কোনো দেশ চোখ রাঙালে চোখ উপড়ে ফেলব: সারজিস আলম
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, নরেন্দ্র মোদিকে বলব, এটা বাংলাদেশ। পৃথিবীর সব রাষ্ট্রকে বলে দিতে চাই, সবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক হবে ন্যায় ও সমতার ভিত্তিতে। কেউ যদি চোখ রাঙায় তাহলে চোখ উপড়ে ফেলব। এখানে কোনো উগ্রবাদের জায়গা হবে না। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) জাতীয় নাগরিক কমিটির বিজয় র্যালি শেষে এসব কথা বলেন তিনি। সারজিস আলম একই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক এবং জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, ৭১ এ শেখ মুজিবুর রহমান পারিবারিক মুজিববাদ করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়েছেন। এবার খুনি হাসিনাও মুজিববাদ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে নাগরিকদের দালাল আর দাসে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। ছাত্র-জনতা এসব হতে দেয়নি, কখনো দেবেও না। দালাল বা দাস নয়, সকলকে দেশের মর্যাদাবান নাগরিক হতে আহ্বান জানান জাতীয় নাগরিক কমিটির এ নেতা।
আইন উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাওয়ের ঘোষণা মাহিনের, সংহতি হাসনাতের
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিতে কমিশন গঠনে গড়িমসি করে সরকার দেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বলে মন্তব্য করে আইন উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাও করার ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহিন সরকার। বিডিআর হত্যাকাণ্ডে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে নিয়ে মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় এ কর্মসূচি পালন করার কথা জানান তিনি। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ফেসবুকে এক পোস্টে মাহিন এ ঘোষণা দেন। এ দিকে, সমন্বয়ক মাহিনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি লিখেছেন, ‘আমি আমার ভাই মাহিনের পক্ষে। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার হতেই হবে।’ (হ্যাশট্যাগ) আইএমউইথমাহিন। এর আগে মাহিন সরকার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একজন নগন্য অংশীদার হিসেবে আমি মাহিন সরকার বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ভিক্টিম পরিবারগুলোকে সঙ্গে নিয়ে কাল (১৭ ডিসেম্বর) আইন উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাও করব। আমার সঙ্গে যদি কেউ না-ও যায়, এমনকি পুরো বাংলাদেশের একজনও যদি আমার পক্ষে না থাকে তবুও আমি আমার এই দৃঢ় অবস্থান থেকে বিন্দুমাত্র পিছু হটব না।’ মাহিন আরও লিখেছেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের চার মাস অতিবাহিত হওয়ার পরেও বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে না পারা হল এই অন্তর্বর্তী সরকারের একটি চরম ব্যর্থতা। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিতে কমিশন গঠনে গড়িমসি করে এই সরকার দেশের তামাম জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যা স্পষ্টতই প্রহসনের শামিল।’ তিনি লিখেন, ‘একাত্তরে বাংলাদেশের আপামর মুক্তিকামী জনতার অর্জিত বিজয়কে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত তাদের নিজেদের জয় বলে আখ্যা দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এ অবস্থায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে অবহেলা করা এবং ভারতের এমন ইতিহাস বিকৃতির স্পষ্ট প্রতিবাদ না জানানো আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ।’ মাহিন আরও উল্লেখ করেন, ‘কোন ভিনদেশী পরাশক্তি কিংবা হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে ক্ষমতায় আসীন হওয়া এই অন্তর্বর্তী সরকারও যদি আমার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তবুও আমি বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিতে আমৃত্যু লড়ে যাব। এই বিচার নিশ্চিত না করা পর্যন্ত সংস্কার কার্যক্রম কিংবা কমিশন গঠনের নামে দীর্ঘসূত্রিতার কোন পদক্ষেপকে আমি গ্রাহ্য করব না। কাল সকাল ১১টায় সচেতন ছাত্র-নাগরিকের সঙ্গে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু।’
বঙ্গভবনের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান, যোগ দেননি অলি
৫৪ বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে যোগ দেননি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা জানান। বিজয় দিবসের সে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হলেও না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন অলি আহমদ। দলটির যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ জানান, সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর হওয়ায় তার হাতেও ছাত্র-জনতার তাজা রক্ত লেগে আছে। তাই, চুপ্পুর অনুষ্ঠান প্রত্যাখ্যান করেন মুক্তিযুদ্ধের প্রথম খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা অলি আহমদ।
বিজয় দিবসে বঙ্গভবনে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা
৫৪তম বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। এ সময় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্যদের বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানান। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকালে এ সংবর্ধনা দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠদের অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘তাদের অবদান জাতির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’ রাষ্ট্রপতি বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক। অনুষ্ঠানে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্যদের হাতে উপহার সামগ্রী তুলে দেন রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী। রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আদিল চৌধুরী ও প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল প্রশ্নে রায় মঙ্গলবার
