‘২৪’র আন্দোলনকে ব্যবহার করে ‘৭১’র গৌরবকে মুছে ফেলতে চায়


Jan 2025/Nasir Chatradol.jpg

‘৭১’র পরাজিত শক্তির একটা অংশ ‘২৪’র আন্দোলনকে ব্যবহার করে একাত্তরের গৌরবকে মুছে ফেলতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) সকালে বরিশাল জেলার গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড অডিটরিয়ামে সরকারি গৌরনদী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, উপজেলা ও পৌর শাখা ছাত্রদলের আয়োজনে ‘গৌরনদীর ছাত্র সমাবেশে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর আহ্বান, ৩১ দফা বাস্তবায়ন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্যে নাছির উদ্দীন বলেন, ‘একাত্তরের পরাজিত শক্তির একটা অংশ চব্বিশের আন্দোলনকে ব্যবহার করে একাত্তরের গৌরবকে মুছে ফেলতে চায়। একাত্তর আমাদের জাতির সবচেয়ে গৌরবময় ঘটনা। একাত্তর কখনো মুছে ফেলা যাবে না। চব্বিশের আন্দোলন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পরিপূরক। একাত্তরের পরাজিত শক্তি যদি চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান দিয়ে একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি মুছে ফেলার চেষ্টা করে, তাহলে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের ফলে সৃষ্ট হওয়া ঐক্যে ফাটল ধরবে। একাত্তর ও চব্বিশ উভয়কে ধারণ করলেই কেবল জাতীয় ঐক্য অর্থবহ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যে শক্তিশালী ঐক্য না থাকার কারণে ফ্যাসিবাদ দীর্ঘায়িত হয়েছিল। বিশেষ করে সিভিল সোসাইটি, পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবী মহল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রাজনৈতিক কর্মীদের সাথে ঐক্যবদ্ধ না হওয়ায় আওয়ামী লীগ তিনটি ভুয়া-অবৈধ-ডামি নির্বাচন করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি, চব্বিশের পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত আছে, এখানে সব পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।’

ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি অন্য ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি যুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে নাছির উদ্দীন বলেন, ‘ঐক্য সব সময়ই পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে দৃঢ় হয়। কিন্তু, অংশীজনদের মধ্যে মতবিনিময় না করে একতরফা নানা সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। যার কারণে ঐক্য প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যেমন সরকার ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে শুধু বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মকে গণ্য করছে। আন্দোলনের পরে তারা কেবল একটি সুনির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মের প্রতিনিধি। ছাত্রদলসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলো দেশের বৃহত্তর ছাত্রসমাজকে প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রীয় কোন উদ্যোগে যুক্ত করা হয় না, এমনকি মতামতও নেওয়া হয় না। পাঠ্যবইয়ে ছাত্রদলের নেতা হওয়ার কারণে ওয়াসিম আকরামের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।’

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘একটি বিষয় আমি উল্লেখ করতে চাই, যারা শহীদ হয়েছেন, যাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা মুক্তি পেয়েছি, তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নিত্যনতুন তত্ত্বের আবির্ভাব ঘটেছে। যারা শহীদ হয়েছেন তারা সবাই নিজ নিজ বিবেকের তাড়নায় আন্দোলনে এসেছিলেন, যেভাবে জহির রায়হান তার ‘সময়ের প্রয়োজনে’ গল্পে দেখিয়েছিলেন- মুক্তিযোদ্ধারা সবাই সময়ের প্রয়োজনে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু আন্দোলন পরবর্তী একটা গোষ্ঠী শহীদের রক্তের কথা বলে, শহীদের ত্যাগের কথা বলে তাদের নিজস্ব চিন্তাধারা, তত্ত্বকথা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। তারা এক দিকে শহীদদের মধ্যে বিভাজন না করার কথা বলেন, অন্যদিকে সব শহীদের মালিকানা নিয়ে আন্দোলনের অন্য সব অংশীদারকে উপেক্ষা করছেন। এমনকি কেউ কেউ তাচ্ছিল্যের সুরেও কথা বলেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, আন্দোলনের কমপক্ষে চার ভাগের একভাগ শহীদ সরাসরি বিএনপি ও ছাত্রদলের সাথে সংশ্লিষ্ট। তারা সবাই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে উত্তরণের জন্য আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মূল দাবি ছিল গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার।’

এর আগে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন। যেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, ছাত্রদলের সহসভাপতি রিয়াদ রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম ও জুয়েল হোসেন।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×