আসন্ন নির্বাচন হবে কয়েক দশকের মধ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু: গার্ডিয়ানকে ড. ইউনূস


March 2025/Younos 2.jpg

২০২৪ সালের বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা ছেড়ে ভারত পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব গ্রহণের পর ছয় মাস পার করেছেন তিনি। এই ছয় মাসে তাকে বিভিন্ন পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছে। যা নিয়ে তিনি ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিশেষ করে আগামী নির্বাচন কেমন হবে তা নিয়ে তিনি স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন। 

গার্ডিয়ানকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘চলতি বছর ডিসেম্বর থেকে আগামী বছর মার্চের মধ্যে যেকোনো সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। আর এ নির্বাচন হবে গত কয়েক দশকের ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।’ 

তবে দ্য গার্ডিয়ানকে নবগঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয়।’   

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন গত আগস্টে বাংলাদেশে ফিরে আসেন, তখন তাকে স্বাগত জানায় বিধ্বস্ত এক দেশ। রাস্তাগুলো তখনও রক্তে লাল, মর্গে স্তূপ করা ছিল হাজারো প্রতিবাদী ও শিশুর লাশ, যাদের গুলি করে হত্যা করেছিল পুলিশ। ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের পর ছাত্রনেতৃত্বাধীন এক বিপ্লবে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা। নাগরিকদের প্রতিশোধের ভয়ে হেলিকপ্টারে করে দেশ ছাড়েন তিনি।’

দরিদ্রদের ক্ষুদ্রঋণ ধারণার জন্য নোবেল পুরস্কার পাওয়া ৮৪ বছর বয়সী মুহাম্মদ ইউনূস দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করেছিলেন। শেখ হাসিনার শাসনামলে তিনি রাজনৈতিক হুমকি হিসেবে বিবেচিত হন এবং বছরের পর বছর অপপ্রচার ও নিপীড়নের শিকার হন। বেশিরভাগ সময় তিনি বিদেশে কাটিয়েছেন। কিন্তু যখন ছাত্র প্রতিবাদীরা তাকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানায়, তিনি রাজি হন। 

গার্ডিয়ানকে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা যে ক্ষতি করেছেন, তা বিশাল। এটি একটি সম্পূর্ণ ধ্বসংপ্রাপ্ত দেশ ছিল, যেন আরেকটি গাজা। তবে এখানে ভবন নয়, পুরো প্রতিষ্ঠান, নীতি, মানুষ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ধ্বংস করা হয়েছে।’ 

জুলাই ও আগস্ট মাসের রক্তাক্ত কয়েক সপ্তাহে তার দমনমূলক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়। জাতিসংঘের মতে পুলিশের এই সহিংস দমননীতি ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হতে পারে। তবে শেখ হাসিনা সব ধরনের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। 

ড. ইউনূস দেশের সমস্যাগুলোকে শেখ হাসিনার শাসনের ফলাফল হিসেবে দেখাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার শাসন কোনো সরকার ছিল না, এটি ছিল একদল ডাকাতের পরিবার। ওপর মহলের আদেশ পেলেই কাজ হতো। কেউ সমস্যা সৃষ্টি করছে? আমরা তাকে গায়েব করে দেব। নির্বাচন করতে চান? আমরা নিশ্চিত করব যে আপনি সব আসনে জিতবেন। টাকা চান? ব্যাংক থেকে দশ লাখ ডলার ঋণ নিন, যা ফেরত দিতে হবে না।’

শেখ হাসিনার শাসনামলে দুর্নীতির মাত্রা ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে এবং অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। তার আত্মীয়দের মধ্যে যারা আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত ছিলেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন তার ভাইঝি টিউলিপ সিদ্দিক, যিনি যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির সংসদ সদস্য। বাংলাদেশে দুর্নীতির তদন্তে তার নাম উঠে আসার পর তিনি ট্রেজারি থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি সব ধরনের অসদাচরণ অস্বীকার করেছেন। 

ইউনূস বলেন, ‘সরকারের সক্রিয় অংশগ্রহণে ব্যাংকগুলোকে লুটপাটের পূর্ণ লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। তারা তাদের কর্মকর্তাদের বন্দুক নিয়ে পাঠাতো সবকিছু অনুমোদন করাতে।’

ড. ইউনূস বলেন, ভারতে আশ্রয় নিয়ে শেখ হাসিনা নতুন বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন এবং এতে দেশ অস্থিতিশীল হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ভারত তাকে আশ্রয় দিচ্ছে, এটা মানা যায়। আমরা যা যা করছি, ভারতকে ব্যবহার করে তা নষ্ট করার প্রচারণা চালাতে দেওয়াটা বিপজ্জনক। এটি দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত সরকারই ড. ইউনূসের একমাত্র সমস্যা নয়।’ গার্ডিয়ান বলছে, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসাও ড. ইউনূসের জন্য সুসংবাদ নয়।’ 

তবে, ড. ইউনূসের মনে করেন, বাংলাদেশে ট্রাম্প ‘বিনিয়োগের ভালো সুযোগ’ এবং ‘বাণিজ্যিক অংশীদার’ হিসেবে দেখতে পারেন। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প একজন ডিলমেকার। তাই আমি তাকে বলছি, আমাদের সঙ্গে ডিলে আসুন। তিনি যদি তা না করেন, তাহলে বাংলাদেশ কিছুটা কষ্ট পাবে। কিন্তু, এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থামবে না।’ 

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×