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ বেশকিছু বিষয়ে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে জারি করা পৃথক রুলের ওপর মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) হাইকোর্টে রায় ঘোষণা করা হবে। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গেল ৫ ডিসেম্বর রুলের ওপর শুনানি শেষে রায়ের মঙ্গলবার ধার্য করেন। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে হাইকোর্টের এই বেঞ্চের কার্যতালিকায় দেখা যায়, পঞ্চদশ সংশোধনী সংক্রান্ত পৃথক রিট আবেদন মঙ্গলবারের কার্যতালিকার ১ ও ২ নম্বরে রায়ের জন্য নির্ধারিত রয়েছে। আদালতে এই রিট আবেদনের ওপর রাষ্ট্রপক্ষে রুলের শুনানি অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলে বিষয়ে রিটকারী সুজনের বদিউল আলমের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরিফ ভূঁইয়া। বিএনপির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, বদরুদ্দোজা বাদল, রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রমুখ। এছাড়া, জামায়াতের পক্ষে শিশির মনির, ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিকী, ইনসানিয়াত বিপ্লবের পক্ষে ইশরাত হাসান এবং চার আবেদনকারীর পক্ষে জুনায়েদ আহমেদ চৌধুরী ও ইন্টারভেনর হিসেবে হামিদুল মিসবাহ শুনানি করেন। বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে। এই সংশোধনীর দ্বারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপের পাশাপাশি জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়। এছাড়া, অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে দোষী করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধানও যুক্ত করা হয়েছ। আগে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনে নির্বাচন করার বিধান থাকলেও ওই সংশোধনীতে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিষয়টি সংযোজন করা হয়। সরকার পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে গত ১৮ আগস্ট সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি। অন্য চার ব্যক্তি হলেন তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান। পর দিন ওই রিটের শুনানি নিয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এই রুলের শুনানিতে বিএনপি, জামায়াত, ইনসানিয়াত বিপ্লবসহ কয়েকটি দল পক্ষভুক্ত হয়। অন্য দিকে, গত অক্টোবরে পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ১৭টি ধারার বৈধতা নিয়ে নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনও হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করেন। পরে এই রিটের শুনানি নিয়ে ২৯ অক্টোবর হাইকোর্টের একই বেঞ্চ আরেকটি রুল জারি করেন। রুলে আইনের ওই ধারাগুলো কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দুইটি রুলের ওপর ১১ কার্যদিবস শুনানি গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। এরপর ৫ ডিসেম্বর রায়ের দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট।
মোদির দাবি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি: হাসনাত আব্দুল্লাহ
১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পোস্টে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে 'ভারতের যুদ্ধ' বলে দাবি করার সমালোচনা করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে মোদি ও ভারতের সমালোচনা করে দেওয়া এক পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু মোদি দাবি করেছে, এটি শুধু ভারতের যুদ্ধ এবং তাদের অর্জন। তাদের বক্তব্যে বাংলাদেশের অস্তিত্বই উপেক্ষিত।তিনি আরও লেখেন, যখন এই স্বাধীনতাকে ভারত নিজেদের অর্জন হিসেবে দাবি করে, তখন আমি একে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, এবং অখণ্ডতার প্রতি সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখি। ভারতের এই হুমকির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়া অবশ্যম্ভাবী। এই লড়াই আমাদের চালিয়ে যেতেই হবে। এর আগে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এর এক পোস্টে মোদি লেখেন, আজ এই বিজয় দিবসে, আমরা ১৯৭১ সালে ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়ে অবদান রাখা সেনাদের সাহস ও আত্মত্যাগকে সম্মান জানাই। তাদের নিঃস্বার্থ উৎসর্গ এবং অটল সংকল্প আমাদের জাতিকে রক্ষা করেছে এবং আমাদের গৌরব এনে দিয়েছে।
ঢাকার রাজপথে বিজয়ের উল্লাস জনতার
ঢাকার রাজপথে বিজয়ের উল্লাসে মেতেছেন তরুণ-তরুণীসহ ছাত্র-জনতা। রক্ত দিয়ে বাংলাদেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করা আপোসহীন শিক্ষার্থীরা স্মরণ করছেন মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানীদের। তরুণদের প্রত্যাশা, নতুন বাংলাদেশে থাকবে না আধিপত্যবাদের চোখ রাঙানি। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) ঢাকার পথে পথে দেখা যায়, ছোট-বড়দের হাতে জাতীয় পতাকা, কণ্ঠে স্লোগান। স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে তরুণদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণও বহু দিন দেখেনি কেউ! মাস কয়েক আগেই রক্ত দিয়ে স্বৈরাচার হটিয়েছেন তরুণরা।এবার বিজয় দিবস উদযাপনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয় র্যালি নজর কেড়েছে নগরবাসীর। র্যালিতে অংশ নিতে এক কাতারে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।তরুণরা বলছেন, ‘গত ১৫ বছর বিজয়ের স্বাদ পায়নি সাধারণ মানুষ। এক দল ও গোষ্ঠীর হাতেই বন্দি ছিল স্বাধীনতা। চব্বিশের বিজয় তাই উচ্ছ্বাসের; নতুন এই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় তাদের কণ্ঠে।’বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, ‘স্বাধীনতার পূর্ণ অধিকার ফিরিয়ে দেয়াই এবারের বিজয় দিবসের শপথ।’তিনি আরো বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতার পূর্ণ দখলদারিত্ব চাই, যাতে পরবর্তী বাংলাদেশ হবে শুধুই বাংলাদেশের। সেখানে ভারত বা কোন বিদেশি আগ্রাসন বা অখণ্ডতার প্রতি হুমকি হওয়ার মত কোন ব্যাপার থাকবে না। বাংলাদেশ নিজের ভূখণ্ডে একটি কমিউনিটি হয়ে উঠবে এবং আন্তর্জাতিক ভূখণ্ডে একটা সিভিলাইজেশন হয়ে উঠবে।’ শুধু ঢাকা নয়, বিজয় দিবসে সারা দেশেই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
