আমরা রাজনৈতিক দল, আমরা তো ভোটের কথাই বলব: তারেক রহমান


December 2024/Tarek.jpg
তারেক রহমান

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘ভোটের মাধ্যমে জনগণের সমর্থন পাওয়াই হল জনগণের আস্থার প্রতিফলন। ভোটের মাধ্যমে আমাদের আস্থা অর্জন করতে হবে। সেই ভোটে আস্থা অর্জন করতে হলে মুখে বললে তো হবে না। মানুষ জানতে চায়, আমরা তাদের জন্য কী করব। যখন জানতে পারে, আপনি বিএনপির কর্মী, তখনই আপনাকে জিজ্ঞেস করে, তোমরা এটার কী করবে বা ওটার কী করবে? আমরা আস্থার একটা পর্যায়ে আছি। আমাদের এই আস্থাকে ধরে রাখতে হবে। আগামীর ভোটই শুধু ভোট না। অনেকে বলে, তারেক রহমান শুধু ভোট ভোট করে। আমরা রাজনৈতিক দল, আমরা তো ভোটের কথাই বলব। আগামীর নির্বাচন করেই কি আপনি ক্ষান্ত দিয়ে দেবেন। মানুষ জানতে চায়, আমরা কী করব। এখন শুধু কথায় চিড়া ভিজবে না। আগামী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে কাজ করতে হবে।’

Your Image

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী ও মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক কমিটির আয়োজনে এ কর্মশালা মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে আয়োজন করা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কর্মশলায় তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রতি নির্যাতনের জবাব হিংসায় নয়, ৩১ দফার সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে অন্যায়ের জবাব দিতে চাই।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘পরবর্তী নির্বাচনের আগে জনগণকে দেখাতে হবে, আপনি কী কী করতে পেরেছেন। সবটা হয়তো আমরা পারব না, তবে যতটুকু করব, তা জনগণের কাছে তুলে ধরব। তখন জনগণ এর বিচার করবে। আমাদের বহু সহকর্মী খুন হয়েছেন। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আমাদের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী খুন হয়েছেন। আর কোন রাজনৈতিক দলের এত মানুষ মারা গেছেন কী-না, জানি না।’

তারেক রহমান আরো বলেন, ‘গত ১৬ বছরে আমাদের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে। অনেকেই হাতকড়া পরে মা-বাবার জানাজায় অংশ নিয়েছেন। আবার বহু নেতাকর্মীর বাড়িঘর-ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে বললে আমার ওপর নির্যাতন হয়েছে। আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে, মাকে নির্যাতন করা হয়েছে। আমার ভাই, তাদের অত্যাচারে মারা গেছে। আমরা এই নির্যাতনের জবাব যদি তাদের মত দিই, তাহলে তো হবে না। তারা অধম বলে আমরা অধম হব নাকি। আমরা এর জবাব ৩১ দফা সফল করার মাধ্যমে দেব। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই তাদের জবাব দেওয়া হবে।’

তিন সাংগঠনিক জেলায় পৃথকভাবে কর্মশালা আয়োজন করা হলেও একই সঙ্গে এসব জেলার সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন তারেক রহমান। এর আগে ৩১ দফা নিয়ে নেতাকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।

তারেক রহমান বলেন, ‘এত নির্যাতন সহ্য করে জেল খেটেছেন, কষ্ট করেছেন। কেন আপনারা এমন কাউকে সুযোগ দেবেন, যে আপনাদের সব কষ্টে পানি ঢেলে দেবে। কিছু লোক তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য আমাদের সব কষ্টে পানি ঢেলে দিচ্ছে। কেন তাদের সেই সুযোগ দেবেন আপনারা?’

তিনি আরো বলেন, ‘মানুষ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। আপনাদেরও জনগণের দিকে তাকাতে হবে। আপনাদেরও বুঝতে হবে কী করলে জনগণ আপনাকে আরও পছন্দ করবে। আপনার অধীনে অনেক নেতাকর্মী থাকবে। তাদের দিকে লক্ষ রাখতে হবে। পরিবারের দুষ্টু বাচ্চাদের যেমন টাইট দিয়ে রাখতে হয়, তেমনই দলের ভেতরও দুষ্টুরা আছে, থাকতে পারে। আমাদের এই দুষ্টুদের টাইট দিয়ে রাখতে হবে। তারা হয়তো দলের অনেক ক্ষতি করে ফেলছে।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনাদের মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। জনগণের আস্থা ধরে রাখতে হবে। এ আস্থা ধরে রাখার দায়িত্ব আপনার। এটি জনগণের দায়িত্ব না। আমরা নিজেদের সংযত রাখব এবং সহকর্মীদের সংযত রাখতে চেষ্টা করব। মানুষ চায় না এমন কাজ কেন আপনি করবেন, যেখানে আপনাদের আস্থার সংকট দেখা দেবে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘স্বৈরাচার যখন জনগণকে অধিকারবঞ্চিত করে অস্ত্রের মুখে ক্ষমতা ধরে রেখেছিল, তখন আমি বলেছিলাম, টেক ব্যাক বাংলাদেশ। এর অর্থ হল- জনগণের বাকস্বাধীনতা ও জনগণের অর্থনৈতিক অধিকার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া। বাংলাদেশে কী হবে, তা বাংলাদেশের মানুষ ঠিক করবে। টেক ব্যাক বাংলাদেশের প্রথম লক্ষ্য দেশের মানুষের সহযোগিতায় গণতন্ত্রকামী দলগুলো স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে। স্বৈরাচারের মাথা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। ১৬ বছর তারা নিজেদের আখের গোছাতে ভিনদেশে তাদের প্রভুকে খুশি করতে দেশের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে গেছে।’

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সমাজ কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক ও মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুজ্জামান রতন। এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ টিটু, মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ, আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য মাহমুদা হাবিবা, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আকম মোজাম্মেল হক, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রহিমা শিকদার উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য (দপ্তরে সংযুক্ত) মো. আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×