জুলাই আন্দোলনকে ৭১’এর সঙ্গে তুলনা, তোপের মুখে ঢাকার সিভিল সার্জন


March 2025/Zillur Rahman.jpg

ছাত্র-জনতার জুলাই আন্দোলনকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধের সঙ্গে তুলনা করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তোপের মুখে পড়েছেন ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডাক্তার মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান।

বুধবার (২৬ মার্চ) ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৫ উদযাপন অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। পরে ক্ষমা চান মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান। 

বুধবার সকাল ১১টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রথমে অতিথিরা আসন গ্রহণ করেন, এরপর জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ। সমাবেশ ও কুচকাওয়াজের পর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বরণ করে নেওয়া হয়। পরে আগত অতিথিরা বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন।

এক পর্যায়ে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম তার এখনো অপূর্ণতা রয়ে গেছে। যার কারণে ২০২৪ সালে জুলাই আন্দোলন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন সংবর্ধনা দিয়েছি, জুলাই আন্দোলনকারীদেরও সংবর্ধনা দেবো।’

জিল্লুর রহমান বলেন, ‘যে কারণে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার যুদ্ধ হয়েছিল একই কারণে ২০২৪ এ যুদ্ধ হয়েছে। বার বার যুদ্ধ করেছি।’

এ সময় সামনে বসে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তোপের মুখে পড়েন এ সিভিল সার্জন। তারা আসন থেকে উঠে এর প্রতিবাদ করেন। তারা বলেন, ‘আপনি বলছেন একই কারণে যুদ্ধ হয়েছে। একই কারণে না। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার যুদ্ধের সঙ্গে ২০২৪’-এর আন্দোলনের তুলনা হয় না। আপনার বক্তব্য উইড্রো (প্রত্যাহার) করেন। আপনি নেমে যান।’

নিজের অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলের জন্য ক্ষমা চান মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান। পরে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত সবাইকে নিরব থাকার আহ্বান জানান।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার ২১ বছর বয়স ছিল। আমাদের মা-বাবার দুই মেয়ে আর একমাত্র ছেলে আমি। যুদ্ধে যখন জোয়ান ছেলে মেয়েদের ধরে নিয়ে মেরে ফেলা হয়, আমার মা তখন বলেছিলেন, তোমারে পাকিস্তানিরা ধরে নিয়ে মেরে ফেলবে। তুমি মুক্তিযুদ্ধে চলে যাও। তুমি যদি শহীদ হও, আমার কোনো কষ্ট থাকবে না। ভারতে গিয়ে গেরিলা ট্রেনিং নিয়ে ১১ নম্বর সেক্টরে নয় মাস যুদ্ধ করে। এসময় জঙ্গলে জঙ্গলে পড়ে রয়েছি। পোকায় খাইছে, গায়ে ঘা হয়েছে। খাবার ঠিক মতো পাই নাই। আমাদের ট্রেনিং ছিল রাতের বেলা। পাকসেনাদের ভয়ে দিনের বেলা বের হতে পারতাম না। এতো কষ্ট করে দেশ স্বাধীন করছি। আমরা কোনো বিনিময় চাই নি। রাষ্ট্র আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তান উপাধি দিয়েছে। আমাদের সম্মাননা দিয়েছে। আমরা খুশি হয়েছি। কিন্তু এখানে যখন মুক্তিযুদ্ধ ও ২৪’-এর জুলাইকে এক বলা হয়, তখন আমাদের কষ্ট লাগে। আমাদের সম্মানে আঘাত লাগে। সেজন্য আমরা প্রতিবাদ করেছি। ৯ মাস আমরা যুদ্ধ করেছি, আর ওনারা আন্দোলন করেছেন। সরকারের ভুলের কারণে ছাত্ররা কোটা আন্দোলন করেছে।’

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×