দুয়েক মাসের মধ্যেই ছাত্র-জনতার নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণা
আগামী দুয়েক মাসের মধ্যেই ছাত্র-জনতার নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেছেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে একটি সুন্দর, নতুন ও ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার রাজনৈতিক দল উপহার দেবে।’ সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে বিজয় দিবসে ঢাকা জেলার সাভার উপজেলায় অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। নাসীরুদ্দীন আরো বলেন, ‘এবারের বিজয় দিবসটা আমাদের এক দিক দিয়ে আনন্দের, আবার বেদনার। আনন্দের এ জন্য যে, আমরা ভারতীয় আগ্রাসনমুক্ত ও মুজিববাদী-ফ্যাসিবাদী যে শক্তি রয়েছে, তা বাংলাদেশ থেকে উৎখাত করে বিজয় উদযাপনে হাজির হয়েছি।’ ‘কিন্তু দিল্লির যে আচরণ, মুজিববাদ টিকিয়ে রাখতে আগ্রাসী মনোভাব বিদ্যমান, তা নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। হাসিনা ওই প্রান্তে বসে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের যুবসমাজকে এ বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে। যে লড়াইটা, তা ঐক্যবদ্ধভাবে চলমান রাখতে হবে।’ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণকালে তার সঙ্গে ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেনসহ সংগঠনটির নানা পর্যায়ের নেতাকর্মী।
রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
বিজয় দিবস উদযাপনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘ফ্যাসিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আমন্ত্রণে বঙ্গভবনে যাওয়া অসঙ্গতিপূর্ণ।’ সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সেল থেকে প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সেল সম্পাদক (দপ্তর সেল) জাহিদ আহসানের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বিজয় দিবসে ফ্যাসিবাদী শাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন কর্তৃক বঙ্গভবনে বিজয় দিবস উদযাপনের আমন্ত্রণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রত্যাখ্যান করেছে। নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সাংগঠনিকভাবে যুক্ত কোন নেতা-কর্মী আজ বঙ্গভবনে বিজয় দিবস উদযাপনের অনুষ্ঠানে যাবে না।’ এতে আরও বলা হয়েছে, ‘বিজয় দিবসের মত জাতীয় গৌরবের দিন ফ্যাসিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে পালন করাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানের অভিপ্রায়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ মনে করে।’
বিজয় দিবস নিয়ে মোদির বক্তব্যের প্রতিবাদ আসিফ নজরুলের
বাংলাদেশের বিজয় দিবস নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি এ প্রতিবাদ জানান।পোস্টে আসিফ নজরুল লিখেন, ‘তীব্র প্রতিবাদ করছি। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ ছিল বাংলাদেশের বিজয়ের দিন। ভারত ছিল এই বিজয়ের মিত্র, এর বেশি কিছু নয়।’এ পোস্টে বিভিন্নজন প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন। মন্তব্য বাক্সে একজন লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, ভারত নয়। বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর।’এর আগে বিজয় দিবস নিয়ে নিজের ফেসবুকে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘আজ, বিজয় দিবসে, আমরা ১৯৭১ সালে ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়ে সাহসী সৈন্যদের সাহস ও আত্মত্যাগকে সম্মান জানাই।’মোদির দাবি, ‘তাদের নিঃস্বার্থ উৎসর্গ এবং অটল সংকল্প আমাদের দেশকে রক্ষা করেছে ও গৌরব এনে দিয়েছে।’ভারতের প্রধানমন্ত্রী আরও লেখেন, ‘এই দিনটি তাদের অসাধারণ বীরত্ব ও তাদের অদম্য চেতনার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। তাদের আত্মত্যাগ চিরকাল প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে এবং আমাদের দেশের ইতিহাসে গভীরভাবে গাঁথা থাকবে।’
জাতীয় স্মৃতিসৌধে সব স্তরের জনতার ঢেউ
জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকা জেলার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে নেমেছে সব স্তরের জনতার ঢেউ। এ সময় ফুলেল শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় স্মরণ করা হয় দেশের জন্য আত্মদানকারী বীর শহীদদের। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে রাষ্ট্রপতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শ্রদ্ধা জানানোর পরে জাতীয় স্মৃতিসৌধ খুলে দেওয়া হয় সর্ব সাধারণের জন্য। এরপরে সেখানে নামে হাজারো মানুষের ঢল। সোমবার জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী, শিশু-কিশোর ও বয়োবৃদ্ধরা ফুলেল শ্রদ্ধা জানায় বীর শহীদদের। স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মিরপুর থেকে পরিবার নিয়ে এসেছি। যাদের জীবনের বিনিময়ে দেশে স্বাধীনতা পেয়েছি, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।’ শিক্ষার্থী মীম আক্তার বলেন, ‘আমরা দেশ স্বাধীন হতে দেখিনি। তবে, যারা দেশকে স্বাধীন করেছেন, তাদের আত্মত্যাগের কথা আমরা জেনেছি। আমরা নতুন প্রজন্ম তাদেরকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।’ এর আগে, সোমাবর সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাতির বীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ ও তাদের শ্রদ্ধায় পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর সকাল সাতটা ১২ মিনিটে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।’ এ সময় পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস হোর্তা, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মন্ডলী, মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, দেশি-বিদেশি কূটনীতিক শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
শেখ মুজিব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন: আরিফ সোহেল
