বিশ্ব ক্যান্সার দিবস

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই ও আমাদের করণীয়

  • প্রকাশঃ ০৩:৫১ পিএম, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

November 16/Syd Humayun Kabir-1.png

প্রতি বছর ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যান্সার দিবস পালিত হয়। যার মূল লক্ষ্য ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন নিশ্চিত করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং বিভিন্ন ক্যান্সার গবেষণা সংস্থা এই দিবসকে কেন্দ্র করে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে। যার মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধ, নির্ণয় ও চিকিৎসার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। 

ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, প্রতি বছর প্রায় ১০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং এর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ক্যান্সারের সবচেয়ে সাধারণ ধরনগুলোর মধ্যে রয়েছে ফুসফুস ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, অন্ত্র ক্যান্সার ও প্রোস্টেট ক্যান্সার।

গবেষণায় দেখা গেছে, শতকরা ৮০% ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব যদি আমরা সচেতন হই এবং সঠিক জীবনযাত্রা অনুসরণ করি। ক্যান্সারের বিভিন্ন কারণ রয়েছে যার মধ্যে কিছু প্রতিরোধযোগ্য।  জেনেটিক কারণ ছাড়াও জীবনযাত্রার ধরন, খাদ্যাভ্যাস, পরিবেশগত দূষণ, ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

ক্যান্সার প্রতিরোধে  সঠিক পুষ্টি ও ভিটামিন গ্রহণ ছাড়া কোন বিকল্প নেই। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত ভিটামিন ও মিনারেল প্রয়োজন। বিশেষ করে ভিটামিন ডি, বি১, বি১২ এবং থার্টিন শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন অন্তত ১০-১৫ মিনিট সকালে রোদে থাকা উচিত যা শরীরে ভিটামিন ডি উৎপাদনে সহায়তা করে।

রাসায়নিক ও কেমিক্যালযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। ভেজালমুক্ত ও অর্গানিক খাবারের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকযুক্ত খাদ্যদ্রব্য পরিহার করা জরুরি। প্রায় ৩০-৫০% ক্যান্সার প্রতিরোধযোগ্য, যদি আমরা কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস মেনে চলি। বেশি পরিমাণে শাকসবজি, ফলমূল, আঁশযুক্ত খাবার এবং কম চর্বিযুক্ত প্রোটিন গ্রহণ ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ধূমপান ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ। শতকরা প্রায় ৪০% ক্যান্সার ধূমপান ও বায়ু দূষণের কারণে হয়। তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের ফলে ফুসফুস, মুখগহ্বর, গলা ও পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। ক্যান্সার থেকে বাঁচতে হলে ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন করতে হবে। ধূমপান পরিহার করলে এবং দূষিত বাতাস থেকে দূরে থাকলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

মোবাইল ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসের অতিরিক্ত আসক্তি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম এড়ানো উচিত। বাসা-বাড়িতে মশার কয়েল ও ক্ষতিকর কেমিক্যালযুক্ত স্প্রে কম ব্যবহার করতে হবে।  বায়ু দূষণ ও অন্যান্য পরিবেশগত দূষণ ৩৫% ক্যান্সারের জন্য দায়ী।

দৈনিক অন্তত ৩০ মিনিট শারীরিক পরিশ্রম করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। স্থূলতা অনেক ধরনের ক্যান্সারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসার সফলতার হার অনেক বেশি থাকে। তাই নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ করা জরুরি। বর্তমানে ক্যান্সার চিকিৎসায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। ইমিউনোথেরাপি, কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি ও জেনেটিক থেরাপির মাধ্যমে এখন ক্যান্সার চিকিৎসা অনেক বেশি উন্নত হয়েছে। তবে ক্যান্সারের নিরাময় এবং উন্নত চিকিৎসা সবার জন্য সহজলভ্য করা এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখার মাধ্যমে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই। আমরা যদি নিজেরা সচেতন হই এবং পরিবার ও আশপাশের সবাইকে সচেতন করি, তাহলে এই মরণব্যাধি থেকে বাঁচতে পারব। এই বিশ্ব ক্যান্সার দিবসে আসুন আমরা প্রত্যেকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই—ক্যান্সার সম্পর্কে জানব, সচেতন হব এবং অন্যদেরও সচেতন করব।

লেখক : সৈয়দ হুমায়ুন কবির
ক্যান্সার গবেষক ও সভাপতি ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটি বাংলাদেশ। 

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×