খালি পায়ে দৌড়ানো ছিনতাইকারীর সাথে বুট পরা পুলিশের পেরে ওঠা ‘কঠিন’


Jan 2025/DMP.jpg

ছিনতাই প্রতিরোধে ঢাকাবাসীকে নিজের মোবাইল ও ব্যাগ নিজ দায়িত্বে নিরাপদ রাখার মাধ্যমে পুলিশকে ‘সহায়তা’ করার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।

ছিনতাইয়ের মাত্রা কমিয়ে আনতে গত এক সপ্তাহে ‘ব্যাপক ব্যবস্থা’ নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

সাজ্জাত আলী বলেন, ‘আমরা আপনাদেরকে সাহায্য করব। কিন্তু নিজের ব্যক্তিগত ব্যাগ ও মানিব্যাগ, পার্স, মোবাইল নিজে একটু নিরাপদে রাখার চেষ্টা করবেন। তাহলে এ কাজটির মাধ্যমে আপনি আমাদের সহযোগিতা করতে পারবেন।’

ঢাকা ক্লাবে বুধবার (৮ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) বার্ষিক সাধারণ সভায় ডিএমপির কমিশনার এসব কথা বলছিলেন।

এ সময় শহরে ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার পেছনে মাদকাসক্তির যোগাযোগকে বড় কারণ হিসেবে তুলে ধরেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সাজ্জাত আলী বলেন, ‘ইদানিং যে অপরাধটি মানুষের মধ্যে শঙ্কার সৃষ্টি করেছে, সেটি ছিনতাই। ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত অধিকাংশ মাদকাসক্ত অল্প বয়সের ছেলেরা। ১৫-২২ বছরের ছেলেরা মাদকাসক্ত হয়ে এই ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।"

ছিনতাইয়ের ৮০ শতাংশই ‘মোবাইল ছিনতাই’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাসে বা প্রাইভেটকারে যখন কেউ কথা বলেন, তখন তার মোবাইল নিয়ে দৌড় দেয়। তাদেরকে হাতেনাতে ধরা অত্যন্ত কঠিন কাজ। আমার অফিসারদের কাছে বড় অস্ত্র থাকে, বুট পরা, ইউনিফর্ম পরা থাকে। ছিনতাইকারী থাকে খালি পায়ে বা একটা কেডস পরা। তার সাথে দৌড়ে পারাটা অনেক কঠিন।’

‘তাই, প্রথমত আমি ঢাকাবাসীকে অনুরোধ করব, আপনার মোবাইল, মহিলারা যারা পার্স ব্যবহার করেন আপনার পার্স বা হ্যান্ডব্যাগ নিজের নিরাপত্তায় ভালভাবে রাখার চেষ্টা করেন।’

ছিনতাই প্রতিরোধে গত এক সপ্তাহে দিনে ও রাতে পুলিশ পেট্রলের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির কমিশনার; তার কথায় এ জন্য পরিস্থিতিও কিছুটা ‘ভাল হয়েছে’।

‘গত এক সপ্তাহে তথ্য মোতাবেক আগের তুলনায় ছিনতাই কমে এসেছে। আশা করছি, আমরা ছিনতাইকে আরও নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হব।’

ছিনতাই প্রতিরোধে গত ২২ ডিসেম্বর থেকে ঢাকাজুড়ে ‘বিশেষ অভিযান’ পরিচালনা শুরু করে ডিএমপি।

পর দিন অভিযানের প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ৯৩ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতারের তথ্য দিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এসএন মো. নজরুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, এই ছিনতাই প্রবণতা ‘কমে না আসা পর্যন্ত’ বিশেষ অভিযান চলবে।

মানুষ ভাবে রাজপথ দখল হলেই দাবি আদায় হবে: ঢাকায় দুই থেকে আড়াই কোটি লোকের বসবাসের কথা তুলে ধরে ডিএমপির কমিশনার বলেন, ‘এখানে হতদরিদ্র, নিন্মবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংখ্যাই বেশি। বেকারত্বের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নানাবিধ সামাজিক সমস্যা প্রকারন্তরে পুলিশের ঘাড়েই এসে পড়ে। ইদানিং বিভিন্ন গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের লোকেরা ছোটখাট দাবি আদায়ের জন্য রাজপথকেই বেছে নেয়।’

‘সবাই মনে করে রাজপথ দখলে নিলে তাদের দাবিদাওয়া দ্রুত আদায় হবে বা সমস্যার সমাধান হবে। যার ফলে ঢাকার ভঙ্গুর ট্রাফিক আরও নাজুক অবস্থায় চলে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষকে রাস্তায় থাকতে হয়।’

ঢাকার উত্তর থেকে দক্ষিণে মূলত মিরপুর রোড, এয়ারপোর্ট রোড ও রামপুরা রোড- এই তিনটি সড়কের কথা তুলে ধরে তিনি বলেছেন, ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্ধ হলে পুরো শহর ‘অচল’ হয়ে যায়।’

সাজ্জাত আলীর কথায়, ‘আমরা এ সমস্যার প্রতিনিয়ত সম্মুখীন হচ্ছি। তাই, অনুরোধ দাবির ব্যাপারে খোলা মাঠ, অডিটোরিয়াম, সভাস্থল বেছে নিন। যথাযথ কর্তৃপক্ষকে সেখানে ডেকে টেবিলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন। ঢাকাবাসীর ট্রাফিক ব্যবস্থাকে আরও ভঙ্গুর করে তুলবেন না এটি আমার সবিনয় নিবেদন।’

তিনি বলেছেন, ‘গত দেড় দশকের আচরণ থেকে ডিএমপির সদস্যরা ‘বের হয়ে আসতে চায়’।’

‘কিন্তু এ জন্য সময়ের প্রয়োজন। আমার সব অফিসারের নতুন করে প্রশিক্ষণের বিশেষভাবে প্রয়োজন। প্রশিক্ষণ ছাড়া হঠাৎ করে ৪০ হাজার সদস্যকে পরিবর্তন সম্ভব না।’

এ জন্য পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ডিএমপির কমিশনার।

সরকার পতনের পর ডিএমপির মনোবল ‘একদম ভেঙে পড়েছিল’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশ যদি নিস্ক্রিয় থাকে, তার ফলাফল কী হয় ৫ আগস্টের পরে ঢাকাবাসী মর্মে মর্মে উপলব্দি করেছে। এই পুলিশ আপনাদের লাগবে। আমাদের অনেক শর্টকামিংস দুর্বলতা আছে, সেগুলা থেকে বের হয়ে আমরা আপনাদের সেবা দিব। কিন্তু ডিএমপি আপনাদের লাগবে।’

‘নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা’ স্বত্ত্বেও ‘সকল কষ্ট স্বীকার’ করে ঢাকাবাসীকে সেবা দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সাজ্জাত আলী বলেন, ‘সীমিত সংখ্যক পুলিশ দিয়ে সব সমস্যার সমাধান অত্যন্ত দূরুহ। সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করলে আমরা অবশ্যই ভাল থাকব।’

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×