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেছেন, ‘শেখ মুজিব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। জনগণের চাপে স্বাধীনতার কথা বলতে বাধ্য হন।’ সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিজয় র্যালি শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আরিফ সোহেল আরো বলেন, ‘যুদ্ধের সময় ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নেতারা।’ বিদেশি প্রেসক্রিপশনে ‘৭২-এর সংবিধান রচনা করা হয়। ‘৭৫ সালে বাকশাল কায়েম করে পরাধীন করা হয় দেশের মানুষকে। ‘২৪-এর আন্দোলনকারীরা মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরী বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সোমবার দুপুর পৌনে ১২টায় শুরু হয় র্যালি। টিএসসি, শাহবাগ, মৎস্য ভবন প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়। বিজয় র্যালিতে অংশ নিতে সকাল থেকেই শহীদ মিনারে জড়ো হন ছাত্র-জনতা। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা। হাতে জাতীয় পতাকা আর কণ্ঠে বাংলাদেশ স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে শহীদ মিনার এলাকা। বিজয় দিবসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দিনব্যাপী কর্মসূচি নিয়েছে। দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে বিজয় উদযাপন।
জাতীয় সংসদের সামনে কনসার্টকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা জোরদার
রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে অনুষ্ঠেয় কনসার্টকে কেন্দ্র করে আশপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, আনসার ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের অনুষ্ঠানস্থলে রাখা হয়েছে। বিজয় দিবসের সকালে জাতীয় সংসদের সামনে গিয়ে দেখা যায়, কনসার্টে যোগ দিতে দলে দলে আসছেন মানুষ। উন্মুক্ত এই কনসার্টে পারফর্ম করবেন জেমস, সৈয়দ আব্দুল হাদী, খুরশিদ আলম, কনকচাঁপা, আসিফ আকবর, বেবী নাজনীন, মনির খান, কণা, ইমরান, প্রীতম, মৌসুমী ও জেফার। এই কনসার্টকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার স্বার্থে আসাদ গেট অংশের প্রবেশ মুখ বন্ধ করা হয়েছে। এর বিপরীত পাশের সড়ক দুই মুখী করা হয়েছে। ফলে আড়ং থেকে ফার্মগেট অভিমুখে গাড়ি আসছে এবং খামারবাড়ি থেকে গাড়ি আসাদ গেট অভিমুখে যাচ্ছে। জাতীয় সংসদের সামনের সড়কে ঠিক মাঝ বরাবর তৈরি করা হয়েছে মঞ্চ। মাঝখানের অংশ থেকে খামারবাড়ির মোড় পর্যন্ত কালো কাপড়ে ঘিরে রাখা হয়েছে কনসার্টের জন্য। মাঝে বসার জায়গা রাখা হয়েছে। অনুষ্ঠান স্থলে প্রবেশের মুখ একটাই রাখা হয়েছে, সেটা খামার বাড়ির দিকে। লোকজন খামারবাড়ির অংশ দিয়ে কনসার্টের মঞ্চের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। পুলিশের সদস্যরা অনুষ্ঠানের স্থলে আগতদের তল্লাশি করে ঢোকার অনুমতি দিচ্ছেন। যদিও অনুষ্ঠান বারোটার দিকে শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু মূল কনসার্ট শুরু হবে দুপুর দুইটার দিকে। এর আগেই লোকজন আসতে শুরু করেছেন। মঞ্চের পেছনে শিল্পীদের প্রবেশের জন্য একটি গেট রাখা হয়েছে। পেছনে ফাঁকা সড়কে বেসরকারি নিরাপত্তা এজেন্সির কিছু গাড়ি এবং তাদের সদস্যদের দেখা গেছে। তাদের মধ্য থেকে ডগ স্কোয়াডের দায়িত্বে থাকা একজন জানালেন, তাদের প্রায় কয়েক শতাধিক সদস্য এখানে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের ডগ দিয়ে অনুষ্ঠানের স্থলে কোনো ধরনের ঝুঁকি বা বোমা জাতীয় কিছু রাখা আছে কিনা এসব বিষয় দেখভাল করেন। এখনো অনুষ্ঠান স্থলে ট্রাকে করে অতিথি ও শিল্পীদের বসার চেয়ার আনা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও জোনের এডিসি তানভীর হোসেন বলেন, এখানে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, সেনাবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও জাতীয় সংসদের দুই পাশের প্রবেশ মুখে পুলিশ সদস্যরা রয়েছেন। আয়োজক কমিটি তাদের ব্যবস্থাপনায় কিছু নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে এমন লোক রেখেছেন। সব মিলিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুন্দরভাবে জোরদার করা হয়েছে।
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের স্বাধীন তদন্ত প্রয়োজন: আসিফ নজরুল
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি যে, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের স্বাধীন একটি তদন্ত প্রয়োজন।’ আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের ভেরিফাইড ফেসবুকে লিখা তার বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো, ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্ত বিষয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদনকারীর আজকের একটি বক্তব্য নিয়ে কিছু অস্পষ্টতা সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, সম্প্রতি দায়ের করা রিট মামলায় হাইকোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের আদেশ দেয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উক্ত কমিটি গঠন করার বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চায়। আইন মন্ত্রণালয় হাইকোর্ট বিভাগের আদেশের ব্যত্যয় ঘটানোর সুযোগ নেই মর্মে ৩ ডিসেম্বর মতামত প্রদান করে। অর্থাৎ উক্ত কমিটি গঠনের পক্ষে আইন মন্ত্রণালয় মতামত প্রদান করে। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি স্মারকে (বা এর নামে প্রচারিত একটি স্মারকে) আপাতত এই কমিটি গঠন করা সম্ভব নয় বলে জানানো হয়। এতে আইন মন্ত্রণালয়ের কোন মতামতের উল্লেখ করা হয়নি। এ ধরনের কমিটি গঠন করার এখতিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের, হাইকোর্ট-এর আদেশ অনুসারেও এটি করার কথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভবিষ্যতে বিডিআর হত্যাকাণ্ড বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে অবশ্যই আইন মন্ত্রণালয় এজন্য সব সহযোগিতা প্রদান করবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের স্বাধীন একটি তদন্ত প্রয়োজন।’ পিলখানায় বিডিআর সদরদপ্তরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুটি মামলা চলমান থাকায় আপাতত জাতীয় স্বাধীন কমিটি গঠন হচ্ছে না বলে রোববার আদালতকে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই হত্যাযজ্ঞে ও নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ড ঘিরে প্রকৃত সত্য বের করতে ‘জাতীয় স্বাধীন কমিটি’ গঠন চেয়ে আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এমন তথ্য জানায় মন্ত্রণালয়। