রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৯:৫১ পিএম, ১৪ মার্চ ২০২৫

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, এটি সেই জায়গা যেখানে বাজেট কাটছাঁটের প্রভাব সবচেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে বিশেষ করে যাদের সহায়তা পাওয়ার প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে জরুরি। আজ শুক্রবার কক্সবাজারের উখিয়ায় শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতারে যোগ দিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখনই বিনিয়োগ করা উচিত, কারণ এই মানুষগুলো ইতিমধ্যে অসীম কষ্টের মধ্যে দিয়ে জীবন পার করছে।
পবিত্র রমজান মাসে, তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান যে তারা যেন শুধুমাত্র কথায় নয়, বরং বাস্তব পদক্ষেপ ও কার্যকর সহায়তার মাধ্যমে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং তাদের বাংলাদেশি আশ্রয়দাতাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে।
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘আমরা একটি গভীর মানবিক সংকটের মধ্যে রয়েছি। ঘোষিত অর্থের সহায়তা হ্রাসের কারণে, ২০২৫ সালে মানবিক সহায়তার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের মাত্র ৪০ শতাংশ পাওয়া যাবে, যা ২০২৪ সালের তুলনায় ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি করবে। এটি সম্পূর্ণ বিপর্যয় হবে’।
তিনি মানবিক সহায়তার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘মানুষ এখানে কষ্ট পাবে, মারা যাবে।’
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আজ শুক্রবার উখিয়ায় শরণার্থী শিবিরে এক লাখ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করেন। এর আগে তারা বিকেল ৫:৩৫ মিনিটে শরণার্থী শিবিরে পৌঁছালে রোহিঙ্গারা হাত নেড়ে তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায়। উভয় নেতা সাদরে হাত নেড়ে তাদেরকেও অভিবাদন জানান।
জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস বলেন, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং মানবিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত অনেক এনজিও বর্তমানে ব্যাপক তহবিল সংকোচনের মুখোমুখি।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্যোগে আয়োজিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ইফতারে যোগদানের আগে গুতেরেস বলেন, এই তহবিল সংকোচনের সরাসরি এবং ভয়াবহ প্রভাব পড়বে। মানুষ পর্যাপ্ত খাবার পাবে কি না, মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা মিলবে কি না, অন্যান্য জরুরি সেবা ও সুরক্ষা বজায় থাকবে কি না, তা নির্ভর করবে এই অর্থায়নের ওপর।
তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। এখানে স্পষ্ট, বাজেট কমানো শুধুমাত্র হিসাবের সংখ্যা নয়।’
তহবিল সংকোচনের মানবিক মূল্য অত্যন্ত গুরুতর উল্লেখ করে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘চূড়ান্তভাবে এই সমস্যার সমাধান মিয়ানমারেই খুঁজে বের করতে হবে।’
তিনি বলেন, যতদিন না পর্যন্ত শরণার্থীদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, ততদিন তারা হাল ছাড়বেন না।
গুতেরেস বলেন, ‘এর আগ পর্যন্ত, আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি সংহতি এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রয়োজন, ঠিক যেমন বাংলাদেশের প্রতিও সংহতি দরকার।’
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই, কারণ মানবিক সহায়তা বাস্তবিক পরিবর্তন আনছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই বাংলাদেশের জনগণের বিশাল সহায়তার স্বীকৃতি দিতে হবে, যারা তাদের জমি, বন, সীমিত পানি ও স্বল্প সম্পদ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছেন।’
২০১৮ সালে সর্বশেষ কক্সবাজার সফর করা গুতেরেস বলেন, তারা শরণার্থী শিবিরগুলোতে অনেক উন্নতি দেখতে পেয়েছেন। ‘কিন্তু বিভিন্ন স্তরে এখনও বিশাল চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, এই ক্যাম্পগুলো এবং আশ্রয়দানকারী স্থানীয় জনগোষ্ঠী জলবায়ু সংকটের সম্মুখভাগে রয়েছে।
তিনি বলেন, গ্রীষ্মকাল অসহনীয়ভাবে গরম, যার ফলে আগুন লাগার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। এছাড়া, ঘূর্ণিঝড় ও বর্ষা মৌসুমে বন্যা ও বিপজ্জনক ভূমিধস বাড়িঘর এবং জীবন ধ্বংস করে।
প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি, এখানকার মানুষ শিক্ষার সুযোগ, দক্ষতার উন্নয়ন এবং স্বাধীন জীবিকার জন্যও আকুল।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘সীমিত সুযোগের কারণে সহিংসতা, অপরাধ ও অন্যান্য নিরাপত্তাজনিত সমস্যাগুলো স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পায়। কিছু রোহিঙ্গা পরিবার অনুভব করে যে তাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই, ফলে তারা প্রাণঘাতী সমুদ্রযাত্রার ঝুঁকি নিতে বাধ্য হয়।’
গুতেরেস বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাছে সহায়তা পৌঁছানো নিশ্চিত করা তাদের বিশেষ দায়িত্ব এবং এটি প্রমাণ করতে হবে যে বিশ্ব এখনও তাদের ভুলে যায়নি।
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে ভালো সময়েও এই সহায়তা কখনোই পর্যাপ্ত ছিল না। আর এখন আমরা একেবারেই ভালো সময়ে নেই।’
পবিত্র রমজান মাসে সংহতির বার্তা নিয়ে গুতেরেস কক্সবাজার সফরে এসেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি সংহতি জানাতে।
গুতেরেস বলেন, ‘তিনি এসেছেন শরণার্থীদের উদার আশ্রয়দাতা বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের প্রতিও সংহতি জানাতে। আমি এখানে এসেছি রোহিঙ্গাদের দুর্দশার পাশাপাশি তাদের সম্ভাবনার ওপরও বৈশ্বিক দৃষ্টি আকর্ষণ করতে।’
প্রায় দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর কথা উল্লেখ করে জাতিসংঘ প্রধান বলেন, তারা অত্যন্ত সহনশীল। তারা বিশ্ববাসীর সহায়তা চায়। তিনি বলেন, কয়েক দশকের বৈষম্য ও নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় আট বছর আগে রাখাইন রাজ্যে সংঘটিত গণহত্যার ফলে তাদের বিশাল সংখ্যায় দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়। চার দিনের বাংলাদেশ সফরে জাতিসংঘ মহাসচিব গতকাল ঢাকায় পৌঁছান।
সুত্রঃ বাসস