বাংলাদেশ ব্যাংক
সাবেক গভর্নরসহ ২৫ কর্মকর্তার নামে লকার খুঁজে পায়নি দুদক
- ফরিদ শ্রাবণ
- প্রকাশঃ ০৪:৪০ পিএম, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
/bd bank.jpg)
বিভিন্ন মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারসহ বর্তমান ২৫ কর্মকর্তাকে নজরদারিতে নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব কর্মকর্তার নামে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোন লকার খুজে পায়নি বলে জানিয়েছেন দুদক পরিচালক কাজী মোহাম্মদ সায়েমুজ্জামান।
তিনি বলেন, `বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের নৌকার সুবিধা আছে কিনা সেটে পরীক্ষা করতে এসেছিলাম। ঢাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লকারের রেজিস্টার পরীক্ষা করে তাদের লকার সুবিধা পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারসহ ২৫ কর্মকর্তার লকার সুবিধা আছে কিনা সেটি দেখা হয়েছে।'
তিনি বলেন, `দুদকের কাছে আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে। সে ভিত্তিতে ভবিষ্যতে আদালতের নির্দেশক্রমে অন্য কর্মকর্তাদেরও সুবিধা আছে কিনা সেটি দেখা হবে। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে বা প্রমাণ পাওয়া গেলে যত প্রভাবশালী হোক কোন ছাড় দেওয়া হবে না।'
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, `আদালতে নির্দেশনা ক্রমে দুদকের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের লকারের রেজিস্টার চেক করে দেখেছিল। কিন্তু রেজিস্ট্রারে এই ২৫ কর্মকর্তার কোন লকার সুবিধা পাননি। এজন্য কোন লোকের আজকে খোলা হয়নি। ভবিষ্যতে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অন্য কোন ব্যক্তির লকার খোলার আদেশ পাওয়া গেলে খুলে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরীর (এস কে সুর) লকার থেকে ৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকার সম্পদ উদ্ধারের পর আরও ৩৫ কর্মকর্তার বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। তাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে।
আদালতের অনুমতি পাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে লকার খোলার বিপক্ষে মত দিয়েছেন, আবার কেউ কেউ চান দুর্নীতিবাজদের অপকর্ম প্রকাশ পাক।
দুদক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক দুই গভর্নর ড. আতিউর রহমান ও মো. আবদুর রউফ তালুকদারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে। সংস্থার কাচে রয়েছেন ডেপুটি গভর্নর মোছা. নুরুন্নাহার, ড. হাবিবুর রহমান, কাজী সাইদুর রহমান, উপদেষ্টা আবু ফরাহ মো. নাসের, নির্বাহী পরিচালক ড. সায়েরা ইউনুস, পরিচালক ইমাম আবু সাঈদ, পরিচালক (এফপিআইবি) সরোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত পরিচালক আবদুর রউফ, মঞ্জুর হোসেন খান, মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন, যুগ্ম পরিচালক সুনির্বাণ বড়ুয়া, জোবায়ের হোসেন, নিক তালুকদার, রুবেল চৌধুরী, লেলিন আজাদ পলাশ, উপমহাব্যবস্থাপক তরুণ কান্তি ঘোষ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ ফেরদৌস কবির, পদস্থ কর্মকর্তা এ বি এম মোবারক হোসেন, উপপরিচালক হামিদুল আলম সখা, সহকারী পরিচালক মো. কাদের ও সহকারী ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন।
দুদকের তালিকায় সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম, সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামান, খুরশিদ আলম, সাবেক পরিচালক আবদুল ওয়াদুদ, সাবেক উপপরিচালক মোফাজ্জল হোসেন, সহকারী মহাব্যবস্থাপক (বরখাস্ত) সিকদার লিয়াকত ছাড়াও বিএফআইইউর তিন অতিরিক্ত পরিচালক, দুই যুগ্ম পরিচালক ও এক উপপরিচালক রয়েছেন।
এর আগে অভিযান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। লকার খুলতে দুদকের আট সদস্যের টিম বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করেছে। রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দুদকের পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জামানের নেতৃত্ব ওই টিম কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশ করে।
এসব লকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে ৩০০ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার অর্থসম্পদ ও অন্য মূল্যবান নথিপত্র সেফ ডিপোজিট আকারে রেখেছেন বলে তথ্য পেয়েছে দুদক। এর মধ্যে কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার নামেও লকার রয়েছে।