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট বেঞ্চে গতকাল রাষ্ট্রপক্ষ এ তথ্য জানানোর পর ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করা হয়। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী তানভীর আহমেদ ও বিপ্লব কুমার পোদ্দার। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন। রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তরে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারী ঘটেছিল দেশের ইতিহাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ড। বিডিআরের বিদ্রোহের নামে ওই ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জনকে নৃশংস ও বর্বরোচিতভাবে হত্যা করা হয়।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন, প্রধান হলেন ড. ইউনূস নিজেই
যেকোনো সংস্কারের কাজে হাত দিতে গেলে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন। এ ঐকমত্যে পৌঁছাতে গেলে প্রক্রিয়া কী হবে, অন্তর্বর্তী সরকার সেভাবে অগ্রসর হবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা একটি জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন গঠনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। এর কাজ হবে রাজনৈতিক দলসহ সকল পক্ষের সঙ্গে মতামত বিনিময় করে যে সকল বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হবে সেগুলো চিহ্নিত করা এবং সুপারিশ করা। আমি এই কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবো। কমিশনে সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন অধ্যাপক আলী রিয়াজ। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সোমবার সকাল ১০টায় জাতীর উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন ড. ইউনূস। ড. ইউনূস জানান, প্রধান ৬টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পেলে আগামী মাস থেকেই এ কমিশন কাজ শুরু করতে পারবে বলে আশা করছি। এ কমিশনের প্রথম কাজ হবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যেসব বিষয় জরুরি সেসব বিষয়ে ঐকমত্য সৃষ্টি করা এবং কখন নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ চূড়ান্ত করা।
পাচার করা টাকা দেশে গোলযোগ সৃষ্টির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। সেই টাকা এখন দেশে গোলযোগ সৃষ্টির কাজে, সংহতি বিনষ্টের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্য অটুট রাখতে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিনি। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। সকাল ১০টায় এই ভাষণ শুরু করেন তিনি। বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ড তার এই ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করছে। গত আগস্ট মাসে দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতির উদ্দেশে এটি তার তৃতীয় ভাষণ। শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, ছাত্র-ছাত্রী, বয়স্ক, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষসহ দেশের সমস্ত মানুষকে সালাম দিয়ে ভাষণ শুরু করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজ জাতির এক বিশেষ দিন। বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির বুক ফুলিয়ে দাঁড়াবার দিন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অনেক অস্ত্রকে অগ্রাহ্য করে খালি হাতে রুখে দাঁড়িয়ে সম্মুখ সমরে লড়াই করে নিজেদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উৎসবের দিন। এই দিনে স্মরণ করি লক্ষ লক্ষ শহীদদের, অগণিত শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ জনতার আত্মত্যাগকে; যার ফলে স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হয়েছিল। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কিন্তু আমরা সেই অর্জনকে আমাদের দোষে সম্পূর্ণতা দিতে পারিনি। সর্বশেষ এবং প্রচণ্ডতম আঘাত হানল এক স্বৈরাচারী সরকার। সে প্রতিজ্ঞা করেই বসেছিল এ দেশের মঙ্গল হতে পারে এমন কিছুই সে অবশিষ্ট থাকতে দেবে না। তিনি বলেন, এ বছরের বিজয় দিবস বিশেষ কারণে মহা আনন্দের দিন। মাত্র চার মাস আগে একটি অসম্ভব সম্ভব হয়ে গেল, দেশের সবাই মিলে এক জোটে হুংকার দিয়ে উঠলো, পৃথিবীর ঘৃণ্যতম স্বৈরাচারী শাসককে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে আমাদের প্রিয় দেশকে মুক্ত করেছে ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থান।
নির্বাচন কবে হবে জানালেন প্রধান উপদেষ্টা
২০২৫ সালের শেষ দিকে অথবা ২০২৬ সালের প্রধামার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যদি অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয় তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়তো সম্ভব হবে। আর যদি এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি তাহলে আরও অন্তত ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। মোটাদাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। সেই টাকা এখন দেশে গোলযোগ সৃষ্টির কাজে, সংহতি বিনষ্টের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্য অটুট রাখতে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বার্ষিক উন্নয়নের ব্যয়ের অর্ধেক টাকা লুটপাট হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় কাজ ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা।
বিজয়ের দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়
