আরও আগে মহানবীর জীবনী না পড়ে বড় ভুল করেছি: আসিফ নজরুল

মহানবী হযরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। রোববার বিকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া ওই স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো- ‘আমার জীবনের একটা বড় সময় কেটেছে ধর্মীয় বই না পড়ে। এখন যখন পড়ি, বিশেষ করে আমাদের প্রিয় মহানবীর (সা.) জীবনী, মনে হয় কি বিরাট ভুল করেছি। উনি কি শুধু মহানবী ছিলেন? প্রায় ৭/৮টা উনার জীবনীগ্রন্থ পড়েছি। এর মধ্যে আছে ক্যারেন আর্মস্ট্রং, মার্টিন লিংস, আদিল সালাহির মতো স্বনামধন্য লেখকদের বই। উনার সম্পর্কে আগের চেয়ে অনেক বেশ জানি এখন। আমাদের মহানবী (সা.) শুধু শ্রেষ্ঠ নবী ছিলেন না; তিনি ছিলেন একজন অসাধারণ সমরনায়ক, রাষ্ট্রনায়ক এবং দলনেতা। তিনি যে রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছিলেন তার মতো শান্তিময়, কল্যাণকর ও মানবিক রাষ্ট্র পৃথিবীর ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যাবে না। উনার বিনয়, সততা, পরোপকার, দয়া ও ক্ষমাশীলতা ছিল তুলনাহীন। আমাদের এক শ্রেণির শিক্ষিত মানুষ উনার গুণগান শুনতে অস্বস্তি বোধ করেন। আরেক শ্রেণি না জেনে মন্তব্য করেন। আল্লাহর কাছে শোকর করি, আমি দেরিতে হলেও মহানবীর (সা.) ওপর পড়াশোনা করছি। যদি আমার ভাগ্যে থাকে, কিশোর পাঠকদের উপযোগী করে উনার জীবনী রচনারও ইচ্ছা রাখি। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন।’ ঢাকাওয়াচ/স

বাংলাদেশে সমুদ্র দূষণ রোধে প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস

আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে এবং ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় মোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার বেশি সমুদ্র এলাকা এখন বাংলাদেশের। এছাড়া ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল ও চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৪৫ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহিসোপানের তলদেশে সবধরনের প্রাণিজ-অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার। মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রে বিরোধপূর্ণ ১৭টি ব্লকের ১২টি পেয়েছে বাংলাদেশ এবং ভারতের কাছ থেকে দাবিকৃত ১০টি ব্লকের সবগুলোই পেয়েছে বাংলাদেশ। এসব ব্লক থেকে প্রায় ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া সম্ভব। ২ বছরের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল প্রদত্ত এ রায় দুইটি বাংলাদেশের জন্য ‘সমুদ্র বিজয়’ নামে আখ্যায়িত হয়েছে। বাংলাদেশের সমুদ্র বিজয়ের পর আন্তর্জাতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ একটি দেশ হিসেবে আলোচিত ও স্বীকৃত বাংলাদেশ, যে দেশে মানব স্বাস্থ্য এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য একটি অন্যতম সমস্যা সামুদ্রিক ও উপকূলীয় দূষণ। বাংলাদেশের সমুদ্রাঞ্চল ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার। এই বিশাল সমুদ্র সীমার দূষণ ঠেকাতে না পারলে আমাদের এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলের জলজ প্রাণিজগৎ বিপন্ন হবে, হুমকির মুখে পড়বে জলবায়ু, মানবসভ্যতা। সাম্প্রতিক সময়ে ডলফিন, তিমি, শুশুকসহ বৃহৎ আকৃতির সামুদ্রিক প্রাণীকে উপকূলের কাছাকাছি আসতে দেখা যায় এবং এসব প্রাণী অতিমাত্রায় প্লাস্টিক-দূষণের শিকার হচ্ছে। একইভাবে ভয়াবহ দূষণে রোগাক্রান্ত ও আহত