আনন্দে ভেসে সাম্যের নিদর্শন স্থাপনে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১২:৫৪ পিএম, ৩১ মার্চ ২০২৫

যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও ব্যাপক উৎসাহ, আনন্দ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সারা দেশের মুসলমানরা পালন করছেন বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা এক মাস রোজা পালন শেষে আজ সোমবার (৩১ মার্চ) জামাতে ঈদের নামাজ আদায়ের মাধ্যমে শুরু করেছেন ঈদ উদযাপন।
ধনী-গরিব এক কাতারে দাঁড়ানো, আনন্দে ভেসে সাম্যের নিদর্শন স্থাপনই পবিত্র ঈদুল ফিতর। আর এভাবেই ঈদুল ফিতর পালিত হচ্ছে পুরো দেশজুড়েই।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের উৎসব ঘিরে মুমিন হৃদয়ে ছড়িয়ে পড়েছে আনন্দের ঢেউ। কারণ ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি ভাগাভাগি করা। ঈদ মানে আত্মত্যাগের মহিমায় নিজেকে শাণিত করা।
রমজান আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের সুসংবাদ নিয়ে আসে। মুসলমানরা সিয়াম সাধনার মাধ্যমে নিজেদের পরিশুদ্ধ এবং পরকালের জীবনকে সমৃদ্ধ করেন। পার্থিব জীবনে মুসলমানদের জন্য এটা অনেক বড় আনন্দের বিষয়। আরও আনন্দের বিষয় হচ্ছে মাহে রমজান শেষে খুশির ঈদ। কারণ এই ঈদ ফিতরা দিয়ে গরিবের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয়। ঈদ ধনী-গরিবের মধ্যে সুসম্পর্ক সৃষ্টি করে। ঈদ ধর্মীয় উৎসব হলেও এটি মূলত গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অনুষ্ঠান।
ঈদ উদযাপনের অংশ হিসেবে রাজধানীর হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের প্রধান জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আবদুল মালেক ও মোকাব্বিরের দায়িত্ব পালন করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন ক্বারী মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান।
ঈদ জামাতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, রাজনৈতিক নেতা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকসহ সর্বস্তরের হাজারো মানুষ নামাজ আদায় করেন। একইভাবে ঢাকায় বিভিন্ন এলাকাসহ সারা দেশের মসজিদে, ঈদগাহে ঈদের জামাতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন।
তাছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈদ জামাত শেষে সকাল ৯টায় ঈদ আনন্দ মিছিল শুরু হয়। ঈদ মিছিলটি পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠ থেকে শুরু হয়ে সংসদ ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। ঈদ মিছিলটি ছিল বর্ণাঢ্য। মিছিলের সামনে শাহী ঘোড়া ও সামনে-পেছনে ২০টির মতো ঘোড়ার গাড়ি ছিল। ব্যান্ড পার্টি সুলতানি-মোঘল আমলের ইতিহাস সম্বলিত চিত্রকলাও ছিল। নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এই ঈদ আনন্দ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। এর মাধ্যমে ঢাকার ৪০০ বছরের ঈদ ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)।
এ ছাড়া সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে মিছিল গিয়ে শেষ হওয়ার পর সেখানেই হচ্ছে সংক্ষিপ্ত একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে শিল্পীরা ঈদের গান পরিবেশন করছেন। থাকছে বাউলশিল্পীদের পরিবেশনা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সময়ে সাধারণ মানুষদের আপ্যায়ন করা হবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ এসময় ঈদের সেমাই, মিষ্টি ও বাতাসা খেতে পারছেন। পাশাপাশি ঢাকা উত্তর সিটির ঈদ আনন্দ উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ দুই দিনব্যাপী ঈদ আনন্দমেলা। ঈদের দিন ও এর পরদিন এ মেলা হবে বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে। মেলায় বিভিন্ন পণ্যের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ২০০টির বেশি স্টল থাকবে। দুই দিনই মেলা সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে। মেলায় শিশুদের বিনোদনের জন্য নাগরদোলা থাকবে। খেলাধুলার জন্য রাখা হবে বিভিন্ন খেলার সামগ্রী।