ড. ইউনূস চীন যাচ্ছেন আজ: আলোচনা হতে পারে তিস্তা নিয়ে
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ১১:১১ এম, ২৬ মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশের সঙ্গে পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে চীনের দিক থেকে আলোচনার আগ্রহ আছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আসন্ন চীন সফরে পানি ব্যবস্থাপনার আওতায় তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যে বৈঠক হবে, তা এজেন্ডায় সীমাবদ্ধ না। শীর্ষ নেতৃত্ব তাদের পছন্দ অনুযায়ী বিষয় নির্বাচন করবেন। তবে পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনার ব্যাপারে আমাদের এবং চীনের দিক থেকে আগ্রহ রয়েছে।’
চার দিনের সফরে আজ বুধবার (২৬ মার্চ) দুপুরে চীন যাচ্ছেন মুহাম্মদ ইউনূস। দুই দেশের বিদ্যমান সৌহার্দ্যপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপনের এই সময়ে প্রধান উপদেষ্টার এ সফরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে এক নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে আশা করছেন পররাষ্ট্র সচিব।
গতকাল মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার চীন ও থাইল্যান্ড সফর উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আশার কথা জানান।
পররাষ্ট্র সচিব জানান, হাইনান প্রদেশে অনুষ্ঠেয় অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়ার ২৫ দেশের জোট বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার (বিএফএ) সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। সেখানে দু’দেশের মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশের দিক থেকে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছি এটা সমাধানের। দ্বিপক্ষীয়ভাবে ২০১৭-১৮ সাল থেকেই আলোচনা করছি। আমাদের চেষ্টায় চীনও সহায়তা করেছে। এ বৈঠকের প্রত্যাশা হচ্ছে, মিয়ানমারের পরিস্থিতি সম্পর্কে চীনের একটি মত আমরা পেতে পারি। আমাদের মতও তাদের জানাতে পারব।’
চীনের ঋণ নিয়ে জানতে চাইলে জসীম উদ্দিন বলেন, ‘কিছু ঘোষণা আসবে, এর মধ্যে ঋণের ঘোষণাও থাকতে পারে। অর্থনৈতিক বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত বিষয়েও আসতে পারে ঘোষণা।’
স্বাস্থ খাতে চীনের সঙ্গে সহযোগিতা নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সময়ে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা বেড়েছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চীন সফরের ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ থেকে একদল রোগী চীনে গিয়েছিলেন, সেখানকার সেবায় তারা সন্তুষ্ট। বাংলাদেশিদের জন্য কুনমিংয়ের চারটি হাসপাতালকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া চীন বাংলাদেশে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল করবে।’
চীনের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা নিয়ে কি আলোচনা হবে- প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আগে থেকে অনুমান করতে চাই না। তবে আমাদের দিক থেকে সামরিক খাতে চীনের সঙ্গে যে সহযোগিতা রয়েছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে।’
আওয়ামী লীগ সরকারপ্রধানের গত জুলাইয়ের সফর আর বর্তমান সরকারপ্রধানের এবারের সফরের তুলনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘চীন আমাদের গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু, সেই বন্ধুত্বকে আমরা ধারণ করি, চীনের দিক থেকেও একই ধরনের মানসিকতা রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা তাঁর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর হিসেবে চীনকে বেছে নেওয়া মধ্য দিয়ে একটা বার্তা আমরা দিচ্ছি।’
থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার বৈঠক নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘যে কোনো দেশের সঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠককে আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। যদি বৈঠক হয়, তাহলে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে সৃষ্ট যে স্থবিরতা, তা কেটে যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দিক থেকে আমরা বলতে পারি, বৈঠকের জন্য আমরা প্রস্তুত। ভারতের দিক থেকে আমরা একটি ইতিবাচক উত্তরের অপেক্ষায় আছি।’
এ বৈঠক নিয়ে কি ঢাকা প্রস্তুত আর দিল্লি প্রস্তুত না- উত্তরে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘দিল্লি প্রস্তুত কিনা, সেটি দিল্লি বলবে।’
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব জানান, আগামী ৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। এ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা আগামী ৩ এপ্রিল ব্যাংককে পৌঁছাবেন। ২ এপ্রিল ব্যাংককে অনুষ্ঠিতব্য বিমসটেক সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ২৫তম সভায় অংশ নেব। এ ছাড়া পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আগামী ৩ এপ্রিল ব্যাংককে অনুষ্ঠিতব্য ২০তম বিমসটেকের মন্ত্রী পর্যায়ের সভায় অংশ নেবেন।