অবস্থায় মরছে বিপুলসংখ্যক সামুদ্রিক জীব। বাংলাদেশের উপকূলীয় দূষনের একটি উদ্ভূত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে  বিভিন্ন জলজ ব্যবস্থায় প্লাস্টিক দূষণ। দেশের গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সমস্যাকে বোঝার ও তা সমাধান করার জন্য আমাদের জ্ঞান ও চর্চা এখনো অনেকটা সীমিত। বলতে দ্বিধা নেই যে, আমাদের জাতীয় বোধগম্যতা এবং সক্ষমতা এ ক্ষেত্রে একটি বড় ধরণের সংযোগ বিচ্ছিন্নতা চিহ্নিত করে। বাংলাদেশের সুস্বাদু পানি এবং সামুদ্রিক পরিবেশে প্লাস্টিক দূষণের উপর এখানে সমস্ত উপলব্ধ পর্যালোচনা করার সুযোগ খুবই সীমিত। বাংলাদেশের উপকূলীয় ও সামুদ্রিক পরিবেশের উদ্ভিদ, প্রাণীজগত, হাইড্রোকার্বন, খনিজ দিয়ে সমৃদ্ধ করছে  এর আমানত এবং বাণিজ্যিকভাবে শোষণ যোগ্য ভাল স্টক মাছ এবং সামুদ্রিক খাবারের উপর. বাংলাদেশে, সামুদ্রিক দূষণকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে, একটি ভূমি ভিত্তিক এবং অন্যটি সমুদ্র ভিত্তিক। সমুদ্র দূষণের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে মিউনিসিপ্যাল বর্জ্য, শিল্প বর্জ্য, জাহাজ ভাঙ্গা কার্যক্রম এবং কৃষি বর্জ্য। পানির বৃহৎ আধার সমুদ্রকে বলা হয় ‘পৃথিবীর রক্তপ্রবাহ’। এ মহাসমুদ্রগুলোকে মহাভাগাড়ে পরিণত করার সম্পূর্ণ দায়ও আমাদের। অক্সিজেনের ৩০ শতাংশের জোগান আসে সমুদ্র থেকে, অথচ এই অক্সিজেন-ভান্ডারকে আমরা প্রতিনিয়ত বিনষ্ট করে চলছি। গবেষণার তথ্য হচ্ছে, বছরে ২৫০ মিলিয়ন টন বর্জ্য নিক্ষিপ্ত হচ্ছে সমুদ্রে। এই বিপুল পরিমাণ বর্জ্যে ভয়াবহ দূষণের কবলে পড়ে সমুদ্র বিপন্ন হচ্ছে। এ কারণে পানি ও প্রাকৃতিক পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির পাশাপাশি বহু সামুদ্রিক প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটছে। হুমকির মুখে পতিত হচ্ছে ‘সুনীল অর্থনীতি’। বাংলাদেশে সমুদ্র দূষণের কারণগুলোর মধ্যে টেক্সটাইল এবং ডাইং শিল্প বার্ষিক ১২.৭  থেকে ১৩.৫ মিলিয়ন বর্জ্য জল নিঃসরণ করে এবং ২০ শতাংশ মিষ্টি জলকে দূষিত করে। শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড গুলো এক বছরে প্রায় ২২.৫ টন পলি ক্লোরিনযুক্ত বাইফিনাইল ডাম্প করে। সামুদ্রিক তেল দূষণের ৫০ শতাংশ এরও বেশি শহুরে কার্যকলাপ থেকে আসে। প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে, অব্যবস্থাপিত প্লাস্টিক বর্জ্যের মাত্রার নিরিখে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের অবস্থান দশমে। বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণের উপর আলোচনা, পর্যালোচনা ও  অধ্যয়ন খুবই সীমিত এবং সামগ্রিক পর্যবেক্ষণ প্রতি তা তির্যক। ২০০৬ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত প্লাস্টিক দূষণ  নিয়ে ২৪টির মতো গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।  ৯টির প্রতিবেদনে সামুদ্রিক পরিবেশে প্লাস্টিক দূষণের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে, এছাড়াও ৮টি প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে এবং শুধুমাত্র একটি সুস্বাদু পানির পরিবেশের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণ মোকাবেলার লক্ষ্যে জাতীয় কোন কার্যকর ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রণয়ন হয়নি।  