই টাকা কেউ স্পর্শ করেনি। সেজন্য তিন বারের প্রধানমন্ত্রীকে দশ বছরের জেল দিয়েছে এই দেশের দুদক, বিচার বিভাগ মিলে। আর সেই চোর প্রধানমন্ত্রী, যার পুরো পরিবার ছিল চোর সে সারা দেশে বলে বেড়াত এতিমের টাকা নাকি খালেদা জিয়া আত্মসাৎ করেছেন।’
দুদকের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, ‘এ রকম পরিস্থিতিতে আপনারা কাজ করতে পারেন নাই। এমন এক্সকিউজ দিতে পারেন। তার মধ্যেও কেউ কেউ কাজ করার চেষ্টা করেছেন। এখন সেই পরিবেশ নাই। এখন কোন উপদেষ্টার তরফ থেকে কেউ ফোন করেছে কোন দিন? কেউ আপনাদের কোন রকম হস্তক্ষেপ করছে না। আপনারা প্রমাণ করেন যে, ভাল পরিবেশ পেলে আপনারা ভাল কাজ করতে পারেন।’
আসিফ নজরুল আরো বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের অবশ্যই আমরা দোষ দেব, সবাইকে দোষ দেব। কিন্তু, এই দোষ দিয়ে নিজের অন্যায় থেকে নিজে যেন পার পাওয়ার চেষ্টা না করি। নিজেকে জিজ্ঞেস করেন, আমরা কী সৎ আছি। সব সময় কী বলপ্রয়োগের কারণে আমরা অসৎ হই। সব সময় কী আদেশ, নির্দেশের কারণে আমরা সৎ লোকের বিরুদ্ধে লাগি।’
বিচার না হওয়ায় দুর্নীতি সমাজে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বলেও জানান এই উপদেষ্টা।
বিগত কমিশন প্রায় শতাধিক মন্ত্রী, সাংসদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দিয়ে গেছে। সেই অনুসন্ধানের বর্তমান অবস্থা কী সেটা জানানোর জন্য সাংবাদিকদের আহ্বান জানান তিনি।
পরে বের হয়ে সাংবাদিকদের আসিফ নজরুল বলেন, ‘যে সব কাজ বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সাহায্যে করা সম্ভব, সেগুলো আমরা করে ফেলব। আমরা দেরি করব না, আমাদের খুব বেশি সময় নেই।’
তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন কোন প্রতিবেদন দেয়নি। আমি তাদের বললাম উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের জন্য আমরা একটা আইন করব; আপনারা কী আইন করে দিতে পারবেন কি না। পরে ওই কমিশনের রিপোর্ট ছাড়াই আমাদের আইনটা (আইনের খসড়া) করে দিল।’
উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন ও প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে দুইটি আলাদা আইনের খসড়া পাওয়া গেছে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেছেন, ‘এই দুইটি আইন অবলম্বনে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ সংক্রান্ত আইনটি যত দ্রুত সম্ভব সম্পন্ন করা হবে।’
দুদক কমিশন নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দুদকের ব্যাপারটা আমি দেখছি না। যারা দেখছেন বা যিনি দেখছেন তারা এ বিষয়ে সচেতন আছেন। দুদককে অচল রাখা যাবে না। এত বড় বড় দুর্নীতি হয়েছে দুদককে অবশ্যই সচল করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুদকে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন।’
খোরশেদা ইয়াসমিন বলেন, ‘শুধু দমন নয়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ গ্রহণের দায়িত্ব দুদকের। আমরা এই দায়িত্ব পালনে নিরলস প্রয়াস চালাচ্ছি।’
দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বলেন, ‘সৎ প্রজন্ম তৈরি করতে পারলে দুর্নীতিবিরোধী সমাজ গঠন করা সহজ হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেবল প্রতিকারমূলক কার্যক্রম নেয়া নয়, সবার মনে দুর্নীতিবিরোধী চেতনা জাগ্রত করতে হবে।’