আজ ১৬ ডিসেম্বর, বাংলাদেশে বিজয় দিবস। জাতি পালন করছে বিজয়ের ৫৩ বছর। এদিন সকালে সুসংবাদ দিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ক্যারিবীয় দ্বীপ সেন্ট ভিনসেন্টে টানটান উত্তেজনার ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৭ রানে হারিয়ে ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল টাইগাররা। সিরিজের প্রথম ম্যাচে আজ শেষ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ছিল ১০ রান। ক্রিজে ছিলেন স্বাগতিকদের মূল ভরসা রোভমান পাওয়েল। দারুণ ব্যাটিংয়ে একাই বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিচ্ছিলেন তিনি। তবে শেষ ওভারের তৃতীয় বলে তাকে ফিরিয়ে ম্যাচের গতিপথ বদলে দেন বাংলাদেশের পেসার হাসান মাহমুদ। এরপর পঞ্চম বলে আলজারি জোসেফকে বিদায় করেন তিনি। আর তাতে ১৪০ রানেই থামে উইন্ডিজের ইনিংস। তবে বাংলাদেশের জয়টা আরও সহজ হতে পারতো। ৬১ রানে ৭ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। কিন্তু অষ্টম উইকেটে দারুণ জুটি গড়ে দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলেন রোভমান পাওয়েল ও রোমারিও শেফার্ড। তবে ম্যাচের ১৮ তম ওভারে তাসকিন শেফার্ডকে ফেরালে জুটি ভাঙে। আর শেষে হাসান মাহমুদের দুই উইকেট তুলে নিলে জয় নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা
মহান বিজয় দিবসে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ৭টা ১২ মিনিটে তিনি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস হোর্তা, অন্য কয়েকজন উপদেষ্টা ও তিন বাহিনীর প্রধান। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর প্রধান উপদেষ্টা সেখানে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায়। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। প্রধান উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে রাখা দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন। ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমারসহ সমাজের সব শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণে রক্তক্ষয়ী নয় মাসের যুদ্ধে পর ১৯৭১ সালের এই দিনে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদ্যয় ঘটে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন দেশের। লাল-সবুজ পতাকা সংবলিত সেই স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের ৫৪তম বিজয় দিবস আজ, বাঙালি জাতির বীরত্বের অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের পর এ বছর জাতি হাজারো প্রাণের বিনিময়ে এক কর্তৃত্ববাদী শাসককে হটিয়ে নতুনভাবে বিজয় দিবস উদযাপন করছে। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পর দেশবাসী এ সময়টাকে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ বলেও অভিহিত করছে। বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা পৃথক বাণী দিয়ে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। তাই আসুন, ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে এবং মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রাখি। দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আরও এগিয়ে নিয়ে যাই, গড়ে তুলি উন্নত-সমৃদ্ধ এক নতুন বাংলাদেশ-মহান বিজয় দিবসে এই আমার প্রত্যাশা। তিনি আরও বলেন, এ বছর জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন এ দেশের মানুষ দেখেছে, তা অচিরেই বাস্তবায়িত হবে বলে আমি মনে করি। বীরের দেশ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা লাভ করবে ইনশাআল্লাহ। প্রধান উপদেষ্টা তার বাণীতে বলেন, আজকের এই দিনে, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি এবং তাদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাই। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং সুশাসিত বাংলাদেশ গঠনে সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করছে। ‘দেশকে আরও উন্নত ও শক্তিশালী করতে এবং স্বাধীনতার পূর্ণ সুফল ভোগ করতে আমরা বদ্ধপরিকর।’ প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, বিজয় দিবস কেবল আমাদের গর্বের উৎস নয়, এটি আমাদের শপথের দিনও। শপথ আমাদের একতাবদ্ধ থাকার, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করার। বিজয় দিবসকে বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত গৌরবময় ও স্মরণীয় দিন হিসেবে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি স্বাধীনতার স্বাদ এবং জাতি হিসেবে নিজস্ব পরিচিতি। প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, লাখ লাখ শহীদের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। প্রধান উপদেষ্টা ‘বিজয় দিবস ২০২৪’-এর সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করেন।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা
জাতীয় স্মৃতিসৌধে স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) ভোর সাড়ে ৬টার দিকে তিনি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর রাষ্ট্রপতি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায়। বিউগলে করুণ সুর বেজে উঠে। রাষ্ট্রপতি স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে রাখা দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন। মুক্তি পাগল বাংলার দামাল ছেলেরা স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যকে ছিনিয়ে আনবে বলে একদিন অস্ত্র কাঁধে তুলে নিয়েছিল। ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার সবাই শরিক হয় এ লড়াইয়ে। সেই ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, সেটির উদয় ঘটে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরে, বহু শতাব্দীর স্বপ্ন-স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মাধ্যমে। অবর্ণনীয় দুর্যোগে লন্ডভন্ড হওয়া বাংলাদেশের বঞ্চিত ও শোষিত মানুষ রুখে দাঁড়ায় সর্বশক্তি দিয়ে। আত্মবিস্মৃত বাঙালি আত্মপরিচয় অনুসন্ধানে উৎসর্গ করে নিজ ও স্বজনকে। ছিনিয়ে আনে বিজয়, লাল-সবুজ পতাকা সংবলিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। আজ সেই ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। বিজয়ের ৫৩তম বর্ষ। হাজার বছরের গর্বিত বাঙালি জাতির বীরত্বের অবিস্মরণীয় দিন আজ। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের মধ্য দিয়ে জাতি আজ নতুন করে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করছে। ইতিহাসে প্রথম, বছরে দ্বিতীয় ‘বিজয় দিবস’ পেল বাংলাদেশ। ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে চলা স্বৈরাচারী শাসন, ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর নিপীড়ন চালানোর জন্য ক্ষুব্ধ জনতার রোষানলের মুখে পড়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। এ বছর স্বৈরাচারী সরকার পতনের পর, বাংলাদেশের নবযাত্রায় জাতি নতুন উদ্যম ও উদ্দীপনা নিয়ে দিনটি পালন করবে। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পর দেশবাসী এ সময়টাকে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ বলেও অভিহিত করছে। আজ সরকারি ছুটির দিন। বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানান এবং মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। তাই আসুন, ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে এবং মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রাখি। দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আরও এগিয়ে নিয়ে যাই, গড়ে তুলি উন্নত-সমৃদ্ধ এক নতুন বাংলাদেশ- মহান বিজয় দিবসে এই আমার প্রত্যাশা। তিনি আরও বলেন, এ বছর জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন এ দেশের মানুষ দেখেছে, তা অচিরেই বাস্তবায়িত হবে বলে আমি মনে করি। বীরের দেশ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা লাভ করবে ইনশাআল্লাহ। রাষ্ট্রপতি বলেন, বিজয়ের এই দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের, যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি সকল জাতীয় নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সম্ভ্রমহারা দুই লাখ মা-বোন, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-সমর্থক, বিদেশি বন্ধু, যুদ্ধাহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যসহ সর্বস্তরের জনগণকে, যারা আমাদের বিজয় অর্জনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রেখেছেন। আমি আরও স্মরণ করি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদেরকে। জাতি তাদের অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।
সাবেক সংসদ ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নদভী আটক
চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নদভীকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রোববার (১৫ ডিসেম্বর) ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আত্মগোপনে থাকা সাবেক সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নদভীকে ডিবি আটক করেছে। তাকে রাজধানীর উত্তরা থেকে আজ রাতে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে, ৯ অক্টোবর চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী ও তার ভাতিজা মাদার্শা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ ন ম সেলিম চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের ৪৯ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়। এই মামলা দায়ের করেন সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের বিএনপি নেতা মো. মোস্তাফিজুর রহমান (৪০)। মামলার এজাহারে বলা হয়, গত বছরের ১৯ নভেম্বর কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কের সাতকানিয়ার দস্তিদার হাটে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সরকারের পতন ও নির্বাচনী তফসিল বাতিলের দাবি জানিয়ে মিছিল করছিলেন। এসময় সাবেক সংসদ সদস্য নেজামুদ্দিন নদভী, তার ভাতিজা সেলিম চৌধুরী, বাজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান তাপস কান্তি দত্ত, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবু ছালেহসহ কয়েকজনের নির্দেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আগ্নেয়াস্ত্র, বাঁশ ও রড নিয়ে হামলা চালান। হামলার সময় বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানসহ অন্য নেতাকর্মীরা আহত হন।
আজ মহান বিজয় দিবস
আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। বীরের জাতি হিসেবে বাঙালির আত্মপ্রকাশের দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন ভূখণ্ড হিসেবে বাংলাদেশ নাম প্রতিষ্ঠার মাইলফলকের দিন। ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বীর যোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে কিছুটা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এবার পালিত হচ্ছে বিজয় দিবস। এই বিজয়ের আনন্দের দিনে জাতি গভীর কৃতজ্ঞতা ও পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী বীর সন্তানদের। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশেষ বাণী দিয়েছেন। যথাযোগ্য মর্যাদায় বিজয় দিবস পালনে জাতীয়ভাবে দেশব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনও বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে। জাতীয় দৈনিকগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে। দিনটি সরকারি ছুটির দিন। সব সরকারি-আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। সরকারি কর্মসূচি ঢাকায় প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ের কর্মসূচি দিয়ে বিজয় দিবসের সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের পরপরই রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবেন।বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করবে। এছাড়া, দেশের সব জেলা ও উপজেলায় দিনব্যাপী আড়ম্বরপূর্ণ বিজয়মেলা আয়োজন করা হয়েছে। শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। বিকালে রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারগুলোকে সংবর্ধনা দেবেন। এছাড়া, মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে রবিবার প্রধান উপদেষ্টা স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেছেন। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে। এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশুসদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। চট্টগ্রাম, খুলনা, মোংলা ও পায়রা বন্দর, ঢাকার সদরঘাট, পাগলা (নারায়ণগঞ্জ) ও বরিশালসহ বিআইডব্লিউটিসির ঘাটে এবং চাঁদপুর ও মুন্সীগঞ্জ ঘাটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজগুলো দুপুর ২টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের দর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। দেশের সব শিশুপার্ক ও জাদুঘর বিনা টিকিটে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে এবং সিনেমা হলে বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকা-আরিচা রুটের যান চলাচলে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এই রুটে চলাচলকারী যানবাহনকে ঢাকা থেকে সাভার স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত এলাকা পরিহার করে বিকল্প সড়কে চলাচলের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