এ নিয়ে গবেষণার ও অভাব রয়েছে,  নদীর প্লাস্টিক পরিবহন নিরীক্ষণ ও  মডেল এবং জলজ জীবের জন্য প্রভাব পরীক্ষা করায় আরও কাজের প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশের দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ জানিয়েছে বাংলাদেশের প্রধান নদীগুলো বিলিয়ন বিলিয়ন টন আবর্জনা এবং বে অব বেঙ্গল মধ্যে পলি পাঠায় বর্তমানে, এলএমপি সবচেয়ে বেশি সামুদ্রিক দূষণের একটি সাধারণ রূপ যার জন্য দায়ী ৭৫ শতাংশ বা তারও  বেশি, আরেকটি অনুমান পরিসংখ্যান দেয় বিশ্বব্যাপী তথ্যের  ভিত্তিতে ৫০ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণত, সমুদ্র জলে উপকূলীয় জল প্রবাহিত হয়ে প্রবেশ করে ভূমি, ড্রেন, নদী, চ্যানেল এবং অন্যান্য প্রবাহ থেকে যা সামুদ্রিক দূষণের প্রায় ৪৪ শতাংশ  এছাড়াও বিশ্বব্যাপী সামুদ্রিক দূষণের ৩৩ শতাংশ  জন্য দায়ী করা হয় জাহাজ চলাচলকে। বাংলাদেশে এলএমপির প্রভাব রয়েছে বর্জ্য পরিশোধন সুবিধার অভাবসহ নগরায়ণ, শিল্পায়ন, কৃষি, পলি ইত্যাদি সামুদ্রিক এবং উপকূলীয় সম্পদের অবনতি ঘটায়, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আন্ডারলাইন করে সমুদ্র ইকোনমিতে পৌঁছতে প্রচন্ড বাধা দেয়। বাংলাদেশে  কিছু আইন ও প্রবিধান রয়েছে যা সমুদ্র সুরক্ষার জন্য বিশ্বব্যাপী চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংশোধন  করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য হলো পরিবেশ এবং বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষনে জাতীয় জনমত গঠন করা ও আইনি শাসনের পাশাপাশি দেশীয় স্টেকহোল্ডারদের হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাওয়া  ভূমিভিত্তিক থেকে সামুদ্রিক পরিবেশকে  রক্ষা, বাংলাদেশের সমুদ্র ও উপকূলকে  দূষণমুক্ত করা,  বাংলাদেশের মানব স্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্যের জন্য প্রধান হুমকিকে মোকাবেলা করা। লেখক : ডেপুটি চিফ রিপোর্টার, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)। ঢাকাওয়াচ/স

একটি দুর্ঘটনা ও সারাজীবনের কান্না

১ টরন্টোতে গাড়ি দুর্ঘটনায় একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার রাত সাড়ে এগারোটায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে বাংলাদেশি তিন শিক্ষার্থী মারা গেছেন। একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত শিক্ষার্থী গাড়ি ড্রাইভ করছিলেন। নিহত শিক্ষার্থীরা হলেন শাহরিয়ার খান, এঞ্জেলা বারৈ ও আরিয়ান দীপ্ত। আহত শিক্ষার্থী হচ্ছেন নিবিড় কুমার দে। সবার বয়সই ১৭ থেকে ২১ এর মধ্যে। এই ঘটনায় আমার মনটা ভেঙে গেছে। যেসব বাবা মা সন্তানদের বিদেশে পাঠিয়েছেন উচ্চশিক্ষার জন্য তাদের জন্য এই ঘটনা কতবড় শোকের তা প্রকাশ করা সম্ভব না। তারা আর কোনোদিন সন্তানদের ফিরে পাবেন না। যে যায় সে আর ফেরে না। অনেক আশা আর স্বপ্ন নিয়ে আমরা সন্তানদের বিদেশ পাঠাই। সেখানে তারা কত কষ্ট করে। দেশে যেমন বাবা মা ভাই বোনের কাছে আদরে থাকে বিদেশে তেমন না। সেখানে পড়াশুনার বাইরেও অনেক কিছু করতে হয় ছোট ছোট সন্তানদের। নিজের রান্নাটা পর্যন্ত তারা নিজেরা করে, কাপড় ধোয়া, ডিশ ওয়াশ করতে হয়। বাইরে কাজ করতে হয়। মধ্যবিত্তরা অনেক কষ্টে টাকার সংস্থান করে সন্তানকে বিদেশ পাঠান। কানাডায় পড়াশুনা অনেক ব্যয়বহুল। সেই আদরের সন্তানদের এভাবে অকাল মৃত্যুতে হৃদয় রক্তাক্ত হয়েছে। ২ কানাডার হাইওয়েতে ওভার স্পীডে গাড়ি চালানো অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। এতে নিজের বিপদতো ডেকে আনা হয়ই অন্যেরও বিপদ ঘটতে পারে। জীবননাশসহ পঙ্গু হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাছাড়া টিকিট