ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিএনজি স্টেশনে অপেক্ষা, গ্যাস মিলে অল্প
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৯:৩৩ পিএম, ২২ মার্চ ২০২৫

রাজধানীর সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। আর যদিও পাওয়াও যায় তা চাহিদার তুলনায় সামান্য।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘গ্যাসের প্রেসার কম থাকায় চাহিদামাফিক গ্যাস দেওয়া যাচ্ছে না। এতে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না পেয়ে একদিকে ভোক্তার সময় অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে খরচাও বাড়ছে।’
কয়েকটি সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ কম থাকায় গ্রাহকরা চাহিদামতো গ্যাস রিফিল করতে পারছেন না। আবার কোনো কোনো স্টেশনে একেবারেই গ্যাস নেই। সে কারণে গ্রাহকদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় অবস্থিত পিনাক্যাল পাওয়ার লিমিটেড রিফুয়েলিং স্টেশনে কথা হয় গ্রাহক ফয়সাল মাহমুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শনিবার (২২ মার্চ) সকাল থেকে কয়েকটা গ্যাস স্টেশনে গিয়েছি। কোথাও গ্যাস নেই, কোথাওবা লম্বা লাইন। এখানে গ্যাস পাওয়া গেলেও চাপ কম, হয়ত পুরো সিলিন্ডার ভরবে না। গ্যাসের জন্য স্টেশনে স্টেশনে ঘুরে যেমন সময় গেল, তেমনি বাড়তি গ্যাসও খরচ হলো।’
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘গ্যাসের সমস্যার কারণে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। অনেকক্ষণ লাইনে অপেক্ষা করতে হয়। পরে সিরিয়াল পেলেও দেখা যায় আমার দরকার হাজার টাকার গ্যাস, কিন্তু প্রেসার কম থাকায় তার অর্ধেকও পাই না। তাই আবার স্টেশনে আসতে হয়।’
মহাখালীর ক্লিন ফুয়েল স্টেশনে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। এ স্টেশনে সকাল থেকে লাইনে গ্যাস থাকলেও দুপুরের পর একেবারেই নেই। তাই গ্রাহকদের ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন কর্মীরা।
ক্লিন ফুয়েলে স্টেশনের কর্মী শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে লাইনে কিছুটা গ্যাস ছিল কিন্তু দুপুরের পর থেকে নেই। গ্যাসের সংকট রমজানের আগেও এরকম ছিল। রমজানের শুরুতে একটু কম থাকলেও এখন আবার তা প্রকট হয়েছে। অসংখ্য গাড়ি এসে অপেক্ষা করে কিন্তু চাহিদামাফিক গ্যাস দেওয়া সম্ভব হয় না। আর গ্যাস না থাকলে তো ফিরিয়েই দিতে হয়।’
বিকল্প হিসেবে ব্যবহার এলপিজি-অকটেন:
সিএনজি গ্যাসের তীব্র সংকটের ফলে অনেকেই বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছেন এলপিজি বা অকটেন। এতে করে তাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। কারণ প্রতি লিটার সিএনজি গ্যাসের বর্তমান দর ৪৩ টাকা, বিপরীতে প্রতি লিটার এলপিজি বা অটোগ্যাসের মূল্য ৬৬ টাকা ৪৩ পয়সা। আর যারা অকটেন ব্যবহার করছেন, তাদের লিটারপ্রতি গুনতে হচ্ছে ১২৬ টাকা।
অটোগ্যাস ও অকটেন সরাসরি বিভিন্ন কোম্পানি সরবরাহ করায় তা বেশির ভাগ সময়ই স্টেশনগুলোতে মজুত থাকে। সিএনজি গ্যাসের সংকট থাকায় অনেকে ব্যক্তিগত পরিবহনে বাধ্য হয়ে এসব জ্বালানি ব্যবহার করে থাকেন।
ক্লিন ফুয়েল স্টেশনে আসা এলপিজির গ্রাহক জিয়াউল হক বলেন, ‘সিএনজি গ্যাস নিতে চাইলেও তা না থাকায় এলপিজি নিচ্ছি। এতে খরচ বেশি পড়লেও কিছু করার নেই, গাড়ি তো চালাতে হবে।’
এলপিজির পাশাপাশি অনেক গাড়ি অকটেন ব্যবহার করছে। যা অটোগ্যাসের তুলনায় ব্যয়বহুল। গ্রাহকরা বলছেন, ‘প্রয়োজনীয়তা ও সহজলভ্যতার কারণে গ্যাসের বদলে তেল ব্যবহার করছেন তারা।’
বিপাকে সিএনজিচালকরা:
ব্যক্তিগত পরিবহনগুলোতে সিএনজি গ্যাসের বদলে অটোগ্যাস বা অকটেন নেওয়ার সুবিধা থাকলেও তিন চাকা বিশিষ্ট সিএনজির ক্ষেত্রে সে সুবিধা নেই। সিএনজি স্টেশন থেকে গ্যাস না মিললে চাকা ঘোরে না এ গাড়ির। তাই চলমান গ্যাস সংকটে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন সিএনজিচালকরা। একদিকে চাইলেও গ্যাস পাচ্ছেন না, আবার পেলেও প্রেসার কম, যা দিয়ে সারা দিন গাড়ি চালানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সময় অপচয়ের পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা।
মহাখালী এলাকায় কথা হয় সিএনজিচালক আনোয়ারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গ্যাসের সমস্যা অনেক বেড়ে গেছে। স্টেশনে স্টেশনে ঘুরেও গ্যাস পাই না। যেখানে পাই সেখানে লম্বা লাইনে অপেক্ষা করতে হয়। এই টাইমে দুই-তিনটা ট্রিপ দেওয়া সম্ভব কিন্তু সেটাও হয় না।’
সিএনজিচালক আল আমিন বলেন, ‘এমনও হয়েছে গ্যাস না পাওয়ায় দিনের অর্ধেক বসে থাকা লাগছে। অথচ দিনশেষে আমার টাকা জমা দেওয়া লাগবে কিন্তু সেটা উঠাতে পারছি না। সবমিলিয়ে আমরা কঠিন পরিস্থিতিতে আছি।’
কী বলছেন সংশ্লিষ্টরা:
রাজধানীর রিফুয়েলিং স্টেশনগুলোতে সিএনজি গ্যাস সরবরাহ করে থাকে বিতরণ সংস্থা তিতাস গ্যাস। চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ কম পাওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী কাজী মো. সাইদুল হাসান বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ কম পাওয়ায় এ ধরনের সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের দৈনিক চাহিদা ১৯০০ এমএমসিএফ গ্যাস, অথচ পাচ্ছি ১৬০০ থেকে ১৬৫০ এমএমসিএফ গ্যাস। ফলে যে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে, তার কারণে সিএনজি স্টেশন এবং আবাসিকে চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহকরা গ্যাস পাচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশীয় খাতে গ্যাসের পরিমাণ কম থাকায় সরকার এলএনজি আমদানি করার মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে উঠছে আর্থিক পরিস্থিতি। এলএনজি আমদানি করতে বড় অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন হয়। আর্থিক সংকট থাকা সত্ত্বেও সরকার চেষ্টা করছে জ্বালানি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার।’