রমজানে রাজধানীতে তীব্র যানজটের শঙ্কা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ১১:১০ এম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে দুয়েক দিনের মধ্যেই শুরু হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। মাসটিকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে সরকারি অফিসের নতুন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। অফিস শেষে সবার তাড়া থাকে বাসায় ফিরে পরিবারের সঙ্গে ইফতার করার। কিন্তু রাজধানীতে তাতে বাদ সাধে যানজট। এবার রমজানের আগে থেকেই যানজটে নাকাল নগরবাসী। প্রায় প্রতিদিন নানা সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের লোকজন বিভিন্ন দাবিতে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করছে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়নের নামে চলছে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি। এসব কারণে প্রায়ই অবরুদ্ধ থাকছে মহানগরের বিভিন্ন সড়ক। এ অবস্থায় রমজানেও অসহনীয় যানজটের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ সমস্যায় হাল ছাড়তে নারাজ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। তারা বলছে, পবিত্র রমজানকে কেন্দ্র করে রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত নানা পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এরই মধ্যে ফুটপাত খালি করাসহ কিছু কার্যক্রম তারা শুরু করেছে।
পবিত্র রমজান মাসে সরকারি অফিসের নতুন সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যান্য বছরের মতো এবারও সাপ্তাহিক ছুটির দুটি দিন ছাড়া বাকি পাঁচ দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অফিস চলবে। পাশাপাশি প্রতিদিন দুপুর সোয়া ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত জোহরের নামাজের বিরতি দেওয়া হবে। সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধাস্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য এ সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘ইফতারের আগেই সবাই বাসায় ফিরতে চায়। সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কমছে না; একই সময়ে রাস্তায় অতিরিক্ত মানুষ থাকবে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে যদি একই সংখ্যক যানবাহন থাকে, তাহলে সড়কে ঘনত্ব অনেক বেড়ে যাবে। পাশাপাশি রাস্তায় শপিং করা লোকজন বাড়বে। এতে যানজট বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা আছে। এ অবস্থায় যানজট সহনীয় পর্যায়ে আনতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন এই যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, রমজানে ফুটপাতে ইফতারি বিক্রি ও নানা পণ্যের কেনাকাটা চলে। ফুটপাত দখলমুক্ত করতে হবে সবার আগে, যাতে মানুষ হেঁটে বাসায় ফিরতে পারে। এ ছাড়া রমজানে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হবে এবং কিছু প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। খোলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রম চালানো যেতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ধীরগতির যানবাহন মূল সড়ক থেকে এই এক মাস অবশ্যই সরাতে হবে। এখানে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ দেখছি না। অন্যথায় যানজট তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।’
গত সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রমজান উপলক্ষে ঢাকা মহানগর এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে ডিএমপিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ডিএমপির সদরদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করা হয়। সভায় ডিএমপির কমিশনার শেখ সাজ্জাদ আলী বলেন, ‘ঢাকা শহরের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে যানজট। রমজানে যানজট নিরসনে ডিএমপির ট্রাফিক ও ক্রাইম বিভাগের পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন থাকবে।’
সবাইকে ট্রাফিক আইন মেনে চলার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ‘রমজানে অফিস ছুটির সময় অধিকাংশ যানবাহন তড়িঘড়ি করে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয়। এতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইন্টারসেকশনে অযাচিত যানজট তৈরি হয়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রুটের সড়কের পাশে গাড়ি পার্কিং করা হয়, যা সড়কের প্রশস্ততা কমিয়ে দেয়। যানবাহন চলাচল এতে বাধাগ্রস্ত হয়। রমজানের শুরু থেকে ট্রাফিক বিভাগ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সড়কের পাশে অযাচিত পার্কিং না করার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। রমজানে সড়কে যাতে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালিত না হয়, সে জন্য ট্রাফিক বিভাগ কঠোর অবস্থানে থাকবে। নির্ধারিত বাস স্টপেজ ছাড়া গণপরিবহনগুলো যাত্রী ওঠা-নামা করে। এতে পেছনে গাড়ির দীর্ঘ সারি পড়ে যায়। তাই রাস্তায় যাতে গাড়ি না থামে সে জন্য ট্রাফিক বিভাগকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’
তিনি জানান, ডিএমপির এলাকায় ভারী যানবাহন প্রবেশের নির্দিষ্ট সময়সীমা আছে। প্রায়ই এ সময়সীমা না মেনে চালকরা চলার চেষ্টা করে, যা যানজটের সৃষ্টি করে। নির্ধারিত সময়সীমার বিষয়টি মেনে চলতে হবে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়কে গাড়ি মেরামতের কাজ করা হয়। জনসাধারণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে রমজানে এ ধরনের কাজ যাতে কেউ না করতে পারে, সে বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের ট্রাফিক পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ডিএমপির মুখপাত্র উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘রমজানে দুপুরের পর রাস্তায় গাড়ির চাপ বেড়ে যায়। বাসায় ফেরার তাড়া থাকে সবার। মানুষ যাতে নিরাপদে ইফতারের আগেই ঘরে ফিরতে পারে, সে জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দুপুরের পর থেকে ইফতার পর্যন্ত রাস্তায় অতিরিক্ত জনবল নিয়োজিত থাকবে। কিছু জায়গায় ডাইভারশন দেওয়া হবে। রাস্তায় কোনো হকার বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বসতে দেওয়া হবে না। গাড়ি পার্কিং করতে দেওয়া হবে না রাস্তায়।’
ডিএমপির রমনা ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রমজান মাসে নিউমার্কেট-গাউছিয়া এলাকায় বিপুলসংখ্যক মানুষ কেনাকাটা করতে আসবে। সেখানে যথাযথ পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই এবং সড়ক বিভাজকে নেই কোনো প্রতিবন্ধক। ফলে মানুষ ওভারব্রিজে না উঠে হেঁটে রাস্তা পার হয়। এতে গাড়ির গতি কমে যায়। ডিএমপি সদরদপ্তর থেকে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হবে। যারা গাড়িতে কেনাকাটা করতে আসবেন, তারা যেন রাস্তায় নেমে গাড়ি ছেড়ে দেন- এমন ক্যাম্পেইন করা হবে। বিশেষ করে বিকেল থেকে যেন যানজট তীব্র না হয়, সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকব।’
তিনি জানান, সড়কে কোনো দোকান বা হকার বসতে দেওয়া হবে না। ইতোমধ্যে রমনা ট্রাফিক বিভাগ এলাকায় সড়ক পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়েছে। গতকালও নিউমার্কেট এলাকার সড়ক থেকে দোকান সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উত্তরা ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার আনোয়ার সাঈদ বলেন, ‘উত্তরা এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি থানা পুলিশের সদস্যরা সমন্বিতভাবে কাজ করবে। বিভিন্ন শপিংমলের কমিটির সঙ্গে কথা হয়েছে। কমিটির লোকজন মার্কেটের সামনে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করবে।’
রমজানে খোঁড়াখুঁড়ি না করার অনুরোধ ডিএমপির: ডিএমপি বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পবিত্র রমজানে ঢাকা মহানগরে সড়কে নতুন করে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু না করার অনুরোধ জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেছে, রমজানে সড়কে যানবাহনের অত্যধিক চাপ থাকে। প্রায়ই দেখা যায়, এ মাসেও বিভিন্ন সংস্থা বা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউটিলিটি-সংক্রান্ত কাজে সড়ক কেটে রাখেন। এতে সড়ক সংকুচিত ও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। জনভোগান্তি কমাতে রমজানে নতুন করে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু না করার অনুরোধ রইল।