খেতে হয়, ডিমেরিটস পয়েন্টস আছে, কোর্টের বারান্দায় দৌঁড়াতে হয়, এমনকি লাইসেন্স সাসপেন্ডসহ জেলে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। তার উপর ইন্সুরেন্সের হ্যাপাতো আছেই। নিজের দোষে কিছু হলে ইন্সুরেন্সে হাই হয়ে যাবে। কানাডায় গাড়ি চালানোতে অনেক কড়াকড়ি। ড্রিঙ্ক এন্ড ড্রাইভ জিরো টলারেন্স। সিঙ্গল লেনে ওভারটেকিং করা যায় না। লাইসেন্সের ক্ষেত্রে তিনটি ধাপ পার হতে হয়। জি লাইসেন্স ছাড়া হাইওয়েতে গাড়ি চালানো যায় না। প্রথমে জি-টু, তারপর জি-ওয়ান, তারপর জি লাইসেন্স নিতে হয়। আমার সন্তানদের সবসময় বলি গাড়ি সাবধানে চালাবা। কখনও ওভারস্পীড করবা না। স্টপ সাইনগুলোতে নিয়ম মানবা। হিডেন বা রেডলাইট ক্যামেরা খেয়াল করবা। কারো সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবা না। গাড়ি যেনো তোমার নিয়ন্ত্রণে থাকে। ৩ নিজের সাবধানতা নিজের কাছে। অন্যে ভুল করলেও নিজেকে সেভ করতে হবে। টরন্টোর মেজর হাইওয়েতে যেমন ৪০১, ৪২৭ বা ৪০৪ গুলোতে সর্বোচ্চ গতিবেগ ১০০ কিলোমিটার। কিন্তু আলোচ্য দুর্ঘটনা কবলিত গাড়িটি ১৪০ কিলোমিটার গতিতে চলছিল বলে বলা হয়েছে। লেন চেঞ্জ করার সময় এই গতিবেগ অতি মারাত্মক। গাড়ি কন্ট্রোল করা কঠিন। যারা বিদেশে সন্তানদের পাঠাবেন আমার অনুরোধ আপনার সন্তানকে সাবধানে গাড়ি চালাতে বলবেন। একটা দুর্ঘটনা সারাজীবনের কান্না। যে ঘটনা ঘটেছে তা পুরো কমিনিউনিটিকে শোকে মুহ্যমান করেছে। এমন ঘটনা আর না ঘটুক এটাই প্রত্যাশা। ঢাকাওয়াচ/স

মনপুরায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ জরুরী : শাখাওয়াত সজীব

শাখাওয়াত সজীব : শতভাগ এলাকায় ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকার কাজ করছে, তা বাস্তবায়নেরও পথে। অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে, যেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর কথা ভাবা যেত না, সেখানেও বাতি জ্বলছে, বৈদ্যুতিক পাখা ঘুরছে। তবে কিছু এলাকায়, বিশেষ করে দ্বীপ এলাকায় বিদ্যুৎ গেছে নামে মাত্রা। সোলার প্যানেলের মাধ্যমে ছোট বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে তা সাধারনের ক্রয় ক্ষমতার উর্ধে। কারখানা গুলু চলছে না তাতে। ভোলার মনপুরা উপজেলা সেখানে বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে সৌরবিদ্যুৎ আছে। কিন্তু সে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে গুটিকয় মানুষের ঘরে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী শতভাগ বিদ্যুতায়ন বাস্তবায়নে ভোলা জেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলসহ বাংলাদেশের অনেক দুর্গম চরে ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মনপুরা একটি পূর্ণাঙ্গ উপজেলা হওয়া সত্ত্বেও দেড় লক্ষাধিক জনগোষ্ঠীর এ উপজেলায় আজও জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। এতে মনপুরার সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে অনলাইন ক্লাস এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে না। সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত বিদ্যুতের অভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। বিদ্যুৎ না থাকায় প্রতিনিয়ত চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল সব ধরনের ব্যবসা ও শিল্প সম্প্রসারণে ব্যাঘাত ঘটছে। এতে মনপুরার বাসিন্দারা নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সাগরকন্যা