গুলশানে ব্যবসায়ী ‍হত্যা: চাঁদাবাজ মেহেদীর নির্দেশে হত্যায় অংশ নেয় সন্ত্রাসী বড় সাঈদের দল


March 2025/Suman 2.jpg

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রাজধানীর গুলশান-বাড্ডা এলাকার আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ চলে যায় অন্য গ্রুপের হাতে। সেই দ্বন্দ্বের বলি ডিশ ব্যবসায়ী সুমন।

মেহেদী গ্রুপের সঙ্গে বিরোধে জড়ায় রবিন গ্রুপ। রবিন গ্রুপের সুমন টার্গেটে পরিণত হয়। বিরোধের জেরেই মেহেদী গ্রুপের প্রধান মেহেদীর নির্দেশে সুমনকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে সন্ত্রাসী বড় সাঈদ।

ঘটনার ৮-১০ দিন আগে বড় সাঈদের নির্দেশে বিল্লাল ও মামুনের নেতৃত্বে মেহেদী গ্রুপের ৪-৫ জন সন্ত্রাসী দিয়ে একটি কিলার গ্রুপ গঠন করা হয়। তারা সুমনের প্রতিদিনের চলাফেরা পর্যবেক্ষণ করে। গত ২০ মার্চ সন্ধ্যায় মেহেদী গ্রুপের একটি কিলার গ্রুপ সাঈদের বাসায় মিটিং করে এবং তার বাসা থেকে অস্ত্র নিয়ে গুলশান এলাকায় যায়।

ওই রাতে গুলশান-১ পুলিশ প্লাজার সামনে সুমনকে লক্ষ্য করে করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। সুমনের মৃত্যু নিশ্চিত করেই পালিয়ে যায় ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা।

এ ঘটনার মূলহোতা মো. ওয়াসির মাহমুদ সাঈদ ওরফে বড় সাঈদ (৫৯) ও কিলার মামুন ওরফে বেলালকে (৪২) গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)- ১।

র‌্যাব-১’-এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া অফিসার) সহকারী পুলিশ সুপার সালমান নূর আলম জানান, রাজধানীর গুলশান এবং বনানী এলাকার ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ী সুমন মিয়া ওরফে সুমনকে গত ২০ মার্চ রাত সাড়ে ৯টার দিকে গুলশান-১ পুলিশ প্লাজার সামনে প্রকাশ্যে কয়েকজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গুলি করে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর ভুক্তভোগী সুমনকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী পর দিন গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর-৩২।

চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনায় র‌্যাব-১ রহস্য উদঘাটন এবং আসামিদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) দুপুর আড়াইটার দিকে র‌্যাব-১’-এর একটি দল র‌্যাব-৮’-এর সহযোগিতায় ঘটনার মূলহোতা ওয়াসির মাহমুদ সাঈদ ওরফে বড় সাঈদকে পটুয়াখালী থানাধীন পটুয়াখালী চৌরাস্তা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার বড় সাঈদ জানায়, মামুন ওরফে বেলালসহ আরও কয়েকজন হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করে। বড় সাঈদের দেওয়া তথ্যমতে মঙ্গলবার রাতেই মামুন ওরফে বেলালকে গাজীপুর জেলার টঙ্গী পূর্ব থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাকি পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার এবং ঘটনায় ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।

ঘটনার নেপথ্যের কারণ সম্পর্কে সালমান নূর বলেন, ‘জনৈক মেহেদী বড় সাঈদের মাধ্যমে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে বিগত কয়েক বছর যাবত গুলশান ও বাড্ডা এলাকায় চাঁদাবাজি করে আসছিল। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর মেহেদী পালিয়ে যায়। মেহেদী পালিয়ে গিয়ে তার বাহিনীর সদস্য বড় সাঈদের মাধ্যমে গুলশান ও বাড্ডা এলাকার চাঁদা সংগ্রহ করে আসছিল। কিন্তু সরকার পতনের পর অন্য একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ রবিন গ্রুপের হয়ে সুমন গুলশান বাড্ডা এলাকায় চাঁদাবাজি শুরু করে। গুলশান এলাকার বিভিন্ন মার্কেটের দোকানে চাঁদাবাজির বিষয় নিয়ে মেহেদী গ্রুপের সঙ্গে রবিন গ্রুপের সুমনের বিরোধের সৃষ্টি হয়। ওই বিরোধের কারণে মেহেদী গ্রুপের প্রধান মেহেদীর নির্দেশে সুমনকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে সাঈদ।’

ঘটনার ৮-১০ দিন আগে সাঈদ সুমনকে হত্যার উদ্দেশে বিল্লাল ও মামুনের নেতৃত্বে মেহেদী গ্রুপের ৪-৫ জন সন্ত্রাসী দিয়ে একটি কিলার গ্রুপ গঠন করে। মেহেদী গ্রুপের সদস্যরা প্রতিদিন সুমনের ওপর নজর রাখে। ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) সন্ধ্যার সময় মেহেদী গ্রুপের একটি কিলার গ্রুপ সাঈদের বাসায় মিটিং করে এবং তার বাসা থেকে অস্ত্র নিয়ে গুলশান এলাকায় যায়। ওই এলাকায় গিয়ে সুমনকে গোপনে খুঁজতে থাকে। ওইদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে সুমনকে গুলশান-১ পুলিশ প্লাজার কাছে ডাক্তার ফজলে রাব্বি পার্কের সামনে বসা অবস্থায় দেখতে পেয়ে গুলি করে। সুমন গুলি খেয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় পেছন থেকে সন্ত্রাসীরা তাকে আরও কয়েকটি গুলি করে। সুমনের মৃত্যু নিশ্চিত করে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×