গুলিস্তানে ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনিতে যুবক নিহত
রাজধানীর গুলিস্তানে ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনিতে অজ্ঞাত এক যুবক নিহত হয়েছেন। রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গুলিস্তানের সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুব্রত পাল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। জানা গেছে, গণপিটুনিতে গুরুতর আহত হলে আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী ওই যুবককে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করেন পুলিশ সদস্যরা। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ওই যুবকের মৃত্যু হয়। এসআই সুব্রত পাল জানান, সন্ধ্যায় খবর পাই গুলিস্তানের সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের সামনে এক যুবককে ছিনতাইকারী সন্দেহে ধরে গণপিটুনি দিয়েছে জনগণ। পরে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহাদ পুলিশ বক্সের সহযোগিতায় ওই যুবককে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে ভর্তি করা হয়। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, নিহত ওই যুবকের গায়ে জিন্স প্যান্ট ও ফুল হাতা গেঞ্জি ছিল। তবে এখনও তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তবে পুলিশ পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করছে।
বিজয় উদযাপনে প্রস্তুত জাতি
দেশ স্বাধীন হয়েছে ৫৪ বছর হতে যাচ্ছে। রাত পোহালেই মহান বিজয় দিবস। আর এই গৌরবান্বিত দিনটি উদযাপনে অপরূপ সাজে সেজেছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। রাজধানীর ঢাকার অদূরে সাভারে অবস্থিত এই সৌধে ফুল দিয়ে জাতীর বীর শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে পুরো জাতি। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গসহ অনেকেই। আর তা নির্বিঘ্ন করতে নেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা। মহান বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে সবুজে ঘেরা ১০৮ হেক্টর জমির ওপর নির্মিত স্মৃতিসৌধে গত দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলে প্রস্তুতি কার্যক্রম। আর এই কাজের দায়িত্বে ছিল গণপূর্ত বিভাগ। স্মৃতিসৌধকে ঢেলে সাজিয়েছে তারা। রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় স্মৃতিসৌধ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে পুরো এলাকায় রঙিন বাতির সমাহার। মূল ফটক থেকে বেদি পর্যন্ত লাল, সবুজ ও নীল আলোকবাতি দিয়ে আলোকসজ্জায় সজ্জিত। সৌধের প্রতিটি ফটকেই লাল, নীল হলুদসহ নানা রঙের বাতি শোভা পাচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, স্মৃতিসৌধে ভিড় জমিয়েছেন নানা পেশাজীবী মানুষ। কেউ বন্ধুদের নিয়ে এসেছেন, কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছেন। এছাড়া লাল ইটে সাদা রঙের ছোঁয়া শুভ্রতা ছড়াচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে লাল টবে শোভা পাচ্ছে বাহারি ফুল গাছ। অভ্যন্তরে বিভিন্ন গাছ, স্থাপনা ও ফুলের গাছের কাছেও বাতি জ্বলতে দেখা যায়। প্রতিটি স্থাপনা সাজানো হয়েছে আলোকসজ্জায়। সড়কগুলোতে বাহারি রঙের বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। স্মৃতিসৌধের এলাকার অপর পাশে জয় রেস্তোরা, সেনা শপিং কমপ্লেক্স, সেনা অডিটোরিয়ামসহ সড়কের বিভিন্ন অংশে দেওয়া হয়েছে আলোকবাতি। এছাড়াও দেখা যায়, স্মৃতিসৌধ এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে চারদিক সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৬ ডিসেম্বর বাঙালির বিজয়ের দিনে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা নিবেদন ও ভালোবাসা জানাতে স্মৃতিসৌধে মানুষের ঢল নামবে। রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টাসহ দেশ–বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এদিন শ্রদ্ধা জানাতে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে আসবেন। উদযাপন নির্বিঘ্ন করতে ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। স্মৃতিসৌধের নানা স্থানে নতুন করে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের দায়িত্বে থাকা সাভার গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও মহান বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাতির বীর শহীদ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টাসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আসবেন। তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সৌধে প্রবেশের ফটকগুলো খুলে দিলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লাখো মানুষের ঢল নামবে সৌধ প্রাঙ্গণে। তাদের হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে বেদি। দিবসটি যাথযথভাবে উদযাপনের জন্য বরাবরের মতো এবারও পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে বলে জানান মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গণপূর্ত বিভাগের কর্মীদের টানা ১৫ দিনের পরিশ্রমে সৌধপ্রাঙ্গণ পেয়েছে নতুন রূপ। ধোয়া-মোছা শেষে সিঁড়িসহ অন্যসব স্থাপনায় পড়েছে রং-তুলির আঁচড়। বাহারি ফুল গাছে ঢেকে দেওয়া হয়েছে বেদির সবুজ চত্বর। বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি একেএম আওলাদ হোসেন বলেন, সৌধপ্রাঙ্গণসহ আশপাশের এলাকায় বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। পুরো সাভার এলাকায় বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। দিবসটি উপলক্ষে তিন হাজারের বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পুরো সাভারজুড়ে মোতায়েন থাকবে বলেও জানান তিনি।