মনপুরায় রয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। মৎস্য আহরণের মাধ্যমে জিডিপিতে মনপুরার মৎস্যজীবীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। কিন্তু এই মৎস্যজীবীদের আহরিত রুপালি ইলিশ সংরক্ষণ কষ্টসাধ্য শুধুমাত্র বিদ্যুৎ না থাকায়। এই অবস্থায় মনপুরাকে পুরোপুরি আলোকিত করতে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সেই প্রকল্পেও নবায়নযোগ্য এ পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। সমস্যা হলো, এই বিদ্যুতে শিল্পকারখানা চালানো যাবে না। এ কারণেই এলাকার লোকজন মনপুরাকে জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করার দাবি জানাচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি যথেষ্ট যৌক্তিক। এখনে যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে বলে বলা হচ্ছে, তা আসলে স্থানীয় মানুষের খুব একটা কাজে আসবে না। এখানে বর্তমানে তিন হাজারের মতো গ্রাহক দিনে কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। বাংলাবাজার, সিরাজগঞ্জ বাজার ও কাউয়ারটেক এলাকায় সৌরবিদ্যুতের যে তিনটি মিনি গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যায়, তা ‘প্রি-পেইড’ পদ্ধতিতে ৩০ টাকা ইউনিট দরে কিনতে হয়। এই দামে বিদ্যুৎ কেনা সাধারণ মানুষের সামর্থ্যের বাইরে। সৌরবিদ্যুতের বাইরে ডিজেলচালিত ইঞ্জিনে ৭০০ থেকে ৭৫০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে ওজোপাডিকো (ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড)। দিনে কয়েক ঘণ্টার জন্য সেই বিদ্যুৎ পাচ্ছেন উপজেলা শহরের হাজিরহাট বাজার ও আশপাশের ৮৫৪ গ্রাহক। এ অবস্থায় ভোলার মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন মনপুরাকে লক্ষাধিক মানুষের নাগরিক অধিকার ও আধুনিক ভাবে গড়ে তুলতে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা অত্যাবশ্যক। লেখক: সাংবাদিক। ঢাকাওয়াচ/স

‘বন্ধ করুন লাইক ও শেয়ারের সংখ্যা বাড়ানোর এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা’

কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরয়ার: ধর্ষণ, ধর্ষিতা আর ধর্ষককে পণ্য করে মিথ্যাচার আর তথ্য বাণিজ্যের অসুস্থ প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে ঘৃণা আর প্রতিবাদ। পৃথিবীজুড়ে অধিকাংশ ধর্ষিতা মেয়েরা সমাজের কাছে তাদের ধর্ষণের ঘটনাকে প্রকাশ করার সাহস রাখে না। তারা “ধর্ষিতা মেয়ে”র অপবাদ বুকে চেপে বাঁচতে চায় না। তাদের কেউ কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। তাদের কারো কারো মা-বাবারা ধর্ষিতা মেয়েকে বোঝা হিসেবে মনে করেন। অথচ আমাদের বাংলাদেশের প্রাণপ্রিয় একটি ছোট্ট তরুণী ধর্ষিতা হওয়ার পর তার ধর্ষণের ঘটনা চেপে যাওয়ার নানা পরামর্শ, প্ররোচনা আসার পরেও সে ধর্ষণের কথা স্বীকার করার সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়। সাহসী সোনার টুকরো মেয়েটি মনে মনে ভাবে এভাবে ধর্ষণের ঘটনা চেপে গেলে সমাজে ধর্ষকরা হেঁটে বেড়াবে বুক ফুলিয়ে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে সে ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে র‍্যাবের গোয়েন্দা কর্মকর্তা কে বলে যে, “পৃথিবীর সব চেহারা ভুলে গেলেও আমি সেই ধর্ষকের চেহারা ভুলবো না”। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা সাদেকা হালিম তাকে দেখতে গেলে সে ধর্ষকের বর্ণনা দেয়। যা র‍্যাব কর্তৃক ধৃত ধর্ষণকারীর সাথে প্রায় হুবহু মিলে যায় বলে সম্মানিত অধ্যাপিকা তার টেলিভিশন টকশোতে মন্তব্য করেছেন। ধর্ষক মজনুর ছবি দেখানোর আগে মেয়েটিকে অপর আরেকজন সন্দেহভাজন ধর্ষকের ফটো দেখানো হলে সে সাথে সাথেই সময়ক্ষেপণ না করে বলে দেয় যে এটা সেই পাষণ্ড ধর্ষক নয়। অথচ ধর্ষক মজনুর ছবি দেখার সাথে সাথেই মেয়েটি তাকে সনাক্ত করে। স্রোতের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এমন একটি সাহসী সোনার টুকরো মেয়ে একটি হতদরিদ্র যুবককে ফাঁসিয়ে দেওয়ার জন্য মিথ্যে কথা বলবে এমন জঘন্য বিকৃত মানসিকতার চিন্তা আমাদের সমাজের কিছু কিছু মানুষের মনে কীভাবে আসে সেটা ভাবতেই লজ্জা হয়! এমন একটি সাহসী মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে দেশের এবং পৃথিবীর সব ধর্ষিতা নারীদের পাশে দাঁড়ানোর সামাজিক আন্দোলনকে সংঘবদ্ধ না করে আমরা কেউ কেউ বলছি এই দরিদ্র ছেলেটি নাকি ধর্ষক নয়। তাহলে কি মেয়েটি মিথ্যা কথা বলছে? মজনু আসল ধর্ষক নয় এমন অদ্ভুত প্রচারণা করে আমরা আমাদের লাইক, স্ট্যাটাস,কমেন্ট বাড়াচ্ছি বটে। কিন্তু আমরা কি একবারও চিন্তা করছি যে আমরা সাথে সাথে আমাদের একটি ধর্ষিতা বোনকে, আমাদের একটি কোমলমতি হীরের টুকরো সন্তানকে মিথ্যেবাদী বানিয়ে দিচ্ছি? ধর্ষক মজনু ধরা পড়ার পর র‍্যাবের কাছে স্বীকার করেছে যে সে ধর্ষণ করেছে। সেটা না হয় নাই বা বললাম। সেটা হয়তো কেউ বিশ্বাস করবেন না। কিন্তু ধর্ষকের কাপড়-চোপড় এবং ধর্ষিতার মেডিকেল চেকআপের ডিএনএ টেস্ট থেকে কিছুদিনের মধ্যেই এই সূর্যের আলোর মত সত্য ঘটনা বের হয়ে আসবে যে এই দুর্বল দাঁতভাঙ্গা যুবকটিই ধর্ষণ ধর্ষক ছিল। তখন হয়তো সোশ্যাল মিডিয়াতে অন্য কোনো ইস্যু চাউর হয়ে যাবে। তারপরও আমরা, কিছু সচেতন মানুষ অপেক্ষা করব। অপেক্ষা করব এই প্রত্যাশায় যে, যখন ধর্ষক আদালতের সামনে অবলীলায় স্বীকার করবে তার ধর্ষণের কথা, যখন ধর্ষিতা নিজে আইনজ্ঞ এবং বিচারকের সামনে ধর্ষককে শনাক্ত করবে, এবং যখন ডিএনএ টেস্ট এর রেজাল্ট বিচারকের হাতে পৌঁছে যাবে, তখন এসব সমালোচক, যারা বলছেন মজনু আসল ধর্ষক নয়, তারা কি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাইবেন? কিংবা ক্ষমা চাইবেন আমাদের এই কোমলমতি সাহসী মেয়েটির কাছে? যে সাহসী মেয়েটি কারো কারো স্ট্যাটাস জনপ্রিয় করার হাতিয়ার হল! আর সেই সাথে হয়ে গেল একটি মিথ্যাবাদী মেয়ে? ছি! দয়া করে বন্ধ করুন আপনাদের এই স্ট্যাটাসে লাইক, কমেন্ট আর শেয়ারের সংখ্যা বাড়ানোর এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা। আপনাদের কাছে, আপনাদের বিবেকের কাছে করজোড়ে অনুরোধ করছি, দয়া করে বন্ধ করুন জঘন্য সমালোচনার এই অসুস্থ সংস্কৃতিকে। র‍্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে যোগদানের পর একটি পেশাগত দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আমার দেওয়া এটা প্রথম স্ট্যাটাস। ধর্ষককে ধরতে পারার তৃপ্তির ঢেকুর তোলার জন্য আমি এই স্ট্যাটাস দেইনি। মনের মধ্যে কয়েকটি পংক্তি আমাকে আমাকে তাড়িত করছিল এই স্ট্যাটাস দিতে- “হে রুদ্র, নিষ্ঠুর যেন হতে পারি তথা তোমার আদেশে। যেন রসনায় মম সত্যবাক্য ঝলি উঠে খরখড়গসম তোমার ইঙ্গিতে। …………………………. অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে।” তাই ঘৃণা ছুড়ে দিলাম পৃথিবীর সব ধর্ষকদের উদ্দেশ্যে, আর ঘৃণা ছুড়ে দিলাম ধর্ষণের মতো একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা নিয়ে যারা মনগড়া তথ্য বাণিজ্য করে তাদের উদ্দেশ্য করে! লেখক: অতিরিক্ত মহাপরিচালক অপারেশন্স, র‍্যাব ফোর্সেস। ঢাকাওয়াচ/স